সবিনয়ে_নিবেদন পর্ব ৬

#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৬
#বিনতে মাহনূর

ভালোবাসা শব্দটি চার অক্ষরের হলেও এর ওজন বহন করার ক্ষমতা সবার থাকে না।কেউ কেউ শুরুতে হেরে যায় আবার কেউ কেউ মাঝ পথে এসে ডুবে যায়,আবার কেউ কেউ তীরে এসে তরী ডুবায়।কাঙ্ক্ষিত ফল খুব কম ভাগ্যবানরা পায়।শত দুঃখ – কষ্ট,ঝড় – তুফানের সামনা করে একে অন্যের হয়ে যায় চির জীবনের জন্য।
নিজেকে আজ খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।যার জন্য এক সময় আমি পাগল ছিলাম আজ সে আমার জন্য পাগল।সে আমার, শুধুই আমার।মনে মনে কথা গুলো কয়েকবার আউড়িয়ে নিলাম।কেনো যেন এখন আর মন খারাপ লাগছে না,বরং খুশি লাগছে।সে আমাকে ভালোবাসে এই কথাটা ভাবলে খুশিতে মরে যেতে ইচ্ছা করে।যদিও তিনি এখনো বলেনি তাতে কি আমি তো জানি।তবুও এতো সহজে তার কাছে ধরা দিবো না।অনেক কষ্ট দিয়েছে,সবটা না পারি কিছুটা দিতে হবেই।

এবাড়িতে এসেছি এক সপ্তাহ হলো,এর মধ্যে আহনাফের সাথে তেমন কথা হয়নি।উনি বললেও এড়িয়ে যাই আমি।এতে তিনি খুব বিরক্ত তা বুঝতে পারি।সারাদিন আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার পিছনে ঘুরঘুর করে।বেশ মজা পাচ্ছি ব্যাপারটিতে।এতো কিছুর মাঝেও তার আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কোনো পরিবর্তন হয়নি।

রাত ৯টা বেজে গেলো উনি এখনো আসেনি।আমি বেলকনিতে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি আর এসব ভেবে চলছি ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো।শুরুতে চমকে উঠলেও বুঝতে পারলাম উনি এসেছে।এই কয়েক দিনে এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।ওনার হুটহাট জড়িয়ে ধরাতে এখন আর ভয় পাই না। নিশ্চয়ই এক্সট্রা চাবি দিয়ে ঢুকেছেন।
আমি ওনাকে ছড়িয়ে যেতে নিলে উনি হাত ধরে ফেললেন।করুন কণ্ঠে বললেন,
____এমন কেন করছো?
আমি জবাব না দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।কিন্তু লাভ হলো না।টেনে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।ওনার এমন কাণ্ডে ভয় পেয়ে গেলাম।অস্থিরতা ঘিরে ধরলো আমাকে।দুহাত দিয়ে তার বুকে মৃদু ধাক্কা দিতে দিতে কাপা কণ্ঠে বললাম,
____ক ক কি করছেন? ছ ছাড়ুন
উনি জেদী কণ্ঠে বললেন,
____না ছাড়বো না।ছেড়ে দিলে পালাই পালাই করো।
আমি নিচের দিকে চোখ রেখে ওনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।তিনি আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা উপরের দিকে তুলে বললো,
____এই এই আমার দিকে তাকাও।তুমি দেখতে পাচ্ছো না আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি আর পারছি না।তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা যে কত কষ্টের তুমি কি বোঝো না?বুঝতে পারো না আমার মনে কি চলে?তুমি সব বোঝো,বুঝেও অবুঝ সেজে থাকো।

