সংসার পর্ব ৯+১০

#সংসার
#পর্ব_০৯

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি চুপচাপ চিরকুট পড়ে মুচকি হাসি দেয়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি।

“বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার বুঝবে তুমি কত ধানে কত চাল।”

আজ বিকালে রুদ্র স্যার আমাকে নিতে আসলে ফুপি আর বাবা জোর করে রেখে দেয় এটা বলে যে আজ রাত এখানেই থাকতে হবে। সেই সাথে আমি জোর করে রাকিব ভাইকেও আমাদের বাসায় রেখে দেয়। আর রুদ্র স্যার কে আগেই ফোন করে রাইমা আপুকে নিয়ে আসতে বলি। মনে মনে প্লান করি, আগে দুজনের মত নিব তারপর পরিবার কে জানাব।

১৮.
খাবার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছি, আমার সামনে রাকিব ভাই আর রুদ্র স্যার বসেছে। আর অন্য পাশে আমি আর রাইমা আপু। টেবিলে দুই সাইডে বাবা আর ফুপি বসেছে। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করছি তখন রুদ্র স্যার কে বলি-
“রুদ্র স্যার আপনাকে আর একটু গোস দিব?”

আমার কথায় ওখানের সবাই ভুত দেখার মতো করে আমার দিকে তাকায়। আমি প্রথমে ভুল কী বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নামিয়ে। তখন ফুপি বলে-
“কিরে মেঘ তোরা কি এখনো অফিসের বস আর স্টাফ নাকি? তুই জামাই বাবা কে স্যার ডাকিস কেন? কমনসেন্স বলতে কিছু নেই?”

তখন রাকিব ভাই হেসে বলে-
“আহ বড় মা তুমি মেঘ কে বকছো কেন? এতে মেঘের দোষ কি, নিশ্চয়ই তোমাদের আদরের জামাই মেঘের সাথে বস স্টাফদের মতো কথা বলে। কি রুদ্র সাহেব ঠিক তো?”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছি, লজ্জায় মাথা নিচু করে প্লেটে ভাত মাখিয়ে যাচ্ছি গলা থেকে খাবার নামছে না। পায়ে সুরসুরি পেলে টেবিলে নিচে তাকিয়ে দেখি পায়ে পা দিয়ে রুদ্র স্যার সুরসুরি দিচ্ছে তখন টেবিলের উপর দিয়ে রাগি চোখে তার দিকে তাকালে দেখি রাকিব ভাইয়ের সাথে এমনি সাধারণ ভাবে কথা বলছে। রাকিব ভাই তার অফিসের ব্যাপারে জিঙ্গেস করছে আর সে সাধারণ ভাবে উত্তর দিচ্ছে। মুখের সাধারণ ভঙ্গিমায় রুদ্র স্যার কে দেখে মনেই হচ্ছে না এটা তার কাজ, আমি তার দিকে আড় চোখে তাকালে সবার অগোচরে বাম চোখ ঠিপে দেয়। আমি আচমকা এমন কিছু হওয়ায় খাবার গলায় আটকে যায়। রুদ্র স্যার আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় অন্য দিকে রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রুদ্র স্যারের দিকে একটা মানুষের এত রুপ কেমনে হয় আল্লাহ? আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র স্যার রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আমার দিকে গভীর চোখে তাকায়, ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নেই নয়তো অন্য কেউ দেখলে লজ্জায় আমারই পড়তে হবে।

হঠাৎ রাইমা আপুর দিকে চোখ যায়, দেখি রাইমা আপু মুগ্ধ চোখে রাকিব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত কিছুই খাইনি, শুধু প্লেটে হাত নেড়েই যাচ্ছে। আমি আপুর পাশে গিয়ে ফিসফিসি করে বললাম-

” ডিয়ার ননদিনী আমার ভাইকে কেউ নিয়ে যাবে না। বিয়ের পর তাকে চোখ ভরে দেখবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে কন্ট্রোল করুন।”

আমার কথায় রাইমা আপু লজ্জায় তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নেয়। আমি সামনে তাকাতেই দেখি রাকিব ভাই আমাদের দিকে তাকায়ে আছে, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকে কী জিঙ্গেস করতেই সে মুচকি হেসে টেবিল থেকে ওঠে যায়।

খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। আমি আর ফুপি সব কিছু গুছিয়ে রাখছি। আমি ইচ্ছে করেই সব কিছু গোছাতে দেরি করছি যাতে রুদ্র স্যারের সামনে গিয়ে আর লজ্জায় না পড়তে হয়।
হঠাৎ বাবুর কান্নার আওয়াজ শুনে আর থাকতে পারি না দৌড়ে রুমে চলে যাই। রুমে যেতেই রুদ্র স্যার আচমকা আমাকে টেনে তার বুকের মাঝে নিয়ে যায়।

আমি বিরক্তমাখা ভঙ্গিতে বলি-
“উহু ছাড়েন তো, পূর্নতা কাঁদছে।

স্যার আমাক হাতের ইশারায় বিছানার উপর দেখায় পূর্নতা ঘুমিয়ে আছে। আর তার হাতের ফোন থেকে ছোট বাচ্চাদের কান্নার রিংটোন বাজছে।

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললাম।
“আপ্নি আমাকে ধোকা দিছেন। প্রতরনা করছেন খুব খুব খারাপ আপনি।”

রুদ্র স্যার ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি টেনে বলে-
“সুন্দারী বউরা যদি নিজেদের বরদের থেকে পালায়। তাদের কে কাছে পাওয়ার জন্য বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করাকে প্রতরণা বলে না গো রূপাসী বউ।

আমি স্যারের মুখে বউ ডাক শুনে লজ্জায় মাথা নিচে নামিয়ে নিয়ে আসি। স্যার আমার লজ্জার সুযোগ নিয়ে বলে-
” রাকিব সাহেব কিন্তু ঠিকই বলেছেন আমি তো আর তোমার সাথে স্বামী সুভল ব্যবহার করছি না। আজ থেকে করা উচিত কি বলো? তাহলে যদি স্যার থেকে বাঙালি বউদের মতো ওগো ডাকতে পার।”

১৯.
আমি কথা ঘুরানোর জন্য বলি- “আসলে স্যার তেমন না, পূর্ণতার খাবা……”
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিলে আমি বড় বড় শ্বাস নিয়ে রাগী চোখে রুদ্র স্যারের দিকে তাকাই। রুদ্র স্যার আমার দিকে বাকা হেসে বলে-

“স্যার ডাকার শাস্তি এটা, আবার স্যার বললে এমন শাস্তি দিব। আর তুমি তো জানো আমি কথার খেলাপ করি না। আর যদি জামাই ডাকো তবে ভালোবাসা পাবে।”

আমি স্যারের দিকে জেদি চোখে তাকিয়ে বলি- ” আপনি খুব খারাপ লোক একটা। আপনার ভালোবাসা বা শাস্তি কোনটা আমার চাই না। ১০০ বার বলব স্যার দেখবো কি করেন। স্যার, স্যার, স্যার,,,,”

আর বলতে পারিনা তার আগেই রুদ্র স্যার আমাকে ধাওয়া করে। আমি বেডের চারপাশে ঘুরছি সাথে রুদ্র স্যার ও। হঠাৎ পায়ে সাড়ির আচল বেঁধে পরতে গেলে রুদ্র স্যার আমাকে ধরে নেই। বেডের উপর রেখে দুহাত শক্ত করে ধরে শুইয়ে দেয়। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করি তখনই কেউ দরজায় নক দেয়।

আমি রুদ্র স্যারকে ঠেলে এক দৌড়ে ওঠে দরজা খুলে দিতেই দেখি রাইমা আপু দাড়িয়ে আছে। রাইমা আপুকে দেখে আসহায় চোখে রুদ্র স্যার বলে-

“বোন রে ছোট বেলায় আমি কি তোর কোন ক্ষতি করছিলাম? নাকি চকলেট কিনে কম দিছিলাম? বোন হয়ে ভাইয়ের এতো বড় ক্ষতি কেন করিস বল তো?”

রাইমা আপু কথার কোন আগা মাথা না পেয়ে হাবলার মতো দাড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে-

“মেঘ তোমাকে রাকিব সাহেব ডাকছে। তার মা অসুস্থ তাই সেখানে সে যাচ্ছে সাথে ফুপিও যাচ্ছে। তুমি কী যাবে?”

