সংসার পর্ব ১১+১২

#সংসার
#পর্ব_১১ #বোনাস_পার্ট

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।

হঠাৎ কোথা থেকে দুই জন পুলিশ আর সাথে একটা ছেলে আসে। অনুর বর্ণনায় মনে হলো এই ছেলেটি রাজ। পুলিশ কেন নিয়ে আসলো এমনি গোলমাল করলেই তো রাকিব ভাই একটা উছিলা পেয়ে ভেঙ্গে দিতো। পুলিশ দেখে অনু আর রাকিব ভাইয়ের কাকা মামারা এগিয়ে যায়।
“কি সমস্যা স্যার, আপনারা হঠাৎ এখানে?”

“আমাদের কাছে নোটিশ আছে আপনারা অন্যের বউকে বিয়ে দিচ্ছেন। সেটা সত্যিই কি না দেখতে আসলাম।”

“কি বলছেন এসব? এখানে আমাদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।সাপনাদের নিশ্চয়ই কোনো ভুল হইছে স্যার।”

পুলিশ দুটো তাদের কথায় উওর না দিয়ে অনুকে প্রশ্ন করলো-
“আপনার নাম কি অনু?”
অনু মাথা দুলায় যার মানে হ্যাঁ।
পুলিশ আবার জিঙ্গেস করে, “আপনি কি রাজ সাহেব কে চিনেন? আপনাদের ভিতর অন্য কোন সম্পর্ক আছে?”
অনু আবার মাথা দুলালে উপস্থিত সবাই অনুর দিখে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে থাকে। এতোক্ষণ এখানে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও এখন সবার মাঝে হৈচৈ লেগে গেছে।

২২.
পুলিশ অনুর আর রাকিব ভাইয়ের ফ্যামিলিকে দুইটা অপশন দেয়। এই মুহূর্তে রাজের সাথে অনুর আবার বিয়ে দিতে হবে,নয়তো রাকিব ভাইয়াকে স।তাদের সাথে নিয়ে যাবে, তারপর যে কথা হবে থানায় যেয়ে হবে।
ওখানের সবাই থানার কথা ভেবে কেঁপে ওঠে, অনুর পরিবার রাকিব ভাইয়ের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালে রাকিব ভাই মুচকি হেসে বলে-
“আংকেল আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমি অনুর ভালো চাই। আপনারা ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে পারেন আমার আপওি নেই।”

রাকিব ভাইয়ের কথা শুনে ওখানের সবাই স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। আস্তের ওদের বিয়ে হয়ে যায়। আমি অনুর কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করি-
“অনু তোমাদের যে আগে বিয়ে হইছে, কই তুমি তো বললে না।”

“মেঘ আপু আমিও জানতাম না। এটা রাজ বানিয়ে বলেছে। আর ওই যে ওই দুটো পুলিশ ওটাও নকল ছিলো। রাজের ফ্রেন্ড ছিলো তারা দুইজন।”

আমি অনুর কথা শুনে কিছু অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। রাজ ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান তাকে প্রথম দেখাই বুঝেছি।
ওদের ওখানে সব কিছু ঠিক করে অনেক রাত হয়ে যায়। এদিকে আমার পূর্ণতাকে দেখার জন্য মনও মানছে না। তাই রাকিব ভাইকে চলে যাওয়ার কথা বললে প্রথমে যেতে চায় না। আজ রাত এখানেই থাকতে চায়। যেতে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। আর এতো রাতে নিরাপদ নয় এসব রাস্তা তবুও আমি জেদ ধরি সে নিয়ে না গেলে আমি একা যাব। তারপর রাকিব ভাইও রাজি হয়।

রাকিব ভাঈয়ের সাথে বিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় রাকিব ভাইয়ের পরিবারের লোকজন রেখে চলে গেছে শুধু আমি আর ভাইয়া থেকে গেছি। আমরা ফিরে যাওয়ার সময় অনু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো কৃতজ্ঞার কান্না।

আমারা বাসে করে বাসায় ফিরবো। বাসে ওঠেই ক্লান্ত হয়ে আমি সিটে গা এলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পর রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রাকিব ভাই আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি সিটে আবার এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে জিঙ্গেস করি।
“কিছু বলবেন রাকিব ভাই?”

“আচ্ছা মেঘ বিয়েটা তুমি ভেঙ্গেছো?”

আমি সেভাবেই চুপচাপ উওর দেয়।
“হুমমম”

“জানো আমি জানতাম তুমি বিয়েটা আটকাবে। নিছের থেকে আমি তোমাকে বেশি বিশ্বাস করি মেঘ। জানো আজ আমি কতটা খুশী। তোমাকে বোঝাতে পারব না।”

আমি রাকিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
“রাইমা আপুকে ভালোবাসেন?”

