#সন্ধ্যামালতী (০২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____________________
আয়াশকে মুখ গম্ভীর করে মাথা ডলতে ডলতে বাড়ির দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো আয়াশের বন্ধু রানা। টিনশেডের পাকা বাড়ি এটা। ক্যম্পিংয়ের জন্য সাধারণত সবাই তাবু করেই থাাকে কিন্তু আয়াশদের টিমে শুধুমাত্র ৭ জন আছে। আর তারা থাকবেও ১০-১২ দিন। ক্যাম্পিং অনেকেই সর্বোচ্চ ৩ দিন করে কিন্তু এই গ্রামটি শহর থেকে অনেকটা দুরে হওয়ায় ডাক্তারি চিকিৎসা খুব কম পায়। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখানে ১০-১২ দিন থাকবে। আর তাই চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। আয়াশ এগিয়ে আসলে রানা জিজ্ঞেস করে,
‘কি রে ভাই মুখ তো এমনিতেই হোপ করে রাখিস এখন আবার হোপ করে আছিস কেন? আর মাথা ডলছিস কেন?’
আয়াশ বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, ‘গ্রামের মানুষের উপকার করতে এসে আমার মাথায় ভর্তা হয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য গ্রাম আর আশ্চর্য মানুষজন!’
‘হয়ছে টা কি বলবি তো!’
‘আরে একটা পিচ্চি মেয়ে আমার মাথায় শক্তপোক্ত পেয়ারা ফেলেছে।’
রানা হা করে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ মেপে মেপে কথা বলার মানুষ। হঠাৎ এতো কথা কেমনে বলতেছে? থাক এবিষয়ে ওকে ঘাটালে আর কথায় বলবে না। রানা গলা পরিষ্কার করে বলে,
‘তোর এতো শক্ত মাথায় পেয়ারাটা পড়েও এখনো আস্ত আছে কেমনে?’
আয়াশ রাগী চোখে রানার দিকে তাকাতেই রানা কাশি দিতে দিতে বলে, ‘না মানে নাস্তা করবি না?’
‘করবো।’
‘চল। নাস্তা করে আবার কাজও শুরু করতে হবে। আমার মাথায় একটা জিনিস কিছুতেই যায় না দোস্ত!’
আয়াশ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রানা বলে, ‘এতো বড় একটা গ্রাম অথচ হসপিটাল মাত্র একটা। তাও অনেকটা দুর। ওখানে তো পেশেন্ট নিতে নিতেই মা’রা যায়। আর বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা! বেশির ভাগ মহিলারাই মা’রা যাচ্ছে এই প্রবলেমে। এখন এতো সমস্যা নিশ্চয় চেয়ারম্যান সাহেব সরকারের কাছে বা গ্রাম্য এমপির কাছে হসপিটালের আবেদন করে থাকবে! আর আমার জানামতে করেছিলো। তাহলে?’
‘সরকার যে টাকা গুলো দেয় সেগুলো কই তাহলে? হসপিটাল নির্মাণ করা হয়নি যেহেতু সেহেতু টাকাগুলো কই?’
‘প্রশ্ন তো এখানেই! আশ্চর্য একটা গ্রাম ভাই।’
আয়াশ কিছু একটা ভাবে। তারপর ছোট করে বলে, ‘আগে নাস্তা করে নেয় তারপর গ্রাম দর্শনে বের হবো। চল!’
রানা মাথাা চুলকাতে চুলকাতে আয়াশের পেছন পেছন গেলো। আয়াশ গিয়ে দেখে তমাল, আকাশ, সাফি, লিজা, জেরিন সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আয়াশকে দেখে সবাই নড়েচড়ে বসলো। তারপর সবাই মিলে নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসে। তারপর নাস্তা সেড়ে একসাথে বের হয় গ্রাম দেখতে।
সন্ধ্যা ওড়নার মধ্যে করে পেয়ারা নিয়ে এসেছে। বকুলকে নিজের বাড়ি পর্যন্ত রেখে সেও পেয়ারা খেতে খেতে হাঁটা লাগায় বাড়ির দিকে। গুণগুণ করে গান আওড়াচ্ছে আর পেয়ারা খাচ্ছে। যদিও গানটার ‘কা কা’ ছাড়া কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়াতেই দেখা মিলে ফরিদ কাকার। রাস্তা দিয়ে দুএকজন লোক কাজে যাচ্ছে। সন্ধ্যা প্রথমে ভয় পেলেও নিজেকে সামলে বলে,
‘কিছু বলবেন কাকা?’
