সংসার পর্ব ৭+৮

#সংসার
#পর্ব_০৭

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

আমি ফুপির কথায় ধমকে দাড়াই। যেভাবেই হোক এই বিয়ে ভাঙতেই হবে। রাইমা আপুকে দেয়া কথা রাখতে হবে।

পাশে তাকিয়ে দেখি রাইমা আপু দাড়িয়ে আছে চোখে পানি টলমল করছে। আমি তাকে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলাম যে কিছু হবে না। আমি সব ঠিক করে দিব।

আমরা সবাই রাকিব ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলাম। আমি, রাকিব ভাই, ফুপি, রাকিব ভাইয়ার একটা ফুপি, ফুপাতো বোন আর রাকিব ভাইয়ার মেজো কাকাও এসেছে। সবাই মেয়ে দেখার জন্য বসে আছি। এর মাঝে আমি বেশ কয়েক বার রাকিব ভাইয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি তবে প্রতিবারই রাকিব ভাইয়ের ফুপাতো বোন ‘অনু’ আমাদের কথার মাঝে ডুকে যেত। তাই আর সময় করে বলা হয়নি।
অনুকে প্রথম দেখাই বুঝেছিলাম গায়ে পড়া মেয়ে বিশেষ করে ছেলে দেখলে তো কথায় নেই।

১৩.
মেয়ে দেখতে এসেও এখানে একটা ছেলেকে সে পটিয়ে নিয়েছে চোখের ইশারায়। আমি সামনে বসে থাকা পাএী না দেখে তাদের চোখের ইশারা দেখছি। আর মাঝে মাঝে আমি মুচকি হেসে উঠছি।
একটা ছেলে বেশ অনেকক্ষণ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি ব্যপারটা সেভাবে না নিলেও এখন বেশ অস্বস্তি লাগছে। ছেলেটা এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ পূর্নতা কেঁদে ওঠে, এত মানুষের আনাগোনা পূর্ণতা অভ্যস্ত না তাই হয়তো বেশ ভয় পেয়েছে। আমি পূর্ণতার কান্না ধামানোর জন্য কোলে করে বাসার বাহিরে বের হলাম। বাসার এক পাশে সুন্দর একটা বাগান পূর্নতাকে কোলে নিয়ে বাগানে ঘুরছি তখনই সেই ছেলেটা এসে আমার পাশে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল-
“হাই, আম রাহুল এন্ড ইউ”

আমি হাত না বাড়িয়ে ছোট্ট করে জবাব দিলাম-
“মেঘ”

বেশ বিরক্ত নিয়ে আমি ছেলেটার পাশ কাটিয়ে অন্য পাশে দাড়াই। তখন ছেলেটি এসে আবার বলতে শুরু করে-
“হাউ আর ইউ?”আচ্ছা আপনি ছেলের কী হন? আমি মেয়ের একমাত্র কাজিন।

“জ্বী ভালো, আমিও ছেলের কাজিন।”

“আপনি খুব সুন্দর, দেখতে অস্পরীর মতো। বেবী টাও খুব সুন্দর। ঠিক আপনার মতো।

আমি ছেলেটা কথায় মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসি। ছেলেটা আমার পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে বলে-
“বেবী কাঁদছিল কেন, আমার কাছে দেন আমি বাহির থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আপনার বোন কিন্তু আপনার মতোই সুইট। নাম কী বেবীর?”

আমি ছেলেটার কথায় তার দিকে তাকায়, ছেলেটা আমকে পূর্নতার বোন ভাবছে।
“জ্বী এটা আমার মেয়ে।”

ছেলেটা আমার কথায় আহম্মকের মতো হয়ে যাই, মুচকি হেসে সরি বলে চলে যায়। আমরা বাকী যতক্ষণ ছিলাম ছেলেটাকে আর দেখিনি। আমার এই মুহূর্তে ছেলেটার মুখটা দেখে খুব হাসি পেলেও, হাসি চেপে বিতরে এসে রাকিব ভাইয়ের পাশে বসি।

রাকিব ভাইয়ের পাশে বসতেই , ভাইয়া আমার কাছাকাছি এসে ফিসফিস আওয়াজে জিঙ্গেস করে-
“মেঘ কই গিয়েছিলে? তুমি কিছু তো বল, তোমার মেয়ে কেমন লেগেছে?”