“জানি না।”

আমি আবার সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঝে বললাম-
“প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতিত থাকে। তাকে কখনো ভুলা যায় না। তাকে নিয়ে যত অনুভূতি থাকে সব জীবনের প্রথম অনুভূতি। আপনি যখন সেই অনুভূতির সাম্মোখিন হবেন ততবার আপনার তার কথা মনে পরবে। তাই বলে এই নয় দ্বিতীয় বার কারো প্রেমে পরা যাবে না। প্রেমে মানুষ পরে বহুবার তবে হ্রদয়ের প্রেম একবারই হয়। যাকে সে হ্রদয়ে ভিতর রেখে দেয়। তবে বেঁচে থাকা ভালো থাকার জন্য আমার আরো একজনকে বেঁছে নিতে হয়। দিন শেষে অতীত ভুলে সেই মানুষটার খুশির জন্য আমাদের প্রানপণ লড়তে হয়। কারন আমরা সেই মানুষটাকেও ভালোবাসি। ”

কিছুক্ষন দুজনের মাঝে পিনপতন নিরাবতা। নিরবতা কাটিয়ে রাকিব ভাই কিছুক্ষণ পর বলে
“কোথায় যাবে?”
আমি গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললাম
“পূর্ণতার কাছে।”

এতো রাতে বাড়িতে ডুকলে কে কি বলবে ভেবে আত্মা কেঁপে ওঠে। বাসার সামনে রাকিব ভাই এগিয়ে দিয়ে রিসকা নিয়ে চলে যায় তাদের বাসায়। আমি আমাদের রুমের দিক তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার বারান্দা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখেই রুমের ভিতরে চলে যায়।

আমি আস্তে আস্তে পা রেখে বাসার ভিতরে ডুকি। ভাবছিলাম শাশুড়ি মা আজো বাসায় ফিরেনি কিন্তু বাসায় ফিরে দেখি তিনি বাড়িতে এসেছেন সাথে তার বোন আছে। তারা দুজন হল রুমে বসে গল্প করছে। এত রাতে তাদের বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হই। আমি তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে উপরের রুমে সিড়ি দিয়ে ওঠে আসি। শাশুড়ি মা খুব কড়া শাসনের তবে আজ এতো রাতে বাসায় ফিরে কিছু বশছে না দেখে অবাক হয়ে রুমের দিকে পা বাড়াই।

আমি দরজা ঠেলে রুমে ডুকে দেখি স্যার বেডের এক কোনায় বসে আছে আছে। আর পূর্ণতা রুমে নেই। তখন শাওয়ার রুম থেকে কেউ একজন কথা বলতে বলতে বের হয়েছে।
“দেখে তো রুদ্র এই ড্রেসে কেমন লাগছে?”

আমি তাকিয়ে দেখি রুশা ম্যাম বের হচ্ছে। তাকে আমি আরো আগে দুবার দেখেছি রুদ্র স্যারের অফিসে। সে সেখানে লেডি ম্যানেজার। কিন্তু এতো রাতে স্যারের রুমে কেন জিঙ্গেস করতে গিয়েও জিঙ্গেস না করে বলি- “পূর্ণতা কোথায়?”

স্যার আমাকে দেখেও না দেখার মত করে তাকিয়ে থাকে। রুশা ম্যাম আমিকে দেখে বলে- “ওহহ মেঘ তুমি, এতরাতে কোথা থেকে আসলে? আমরা ভবছিলাম তুমি আসবে না। আর পূর্ণতা রাইমার রুমে। তুমি সেখানে যাও।”

রুশা ম্যাম এক প্রকার জোর করেই আমাকে রুমের বাহিরে বের করে দেয়। অনিচ্ছা সত্যেও আমি রাইমা ম্যামের রুমে যাই।

সেখানে যাওয়ার পরই, রাইমা আপু আমাকে হাতে একটা অফ হোয়াইট কালারের উপর মুক্ত পাথরের লেহেঙ্গা ধরিয়ে দিয়ে পরতে বলে। আজ নাকি সারপ্রাইজ আছে।
আমি কিছু না বুঝলেও রুইমা আপুর কথা মতো লেহেঙ্গা পরে আসি। রাইমা আপু চুল বাঁধছে আর আজ সারাদিন কি হলো জিঙ্গেস করছে।

আমি আজ সারাদিন কি কি হলো বলতেই রাইমা আপু চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরে। আমাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

