#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৪
সিয়ামের চোখের কোণ থেকে টলটলে লবনাক্ত পানি এক ছুটে বের হয়ে গাল বেয়ে গলার দিকে যাওয়া শুরু করেছে পালাক্রমে। সিয়ামের অনুভূতিরা এখন এক অদ্ভুত ব্যবহার করছে তার সাথে। তার পা যেন অবশ হয়ে আসছে। পায়ের নিচে যেন বিন্দু পরিমাণে মাটি নেই। শূণ্যে ভাসমান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন অনুভূতি হচ্ছে সিয়ামের। সিয়াম দু’পা পিছিয়ে বসে পড়লো ফ্লোরে। মিদুল দৌড়ে এসে সিয়ামের বাহুদ্বয় চেপে ধরে, ফাইজা ধরে হাত। সিয়াম মিদুলকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিলো। বেঁচে থাকার একমাত্র অবশিষ্ট সম্বল, কলিজার টুকরা বোনটাই নাকি আর বেঁচে নেই। কার আশা নিয়ে এখন বাঁঁচবে সে ? এসব বিভিন্ন ধরনের সাদা কালো চিন্তা সিয়ামের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
মিনিট খানেক বাদেই ঝটপট দুগাল বেয়ে যাওয়া পানি মুছে উঠে এগিয়ে গেলো সোহেলের দিকে। তারপর পাশে থাকা হকি স্টিক দিয়ে সোহেলের হাত পায়ে ইচ্ছামত আঘাত করলো। এক পর্যায়ে ছুড়ে ফেলে দেয় হকিস্টিক। সোহেলের অবস্থা নাজেহাল। সোহেল পড়ে আছে মাটিতে। সিয়াম সোহেলের কলার চেপে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছে,
“কোথায় মাটি চাপা দিয়েছিস আমার বোনকে, বল ?”
সোহেল কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিল না। যার দরুন কোনো জবাবই দিতে পারছিলো না। সিয়াম ওই অবস্থাতেই আবারো আঘাত করার জন্য হকিস্টিক হাতে নিলে মিদুল সিয়ামকে টেনে এই ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। সিয়ামের অবস্থা পাগলপ্রায়। একমাত্র বোনের মৃত্যু সংবাদ অবশ্যই সিয়ামের পা থেকে মাথা অব্ধি শোকের মাতম বইয়ে দিচ্ছে। ফাইজা দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওদের পিছু পিছু ছুটে গেলো। সিয়ামকে খাটে বসিয়ে সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো মিদুল। মিদুলকে জড়িয়ে আবারো কান্না জুড়ে দিলো সিয়াম। ফাইজার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সিয়ামের এই আর্তনাদ যেন ফাইজার কলিজা জ্বালিয়ে দিচ্ছে বারবার। ছেলেদের কান্না আমরা সচারাচর দেখি না। কারণ তাদের ছোট থাকতেই বুঝানো হয়,
“আরেহ তুমি না ছেলে মানুষ, তবে কাঁদছো কেন ? কাঁদে তো দুর্বলেরা। তুমিতো মেয়ে মানুষের মতো দুর্বল নও।”
আচ্ছা ছেলে মানুষের কি মন বলে কিছু নেই ? ওদের কি কখনো কষ্ট হয় না ? ওদের কি কষ্টে চেঁচিয়ে কান্না করে মনটাকে হালকা করতে ইচ্ছে করে না ? ওরা কেন কাঁদবে না ? সমাজের এই সাজানো মিথ্যে কেন মানবে ? মেনে নেয় বলেই ওদের কান্না চোখে পড়ে না। ওরা চাপা কান্না করে, লোক চক্ষুর আড়ালে। যে কারণে ওদের কান্না কেউ অনুভব করে না। ওদের ব্যথা কেউ অনুভব করে না। কিন্তু ফাইজা এখন পুরোটাই অনুভব করছে। ছেলেটার কান্না মারাত্মক।
