সংসার পর্ব ৫+৬

#সংসার
#পর্ব_০৫

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

ওদের বিয়ের পর আমি রুদ্র স্যারের অফিসের কাজ ছেড়ে দেই। তার ছয় মাসের মাথায় শুনি বৃষ্টি অসুস্থ, বাচ্চা হবে। সেদিন ফুপি খুশিতে যাকে পেয়েছে তাকেই মিষ্টি খাইয়েছে। মনে মনে তাছিল্য হেসে ভেবেছিলাম এই ছিল তার ভালোবাসা? এতোই যদি ভালোবাসতো তাহলে এত তাড়াতাড়ি বৃষ্টির রুপে গলে যেত না। আবার নিজেকেই ওল্টো প্রশ্ন করতাম, আমি বা আর কী ভালোবাসতাম, ভালোবাসলে কি তাকে ছেড়ে থাকা যায়?

কয়েক মাস কেটে গেছে। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। চোখের নিচের গাড়ো কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। সুন্দর চেহারাটা মলিন হয়ে গিয়েছে। গোলগাল মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখতেই বৃষ্টি জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে।
এতোদিনের মনের ভিতরে পুষে রাখা কষ্ট রাগ অভিমান বৃষ্টির কান্না দেখে হারিয়ে গেল।

বৃষ্টির এমন অবস্থা কেনো জিঙ্গেস করলে কান্না ভরা চোখে একে একে সব বলতে শুরু করে –

“বিয়ের পর রুদ্র স্যার ভালো ব্যবহার করলেও কখনো স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে ওদের ভিতর গড়ে ওঠেনি। প্রথম প্রথম বৃষ্টি মেনে নিলেও পরে যখন রুদ্র স্যারকে এসব ব্যাপারে জোর করত তখন থেকে রুদ্র স্যার ওর সাথে ভালো ভাবে কথা বলেনি। একদিন রাগে বৃষ্টি রুদ্র স্যারকে বলেছিল-
“কেন করছেন এমন? আমি কোন পর নারী নই আপনার স্ত্রী তাহলে কেন ভালো করে কথাও বলছেন না? ওহ ওই মেঘের জন্য, ওই নষ্ট মেয়ের জন্য? ওর জন্য কখনো বাবার ভালোবাসা পায়নি এখন আপনাকেও কেড়ে নিতে চাচ্ছে। ওর মতো নষ্ট……”

০৯.
বৃষ্টিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রাগে বৃষ্টির দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে-
“হুসসহহহ, কোনো কথা বলবি না। আমার মেঘ নষ্ট হোক খারাপ সেটা শুধু আমিই বলবো আমিই শাস্তি দিবো অন্য কেউ সেখানে কথা বললে মেরে টুকরো টুকরো করে দিবো।”

এই টুকু বলতেই বৃষ্টি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। বৃষ্টি চোখের পানি মুছে আবার বলতে শুরু করে-

তারপর একদিন বাহির থেকে ড্রিংস করে বাসায় এসে মাতাল হয়ে পড়ে যার সুযোগ নিয়ে বৃষ্টির রুদ্র স্যারের সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। বৃষ্টিও সেদিন রুদ্র স্যারকে বাধা দেয়নি এটা ভেবে, রুদ্র জ্ঞানে থাকুক আর না থাকুক রুদ্রকে আপন করে পাচ্ছে এটাই অনেক। যার জন্য আজ বৃষ্টি প্রেগন্যান্ট।
কিন্তু ওর এই একটা ভুলের জন্য রুদ্র আর কখনো বৃষ্টির সাথে থাকেনি হয়ত ড্রিংস করে বাহিরে সারা রাত কাটিয়ে দিত। নয়তো অন্য রুমে এসে শুয়ে পড়ে থাকত।

বৃষ্টির প্রেগনেন্সির তিন মাসের সময় অফিসে হারিয়ে যাওয়া ফাইলে পুরোনো সিসি টিভি রেকর্ড খুজে পায় রাইমা ম্যাম। তখন সেটার একটা কপিতে রাইমার সেদিন এক্সিডেন্টের কারন বৃষ্টি এটার জানার পর থেকে ওই বাসার সবাই বৃষ্টির সাথে খারাপ ব্যবহার করত। তার জন্য আজ বৃষ্টি এখানে চলে এসেছে।

