সাইকো লাভার পর্বঃ১০

0
2008

সাইকো লাভার পর্বঃ১০
#সাদিয়া সিদ্দিক মিম(লেখিকা)

আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই, দৌড় লাগাই সামনের দিকে,,,,আমি নেমে পড়েছি তাই ভাইয়া,চাচ্চু আর মামুও নেমে পড়ে,,,,আমি গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে এসে দাড়িয়ে পড়ি হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছি,,,,আমার পাশে চাচ্চু এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,” দিয়া এভাবে দৌড়ে আসার মানে কী?
তখন আমি চাচ্চুকে হাত দিয়ে সামনে ইশারা করি,,,সামনে একটা মেলা হচ্ছে আর সেখানে নাগর দোলাও আছে,,,,,আমি কখনও নাগর দোলায় উঠি নি,,,,,ততক্ষণে ভাইয়ারা আর মামুও এসে হাজির,,,,সায়ান ভাইয়া একবার সামনে তাকিয়েই দিলো এক গাট্টা আমার মাথায়।আমি মাথায় হাত দিয়ে ভাইয়ার দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছি।

সায়ানঃ নাগর দোলা দেখে এভাবে কেউ দৌড়ে গাড়ি থেকে নামে,,,,আমরা ভাবলাম কী না কী,,,,আর উনি নাগর দোলা দেখে এখানে দৌড়ে আসছে,,,,যা গাড়িতে উঠ।(রেগে বলল)

দিয়াঃ না আমি যাব না,,,,আমি নাগর দোলায় উঠব,,,,বড় ভাইয়া চলো না।(সাফয়ানের হাত ধরে অনুরোধ করে)

মামুঃ এইসব চরকির মধ্যে উঠতে হবে না,,,,উঠলে ভয়ে ঠকঠক করবি,,,,যা গাড়িতে উঠ।

এতক্ষণে সবার নজর যায় মামুর দিকে,,,,,,মামুকে দেখে সবাই মুখ টিপ হাসছে,,,,কিন্তু আমি ভুবন ভুলানো হাসিতে ফেটে পড়লা।মামু কিছু বুঝতে না পেরে সবার দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,”এই এভাবে হাসছিস কেন হে,,,,আমি কী জোকার নাকি যে এভাবে হাসছিস”(কিছুটা রেগে)

আমি হাসিটা কিছু থামিয়ে মামুকে বললাম,,,,,” উফফ মামু তোমাকে কী লাগছে গো,,,,এখন তোমাকে পুরাই বিটকেলের মত লাগতাছে,,,,আমার বিটকেল মামু “।(বলেই আবার হাসিতে মেতে উঠলাম)।

মামু ত রেগে বোম হয়ে আছে,,,সাফয়ান ভাইয়া হাসতে হাসতে মামুকে ইশারা করল যে নিজেকে একবার দেখতে।মামু পকেট থেকে ফোন বের করে নিজেকে একবার দেখে নিল,,,,মামু দেখেই দিল এক চিৎকার,,,আর চিৎকার দেয়ার পর সাথেসাথেই মামু রাস্তায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে,,,,মানে জ্ঞান হারাইছে।

চাচ্চুঃ হায় রে আল্লা যেমন ভাগনী তেমন মামু,,,,সাফয়ান যা ত পানি নিয়ে আয়।

ভাইয়া দৌড় লাগাল গাড়ির দিকে,,,,আর ছোট ভাইয়া আমাকে বকাবকি করছে,,,,আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে বকা শুনছি,,,,,আমি ত সুন্দর করেই সাজাইছিলাম,,,,ঠোঁটে লিপস্টিক,চোখে আইলেনার,আর কপালে বাচ্চাদের মত টিপ,,,,আর ভ্রুতে কাজল দিয়ে দিছি,,,,কিন্তু মামু ত ঘুম থেকে উঠে চোখ মুখ ডলে সারামুখে ছড়াইয়া ভূত বানিয়ে ফেলছে,,,,এতে আমার কী দোষ।

