#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ ৭
ছেলেপক্ষ চলে গেছে একটু আগে।মেয়ে পছন্দ হয়েছে বিধায় আংটিও পড়িয়ে গেছে।রাতের খাবার খেয়েই চলে গেছেন তারা।
ছেলেপক্ষ যাওয়ার সাথে সাথে চাঁদ তাদের বাসায় চলে যায় না খেয়ে সবার উপর রাগ
করে কারণ আজ তুহা আপুকে দেখতে আসবে কেউ তাকে আগে জানালো না একটু।এমন কি তেজ ভাইয়াও না।এতটা পর সে।
অন্যদিকে সবাই বুঝতে পেরেছে চাঁদ অভিমান করেছে আগে থেকে তাকে কিছু না জানানোর কারণে।সবাই ঘর গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছে আর তেজকে পাঠিয়েছে চাঁদকে ডাকার জন্য।
_____________________________
-এই চাঁদ ওঠ সেই সকালে একটা পরোটা খেয়েছিস, আর কিছু খাস নি সারাদিন ওঠ।কিরে তুই রাতে শাওয়ার নিয়েছিস কেনো?
-না ভাইয়া খাবো না আপনি যান,আমার শরীর টা ভালো না।যান আপনি বিরক্ত করবেন না। পেটে হাত দিয়ে কুকিয়ে উঠে বলল চাঁদ।
তেজ ভ্রু কুঁচকে বলল
– কিরে চাঁদ কি হয়েছে, দেখি উঠ,শরীর অসুস্থ কেনো?কী হয়েছে?
-ভাইয়া আপনি বুঝবেন না, আপনি যান আর আপুর খাওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি পাঠাই দিয়েন।
– কি সমস্যা? ওহ বুজেছি। এই সময়টাতে একটু বেশি করে খেতে হয় আর তুই কিনা খাবি না বলছিস।আচ্ছা আমি খাবার পাঠিয়ে দিবো প্রহেলিকাকে দিয়ে খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নিবি।আর আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবি।এই বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক না।বলেই উঠে চলে গেলো তেজ।
___________________________
একটু পর খাবার নিয়ে হাজির হলো প্রহেলিকা। খাবার খাওয়ানোর পর ঔষুধ খাইয়ে দিলো।যখন চাঁদ ঘুমানোর জন্য উদ্যত হলো তখন প্রহেলিকা বলল
-চাঁদ তুহার বিয়ে তো এক সপ্তাহ পর। এখন থেকে শপিং শুরু করে দিবো।
– হ্যাঁ ঠিকই বলেছো আপু।কালই যাবো শপিং এ।
– আচ্ছা তুই এখন ঘুমিয়ে পর।
__________________________
পরের দিন বিকালে______
সবাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে আর গম্ভীর হয়ে আছে সবার মুখ কারণ একটু আগে তুহার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিলো।তাদের চাঁদকেও ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাই তাদের বাড়ির ছোট ছেলের জন্য চাঁদের বিয়ের সম্বন্ধ এনেছে।আর তেজ সেটা শুনেই রেগে গেছে তারপর নিজেকে সংযত করে তুহার শ্বশুর বাড়ির লোককে জানালো যে চাঁদ তার হবু বউ এতে তুহার শ্বশুর বাড়ির লোক লজ্জিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সে ঘটনার পরই তেজ একটা সিদ্ধান্ত পেশ করে সবার সামনে
– বাবা তুহার বিয়ের পর আমার আর চাঁদের এংগেইজমেন্ট আর কাবিন হোক আমি চাই। (তেজ)
– না বাবা কী বলছো আমার আরও একটা মেয়ে আছে প্রহেলিকা ও চাঁদের বড় ওরে বিয়ে না দিয়ে তোমাদের বিয়ে দিলে কেমন দেখা যাবে।। এটা বলে দ্বিরুক্তি প্রকাশ করলেন চাঁদের বাবা।
– আঙ্কেল আপনি আমাকে বিশ্বাস করে চাঁদের হাতটা আমার হাতে তুলে দেন।আর বর্তমানে বড় মেয়ে ছোট মেয়ে মেনে বিয়ে সাদি হয় না।আর আমরা এখনই চাঁদকে তুলে আনছি না।খালি আকদ টা করবো।মাথা উঁচু করে টানটান করে বলর চাঁদ।