আগের বৃষ্টি আর এই বৃষ্টি সম্পূর্ণ আলাদা। বৃষ্টি আজ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ফুপিও বৃষ্টির কষ্ট দেখে ধুকে ধুকে মরছে। আমি বৃষ্টির কষ্ট দেখে রুদ্র স্যারের কাছে অনুরোধ করতে আসতে চাইলে বৃষ্টি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে-

“রুদ্র আর আগের মতো নেই মেঘ। এখন সাইকোর মতো ব্যবহার করে। ও তোকে যতটা না ভালোবাসতো তার থেকেও এখন বেশি ঘৃণা করে। তুই আমার জন্য ওর কাছে গিয়ে নিজের ক্ষতি করবি না”

বৃষ্টির ওর ভুলের জন্য তিলে তিলে মরছে। যখন ডেলিভারি হয় তখন রুদ্র স্যারের পরিবারের সবাই এসেছিল। ডেলিভারি পর মা আর বেবী দুজনে ঠিক থাকলেও। ৪৮ ঘন্টার ভিতরে বৃষ্টি ওর সব ভুলের সমাপ্তি টেনে চলে যায় আমাদের ছেড়ে। বৃষ্টি যা যা ভুল করেছিল তার থেকে ওর শাস্তি টা অনেক বড় ছিল।বৃষ্টি তো সব শুধরে নিতে চেয়েছিল তবে কেন ওরে আল্লাহ আমাদের মাঝে থেকে নিয়ে নিল? সেদিন রুদ্র স্যার সবার মাঝ থেকে বৃষ্টির বাচ্চাকে কোলে করে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

এদিকে বাবা, ফুপি বৃষ্টিকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। আর এখন যদি বৃষ্টির মেয়েকে চোখের সামনে দেখতে পেত তাহলে একটু শান্ত হত। আমি কয়েক বার ওই বাসায় বাবু জন্য গেছিলাম কিন্তু রুদ্র স্যার এক কথায় বলে দিছে তার মেয়েকে সে কখনো দিবে না।

তার কিছুদিন পর রাইমা ম্যাম আর তার মা এসে বলে আমাকে রুদ্র স্যারের বউ করতে চায়। ফুপি এক কথায় না করে দেয়। যে ভুলে বৃষ্টিকে হারিয়েছে সেই ভুলে আমাকে হারাতে দিবে না। জেনে শুনে নরকে ঠেলে দিবে না।
ফুপি তাদের অপমান করে পাঠিয়ে দিলেও রাইমা ম্যাম পর পর কয়েক দিন এসে আমাদের বুঝায়।

“ফুপি আমি আপনাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু ওই ছোট বাচ্চাটার কথা একবার ভাবুন। ভাইয়া এখন নিজেই ঠিক নেই তার উপর বাবুকেও কারো কাছে দেয় না এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে খেয়ে দুধের বাচ্চাটা মরে যাবে। মেঘ তুমি কি চাওনা বোনের শেষ স্মৃতি বাচিয়ে রাখতে?”

ফুপি আর রাইমা ম্যামের কথার উপর কথা না করতে পারে না, এক প্রকার বাধ্য হয়েই রুদ্র স্যারকে বিয়ে করতে হয়। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়েছিল। বিদায়ের সময় ফুপি আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিল-
“তোর মাও এমন ছিল, অন্যের সাহায্য করতে নিজেকে বিলিয়ে দিত। আমি হিরে চিনতে ভুল করেছিরে মা। আজ আমার ভুলের জন্য বৃষ্টি চলে গেল। আমি ওকে সব কিছুতে লাই না দিলে এতো কিছু হতো না।”

‘অনুশোচনা’ বড় একটা অসুখের নাম। কেউ যদি তার কোনো কাজের জন্য অনুশোচনায় ভুগে এর থেকে তার জন্য বড় কোনো শাস্তি হতে পারে না। এই অনুশোচনা তাকে আজীবন তিলে তিলে শেষ করে দেয়। যে অসুখে আজ ফুপি ভুগছে।

