সন্ধ্যামালতী পর্ব -০৩+৪

#সন্ধ্যামালতী (০৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________

পরিবেশ মুহুর্তেই নিস্তব্ধ, নিরব হয়ে গেলো। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যার বলা ‘রিনা খানের’ দিকে। সন্ধ্যা থা’প্পড় খেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আর মেয়েটি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গটগট করে চলে যেতে নেয়। আয়াশ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে আসে। পেছন থেকে ডাক দেয় মেয়েটিকে। মেয়েটি পেছনে ফিরে আয়াশকে দেখে মুহুর্তেই মুখ থেকে রাগের আভা সরিয়ে লাজুক ভাব আনে। আয়াশ সন্ধ্যার কাছে এসে বলে,

‘আসো।’

সন্ধ্যা চমকে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ ইশারা করে তার সাথে আসতে বলে। সামনে দাঁড়ানো সেই মেয়েটির মুখ মলিন হয়ে যায় সন্ধ্যাকে আয়াশের সাথে আসতে দেখে। আয়াশ সরাসরি মেয়েটির সামনে এসে বলে, ‘তোমার নাম কি?’

মেয়েটি লাজুক স্বরে বলে, ‘রিনি।’

‘তুমি ওকে থা’প্পড় মারলে কেনো?’

রিনি যেনো আরো ক্ষেপে গেলো। রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘থা’প্পড় মেরেছি ঠিক করেছি। ছোট লো’ক, ফকিন্নির বা’চ্চা, আ’জন্মার এতো সাহস আমাকে রিনা খান বলে…

কথা শেষ করার আগেই কষিয়ে থা’প্পড় পড়ে রিনির গালে। রিনি হতবাক হয়ে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা তাকে থা’প্পড় মে’রেছে! আয়াশ সন্ধ্যার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। রাগে চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। সন্ধ্যাকে থা’প্পড় মারতে দেখে বকুলসহ বাকি সবাই ছুটে আসে। সন্ধ্যা কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘আমাকে থা’প্পড় মে’রেছিস আমি কিছু বলিনি। তার মানে এই না তুই আমার মা-বাবা রে নিয়েও বাজে কথা বলবি আর আমি চুপচাপ শুনবো! আমি চুপ থাকতে জানলে মুখ ভে’ঙেও দিতে জানি।’

রিনি কিছু না বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়। বকুল সন্ধ্যার কাছে এসে বলে, ‘তুই ওকে থা’প্পড় কেন মারলি? তুই তো জানিস চেয়ারম্যান চাচা জানলে কি হতে পারে!’

‘কি হবে? ওর মতো বেয়াদবরে থা’প্পড় দিয়ে জীবনের ভালো একটা কাজ করছি।’

তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাঁচতে হলে প্রতিবাদ করে বাঁচতে হবে নয়তো ওরা ছি’ড়ে খাবে।’

বলেই সন্ধ্যাও নিজের জায়গা থেকে চলে যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে লিজা, জেরিন, তমাল, আকাশ, সাফি আর রানা। আয়াশ মুচকি হেঁসে পা চালিয়ে বাড়ির মধ্যে যায়। বকুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজেও সন্ধ্যার পেছন পেছন যায়। রানা বলে,

‘সন্ধ্যামালতী! এ যেন এক অন্য নারী! ভীতু, উড়নচণ্ডী আবার প্রতিবাদীও।’

আয়াশরা সবাই নিজেদের মতো করে ছোট ছোট টেবিল নিয়ে বাড়ির সামনে সুন্দর করে সাজিয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব গ্রামের সবাইকে বলে দিয়েছে ছোট ছোট বাচ্চা, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ মানুষেরা সবাই যেনো সেখানে চলে যায়। লিজা আর জেরিন গর্ভবতীদের দেখছে, তমাল আর সাফি ছোট বাচ্চাদের টিকা দিচ্ছে। আকাশ, আয়াশ আর রানা অন্যান্য পেশেন্ট দেখছে। সাহেদা বাড়ির ভেতর রান্না করছে। সন্ধ্যা এতক্ষণ সেখানেই ছিলো। বকুল বাড়ি চলে গেছে। সন্ধ্যা এগিয়ে এসে লিজা আর জেরিনের কাছে দাঁড়ায়। লিজা মুচকি হেঁসে বলে,

‘সন্ধ্যার রাগ তবে কমেছে?’

