#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি
#Part : 11
#ইসরাত_জাহান_প্রভা
বই নিয়ে হেঁটে হেঁটে পড়ছে নিলয়।।কোনো দিকেই তার চোখ নেই।।শুধু বইয়ের দিকেই চোখ।।পায়েল মালিহার লেখা নিলয়ের জন্য প্রেমপএ নিয়ে দৌড় শুরু করেছে।।মালিহাও পায়েলের পিছে দৌড়ানো শুরু করেছে।।পায়েল নিলয়ের সামনে এসে থেমে যায় এবং সরে দাঁড়ায়।।নিলয় খুব সুন্দর ভাবে বিক্রিয়াটা মাথায় গেঁথে নিচ্ছে আর এক প্রান্ত ক্রস করছে।।ঠিক ঐ সময়ে মালিহা দৌড়ে এসে নাজেকে সামলাতে না পেড়ে নিলয়ের উপর সজোরে ধাক্কা খেয়ে নিলয়ের বুকের ওপর পড়ে যায়।।
নিলয়: ও আপু গো পড়ে গেলাম গো!কমর ভেঙ্গে গেলো গো!আমার বিক্রিয়া থেমে গেলো গো।।(মালিহাকে বুকে জড়িয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে।।)
মালিহা নিলয়ের চিল্লানিতে থমকে গেছে।।বিরক্ত আর রাগে হাত দিয়ে নিলয়ের মুখ চেপে ধরে বললো,ঐ চুপ করো প্লিজ।।চিল্লাই তো কানের পোকা মেরে ফেলতাছো।।(রাগে)
নিলয়: আমার উপরে পড়ছো কেনো তুমি?আমার তো ভয় করছে।।ছেড়ে দাও আমায় প্লিজ।।(চোখ বন্ধ করে মালিহাকে আকড়ে ধরে)
পায়েল: ভাইয়া আর আপু একটু স্মাইল প্লিজ।।(ছবি তুলতে তুলতে)
নিলয়: কান্না বের হচ্ছে আমার।।হাসবো কেনো??আমার কমর তো ভেঙ্গেই গেলো বুঝি।।আপু গো কোথায় তুই?তোর ভাই বুঝি আর বাঁচবে না আপু।।কোথায় তুই?(মড়া কান্না কেঁদে কেঁদে)
মালিহা: নিলয়ের বাচ্চা আগে আমারে ছেড়ে দে।।এমনে শক্ত করে জড়ায় ধরলে মুক্তি পাবো কেমনে??(বিরক্ত আর রাগ নিয়ে)
নিলয়: আমি তো তোমাকে ধরি নি।।তুমিই তো আমাকে ধরেছো।।মরার আগে একবার পড়া গুলো রিভিশন দিয়ে নিই…দুই বা ততোধিক গ্যাস যখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ছাড়াই পরস্পরের সাথে সম্পূণ ভাবে মিশে যায়…ধুর আর মনে পড়ছে না।।আপু কৈ তুই?শেষ বিদায় দিবি না??
মালিহা প্রচন্ড রাগে নিলয়ের মুখ চেপে ধরে বলে,এই বলদা আরেকবার আপু আপু আর পড়াশোনার কথা বললে সত্যি সত্যি তোরে আমি মাইরা ফেলবো।।ছাড় আমারে।
নিলয় অবশেষে বুঝতে পারলো যে সে মালিহা কে ধরে আছে।।তৎক্ষনাত মালিহাকে ঝেড়ে ফেলে উপরে উঠে যায় নিলয়।।।মালিহা ধপাস করে পড়ে যায়।।পায়েল হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে তাদের কান্ড দেখে।।
নিলয়: ওহ!সরি মালিহা।।ভয়ে ফেলে দিয়েছি।।(মালিহার হাত ধরে তুলতে তুলতে)
মালিহা: এবার বোধ হয় আমার কোমর ভেঙ্গে গেলো গো!(মায়া নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে)
নিলয়: সমস্যা নেই আমি ভালো কোমর মালিশ করতে পারি।।(সব দাঁত বের করে হাসি দিয়ে)
মালিহা: অসভ্য কোথাকার!!তোর তো স্বভাব একদম ভালো না।।(চিৎকার করে)
নিলয়: ওহ!মালিহা সরি সরি আসলে আমার আপুর কথা বলতে আমি আমার কথা বলে ফেলেছি।।সরি।।(দৌড়ে পালিয়ে গেলো)
পায়েল: কী রে আপু ভাইয়া তোকে এত ভালো একটা কথা বললো তুই ওকে অসভ্য বললি?(হাসি নিয়ে)
মালিহা: চুপ কর তুই।।ও মা গো ব্যাথায় নড়তেই পাচ্ছি না।।ওরে আরেকবার দেখা পাই আগে।।জনমের মতো দেখায় দিবো আমি কে!!(কুড়কে কুড়কে)
পায়েল:হোক।আগে চল মুভ দিয়ে দিই।আর ঔষধ খেয়ে নিবি চল।(মালিহাকে ধরে)
মালিহা: চল।।
…..
দুপুর ১ টার দিকে কলিংবেল বেজে উঠলো।।পায়েল দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিয়েই চমকে গেলো।।তার মা বাবা চলে এসেছেন।।
পায়েল: মা,বাবা কখন এলে তোমরা?
শুভর মা: ভোরেই পৌঁছে গেছি রে।।একটা বড় কাজ সারতে এসেছি।।(হাসি নিয়ে)
পায়েল:কী কাজ?(আশ্চায হয়ে)
বাবা:ভেতরে গিয়ে বলি?