রাকিব ভাইয়ের কথায় আমি সামনে বসা মেয়ের দিকে তাকাই মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। ফুপি আজই আংটি পরিয়ে যেতে চাই। তখন আমি মেয়ের পাশে দাড়ানো খালাকে উদ্দেশ্য করে বললাম-
“আন্টি আমার মনে হয় ছেলে মেয়ে দুজন দুজনের সম্পর্কে জেনে নিয়ে সামনে কথা বাড়ানো উচিত। দুজন দুজনের সম্পর্কে জেনে নিলে ভালো হয়।”

আমার কথায় সবাই রাজি হয়। কিন্তু রাকিব ভাই আমাকে তার সাথে করে নিয়ে যায়। আমিও যেন এটারই সুযোগ খুজছিলাম। ছাদের একপাশে রাকিব ভাই আর মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। রাকিব ভাই বার বার তাদের মাঝে আমাকে ডাকছে।
আমি পূর্নতাকে কোলে নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি কাছে যেতেই রাকিব ভাই মেয়েটিকে বলতে শুরু করলো।

“দেখুন আমার একজন অতিত আছে। আর আমি কখনো আপনাকে তাঁর জায়গাটা দিতে পারব না। আপনার সব কিছু পূরন করব দিনশেষে আমার অতিতকেও ভালোবাসবো তার মানে এই নয় যে আপনাকে ভালোবাসবো না। আপনিই যতোটা আমার থেকে চাইবেন ততটাই পাবেন। এটা আপনি যদি মানতে পারেন তাহলে সবাইকে বলে দিবেন আমারা রাজি।”

মেয়েটা নম্র হেসে বলল-
“অতিত সবারই থাকে রাকিব সাহেব। কেউ লুকায় কেউ লুকায় না। আপনার কথা গুলো আমার ভাল লাগছে, তবে আমার কিছুদিন সময় লাগবে তারপর ভেবে জানাব।”

আমরা সবাই ওই বাসা থেকে চলে আসলাম, দুইদিন পর তারা ভেবে জানাবে এ বিয়েতে তারা রাজি কি না। তাছাড়া সবদিক থেকে দু পরিবারের পছন্দ হয়েছে। আমি রাকিব ভাইদের বাসায় এসে বেশ কয়েক বার কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে যতবার কথাগুলো বলতে চাইতাম ততবার রাকিব ভাইয়ের ফুপাতো বোন অনু আমাদের কথার মাঝে নানা বাহানায় আসত। বেশ বিরক্ত হয়ে রাকিব ভাইকে বাবার বাসায় নিয়ে আসি। এখানে বসে নিশ্চিতে সবটা বলা যাবে। রাতে খেয়ে পূর্নতাকে ঘুম পাড়িয়ে রাকিব ভাইকে মেসেজ দিয়ে ছাদে আসতে বললাম।

আমি ছাদের এক পাশে অনেকক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি। আকাশ আজ পরিষ্কার কোথাও মেঘ নেই। ঝকঝকে চাঁদ মনে হচ্ছে রাতের প্রকৃতি চাঁদের সাথে হাসছে। ফুরফুরে বাসাত গায়ের উপর আচড়ে পড়ছে।
রাকিব ভাই পেছনে এসে ছোট একটা কাশি দিতেই আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম। আমি তার দিকে তাকাতেই সে বলল-
“আসলে দুঃখিত, বড় মা জেগে ছিল, আমাকে দেখে তার রুমে ডেকে নিয়ে কথা বলছিল তাই একটু দেরি হলো।”

“আরে ঠিক আছে সমস্যা নেই, আপনি দেরীতে আসলেন বলে রাতের পরিবেশটা একটু উপভোগ করতে লাগলাম। আজকে আকাশ টা খুব সুন্দর তাই না?”