এমন অনেক ক্ষন আলাপ আলোচনার পর ঠিক হলো চাঁদ আর তেজের বিয়ে তুহার বৌভাতের পরের দিন হবে।এখানে নিরব দর্শক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে চাঁদ।
সবাই খুশি।মিষ্টিমুখ করছে।সবাই হাসাহাসি করছে।তেজের ফুফাতে বোন রাহাও ছিলো ও একটু মন খারাপ করেছিলো কারণ ও তেজকে পছন্দ করতো।রাহার মন খারাপ টা মোটামোটি সবার চোখেই লেগেছে কিন্তু কেউ পাত্তা দেয় নি।তবে রাহা না আরেকজনও আছে যে এই জিনিসটাকে সহজ ভাবে নেয় নি তবে সে তার মন খারাপটাকে সবার সামনে প্রকাশ করে নি। চাঁদের মনেও আজ খুশি কারণ সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেতে চলছে।সইবে তো এত সুখ,,,,
বিয়ের কেনাকাটা চলছে। আজ থেকেই শুরু।বিকেল বেলায় সবাই বের হবে কেনাকাটা করতে।রাহার পরিবারও বাসায় যায় নি এ কয়দিনের জন্য। চাঁদের মনে তো খুশির লাড্ডু ফুটছে।একসাথে দুটো বিয়ে দেখে কাজের চাঁপও অনেক।
বিকেলে সবাই মিলে শপিং মলে গেছে।আজ তুহার বিয়ের শপিং করা হবে যেহেতু তুহার বিয়ে টা আগে।পরে চাঁদের বিয়ের শপিং।
বাসার মহিলা সব গেছে শপিং করতে।তেজের মা বাদে কারণ আজ তেজের দাদী ও আসবেন। মহিলাটা বড্ড খুঁতখুঁতে টাইপ। এজন্য তেজের মা থেকে গেছে।
সবাই শপিং করতে ব্যস্ত। তেজ আসতে পারে নি অফিস ছিলো বলে।শপিং শেষে তুহা,হৃদি,প্রহেলিকা আর চাঁদ মিলে পার্লার গেছে আর সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে।
চাঁদদের পার্লারের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় এগারোটা বাজলো।তাই আহান আর তেজ গেছে তাদের আনতে।
_______________________
পার্লারের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তেজ আর আহান।তারা দুজন বুজছে না বিয়ে আরো ছয়দিন বাকি আজই পার্লারে কী কাজ।এর মাঝেই পার্লার থেকে বের হলো চার জন।তুহা,প্রহেলিকা আর হৃদি আহানের গাড়িতে আর চাঁদ তেজের গাড়িতে উঠলো।
তেজ খেয়াল করেছে চাঁদ মুখ ঢেকে রেখেছে উরনা দিয়ে।কিন্তু কারণ কি।তাই সে গাড়িতে উঠেই জোড় করে উরনা সরিয়ে অবাকে হা হয়ে রইল কারণ,,,,,
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ৮
তেজ চাঁদের নাক, গাল স্লাইভ করতে করতে বলে,
-“আমার চাঁদমনি কি জানে তার এই সরু নাকে চিকচিক পাথরটা কত সুন্দর লাগছে?এতটা সুন্দর লাগবে জানলে অনেক আগেই আমি তোমার নাক ফোঁড়ানোর ব্যবস্থা করতাম।না এবার আর তোরে মুখ খোলা রেখে বাসার বাহিরে আনা যাবে না।এত সৌন্দর্য দেখার অধিকার কারো নেই আমি ছাড়া।”
চাঁদ লজ্জায় লাল হয়ে নিচে তাকিয়ে আছে।লোকটা লাগাম হীন কথাবার্তা বলা শুরু করলো কবে থেকে।চাঁদ লজ্জাকে সাইডে রেখে কৌতুকের সুরে বলল,,
-“আজ বোধহয় রাস্তাতেই থাকতে হবে আমার।ইশ কেনো যে আহান ভাইয়ার সাথে গেলাম না।”
চাঁদের এমন কথায় প্রথমে তেজ বোকা বনে গেলেও পরে বুঝতে পেরে ফিক করে হেসে দেয়।
অন্যদিকে চাঁদ তেজের হাসির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি অসাধারণ লাগে তাকে হাসলে।চাঁদ নিজের অজান্তেই তার হাতটা নিয়ে তেজের গালে রাখে।
তেজ এতক্ষণ হাসলেও চাঁদের এমন কান্ডে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেও পরে কারণ বুঝতে পেরে একটা দুষ্টমির হাসি দিয়ে বলল,,
-” কিরে গাল ধরলি যে! চুমু টুমু দেওয়ার প্ল্যান আছে নাকি?”