ফাইজা চলে গেলো রুমের বাইরে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদলো বেশ কিছুক্ষণ। তারপর বাথরুমে গিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিলো কিছুক্ষণ। নিজেকে যখন কিছুটা শান্ত মনে হলো তখন বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো। চলে গেলো সোহেলকে যেই রুমে রাখা হয়েছে সেখানে। আবারো ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ফোনের লক খুলে সোহেলের সব সোশ্যাল আইডি এবং সব মেসেজ একে একে চেক দিতে লাগলো ফাইজা। ফাইজা ফোন ঘাটাঘাটি করছে এই আশাতেই যে, দোলনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটার খোঁজ পাওয়া যায় কিনা। মেসেজ চেক করার সময় ফাইজার চোখে বেশ কয়েকটা এডাল্ড মেসেজ গ্রুপ চোখে পড়লো। ফাইজা সেখানকার মেসেজগুলো চেক করতে শুরু করলো। গত দুই তিন দিনের সব মেসেজ একে একে চেকিং করছিলো। অবশেষে আশার আলো খুঁজে পেলো ফাইজা। দোলনকে কোথায় কিভাবে নিয়ে গিয়েছে সেসব প্ল্যানিং করার মেসেজ ফাইজা পেয়ে গিয়েছে।
ফাইজা সিয়াম-মিদুলের কাছে চলে গেলো। সিয়াম এখন থেমে থেমে হেঁচকি দিচ্ছে। ফাইজা এক গ্লাস পানি এনে সিয়ামকে খেতে দিয়ে বলল,
“শান্ত হও এবার। আশা করছি দোলনকে আমরা পেয়ে যাবো।”
তারপর ফাইজা মিদুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমাকে এক প্যাকেট মরিচ গুঁড়ো আর লবণ এনে দিতে পারবি এখন ?”
“এগুলা দিয়া কি করবা ?”
“মাছ ভাজার আগে এগুলো মাখাতে হয়। যা এক ছুটে নিয়ে আয়।”
“এখন এখানে মাছ কই পাইলা ?”
“আরে ধুর, আগে নিয়ে আয়। তারপর সব দেখতে পাবি।”
মিদুল আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেলো ফাইজার বলা মরিচ গুঁড়ো আর লবণ আনতে। এদিকে সিয়াম পানি খেয়ে একটু চুপচাপ হয়ে বসলো। ফাইজা একটা তোয়ালে ভিজিয়ে এনে সিয়ামের হাতে দিয়ে বলল ভালো করে মুখটা মুছে নিতে। সিয়াম তোয়ালে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলো। ফাইজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই সিয়ামের মুখমন্ডল মুছিয়ে দিলো। সিয়াম একটা শব্দও করেনি। বেশি কথা বললে ফাইজা যেকোনো সময় নাকের ঘুষি বসিয়ে দিতে পারে। এর আগেও দু’তিনবার ফাইজার হাতে এমন ঘুষি খেয়েছে। তাই এখন আর কথা বাড়ায়নি। শান্তশিষ্ট বাচ্চাদের মতো চুপ করে বসে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে মিদুল মরিচ গুঁড়ো আর লবণ নিয়ে হাজির। ফাইজা, মিদুল আর সিয়াম মিলে সোহলকে রাখা ঘরে গেলো। ঘরের আলো জ্বালিয়ে ফাইজা একটা কাঁচি দিয়ে মরিচ আর লবণের প্যাকেট কেটে নিলো। প্যাকেট দুটো পাশে রেখে সোহেলের জামাকাপড় খোলা শুরু করলো। ফাইজাকে এমন করতে দেখে সিয়াম বলে উঠলো,
“ফাইজা, এটা কি করছো !”
ফাইজা কোনো উত্তর না দিয়ে তার মতো সে কাজ করতে থাকলো। তারপর ফাইজা মরিচ গুঁড়ো আর লবণ সোহেলের সব ক্ষতস্থানে চেপে চেপে লাগিয়ে দিলো। সোহেল অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লবণ-মরিচের ঝাঁজে সোহেলের আর্তনাদ শুরু হয়ে গেলো। কেঁচোর গায়ে লবণ পড়লে কেঁচো যেরকম কুচকে যায়, ঠিক তেমন অবস্থাই এখন সোহেলের। ফাইজার এই অদ্ভুত কাজ সিয়াম আর মিদুল চোখ বড় বড় করে দেখছে। মিদুল বলে উঠলো,
“এই তোমার মাছ ! এবার যদি যন্ত্রণায় মইরা যায় তো বাকি খবর ওর পেট থাইকা পাবো কেমনে ?”