রাকিব ভাই আমার কথা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“রাতের আকাশ বরাবরই সুন্দর হয়। তুমি আজ অনেকদিন পর দেখছ তাই তোমার আজকের আকাশ সুন্দর মনে হচ্ছে? বাই দ্যা ওয়ে কি জানি বলবে বলছিলে? বলো এবার।”

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম-
“জানেন তো রাকিব ভাই উপরে যিনি আছেন সে কাউকে নিরাশ করেন না। ভালো কাজের ফল ভালো কাজই দেন। আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?”

রাকিব ভাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে কী জিঙ্গেস করতে আমি বললাম-
“আপনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দেন। আপনাকে রাইমা আপু খুব ভালোবাসে। তাছাড়া আমি রাইমা আপুকে কথা দিয়েছি আপনাকে তার কাছে নিয়ে আসব। প্লিজ আপনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দেন।”

রাকিব ভাই আমার কথা শুনে একটু দম নিয়ে বলল-
“মেঘ আমার জীবনের প্রথম সত্য আমি তোমায় ভালোবাসি, দ্বিতীয় সত্য আমি তোমার কোনো কথা ফেলতে পারি না। তবে আজকের জন্য আমাকে মাফ করে দেও আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না।”

১৪.
“রাকিব ভাই এভাবে কেন বলছেন? রাইমা আপু খুব ভালো একটা মেয়ে আপনাকে খুব ভালোবাসে। দেখবেন আপনারা খুব সুখী হবেন।”

“মেঘ তুমি বুঝতেছো না, আমি জানি রাইমা খুব সুইট একটা মেয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমি জানি তুমি রুদ্র সাহেব কে ভালোবাসো। আমি তোমার উপরও রেগে নেই। আমার ভালোবাসা এক তরফা যেই দিন তোমার ওই কাজল কালো চোখের প্রেমে পরেছিলাম সেই দিন থেকেই জানতাম তুমি কখনো আমার হবে না। কিন্তু তাই বলে এটা ভেবো না তোমাকে পাওয়ার স্বপ্ন কখনো দেখিনি। আমার তোমাকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখতাম যার জন্য আজ আমি এত ভালো পজিশনে। কিন্তু লাভ কি তোমাকে পাওয়া আর হলো না। তাই বলে আমি সব সময় তোমার সামনে থাকতে পারবো না ক্ষমা করে দিও। রাইমাকে বিয়ে করলে আমি ওখানে গেলেই তোমাকে রুদ্র সাহেবের কাছে দেখতে হবে, যা আমি পারব না। আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।”

রাকিব ভাইয়ার কথা শুনে আমার মনের শেষ আসা টুকুও ভেঙ্গে গেলো। আমি রাকিব ভাইএর দুহাত ধরে কান্না করে অনুরোধ করে বলতাম-
“রাকিব ভাই এমনটা করতে পারেন না। এই শেষ বার আমার শেষ অনুরোধ রাখেন। আপনি না চাইলে আমি কখনো আপনার সামনে আসবো না। আপনাকে রাইমা আপু খুব ভালোবাসে যতটা আপনি আমাকে বাসেন। আমি যে তাকে কথা দিয়েছে প্লিজ ফিরিয়ে দিয়েন না।”

আমি রাইমা আপুকে দেওয়া কথা রাখতে পারবো না ভেবে নিজের ভিতরে অপরাধরোধ জেগে ওঠে। আজ আমি ওই বাড়িতে না গেলে রাকিব ভাইয়ের রাইমা আপুকে মেনে নিতে কোনো অসুবিধা ছিল না। শুধু আজ আমার জন্য রাইমা আপু তার ভালোবাসা হারালো ভেবেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

আমাকে কান্না করতে দেখে রাকিব ভাই আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল-
“মেঘ কেঁদোনা প্লিজ, আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। কেঁদোনা আমি তোমার কথা পূরন করতে সাহায্য করবো।”