কিছুক্ষণ পরে বড় ভাইয়া পানি নিয়ে এসে মামুর চোখে পানি ছিটায়,,,,ভাইয়া পানি ছিটানোর সময়ও হেসে যাচ্ছিল,,,তার একটু পরেই মামুর জ্ঞান ফিরে।

চাচ্চুঃ রায়হান এখন ঠিক আছো ত।

মামুঃ ভভভূত,,,,ভভূ,,,,,

আর বলতে পারল না আমার বিটকেল মামু আবার জ্ঞান হারাইছে,,,,আর নিজের হাসিটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না,,,,কী ভীতু,,,আল্লা গো আল্লা,,,,আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেলো,,,আমার সাথে সাফয়ান ভাইয়াও তাল মিলালো,,,,চাচ্চু আর সায়ান ভাইয়া রাগে লাল হয়ে আছে।

চাচ্চুঃ দিয়া তুই জানিস তোর মামুর সমস্যা আছে,,,,অয় একটু বাচ্চা টাইপের,,,,তারপরও এরকম দুষ্টুমি কেন করিস।দেখ ত বেচারা কীভাবে পড়ে আছে।

দিয়াঃ উফফ চাচ্চু কুল,,,,তুমি ত জানোই মামুর এটা রোজকার রুটিন,,,দিনে ৪/৫ বার জ্ঞান হারাবেই হারাবে।(বলে আবার হাসিতে মেতে উঠলাম)।

সায়ান ভাইয়া আবার মামুর চোখে মুখে পানি ছিটায়,,,এভাবে বেশ কিছুক্ষণ পর মামুর জ্ঞান ফিরে,,,আর যাতে ভয় পেয়ে জ্ঞান না হারায় তাই মামুর ভয়টা দূর করে মামুকে সুরসুরি দিতে লাগলাম,,,আর মামু খিলখিল করে বাচ্চাদের মত হেসেই যাচ্ছে।

সায়ানঃ এবার চলো বাড়ি ফিরতে হবে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।

সাফয়ানঃ আরে থাম,,,এখন আমরা সবাই নাগর দোলায় উঠব,,,কী বলিস দিয়া।

দিয়াঃ হুম,,,হুম আমরা এখন নাগর দোলায় উঠব,,,মামু উঠো তাড়াতাড়ি নাগর দোলায় উঠব।(মামুকে টেনে রাস্তা থেকে উঠাতে উঠাতে)।

মামুঃ না আমি উঠব না,,,তরা উঠ আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।

দিয়াঃ মামু কী ভয় পাচ্ছো হুম।

মামুঃ মোটেও আমি ভভয় পাচ্ছি না,,,এসবে বাচ্চারা উঠে,,,আমি বড় হয়েছি তাই আমি উঠব না।

দিয়াঃ তুমি ভয় পাও এটাই আসল কথা,,,বিটকেল মামু ভীতু।

চাচ্চুঃ উফফ দিয়া,,,,তুই দিনদিন খুব দুষ্টু হয়ে যাচ্ছিস,,,রায়হান বলছে ত উঠবে না,,,তারপরও এরকম করছিস কেন?(রেগে)

সায়ানঃ এসব বাদ দিবি,,,মামু ভয় পাচ্ছে দেখতে পাচ্ছিস না,,,চল এখান থেকে।

মামুঃ আমি একদম ভয় পাচ্ছি না। চল নাগর দোলায় উঠব,,,তদের দেখিয়ে দিব আমি ভীতু নই।(বেশ ভাব নিয়ে বলল মামু)

এটাই ত চাইছিলাম যাতে মামু উঠে,,,হি হি হি,,,,,মামু উঠতে না চাইলে চাচ্চু আমাদের কাউকেই উঠতে দিতে চাইত না।তাই ত মামুকে ফুলানোর জন্যই ভীতু বললাম।

