সংসার পর্ব ২১+২২

#সংসার
#পর্ব_২১

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

আমি জেনি আপুকে সেখানে দেখে আঁতকে ওঠে ওঠি। এখন যদি আকাশ ভাইয়াকে লিনা আপুর রুমে জেনি আপু দেখে তাহলে সে কি করবে জানি না। ভয়ে ভয়ে আমিও সেদিকে পা বাড়াই।

৪১.
জেনি আপু দরজায় নক করতে গেলে হালকা করে দরজা চাপিয়ে রাখার জন্য নক করার আগেই দরজা খুলে যায়। ততক্ষণে আমিও জেনি আপুর পাশে এসে দাড়াই।
দরজা খুললে দেখি আকাশ ভাইয়া লিনা আপুর হাত ধরে বসে আছে আর লিনা আপু কাঁদছে। ভাইয়া হঠাৎ আমাদের রুমে ঢুকতে দেখে অপ্রস্তুত ভাবে ওঠে দাড়ায়। আকাশ ভাইয়ার চোখে জল চিকচিক করছে। জেনি আপু গিয়ে মুখে কিছু না বলে আকাশ ভাইয়াকে জোড়ে একটা থাপ্পড় মারায় ভাইয়া দু হাত পিছিয়ে যায়।

ভাইয়া কাছে এসে জেনি আপুর হাত ধরে বলে-
“জেনি শুন তুই ভুল বুঝছিস। শান্ত হ আমি সব বলছি।”

“কি বলবি তুই হ্যাঁ, কি বলবি?”

জেনি আপুর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে রুদ্র দৌড়ে আসে। জেনি আপুকে বার বার আকাশ ভাইয়া থামাতে চেষ্টা করছে কিন্তু কে শুনে কার কথা।

রুদ্রকে আসতে দেখে আপু তাকেই খ জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে।
“রুদ্র আকাশ আমাকে আবার ঠকিয়েছে। ও এই মেয়েটার সাথে রুমে বসে,,,,
আপু আর কিছু বলতে পারে না, ঢুকরে কেঁদে ওঠে।

জেনি আপুর এইটুকু কথা শুনে রুদ্রের চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। রুদ্র জেনি আপু নিজের থেকে ছাড়িয়ে আকাশ ভাইয়া সার্টের কলার ধরে বলে-
“সালা বেইমান, তুই জীবনেও শুধরাবি না। তোদের মতো কিছু পুরুষের জন্য পুরুষ সমাজের আজ কলঙ্ক। এত যখন মেয়ে লাগে তাহলে কারো মন নিয়ে না খেলে পতিতালয়ে গিয়ে বসে থাকতি।”

আকাশ ভাইয়া এতক্ষণ রুদ্রকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করলেও, শেষের কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে যায়। চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে।
লিনা আপু এগিয়ে এসে জেনি আপুকে কিছু বলতে চাইলে আপু রাগে লিনা আপুর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলে-
“তোর লিনাকে নিয়ে তোর যেখানে যাওয়ার যা। তবে আমার চোখের সামনে যদি আর একবার আসিস খোদার কসম আমি সুইসাইড করব।”

আকাশ ভাইয়া জেনি আপুর কথায় কেঁপে ওঠে। জেনি আপু আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে এসে দরজা আটকে দেয়।
আমরা তার পিছন পিছন রুমে সামনে এসে দরজা খুলতে বললে খুলে না। হঠাৎ ভিতর থেকে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ শুনে সবাই আঁতকে ওঠি। আকাশ ভাইয়ার আর কিছু না ভেবে পিছন দিক থেকে জানালার ওপর ভড় দিয়ে রুমে ডুকে দেখে জেনি আপু ফ্যানের সাথে উরনা বেঁধে প্রায় ঝুলে পরেছে। আকাশ ভাইয়া জেনি আপুকে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে নিচে নামাতেই আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

দরজা খুলে দিতেই সবাই রুমের ভিতর ডুকি। কিন্তু পাশ কেটে আকাশ ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাইমা আপু ছিল বলে জেনি আপুর আর ডাক্তারের প্রয়োজন পরেনি।
,
,
আকাশ রিসর্টের দূরে একটা পাথরের ওপর ভাবনাহীন হয়ে বসে আছে। রুদ্র আকাশকে দেখে সেখানে এগিয়ে যায়। পাথরের উপর বসতে বসতে বলে-

“জেনিকে খুব বেশি ভালোবাসিস?”