ফরিদ পান খাওয়া লাল দাঁতে বিশ্রী রকম হাসি দিয়ে বলে, ‘কই গেছিলি? পেয়ারা চু’রি করতে?’
সন্ধ্যা জবাব না দিয়ে বলে, ‘আমার বাড়ি যাওয়া লাগবে। আম্মা চিন্তা করবে। রাস্তা ছাড়েন!’
ফরিদ রাস্তা ছাড়ার বিপরীতে দু পা এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা দু পা পিছিয়ে বলে, ‘এগোবেন না কাকা। খুব খারাপ হয়ে যাবে।’
ফরিদ খপ করে সন্ধ্যার হাত ধরে ফেলে। হাত ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় দুজনের। পেয়ারা গুলো ছিটকে নিচে পড়ে যায়। ফরিদ এলাকার চেয়ারম্যানের ভাই হওয়ার সুবাদে কেউ কিছু বলতে পারে না। বললেই একঘরে করে দেওয়ার হুমকি। সন্ধ্যার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরে ফরিদ। ব্যাথায় চোখ ভিজে আসে সন্ধ্যার। ফরিদ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
‘কাল সন্ধ্যা বেলায়ই তো সবার সামনে তোর শাড়ি ছি’ড়ে অপমান করলাম। তাও তোর এতো দেমাগ!’
সন্ধ্যা ভয়ে, ব্যাথায়, লজ্জায় কেঁদে দেয়। সেই মুহুর্তেই পেছন থেকে ভেসে আসে এক গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ। সন্ধ্যার হাত ধরা অবস্থাতেই পেছনে ফিরে তাকায় ফরিদ। সন্ধ্যার সামনাসামনি হওয়ায় স্পষ্ট দেখতে পায় লোকটিকে। অস্ফুট স্বরে বলে,
‘শহুরে ডাক্তার!’
শহরের কয়েকটা ছেলে যে গ্রামে ক্যাম্পিং এ এসেছে তা ফরিদ জানে। শহরের ছেলেদের দেখেই হাতের বাঁধন আলগা করে দেয়। সন্ধ্যা ঝটকা মেরে দৌড়ে যায় আয়াশের পেছনে লুকায়। সন্ধ্যা ততক্ষণে শব্দ করে কেঁদে দিয়েছে। লিজা আর জেরিন সন্ধ্যাকে আগলে নেয়। আয়াশ চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে যায় ফরিদের কাছে। শক্ত কন্ঠে বলে,
‘ওর সাথে কি করছিলেন?’
ফরিদ শুকনো ঢোক গিলে। শহরের লোকজন এমনিতে কিছুর পরোয়া করে না। তার ওপর ছেলেটার রাগী কন্ঠ শুনে ভড়কে যায়। তবুও সাহস নিয়ে বলে,
‘যায় করি তাতে তোমার কি? কে তুমি?’
আয়াশ নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে বলে, ‘আমার কিছু না। তাই বলে দিন দুপুরে, রাস্তাঘাটে মেয়েদের উ’ত্যক্ত করার শাস্তি জানেন? অন্তত ৭ বছর তো জেল হবেই!’
ফরিদ ভয় পেয়ে যায়। কিছু না বলে উল্টো ঘুরে হাঁটতে থাকে। আয়াশ পেছনে ঘুরে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা তখনো কাঁদছে। মাথার ওপর সূর্য মামার তেজ বেড়ে চলেছে। লিজা আর জেরিন শান্ত করার চেষ্টা করছে। আয়াশ সন্ধ্যার কাছে গিয়ে শক্ত গলায় বলে,
‘ দিন দুপুরে তোমাকে হ্যা’রাস করতেছে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করতেছো!’
সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আয়াশের দিকে। সে কি বলবে? আয়াশের চোখ মুখ ততক্ষণে রোদ+রাগে লাল হয়ে আছে। সমাজটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! দিন দুপুরে লোকজনের সামনে একটা মেয়েকে হ্যা’রাস করতেছে তাও বাবার বয়সী একজন লোক। সন্ধ্যা ভাঙা গলায় বলে,
‘আমি কি বলবো শহুরে ডাক্তার?’