সন্ধ্যা লজ্জা পায়। তারপর বলে, ‘আপনারা উনাদের কি দেখতেছেন?’

‘আমরা দেখতেছি গর্ভকালীন সময়ে কার কি সমস্যা!’

সন্ধ্যা ‘ওহ’ বলে বাকিদের দিকে নজর বুলায়। টিকা দেওয়ার সময় বাচ্চাদের কান্না করতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। বাচ্চাদের কাছে এসে নানারকম ভঙ্গিতে বাচ্চাদের হাসায়। পুরোটাই পর্যবেক্ষণ করে আয়াশ। সব কাজ শেষ করে সবাই রেস্ট নিতে বসে। আজ প্রথমদিন তাই তেমন কোনো ভীড় নেই। তবুও ৭ জন থাকায় সহজেই সবটা হয়ে গেছে। আয়াশ সন্ধ্যার কাছে এসে বলে,

‘তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ছো?’

‘সাইন্স!’

আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘আমার আম্মার তো অতো টাকা নাই যে আমারে টিউশন করাবে। আমার মেধা ভালো বলে স্কুলের দুজন শিক্ষকই আমাকে পড়া ভালো করে বুঝিয়ে দিতো। আর আমিও অনেক পড়তাম তাই সমস্যা হতো না বুঝতে। টিউশনও করতে হয়নি।’

‘ভবিষ্যতে কি হওয়ার ইচ্ছে আছে?’

সন্ধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়। সেসময় ডাকে সাহেদা। এগিয়ে আসে মেয়ের কাছে। বাকি সবাই মন দিয়ে সন্ধ্যার কথা শুনছিলো। সাহেদা এগিয়ে এসে হেঁসে বলে,

‘আপনাগো খাওন আমি টেবিলের ওপর রাইখা আয়ছি। দুফুরের রোদডা পইড়া যাক তহন আবার আইমু নে।’

আয়াশ মাথা নাড়ায়। সাহেদা সন্ধ্যাকে নিয়ে চলে যায় বাড়ির দিকে। সন্ধ্যা মায়ের সাথে খুনশুটি করতে করতে বাড়ি চলে আসে। বৃদ্ধ দাদাকে গোসল করে খাইয়ে দেয়। তারপর নিজেও গোসল করে গ্রাম্য মেয়েদের মতো করে শাড়ি পড়ে শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেঁচিয়ে নেয়। গ্রাম্য মেয়েরা বেশিরভাগই শাড়ি পড়ে। এতে তাদের সৌন্দর্য অন্যরকম ভাবে প্রকাশ পায়। গোসলের পর কোমড় পর্যন্ত খোলা চুল, আর মুখে জলের বিন্দু কণাতে সন্ধ্যামালতীর সৌন্দর্য আরো ফুটে উঠেছে। সাহেদা মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়ায়। মাঝে মাঝে তার মনে হয় তারই বোধহয় নজর লেগে যাবে তার মেয়েটার। এতো রুপ আল্লাহ তাকে দিছে দেখলে মনে হয় সত্যিই কোনো এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যাবেলার সন্ধ্যামালতী। সাহেদাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা বলে,

‘কি দেখো আম্মা?’

সাহেদা হাসে। বলে, ‘তোরে দেখলে মনো হয় আমার চোখডা ধাধাইয়া যাইতাছে।’

বলেই মেয়ের কপালের এক কোণে চুমু খায়। সন্ধ্যা লজ্জা পায়। তারপর কাপড় দড়িতে মেলে দিয়ে নিজের ঘরে যায়। টিনের রঙ করা বাড়িতে বিশেষ কিছুই নেই তবুও সন্ধ্যামালতীর জন্যই হয়তো এবাড়ি ভীষণ বিশেষ! সাহেদা গোসল করে আসলে মা মেয়ে একসাথে খাবার খায়। তারপর সব কাজ সাড়তে সাড়তে বেজে যায় ৩ টা। সেসময় বাড়িতে হাজির হয় চেয়ারম্যানের ভাই ফরিদ আর চামচা। সাহেদা ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ফরিদের গলা শুনে পেছন পেছন বের হয়ে আসে সন্ধ্যাও। ফরিদ কেনো এসেছে তা তার জানা! ফরিদকে দেখে সাহেদা সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুই বাইরে আয়ছোস কেন? ঘরে যা।’

ফরিদ জোড়ে বলে, ‘ওর জন্যই আসছি। ওরে ঘরে পাঠাও কেন?’