বর্তমান,,,
পূর্ণতাকে কোলে নিয়ে বসে আছি। আজ বৃষ্টির কথা খুব মনে পড়ছে। এই জায়গায় আজ বৃষ্টি থাকত। ১০ মাস পেটে সন্তান রেখে কতই না স্বপ্ন বুনেছিল তবে সেই সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বৃষ্টির জায়গা থেকে ও ভুল ছিলো না। জন্মের পর থেকে সবার মুখে শুনতো তার মা বাবা তাকে তার ফুপির দিয়ে গেছিল। মায়ের আদর ওর ভাগ্যে জুটেনি এই কথাগুলো ছোট বেলা থেকে ওর মাঝে জেদের মতো কাজ করত। সেখান থেকেই আমার জন্য হিংসা কাজ করতো। ফুপির ভালোবাসা আমি কখনো পাইনি বলে বাবা বৃষ্টির থেকে আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতো এট বৃষ্টির সহ্য হতো না।
তাই আমার সবকিছুতে ওর ভাগ বসাতো একসময় ওর জেদ গুলো সম্ভাব হয়ে যায়। সব গল্পে হিরো আর ভিলেন থাকে তবে ভিলেন সবাইকে বলা যায় না, হিরোকে যেমন সব দিক থেকে পারফেক্ট তেমনই ভিলেনের সবদিক থেকে তার পরিস্থিতি দেখে তাকে ভিলেন বলতে হয়।

১০.
সারাদিনে একবারের জন্যও রুদ্র স্যার রুমে আসেনি। দুপুরে রাইমা ম্যাম খাবার দিয়ে গেছেন।
বাহিরে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেজে। ঘড়িতে কয়টা বাঝে দেখার জন্য রুমের ওয়াল ঘড়িতে চোখ যায় ঘড়িটা ভাঙা। এই রুমের খুব সখের জিনিস দিয়ে ভরা থাকলেও সব কিছু এলোমেলো কিছু কিছু জিনিস ভাঙ্গা। রুদ্র স্যার খুব সখের মানুষ নয়তো এতো বড় বাড়ি থাকতে কেউ রুমের ভিতরে একুরিয়াম রাখে? বেশ বড় রুম, রুমের একপাশে একটা দোলনা। দোলনার চারপাশে পাস্টিকের গাছপালা দিয়ে সাজানো। নিচে ঘাসের মতো কার্পেট। মনে হচ্ছে এখানে একটা বাগান সাজানো। খুব সুন্দর করে সাজানো ছিল হয়তো, কিন্তু এখন সব কিছু এলোমেলো।

এই একদিনে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে এইরুমে আসা সবার বারন। রাইমা ম্যামও তাই খাবার দিয়ে সাথে সাথে চলে যায়। নয়তো বাড়িতে এতোগুলো কাজের লোক থাকতেও রুম এলোমেলো থাকে?
ফোনটা হাতে নিলাম সময় দেখার জন্য, এই একদিনে ফোনটা একবারের জন্য ধরেনি বন্ধ হয়ে আছে। ফোনটা চার্জে লাগিয়ে রুমের ভিতর হাটাহাটি করতে লাগলাম।
একটা রুমের ভিতর কেউ সারাদিন কিভাবে থাকে? দম বন্ধ হয়ে আসছে।
পেটেও ইদুর দৌড়াচ্ছে। আজ রাইমা ম্যাম বাসায় নেই তাই রাতের খাবারও কেউ দিয়ে যায়নি। সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। রান্না ঘরের উদ্দিশ্যে বের হবো ভেবে রুমের দরজা খুলতেই রুমের ভিতর হুরমুর করে রুদ্র স্যার ডুকে। তাল সামলাতে না পেরে আমার গায়ের উপর পরে যায়। আমি নিজেকে সামলে রুদ্র স্যারকে তুলে দাড় করিয়ে সরে যাই। গা থেকে ড্রিংস এর বাজে গন্ধ আসছে। কেমন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে।

আমার কালকে রাতের কথা মনে পরতেই ভয়ে কুকড়ে যাই। ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে ওয়াশরুমের পা বাড়ায়। মনেমনে ভেবে নিয়েছি যতখন না রুদ্র স্যার ঘুমাবে ততক্ষণে আমিও বের হবো না।
প্রায় দশ মিনিট পর কোনো শব্দ না পেয়ে আমি আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে বাহিরে আসি। স্যার পুরো খাটে উপর ওল্টো ভাবে শুয়ে আছে। পূর্ণতা তার পাশেই। রাতে যদি পড়ে যায় এই ভয়ে আমি পূর্নতাকে দোলনায় শুইয়ে দেয়। লাইট বন্ধ করে সোফার উপর শুয়ে থাকিট।

