সন্ধ্যে নামার পরে পর্ব -২১+২২+২৩

(
#সন্ধ্যা_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২১

আয়মান সকাল সকাল হাসপাতালে ছুটলো কোহিনূর এর সাথে কথা বলার জন্য। কোহিনূর নাকি আজ কথা বলতে পারছে। হাসপাতালে পৌঁছে কোহিনূর এর পাশে গিয়ে বসে আয়মান। কোহিনূর তখনও ব্যথায় কাতুর ছিলো। কারণ খুব শীঘ্রই তার গর্ভ থেকে তার বাচ্চাটাকে আলাদা করে ফেলা হবে। নয়তো কোহিনূরকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব না। আয়মান রেকর্ডার চালু করে কোহিনূরকে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ননা করতে বলল। আয়মানের প্রশ্ন করার প্রয়োজন হয়নি। আয়মান রেকর্ডারটা কোহিনূরের কাছে অন করে রেখে ক্যাবিনের সবাই মিলে বাহিরে চলে যায়। শুধু স্ত্রীর হাত জটিয়ে বসে থাকে লতিফ। আয়মান সামনে থাকলে কোহিনূরের ঘটনা বর্ননা দিতে অসুবিধা হতো। তাই আয়মান বাহিরে চলে আসে। কোনো ধর্ষিতা যখন তার ধর্ষণ হওয়ার গল্প অন্য কাউকে বলে তখন সেটা পুনরায় ধর্ষণ হবার মতো অনুভূতি হয়। এক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পদার্পণ করতে হয়। মনের ভেতর আরো একবার অন্ধকার অধ্যায়ে হাঁটতে হয় ধর্ষিতাকে। আয়মান কোহিনূরকে এমন অনুভূতিতে আবার ফেলতে চাইছিলো না। আয়মান চলে আসলে কোহিনূর রেকর্ডারটা লক্ষ্য করে বলা শুরু করে,

“ওইদিন আমি চুলায় রান্না বসাইয়া দিয়া ঘরে গেছিলাম। গরম লাগায় হাতপাখা দিয়া বাতাস করতাছিলাম। বাড়িতে একাই আছিলাম। একা থাকার কারণে গায়ের উড়নাটা একপাশে রাইখা দিই। দরজা খোলাই আছিল। বলা নাই, কওয়া নাই হুট কইরা দুজন লোক ঘরে ঢুইকা পরে। এমন কইরা ঘরে ঢুইকা পরে যেন হেগো বহুত তারাহুরা আছে। আমি ‘আফনেরা কেডা’ কইয়া চিল্লান দিতে না দিতেই একজন দরজা আটকাই দিলো। আরেকজন এক ছুটে আইসা আমার মুখ চাইপা ধরলো। দুইজনেরই মুখ ঢাকা আছিলো। তাই এই দুইজন কেডা আছিলো আমি জানি না। হেগো দুইজনের গলার আওয়াজও শুনিনাই। দুইজনেই ইশারায় কথা কইতেছিলো। দরজা লাগাইয়া দিয়া আমারে আইসা আমার উড়না দিয়াই মুখ বাইধা দিলো। একজন ছুইটা গিয়া দড়ি নিয়া আসলো। দুইজনে মিইল্লা হাত পা বাঁধলো। যেইভাবে দড়ি নিয়া আসলো, মনে হয় সে আমার ঘরের ভেতরকার খবর জানে। ঘরের অন্য কোনো জিনিসে হাত দেয় নাই। তখন আমি বুইঝা গেছিলাম যে; তারা আমার ঘরের জিনিস না, আমার ইজ্জত ডাকাতি করতে আইছে। মুখ বান্ধা থাকোনে চিল্লাইতে পারতাছিলাম না। চিল্লাইয়াও বা কি হইবো। আশেপাশে কাছে কোনো বাড়িঘর নাই যে, বিপদে পড়ছি মনে কইরা ছুইটা বাইচাইতে আসবো। শকুন দুইডায় ঝাপাইয়া পড়লো আমার উপর। আমার পেডের বাচ্চাডার কথা ভাইবা আমার কান্দন বাইরা গেলো। কত যে ছাইটা দেওয়ানের মিনতি করছি, সেই মিনতি হেগো দিলে লাগে নাই। আমার লগে যা ইচ্ছা তাই করলো। যেন আমি এক খেলার পুতুল। আমার কষ্ট হেগো চোখে পড়ে নাই। ওরা পাগলা কু-ত্তা-র মতো ব্যাবহার করলো। হাত পায়ের বাধন খুইলা মাটিতে নামাইয়া কতক্ষণ অত্যাচার করলো। আমি আমার ইজ্জতের থিকা আমার বাচ্ছাডার কথা বেশি ভাবতাছিলাম। একসময় ওরা ওগো খায়েশ মিটাইয়া এক দৌড়ে বাইর হইয়া গেলো। ততক্ষণে আমার নিশ্বাস যাওয়ার মতো অবস্থা। আমিতো ভাইবাই নিছিলাম যে, ওইদিনই আমার শেষ দিন আছিলো। আমার স্বয়ামী ওইদিন না ফিইরা আইলে হয়তো ঠিকই মইরা যাইতাম। এই জা-নো-য়া-র গুলারে আমি চিনিনা। কেন আমার লগে এমন করলো আমি ওইটাও জানিনা। ওগো লাইগা আইজ আমি আমার পেডের বাচ্ছাডারে হারাইতে বইছি। আমি চাই হেগো যেন ফাঁসি অয়।”