রাকিব ভাই কথাটা বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। আমি রাকিব ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিতেই দেখি রুদ্র স্যার উপরের সিড়িতে দাড়িয়ে আছে। রুদ্র স্যারকে দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। স্যার কী রাইমা ম্যাম আর রাকিব ভাইয়ের সব কথা শুনেছেন? নাহ এতোদূর থেকে কিছু শুনতে পাবে না তবে আমার রাকিব ভাইয়ের হাত ধরা, তাকে আমার চোখের জল মুছিয়ে দেওয়া সবই দেখেছেন নিশ্চয়ই। কখন এখানে এসেছেন তিনি? আবার কি ভুল বুঝবেন, এক ভুল ভাঙতে না ভাঙতেই আবার কি ভুল বুঝবেন?

এসব ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে যাই। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুদ্র স্যারের দিক পা বাড়াই। আমি স্যারকে কিছু বলতে নিবো, কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার বাম হাত ধরে সিড়ি থেকে টানতে টানতে নিচে নামায়। আমি পা মচকে পড়ে গেলেও সে সেদিকে খেয়াল না করে জোরে জোরে টানতে টানতে রুমের ভিতর নিয়ে এসে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

#চলবে,,,,,,
#পর্ব_০৮ (#সারপ্রাইজ_পর্ব)

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

এসব ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে যাই। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুদ্র স্যারের দিক পা বাড়াই। আমি স্যারকে কিছু বলতে যাবো, কিন্তু আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার বাম হাত ধরে সিড়ি থেকে টানতে টানতে নিচে নামায়। আমি পা মচকে পড়ে গেলেও সে সেদিকে খেয়াল না করে জোরে জোরে টানতে টানতে রুমের ভিতর নিয়ে এসে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

১৬.
রুদ্র স্যার রুমের জানালার পাশে দাড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টানছে, আমি পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম-
“কখনো কখনো চোখের দেখা আর কানের শুনাও ভুল হয়। আপনি আজ যা দেখছেন তা সত্যিনা প্লিজ বিশ্বাস করেন।”

রুদ্র স্যার আমার কথা না শুনে এক দৃষ্টিতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে সিগারেট ফুকছে। আমি কাধে হাত রেখে একটু নাড়া দিতেই স্যার আমার দিকে ঘুরে তাকায়।
“বিশ্বাস করুন যা দেখছেন ওসব কিছুই সত্যিই না, আপনি ভুলল বুঝছেন। দয়ে একটু কথা বলেন আপনার পায়ে পড়ি। ওভাবে চুপ করে থাকবেন না, প্লিজজজজজ।”

“কিসের বিশ্বাস, হ্যাঁ? আজ যা দেখছি এটা মিথ্যে নাকি আগেরবার বিয়ের আগে যেটা বলছো সে টা মিথ্যে?
তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তাও মেনে নিয়েছি কিন্তু বিয়ের পর এটা আমি মেনে কি করে নিব? আর তুমি বলছো বিশ্বাস করতে? ছিহ, কি মুখ নিয়ে এটা বলছো লজ্জা করে না একজনের বউ হয়ে অন্য একজনকে জড়িয়ে ধরতে?”

রুদ্র স্যার যা বলছে তা একটুও ভুল না। আজ এখানে অন্যকেউ থাকলে হয়তো আরো বেশি বলতো। কিন্তু আমি যা করেছি তাও তো ভুল না। চোখের দেখা তো সব সময় সঠিক হয় না।
রুদ্র স্যার আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বের হবার জন্য পা বাড়ায়।

আজ রাগের মাথায় কী না কী করে ভাবতেই শরীরে কাটা দেয়। না জানি আজ নিজের কী ক্ষতি করে বসে।
আমি দৌড়ে গিয়ে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরি। পা থেকে রক্ত পরছে সোজা হয়ে দাড়াতে পারছি না কিন্তু এই মুহূর্তে আমার পায়ের ব্যাথার কথা ভুলে গেছি।
আমি পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে গেলে স্যার আমাকে ঝাটকা মেরে সরিয়ে দেয়। আমি টাল সামলাতে না পেরে পাশের টেবিলের উপর পরে জোরে চিৎকার করে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
,
,