গভীর রাত, গালের উপর কেউ স্পর্শ করছে গভীর দৃষ্টি দিয়ে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ ঘুম থাকলেও অনুভব করছি তাকে। অচমকা ঘুম ভেঙ্গে যেত ওঠে বসে। দেখি রুদ্র স্যার নিচে হাটু গেড়ে আমার মাথার পাশে বসে আছে। হঠাৎ আমায় এভাবে ওঠতে দেখে স্যার চমকে যায়।

গভীর রাতে রুমে নিজের বউ। যার সাথে তার পবিত্র সম্পর্ক আছে। নিজেকে কন্টোল রাখতে পারেনি তাই কাছে এসেছেন। ভাবতেই আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সোফার উপর পা দুটো ওঠিয়ে বসি। তবে কি আবার কালকের মতো ভালোবাসা হীন প্রতিশোধের আগুনে আমাকে আজো জ্বালাবেন?
রুদ্র স্যার আমাকে ভয় পেতে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো, যে হাসির পিছনে অপরাধবোধ লুকিয়ে আছে। খাবার প্লেট সামনে তুলে দিয়ে বলল।

“রাতে কিছু খাও নি, এটা খেয়ে নাও। ভয় পেওনা আমি কিছু করবনা।”

আমি কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলাম। দুপুরে খাওয়ার পর আর কিছু খাইনি। পেটে ক্ষুদার জন্য কিছু না বলেই খেতে শুরু করলাম।
খেয়ে ঘুমঘুম চোখে আবার গুটিসুটি মেরে সোফার উপর সুয়ে পরি। রুদ্র স্যার তার আলতো হাতের বাহুতে আমাকে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দেয়। আমি ওঠে খাটের উপর বসতেই বলে।
“ভয় পেওনা, আমি কিছু করবোনা। যতদিন না তোমার ভয় দূর হচ্ছে ততদিনে আমি তোমার পাশেও যাবো না। প্রমিজ।”
আমি ঘুম ঘুম চোখে মুচকি হেসে বিছানার উপর শুয়ে পরি।

সকাল হয়েছে কিছুখন আগে। রাইমা ম্যার বার বার দরজায় নক করে যাচ্ছে। আমি ওঠে দরজা খুলতেই রাইমা ম্যাম বলতে শুরু করে।

“সরি মেঘ আমি কাল বাসায় ছিলাম না, কাউকে যে তোমাকে খাবার দিবে বলে যাবো মনে ছিল না। সারারাত খুদার জ্বালাই হয়তো ঘুমাতে পারোনি। বেবী ঠিক আছে তো?”

আমি মুচকি হেসে বলি-
‘না না সবঠিক আছে ম্যাম। রাতে রুদ্র স্যার খাবার এনেছিল আমি খেয়েছি আর বাবুকে স্যার খাওইয়ে দিছে।”

রাইমা ম্যাম অবাক দৃষ্টিতে ধমকের সুরে বলল-
“কি ম্যাম ম্যাম করছো আর কখনো ম্যাম বলবে না আপু ডাকবে। আর তুমি কি স্বপ্ন দেখছো? কাল রাতে তো ভাইয়া বাসাই ফিরেনি খাবার দিবে কি করে?এখন থেকে আর কারো খাবার দিতে হবে না নিজে গিয়ে খাবার নিয়ে খাবে এটা তো তোমারও বাড়ি।”

“আমি ঠুক গিলে চারপাশে তাকালাম, রুমের কোথাও রুদ্র স্যার নেই। আর রুম ও তো ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তবে কি এটা স্বপ্ন ছিল? কিন্তু রাতে যেভাবে পেটে খুদা ছিল সেভাবে তো আর ক্ষুদা নেই।”

আমি আর কিছু না বলে বাবুর জন্য ফিটার বানাতে চলে গেলাম। স্বপ্ন দিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে পারলেও বাবুর জন্য খাবার লাগবে।
#সংসার
#পর্ব_০৬