চাঁদ এতক্ষণে হুশে ফিরলো তাড়াতাড়ি হাতটা নামাতে গেলেই তেজ ধরে ফেলে।হাতটার উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
-“আরে সমস্যা নেই এই পুরো আমিটাই তো তোর।দু একটা চুমু দিতেই পারিস তবে সেটা বিয়ের পর আপাতত চোখ দিয়ে দেখে পেট ভর”। কথাটা বলেই চোখ টিপ মেরে হোহো করে হেসে উঠল তেজ।
চাঁদ আবারও মুগ্ধ হলো।লোকটা কারণে অকারণে কখনোই হাসে না।আজ বেশিই হাসছে।আর তার হাসিটাও কি অমায়িক। মনে মনে বলছে চাঁদ।
এর মাঝেই তেজের ফোন বেজে উঠে। দুজনই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তেজের মা কল দিয়েছে।তেজ কল রিসিভ করতেই ফোনের অপরপাশ থেকে তার মা বলল,
-“তেজ কোথায় তোরা?তাড়াতাড়ি আয়।তোর দাদী আসছে।সে তোদের দেখতে চায়।এমনেই রেগে আছে কেনো তাকে না জানিয়ে তোর বিয়ে চাঁদের সাথে ঠিক করেছি।তুই ছাড়া ওনাকে কেউ বুঝাতে পারবে না। তাড়াতাড়ি আয়।
তেজ একটা ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল-“আসছি আম্মু, ডোন্ট ওয়ারি”।
চাঁদ এতক্ষণ নিশ্চুপ শ্রোতা ছিলো।সে বুঝতে পেরেছে ওখানে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে তাই তো খালামনি কল করেছে।তেজও কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।চাঁদ নিজের শরীর টা এলিয়ে দিলো গাড়ির সিটে।সারাদিন আজ বড্ড ধকল গিয়েছে।
_____________________________
“চাঁদ উঠো বাসায় এসে পরছি,এই চাঁদ উঠো” – এমন কয়েকবার ডাকার পর চাঁদের ঘুম ভাঙ্গলো তাকিয়ে দেখে সে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল আর এখন বাসার সামনে এসে পড়েছে তার মানে অনেকক্ষন ঘুমিয়েছে। এর মাঝেই তেজ তাড়া দিয়ে বলে-
” তাড়াতাড়ি নামো চাঁদ আজ দাদী বলেছে তোমাকেও আমার সাথে যেতে ওনার কথা আছে চলো।আর ভয় পেয়ো না আমি আছি”।
চাঁদও ভরসা পেয়ে মুচকি হাসি দিলো। গাড়ি থেকে নেমেই দু’জন এক সাথে তেজেদের বাসায় গেলো।
তেজেদের বাসায় সবাই নিরব হয়ে বসে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কিছু ক্ষণ আগে তেজের দাদী তান্ডব করেছিলো।এখানে হাজির নেই তেজের বাবা ও চাঁদের ভাই আর বাবা।কারণ ওরা থাকলে ঝড় আরো বড়সড় হতো।
চাঁদ আর তেজ বাসায় এসেই প্রথমে দাদীকে সালাম দেয়।তেজের সালামের জবাব দিয়ে চাঁদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে –
” দাদুভাই তুমি এ মেয়েটার মাঝে কী এমন দেখেছো যে ওরেই বিয়ে করার কথা বললে? আমাদের রাহা তো ওর থেকেও বেশি সুন্দর স্টাইলিশ ওরেও তো বিয়ে করলে পারতে।”
“-আমি বাসায় বউ আনতে চাচ্ছি কোনো মডেল নয়,আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দাদী।” দৃঢ় গলায় বলল তেজ।
“-তুমি কি বলছো দাদুভাই এখনকার ছেলেরা আধুনিক বউ চায় আর সব থেকে বড় কথা এই মেয়েটা বড্ড রোগা এমন বউ বংশ প্রদীপ জ্বালাতে পারবে না।” তেজের দাদীও মিন মিন করে বলল।