আমাকে রাইমা আপু নীজের হাতে সাজিয়ে দেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নিক্ষুত ভাবে দেখতে থাকি। রাইমা আপু আমার দুগালে হাত দিয়ে বলে-

“মাশাআল্লাহ আজ আমার ভাবি কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কেউ যেন নজর না দেয়। রুদ্র ভাইয়া তোমাকে দেখে জ্ঞান না হারালে হয়।”

আমি রাইমা আপুর কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে সাজানোর কারন জিঙ্গেস করলে চোখ টিপে বলে সারপ্রাইজ আছে।

“চলবে,,,,,,

(বিঃ দ্রঃ ১. অনেক বোনাস পার্ট চাচ্ছিলে এটা তাদের জন্য। অসুস্থ ছিলাম তাই দিবো দিবো বলেও দেওয়া হইনি। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন তোমাদের দোয়ায় মোটামুটি সুস্থ, মনটাও ভালো তাই আজ বোনাস পার্ট দিয়েই দিলাম।)
তোমাদের ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। এভাবেই সব সময় আমাকে সাপোর্ট করো। ভালোবাসা নিও💚
#পর্ব_১২

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি রাইমা আপুর কথা শুনে লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে সাজানোর কারন জিঙ্গেস করলে চোখ টিপে বলে সারপ্রাইজ আছে।

কিছুক্ষণ পর রাইমা আপু আমার হাত ধরে উপরে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে ওঠে একটা কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিয়ে রাইমা আপু আমাকে ছাদের মাঝখানে নিয়ে আসে। আমার চারপাশে মানুষের চুপচাপ নিরবতা বুঝতে পারছি। এখানে হয়ত আরো অনেকে আছে কিন্তু কেন এসেছে। আর আমার চোখ বেধেঁয় বা কেন রেখেছে।

২২.
মনের মাঝে হাজার প্রশ্ন উকি দেয়, তখনই রাইমা আপু আমার চোখের উপর কাপড় খুলে হ্যাপি বার্থডে বলে চিৎকার করে ওঠে। সাথে সাথে রাইমা আপুর গলার সাথে গলা মিলিয়ে উপস্থিত সবাই হ্যাপি বার্থডে বলে ওঠে।

আমি অবিশ্বাস্য চোখে পিটপিট করে সবার দিকে তাকাই এতক্ষণ চোখ বন্ধ থাকায় কিছু দেখতে পারছি না। চোখ বুঝে আবার সবার দিকে তাকায়। রুদ্র স্যার, শাশুড়ি মা, খালা শাশুড়ি, বাবা, ফুপি, পূর্ণতা ফুপির কোলে, রাইমা আপু আর রুশা ম্যাম সাথে বাড়ির সব কাজের লোক দাড়িয়ে আছে। বাহিরের কেউ নেই।
ছাদের চারপাশ খুব সুন্দর করে ফুল আর রঙিন লাইট দিয়ে ডেকারেশন করা।

আমি সবকিছু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকি। আজ যে আমার জন্মদিন ভুলেই গেছি। কখনো এতো সুন্দর করে জন্মদিন পালন করা হয়নি। বৃষ্টির জন্মদিন উদ্দেশ্যে ফুপি পায়েশ রাধলে সেটাই আমি আমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ হিসেবে নিয়ে নিতাম।

হঠাৎ রুদ্র স্যারের গলায় বাস্তবে ফিরে আসি।
“মেঘ কেক টা কাটো তাড়াতাড়ি।”

আমি রুদ্র স্যার কথায় তার দিকে তাকায়। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে তাকে খুব মানিয়েছে। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব ফুটে আছে। ঠোট দুটো হালকা লালচে কালারের। সব মিলিয়ে পাঞ্জাবিতে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
হঠাৎ রুদ্র স্যারের পাশে রুশা ম্যামকে দেখে কপাট রাগ হয়। রুশা ম্যাম স্যারের এক বাহু ধরে দাড়িয়ে আছে। এভাবে লেপ্টে থাকার মানে কী? আর রুদ্র স্যারই বা তার পাশে দাড়িয়ে আছে কেন?

রুশা ম্যাম এতক্ষণ এসব অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে ফিসফিস রুদ্র স্যারকে বলছে-
“রুদ্র তুমি যে বললে সারপ্রাইজ আছে। মেঘের জন্মদিন এটাই কী সেই সারপ্রাইজ? আর এই জন্য এতক্ষণ এত গুলো জামা চেইঞ্জ করে পরলাম? আমি কিনা ভাবলাম তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিবে কিন্তু তুমি মেঘের জন্মদিনের জন্য এসব করেছো?”