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি আর কিছু না বলে বাবুর জন্য ফিটার বানাতে চলে গেলাম। স্বপ্ন দিয়ে আমি কাটিয়ে দিতে পারলেও বাবুর জন্য খাবার লাগবে।

খাবার বানাচ্ছিলাম তখন রান্নাঘরে রাইমা আপু এসে আমার পাশে দাড়ালো। আপু পাশে দাড়িয়ে উসখুস করতে দেখে বুঝলাম আপু আমাকে কিছু বলবে।
বাবুর ফিটার গুলতে গুলতে আপুকে বললাম-
“কিছু বলতে আপু”

আপু মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে লাজুক হেসে বললো-
“হ্যাঁ, আস আসলে মেঘ জানতে চাইছিলাম,,,,”

“এমন করছো কেনো? কি বলতে চাও বলো তো।”

আপু লাজুক হেসে মাথা চুলকে বলে-
“মেঘ আমি ওই যে তোমার একটা ভাই আছে না
তার সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম।”

“ওহ রাকব ভাইয়া? হ্যাঁ কি জানতে চাও বলো?”

১১.
“এই তো ওনি কেমন, বিয়ে করেছেন নাকি? আসলে মেঘ তোমার থেকে আমি কিছু লুকাতে চাই না। প্রথম দেখায় তাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তোমাদের বাসায় গিয়ে তার সব কিছুতে দায়িত্ব পালন আমার বেশ লেগেছে। আমার এই বয়স পর্যন্ত কখনো এমন ফিলিংস হয়নি যতটা তাকে দেখার পর থেকে আমার হচ্ছে।”

আমি আপুর কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। আমি জানতাম আপু রাকিব ভাইয়াকে পছন্দ করে তবে সিওর ছিলাম না। তার মুখ থেকে শুনার জন্য এতোক্ষণ কথা প্যাঁচালাম। বৃষ্টির বিয়ের দিন রাইমা আপু সাড়িতে বেঝে সিড়ি থেকে পরে যাওয়ার সময় রাকিব ভাইয়া ধরেছিলো। তখন থেকে আপুকে রাকিব ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখতাম। যখন বৃষ্টির বিয়েতে সবাই সবার সাথে নাচছিলো তখন রাকিব ভাইয়ার সাথে রাইমা আপু নাচছিলো।তারপর থেকে রাইমা আপু রাকিব ভাইয়ের পিছু পিছু ঘুরতো, সে যেখানে যেত তার পিছুপিছু যেত। তখন রাকিব ভাই সে যেখানে যেত তার পিছে রাইমা আপুকে দেখলেও ব্যপারটা কাকতলীয় ভাবেই নিছিলো। কিন্তু আমি সবটা দেখার পর সন্দেহ হয়েছিলো তবে সিওর ছিলাম না।
রাইমা আপু খুব ভালো রাকিব ভাইয়ের সাথে খুব মানাবে। কিন্তু রাকিব ভাই কী মানবে? না মানলেও আমার কথা কখনো ফেলতে পারবে না অনুরোধ করে বললে অবশ্যই আমার কথা রাখবে। আজ হোক আর কাল রাইমা ম্যামকে যদি জীবনে পায় তবে একদিন রাকিব ভাই আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে।

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে তার ফিলিংস সত্য না মিথ্যে জানার জন্য রসিকতা করে একটু হেসে বললাম-
“আপু এটা তোমার আবেগ, ভালো লাগা হতে পারে তবে ভালোবাসা না। কিছুদিন পর চলে যাবে চিন্তা করো না। তাছাড়া রুদ্র স্যার বা বড় ম্যামও এটা মানবে না। এসব হয় না আপু তুমি ভুলে যাও।”

আমি চলে যেতে নিতেই আপু আমার হাত ধরে জ্বলজ্বল চোখে বলল-
“আমার এটা আবেগ না মেঘ, আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি তাকে। এই কয় মাসে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। তাকে ভুলার জন্য খুব চেষ্টা করেছি কিন্তু পারেনি। বিশ্বাস করো আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আর আমি জানি তুমি ভাইয়া আর মাকে মানিয়ে নিতে পারবে।”