“-আমি আবারও বলছি আমি বউ আনবো অন্য কিছু না।আর কে প্রদীপ জ্বালাতে পারবে কে পারবে না সেটা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানেনা।আর ও একটু দুর্বল এটার সাথে বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তেজ এবার রাগী স্বরে বলে উঠে চলে গেলো তার রুমে।
আর তার দাদীও তেজকে আর কিছু বলার সাহস পায় নি কারণ সবাই জানে তেজের কথার উপর কোনো কথায় সে মানবে না।দাদীর পুরোটা রাগ গিয়ে পড়লো চাঁদের উপর।চাঁদ গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে দূরে।দাদী আক্রোশে ফেটে পড়ে চাঁদকে চিল্লিয়ে বলে উঠলোঃ
“-এই মেয়ে এই তোমার কী লজ্জা শরম নেই? নিজের খালাতো ভাইকে বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছো আর তুমি দেখো গায়ের রঙ টা কত শ্যমলা আর অন্য দিকে আমার নাতনি রাহাকে দেখো কি সুন্দর তাও আমার নাতি বুজছে না।কী যাদু করছো বলো চরিত্রের ঠিক আছে তো তোমার?”
চাঁদ এবার অপমানে মাথা নত করে ফেলল।দাদী তাকে এসব ভাবে ছিঃ।তেজের মা চাঁদকে জড়িয়ে বলল-
“মা আপনি ওরে কিচ্ছু বলবেন না।আপনার নাতিই ওরে বিয়ের কথা বলেছে।আর তেজ যদি একবার এসব শুনে তো লঙ্কা কান্ড বেঁধে যাবে।”
দাদী হুঙ্কার দিয়ে উঠলঃ
“- এখন ঘরের বউ আমাকে শিখিয়ে দেবে আমি কী বলবো,কাকে বলবো ? এই দিন আমার দেখতে হলো শেষমেশ। সব এই মেয়েটার জন্য। নিজের বাপের বাড়ির মানুষকে বাসায় আনার এত শখ তোমার বউমা?”
উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে গেছে।তুহা,হৃদি,প্রহেলিকা একসাথে ঘুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ চাঁদের হাত কেউ শক্ত করে ধরলো। চাঁদ তাকিয়ে দেখে তার ভাই আহান।কলিজা ছ্যাত করে উঠে তাহলে কী আহান সব শুনে ফেলল।যা ভেবেছিলো তাই।আহান সব শুনে ফেলেছে।সে তার বোনের হাত শক্ত করে ধরে তেজের দাদী মনোরমার দিকে ফিরে চেঁচিয়ে বলল,
“-আপনার সাহস কী করে হয় আমার বোনের উপর চেঁচামেচি করার।ভুলে যাবেন না আপনাদের বাড়ির ছেলেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে,, আর সরি টু ছে খালামনি তোমাদের আগে পারিবারিক ভাবে আলোচনা করে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিলো।”
আহানের চিৎকারে পাশের রুম থেকে তেজের বাবা চাচা হাজির হলো তেজ ও এসেছে সাথে চাঁদের বাবাও। সবাই ঘটনা বুঝে আহাম্মক হয়ে গেছে।তেজের বাবা নিজের মায়ের কর্মকান্ডে মাথা নত করে ফেলেছে।চাঁদের বাবাও রেগে গেছে।
এর মাঝেই আহান তেজকে বললঃ
“-বিয়ের আগেই ভাইয়া আপনার বাড়িতে আমার বোন অপমানিত হচ্ছে বিয়ের পর যে কী হবে ভেবেই আমার শরীর হীম হয়ে আসছে।আমার বোন এতটা ফেলা যায় নি যে এমন ঘরে বিয়ে দিতে হবে যেখানে বিয়ের আগে থেকে তাকে অপমানিত হতে হচ্ছে।”