সাহেদা বুঝতে না পেরে বলে, ‘মানে?’

‘মানে হলো তোমার মাইয়া আমার ভাইজির গায়ে হাত তুলছে কোন সাহসে?’

সাহেদা অবাক চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা নির্বাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সাহেদা কিছু বলার আগেই সন্ধ্যাা বলে, ‘যে সাহসে আপনার ভাইজি আমার গায়ে হাত তুলছে! যে সাহসে আপনার ভাইজি আমার বাবা-মা রে তুলে বাজে কথা বলছে সেই সাহসেই আমি তার গায়ে হাত তুলছি। ওহ পরিষ্কার করে বলি কষিয়ে একটা থা’প্পড় দিছি।’

সাহেদা নিজের মেয়েকে ধমক লাগায়। সন্ধ্যা কিছু বলে না। ফরিদ হুংকার তুলে বলে, ‘তোর এতো বড় সাহস!’

বলে এগোতে নিলেই সন্ধ্যা পাশে পড়ে থাকা বটি হাতে নিয়ে তেড়ে আসে। বলে, ‘এক পা আগাইলে একদম গলা কে’টে দুইভাগ করে দিবো।’

ফরিদ পিছিয়ে আসে। সাহেদা অবাকের চরম পর্যায়ে। ফরিদ দাঁত কিড়মিড় করে বলে, ‘এতো সাহস বাড়ছে তোর! আমারে বটি দেখাস? এর মূল্য তো তোদের দিতেই হবে।’

বলেই পিছিয়ে গেইট পর্যন্ত আসে। তারপর আবার বলে, ‘ওই শহরের ছেলেগুলার থেকে তোর সাহস বাড়ছে তাই না? ওরা আর থাকবে কয়দিন? তারপর কই যাবি!’

বলেই বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা পেছন থেকে আস্তে করে বলে, ‘কে বলতে পারে তার আগে তোরে না কু’ত্তাই ছিঁইড়া খায়!’

সাহেদা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে মেয়ের কাছে। বলে, ‘তুই এইডা কি করলি?’

‘যা করছি তা যদি আরো আগে করতাম তাহলে এরা এতো দুর আসার সাহস পাইতো না। বাঁচতে হলে বাঁচার মতো বাঁচবো নয়তো বেঁচে থাকার দরকার নাই।’

বলেই ঘরের ভেতর চলে যায়। সাহেদা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মাটিতে।

_____________

বিকালের দিকে কোনো কাজ নেই আয়াশদের। সন্ধ্যাও বিকেলে ঘর ছেড়ে বের হয়নি। তাই লিজা আর জেরিন বাড়ির মধ্যে এসে দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা মেয়েদের কন্ঠ শুনে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। সামনে লিজা আর জেরিনকে দেখে মিষ্টি করে হাসে। লিজা সন্ধ্যার পরনে শাড়ি দেখে হেঁসে বলে,

‘বাহ সন্ধ্যামালতীকে তো একদম পরী পরী লাগতেছে।’

সন্ধ্যা লাজুক হাসে। জেরিন বলে, ‘হয়ছে হয়ছে পরে লজ্জা পেও। চলো আমাদের গ্রাম দেখাও। তোমার সাথে ঘুরবো এখন।’

সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভেতর থেকে তালা চাবি এনে বের হয়। তারপর বড় ঘরে তালা দিয়ে দাদার কাছে যায়। তাকে ঠিক মতো থাকতে বলে লিজা আর জেরিনের সাথে বাইরে আসে। বাহিরে আয়াশ সহ বাকি সবাই দাঁড়িয়ে আছে। বকুলদের বাড়িতে ওর বোনরা আসছে বলে সে আর আসেনি। সন্ধ্যা খোলা চুল গুলো খুলেই রাখে। আয়াশ একপলক তাকায় সন্ধ্যার দিকে। মেয়েটাকে যত দেখে ততই অবাক হয় সে। আটপৌড়ে শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেঁচিয়ে চুলগুলো খুলে রেখেছে। তাকালেই চোখ ধাঁধিয়ে আসে মেয়েটির সৌন্দর্যে। আর এই সৌন্দর্যের অধিকারীনির ওপর কত কু’নজর! রানার ডাকে ধ্যান ভাঙে আয়াশের। সন্ধ্যা, জেরিন আর লিজা আগে আগে আর আয়াশরা একটু পেছনে। সন্ধ্যা পুরো গ্রাম ঘুরাচ্ছে আর কোনটা কি, কোনটা কার জায়গা সব বলতেছে। এক পর্যায়ে জেরিন জিজ্ঞেস করে,