আপুর চোখ এতোখন জ্বল জ্বল করলেও কথার বলার সাথে সাথে চোখ থেকে এই ফোটা টুপ করে জল পরলো। আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে ছিলাম। একজন এতোবড় ডাক্তার, সে কিনা ভালোবাসার জন্য কাঁদছে। আপুকে বুঝিয়ে শান্ত করলাম যে আমি সব ঠিক করে দিবো।
রাইমা আপুর থেকে রুদ্র স্যারের রুম কেন এলোমেলো জানতে চাইলে বলে-
যেদিন বৃষ্টির সাথে বিয়ে হইছে তারপর পর থেকে কারনে অকারনে সব রাগ রুমের জিনিস পএের উপর ঝাড়ত। আর ওই যে ওই ঘড়িটা ওটা ভেঙ্গেছিলো যেদিন আমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে বড় ম্যাম আর রাইমা আপু গেছিলো। সেদিন যখন শুনে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তখন খুব রাগ করে সেই সাথে কান্নাকাটিও করে। আর রুদ্র স্যার যখন কাঁদছিলো তার কান্না দেখে বাবুও চিৎকার করে কান্না করে আর খুব কষ্টে স্যার তখন ফিটার খাইয়ে বাবুকে ঘুম পড়ায় কিন্তু রাত ১ টা বাঝতেই ঘড়ির বেল বেঝে ওঠে তখন বাবুর ঘুম ভেঙ্গে যায় আবার কান্না শুরু করে। তখন রাগে জেদে ঘড়ির হাতের পাশে ফোন ছিলো ওটা ঘড়ির উপর ছুড়ে মারে সেই সাথে ঘড়িও যায় আর ফোনও। স্যারে রুমে পার্সোনাল ভাবে কাউকেই এলাউ করে না। যখন বৃষ্টির সাথে বিয়ে হয়েছিলো তখন তারা অন্য একটা রুমে থাকত তবে এই রুমে রুদ্র স্যার কাউকে ডুকতে দিতো না, নিজে একা একা সারাদিন থাকতো। রাইমা আপু আরো বলে যে তাকে প্রায় দিনই আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্যারই পাঠাই তো।
আমি রাইমা আপুর মুখে কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। আমি যে তার রুমে এই দুইদিন থেকে আছি কই সে তো কখনো আমাকে রুম থেকে চলে যেতে বলেনি।
তবে কি আগের পিছুটান এখনো আছে? কথাটা মনের ভিতর কয়েক বার ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। খুশীতে চোখ জ্বল জ্বল করে ওঠে।

বাবুকে খাইয়ে ঘুম পরিয়ে দেয়। তারপর রাইমা আপুর সাহায্য কিছু কাজের লোক নিয়ে রুমটাকে পরিষ্কার করি। যতোগুলো জিনিস ভাঙ্গা ছিলো সেগুলো পরিষ্কার করে লোক দিয়ে দোকান থেকে ওই জিনিস গুলো কিনে নিয়ে আসি। সব কিছু রাইমা আপু দেখিয়ে দেয় কোনটা আগে কোথায় ছিলো,আমি আবার আগের মতো সব সাজাই। সাজানো প্রায় শেষ আমি ক্লান্ত হয়ে বেডের উপর বসে দেখতে থাকি সব কিছু কেমন লাগছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি এই রকম একটা রুমের আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যেখানে প্রাকৃতিরও আভা পাওয়া যাবে। এগুলোর কথা আমি ফোনে একদিন মাহমুদ কে বলেছিলাম।


১২.
“জানো আমার খুব ইচ্ছে এমন একটা জায়গায় আমারা দুজনে থাকবো যেখানে বেড থাকবে কিন্তু পাশেই দোলনা থাকবে তার চারপাশে গাছ থাকবে। খোলা বাতাস থাকে। পাখি পাশে বসে কিচিরমিচির করে গান গাইবে আর আমি সেই গানের সুরে দোলনায় ঘুমিয়ে পরলে তুমি সুরসুরি দিয়ে ওঠিয়ে দিবে। আর আমি বিরক্ত মাখা ভঙ্গিতে ওঠে যেতে চাইলে তুমি পেছন দিক থেকে ওই সে সিনেমার ভিতর হিরোইন যখন রাগ করে চলে যায় তখন হিরো পিছন দিক থেকে টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঠিক সেভাবে পিছন দিক থেকে টান দিবে তবে জড়িয়ে না ধরে আমাকে দোলনায় বসিয়ে তুমি আমার কোলে শুবে। তখন আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দিবো আর তুমি কোমর জড়িয়ে শুয়ে থাকবে।”

এইটুকু বলেই খিলখিলিয়ে হেসে আবার গম্ভীর মুখে বলতাম, “এসব কি আর সত্যিই হবে? স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এসব কি বাস্তব হয়, বেডের পাশে দোলনা তা আবার বাগানের ভিতর। রুমের ভিতর কি আর খোলা বাতাস পাওয়া যায়?”