রাকিব ছাদ থেকে নিচে যাওয়ার সময় রুদ্র কে দেখে তখন কি না মনে করলেও এখন খুব ভয় লাগছে না জানি ভুল বুঝে আবার কি করে ফেলে।
রুমে এসে একটু চোখ বুঝলেও মেঘের কথা মনে পরতে আর রুমে শুয়ে থাকতে পারে না। অন্তত রুদ্র সাহেব কে সব বলে ভুলটা ভাঙ্গিয়ে দেওয়া উচিত।

রাকিব দ্রুত গতিতে ছাদে ওঠে দেখে কোথাও মেঘ বা রুদ্র নেই। ফিরে আসার সময় কোন রিংটোনের শব্দ পেয়ে সেদিকে পা বাড়ায়। মেঘের ফোন পড়ে আছে আর কে যেন বার বার কল দিচ্ছে।

রাকিব ফোনটা তুলে নিলেও রিছিব করে না, কল টা কেটে যেতে দেখে ১৩ বার কল দিছে হয়তো জরুরী কথা ভাবতে ভাবতেই আবার কল দেয়। রাকিব আর কিছু না ভেবে কলটা রিছিভ করে।

“মেঘ তোমার কি কমনসেন্স বলতে কিছু নেই বলো তো? আমি এদিকে বসে যে চিন্তায় মরে যাচ্ছি সে টা কি ভাবছো একবার ও? আমি বুঝতে পারছি তুমি ব্যস্ত তাই বলে একটা বারও জানাতে পারলে না ওখানে কি হলো? রাকিব সাহেব কি বললো, বিয়ে কি ঠিক হয়েছে?
বলতে বলতে ফোনের ওপাশে রাইমা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আবার বলে-
“ও মেঘ আমি জানি তুমি একজন দায়িত্বজ্ঞান মেয়ে। ভালো কিছু হলে অন্তত একবার হলেও কল দিতে। খারাপ খবর দেখেই কল দিচ্ছে বলছো না আর কল ধরছো না, তাই না?
জানো মেঘ আমার ভাগ্য টাই এমন যাকে মন থেকে চাই কখনো পাইনি। খুব ভালোবাসি যে রাকিব সাহেব কে। তাকে ছাড়া টিনেজারদের মতো আত্মহত্যা করতে পারবো না ঠিকই কিন্তু জীবন্ত লাস হয়ে থাকবো। কি হলো, কথা বলছো না কেন মেঘ। যা হইছে বলো আমি মানিয়ে নিবো তবুও চুপ করে থেকে আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না দয়া করে।”

কথাগুলো বলতে বলতে রাইমা আবার ডুকরে কেঁদে ওঠৈ। রাকিব চোখ থেকে এতক্ষণে কয়েক ফোটা পানি পড়ল, একটা মেয়ে তাকে এতটা ভালোবাসতে পারে সে কল্পনাই করতে পারেনি। কথা ঘুরানোর জন্য রাকিব বলল-
“হ্যালো, হ্যাঁ কে বলছেন?”

“আপনি কে? আর মেঘের ফোন আপনার কাছে কেন? কে বলছেন আপনি। নাম কি আপনার?

“জ্বী রাকিব আহমেদ। আপনি রাইমা তাই নাহ?”

রাইমা রাকিব প্রশ্নের উওর না দিয়ে কিছু না ভেবেই মনের আবেগে বলে-
“আচ্ছা আপনার কি বিয়ে ঠিক হইছে, আপনি কি বিয়ে করছেন? খুব সুখে রাখবেন আপনার বউ কে তাই না?”