আমি বুঝতে পারছি উনি কি বলতে চাচ্ছে,কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বস্তু এতো সহজে পেয়ে গেলে পরে তার মূল্য থাকে না।তাই কথা ঘুরাতে বললাম,
____খেতে চলুন,আমার ক্ষুদা পেয়েছে।
উনি সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন আর আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আমি জানতাম ক্ষুদার কথা বললে উনি ছেড়ে দিবে হলোও তাই। রুম থেকে বেরিয়ে খাবার গুলো গরম করে টেবিলে এনে ওনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে তিনিও চলে আসলেন।তাকে খাবার দিয়ে পাশের চেয়ারে বসতেই বলে উঠলো,
____খাইয়ে দাও।
হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।আসলে কথাটা বোঝার চেষ্টা করছি।এমন না যে কথাটা খুব কঠিন বুঝতে পারবো না, খুবই সহজ আর বাংলা ভাষাতেই বলেছেন তিনি কিন্তু আমার কাছে বোধগম্য না।
____এভাবে হা করে আছো কেন?খাইয়ে দাও খুব ক্ষুদা পেয়েছে।(করুন মুখ করে বললো)
অবাক হয়ে নিজের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললাম,
____আমি?
____তুমি আর আমি ছাড়া কেউ তো নেই।সো, তোমাকেই বলেছি।এতো অবাক হওয়ার কি আছে?(ভ্রু কুঁচকে বললেন)
____না কিছু না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম।আসলে উনি এই কদিন আমাকে খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু কখনো ওনাকে খাইয়ে দিতে বলেনি।আজ হঠাৎ বলছে তাই অবাক হয়েছি।
খাওয়া শেষে উনি আমার সাথে টেবিল পরিষ্কার করেছেন যদিও আমি বারন করে ছিলাম কিন্তু উনি শোনেনি।ওনার এই কাজটা মন কেড়েছে নিয়েছে,বাড়ির কাজে হতে হাত লাগিয়ে সাহায্য করেন আমাকে।
রুমে এসে শুয়ে পরলাম।শোয়ার সাথে সাথে উনিও আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,
____তোমায় খুব মিস করি মাহনূর।
কিছুই বললাম না আমি,কারণ জানি তিনি কি বুঝাতে চেয়েছে।আচ্ছা,আমি কি এখন বেশি বেশি করছি?হ্যা বেশিই করছি।ভালোবাসলে কষ্ট দেয়া যায় না কিন্তু আমি ওনাকে কষ্ট দিচ্ছি।আমার আর ওনার মধ্যে তাহলে পার্থক্য থাকলো কি?আর না এসব বন্ধ করবো।তার আগে জানতে হবে ওই দিন আমার সাথে এমন করেছিল কেন?
____শুনছেন?
ওপাশ থেকে নিরুত্তর,পিনপতন নিরবতা।ওনার ভারী নিশ্বাস আমার পিঠে আছড়ে পডরছে।মনে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লাম।সবাই দ্বিতীয় সুযোগ পায় না আমরা যখন পেয়েছি এভাবে হেলায় ফেলে দিবো না।কাল ওনার সাথে কথা বলবো।সবটা জানতে হবে আমার।সব ঠিক করে নিবো।কাল সকাল আমাদের জীবনের নতুন সূচনার সকাল হতে চলেছে।

সকালে চোখ খুলে পাশ ফিরে দেখি উনি নেই।পিলে চমকে উঠলাম। কোথায় তিনি?বেড থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে শুনতে পেলাম কিচেন থেকে টুং টাং শব্দ হচ্ছে।পা বাড়িয়ে দেখলাম আমার তিনি নাস্তা বানাতে ব্যস্ত।আনমনে হেসে উঠলাম।আজ শুক্রবার, অফিসে যাওয়ার চিন্তা নেই তাই জনাব এখানে।মৃদু হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। মাঝে বরের যত্ন পেতে ক্ষতি কি।ফ্রেশ হয়ে বের আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম।তার ডাক শুনে পিছনে ঘুরে দাড়ালাম।দরজা খুলে ভিতরে আসার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলেন তিনি।চোখ বড় বড় করে হা করে আছে।ওনার এই অবস্থার কারন আমার জানা।আজ আমি নিজেকে শাড়ীতে মুড়িয়েছি,তাই তার এই অবস্থা।দুদিন আগে তিনি শাড়ী গুলো এনে বলেছিল পরে দেখাতে কিন্তু আমি পরিনি।সেদিন তিনি খুব কষ্ট পেয়ে ছিল।কথাটা মনে পরতেই এক ঝাঁক কষ্টেরা মনের মাঝে উকি দিল।কিন্তু এই মুহূর্তটা নষ্ট করতে চাই না তাই তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম।এতে যেন সে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলো।কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। হায়,কি সুন্দর সেই হাসি নজর না লাগে।তিনি ধীর পায়ে হেঁটে আমার সামনে দাড়ালো,চোখে চোখ রেখে তার দুহাতে আমার দু গাল আলতো করে ধরলো।সাথে সাথে কেপে উঠলাম আমি।অন্য রকম অনুভূতিতে শিহরিত হচ্ছি।আজ কোনো অস্বস্তি মনের মধ্যে বাসা বাঁধছে না।তিনি আমার কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে দিলেন।ভালোলাগা আর ভালোবাসার দরুন আমার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।
____বউ বউ লাগছে তোমাকে।আমার বউ।
চোখ বন্ধ অবস্থাতে হেসে দিলাম আমি।ঠিক তখনই কনিং বেল বেজে উঠলো।ওনার চোখে মুখে একরাশ বিরক্তেরা ঝেঁকে ধরেছে, তা দেখে আবারও হেসে দিলাম।আমাকে হাসতে দেখে তিনিও হেসে দিয়ে বললো,
____তুমি দেখো কে এসেছে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।তিনি ওয়াশরুমে যেতেই আমি দরজা খুলতে চলে গেলাম।দরজা খুলে ওপাশের ব্যক্তিটিকে দেখে চরম বিস্ময় নিয়ে বললাম,
____রাদ ভাইয়া তুমি?

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here