রুদ্র স্যার মাথা নেড়ে মুচকি হেসে বলল-
“হুমমমম, ফ্রেন্ডের প্রিয় মানুষটির জন্য একটু আধটু সাজতে তো হয়ই। আর তোকে বললে তো আসতি না আর সাজতি তো দূরের কথা।”

রুদ্র স্যার কথায় রুশা আপু রেগে চিৎকার করে বলে- “উফফফ বারবার এই মেঘ মেঘ,,,,”

এতটুকু বলতেই সবাই তার দিকে তাকায়। সবাই কেক নিয়ে আসতে বিজি ছিল তাই রুশা আপুর ফিসফিসিয়ে কথা কেউ শুনেনি হঠাৎ এই ভাবে চিৎকার করে ওঠলে সবাই হতবাক হয়ে তাকায়।

রুশা আপু তার বোকামি বুঝতে পেরে মুখে জোর করে হাসি টেনে বলল-
“মেঘ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, তাড়াতাড়ি কেক কাটো। আমার তো আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না।”

আমি রুশা আপুর ভিতরের অবস্থা বুঝতে পেরে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। ভিতরে ভিতরে হাসিতে দম আটকে আসছে। আমি ঠোঁট চেপে কোন রকমে হাসি থামিয়ে কেক কাঁটি। একে একে সবাইকে খাইয়ে দেই।

আমি খুশিতে রুদ্র স্যারকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরি। আস্তে আস্তে আমাদের দুজন কে রেখে ছাদ থেকে সবাই নিচে চলে যায়। সবাই চলে যেতেই রুদ্র স্যার আমাকে কোলে ওঠিয়ে ছাদের উপরে ফুল দিয়ে সাজানো দোলনায় বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।
আমি চুপচাপ কিছু না বলে পা দিয়ে ছাদের উপর ধাক্কা দিয়ে আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছি। হঠাৎ রুদ্র স্যারের দিকে চোখ পরতে দেখি সে নেশা লাগানো চোখে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় অন্য দিকে তাকাই।

“বুঝলে মেঘ তোমাকে আজ অনেক বেশি হট লাগছে।”

আমি রুদ্র স্যারের কথা শুনে আরো বেশি লজ্জা পাই। স্যার যে লজ্জায় উপরে আরো লজ্জা দিতে ভালোই পারে সে বিষয়ে আমার বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা হয়ে গেছে।

রুদ্র স্যার আমাকে লজ্জা পেতে দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে। আমার কোল থেকে ওঠে এক লাফে দাড়িয়ে যায়। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো-

“ওঠো ওঠো, এভাবে লজ্জা পেলে এখানেই রাত কাটিয়ে দিতে হবে। আর সেই সাথে আমার প্লান ডুবে মারা যাবে। ঘরোয়া ভাবে সব কিছু করলাম যাতে তাড়াতাড়ি সব কিছু শেষ হয় আর তোমাকে নিয়ে আজকের রাতটা নিজের মতো কাটাতে পারি। তাড়াতাড়ি ওঠো তো”

আমি হাত ধরে ওঠতে নিলে, স্যার কিছু একটা ভেবে আমাকে কোলে তুলে বাসার বাহিরে নিয়ে বাইকে উপর বাসিয়ে দেয়।

২৩.
আস্তে আস্তে করে বাইক চলছে। চারপাশে মনমুগ্ধকর পরিবেশ। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু একটা ট্রাক যাচ্ছে। তাছাড়া দিনের কোলাহল পরিবেশ রাতের আকাশে সব মুক্ত হয়ে চারদিকে মুগ্ধতায় ভরপুর।
ছোটবেলা থেকে সব সময় আমার রাতের এমন পরিবেশ দেখতে ইচ্ছে হলেও বাবা কখনো বের হতে দেয়নি।

রুদ্র স্যার এর মাঝে বেশ কয়েকবার তাকে ধরে বসতে বললেও আমি লজ্জায় ধরি নাই। তাই এবার বেশ জোড়ে ব্রেক করায় আমি পরে যাওয়ার ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলে স্যার মুচকি হেসে আমার বাইক চালাতে শুরু করে।