‘আচ্ছা সন্ধ্যা তোমার বাবা কোথায়?’

সন্ধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়। তবুও হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘মা’রা গেছে।’

জেরিন ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘সরি সরি। আসলে আমি…

‘ইটস ওকে আপু। আপনি তো আর জানতেন না!’

আয়াশ সন্ধ্যার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে, ‘গান গাইতে পারো?’

সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আয়াশের দিকে। তারপর মাথা নাড়ায়। আয়াশ আর কিছু বলে না। সবার ঘোরাঘুরির মধ্যেই সেখানে আসে রিনি৷ সন্ধ্যাকে দেখে চোখ মুখ কুঁচকালেও আয়াশের কাছে এসে বলে, ‘ঘুরতেছেন?’

আয়াশ এক পলক রিনির দিকে তাকিয়ে নিজের ফোনে মন দেয়। এতে অপমানবোধ করলেও দাঁতে দাঁত চেপে থাকে। রানা পাশ থেকে মজা করে বলে,

‘ঘুরতেছি না গো। তোমার মতো সুন্দরীদের দেখতে বের হয়ছি।’

রিনি লাজুক হাসে। তা দেখে ঠোঁট চেপে হাসে বাকি সবাই। সন্ধ্যা কাউকে কিছু না বলেই একটা দিকে হাঁটে। হেঁটে চলে আসে কবরস্থানের দিকে। লিজা তা খেয়াল করে আয়াশকে ডেকে বলে,

‘এই আয়াশ দেখ সন্ধ্যা কোথায় যাচ্ছে! ‘

রিনি মুখ বাকিয়ে বলে, ‘ওই মেয়ের কি মাথা আর চরিত্রের ঠিক আছে? না জানি কোন না’গরকে রেখে এসেছে ওখানে!’

আয়াশ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে, ‘সকালের থা’প্পড়ের কথা মনে হয় ভুলে গেছো।’

রিনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সন্ধ্যার পিছু পিছু আসে। সাফি এতক্ষণে মুখ খোলে, ‘দোস্ত এই মেয়ে কবরস্থানের সামনে আসছে কেন?’

তমাল বলে, ‘ভুতের সাথে মিট করতে আর তোরেও মিট করাইতে।’

সাফি লাফিয়ে উঠে। বলে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! ভাই সত্যি সত্যি কবরস্থানে ভুত থাকে বিশেষ করে গ্রাম গুলোতে। আমি যাবো না।’

রানা সাফির পেছনে লা’থি দিয়ে বলে, ‘হা’রাম’জাদা বয়স তো ২৪+ আর এখনো ভুতের ভয়ে ডরাস। তোরে পেত্নীর লগেই বিয়ে দিমু।’

সবাই শব্দ করে হেঁসে দেয়। আয়াশ বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায় সবার দিকে। সবাই চুপ করে যায়। সন্ধ্যার কাছে এসে দেখে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একটা কবরের দিকে। আয়াশ সেদিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে, ‘তোমার বাবার..?

সন্ধ্যা না তাকিয়েই মাথা নাড়ায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবার সাথে কাটানো সময়গুলো। ছোট ছোট হাতে বাবার আঙুল ধরে হেঁটে যাওয়া, বাবার কাঁধে বসে পুরো গ্রাম ঘুরা। সব শেষে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবা মায়ের ঝগড়া আর বাবার ক্ষত বিক্ষত লা’শ। সন্ধ্যার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সেও লুটিয়ে পড়ে মাটিতে…

চলবে..