সন্ধ্যার কথায় আয়াশের রাগ হয়। তবুও নিজেকে সামলে বলে, ‘তোমাদের বাড়ি কোথায়?’
‘সামনেই!’
‘চলো।’
সন্ধ্যাকে সাথে নিয়ে আগে আগে হাঁটতে থাকে আয়াশ। রানা, আকাশ, তমাল, সাফি, লিজা, জেরিন সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আয়াশের দিকে। আয়াশ ২৪ বছরের জীবনে মনে হয় না এতো কথা কোনোদিন বলছে! রানা বলে,
‘এটা কি আসলেই আমাদের আয়াশ ছিলো?’
জেরিন রানার মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘না ওটা আয়াশের ভুত ছিলো। এবার চল।’
সবাই আয়াশ আর সন্ধ্যার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো। আয়াশ গম্ভীর মুখ করে হাঁটলেও আশে পাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে নিলো। সন্ধ্যা বাড়ির সামনে এসে বলে, ‘এটাই আমাদের বাড়ি।’
‘ঠিক আছে। বাড়ি যাও আর একা একা কোথাও যাবে না।’
সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিলে আয়াশ আবার ডাকে। আয়াশের ডাকে পিছু ফিরে তাকায় সন্ধ্যা। আয়াশ দুপা এগিয়ে গিয়ে শান্ত গলায় বলে,
‘তুমি নারী তোমাকে সেইফ করার জন্য অলওয়েজ কেউ থাকবে না। আজ আমরা ছিলাম তাই হয়তো বিপদ থেকে বেঁচে এসেছো কিন্তু সবসময় আমরা থাকবো না। তোমার নিজের সুরক্ষা নিজে করতে হবে। তোমাকেই তোমার নিরাপত্তা হতে হবে। কেউ তোমার দিকে দুপা এগিয়ে দিলে তুমি তার দুপা-ই ভেঙে দিবে। মনে রাখবে তোমাকেই তোমার বাঁচাতে হবে। বাঁচতে হলে প্রতিবাদ করে বাঁচতে হবে।’
বলেই আয়াশ পেছন ঘুরে চলে আসে। সন্ধ্যা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে সেদিকে। বাড়ির ভেতর থেকে সাহেদা ডাক দেয় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা ছুটে আসে মায়ের কাছে। সাহেদা বলে, ‘কোন কোন জায়গায় ঘুইরা আয়লি হুনি!’
সন্ধ্যা মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, ‘বেশিদুর যায় নাই। এই তো পেয়ারা আনতে গেছিলাম।’
সাহেদা সন্ধ্যাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘তে আপনের পেয়ারা কই মা?’
সন্ধ্যার মনে পড়ে তখন ফরিদের সাথে ধস্তাধস্তির কথা। তবুও লুকিয়ে যায় মায়ের কাছে। বলে, ‘বকুলরে সব দিয়ে দিছি আম্মা।’
‘আচ্ছা ভালো কাম করছোস। অহন তাড়াতাড়ি আয় দেহি। তোরে খাওন দিয়া আমি আবার কামে যামু। শহর থেইকা নাকি কয়ডা পোলা মাইয়া আয়ছে হেগো রান্দনের কথা কইয়া গেছে চেয়ারম্যান সাহেব। আজকা থেইকা রাইন্দা দিমু।’
শহরের ছেলেমেয়ের কথা শুনে সন্ধ্যার বুঝতে বাকি নাই তার মা কাদের কথা বলছ! সন্ধ্যা মায়ের পিছু পিছু খাওয়ার ঘর পর্যন্ত এসে মায়ের আঁচল ধরে আহ্লাদী স্বরে ডাকে, ‘ও আম্মা শোনো না!’
‘আহ্লাদ করা ছাইড়া কি কওনের লাইগা ঘুরতাছোস এইডা ক!’
সন্ধ্যা দাঁত বের করে বলে, ‘আমি যাবো তোমার সাথে।’
সাহেদা হাতের কাজ রেখে বলে, ‘তুই যাইতি ক্যা?’
‘এমনিতেই। ও আম্মা আমি যাবো। নিয়া চলো না!’