আকাশ রুদ্রের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল-
“বিশ্বাস কর, আমি লিনার কাছে ইচ্ছে করে যাইনি। আর না তো লিনার উপর কোন টান ও আছে।”

“হুমম আমি বুঝতে পারছি। তোর চোখ যে সে কথাই বলছে। আমার কথায় কষ্ট পাস না, তখন জেনিকে ওই রকম ভাবে কাঁদতে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।”

আকাশ মাথা নেড়ে হাসার চেষ্টা করে বলে-
“আমি বুজতে পারছি দোস্ত, তোর জায়গায় আমি থাকলে এমনটাই করতাম।”

“কিন্তু কি হইছে, জেনি এমন করল কেন? আর ওই মেয়েটার সাথেই বা তোর সম্পর্ক কী?”

আকাশ এবার একটু হেসে চোখের জল মুছে উপরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই তো আমার প্রথম ভালোবাসার কথা জানিস। আর সেই মেয়েটাই হচ্ছে লিনা। ওর সাথে প্রায় চার বছর পর এই দেখা। ওকে এক সময় ভালোবাসতাম কিন্তু তখন আবেগটা বেশি ছিল। ধোকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর ফিরে আসে তবুও মেনে নেই। কিন্তু লিনা আবারও চলে যায়। কিন্তু এই বার জেনি ভাবছে আমি এখন আগের বারের মতো লিনার কাছে ফিরে যাব। তুই বল রুদ্র আমার কি এখন আবেগের বয়সটা আছে, আমি কি আবেগ আর ভালোবাসার পার্থক্য বুঝিনা? আমি তো জেনিহীন নিজেকে মানুষ ভাবতেও কল্পনা করতে পারি না।

লিনার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে। ডাক্তার বলেছে ও বড় জোড় কয়েক মাস বাঁচবে। আর তাই নিজেকে হাসিখুশি রাখার জন্য এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা শুনে আমি একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পরেছিলাম। জেনিকে বলতে চেয়েও বলেনি এটা ভেবে জেনি প্রথম দেখাই লিনাকে সহ্য করতে পারেনি আর ও এটাও পারবে না।। তাই আমি সকাল সকাল লিনার সাথে দেখা করে চলে আসতে চেয়েছিলাম যাতে জেনি কষ্ট না পায়। লিনা যাই করুক আমার খালাতো বোন তো।

হ্যাঁ একটা সময় ছিলো যখন আমি মেয়েদের মাঝে, খারাপ নেশায় ডুবে ছিলাম। কিন্তু এই যে এতটা বছর জেনির সাথে আছি ও বলতে পারবে আমি ওকেও ছুয়েও দেখেছি আজ কিভাবে ভাবলো ও আমি ওকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে থাকবো? ওর এই বিশ্বাস টা কী আমি আজও অর্জন করতে পারেনি?

জেনি কিভাবে পারলো আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা? আমার একটু দেরী হলে এতক্ষণে কি হতো ভাবতেই গাঁয়ে কাটা দেয়। সুইসাইড কিভাবে করে ওকে তো আমি বুঝাব আগে একটু ঠিক হতে দে।”

৪২.
কিছুক্ষণ আগে জেনি আপুর জ্ঞান ফিরে। আসে পাশে তাকিয়ে কাউকে খুজে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে-
“মেঘ রুদ্র কোথায়?”

আমি আপুর কথায় মুচকি হাসি দিলাম। অভিমানে আকাশ কোথায় বলতে পারছেনা তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুদ্রের কথা জানতে চাইছে।
“এই তো বাহিরে গেছে।”

জেনি আপু একটু হেসে বলল-
“আমার জন্য তোমাদের সবার সমস্যা হলো? সবাই ঘুরতে এসে আমার জন্য ঝামেলা করতে হলো।”

“ওটা ব্যাপার না আপু,ঠিক আছে। কখনো আর এমন কথা ভাববেও না। তুমি ঠিক হলে অনেক ঘোরা যাবে।”

“আমি ঠিক আছি মেঘ। বিকেলে রুদ্রকে বলো ঘুরার প্লান করতে। কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, আর একটা দিন বাকি আছে।”

আমাদের কথার মাঝে সেখানে গুটিগুটি পায়ে লিনা আপু এগিয়ে এলো। লিনা আপুকে দেখে জেনি আপু চোখ মুখ কুঁচকে কড়া গলায় বলল-
“মেঘ এই মেয়েটাকে আমার সামনে থেকে যেতে বলো।”