(#সন্ধ্যামালতী (০৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________

পরিবেশ থমথমে। চারদিকে হালকা বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সন্ধ্যামালতীও ফুটে উঠেছে মিষ্টি গন্ধ নিয়ে। কিন্তু বিকেলে সন্ধ্যার সেন্স হারালেও এখন পর্যন্ত ফিরেনি। হঠাৎ করে সন্ধ্যা সেন্সলেস হওয়ায় সবাই ভয় পেয়ে আছে। আয়াশ, লিজা, জেরিন, আকাশ, সাফি, তমাল, রানা সবাই নিজেদের মতো চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো কিছুতেই সন্ধ্যার জ্ঞান ফিরতেছে না। আয়াশ দ্রুত কন্ঠে বললো,

‘ওকে হসপিটালে নিতে হবে। হয়তো আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসটা নেই যা ওর দরকার। অনেকক্ষণ হলো জ্ঞান হারিয়েছে এতো সময় জ্ঞানহীন থাকলে কোনো সমস্যা হতে পারে।’

সবাই তাতে সহমত দিলো। সাহেদা তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। লিজা আর জেরিন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আকাশ বাহিরে এসে সবটা পর্যবেক্ষণ করে আবাার বাড়ির ভেতর গিয়ে বলে, ‘দোস্ত হসপিটাল তো অনেকটাই দুর। ওকে নিবো কিভাবে?’

‘বাহিরে কোনো গাড়ি টাড়ি দেখিস নাই?’

আকাশ মাথা নাড়ায়। আয়াশ ‘শিট’ বলেই মাথা চেপে ধরে। কিছু একটা ভেবে সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর বলে, ‘কিছু একটার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’

আয়াশ আগে আগে ছুট লাগায়। পেছন পেছন সাহেদা সহ বাকি সবাই আসে। একটু এগোতেই বাড়ির পাহাদার একটি ভ্যান নিয়ে হাজির হয়। আয়াশকে দেখে বলে,

‘স্যার ওরে ভ্যানে কইরা লইয়া যান। তাইলে তাড়াতাড়ি অইবো।’

আয়াশ কথা বাড়ায় না। লিজা, সাহেদা, রানা ভ্যানে উঠে বসে। বাকি সবাই থেকে যায়। সন্ধ্যাকে কোনো রকম বসিয়ে দিতেই সাহেদা দুহাতে জাপ্টে ধরে মেয়েকে। আয়াশ অপলক তাকায় সেদিকে। ভ্যান ছুটতে থাকে দ্রুত। হসপিটালের সামনে নামিয়ে দিলে সন্ধ্যাকে আবার কোলে তুলে নেয় আয়াশ। দ্রুত পায়ে হেঁটে ইমার্জেন্সিতে আসে। ইমার্জেন্সিতে আরো কয়েকজন পেশেন্ট আর কয়েকজন ডক্টরকে দেখে একটা কেবিনে শুইয়ে দেয়। আয়াশ ডক্টরদের সাথে কথা বলে সন্ধ্যার ট্রিটমেন্ট শুরু করে। সবরকম ফর্মালিটিজ পূরণ করে একটা কেবিনে এডমিট করে। ডক্টররা নিজেদের মতো ট্রিটমেন্ট করে স্যালাইন দিয়ে যায়। কেবিনে আয়াশ, সাহেদা, লিজা আর রানা সবাই থাকে। এই অবস্থায় সন্ধ্যা আর সাহেদাকে একা রেখে যাওয়াটা যুক্তিযুক্ত মনে হলো না কারো। সাহেদা আর লিজা সন্ধ্যার কোল ঘেষে বসে পড়ে। আয়াশ আর রানা দেয়ালের সাথে রাখা কাঠের মোড়ায় বসে হেলান দিয়ে। আয়াশ আশে পাশে নজর বুলায়। কিছু কিছু লোক তাদের দিকে ট্যারা চোখে তাকাচ্ছে। আয়াশ পাত্তা দিলো না। নিজের মতো চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।

কেটে গেলো অনেকটা সময়। সন্ধ্যার সেন্স ফিরলেও সাথে সাথে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। মাঝরাতে হুট করেই ঘুম ভেঙে যায় সন্ধ্যার। নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে কি হয়েছিলো তা মনে করার চেষ্টা করে। কবরস্থানের সামনে সে কেন জ্ঞান হারালো তা মনে করতে পারলো না। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে তার মা কেবিনে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্যপাশে লিজাকে দেখে একটু চমকায়। পুরো রুমে চোখ বুলাতেই অস্ফুট স্বরে আস্তে করে বলে, ‘শহুরে ডাক্তার! উনারা এখানে!’