কানের কাছে অনেকক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করায় সাহেদা রাজি হয়ে যায়। তাছাড়া এমনিতেও মেয়েটাকে একা বাড়ি রেখে গিয়ে তিনি শান্তিতে কাজ করতে পারতো না। মেয়েকে খাইয়ে দিয়ে বললেন,
‘তুই বইয়া থাক আমি আয়তাছি।’
সন্ধ্যা কি মনে করে বলে, ‘ও আম্মা বকুলরে ডাইকা নিয়া আসি! ও গেলে দুজনে একসাথে থাকবো। ভালো লাগবো।’
‘না। আমার লগে যাওয়ার হময় ডাক দিয়া যাইস।’
সন্ধ্যা আর কথা বাড়ায় না। সাহেদা সব কাজ শেষ করে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বকুলের বাড়ির সামনে এসে সন্ধ্যা বকুলকে ডাকে। বকুল বেড়িয়ে এলে তাকে বলে যাওয়ার কথা। বকুলও বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যায়। সাহেদা পিছে, সন্ধ্যা আর বকুল আগে আগে হাঁটতেছে। আয়াশরা যেখানে থাকে সেখানে আসে। একজন লোক ছাড়া পুরো বাড়ি ফাঁকা দেখে সাহেদা লোকটা কে বলে,
‘ভাই এইহানে না কয়ডা পোলা মাইয়া থাকোনের কথা আছিলো।’
‘হ। সবগুলান তো ঘুরতো গেছে। তুমি কি রানতে আয়ছো?’
‘হ।’
লোকটা সাহেদাকে নিয়ে রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো। কোথায় কি আছে সব দেখিয়ে দেয়। বকুল আর সন্ধ্যা বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে চলে আসে। সিড়ির ওপর বসে বলে,
‘জায়গাটা অনেক সুন্দর বল।’
বকুল মাথা নাড়ায়। অনেকক্ষণ দুজনে সেখানে বসে থেকে পানি দিয়ে মারামারি করে। তারপর দুজনেই পাশে থাকা বকুল গাছে উঠে বকুল ফুল পাড়তে থাকে। বকুল ফুলের সুবাস নেয় আর ওড়নাতে জমায়। বকুল ফুল নিতে নিতে সন্ধ্যা বকুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘দেখ সই তোর নামের ফুল নেয়। ফুলগুলোর গন্ধ কত সুন্দর কিন্তু তোর গায়ের গন্ধ ভালো না।’
বকুল ততক্ষণে নিচে নেমে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তুই শুধু নিচে নাম। তোর আজ খবর আছে।’
সন্ধ্যা খিলখিলিয়ে হাসে। সে সময় হাজির হয় আয়াশরা। বকুলকে বকুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রানা বলে, ‘এই দিন দুপুরে কোন ভুতনি ওখানে?’
বকুল ঘাড় বাকিয়ে সেদিকে তাকায়। আয়াশদের দেখে সন্ধ্যাকে বলে, ‘এই সন্ধ্যা নিচে আয়।’
বকুলের ডাক শুনে সন্ধ্যা নিচে তাকায়। আয়াশ তাকায় গাছের ওপরে। সন্ধ্যাকে সেখানে দেখে তার রীতিমতো কপালে হাত। এই মেয়ে তো ভালো রকমের উড়নচণ্ডী! একটু আগে যা হলো তারপরও বিন্দাস ঘুরে বেড়াচ্ছে! সন্ধ্যা নিচে নেমে হাসিমুখে আয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ফুল নিবেন শহুরে ডাক্তার?’
আয়াশ একবার ফুলের দিকে তো আরেকবার সন্ধ্যার দিকে তাকায়। তারপর হাত মেলে দেয়। সন্ধ্যা খুশিমনে কিছু ফুল আয়াশকে দেয়। আয়াশ বলে, ‘তোমার নাম কি সন্ধ্যা বেলা নাকি সন্ধ্যামালতী?’
সন্ধ্যা ভ্যাবচ্যাকা খায়। উপস্থিত সবাইও নড়েচড়ে দাঁড়ায়। সন্ধ্যামালতী না হয় ঠিক আছে। সন্ধ্যা বেলা কি কারো নাম হয় নাকি? আকাশ পাশ থেকে বলে, ‘ওই মেয়েটা তো ওকে সন্ধ্যা বলে ডাকলো। তা তুই আবার ওরে এগুলা কি জিগাস?’