“ওর ফোনই ওর তথ্য ভান্ডার। এই জানো….রের বাচ্চাকে আর দরকার নেই। মরলে গিয়ে পুঁতে রেখে আসবো। চলো এখন বাসায় ফেরা যাক।”
তিনজন মিলে বাসায় ফেরার জন্য রওনা দিলো। সিয়াম তার নিজের বাসায় ফিরে যেতে চাইলে ফাইজা তাকে যেতে নিষেধ করে। মিদুল নিজের গ্রাম্য বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। ফাইজা সিয়ামকে নিয়ে বর্তমান আলাল সাহেবের বাড়ি ফিরে আসে।
_____________
ময়লার স্তুপের পাশে একটা বস্তা আঁটসাঁট করে বেধে ফেলা রাখা হয়েছে দুদিন যাবত। বস্তার চারপাশে অসংখ্য মাছি মনের আনন্দে ভনভন করে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এদিকে ছোট লাকি মেয়েটাকে খোজাখুজি করে বাসার সবাই ক্লান্ত। বয়স সবে মাত্র ছয় কি সাত বছর। পুলিশ ডায়রিও করা হয়েছে মেয়ের নিখোঁজে। দুদিন যাবত মেয়েকে না পেয়ে মায়ের আর্তনাদে ঘরের মানুষজন সবাই ভারাক্রান্ত। আজ থেকে দুদিন আগে লাকি দোকানে গিয়েছিলো চিপ্স কিনতে। সেই যে গেলো, আর ফিরে এলো না। পুলিশ ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তা আয়মান এই কেইসের দায়িত্ব কাঁধে নেয়। কোহিনূর কেইস শেষের পথে। এরি মধ্যে আরেকটা কেইস হাজির। আয়মান লাকিদের বাসায় গেলো। আশেপাশে সব খোঁজ নিলো যা প্রয়োজন ছিল। এলাকার চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে আয়মানের চোখে গলির মোড়ে একটা সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে। এটা গলির মোড়ে যেই দোতালা বিল্ডিং মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সেই বিল্ডিং এ ক্যামেরাটা সেট করা। আয়মান সেই বিল্ডিং এর মালিকের সাথে কথা বলে সিসি টিভির ফুটেজটা দেখতে চাইলো। এক পর্যায়ে আয়মানের নজরে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে যে, লাকিকে এক লোক গলির পাশের একটা পরিত্যক্ত ফেক্টরীরে নিয়ে গেলো। বেশ অনেক সময় কেটে গেলো। লোকটি একটা বস্তা সহিত বের হয়ে এলো এবং সেটা ছুড়ে ফেলে দিলো ময়লার স্তুপে। কিন্তু সাথে বা আগে পিছে মেয়েটিকে দেখা যায়নি। লোকটাকে আয়মান কিছুক্ষণ আগে এক দোকানে দেখে এসেছে। এর নাম সুরঞ্জিত। বাবুলের দোকানের কর্মচারী সে। ছেলেটাকে লাকি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার সময় এতটাই স্বাভাবিক ছিল, বুঝাই যায়নি যে সে মারাত্মক কিছু ইতোমধ্যে ঘটিয়ে ফেলেছে।
চলবে…#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৫
দুর্গন্ধ ছড়ানোর বস্তাটিতেই রয়েছে লাকি। পুলিশ উদ্ধার করে লাকিকে ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। সদ্য বেড়ে উঠা এক ফুলের কলির মতো লাকি। এত ছোট মেয়ের উপর যার নজর পড়ে, সে তো মানুষের কাতারেই পড়েনা। সে কোনো নরপিশাচ থেকে কম না। লাকির বাবা-মায়ের শোকে মাতম চারপাশ। কলিজার টুকরো মেয়েটা যে আর নেই।