প্রতিটা বাক্য কোহিনূর অশ্রু বিসর্জন করে বলছিল। কোহিনূরের হাত জড়িয়ে পাশে বসে লতিফও কেঁদেছিল। কথাগুলো বলা শেষ হলে ডাক্তার ভেতরে আসেন। কেননা এত কান্না করার ফলে কোহিনূরের নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়ে যাচ্ছিলো। ডাক্তার এসে অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়ে দিলেন। কোহিনূর কিছুটা শান্ত হলে রেকর্ডারটা নিয়ে লতিফ আয়মানের হাতে তুলে দেয়। আয়মান লতিফকে ভরসা দিয়ে চলে আসার সময় আবারো ফিরে তাকালো লতিফের দিকে। জিজ্ঞেস করলো কোনো ক্লু দেয়া সম্ভব কিনা। লতিফ নাবোধক জানালেও পরক্ষনেই বলল, কোহিনূর তাকে কোনো এক ফাঁকে বলেছিল ; দুজনের মধ্যে যে কোনো একজনের এক পায়ে ছয়টা আঙুল আছে। লতিফের কথা শুনে আয়মান থানার দিকে রওনা দিলো।

_________

সিয়াম সকালে নাস্তা না খেয়েই চলে গেলো দোলনের কলেজে। কলেজ শুরু হওয়ার পূর্বেই উপস্থিত হয়েছিল সেখানে। বোনকে খুঁজে পেতে তার যেন আর তর সইছিল না। সিয়ামের সাথে মিদুল আর ফাইজাও উপস্থিত হয়। সিয়ামকে এখন একা ছাড়া একদম উচিত হবে না ভেবে ওরা দুজন সিয়ামের সাথে এসেছে। ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো কলেজ শুরু হবার। কলেজ গেইট খুলে দিলে ভিজিটিং রুমে অপেক্ষা করতে থাকে প্রিন্সিপাল স্যারের জন্য। কারণ এখানে তাকে জরুরি। কিছু সময় পর প্রিন্সিপাল হাজির হলেন। প্রিন্সিপাল রাজি হলেন সিয়ামকে হেল্প করার। দোলন তার কলেজের একজন ছাত্রী। এই জন্য না চাইলেও সিয়ামকে সাহায্য করতেই হবে।

ক্লাস শুরু হবার পর প্রিন্সিপাল সহ সিয়াম ক্লাসে উপস্থিত হলো। জিজ্ঞেস করা হলো সোহেলের ঠিকানা সম্পর্কে। বরাবরের মতোই কেউ তেমন তথ্য দিতে পারলো না। সিয়াম নিরাশ হলো। এই মুহুর্তে সে কি করবে বুঝতে পারছে না। চলে গেলো আবার প্রিন্সিপালের অফিসে। প্রিন্সিপাল অনেক ঘাটাঘাটি করে সোহেলের একটা তথ্য পেলো। বর্তমান ঠিকানা। তবে এখানে সোহেল একবার খুঁজে এসেছে কলেজের দারোয়ানের কথা শোনে। দারওয়ান নাকি ওই এলাকা থেকে সোহেলকে আসতে দেখেছে। সিয়াম বের হয়ে চলে আসে কলেজ থেকে। সে আবারো যাবে ওই একই জায়গায়। বারবারই যাবে, যতক্ষণ না কোনো ক্লু পায়।