“চোখের সামনে এমন একটা সুন্দরী মেয়েকে কাঁদতে দেখে কে পারে অন্য কোথাও গিয়ে বিয়ে করতে? বাই দ্যা ওয়ে আমি সুন্দরীদের জন্য সারা জীবন নিজেকে সিঙ্গেল নামে উৎসর্গ করতে রাজি আছি।”

কথা টা বলতেই রাকিব উচ্চস্বরে হেসে দেয়। মূলত রাইমাকে শান্ত করতে ফাজলামি করে এটা বলল।

১৭.
কিছুক্ষণ আগে রাইমা কি রকম একটা প্রশ্ন করলো তার আগে মেঘকে বুঝে আবেগে কত কিছুই না বলল ভাবতেই লজ্জায় ফোন কেটে দেয় রাইমা। কি করে তার সামনে যাবে ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। রাকিব সাহেব যে তার এক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আরো লজ্জা পাইয়ে দিল এবার কি করে তার সামনে গিয়ে বলবে “ভালোবাসি আপনাকে খুব ভালোবাসি।”

রাকিব আরো একবার রাইমার ফোনে কল দিলে,কল যাওয়ার সাথে সাথে কেটে দেয় রাইমা। রাকিব মুচকি হেসে ফোনে মেসেজ একটা পার্কের লোকেশন পাঠিয়ে দুইদিন পর দেখা করতে বলে।
,
,

আমার চোখের উপর কয়েক ফোটা পানি পরলে চোখ পিটপিট করে আস্তে আস্তে তাকাই। কোথা থেকে চোখে পানি পরছে দেখতে উপরে তাকিয়ে দেখে রুদ্র স্যার আমার দিকে ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে টুপ টুপ করে জল পরছে। আমি বিছানা থেকে ওঠে বসতে নিলে রুদ্র স্যার বলে ওঠে

“এখন কেমন লাগছে মেঘ?”

“হুমমম এখন ভালো লাগছে।”

আমি উঠে বসতে গেলে ব্যাথায় ‘আহহহ’ বলে কেঁকিয়ে ওঠি। রুদ্র স্যার তড়িঘড়ি করে আমাকে নিজে ওঠিয়ে বসিয়ে দেয়। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখি মাথায় আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা।
সিড়ি দিয়ে পরে যাওয়ার পর টান দিয়ে নামানোর সময় কাপড় ছিড়ে হাঁটু ছিলে গেছে।

রুদ্র স্যার করুণ গলায় বলে-
“আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজজজ, আমি বুঝতে পারেনি আমার রাগের কারনে তুমি কষ্ট পাবে।”

আমি রুদ্র স্যারের জবার না দিয়ে ওল্টো বলি-
“বিশ্বাস করেন আমি ওসব করেনি। আপনি যেগুলো ভাবছেন ভুল ভাবছেন। রাকিব ভাইয়ের সাথে আমার অন্য কোন সম্পর্ক নেই।”

রুদ্র স্যার আমাকে টান দিয়ে তার বুকের উপরে মাথা রেখে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে-
“ভুল হোক বা যাই হোক, আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই প্রথম সত্য। প্রথম বার নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। এটা ভেবে প্রথম বার ছেড়ে দিছিলাম যে তুমি সুখে থাকো। কিন্তু তুমি ছিলে কই আর ওল্টো আমিও কষ্ট পেলাম।
দ্বিতীয় বার এই ভুল আর করব না। আমি কখনো তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না। আর যদি না যাও তাই সম্পর্কের প্রথম দিনই কলমে আর শারীরিক ভাবে দুদিকেই তোমাকে নিজের করে নিয়েছে। আমি জানি সেই দিনের কথা, কতটা জানোয়ারের মতো আচারন করেছি তোমার সাথে কিন্তু বিশ্বাস করো সেই দিন যতটা না রাগ ছিল তার থেকেও বেশি ছিল ভালোবাসা।