পায়েল: ওহ!সরি এসো এসো।।
মা: বুড়ি হয়ে গিয়েছিস নাকি মা?(পায়েলের দিকে তাকিয়ে)
পায়েল: কী যে বলো মা!!(হাসি নিয়ে)
পায়েল বাসার সবাইকে ডেকে নিচে আনলো।।শুভ গিয়ে তার মা,বাবাকে সালাম করে নিলো।।বাসা ভতি মানুষ দেখে শুভর মা আর বাবা খুশি হয়ে গেলো।।শুভর মা মিরাকে কাছে নিয়ে শুভর পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,বাহ!দেখো শুভর বাবা কত সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে।।
বাবা: হুম খুব মানিয়েছে।।
পায়েল: কী করতে চাইছো তোমরা?(আগ্রহ নিয়ে)
শুভর বাবা: ৪ দিন পরে আমাদের আবার চলে যেতে হবে।।তাই কালকে ছোট্ট পরিসরে শুভ আর মিরার শুভ বিবাহটা সেরে ফেলতে চাইছি।
সকলেই প্রথমে থমকে গেলো পরে সবাই খুশি হয়ে একসাথে হুররে বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।।মিরা লজ্জা পেয়ে দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো।।
পায়েল: ভাবি আগেই লজ্জা পেয়েছে।।
সবাই হাসতে লাগলো।।
নিশান: আঙ্কেল সব কিছু কী ঠিক হয়েছে??(শুভর বাবাকে জিঙ্গাসা করে)
বাবা: ভোরে দেশে এসেই সময় নষ্ট না করে সব ঠিক করে ফেলেছি আমরা।।তোমরা শুধু শপিং টা সেরে ফেলো।।আর হ্যাঁ নিশান অনু আর তোমারও বিয়ে কিন্তু কলকে।।অনুর পরিবারকে আসতে বলো।।(হাসি মুখে)
এবার সকলে আরও খুশি হয়ে গেলো।।অনু খুশিতে লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।।
মালিহা: এটাও পালালো!!
আবার সকলে একসাথে হেসে উঠলো।।
শুভর মা: আমার দুই ছেলে সুখে থাক আমার দুই বউমাকে নিয়ে এই দোয়াই করি আজীবন।।
শুভ আর নিশান খুব খুশি হলো।
পায়েল:সবার বিয়ে হচ্ছে আর আমি কুমারী থেকে যাবো?
মালিহা:আরে আমিও তো আছি।
শুভর মা:তোরাও জুটিয়ে নে।।আরেকবার এসে না হয় তোদের বিয়ে দিয়ে যাবো।।
সকলে হাসিতে লুটিয়ে পড়লো।।
…….
সন্ধ্যার দিকে অনুর মা,বাবা পৌঁছে গেলো।।
নিশান সকলকে নিয়ে তার আট EXIBITION এ গেলো।।সকলে নিশানের আট দেখে প্রসংশা করতে লাগলো।।বিশেষ করে সব আটেই অনু চেহারার বিশেষ ছাপ ছিলো।বাহিরের দেশ থেকে অনেকে এই সব আট কোটি টাকায় কিনে নিলো।।অনু খুবি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো আটগুলোর দিকে।।আজ আরেকবার নিশান তাকে Surprise করেছে।।
……
ছাদে…
মিরা: শুভ ঐ যে দূরের আকাশ থেকে মা,বাবা নিশ্চই আমাদের দেখছেন তাই না?(মৃদু স্বরে)
শুভ: হ্যাঁ মিরা।।ওনারা সব সময় আমাদের জন্য দোয়া করে যাচ্ছেন।।
মিরা: আজ যদি মা,বাবা বেঁচে থাকতেন..(মিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো)
শুভ মিরার কাছে গিয়ে মিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,কেঁদো না রুপবতী আমার।।তোমার কান্নায় যে ঐ দূরের আকাশের চাঁদ ও অঝোরে কেঁদে দেবে।।তুমি কাঁদলে তো আমার চোখের জল গুলো ও বেয়ে বেয়ে সমুদ্র তৈরী করবে।।তুমি প্লিজ কেঁদো না।।
মিরা কান্না থামায় দিলো।।
মালিহা: আরে ভাইয়া,আপু চলো নিচে ডাকছে তোমাদের।।আর ভাইয়া কাল থেকে তো আপু তোমার।।একটু অপেক্ষা করো।।(ছাদে এসে মিরা আর শুভকে ডেকে)
শুভ: মালিহা তুমি কবে থেকে আমাকে ভাইয়া ডাকা শুরু করেছো?(অবাক হয়ে)
মালিহা: অনেক আগেই থেকে।।(হাসি নিয়ে)
শুভ: এভাবে ভাইয়া ডাকলে তো বুকটা ফাইটা যায় আমার…..(মজা করে)
মিরা: ঐ?টাংকি মারতেছো আমার সামনে??একদম খেয়ে ফেলবো কিন্তু বলে দিলাম।।(শুভর ন্যাকামি দেখে রাগ হয়ে)
শুভ: কৈ..কৈ..আমি তো ম..জা করছি..লা..লা..ম(তোতলাইতে তোতলাইতে)
মিরা: তোতলানো ছাড়িয়ে দেবো একদম।।বেয়াদবি??(রাগে)
মালিহা: ওহ!তোমরা ঝগড়া থামাও তো।।মামা,মামী ডাকছে তো তোমাদের।।আমি গেলাম।।
শুভ: চলো মিরা।।(ভয়ে)
মিরা: আমি ছাড়া কাউকে দেখলে বা টাংকি মারলে তোমাকে শেষ করে ফেলবো কিন্তু বলে দিলাম।।(রাগে)
শুভ: আচ্ছা বাবু এমন আর কখনও হবে না।।(হাসি মুখে)
চলবে,,,,,,,