আমি কিছু না ভেবেই বলে দেয় আমি ওদের সাথে যাব। রুদ্র স্যার কয়েক বার আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে নেই। রাকিব ভাইয়ের মা আমাকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে আর আজ আমি তার অসুস্থতার খবর শুনে যাবো না? রাকিব ভাইয়ের উপর রুদ্র স্যার প্রথম থেকে রাগ ছিল, মুখে মুখে ভালো ভাবে কথা বললেও ভিতরে সে কখনোই চাইতো না আমি রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলি। আর আজ যখন সে নিয়ে যেতে এসেছে অথচ আমি রাকিব ভাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছি শুনে রেগে চলে গেছে।

আমরা রাকিব ভাইয়ের বাসায় গিয়ে শুনি রাকিব ভাইয়ের বিয়ে তার ফুপাতো বোন অনুর সাথে ঠিক করেছে। আর রাকিব ভাইও কিছু বলতে পারছে অসুস্থ মা কে সে কথা দিয়েছে আজই বিয়ে করবে আর অনুকে বউ হিসেবে মেনে নিবে।
আমি সবাইকে সবকিছু বলতে চাইলেও সবাই সব কিছু গোছাতে ব্যস্ত। এক প্রকার ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হবে তবুও বাড়িতে নিজস্ব আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা।

সবকিছু এখানে এভাবেই থেমে যাবে। আবারো একটা বেড়ে ওঠা ভালোবাসা ভেঙে যাবে। দুজনের স্বপ্নের সংসার এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কথা গুলো ভাবতেই মনে হলো কে জেনো কলিজা চেপে ধরেছে। এই রকম পরিস্থিতি আমার থেকে আর কে ভালো বুঝবে?

আমি ধীরগতিতে রাকিব ভাইয়ের রুমের সামনে গিয়ে টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমের ভিতরে ডুকে দেখি রাকিব ভাই বরের পোশাক পরছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনুভূতি হীন এক মানব দাড়িয়ে আছে, যাকে যেটা বলা হয়েছে সে সেটাই রোবটের মত করে যাচ্ছে। আমাকে দেখেও না দেখের মতো করে আগে যা করছিল সেটাই করছে।

“রাকিব ভাই এটা কী করলেন? কেনো রাজি হলেন বিয়েতে, আন্টিকে কোন ভাবে মানিয়ে নিতেন।”

“সবার জীবনে সব কিছু পায় না মেঘ। কারো কারো জীবন ভালোবাসা হীন থেকে যায়। আর আমি আমার সেই জীবনকে মেনে নিয়েছি।”

আমি আরো বুঝালে সে একটা কথাই বলে সে তার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। আমি রাইমা আপুকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বললে বলে আম্মা অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব শুনলে বাঁচবে না। যা হবার হবে। এতোক্ষণ রাকিব ভাইয়া সাধারণ ভাবে কথা বললেও যখন বললাম রাইমা আপু যদি মরে যায় তখনই পিছন ফিরে হু হু করে কেঁদে ওঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি তাকে শান্ত করতে চেয়েও পারছি না। তখন রুমে রাকিব ভাইয়ের কাকি আসে-

“একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য এখনো কাঁদছিস রাকিব।তাও আবার হবু বউকে বিয়ের পিরিতে বসিয়ে। তোর জন্য সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। আর এই যে মেয়ে কী যেন নাম? ওহ মেঘ তোমাকে বলছি তোমার কি একটু লজ্জা নেই। বিয়ে হয়েছে আর অন্যজন ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছো। আগে তো অনেক বলতাম তখন আসো নাই আমাদের ছেলেক ভেঙ্গে খেয়েছো আর এখন বিয়ের পর ও খাচ্ছো। এবার ওকে একটু সুখে থাকতে দাও।”

আমার তার কথা শুনে ঘৃণায় চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরলো। রাকিব ভাই তাকে কিছু না বলে রুম থেকে রেগে নিচে চলে গেল।
আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম বাসায় ফিরে কি জবাব দিবো রাইমা আপুকে? কী করেই বা এই বিয়ে ভাঙবো ?”
#সংসার
#পর্ব_১০

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমার তার কথা শুনে ঘৃণায় চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। রাকিব ভাই তাকে কিছু না বলে রুম থেকে রেগে নিচে চলে যায়।
আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম বাসায় ফিরে কি জবাব দিবো রাইমা আপুকে? কী করেই বা এই বিয়ে ভাঙবো ?”