আয়মান বাবুলের দোকানে তৎক্ষনাৎ চলে গিয়েছিলো। যাওয়ার আগে পুলিশ ফোর্সকে বলে দিয়েছে দোকানের চারপাশ ঘিরে ফেলার জন্য। সুরঞ্জিত আর পালানোর সময় পায়নি। থানায় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা বাদ করা হলে সে অকপটে সব স্বীকার করে নেয়।
লাকি চিপ্স কেনার জন্য বাবুলের দোকানে যায়। আশেপাশে তখন তেমন কেউই ছিল না। সুরঞ্জিত টাকা ভাঙতি দেবার কথা বলে লাকিকে ওই ফেক্টরীর ভেতর নিয়ে যায় এবং ধ/র্ষ/ণ করে। লাকি যখন বাঁচারা জন্য ছটফট করে তখন সুরঞ্জিত লাকির গলা চেপে ধরে। মেয়েটার আর্তনাদ পৌঁছায়নি কারো কান অব্ধি। এমন নির্জন জায়গায় কে’ই বা শুনবে। এক সময় থেমে যায় লাকির ছটফটানি। কমল দেহখানি বন্ধ করে দেয় তাদের কার্যক্রম। তারপর লাকিকে বস্তায় ভরে ফেলে দেয় ময়লার স্তুপে। দোকানে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সব কাজ করেছে সুরঞ্জিত। এতটাই স্বাভাবিক যে, সে লাকির ব্যাপারে কিছু জানেই না।
সুরঞ্জিত এর এমন স্বীকারোক্তিতে কেঁপে উঠেছিল প্রতিটি শ্রোতার হৃদয়। এমন ছোট একটা বাচ্চার সাথে কিভাবে করতে পারলো এমন জঘন্য কাজ ? তার কি হৃদয় বা মস্তিষ্ক বলে কি কিছুই নেই। এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে আমাদের সমাজে।
_____________
রাতে বাসায় ফেরার পর ফাইজা রেশমি বেগম এবং আলাল সাহেবকে দোলনের মৃত্যুর খবর জানান। দোলনের মৃত্যুর কথা কানে আসতেই সিয়ামের আবার কান্না পেলো। কান্না আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে সে। আলাল সাহেব সিয়ামকে বুকে জড়িয়ে নেন। এমন মমতা পেয়ে সিয়াম ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই চলল। রায়হান দূরে দাঁড়িয়ে দেখলো সব। তারপর সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে বসে। সিয়ামের গলা দিয়ে খাবার নামছে না। গলায় কেউ যেন চেপে ধরে রেখেছে। সবাই সিয়ামের অবস্থা বুঝতে পারছিলো। কিন্তু কিছু করারতো নেই। নিয়তি এক নিষ্ঠুর খেলা খেলেছে। এই খেলার স্বীকার আমরা কেউ না কেউ রোজই হচ্ছি।
রেশমি সিয়ামকে শান্তনা দিয়ে বলল, “নিজেকে যদি ঠিক না রাখো তাহলে বোনের খুনিদের কিভাবে শায়েস্তা করবে ? নিজেকে সুস্থ রাখো, মাথা ঠান্ডা রাখো আর ওদের শায়েস্তা করার জন্য প্রস্তুতি নাও। আমরা সর্বাবস্থায় তোমার সাথে আছি।”
সিয়াম পানি দিয়ে গিলে গিলে খাবারটুকু খেয়ে নিলো। খাবার খেতে খেতে ফাইজা জানালো যে দোলনের খোঁজ পেয়েছে। সকাল সকাল সিয়াম আর ফাইজা বের হবে দোলনের মৃতদেহ যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে। সোহেলের ফোন ঘেটে কিভাবে তথ্য পেয়েছে তা ফাইজা সবাইকে গুছিয়ে বলল। দুনিয়াতে কোনো ক্রাইমই পারফেক্টলি হয় না। কোনো না কোনো ক্লু অবশ্যই থাকে। নিজেদের চালাক ভাবা ক্রিমিনালদের খুব সহজেই ধরা যায়। এরা নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই ফেঁসে যায়। সোহেলও এই লেভেলের একজন।