তারপর সবাই মিলে মেলার ভিতরে গিয়ে নাগর দোলার কাছে গেলাম।আমি সাফয়ান ভাইয়া,সায়ান ভাইয়া এক সাইডে বসেছি আর অপর সাইডে মামু আর চাচ্চু বসেছে।আলাদা উঠতে চাইছি কিন্তু আর কোন দোলনা খালি নেই তাই সবাই চেপেচুপে একটাতেই বসেছি।

নাগর দোলা যখন ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল তখন একটু ভয় ভয় লাগছিল কিন্ত যখন জোরে ঘুরানো হল তখন আর উপায় না পেয়ে সায়ান ভাইয়াকে জাপটে ধরে কেঁদেই দিলাম।আর ঐদিকে মামুও চিৎকার চেঁচামেচি করতাছে নামানোর জন্য।

মামুঃ এই চরকি থামাও,,,,চরকি থামাও,,,,আমি নিচে নামব।(মামু এভাবে চিৎকার করছে আর দোয়া পড়ছে)

দিয়াঃ ভাইয়া,,,,,,আআআমি নননিচে ননামব(কেঁদে কেঁদে)

সায়ানঃ এই একদম নামাবে না,,,,এখন নামব নামব করছিস কেন?কেউ উঠতে চায় নি তুই জোড় করে সবাইকে উঠাইছত এখন ভ্যা ভ্যা করছ কেন?চুপ কর,,,নয়ত এখান থেকে নিচে ফেলে দিব।

সাফয়ানঃ আরে তুই বকছিস কেন?আর দিয়া তুই কাঁদিস না দাঁড়া আমি নামাতে বলছি।(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

চাচ্চুঃ একদম নামাবে না,,,,এটাই অর শিক্ষা,,,খালি বাঁদরামি করা না,,,এবার বুঝো।(বুকে হাত গুজে)

দিয়াঃ চাচ্চু নননামাও ননা,,,,আআআর এএমন করব না,,,,পপপ্লিজ চচাচ্চু।(কেঁদে কেঁদে)।

মামু ত চাচ্চুকে জড়িয়ে ধরে আছে,,,,চাচ্চু বিরক্ত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য চুপচাপ সব শয্য করছে।এভাবে কয়েকবার ঘুরার পর নাগর দোলা থেকে নামাল আমাদের।

আমি নেমেই দৌড়ে একটা দোকানে গিয়ে পানি খেতে লাগলাম।আর ঐদিকে মামু নাগর দোলা থেকে নেমে মাতালদের মত এঁকেবেঁকে হেটে যাচ্ছে।আর এখনও দোয়া পড়ছে।মামুর অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে,,,,মুখে পানি থাকায় হাসিটা কন্ট্রোল করতে চাইছি কিন্তু কন্ট্রোল করতে না পেরে মুখের পানি বের হয়ে গেলো আর আমি জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলাম।তখনই কেউ একজন ধমক দিল আমাকে আমি তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর রুমাল দিয়ে মুখ মুচছে।

ছেলেটাঃ এই কী করলেন এটা আপনি,,,,এভাবে মুখের পানি আমার উপরে ফেললেন কেন?(রেগে)

ইসস্ তখন হাসিটা কন্ট্রোল করতে না পেরে মুখের পানি বের হয়ে এই ছেলেটার উপরে গিয়েই পড়েছে,,,দোষ যেহেতু আমার আমিই সরি বলে দেই।

দিয়াঃ আই এম সরি ভাইয়া,,,,আসলে আপনাকে দেখি নি।

কথাটা বলেই দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলাম ছেলেটাকে কিছু বলতে না দিয়েই।তারপর সবাই মিলে বাড়িতে চলে এলাম,,,,বাড়িতে ডুকে দেখি আমার হিটলার আব্বাজান সোফায় বসে আছে গম্ভীর মুখে।আর আমরা পাঁচ জন অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।আমি চাচ্চুকে খোঁচাচ্ছি যাতে পাপাকে মেনেজ করে।কিন্তু চাচ্চু কিছু বলছে না।