এই বলেই হনহন করে বোনের হাত ধরে চলে গেছে আহান।চাঁদের বাবাও গম্ভীর কন্ঠে নীলিমা বেগম আর প্রহেলিকাকে আসতে বলে চলে গেছে।তার পিছু পিছু নীলিমা বেগম আর প্রহেলিকাও বের হয়ে গেছে।পেছন থেকে তেজের বাবা আমজাদ সাহেব দু একবার ডাকলেও তারা কেউ ফিরে চায়নি।এদিকে তেজের মাও শ্বাশুড়ির কথায় অপমানিত হয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছে।তাকে স্বান্তনা দিচ্ছে তুহা আর হৃদির মা।
তেজ কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁচের ছোট টেবিলটা পা দিয়ে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে,হাতের পাশে থাকা ফুলদানী টাও ভেঙে ফেলে। আর চিল্লিয়ে বলে,
“-আমি না করার পরও ওরে অপমান করার সাহস কোথায় থেকে আসছে দাদী? আপনার কারণে শুধু মাত্র আপনার কারণে আমার ভালোবাসার মানুষটার পরিবার তাকে আমার হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছে।এটাও আমার মানতে হবে।নো নেভার।”
তেজ রেগে ঘরে ঢুকে গেছে।এদিকে লাথি মারায় পা ও কেটে গেছে।রাহা আর রাহার মা ভয়ে গুটিয়ে গেছে।দাদী ও ভয় পেয়েছে অনেক।
________________________________
রাত দুটো।প্রহেলিকা চাঁদকে ডাকছে।ঐ বাসা থেকে এসে চাঁদ কেঁদে কেটে ঘুমিয়েছিল একটু আগে।হটাৎ ডাকে সে হন্তদন্ত হযে উঠে।তাকে উঠতে দেখে প্রহেলিকা বলল,
-“চাঁদ তাড়াতাড়ি চল তেজ ভাইয়ার প্রচুর শরীর খারাপ।সবাই ওখানে তাড়াতাড়ি আয়।”
চাঁদের ঘুম উবে গেছে।তাড়াতাড়ি উড়না গায়ে দিয়ে ছুটে গেছে তেজের রুমে,,
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ৯
তেজ নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে তার বিছানায়। হাতে পায়ে বেন্ডেজ। একটু আগে ডাক্তার এসে জ্বর মেপে ঔষুধ দিয়ে গেছে।তেজকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার পরিবার চাঁদের পরিবারের সবাই।
তখন কাচের টেবিল লাথি দিয়ে পা কেটেছে তারপর রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়না হাত দিয়ে ভেঙ্গেছে যার কারণে হাত পা সব কেটে রক্ত ঝড়েছে আর অতিরিক্ত রক্ত ঝরার ফলে জ্বর এসেছে।
আহানের অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে।তার তখন ওভাবে বলা উচিৎ হয় নি।তবে তারও বা কী করার ছিলো, নিজের বোনকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।
সবাই নিরবতা পালন করছে।তেজের মা এক ধারে কেঁদেই যাচ্ছে,পাশে বসে নিলীমা বেগম স্বান্তনা দিচ্ছে। তেজের আরেক পাশে চাঁদ বসে আছে সেও কান্না করছে তাকে তার ভাই ধরে রেখেছে।
এর মাঝেই তেজের দাদী জ্বলে উঠে বললেন-
“সব দোষ এ মেয়েটার,ওর জন্যই আমার নাতির এ অবস্থা। অপয়া,অলক্ষী একটা মেয়ে।
দাদী আরো কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেই আহান থামিয়ে দিয়ে বলে-
” কার জন্য এ অবস্থা সবাই খুব ভালো করে জানে,তাই আপনি অহেতুক চেঁচামেচি না করলেন।যদি নাতিকে এতই ভালোবেসে থাকেন তো নাতির এ সময়ে আপনার এত কথা কীভাবে মুখ থেকে বের হয়?”