_________

বাড়িওয়ালা সেলিম রাসেলের কাছ থেকে ভাড়া নিতে এসে দেখলো রাসেলের ঘরের দরজা লাগানো। কয়েকদিন যাবত ভাড়ার জন্য ঘুরঘুর করছিলো সেলিম। একরাশ বিরক্ত নিয়ে চলে যাবার সময় হঠাৎ দৌড়ে ঘরের পিছনে চলে গেলো। সেলিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পিছন দিকে জানালার নাট খুলে আজকে ভেতরে ঢুকবে। ভাড়ার বদলে কিছু জিনিস সরিয়ে ফেলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সেলিম প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে জানালা খুলতে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর জানালা খুলে যখন ঘরে ঢুকলো তখন ঘর অন্ধকার ছিল। অন্ধকার সাঁতরে গিয়ে সুইচবোর্ড থেকে লাইটের সুইচ অন করলো। অন করার পর বিছানার দিকে তাকাতেই “আল্লাহ গো” বলে ভয়ে চিৎকার করলো সেলিম।

বিছানায় রাসেলের জলজ্যান্ত লাশ পড়ে আছে। রক্তে রঞ্জিত চারপাশ। সেলিম তখন চিৎকার করে বের হয়ে গিয়েছিল। তারপর আরো মানুষ নিয়ে এসে বাহির থেকে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। কেউ কেউ সোহেলকে সন্দেহ করে যে, বাহিরে তালা থাকা অবস্থায় সে কিভাবে জানলো যে ভেতরে লাশ ? সেলিম ব্যাপারটা ভালো করে বুঝিয়ে বলল যে সে কিভাবে রাসেলের লাশের খোঁজ পায়। পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ পুরো ঘরটাকে সিলগালা করে দেয় যাতে কোনো সাধারণ জনগণ কোনো আলামত নষ্ট করতে ভেতরে যেতে না পারে। পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে সেলিমকেই থানায় নিয়ে যায়।

রাসেলের পরিবার বা আত্মীয় কারোর সাথে কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় রাসেলের খবর কাউকে দেয়া যায়নি। রাসেলের স্ত্রী সাদিয়াকে খোঁজা হচ্ছে। তাকেও সন্দেহের তালিকাভুক্ত করা করে পুলিশ। রাসেলের পরিচিত কারো সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশ বিকল্প পথ অবলম্বন করলেন। রাসেলের ছবি দিয়ে পোষ্টার ছাপিয়ে দিয়ে পরিচয় পাওয়ার জন্য পুরো শহরজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হলো। এখন অপেক্ষার পালা যে, কেউ রাসেলের পরিচয় জানাতে আসে কিনা।

সেলিমকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেলিম বরাবরই একই উত্তরে নিজেকে বেঁধে রেখেছে। কারণ সে আসলেই কোনো অপরাধ করেনি। অপরাধ না করেও কেন সেই অপরাধের ভাগিদার হতে হবে ? সেলিমকে বেশ কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে তারপর ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার সময় ওয়ার্নিং করে দেয়া হয় যাতে সে শহরের বাইরে কোথাও না যায়। সেলিম থানা থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলল, “আমার উপর নজরদারি না করে রাসেলের বউকে খুঁজেন।”
#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২২

ফাইজা, মিদুল আর সিয়াম মিলে তাদের গন্তব্যের বাসে উঠলো। বাসে যাত্রী বেশি থাকায় ওরা তিনজনের কেউই বসতে পারলো না। ফাইজাকে মাঝে দাঁড় করিয়ে সিয়াম আর মিদুল ফাইজার দুপাশে দাঁড়ালো। বাস চলাকালীন ফাইজা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো। ফাইজার ঠিক পিছনে একজন ভদ্রলোক দাঁড়ান। উনি ইচ্ছা করলেই একটু দূরত্ব রাখতে পারতেন। কিন্তু উনি বারবার ফাইজার পিছনাংশের সাথে ওনার পিছনাংশ বাজিয়ে দিচ্ছিলো। এনাকে কি ঠিক ভদ্রলোক বলা চলে ?

ফাইজা দুবার লোকটাকে বলেছিল ঠিক হয়ে দাঁড়াবার কথা। কিন্তু উনি ফাইজার কথা কানেই তুললেন না। উলটে সে ড্রাইভারের কাছে অভিযোগ করলো। পাশে থাকা সিয়াম আর মিদুল রেগে গিয়ে ওখানেই লোকটাকে পেটাতে চেয়েছিলো। কিন্তু ফাইজা এতে বাঁধ সাধে। বাসে একপ্রকার হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।

ফাইজা রেগে লোকটাকে বলল, “দেখেতো বয়স কম মনে হচ্ছে না। আমার বয়সী একটা মেয়ে থাকার কথা আপনার। তবুও মেয়ের বয়সী আরেক মেয়ের সাথে এমন লুচ্চামি করতে বাঁধে না আপনার ? বিবেক বলে কি নাই কিছু ?”