__________
নতুন বিয়ে হয়েছে সুমাইয়ার। প্রথম দিন থেকেই তার মামা শ্বশুরকে তার কেমন যেন লাগে। লোকটার হাবভাব ভালো না। উপরে উপরে খাতির দেখালেও লোকচক্ষুর আড়ালে তা ভিন্ন। কখনো সে পানির গ্লাস নেয়ার উছিলায় সুমাইয়ার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে। কখনোবা মা মা বলে ঘরে ঢুকলেও, ঘরে সুমাইয়াকে একা পেলে ইঙ্গিত দিচ্ছে নিম্ন মানসিকতার। সুমাইয়া তার শ্বাশুড়িকে একদিন বলল,
“মা, মামার ব্যাবহার জানি কেমন। উনি আমার সাথে ঠিক ব্যাবহার করেন না।”
এই কথা শুনে সুমাইয়ার শ্বাশুড়ি বেশ ক্ষেপে যান। উনি চেঁচিয়ে বলেন,
“বেয়াদব মাইয়া, আমার ভাইয়ের নামে কুকথা বলিস। একটা মাত্র ভাগ্নে বউ তুই। তোকে কতটা আদর করে এইটা কি আমরা দেখি না ? এখন তুই আমার সামনেই আমার ভাইয়ের নামে উল্টাপাল্টা কথা বলতেছিস ? তোর কলিজাটা খুব বড়।”
এই কথা বলে সুমাইয়াকে দুটো থাপ্পড় মেরে বসে সুমাইয়ার শ্বাশুড়ি। সুমাইয়া নামাজে বসে বেশ কান্নাকাটি করে। এই একই কথা সুমাইয়া তার স্বামি পলককে বললে সে’ও সুমাইয়াকে মারধর করে। মা এবং মামার বিরুদ্ধে এসব কথা সে মোটেও মেনে নেবে না।
এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছিলো। মামাশ্বশুর সবসময়ই তার দুই রূপ দেখাতেন। সুমাইয়ার স্বামী এবং শ্বাশুড়ির সামনে এমন স্নেহ-ভালোবাসা দেখাতেন যে, কখনো কেউ বিশ্বাস করবে না যে এই লোকটার নজর কতটা খারাপ। শ্বাশুড়ি ঘরে না থাকলে সুমাইয়াকে দিয়ে তিনি হাত পা টেপাতেন। সুযোগ বুঝে সুমাইয়াকে টেনে ধরতেন নিজের দিকে। পলক যদি কখনো কোনো রাতে বাড়িতে না থাকতো তখন মামা সুমাইয়ার ঘরে আসতেন। এমন সময় আসতেন যখন সবাই ঘুমিয়ে যেতো। গ্রামাঞ্চলে তো ইশার সময় হতে না হতেই সবাই ঘুমিয়ে যেতো। সুমাইয়ার সামনে বস্ত্রহীন হয়ে নানান অঙ্গভঙ্গি করতেন।
সুমাইয়া এসব আর মেনে নিতে পারছিলো না। প্রতিদিন এমন পরিস্থিতি তাকে যেন মরার আগেই মেরে ফেলছে। কাউকে বললে কেউ বিশ্বাসও করে না। উলটে বেধড়ক মার খেতে হয়। প্রমাণ ছাড়া কেইবা বিশ্বাস করবে। সুমাইয়া ভাবলো, মরতে এভাবেও হবে আর ওভাবেও হবে। একবার প্রমাণ করার জন্য শেষ চেষ্টা করা যাক। সুয়ামাই তার স্বামী পলকে বলল,
“আপনিতো কখনো আমার কথা শুনেনি। অনুগ্রহ করে একবার শুনোন। আপনি দু তিন দিন সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলবেন যে, আপনি কাজের জন্য কোথাও একটা যাবেন। যেই কারণে সপ্তাহ খানেক বাড়িতে থাকবেন না। পরে আপনি আপনার ব্যাগপত্র নিয়ে বের হয়ে যাবেন। বলবেন যে আপনি কাজের জন্য বের হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যাবেন না। যাওয়ার আগে আমাকে একটা নতুন ব্লেড কিনে দিয়ে যাবেন। আমাদের ঘরের জানালার কাছাকাছি অপেক্ষা করবেন। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে তখন।”
পলক সুমাইয়ার কথায় রাজি হলো। সুমাইয়ার কথামতো সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে কাজে যাওয়ার কথা বলতো। তারপর ?