লজ্জা আর অপরাধবোধে দুইদিন তোমার সামনে যাইনি তোমার চোখের দিকে তাকানোর ও সাহস হয়নি। তাই প্রতিদিন তুমি ঘুমালে পিছনের বারান্দার দরজা দিয়ে আসতাম তোমার সাথে কথা বলতাম। যা তুমি স্বপ্ন ভাবতে। প্রথম প্রথম যখন দেখতাম তুমি আমাকে দেখলে গুটিয়ে যাও, কথা বলতে ভয় পাও তখন নিজের ভিতর অপরাধ জেগে ওঠতো আর গিয়ে কন্টোল করতে না পেরে নিজের ক্ষতি করতাম। খুব ভালোবাসি মেঘ তোমাকে। যতটা সেই সময় তোমার কন্ঠ শুনে, না দেখে ভালোবাসতাম ততটা।

আর আমি অত ভালো না মেঘ এবার কোন ভুল করলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো, সুখ হোক দুঃখ দুটোই তোমার সাথে ভাগ করে নিব। আর রইলো বিশ্বাস, তুমি শুধু আমার বিশ্বাস টা কখনো ভেঙ্গো না আমি তোমার জন্য সব উৎসর্গ করবো। যতই ভুল করো অন্তত আমাকে সত্যিই টা জানিও। ”

আমি চুপচাপ রুদ্র স্যারের কথা শুনছি। একটা মানুষ কতটা ভাগ্যবতী হলে আমার একজনকে পায়। আমি সত্যিই দুনিয়ার সেরা ভাগ্যবতী।
আমি স্যারের দু হাত আমার হাতের মাঝে আনতেই স্যার ব্যাথা কেঁকিয়ে ওঠে। আমি স্যারের দিকে তাকাতে মুখে হাসি কিন্তু তার ভিতরেও কষ্টের ছাপ।
আমার হাতের দিকে চোখ পরতেই দেখি হাত রক্তে মেখে আছে। আমার তো ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দিছে তাহলে এই তাজা রক্ত কী করে আসলো?

তখনই আমার রুদ্র স্যারের বাম হাতে চোখ পরে। বাম হাত ফেটে রক্ত পরছে। বেডের পাশে তাকাতেই দেখি পাশের কাচের টেবিলটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে। হয়তো হাত দিয়ে আঘাত করেই ভেঙ্গেছে। আমি চুপচাপ হাত ক্লিন করে মেডিসিন লাগাতে থাকি।
অভিমানে কথা মুখ থেকে বের হচ্ছেনা চুপচাপ কাঁদছি আর ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
স্যার আমার অভিমান বুঝতে পেরে বলে-

“এই মেঘ প্লিজজ কেঁদোনা তখন তোমাকে ওই ভাবে কষ্ট পেতে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। কিন্তু তুমি এখন যেভাবে কাঁদছো সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। এখন হাতে যা ব্যাথা পাচ্ছি এটা হাতেই থাকছে কিন্তু তোমার এইভাবে কান্নাটা আমার বুকে গিয়ে লাগছে। প্লিজজজ কেঁদোনা।”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ ব্যান্ডেজ করে, আবার রুদ্র স্যারের বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙলে ওঠে দেখি রুদ্র স্যার রুমে নেই। সারা রুম অন্ধকার। আমি আর কিছু না ভেবেই দৌড়ে বাহিরে চলে যাই। ফুপিকে দেখে রুদ্র কই জিঙ্গেস করতেই বলে যে রুদ্র রাতে এসেই চলে গেছে।

আমি দৌড়ে রুমে আসি। এতক্ষণ পায়ে ব্যাথার কথা মনে না থাকলেও দৌড় দেওয়ার কারণে পায়ে ব্যাথা লাগছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে রুমে লাইট অন করে আসে পাশে তাকাতেই দেখি বেডের পাশে বালিশের উপর একটা চিরকুট
“এই টুকু ব্যাথাতেই অজ্ঞান? আমার বউ এতো দুর্বল হলে চলবে না। সারাদিন দিন মার খাওয়ার মতো অভ্যাস থাকতে হবে। যতসব ন্যাকামি।”

আমি চুপচাপ চিরকুট পড়ে মুচকি হাসি দেয়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠি।

“বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার বুঝবে তুমি কত ধানে কত চাল।”

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here