মহিলা আসনে বসা এক মধ্যবয়সী পুরুষ বাসের কন্ট্রাক্টরকের উদ্দেশ্য করে বলল, “ওই মিয়া, জানো বাসে মহিলা সিট খালি নাই। তবুও কেন মহিলা মানুষ তুইলা লও ? দুই টেকা কম হইলে কি তোমাগো পোষায়বো না ? এই যে, এই মাইয়াডা দেখতাছি কখন থাইকা বকবক করতাছে। কইতাছি কি, এতই যহন গায়ের লগে একটু বাজলে ফুসকা পড়ে তাইলে এমন ঠ্যালাঠেলির মইধ্যে উঠছেন কেন ? বাপেরে কইয়া পেরাইভেট কার কিইন্না নিলেই পারেন।”

ফাইজা কিছুটা রেগে উক্তিগুলো বলা লোকটাকে বলল, “আপনি পুরুষ নাকি মহিলা সেটাইতো বুঝতে পারছি না। একেইতো পুরুষালি চেহারা নিয়ে মহিলা আসনে বসে আছেন, তার উপর বড় বড় কথা ঝেড়ে যাচ্ছেন। একটুও কি লজ্জাবোধ হয় না ? একজন কুরুচিপূর্ণ মানুষকে কিভাবে সাপোর্ট করেন ? তারমানে আপনারও এই সমস্যা আছে।”

কথা-কাটাকাটি বেশ কিছুক্ষণ যাবত চলে। কেউ কেউ ফাইজাকে সাপোর্ট করছে, আবার কেউ কেউ অযৌক্তিক বুলি আওরাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে এই তর্কাতর্কি শেষ হয়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে লোকটা নেমে পড়ে। যেই স্টেশনে লোকটা নামে ফাইজা ওরাও একই স্টেশনে নেমে পড়ে। লোকটাকে চুপিচুপি অনুসরণ করে ওরা। লোকটা হয়তো বুঝতে পারেনি যে উনি কি মারাত্মক ভুল করে ফেলেছেন। বর্তমানের ফাইজা আর অতীতের ফাইজার মধ্যে এখন অনেকটাই গ্যাপ এসে গিয়েছে। এখন ফাইজা অন্যায় আর অন্যায়কারী কাউকেই ছাড় দেয় না।

একটা নির্জন স্থানে এসে লোকটা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসে পড়ে। ফাইজা অপেক্ষা করছিলো লোকটার মুত্রত্যাগ শেষ হবার। শেষ করে যখন লোকটা দাঁড়াতে যাবে এমন সময় নিজের মুত্রের উপরের হুমরি খেয়ে পড়ে গেলো লোকটা। কেন পরে গেলো ? কারণ ফাইজা পিছন থেকে লোকটাকে এমন জোরে লা-থি মেরেছে যে, লোকটা বুঝতে পারার আগেই নিচে পড়ে লুটোপুটি খেলো। তারপর ফাইজা তার ব্যাগ থেকে কলম বের করে লোকটার মাংসাল পশ্চাতে ইচ্ছামত কয়েক ঘা বসালো। এতে করে লোকটার পশ্চাতদেশে জখম হয়ে রক্তের ফোঁটা পড়া শুরু হয়। সিয়াম আর মিদুল ফাইজার পিছনে দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিলো। লোকটা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল ফাইজাকে আঘাত করার জন্য। কিন্তু লোকটা ব্যর্থ হয়। কারণ লোকটা জানেনা যে, ফাইজা ক্যারাটে জানে। সে নিজের আত্মরক্ষা করতে শিখে নিয়েছে।

___________

রিজুর সাথে একই ঘরে রাত পার করেছে সাদিয়া। একসাথে থাকতে তার কোনো খারাপই লাগে নি। সে যে নিজের স্বামীকে মেরে ফেলে এসেছে এতেও তার কোনো আক্ষেপ নেই। রিং লাইটের আলোয় দুজন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করছে। রিজুর এই বাসাতে রিজু ছাড়া অন্য কেউ থাকেনা। ফ্যামিলিকে না জানিয়েই এই আলাদা বাসায় থাকে রিজু। মাঝেমধ্যেই টিক-টক ভিডিও বানানোর উছিলায় বেশ কয়েকজন মেয়ের আনাগোনা হয় এই বাসাতে। ফ্যামিলির সাথে থাকলে তো এরকম উশৃংখল জীবনযাপন করা সম্ভব না। এই উশৃংখল জীবনই রিজুর মতোই মানুষদের কাছে যেন এক স্বর্গসুখ। আসলে এসব মরিচীকা।