___________
সকালের নাস্তা শেষে সিয়াম আর ফাইজা বের হয়ে গেলো সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে, যেখানে সদ্য ফোটা দোলনচাঁপার দেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। সেই বাড়ির দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছিলো, সিয়ামের হাত-পা ততই কাঁপন বেড়ে যাচ্ছিলো। ফাইজা শক্ত করে সিয়ামের হাত চেপে ধরে রাখলো। সিয়ামের হাত ঘেমে একাকার। কপালটা বিন্দু বিন্দু ঘামের দখলে চলে গিয়েছে। মিদুল আলাদা ভাবে বের হলো। সাথে করে কিছু সরঞ্জাম নিয়ে নিলো মাটি খুঁড়ানোর জন্য।
একপর্যায়ে সেই বাড়ির গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো সিয়াম, ফাইজা ও মিদুল। বাড়িটা একদম নির্জন জায়গায় অবস্থিত। কোনো নতুন দম্পতির রোমান্স করার জন্য পারফেক্ট জায়গা। কিন্তু এই রোমান্টিক ওয়েদার এখন গুটি কয়েক ছেলের লালসা আর এক সদ্য যৌবনা মেয়ের আর্তনাদের সাক্ষী হয়ে আছে। গেইটের ঝুলন্ত তালা মিদুল ভেঙে ফেললো। তারপর একে একে তিনজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। সিয়ামের পা যেন সামনের দিকে এগোতে চাচ্ছে না। মনের ভেতর কেউ যেন বড় হাতুড়ি দিয়ে ইচ্ছামত পেটাচ্ছে।
মিদুল খুঁজছিল যে কোথায় সদ্য কোপানো মাটি আছে। সেখানেই পাওয়া যাবে দোলনকে। এক পর্যায়ে ঘরের পিছনের পেয়েই গেলো মিদুল। সিয়াম আর ফাইজাও এগিয়ে গেলো সেখানে। সিয়াম দোলনের মাটি চাপা দেয়ার স্থানে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে বলল,
“আমাকে মাফ করে দিস দোলনচাঁপা। আমি তোর এক ব্যর্থ ভাই। যে তোকে মানবরূপী জানো/য়ার গুলোর কবল থেকে বাঁচাতে পারিনি। আমার উচিত ছিল, তোর দিকে আরো বেশি নজর দেয়া। তাহলে হয়তো আজ এখানে এভাবে তোকে থাকতে হতো না।”
এই বলে সিয়াম মিদুলেদ কাছ থেকে একটা কোদাল নিয়ে মাটি কোপাতে শুরু করে। মিদুলও তার কাজে লেগে পড়ে। ফাইজা ঘুরতে ঘুরতে সেই কক্ষে চলে গেলো, যেখানে দোলনকে খুবলে খেয়েছে। #সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৬
ফাইজা সেই ঘরে ঢুকলো, যেখানে দোলন ছিল। এখানেও তালা ভাঙতে হয়েছে। তবে বেশি বেগ পেতে হয়নি। ঝাপসা অন্ধকার ঘরে পা রাখতেই ফাইজার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ফাইজার হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসছিল। ঘরের ভেতর উদ্ভট গন্ধে মাথা ভনভন করা শুরু হলো তার। ভেন্টিলেটরের হালকা আলোয় সুইচবোর্ড খুঁজে লাইট জ্বালালো। মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে নিলে সুইচবোর্ড খুঁজতে সুবিধাই হতো বটে। তবে ফোনের কথা ফাইজা ভুলে গেলো। সুইচ চাপলে আলো জ্বলে উঠতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। আলোতে পুরো ঘরের অবস্থা ফাইজার সামনে দৃশ্যমান হলো। সব জিনিস ঠিকঠাক থাকলেও বিনাছাপাতি ছিলো অগোছালো, নোংরা। বিছানায় লেগে থাকা রক্তের ছাপ যেন ফাইজার অতীতকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো প্রতিটা মুহুর্ত। বিছানার পাশে পড়ে আছে গুটিকয়েক কাঁচের বোতল। বুঝাই যাচ্ছে এখানে উপস্থিত পশুগুলো নিজেদেরকে আরো পশুরূপ দিতে এসব ছাইপাঁশ খেয়েছে।
ফাইজা গুটি গুটি পায়ে পুরো ঘরে হাঁটছিল। হেঁটে হেঁটে পুরো ঘর পর্যবেক্ষণ করছিলো। এখানে পশুগুলোর ক্লু পাওয়ার মতো কিছুই চোখে পড়ছে না ফাইজার। হঠাৎ করে জানালার পর্দার দিকে চোখে গেলো। দুই পর্দার মাঝে কিছু একটা আছে মনে হলো ফাইজার। সে জানালার দিকে এগিয়ে গেলো। ধীর হাতে পর্দা সরাতেই দেখা মিলল ছোট এক ক্যামেরার। অবাক হলো ফাইজা, তবে বেশি না। বেশি না কারণ ফাইজা সোহেলের ফোন থেকে গ্রুপ চ্যাটগুলো দেখেছিলো। সেখানে কেউ একজন বলছিল,