অনেকটা সময় অপলক তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যা তার শহুরে ডাক্তারের দিকে৷ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল সকাল সন্ধ্যাকে রিলিজ করিয়ে ফিরে আসে সবাই। আয়াশ সকাল থেকেই গম্ভীর মুখ করে আছে। সন্ধ্যাকেও জিজ্ঞেস করেনি ‘কেমন আছে?’। সন্ধ্যা বার বার আয়াশের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। সন্ধ্যাকে বাড়িতে একা রেখে যাওয়াটা ঠিক হবে বলে মনে হলো না সাহেদার। কাল সন্ধ্যার দিকেই সন্ধ্যার দাদাকে আকাশ, তমাল, সাফি আর জেরিন মিলে নিয়ে এসেছে তাদের ওখানে। বুড়ো মানুষ রাতে একা থাকবে! সে হিসেবে সাত্তার সাহেব এখনো ওখানেই আছে। সাহেদা সন্ধ্যাকে নিয়ে আয়াশরা যেখানে থাকে সেখানে আসে। আয়াশ চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। পেছন পেছন রানাও যায়। আয়াশকে বলে,

‘তুই এমন গম্ভীর হয়ে আছিস কেন?’

আয়াশ কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে যাায়। রানা বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে! সাহেদা রান্না করে আর সন্ধ্যা তার পাশেই চুপটি করে বসে থাকে। লিজা, জেরিন সহ বাকি সবাই নিজেদের কাজের জন্য রেডি হয়। তারা তো গ্রামে এসেছে চিকিৎসা করার জন্য আর তা তো করতেই হবে৷ আস্তে আস্তে সব পেশেন্ট জড়ো হতে থাকে। বকুল সন্ধ্যার খবর নিতে এসে দেখে দরজায় তালা দেওয়া। তাই সে আয়াশদের এখানে আসে। লিজাকে দেখে মিষ্টি করে হেঁসে বলে,

‘আপু সন্ধ্যাকে দেখছেন?’

লিজা কাজ করতে করতেই উত্তর দেয়, ‘ভেতরে দেখো। বসে আছে!’

বকুল কথা না বাড়িয়ে ভেতরে যায়। সাহেদা যেখানে রান্না করছে সেখানে সন্ধ্যাকে দেখে বলে, ‘কিরে আসছিস আমারে ডাকোস নাই কেন?’

সন্ধ্যা মলিন হেঁসে বলে, ‘তুই তো ব্যস্ত!’

বকুল কিছু বলার আগেই সাহেদা ধমক দেয় সন্ধ্যাকে। তারপর ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনায় তিনি বলে। বকুল আঁতকে উঠে বলে, ‘এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি কেবল জানতেছি! তুই ঠিক আছিস তো সন্ধ্যা?’

‘হ্যাঁ রে বাবা ঠিক আছি। দেখ না আম্মা আমারে এখান থেকে উঠতেই দিতাছে না৷ চল না পুকুর ঘাটে যায়।’

সাহেদা চোখ গরম দিয়ে বলে, ‘এইহানে বইয়া থাক। বকুল মা তুইও বইয়া থাক।’

সন্ধ্যা ঘ্যানঘ্যান করে বকুল কে নিয়ে পুকুর ঘাটে আসে। আয়াশ সন্ধ্যাকে বের হয়ে যেতে দেখে এগিয়ে আসে সাহেদার কাছে। টুল নিয়ে বসে। সাহেদা হেঁসে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে সাহেদাকে তারপর বলে, ‘কাল রাতে সন্ধ্যাকে রেখে কোথায় গেছিলেন আন্টি?’

প্রশ্নটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো সাহেদা। চমকে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ তখনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাহেদা হঠাৎ করেই ঘামতে থাকে। আয়াশ বলে, ‘আপনাকে আমি খুব কঠিন কোনো প্রশ্ন করেছি বলে তো মনে হয় না! তাহলে এমন ঘামছেন কেন?’