সাদিয়া ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটা পোষ্ট তার চোখে পড়লো। পুলিশ রাসেলের পরিচয় জানতে চেয়ে যেই পোষ্টার ছাপিয়ে ছিল তার পোষ্ট। সাদিয়া কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। সেই মুহুর্তেই তার যত রকমের সোশ্যাল আইডি ছিল সেইসব গুলো ডিএক্টিভেট করে দেয়। আইডি ডিএক্টিভেট করার পূর্বে রিজুকেও সেই পোষ্টটা দেখিয়েছিল সাদিয়া। নিজে কোনোভাবে ফেঁসে যেতে পারে ভেবে রিজুও তার সব কয়টা আইডি ডিএক্টিভেট করে দেয়। সব সোশ্যাল আইডি ডিএক্টিভেট করলেই কি তারা বেঁচে যাবে ?

পুলিশ ইতোমধ্যেই রাসেলের পরিচয় জানতে পেরেছে। রাসেলের কাজিন মাইশা দোকানে গিয়েছিলো কিছু কেনাকাটার জন্য। ফেরার সময় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোষ্টার দেখে থমকে যায় সে। পুলিশের দেয়ার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে মাইশা। হাতের বাজার কোনোরকমে ঘরে রেখে ছুটে যায় পুলিশ স্টেশনে। মাইশা রাসেলের ব্যাপারে যা জানতো সেই সব কিছুই বলল। কিন্তু রাসেলের বিয়ের ব্যাপারে বলতে পারলো না। বিয়ের ব্যাপারে একমাত্র বাড়িওয়ালা সেলিমই বলল। কেননা রাসেল-সাদিয়া এই পরিচয় দিয়েই বাসা ভাড়া নিয়েছিল। পুলিশ এখন সাদিয়াকে খুঁজছে।

__________

আয়মান থানায় বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কোহিনূরের দেয়া জবানবন্দির রেকর্ড শুনছিলো। শোনা শেষে ক্লু নিয়ে ভাবতে লাগলো। আয়মানের কিছু একটা মনে হলো। চায়ের কাপ রেখে বের হয়ে গেলো লতিফদের গ্রামের উদ্দেশ্যে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হলো। সেখানে গিয়ে হাশেমের চায়ের দোকান খোলা পেলো না। কিছু না ভেবেই চলে গেলো হাশেমের বাড়িতে। গিয়ে দেখলো ঘরের ভেতর থেকে আটকানো। কারো গোঙ্গানোর মৃদু আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। আয়মান বাড়ির চারপাশ ভালো করে দেখে নিলো। মাটিতে কিছু ছেঁচড়ে নেয়ার দাগ। এটা ঠিক কিসের ডাক তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আয়মান গিয়ে দরজায় আওয়াজ করে। বেশ কয়েকবার হাশেমকে ডাকার পর হাশেম দরজা খুলে বের হয়ে আসে। হাশেমের দিকে আয়মান ভালো করে তাকালো। তাকে দেখতে বিধ্বস্ত লাগছে। তার শরীর থেকে বিশ্রী এক প্রকার গন্ধ আসছে। আয়মানকে দেখে যে হাশেম মোটেও খুশি হয়নি তা স্পষ্টই বুঝা গেলো।

আয়মান ঘরে ঢুকতে চাইলে তাকে হাশেম ভেতরে প্রবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছিলো। আয়মান স্পষ্টই ভেতর থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলো। হাশেমের সাথে কথা-কাটাকাটি করতে করতে আয়মান হাশেমের পায়ের দিকে তাকালো। তার সন্দেহ ঠিক হয়ে গেলো। হাশেমের পায়ে ছয় আঙুল ! আয়মান এবার হাশেমকে এক টান দিয়ে দরজা থেকে সরিয়ে তার নাকে আর ঘাড়ে কয়েক ঘা বসিয়ে দিলে হাশেম কুপোকাত হয়ে যায়। আয়মান ছুটে ঘরে ঢুকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। কেননা হাশেমের ভাই কাশেম তার কুকর্মে লিপ্ত ছিল। বিছানায় কাশেমের নিচে এক মহিলা বিবস্ত্র অবস্থায় আছে। আয়মান এক পলকে যতদুর লক্ষ্য করেছে, তা থেকে সে বুঝতে পেরেছে যে মহিলাটির হাত, পা, মুখ সহ বাঁধা আছে। আয়মান চোখ অন্যদিকে ফিরিয়েই এগিয়ে গিয়ে কাশেমকে এক টানে মহিলার উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। তারপর ছেঁচড়ে বাহিরে এনে হাশেমের সাথে ফেলে। রান্নাঘর থেকে চোঙ্গা নিয়ে আসে। চোঙা অবশ্যই চিনে থাকবেন। চুলায় ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়। লোহার চোঙ্গা দিয়ে হাশেম-কাশেমকে ইচ্ছামত পে-টা-তে থাকে।