“খেলাটা কিন্তু দারুণ হইছিল ভাই। ওইটা আবার প্লে কইরা দেখা লাগবো। আহা এখনই কিলিং আইসা পড়তাছে।”
ফাইজা ক্যামেরাটা খুলে হাতে নিয়ে দেখলো এটা অফ হয়ে আছে। কতক্ষণ চলেছে কে জানে। হয়তো ব্যাটারির চার্জ শেষ। ফাইজা ক্যামেরা থেকে এসডি কার্ডটা বের করে নিলো। তারপর ক্যামেরাটা যেভাবে ছিল ঠিক সেইভাবে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। চলে যায় বাড়ির পিছনে। মাটি খুঁড়ানোর কাজ তখনও চলছিলো। সিয়ামের দেহে যেন ক্ষনে ক্ষনে বল হারাচ্ছে। মাটি খুঁড়া যত শেষের দিকে এগোচ্ছে, সিয়ামের বুকের ভেতর ধুকপুকানি তত বেড়েই চলেছে। এই ধুকপুকানির জন্য মাটি খুঁড়তে হিমশিম খাচ্ছে সিয়াম। ফাইজা সিয়ামের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল তার অবস্থা। কিন্তু ভাগ্যকে মেনে নেয়া ছাড়া এই মুহুর্তে আর কিইবা করার আছে।
মাটি খুঁড়ার কাজ শেষ হলে এবার দায়িত্ব পড়ে ফাইজার কাঁধে। কেননা দোলনের গায়ে কোনো বস্ত্র ছিল না। ব্যাগপত্র, জামাকাপড় সব একসাথে ফেলে রাখা হয়েছে। ফাইজার অস্বস্তি হচ্ছিলো। দোলনের দেহ পচতে শুরু হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর পর বেশ কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হলে দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। সার্বিকভাবে দেহে পচন না ঘটলেও মূলত দেহের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন উৎসেচক, ব্যাকটেরিয়ার কারণেই এই দুর্গন্ধ ঘটে। দেহে প্রাণ না থাকলে বিভিন্ন অঙ্গ তাদের অভ্যন্তরস্থ উৎসেচক নিঃসরণ করতে শুরু করে। আর এটিকে কাজে লাগিয়েই দেহের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্রুত খাদ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে, যা একরকম পচন প্রক্রিয়া। সেই কারণেই মৃত মানুষের দেহ থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। ফাইজা রুমাল দিয়ে নাক বেঁধে নিয়েছিল। কিন্তু তবুও রুমাল ভেদ করে গন্ধ ফাইজার নাকে আঘাত হানছিল। ফাইজা এসব গন্ধকে যথাসাধ্য পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগী হলো। ফাইজার বুক চিরে যেন কান্না বের হতে চাচ্ছে। ফাইজা ভাবছে, ফাইজা তো ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছিলো। অমানুষগুলোকে তাদের প্রাপ্য শাস্তি দেয়ার তাগিদে বেঁচে ছিলো। নয়তো এই দোলনের মতো হয়তো তাকেও আজ এভাবে মাটিচাপা দিয়ে দেয়া হতো। নয়তো ভাসিয়ে দেয়া হতো খিরু নদীতে।
__________
পলক যখন বলতো সে কাজের জন্য বাড়ির বাহিরে যাবে এবং কিছুদিন ফিরবে না, তখন সুমাইয়া খেয়াল করতো মামা শ্বশুরের চোখ। সোনার খনি হাতে পাওয়ার মতো চকচক করে উঠতো তার চোখ। ওই চোখে সুমাইয়া একবারের বেশি তাকানোর সাহস পেতো না। ওই চোখদুটো দেখলে সুমাইয়ার যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। পলক দুই তিনদিন যাবত বাড়ির বাহিরে যাবে যাবে বলে কথা ছড়াতে থাকলো। মামা যেন মনে মনে ছক কষে ফেললো যে, ভাগ্নে বাড়ি থেকে চলে গেলে সে কি কি করবে। তার মনে যেন আনন্দ আর ধরে না।
আজ পলক চলে যাবার বাহানায় ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলো। তারপর সুমাইয়াকে একটা নতুন ব্লেড কিনে দিয়ে সে চলে যাচ্ছে এই খবরটা জোরে জোরে বলে বের হয়ে গেলো। মামা মশাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ভাগ্নে বউয়ের সাথে টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য। মানে বুঝতেই পারছেন আমি কি বলছি। সন্ধ্যা নাগাত মামাশ্বশুর সুমাইয়ার ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। সুমাইয়া ভিত হয়ে আছে এই মুহুর্তে। সে দরজা না খুলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে মামাশ্বশুরকে জানিয়ে দিলো ইশার নামাজের পর আসতে। ওই সময় প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। মামার মন তখন বাকবাকম পায়রার মতো বাক-বাকুম করছিল। সে খুশি মনে নিজ ঘরে চলে যায়।