আহান থামতেই আহানের বাবা আহানকে ধমক লাগিয়ে দেন। তখন তেজের বাবা আমজাদ সাহেব ওনার মায়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন-
“আম্মা আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করুন।আমাদের ছেলের এ অবস্থায় আমাদের উপর রহম করুন। আপনি এখন আপনার রুমে যান আম্মা। এসব নিয়ে পরে কথা হবে।”
ছেলের কথায় দমে গেলেন মনোরমা।ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে চলে গেলেন। তেজের মা সবাইকে ঘুমাতে যেতে বলল।সবাই চলে গেলেও চাঁদ যায় নি।সে তেজের সাথে বসে আছে।
_________________________
ভোর হবে হবে ভাব।চাঁদ দেখে তার খালামনি বসে বসে ঝিমাচ্ছে। সে জোড় করে খালামনিকে ঘুমাতে পাঠালো।খালামনি যাওয়ার আগে বলে গেছে তেজ উঠলেই জেনো তেজকে জোড় করে খাবার খাওয়ায়। কাল সারাদিন নাকি কিছুই খায় নি তেজ।চাঁদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালেই তেজের মা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বিদেয় নেয়।
তেজ ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে তাকায় দেখে তার রমনী তার পাশেই মাথা কাত করে শুয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে গভীর ঘুমে সে।আর তার হাতটা তেজের মাথায়। নিজের অজান্তেই তেজের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সে আলগোছে চাঁদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।
অন্য দিকে নিজের হাতে কোনো শক্তপোক্ত উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘুম হালকা হয়ে যায় চাঁদের।সে পিটপিট করে চেয়ে দেখে তেজ তার হাত ধরে আছে।চাঁদ আস্তে করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় কিছু না বলে। তেজ চাঁদের এমন কান্ডে ভ্রু কুচকে তাকায়। চাঁদ সেটা তোয়াক্কা না করে উঠে চলে যায়। তেজ কেবল ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে। আর ভাবে এই মেয়ের আবার কী হলো এমন ফুলে আছে কেনো।পরক্ষণে কাল রাতের কথা মনে করে চাঁদের চুপচাপ থাকার কারণ বুঝতে পারে।
তেজের ভাবনার মাঝেই একটা প্লেটে করে ভাত আর তরকারি নিয়ে আসে চাঁদ।তেজ খাবার দেখে মুখ কুঁচকে ফেলে আর বলে-
“এই তুমি এত সকালে খাবার কেনো এনেছো আর তাও আবার ভাত,আমি খাবো না নিয়ে যাও।”
“আচ্ছা খাবার নিয়ে যাচ্ছি তবে আমার মুখ কেউ দেখতে পাবে না যদি এই খাবারের প্লেট খালি না হয়”
চাঁদের এমন কথায় তেজ কপাল কুঁচকে ফেলে আর ধমক দিয়েই বলে-
” হুমকি দিচ্ছিস?তোর মতন একটা পুচকি মেয়ে আমাকে এই তেজ আবরারকে হুমকি দিচ্ছে ভাবা যায়।
চাঁদ কিছুই বলে নি শুধু চুপ করে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেজ বুঝতে পেরেছে ম্যাডাম আজ প্রচুর রেগেছে।তাই তেজ উপায় না পেয়ে বলল-
” আচ্ছা আসো খাবো আমি।তবে খাওয়াতে হবে তোমার হাত দিয়ে ”
চাঁদ নিঃশব্দে এসে তেজের পাশে বসে সুন্দর করে মেখে তেজের মুখের সামনে এক লোকমা ধরেছে কিন্তু কিছু বলে নি।তেজও চুপ করে মুখে দিয়ে ফেলছে খাবার।সাথে চাঁদের হাতে কামড় ও দিয়েছে কিন্তু চাঁদ একটা শব্দও করে নি।যতবার খাবার দিয়েছে ততবারই কামড়ে দিচ্ছে তেজ।এবারের কামড়টা একটু জোড়েই পরে গেছে কিন্তু তবুও চাঁদ কিচ্ছু বলে নি কিন্তু চোখে জল এসে পড়েছে।তেজও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তবুও চাঁদের মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারে নি তেজ।