এদের চেঁচানোর জন্য ওদের বাড়ির আশেপাশের মানুষজন ছুটে আসে। ইতোমধ্যেই আরো অনেকেই জমায়েত হয়েছে হাশেমের বাড়ির উঠানে। বেধড়ক পে-টা-নোর পর আয়মান একটু ব্রেক নিলো। তারপর থানায় কল করে জানালো ফোর্স নিয়ে আসার জন্য। এক মহিলাকে ঘরের ভেতর পাঠানো হলো ভেতরে থাকা মহিলার বাঁধন খুলে পোষাক পরিধান করিয়ে দেয়ার জন্য। আয়মানের শরীরে এখনো রাগ কমেনি। তবে এখন আরো ধোলাই করা সম্ভব না। এদের পুলিশের আওতায় রেখে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে আবারো এমন ধো/লাই করার কথা ভেবে নিলো আয়মান।#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-২৩

সন্ধ্যের প্রায় শেষ। ফাইজা, মিদুল আর সিয়াম মিলে একটা খাবার হোটেলে যায় খাবার খাওয়ার জন্য। সারাদিন চা ব্যাতিত আর কিছু খাওয়া হয়নি তাদের। খাবার অর্ডার দিয়ে এক টেবিলে গিয়ে তিনজন বসে। সিয়ামের মন ভিষণ ভার হয়ে আছে। মোবাইল বের করে দোলনের মিষ্টি হাসি মিশেল ছবিটা দেখছে বারবার। বোনটার জন্য কলিজায় যেন মরুভূমি জেগেছে। একদল মুরুব্বিরা বসে বসে আলাপ আলোচনা করছে। তাদের আলোচনার মুখ্য ছিল কিছু ছেলেরা। যারা এলাকার পশ্চিম গলির মোড়ে আড্ডাবাজি করে। মেয়েদের উত্যক্ত করে। একবার নাকি রেপ কেস পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়ায়। ফাইজার ভিষণ রাগ হচ্ছিলো এসব শুনে।

খাবার চলে এলে তিনজন মিলে খাবার খেয়ে নিলো। বিল মিটিয়ে যখন বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়াচ্ছিল তখন ফাইজা দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাইজার দাঁড়িয়ে পড়া দেখে মিদুল কারণ জিজ্ঞেস করলে ফাইজা জানালো যে, সে পশ্চিম গলির মোড়ে যেতে চায়। মিদুল এতে নিষেধ করলেও সিয়াম এতে সম্মতি জানায়। তিনজন মিলে ওই গলির মোরের কাছাকাছি চলে এলে ফাইজা তখন সিয়াম আর মিদুলকে নিষেধ করে তার সাথে এগোতে। ফাইজা একাই এগোবে সেদিকে। দূরের বাতির আলো খুব অল্প পরিমাণেই এদিকে আসে। ফাইজা ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে মোড়ের দিকে পা বাড়ালো। সিয়াম আর মিদুল ফাইজাকে ফলো করছে। যদিও ফাইজা নিষেধ করেছে। এই রাস্তাটা একদম নির্জন। তবে বখাটেদের চেঁচামেচিতে তেমন আর নির্জন থাকেনা। নির্জন বলে কেউ ভূতে ভয় পাক বা না পাক, এই ছেলেগুলোকে ভয় ঠিকই পাবে। ওরা এক প্রকার ডাকাত। যারা মেয়েদের ইজ্জত ডাকাতি করে আর অন্যান্য পুরুষদের যাবতীয় জিনিসপত্র।

কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো ছয় সাতজন আড্ডাবাজি করছে। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে আছে আর কেউ বা বাইকে বসে আছে। একে অপরের সাথে বিশ্রী ভাষায় কথা বলছে। ফাইকার কানে স্পষ্টই সব কথা ভেসে আসছে। ফাইজার এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ছেলেগুলোও এগিয়ে আসে ফাইজার দিকে। যত ধরনের নোংরা কথা বলা যায় সেসব বলছিল আর ফাইজার চারপাশে রিং আকৃতি হয়ে ঘুরছিল। কেউ কেউ ফাইজার গায়ে হাত দিতে চাইলে ফাইজা দ্রুতগতিতে সরে যাচ্ছে।