সাহেদা নিজের ঘাম মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘ব-বাথরুমো।’

আয়াশের কপালে ভাজটা দৃঢ় হয়। কন্ঠ আরো শক্ত হয়। বলে,

‘অসুস্থ মেয়েকে রেখে আপনি পুরো ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট বাথরুমে ছিলেন? বাথরুম থেকে আসার পর অতো ঘামছিলেন কেনো? আর এতো ভয় পাচ্ছিলেন কেন?’

‘ক-কই ভয় পাইছি বাজান? তুনি মনো হয় ভুল দেখছো!’

আয়াশ আর কিছু না বলে উঠে আসে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে সাহেদা চমকে উঠে। অপর পাশের মানুষটা তাকে আঙুল দেখিয়ে সাবধান করে। সাহেদা দ্রুত সব কাজ করে।

সন্ধ্যা আর বকুল শান বাঁধানো ঘাটে বসে চুপ করে আছে। বকুল কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কাল জ্ঞান হারাইলি কেমনে?’

সন্ধ্যা অন্যমনষ্ক হয়ে বলে, ‘জানি না। কিছু আবছা স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। তারপর কি হলো জানি না।’

‘আচ্ছা বাদ দে। শোন আজ তুই এখানে বসে থাক আমি গাছে উঠবো।’

সন্ধ্যা হাসে। বকুল গাছে উঠে বকুল। ফুল নিয়ে আঁচল ভরিয়ে ফেলে আর উপর থেকে গল্প করতে থাকে। তখন আসে আয়াশ, লিজা, জেরিন, রানা, সাফি, আকাশ আর তমাল। সাফি সন্ধ্যার পাশে বসে বলে,

‘কাল তো আমি তোমারে দেইখা ভয় পাইছি গো সন্ধ্যা। ভাবছি তোমারে ভুতই ধরলো নাকি!’

সেইসময় গাছ থেকে লাফ দিয়ে নামে বকুল। গাছের পাতার শব্দে ভয়ে লাফিয়ে উঠে সাফি। ‘ভুততততত’ বলে চিল্লিয়ে উঠে। সাফির চিৎকার শুনে ভয়েই বকুল দুপা পিছিয়ে যায়। আকাশ দুড়ুম করে সাফির পিঠে কি’ল বসায়। বলে,

‘সব জায়গায় তোর পেত্নী রানী থাকে না। ব’লদ।’

সাফি মাথা চুলকায়। রানা বকুলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে, ‘এতদিন তো সন্ধ্যা ভুতের মতো গাছে উঠে বসে থাকতো। আজ থেকে কি তুমি শুরু করলা নাকি?’

বকুল এসে সন্ধ্যার পাশে বসে। তারপর বলে, ‘আমরা দুজনেই গাছে উঠি।’

সন্ধ্যা বলে, ‘আপনাদের কাজ শেষ?’

লিজা বলে, ‘না গো। ব্রেক নিলাম একটু। খেয়ে আবার সবাই পেশেন্ট দেখবো। আজ তো অনেক পেশেন্ট!’

সন্ধ্যা ‘ওহ’ বলে আয়াশের দিকে তাকায়। আয়াশ যেনো এ দুনিয়ায় নাই। সে ব্যস্ত তখনো ফোনে! সবাই নিজেদের মতো গল্প করতে থাকে। সন্ধ্যা উঠে আয়াশের পাশে বসে। আয়াশ এক পলক তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ডাকে,

‘শহুরে ডাক্তার!’

আয়াশ তাকায় তার দিকে। রানা দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে জেরিনকে আস্তে করে বলে, ‘দেখ! সন্ধ্যা ছোট হলেও ওকে কিন্তু আয়াশের সাথে মানায় বল!’

জেরিন হাসে। আয়াশ আর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে দুজনের একটা ফটো ক্লিক করে। আর আনফরচুন্যাটলি সে সময়ই আয়াশ তাকায় সন্ধ্যাার দিকে। ফটো তে দেখা যায় দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। জেরিন নিঃশব্দে হেঁসে ফটোটা রানাকে দেখায়। আয়াশ সন্ধ্যার দিকে তাকাতেই সন্ধ্যা বলে,

‘আপনি কি সব সময় মুখ এমন করে রাখেন? হাসতে পারেন না?’

‘না।’

আয়াশের সরাসরি উত্তরে নড়েচড়ে বসে সন্ধ্যা। এ কেমন লোক! সন্ধ্যা বলে, ‘ধন্যবাদ।’

‘কেন?’