লিনা আপু জেনির আপুর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপুর পাশে বসে বলতে শুরু করলো-
” আপু আমাকে ক্ষমা করে দেও। নিজের খুশির জন্য তোমাদের মাঝে এত ঝামেলা হলো। আমি জানতাম না আকাশের বিয়ে তোমার সাথে ঠিক হইছে। আমি শুধু শুনেছি আকাশের বিয়ে ঠিক হইছে। যদি জানতাম তবে কখনোই আকাশের সামনে আসতাম না।
আপু আমি আমার পাপের সাজা পাচ্ছি। যার জন্য দু দুইবার আকাশকে ঠকালাম সে আমার এমন বিপদের সময় ছেড়ে চলে গেছে।”

এই টুকু বলতেই লিনা আপু কেঁদে ওঠল। এতক্ষণে জেনি আপু ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো চোখ জোড়া শীতল হয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল। এমন বিপদ বলতে কি বুঝেয়েছে লিনা, কিসের বিপদ?

চোখের পাশের জল মুছে একটু হেসে বলতে শুরু করলো- “আপু আমাকে ডাক্তার বলছে দুই থেকে তিন মাস বাঁচবো। ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরেছে আমার। সে জন্য জীবনের শেষ দিন গুলো নিজেকে দেওয়ার জন্য এদিক সেদিক ছটফট করে ঘুরে বেড়াই। যার সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আজ ওর টাকা পয়সা সব আছে তবে আমাকে দেওয়ার মতো সময় হয় না। এই টাকা পয়সা সব দিচ্ছি তবে দুইটা দিন আমি ওর থেকে পাইনি। কিন্তু সেসব নিয়ে আফসোস নেই আমার কর্মফল আমাকেই তো ভোগ করতে হবে।

তোমাকে আকাশ অনেক ভালোবাসে। তোমরা একসাথে থাকলে ও খুব সুখী হবে। আমার জীবনের শেষ দিনগুলোই তোমাদের এই সুখী জিবন দেখতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। ক্ষমা করে দিও আমায়।”

জেনি আপু সব শুনে কান্না করে লিনাকে জড়িয়ে ধরেছি। যে মেয়েটা সকালে একটা মেয়ের জন্য সুইসাইড করতে চেয়েছিল। এখন সেই মেয়েটার জন্য কান্না করছে। কি অদ্ভুত আমাদের মন। আমি আর রাইমা আপু সুপ্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
,

আমরা সবাই দুপুরে খেয়ে। বেলা দুই টায় দিকে স্বর্ন মন্দিরের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে থেকেবের হয়ে শৈল প্রপাত ঝর্নার দেখতে চলে গেলাম।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ঝর্নায় গোসল করা কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি পাথরের সাথে ঝর্না বেয়ে বেয়ে নিচে পরছে। যেখানে দাড়িয়ে পা ভিজানো গেলেও গোসল করা যাবে না। কিন্তু রাইমা আপু জেদ ধরেই একটু কুয়া টাইপ সেখানে বসে পরল। যার মানে সে গোসল করবেই।

কুয়ায় স্বচ্ছ পরিষ্কার ঠান্ডা শীতল পানি। ঝর্নার পানি পাথর চুপসে কুয়ায় পরছে। কিন্তু সেখানে একজনের বেশি দুজন গোসল করা যায় না। তবুও জেনি আপু আর রাইমা আপু দুজনে সেখানে ভিজছে। আকাশ ভাইয়া এর মাঝে বেশ কয়েকবার জেনি আপুকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বললেও আপু শুনেও না শুনার ভাব ধরে এড়িয়ে গেছে।

আমি রুদ্র, রাকিব ভাই, আকাশ ভাইয়া ঝর্নার চারপাশের সুন্দার্য দেখছি। পাথরের নিচে একটা বড় কুয়া যেখানে গোসল করা গেলেও রিক্স অনেক। পরে গেল জীবন শেষ। তবুও আমি যেতে চাইলে রুদ্র হাত ধরে রেখে দেয় নিচে যেতে দিবে না তাই।

হঠাৎ রাইমা আপু কুয়া থেকে ওঠে ছটফট করতে থাকে। বার বার জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। আমাদের জোড়ে জোড়ে জেনি আপু ডাকছে।
রাইমা আপুর চোখ ওল্টে যাচ্ছে। আমরা সবাই ভয়ে সেদিকে দৌড়ে যাই। রাইমা আপু জ্ঞান হারিয়ে দাড়ানো থেকে পরতে নিলে রুদ্র ভাইয়া দৌড়ে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই রাকিব ভাইয়া ধরে নেয়। আমি রাইমা আপুর হঠাৎ কি হইছে ভাবছি। হাত পা শীতল হয়ে চুপসে যাওয়ার আমি আর জেনি আপু হাত পায়ের তালু হাত দিয়ে ঢলছি। আস্তে আস্তে রাইমা আপুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবার জীবনের সুখ যে বেশি দিন টিকে না।
#সংসার
#পর্ব_২২