ছেলেদের মধ্যে একজন বলল, “বাব্বাহ এ তো মেয়ে নয়, মনে হচ্ছে মাগুর মাছ। ধরতে নিলেই পিছলে বের হয়ে যাচ্ছে।”

আরেকজন বলল, “কি টুনটুনি পাখি, তুমি দেখি মোটেও বয় পাচ্ছো না। তোমার চোখে তো কোনো ভয় দেখি না।”

ফ্ল্যাশলাইয়ের আলোয় ফাইজা সবার চেহারাগুলো যথাসাধ্য ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো। হঠাৎ একজনের চেহারা দেখে ফাইজা থমকে যায়। হ্যা এটা সোহেল। সোহেলের ছবি ফাইজা দেখেছিল। কলেজ থেকে সিয়াম তা সংগ্রহ করেছিলো। ফাইজা কয়েক সেকেন্ড অবাক হয়ে দেখার পর অদ্ভুত এক হাসি দিলো। তারপর হাসতে হাসতে ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে।

সোহেল বলে উঠলো, “ওহো… কিগো সোনা, এখন কি আমাদের সাথে কলম দিয়ে লেখাপড়া করবে নাকি !” এই কথায় সব ছেলেগুলো একসাথে অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।

সিয়াম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগে দাঁতে দাঁত কামড়াতে লাগলো। ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে মিদুল বাঁধা দিয়ে আরেকটু অপেক্ষা করতে বলে। সিয়াম আড়াল থেকে সোহেলকে হালকা আলোতেই চিনতে পেরেছিল। মিদুলেরও চিনতে বাকি ছিল না।

ফাইজা এক গাল হেসে বলল, “হ্যা আমারতো লেখাপড়া করতে ভিষণ ভালো লাগে। চলো তোমাদেরও একটু পড়াশোনা শেখাই।”

ফাইজার কথা শেষ হতে না হতে একেকজন লোভাতুর হয়ে এগোতে লাগলো ফাইজার দিকে। ফাইজা নিজের পজিশন ঠিক করে নিলো। তারপর একে একে কুপোকাত করে ধরাশায়ী করলো সবাইকে। সবাইকে ধো/লাই করার পর সিয়াম আর মিদুল এগিয়ে যায় সেদিকে। বাকীদের রেখে সোহেলকে নিয়ে ওরা তিনজন সেখান থেকে চলে আসে।

_________

পুলিশ সাদিয়ার খোঁজ নিতে সাদিয়া-রাসেল যে বাসায় থাকতো তার আশেপাশে খোঁজ নিতে থাকলো। এক পর্যায়ে কিছু তথ্য পেতে সক্ষম হয় পুলিশ। তথ্যের ভিত্তিতে সাদিয়ার খোঁজ করতে করতে রিজু যেই বাসায় থাকে সেখানে পৌঁছে যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে পুলিশ হাজির হয় দোরগোড়ায়। দুজনে নিজেদের জামাকাপড় ঠিক করে বের হয়ে আসে। পুলিশ দুজনকে থানায় নিয়ে আসে।

সাদিয়া আর রিজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাদিয়া রাসেলকে কিভাবে হ-ত্যা করে তার পূর্ণাঙ্গ বর্ননা দিয়েছে। রাশেলের পরিবারে খবর জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে রাসেলের মায়ের আর্তনাদে মর্গে যেন লাশগুলোও কেঁদে উঠছে।

ওদিকে আয়মান হাশেম ও কাশেমের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেটা নিয়ে ছুটাছুটি করছে। হয়তো এবার কোহিনূর তার যথাযথ বিচার পাবে।

_________

সোহেলের জ্ঞান ফিরলে নিজেকে এক আবছা অন্ধকার ঘরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। সোহেল চেঁচালো। তার কিছুক্ষণ পরপরই দরজা খুলে গেলো। একরাশ আলো এসে সোহেলের চোখে আঘাত হানলো। কিছুক্ষণ পর শান্তভাবে চোখ খুললে চোখের সামনে দেখলো দুজন দাঁড়িয়ে এবং একজন তার সামনে বসে আছে। সামনে বসে থাকা লোকটাকে সে চিনে। সে দোলনচাঁপার ভাই সিয়াম। সিয়ামকে সে চেনে কারণ দোলন তার সাথে তার ভাইয়ের ছবিও দেখিয়েছিল। তবুও সোহেল না চেনার ভান করে বলল,

“আমাকে কেন আপনারা এখানে তুলে এনেছে ?”