আয়াশ কাউকে পাত্তা দিয়ে পুকুর পাড়ে শান বাঁধানো পাথরে বসে। তারপর ফুলগুলো পাথরের ওপর রাখতে রাখতে বলে, ‘সকালে ওর নাম জিজ্ঞেস করছিলাম তখন বললো, ‘আমি এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যাবেলার সন্ধ্যামালতী’। সন্ধ্যা তো এখন ‘বেলা’ তেও আছে ‘মালতী’ তেও আছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
রানা বলে, ‘আরে এটা তো…না আসলেই কনফিউশানের ব্যাপার।’
জেরিন সন্ধ্যার কাছে এসে বলে, ‘সব বল’দ এক জায়গায়। আরে নিশ্চয় ওর নাম সন্ধ্যামালতী। ঠিক বললাম না সন্ধ্যা?’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে। নেটওয়ার্কের প্রবলেমের জন্য বার বার ফোন এদিক ওদিক করতে থাকে। সন্ধ্যা এন্ড্রয়েড ফোন আগেও দু একজনের কাছে দেখেছে তাই সে পূর্বদিকে আঙুল তুলে বললো,
‘আপনি ওদিকে যান। নেটওয়ার্ক পাবেন।’
আয়াশ কিছু না বলে সেদিকে হাঁটতে থাকে। জেরিন আর লিজা সন্ধ্যা আর বকুলকে ধরে শান বাঁধানো পাথরে বসায়। তারপর নিজেরাও বসে বকুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘তোমার নাম কি?’
‘বকুল।’
‘বাহ তোমাদের দুজনের নামই দেখছি ফুলের নাম।’
জেরিন বলে, ‘আচ্ছা আয়াশকে তুমি চিনো? না মানে সকালেও ওকে শহুরে ডাক্তার বললে! একটু আগেও বললে।’
সন্ধ্যা ভীত স্বরে বলে, ‘চিনি না। আসলে সকালে উনার মাথায় পেয়ারা ফেলেছিলাম ভুল করে।’
রানা দ্রুত এগিয়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। বলে, ‘তুমিই সেই মেয়ে? ওএমজি! এই তোমার পেয়ারা ওর মাথায় পড়েই ওর মাথা খুলে গেছে বুঝছো। এখন তোমার দেওয়া এই বকুল ফুল গুলো পেয়ে যদি ওর দিলটাও খুলে যায়!’
জেরিন আর লিজা শব্দ করে হেঁসে দেয়। সন্ধ্যা আর বকুল কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ওদের তাকানো দেখে সবাই আরেকদফা হেঁসে দেয়। সন্ধ্যা আর বকুল লজ্জা পায়। আকাশ এগিয়ে এসে এক পাশে বসতে বসতে বলে,
‘তাহলে তো খুবই ভালো হয় দোস্ত। অন্তত আমাদের হি’টলারের আগুন পড়া বন্ধ হবে।’
আরো একদফা হাসাহাসি হয়। সন্ধ্যা আর বকুল ওদের কথার মানে বুঝতে পারে না। আয়াশ ওদের হাসতে দেখে বলে, ‘হাসছিস কেন তোরা?’
মুহুর্তেই সবার হাসাহাসি চুপ হয়ে যায়। আয়াশ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়েও কিছু বলে না। নিজের মতো কিছুটা দুর একপাশে বসে পড়ে। সেসময় কানে আসে একটা মেয়ের কন্ঠ। সবাই সেদিকে তাকায়। একটা মেয়ে সুন্দর করে সেজে গুজে লাজুক লাজুক মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা আর বকুল কপালে বিরক্তির ছাপ ফেলে। জেরিন আস্তে করে সন্ধ্যাকে বলে,
‘এই লজ্জার বস্তাটা কে গো?’
সন্ধ্যা মুখ বাকিয়ে বলে, ‘রিনা খান।’
আয়াশ বাদে বাকি সবাই শুনে ফেলে। কিছুক্ষণ সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে দেয়। সন্ধ্যা জিভ কেটে চোখ মুখ খিচে অন্যদিকে তাকায়। সাথে সাথে সপাটে একটা শব্দ হয়….
চলবে…
(