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি

রাইমা আপু জ্ঞান হারিয়ে দাড়ানো থেকে পড়তে নিলে রুদ্র ভাইয়া দৌড়ে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই রাকিব ভাইয়া ধরে নেয়। আমি রাইমা আপুর হঠাৎ কি হইছে ভাবছি। হাত পা শীতল হয়ে চুপসে যাওয়ায় আমি আর জেনি আপু হাত পায়ের তালু হাত দিয়ে ডলছি। আস্তে আস্তে রাইমা আপুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবার জীবনের সুখ যে বেশি দিন টিকে না।

রাইমা আপু নিস্তর দেহটা পরে রইল রাকিব ভাইয়ের কোলে। রুদ্র এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, একমাত্র বোনের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আমাদের চারপাশে লোকজন এসে ঘিরে ধরেছে। রাকিব ভাই রাইমা আপুর হাতের নাড়ি ধরে বলে-
“মেঘ তাড়াতাড়ি এম্বুলেস ফোন করো, আমাদের এখনই হাসপাতালে যেতে হবে।”

৪৩.
রাইমা আপু একটু পর পর জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আবার কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ থেকে শব্দ করে শ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎ সারা শরীর কাপিয়ে একটু জোরে শ্বাস নেয়। রাকিব ভাই ভয়ে শক্ত করে দু বাহুতে আঁকড়ে ধরে। আর শ্বাস নিচ্ছেনা দেখে রাকিব ভাই তার মুখ দিয়ে মুখ লাগিয়ে জোড়ে দু বার শ্বাস দেয়, তবুও কোন নড়াচড়া নেই, তিনবারের সময় রাইমা আপু রাকিব ভাইয়ার শ্বাস দেওয়ার সাথে সাথে জোরে শ্বাস নেয়।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের সামননে বসে আছি আমরা। রাকিব ভাইও আমার পাশে চোখে মুখে একরাশ অস্থিরতা নিয়ে বসে আছে। এতক্ষণ ডাক্তারের পাশে পাশে দৌড়ানোর জন্য ক্লান্ত হয়ে পরেছে। চোখে কোনায় পানি চিকচিক করছে।
রুদ্র রাইমা আপুকে যে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানের সামনে পায়চারি করছে। তাকে বেঁধে রেখেও এখানে বসানো যাচ্ছেনা। জেনি আর আকাশ মুখে চিন্তার ছাপ তারা তাদের অভিমানের কথা ভুলে গিয়ে রাইমা আপুকে এখানে ভর্তির ব্যাপার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।

ডাক্তার কেবিন থেকে বের হতেই রুদ্র দৌড়ে তার কাছে যায়।
“ডাক্তার রাইমা ঠিক আছে তো? কি হয়েছে ওর ও এমন করছে কেন?”

ডাক্তারকে দেখে রাকিব ভাই ওঠে সেখানে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
“রাই রাইমা কেমন আছে? ও ঠিক আছে স্যার?”

“প্লিজ আপনারা শান্ত হন। রুগী এখন একদম ঠিক আছে। তেমন কোন ব্যাপার না তবে হতে পারত যদি সময় মতো নিয়ে না আসতেন। রুগীর ঠান্ডায় এলার্জি+শ্বাসকষ্ট আছে যার জন্য এমনটা হইছে। বেশী ঠান্ডা পানিতে যেন রুগী গোসল না করে পরের বার থেকে খেয়াল রাখবেন। আর প্রথমে আপনারা রোগীর যা কন্ডিশন বললেন তাতে আজ খারাপ কিছু হলেও হতে পারত আল্লাহ রহমাতে তেমন কিছুই হয়নি, সময় মতো রাকিব সাহেব শ্বাস দিয়েছিলেন, ঠান্ডার জন্য রোগী শ্বাস না নিতে পারলে মরেও যায় এমন অনেক কেস আমাদের কাছে আছে।
আপনারা চাইলে রুগীর সাথে দেখা করতে পারেন। ”

আমরা সবাই রাইমা আপুর কেবিনে ডুকি। রুদ্র রাইমা আপু দু হাত আকরে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে- “ছুটকি তুই কি করে ভুলে গেলি তোর ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট আছে? স্বাস্থ সচেতন মেয়ে হয়েও কিভাবে ভুলে গেলি? তোর খুব কষ্ট হইছে না রে ছুটকি?”