“দোলন কোথায় আগে সেটা বল।”

“আমি জানি না।”

“ঠিক আছে। তাহলে তোকে কেন এখানে তুলে এনেছি সেটাও আমি জানিনা।”

“এটা কেমন ধরনের কথা। একেই তো আমাকে বেধড়ক পিটি/য়েছেন। তার উপর এখন তুলে এনে ফাজলামো করছেন।”

“ফাজলামোর এখনো কিছুই দেখিস নাই। তুই আমার বোকাসোকা বোনটাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিস। দুজন একসাথে ক্লাসও মিস করতি এবং করেছিসও। সে যে তোর সাথে ছিল তা আমি নিশ্চিত। এবং এটাও নিশ্চিত যে, তার সাথে ভালো কিছু ঘটেনি। ভালোয় ভালোয় বল আমার বোন কোথায় ?”

“আমি জানিনা সে কোথায়। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্কও নেই।”

“কোনো সম্পর্ক ছিল না, তাই না ?” এই কথা বলে সিয়াম সোহেলকে সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারে। উলটে পড়ে যায় সোহেল। ঠোঁট কেটে র-ক্তপাত ঘটে। তবুও স্বীকার করছে না দোলনের খবর। সিয়াম বারবার জিজ্ঞেস করে আর সিয়াম বারবার একই উত্তর দেয়। সিয়ামের মেজাজ এখন তুঙ্গে। এই মুহুর্তে সিয়ামকে খু-ন করে ফেলতেও তার হাত কাঁপবে না। ফাইজা আর মিদুল সিয়ামকে বুঝিয়ে এখান থেকে আপাতত নিয়ে যায়।

বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনে একটা মেসেজ আসে। ফোনটা সোহেলের। সিয়াম সোহেলের সামনে থেকে আসার সময় ওর ফোনটা নিয়ে এসেছিল। সিয়াম ফোন স্ক্রিনের উপর তাকিয়ে দেখলো মেসেজে লেখা, “কি রে মাদা….দ, তোরে কইছিলাম না আজকে রাতের মধ্যে একটারে জুটাই দিতে…….”

সম্পূর্ণ মেসেজ টুকু পড়তে পারেনি সিয়াম। ফোন লক থাকায় নোটিফিকেশন থেকে এর বেশি পড়া যায়নি। সিয়াম দ্রুত সেই কক্ষে গেলো যেখানে সোহেলকে রাখা হয়েছে। সোহেলকে লক খুলে দিতে বললে সোহেল তাতে রাজি হচ্ছিলো না। পাসওয়ার্ড লকের সাথে সাথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকও ছিল। সিয়াম সোহেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে লক খুলে পুরো মেসেজটা পড়লো সোহেলের সামনে দাঁড়িয়েই। মেসেজটা এমন ছিল যে,

“কি রে মাদা….দ, তোরে কইছিলাম না আজকে রাতের মধ্যে একটারে জুটাই দিতে। তোর কচিকাঁচা প্রেমিকারে দিয়া তো সাধ মিটাইতে পারলাম না। তার আগেই টা টা বাই বাই হইয়া গেলো। আজকে রাতের মধ্যে যদি একটারে না নিয়া আসোস তো তোরেও তোর ওই প্রেমিকার মতো মাটিচাপা দিয়ে দেবো।”

মেসেজটা পড়ে সিয়ামের কলিজা জ্বলে উঠলে। তার যেন মনে হচ্ছে, দোলন আর নেই। সিয়াম এক ছুটে সোহেলের কলার চেপে ধরে দোলনের কথা জিজ্ঞেস করলো আবারও। জানতে চাইলে এই মেসেজের মানে। সোহেল ক্লিয়ারলি কিছুই বলছিল না। সিয়াম সোহেলকে এবার এলোপাতাড়ি পে/টালো। এক পর্যায়ে সোহেল চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“দোলন আর নেই। হ্যা, সে আর নেই। তাকে শেষ করে মাটি চাপা দিয়ে দেয়া হয়েছে। দোলন আর নেই।”

এই কথা কর্নপাত করে সিয়াম থমকে গেলো। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ফাইজা আর মিদুলও মূর্তিমান হয়ে থমকে রইলো। কিছুক্ষণের জন্য সময় বোধহয় থেমে গেলো এই তিনটা মানুষের জন্য। সিয়ামের কানে বারবার একই কথা বাজতে রইলো,

“দোলন আর নেই। দোলন আর নেই। দোলন আর নেই…”

চলবে….

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here