“কেনো পাওয়া যাবে না সানু? সব হবে, আসল না হোক তবে এভাবে সাজিয়ে নেওয়া যাবে। দোলনার পাশে ইয়া বড় একটা জানালা থাকবে যেখান থেকে খোলা বাতাস আসবে। তুমি চাইলেই সব হবে?”

আমি তখন বেশ উৎসাহ হয়ে বলতাম-” সত্যিই হবে? কিন্তু কিভাবে হবে?”
আমার প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ শুধুই হাসতো।

পুরোনো কথা মনে পরতেই আনমনে হেসে ওঠলাম।রুমের কর্নারের দিকে চোখ গেলো। দোলনার একটু পাশে বড় একটা কাচের জালনা। জানলা খুলতেই ফুরফুরিয়ে রুমের ভিতর হাওয়া ডুকতে শুরু করলো। আমি দুহাত মেলে গভীর নিশ্বাস নিলাম। একেবারে আমার স্বপ্নের রুমের মতো। কিন্তু কি যেন নেই। ভাবতেই মনে পরলো পাখি নেই। আর নাতো পাখির কিচিরমিচির সুর। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলে এতো সুন্দর পরিবেশ কিন্তু পাখি শব্দ নেই। আসেপাশে কোথাও পাখির দোকানও নেই যে কাউকে নিয়ে আসতে বলবো। রুমের একপাশে চোখ যেতে দেখি একটা পাখির খাচা পরে আছে কিন্তু পাখি নেই।তবে কি পাখি গুলোকে রুদ্র স্যার ছেড়ে দিছে?
,
,

বিকেলের দিকে রুদ্র স্যার রুমে আসে। ভাবছিলাম সব কিছু সুন্দর করে সাজানো দেখে চমকে যাবে। কিন্তু না ওল্টো সে এমন ভাব নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো মনে হচ্ছে যে আগে থেকেই জানত রুম সাজানো থাকবে। কিছুটা মন খারাপ করে রুমের বাহিরে চলে আসলাম আজ বড় ম্যাম বাড়িতে নেই। এই বয়সে কতো ইয়াং সে। নিজেও ছোট একটা ব্যবসা সামলান। শহরের গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মাঝে সে একজন।

আজ কেমন জানি রুদ্র স্যারকে ভয় লাগছেনা। এতদিন ভয়ে গুটিয়ে নিলেও আজ কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভয়টা সত্যিই হোক সমস্যা কি সে তো আমার স্বামী আমার ভালোবাসা। রুদ্র স্যার খুব চেনা আপন আপন মনে হচ্ছে।
ইচ্ছে করেই রাতে কিছু না খেয়ে দোলনায় শুয়ে দুলতে দুলতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরলাম। শরীর টা ক্লান্ত লাগছে কালকে ফুপি নিতে আসবে তাই সব গোছাতে গোছাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছি।

রাত দেড়টা, কেউ একজন পাশের রুমের বারান্দা থেকে চুপচাপ আমার রুমে পা টিপে টিপে ডুকছে। ঘুমের ঘোরে মনে মনে চোর ভেবে লাঠি খুজতে লাগলাম। লাঠি না পেয়ে পাখির খাচাটা হাতে নিলাম। ঘুমের ঘোরে ভাবছি চোর টা কাছে আসলেই খাচায় বন্দি করে নিব। আস্তে আস্তে চোরটা সামনে আসলো অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আমার হাত থেকে খাচা চুরি করবে বলে খাচা নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।কিন্তু আমি দিবো না তাকে অনুরোধ করে বলছি-

“আমার রুমে কোনো পাখি নেই, আর কোনো পাখির সুরও নেই। তুমি কি আমার পাখি হয় গান শুনাতে পারবে? প্লিজ খাচার ভিতর ডুকে যাও।”