রাইমা আপু রুদ্রের কথা শুনে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। আমরা সবাই একে একে কথা বলি। কিন্তু রাকিব ভাইয়া রাইমা আপুর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। আভিমানে অভিযোগ বড্ড জেকে ধরেছে তাকে। রাইমা আপু নিজে তাকে অপরাধী গলায় নরম সুরে ডাক দেয়।

আমরা তাদেরকে সেখানে একা রেখে বাহিরে চলে আসি। আজই ঢাকা ফিরব। রাইমা আপু অসুস্থ তাই কালকে ফিরতে চাইছিলাম কিন্তু রাইমা আপু এখানে আর থাকতে চাইনা বার বার বলছে সে বাসায় ফিরবে।
আমরা আমাদের ব্যাগ নিয়ে বান্দরবান বাসস্টেশন চলে যায়, কিন্তু সেখানে যেতে যেতে রাত সাড়ে বারোটা বাজে। শেষ বাস টা চলে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। কালকে ছাড়া আর বাস ছারবে না। শুনশান রাস্তা, দু এক টা গাড়ি আসা যাওয়া করছে। আর কোন উপায় না পেয়ে সেখানে পাশে একটা হোস্টেল এ উঠি। কিন্তু এতরাতে তারা রুম দিবে না আর তাছাড়া কোন রুম খালিও নেই।
রুদ্র কাউন্টারের লোকটাকে কিছু টাকা দিয়ে একটা রুম নিয়েছে সকালে ওঠেই চলে যাবে বলে।

রুমটা বেশ বড়, ডাবল বেড। এখানে এনায়াশে ছয়জন একরাত পাড় করে দেওয়া যাবে। আমি হাতের টলিটা রেখে ক্লান্ত হয়ে বেডে এক পাশে বসে পরলাম।
জেনি আপু রুমটা ঘুড়ে দেখছে। বেশ আধুনিক করে সাজানো হয়েছে রুমটা। রুমের মোটামুটি বড় একটা বারান্দা, তার মাঝখানে ছোট একটা টেবিল দুপাশে দুটো চেয়ার।

রুদ্র বাহির থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছে। সবাই সেখান থেকে খেয়ে নিলাম। আকাশ ভাই খেতে বলল-
“এখন একটা গান হলে মন্দ হতো না।”

৪৪.
আকাশ ভাইয়ের কথা শেষ না হতেই রাইমা আপু উচ্চ গলায় বলে উঠল- “মেঘ তুমি তো খুব ভালো গান গাইতে পারো। একটা গান গাও।”

আমি রাইমা আপুর কথায় তার দিকে তাকালাম কে বলবে এই মেয়েটার কয়েক ঘন্টা আগে জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে?

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম-
“আপু তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে?”

রাইমা আপু দু ঘাড় নাড়িয়ে বলল-
“আমি একদম ছিক আছি। আর তাছাড়া মানুষকে ততক্ষণ অসুস্থ মতো থাকতে হয় যতক্ষণ সে নিজে পায়ে হেঁটে বেরাতে পারে না। নয়ত শরীরের সাথে মনও অসুস্থ হয়ে পরে। তুমি একটা গান ধরলে আরো সুস্থ হয়ে উঠব।”

আপুর সাথে জেনি আপু বার বার তাড়া দিচ্ছে গান গাওয়ার জন্য। আমি মুখের খাবারটা চিবিয়ে চোখ বুঝে সুর তুললাম।

“আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে।

আমার দিন গুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির খুব ছোঁয়ে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।”

গানটা শেষ হতেই আকাশ ভাইয়া মুখ থেকে শিশ বাজালো। আকাশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
“মেঘ আমি তো তোমার গানের প্রেমে পড়ে গেলাম। এত আবেগ দিয়ে তো কোন শিল্পীও গাইতে পারে না।”

আমি আকাশ ভাইয়ার কথায় খিলখিলিয়ে হেসে চোখের ইশারায় জেনি আপুকে দেখিয়ে বললাম-
“থাক আমার গানের প্রেমে পরতে হবে না। বউয়ের প্রেমে পড়েন।”

আকাশ ভাই আমার কথা শুনে বাঁকা চোখে জেনি আপুর দিকে তাকিয়ে অভিমানি সুরে বলে-
“বউয়ের প্রেমে তো কবেই মজে আছি। হায়! বউ কি আর সেই প্রেম বুঝে?”