বাইক এসে আমার চিরচেনা পছন্দের জায়গা নদীর পাড়ে থামে। রাতের আকাশে নদীর সৌন্দর্য আরো ফুটে ওঠেছে। মাঝে মাঝে নদীর বুক থেকে ধমকা হাওয়া আসছে। আমি নদীর তীরে নেমে প্রকৃতি অনুভব করি তখন রুদ্র স্যার গুটিগুটি পায়ে পিছনে এসে আমার চুলের ক্ষোপা খুলে দেয়। কোমর ছড়ানো চুল গুলো ধমকা হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে।
আমি এক দৃষ্টিতে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি। স্যার আমাকে আঙুলের ইশারায় নদীর দিকে তাকাতে বললে সেদিকে তাকিয়ে দেখি নদীর মাঝখানে শত শত ছোট ছোট ক্যান্ডেল জ্বলছে। নদীর ওই কূল থেকে কয়েক জন মানুষ ক্যান্ডেল গুলো ছাড়ছে। ক্যান্ডেল গুলোর মধ্যে হৃদয় আকৃতির ক্যান্ডেল ভাসছে। তার মাঝখানে আলো দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে ‘ভালোবাসি’ লেখা।

আমি খুশিতে স্যারের এইটা বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। স্যার আমার এক হাত ধরে নদীর বুকে ভেসে থাকা ফুল দিয়ে সাজানো একটা নৌকায় নিয়ে বসায়।
রুদ্র স্যার আর আমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আসি। নৌকার মাঝি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমার অজানা। পাশে থাকা এই মানুষটার সাথে আমি চোখ বুঝে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় চোখ বুঝে যেতেও রাজী আছি।

নৌকা এসে থাকে ছোট্ট একটি দ্বীপে। দ্বীপে ছোট ছোট অনেক গুলো জেলেদের বাড়ি। যারা দু বেলা দু মুঠো খাওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যায়।
এখানে এসে বুঝতে পারি, রুদ্র স্যারকে এরা আগে থেকেই চেনে। আর আজ আমরা আসবো তারা আগে থেকেই জানতো। খোলা মাঠে ঘাসের উপর আমাদের জন্য যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে আয়োজন করছে। কিছু কিছু ছোট ছেলে মেয়ে দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের দেখেছে। আমি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কাছে ডেকে গল্পের আসর জুড়ে দেয়। তখন রুদ্র স্যার দৌড়ে নৌকায় গিয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে আর সবার মাঝে ভাগ করে দেয়।

আমি অপরূপ চোখে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি তখন বৃদ্ধ মহিলা আমার দিকে পায়েসের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে বলল-
“আম্মাজান আপনি মেঘা মা না?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ি।

“আপনার কথা রুদ্র বাবার থেকে অনেক শুনেছি। আপনি খুব ভাগ্যবাতী রুদ্র বাবার মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছেন। রুদ্র বাবা খুব ভালা মানুষ আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা এখানে টিকে আছি খালি রুদ্র বাবার জন্য। আমাদের জন্য তো রুদ্র বাবা আল্লাহর তরফ থেকে পাঠানো ফেরেশতা।”

আমি তার কথা গুলো শুনে রুদ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকি। একটা মানুষের ভিতরে আর কত রূপ আছে?কখনো জেদী, কখনো রাগী,কখনো ভালোবাসার কাতর।
রুদ্র স্যার বাচ্চাদের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে আমার পাশে এসে ঘাসের উপর বসে পরল।
আমাকে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুঁচকে ইশারায় কি হইছে জিঙ্গেস করলে আমি নিচে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলে মুচকি হাসি দেয়।

ওখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝ রাত হয়ে যায়। বাসায় ফিরে দেখি বাসার মেইন দরজা আটকানো। রাইমা আপুকে খুলে রাখতে বলেছিলো কিন্তু সে হয়তো ভুলে গেছে। তখন রুদ্র স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
” আগে যখন বাসায় ফিরতে লেইট হতো তখন ইচ্ছে করেই দেয়াল টপকে ভিতরে যেতাম যদিও আম্মু বা রাইমাকে কল দিলে খুলে দিত। কিন্তু খুব শখ করেই আমি গেট টপকাতাম। আজ টপকাবে আমি তোমাকে তুলে দিব তুমি পারবে, নাকি রাইমাকে কল দিবো?”

আমি হেসে বলি-
“না আজ বরং দেয়াল টপকে জামাইয়ের বাড়িতে চোরের মতো ডুকি।”

স্যার মুচকি হেসে এক লাফে দেয়ালের উপরে ওঠে আমার দিকে হাত বাড়ায় আমি লেহেঙ্গা এক হাতে ধরে অন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরি। স্যার আমার পাশে এসে শুয়ে পরলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি-
“আমার জীবনের স্মরণীয় দিন গুলো ভিতর আজকে দিনটি দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি।”

রুদ্র স্যার তার বুকের মাঝে টেনে নিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বালিসে মাথা রাখল।
আমিও রুদ্র স্যারের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here