আমি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে রাকিব ভাইয়ের মায়ের কাছে চলে গেলাম। তাকে বুঝালাম যে এই বিয়ে হলে রাকিব ভাই জান্ত লাস হয়ে যাবে। আর রাইমা আপুর ব্যাপারে সব টা বললাম। সব শুনে আন্টি যা বললো তাতে আমি ধমকে দাড়াই।

২০.
“আনুর বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে অনু এখানেই থাকতো। ওর পড়ালেখা করতে হোস্টেল এ গেলেও লেখাপড়ার খরচ আমরা দিতাম। ছোট বেলায় অনু লক্ষী পতুলের মতো ছিল দেখে তখনই অনুর মাকে কথা দেয় তার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো। কিন্ত অনু হোস্টেল এ গিয়ে পুরোপুরি বদলে যায়। ব্যবহার ও বদলে যায়। খারাপ জিনিসে আসক্ত হয়ে পরে। তারপর শুনি রাকিব তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু ও আমাদের আগেই বলে যতদিন প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন যেন তোমাদের ফ্যামিলি কে না জানাই।
কিন্তু আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যায়। পরিস্থিতির চাপে পরে তুমি বিয়ে করে ফেলো সেদিন আমি তোমার ফুপির কাছে বলতে চাইলে রাকিব আমাকে আর যেতে দেয়নি। ও চাইতো তুমি সুখে থাকো। কিন্তু সেই দিন তোমার ফুপির কাছে বলব না কিন্তু সর্ত দিয়েছিলাম দুই দিনের ভিতর বিয়ে করতে হবে। তারপর ওই বাড়িতে মেয়ে পছন্দ হলেও শুনেছি রাকিব বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমি ভাবতাম কারণ হিসেবে হয়তো ও তোমাকে ভুলতে পারছে না। এদিকে শুনি অনুর সাথে রাকিবের বিয়ে না দিলে ও সুইসাইড করবে সব চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পরি। তারপর সবাইকে বলি সব কিছু তৈরি করতে আর রাকিবকে এনে সরাসরি বিয়ের পিরিতে বসাই। কিন্তু আজ শুনলাম ও অন্যজন কে ভালোবাসে তাই বিয়ে ভেঙ্গেছে। কিন্তু এখন যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয় তাহলে অনু নিজের কি ক্ষতি করে জানি না। সেই সাথে অনুর মা মনি কে আমাদের সারা জীবনের মতো হারাতে হবে।
যেটা হচ্ছে হোক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি আন্টির কথা শুনে রুম থেকে চলে আসি। আন্টির কথাই ঠিক হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু রাইমা আপুর কী হবে? সে না করবে কোনদিন বিয়ে আর না পারবে ভালো ভাবে বাঁচতে। আর রুদ্র স্যার তার বোনকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখেতে সহ্য করতে পারবে না।

আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রুদ্র স্যার ১১ টা কল দিয়েছে। ফোন সাইলেন্ট ছিল। আমি নিজেই রুদ্র স্যারকে কল দিলে সাথে সাথে ফোন ধরে ধমকের সুরে বলে-
“ইডিয়েট, ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে? কোথায় তুমি,পূর্ণতা কাঁদছে ওকে কী খেতে দিব? আর কিভাবে কি বানাবো?”

আমি এতগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে বলতে দেখে মিনমিন করে বলি-“আমি রাকিব ভাইয়ের বাড়িতে। পূর্ণতা খাবা,,,,”

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। আমি কয়েক বার কল দিলে ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়।পূর্নতা কাঁদছে, কিছু খাইয়েও যায় নি না জানি এখন কি রকম আছে। আমি আর কিছু না ভেবে রাইমা আপুকে ফোন করে পূর্ণতাকে খবার খাওয়াতে বলি।

২০.
কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা অনুদের বাসায় চলে আসি। বিয়েটা অনুর পৈতৃক বাড়িতেই হবে। আমি অনুকে দেখতে তার রুমে যাই। আর দুই ঘন্টার পর কাজী আসলেই বিয়ে হবে।

আমি অনুর রুমে গিয়ে নক করতেই শুনি অনু কারো সাথে কথা বলছে আর কাঁদছে। আমি বাহিরে আওয়াজ কথা গুলো ক্লিয়ার শুনতে পেলাম না তবে এটা অনুমান করলাম ও হয়তো ওর কোন লাভারের সাথে কথা বলছে।
আমি দরজায় নক না দিয়েই ঢুকে গেলাম। আমাকে অনু সামনে দেখে থতমত খেয়ে ফোন কেটে দিল।আমি অনুকে আস্থত করে সব বলতে বললে অনু বলে-