জেনি আপু আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে মুগ ভেংচি দিয়ে সেখান থেকে উঠতে উঠতে গুনগুন করে বলে ওঠলো।

“নাইবা তুমি বাসলে ভালো,
নাইবা আসলে কাছে।
জানি তোমার হৃদয় মাঝে,
অন্য সুরাজ বাঝে।”
,
,

রাত প্রায় তিন টা।
দুটো বেডে একটায় রাইমা আর রাকিব ঘুমিয়ে আছে অন্য টায় জেনি শুয়ে আছে আর তার পাশ ঘেসে অন্যদিক ফিরে আকাশ শুয়ে আছে। দুজনের কারো চোখেই ঘুম নেই। এক একভাবনায় ব্যস্ত দুজন।
হঠাৎ আকাশ জেনিকে একটু ঠেলা মারলে জেনি ঘুরে তার দিকে তাকায় বিনিময়ে আকাশ দাত কেলিয়ে হাসে। জেনি এবার বিরক্ত হয়ে আকাশকে তার পিঠ দিয়ে ঠেলা মারলে আকাশ বলে-

“কিরে ঠেলছিস কেন? ঘুমাস নি”

“না ঘুমাইনি, তুই ঠেলছিস কেন, তাই আমিও ঠেলছি।”

“তুই তো হাতির মতো শুয়ে বেড দখল করে ছিলি তাই। কিন্তু আমি তো কিছু করেনি।”

“আকাইশ্যা কি বললি আমি হাতি?”
বলতে বলতে জেনি আর একটু ধাক্কা দিতেই আকাশ বেড থেকে পরে যায়। আর শব্দ করে ‘ওমা’ বলে ওঠে। জেনি হুরমুর করে বেড থেকে নেমে আকাশের পাশে বসে বলে-
“ব্যাথা পাইছিস, কোথায় ব্যাথা পাইছিস? সরি আমি একদম বুঝতে পারেনি আর হবে না। এই ওঠ বেডের অর্থেক তো। বেশি ব্যাথা করে?”

রাইমার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। তা দেখে আকাশ মুচকি হেসে জেনির বাম হাতটা বুকের বা পাশে রেখে বলে-
“হুমম ব্যাথা পেয়েছি। এখানে খুব ব্যাথা পেয়েছি।”

“সরি রে আর কখনো হবে না।”

“আজকের ব্যাথা না তো এটা গত দুদিনের ব্যাথা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে সরিতে কমবে না।”

জেনি উত্তর দেয় না। লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। আকাশ এবার কঠোর হয়ে বলে-
“তুই কিভাবে সুইসাইডের কথা ভাবলি? আমার কথা কি একবারও মনে পড়ল না? কি করে থাকতাম। তোর যদি কিছু হতো আমি তখনি পাহাড় থেকে ঝাপিয়ে পড়তাম।”

“ধুরর বোকা সুইসাইড কে করত? আমি তো তুই জানলা বেয়ে আসছিস দেখে ওমন টা করলাম যাতে অন্য মেয়ের দিকে তাকানোর আগের আমার কথা ১০০ বার ভাবিস। কিন্তু তুই হাদারামের মতো তখন আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার পায়ের নিচ থেকে চেয়ার সরিয়ে তারপর কোলে তুললি। গাঁধা যদি মরারই হতো তোকে নিয়ে মরতাম। আমি এত ভালো না যে তোকে অন্য মেয়ের কাছে রেখে চলে যাব।
তাছাড়া মরেলেই বা কি হতো তোর তো কত,,,”

আকাশ জেনিকে কি বলার সুযোগ না দিয়ে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
“আর এমন বলবি না, তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমি কতটা অচল?”

জেনি আকাশের বুক আকরে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে। দুজনের মাঝে নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে আকাশ বলল-

“ওই জেনি”
“হু”
“ঘুমিয়ে গেছিস”
“হু”

“কি হু হু করছিস, বাড়িতে চল না বিয়ে করে ফেলি। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

“কিন্তু তোর অফিস, আর তো তিন মাস বাকি তারপর তো বিয়ে হবেই।”

“আমি আর তিন মাস তো দূর তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারব না। তোকে চাই একদম আমার নিজের করে চাই।”

আকাশ কথায় জেনি মৃদু হেসে বুকে মাথা রেখে আবার চোখ বন্ধ করে।

#চলবে,,,,,
#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here