চোরটা আমার কথা শুনে আবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে- “পাখি নেই বলে, নিজের জামাইকে পাখি বানিয়ে বসিয়ে রাখতে চায়। না জানি কখন বলে গাছে বাদর নেই তুমি কি আমার বাদর হবে? প্লিজ গাছে ওঠে বসে থাকো, ইডিয়েট।”

আমার হাত থেকে পাখির খাচা নিয়ে দুটি পাখি রাখলো। অন্ধকারে দেখতে পারছিনা কি পাখি তবে মনে হচ্ছে পাখি দুটো আমার মতো খুব ক্লান্ত খাচায় রাখতেই এক কোনায় গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।

আমাকে সেই চোর নিজ হাতে খাবার খাইয়ে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি তার গলা আকরে ধরে টুপ করে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললাম- “ধন্যবাদ চোর ভাইয়া, আবার কিছু লাগলে জানাব।”

চোরটা বারান্দার দরজা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অসহায় গলায় বিরবির করে কি জানি বলছিলো তবে বিরবির করে বললেও আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি সে নিজেকে নিজে বলছে-
“যাহ রুদ্র এবার হইছে তো মন মতো? নিজের বউ ডাকে ভাইয়া তাও আবার যেই সেই ভাইয়া না চোর ভাইয়া। জীবনে আর কোন কথা শুনার স্বপ্ন বাকি আছে? তাও তোর বউয়ের থেকে শুনে নিস।
মানুস ফান্দে পড়ে কান্দে আর তুই তো নিজেই নিজে ফান্দে এসে ডুব দিছিস।”

পাখির কিচিরমিচির শব্দ ঘুম ভাঙ্গে। নাহ শুধু পাখির শব্দে না কেউ দরজায় নকও দিচ্ছে। ওঠে গিয়ে দেখি ফুপি এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ফুপিকে জড়িয়ে ধরি। ফুপি তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলে রুদ্র স্যারকেও নাকি বলেছিলো কিন্তু সে যাবে না অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে, যাই পরে যাবে।
আমি দোলনা উপর থেকে ব্যাগ নিতেই চোখ পরে খাচায় ঝুলে থাকা দুটো লাভ বার্ডের উপর। তবে কি এটা রুদ্র স্যার রেখে গেছে? তাহলে কী রাতে যা দেখেছি ওসব স্বপ্ন ছিলো না? আমার রাতের কথা মনে পরতেই শব্দ করে হেসে ওঠি। রুদ্র স্যার কে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার কথা মনে পরতেই লজ্জায় দুহাতে মুখ ডেকে নেই।

ফুপি বার তাড়া দিচ্ছি তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য। আমি এতো তাড়াতাড়ি কেন কারন জিঙ্গেস করলে বলে- “কাল রাকিবের বিয়ের পাকা কথা হইছে। আজ আমরা গেলে আমাদের পছন্দ হলে তবে কালই বিয়ে হবে। মেয়ে শুনছি সুন্দরী, তিন ভাইয়ের আদরের বোন। অনেক তো বয়স হইছে ছেলেটার এবার যেহেতু বিয়েতে রাজি হইছে তবে আমরা গিয়েই বায়ে পরিয়ে দিবো। এর আগে তো বিয়ের নামও শুনতে পারতো না। কিন্তু এখন আর নাও বলে না আর হ্যাঁও বলে না।”

আমি ফুপির কথায় ধমকে দাড়ায়। যেভাবে হোক এই বিয়ে ভাঙ্গতেই হবে। রাইমা আপুকে দেওয়া কথা রাখতেই হবে।

#চলবে,,,,,
#চলবে…..

(বিঃ দ্রঃ গল্পটা শুরু করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছি। এতো ভালোবাসা পেয়ে লেখা বন্ধও করতে পারছি না। সবাই বোনাস পার্ট চাচ্ছো। যেটা এখন ইচ্ছে থাকলেও দিতে পারছি না। যতকষ্ট হোক প্রতিদিন এক এক পর্ব করে দিবো বোনাস পার্ট দিতে পারবো না। আগে সুস্থ হই তারপর বোনাস পার্ট দিবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। এতো এতো সাপোর্ট করার জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। ভালোবাসা নিবেন💚💚)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here