রাতে সবাইকে খাইয়ে নিজেও খেতে বসেছিল সুমাইয়া। কিন্তু মাথায় যে এক রাশ চিন্তা বোঝাই হয়ে আছে তা নিয়ে তো গলা দিয়ে খাবার নিচে নামতে চায় না। সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে সুমাইয়া সব কাজ সেরে নামাজে বসে। ইশার নামাজে বসে সুমাইয়া অনেক কান্নাকাটি করে। সে বারবার এই দোয়া’ই করছে যে, মারা পড়লেও যেন সতিত্ব না হারায়। সুমাইয়ার কথামতো পলক ইতোমধ্যে তাদের ঘরের জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরেই সে এখানে আসে। মামা কখন আসবে এটার সঠিক সময় তো আর সে জানে না। সুমাইয়াকে তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তবুও কেন জানি রাজি হলো মামাকে পরীক্ষা করার জন্য।
রাত গভীর হতে যাচ্ছে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়েই পড়েছে বলা চলে। মামা তার ঘর থেকে বের হয়ে গুটিগুটি পায়ে সুমাইয়ার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। সুমাইয়া তখনও জায়নামাজ এ বসা। সুমাইয়া আগে থেকেই দরজা খোলা রেখেছিলো। কাঠের দরজার খিল দেয়া ছিল না। শুধু দরজাটা চাপিয়ে দেয়া ছিল। মামা দরজায় হাত দিতেই মৃদু ক্যাচক্যাচ শব্দে দরজা খুলে যায়। সে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর সুমাইয়ার সামনে গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে নানান অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সুমাইয়াকে টান দেয় তার বিশেষ অঙ্গে স্পর্শের জন্য। সুমাইয়া স্পর্শ করেছিল, তবে তা ব্লেড দিয়ে। মামাশ্বশুর বুঝতে পারেনি যে, সুমাইয়া তার বিশেষ অঙ্গের সাথে এই বিশেষ খেলা খেলবে। প্রায় অর্ধেকটা কেটে গিয়েছে তার বিশেষ অঙ্গ। র/ক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো। রক্ত দেখে সুমাইয়ার মাথা ঘুরানো শুরু হয়। মামাশ্বশুরের সামনে থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। মামা কোনোরকমে লুঙ্গিটা পড়নে দিয়ে তার বিশেষ অঙ্গ চেপে ধরে ছুটে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।
সুমাইয়া জায়নামাজ এক টান দিয়ে রক্তের উপর রেখে তা ঢেকে ফেলে। কষ্ট করে জানালা অব্ধি পৌঁছায়। জানালা খুলে তার স্বামী পলককে ডাক দেয়ার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পলক দৌঁড়ে ঘরে এসে দেখে সুমাইয়া অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। জায়নামাজ তুলে দেখে রক্তের ছড়াছড়ি। পলক গিয়ে বাড়ির সবাইকে ডেকে তুলল। এত রাতে পলককে দেখে সবাই বেশ অবাকই হয় যে, আজকে কাজের জন্য বের হয়ে আজকেই ফিরে আসলো। কোনো বিপদ হলো কিনা। একেকজন পলকের ফিরে আসার কারণ জানতে চাচ্ছিলো।
মামা প্রায় কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছেন। সে বাজারে যাচ্ছেন ডাক্তারের খোঁজে। গ্রাম্য রাস্তা খুবই খারাপ বিধায় এখানে কোনো প্রকার যানবাহন চলে না। তার উপর বাড়ি থেকে বাজার অনেক দূরে। মামা মশাই তার কাটা অঙ্গ নিয়েই আসলেন বাজারে। কিন্তু ওই সময় বাজারের কোনো দোকানই খোলা ছিলো না। এদিকে মামার নাজেহাল অবস্থা। র/ক্ত অঝোরে ঝরেই যাচ্ছে তো যাচ্ছে। ডাক্তার নেই দোকানে। এখন কি উপায় ?
চলবে…
চলবে….