দিয়ার বাবাঃ কোথা থেকে আসলেন আপনারা,,,,কয়টা বাজে।(গম্ভীর মুখে)

তখন সেখানে আম্মু এলো,,,আম্মু এসেই পাপাকে রাগি গলায় বলল,,,,, “শুরু হয়ে গেছে ত তোমার গোয়েন্দা গিরি,,,তোমার বিজনেসম্যান না হয়ে গোয়েন্দা হওয়ার দরকার ছিল,,,,বাইরে থেকে মাত্র আসল কই অরা রেস্ট নিবে তা না করে উনার ভাষন ছাড়তে বসে পড়েছে ”

আম্মুর কথা শুনে পাপা পুরাই চুপ হয়ে গেছে,,,,হি হি হি,,,,আমার আম্মুটা সেই,,,,ইচ্ছে করতাছে দুইটা চুমা দিতাম আমার আম্মাজানকে।

এবার আম্মু আমার কাছে এসে আামর গালে হাত রেখে বলল,,,,”আমার মা টা এসে পড়ছে,,,আমার ঘরটা আবার ভরে উঠল,,,,এবার যাও সবাই ঘরে যাও,,,গিয়ে রেস্ট নাও।আমি সবার ঘরে চা পাঠিয়ে দিচ্ছি “।তারপর আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিয়ে চলে এলাম নিজের রুমে।

আমার রুমে এসে দেখি ঘরটা অন্ধকার,,,,তাই লাইট জ্বালালাম,,,লাইট জ্বালিয়ে পিছনে ঘুরে দেখি আমার বিছানায় সয়ং বজ্জাত কলার কাদি বসে আছে।আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে,,,আমার ত ভয়ে প্রান পাখি যায় যায়।এই পোলায় এমন রেগে আছে কিল্লায়,,,আমি ত কিছু করি নি।কিছুটা সাহস নিয়ে আদিকে জিজ্ঞেস করলাম,,,, ” আআপনি এএএখানে ককেন”?

আদি কিছু না বলে বসা থেকে উঠে দরজাটা লাগিয়ে আমাকে টান দিয়ে আদির সামনে এনে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল আমার গালে,,,,তারপর আমার দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে রেগে চিৎকার করে বলল,,,, “পাখা গজিয়েছে তোর হে,,,,বড্ড বেশি সাহস হয়েছে তোর,,,,আমার কথার কোন দামই নাই তোর কাছে,,,এতবার বলছি আমার কথার অবাধ্য না হতে কিন্তু তুই ত পন করেছিস আমার কোন কথাই শুনবি না,,,,কতবার কল দিছি তরে হে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলি কেন?বল কেন বন্ধ করছত,,,বল,,

বলেই আবার আমার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।আমি এবার আর না পেরে কেঁদেই দিলাম,,,,আদি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নিয়ে এবার আমার গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলল,,,, ” কাঁদবে না,,,একদম কাঁদবে না,,,,জানো আমার কত চিন্তা হচ্ছিল তোমার জন্য”।

আমি কিছু না বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছি,,,,আদি আমার যে গালে থাপ্পড় মেরেছে সে গালে কতগুলো চুমু দিয়ে বলল,,,,”খুব লেগেছে তাই না জান”।

আমি কিছুই বললাম না কেঁদেই যাচ্ছি,,,,এবার আদি আমাকে জড়িয়ে ধরে আবারও বলতে লাগল,,,,”কেন তুমি আমার কথা শোন না বলো ত,,,,তুমি ত জানো আমি রেগে গেলে নিজের মধ্যে থাকি না,,,,এবার কান্না থামাও প্লিজ,,,,নয়ত আমিই এবার কেঁদে দিব”।(নরম গলায়)

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here