চাঁদ খাবার শেষ করিয়ে হাত ধুয়ে ওষুধের পাতা থেকে একটা ট্যাবলেট নিয়ে তেজের সামনে ধরে।আর অন্য দিকে চাঁদের এমন নিরবতা তেজের সহ্য হচ্ছে না তাই চাঁদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে চাঁদকে নিজের উপর ফেলে দেয় তেজ।
চাঁদের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে নিজের কান ধরে বলে উঠলো-
“সরি চাঁদমনি।চাঁদমনির তেজ তাকে এত সরি বলছে তাও কি এই অধম তেজকে একটু ক্ষমা করা যায় না জান? আর কখনো এত রাগ দেখাবো না সত্যি বললাম। এই যে কান ধরলাম”
চাঁদ তেজের এমন কান ধরা দেখে ফিক করে হেসে দিলো।তেজের ও শান্তি অবশেষে মেয়েটা হাসলো।
চাঁদ হাসি থামিয়ে তেজের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল-
“হেসে দিয়েছি বলে ক্ষমা করেছি তেমনটা না,আপনার এই রাগ কমান, নাহয় দেখবেন এই রাগের জন্য একদিন পস্তাতে হবে”।
চাঁদের কথায় তেজ ভ্রু কুঁচকে ফেলে আর বলে-
” আমি কী করবো আমার এত রাগ উঠে গিয়েছিল, আমি থাকতেও দাদী তোমাকে অপমান করেছে তোমার ভাই দ্বিধায় পরে গেছে আমার পরিবারে বা আমার কাছে তোমাকে দিবে কিনা,তুমি নিরাপদ কিনা।আমার রাগ উঠাটা কি স্বাভাবিক নয়? ”
-না স্বাভাবিক নয়।যে জিনিস ঠান্ডা মাথায় সমাধান করা যায় সে জিনিস কেনো রেগে করবো আর নিজের ক্ষতি করাটা কোন জায়গার সমাধান শুনি?”
-হয়েছো হয়েছে গিন্নি কম সাজ।আমার এখন ভালো লাগছে শরীর। তুই যা তোর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুম দে।আজ তো শপিং এ যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের আকদের কিন্তু তোর ভাই বাবা কী সিদ্ধান্ত নিলো, তোরে এই অযোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দেয় কি না।” তেজ একটু পিঞ্চ মেরেই বলল।
চাঁদ খোঁচাটা বুঝতে পেরে সেও দুষ্টমির সুরে বলল –
” হ্যাঁ সেটাই তো।আমি তো আর বানের জলে ভেসে আসিনি বা আপনার দাদীর ভাষ্যমতে ফেলনা ও না তাই আমার বাবা ভাইকে একটু ভাবতেই হবে।”
চাঁদ কথাটা দুষ্টমির সুরে বললেও তেজের গায়ে লেগে যায়। রাগও উঠে খুব।সে হাতের কাছে ফুলদানি টা আছাড় মেরে ভেঙে দেয়।চাঁদ আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে থাকে কেবল।চাঁদের পায়ে গিয়ে পরে ফুলদানির ভাঙা টুকরো।কিছু ভাঙার শব্দে তেজের মা, চাচী দৌড়ে আসে।তেজ রেগে চাঁদকে বলে-
“যা আমার রুম থেকে বের হ,তোদের যেহেতু আমাকে নিয়ে এত সন্দেহ যা আমার বাসায় আসার দরকার নেই না দরকার আছে আমার বউ হওয়ার। ”
চাঁদেরও এবার ইগো তে লাগল সেও বেশ চিল্লিয়ে বলল-
“এতক্ষণ মজা করে বললেও এখন আমার সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে আপনি ঠিক কতটা আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। রাগ উঠলে তো নিজের মাঝেই থাকেন না আঘাত করতেও ভাবেন না কোন দিন রাগের মাথায় আমাকেই মেরে ফেলেন। এবার সত্যিই আমার ভাবা উচিত। ”
চাঁদ হনহনিয়ে চলে গেলো।তুহা খেয়াল করলো চাঁদের পা দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে।তুহার চিৎকারে সবাই এবার খেয়াল করলো চাঁদের পা।বুঝায় যাচ্ছে বেশ ক্ষানিকটা কেটেছে।এতক্ষণে তেজেরও নজরে বিষয়টা পরেছে।সে চাঁদকে ডাক দিলেও চাঁদ তোয়াক্কা না করে কাটা পা নিয়েই চলে যাচ্ছে।তেজ এক লাফে খাট থেকে নেমে চাঁদের পিছে ছুট লাগায় সাথে ঘরের সবাই।
চলবে,,,,