‘কালকে আপনারা না থাকলে…

‘সবাইকে গিয়ে বলো।’

সন্ধ্যা কটমট করে তাকায় আয়াশের দিকে। ২৮ ঘন্টাতে হঠাৎ করেই তার অন্য এক অনুভূতির জন্ম হয়েছে। কেন? কিভাবে? কি অনুভূতি! কিছুই তার বোধগম্য নয়। তবে তার ভীষণ ভাবে ভালো লাগে তার শহুরে ডাক্তারকে। সন্ধ্যা কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে আয়াশের দিকে। সেসময় সাহেদা আসে সেখানে। সন্ধ্যাকে ডাকতেই বাড়ির পাহারাদার ছুটে আসে। এসে আয়াশদের উদ্দেশ্য করে বলে,

‘স্যার আপনেরা কেউ একা একা কোনো জায়গায় যাইয়েন না। পাশের গেরামের একটা মাইয়ারে কে জানি মা’ইরা ফালাইয়া রাখছে।’

চমকে উঠে উপস্থিত সকলে। আয়াশ নিজেও ভীষণ অবাক হয়। সন্ধ্যা ছুটে পাহারাদারের কাছে আসতে নিলে সাহেদা হাত ধরে আটকায়। বলে, ‘বাড়ি চ।’

আয়াশ খেয়াল করে সাহেদার হাত আর গলা কাঁপছে। কিসের ভয়ে সাহেদার এমন হাল? মেয়ের ভয়ে নাকি যে খু’ন টা হয়েছে তা নিয়ে? আয়াশ আর খুতায় না। পাহারাদারকে বলে,

‘কোথায় খু’ন হয়ছে চাচা?’

সবাই অবাক হয়ে তাকায় আয়াশের দিকে। রানা সাবধান গলায় বলে, ‘তুই যা ভাবছিস তা ভুলে যা। এটা আমাদের শহর না অপরিচিত একটা গ্রাম।’

আয়াশ পাত্তা দেয় না রানার কথা। ফের শুধায় পাহারাদারকে। পাহারাদার জবাবে বলে,

‘হাসপাতালের ওই কাছো একটা রাস্তা আছিলো ওইহানেই মাইয়াডার লা’শ পইড়া আছে।’

সাহেদা দ্রুত পা চালিয়ে সন্ধ্যা আর সাত্তার সাহেবকে নিয়ে বাড়িতে আসে। সাত্তার সাহেব আর সন্ধ্যাকে এক ঘরে থাকতে বলে নিজে এসে রান্না বসায়। সকালে যেহেতু হসপিটালে ছিলো তাই এখনই রান্না করতে হবে। কালকের তরকারি আছে শুধু ভাত রান্না করবে। রান্না শেষ করতে করতে অনেকটা সময় লাগে। ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। সন্ধ্যা এগিয়ে এসে বলে,

‘আম্মা কি হয়ছে তোমার? এমন করতেছো কেন?’

‘ক-কিছু অয় নাই। তুই খায়বার আয়।’

বলেই খাবার বাড়তে লাগে। সন্ধ্যার খটকা লাগে। তবুও কিছু না বলে খাবার খেয়ে নেয়। তারপর হাতের কাজ সব শেষ করতে করতে বাড়িতে উপস্থিত হয় বকুলের পরিবার। সাহেদা সবাইকে একসাথে দেখে বলে,

‘ভাবি আপনেরা এইহানে?’

বকুলের মা হেঁসে বলে, ‘আপনের লগে আত্মীয়তা করবার আয়লাম।’

সাহেদা কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। বকুলের মা হেঁসে বলে, ‘আমাগো বাদলের লাইগা আপনের সন্ধ্যারে নিতো চাইতাছি৷’

সাহেদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ ‘ বলে জড়িয়ে ধরে বকুলের মা’কে। সন্ধ্যা ঘর থেকে পুরো বিষয়টা দেখে। বকুল দৌড়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ইয়াহুউউ তুই আমার ভাবি হবি সন্ধ্যা। সারাদিন দুইজন একসাথে থাকমু।’

সন্ধ্যা একদৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়, ‘আমি আর বাদল ভাই! কেমনে সম্ভব?’

চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here