“কলেজ লাইফে রাজ নামে একটা ছেলের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব ছিল পরে রিলেশনে জড়ায়। কিন্তু ভুল বসত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। হঠাৎ একদিন অনু সেই ছেলেটার ফোন নাম্বার থেকে সব কিছু বন্ধ দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়। ওর বাড়িতে গিয়েও কোন খোজ পায় না। তারপর আস্তে আস্তে ভেবে নেয় ছেলেটা ওর সুযোগ নিয়েছে। তারপর বাড়ি ফিরে রাকিব ভাইয়ের উপর আগে থেকেই দুর্বলতা কাজ করত। সেই জন্যই সবাই ইমোশনাল ব্লাক মেইল করে বিয়েতে রাজি করায়। এর মাঝে একটা অননোন নাম্বার থেকে কল আসলে দেখে ওটা রাজের গলা। পরে রাজের থেকে সব জানতে পারে। রাজের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর সে এতোদিন কোমায় ছিল। যার কারনে কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। আর তার যে চাকরি টা ছিল সেটাও চলে গিয়েছে। সব শুনে অনু ছেলেটার সাথে পালাতে চাইলে ছেলেটা না করে দেয়, এটা বলে যে তার চাকরি নেই এখন সে বিয়ে করে অনুকে সুখী রাখতে পারবে না। খাবার তো দূর ঘুমানোর জায়গা টুকুও দিতে পারবে না।”

আমি অনুর কথা শুনে ভাবতে থাকি একটা মেয়ে একজনকে কতটা ভালোবাসলে অন্য জনকে বিয়ে করার জন্য ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে পারে?
তবে ওদের সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারলেই হবে হয়তো ওদের সম্পর্ক মিলিয়ে দিলে আরো একটা ভালোবাসার সংসার বেঁচে যাবে।
অনুর ভালোবাসায় ক্ষাত ছিল, তবে অনুর চোখে জল দেখে মনে হচ্ছে সে অনুতপ্ত। সে তার ক্ষাতটা পূরণ করে নিতে চায়, ভালোবাসা দিয়ে।

” ছিহ অনু, তোমাকে কিছু বলতেও ঘৃণা লাগছে। তুমি নিজে তো নিজের ভালোবাসা হারিয়েছো আর অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো। তোমার ধারনা আছে আজ বিয়েটা হলে কতো কিছু হতে পারতো?
রাজের নাম্বার টা দাও, আমি ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করছি।”

“প্লিজ আপু আমাকে বকো মারো তুমি রাজ কি কিছু বলো না, ও জানে না আজ আমার বিয়ে। আর তাছাড়া আমি কিভাবে এখন সবাইকে ছেড়ে পালিয়ে যাব।”

আমি অনুকে ধমক দিয়ে বলি-
” আবার ভুল সিধান্ত নিচ্ছো কেন? পালিয়ে যেতে হবে কখন বললাম। আমাকে ওর ফোন নাম্বার দাও কথা বলছি।”

আমি রাজকে ফোন দিয়ে কথা বলে জানতে পারি রাজ আগে রুদ্র স্যারের অফিসে কাজ করতেন, এক্সিডেন্টের কারণে চাকরি চলে গিয়েছে আর সে চাকরি ছাড়া অনুকে বিয়ে করতে চায় না। পরে আমি বলি তার আগের চাকরি ফিরিয়ে দিব, আর যদি সে অনুকে পেতে চায় তাহলে সে জেনে এখনি অনুর বাসায় এসে অনুর বিয়েতে গন্ডগোল করে। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু কিছু সময় গন্ডগলেও ভালো কিছু পাওয়া যায়।

কিছু মেয়েরা মিলে অনুকে নীচে নিয়ে এসেছে। কাজী সাহেব ও এসেছে। চারদিকে বিয়ের উৎসবে মেতে আছে। সবাই নিজের ভাবনায় ব্যস্ত, কেউ নতুন বউ ঘরে নিবে সেই আনন্দে আবার কেউ নিজেদের মেয়ে বিদায়ের বেদনায় কাতর। আমি বার বার চারদিকে তাকিয়ে রাজকে খুজছি। রাকিব ভাই রোবটের মতো বসে আছে। অনু চোখ দুটো ভয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুরন্ত মেয়েটা আজ ভালোবাসার কাছে চুপসে গেছে। কি অদ্ভুত এই ভালোবাসা?

বারবার কাজি অনুকে কবুল বলতে বলছে, অনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোট দুটো কাঁপছে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে চেপে ধরেছে। এতো কষ্ট করেও দুটো ভালোবাসার সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। এখানেই সব শেষ। বেঁচে থেকেও চারজন মানুষ জীবন্ত লাস হয়ে থাকবে।

#চলবে,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here