#পর্ব-৬
#সাদা_ফুল
#ফারিয়া_আক্তার_নূপুর
–
এর পরেরদিনই শুভ্রতা ক্যামেলিয়াকে তীব্রকে দিয়ে দেয়। শুহানা বেগম অবশ্য জিজ্ঞেস করেননি কারন শুভ্রতা আগেই বলে রেখেছিল ক্যামেলিয়া ওর স্কুলের এক বান্ধবীর বিড়াল যাকে কয়েকদিন রাখার জন্য শুভ্রতাকে দেওয়া হয়েছিল।
৭.
স্কুলের ছুটি হওয়ার জন্য দোকানের পাশে অয়নের সাথে দাঁড়িয়ে আছে তীব্র। অয়ন একটু পর পর তীব্রকে খোচাচ্ছে। তীব্রও তার প্রতিত্তরে হাসছে। ক্ষানিক পরেই স্কুল ড্রেস পরুয়া এক ছেলে তীব্রের সামনে এসে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করেই বলে,
“ভাই ভাবী-কে আজকে কাঁদতে কাঁদতে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম”।
মূহুর্তেই তীব্রের হাসিখুশি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বুকের ভেতর আচমকা মোচড় দিয়ে উঠে। কিছু না বলে গেইটের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন পরই শুভ্রতা বেরিয়ে আসে। তীব্রও ক্যামেলিয়াকে নিয়ে শুভ্রতার পিছু পিছু যায় সাথে অয়ন। বটগাছের কাছে এসে পিছন থেকে ডাক দেয়,
“শুভ্রতা!”
শুভ্রতার সাথে শুভও পেছন ফিরে। অয়ন সামনে এগিয়ে শুভকে নিয়ে হাঁটতে থাকে নানা রকম প্রশ্ন করে। শুভ্রতা তীব্রের সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্যামেলিয়াকে দু’হাত দিয়ে ধরে শুভ্রতার সামনে তুলে রাখে। ক্যামেলিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে ডেকে উঠে,
“ম্যাওওও!”
ক্যামেলিয়ার ডাকে মুখ তুলে তাকায় শুভ্রতা। তীব্র অপলক তাকিয়ে থাকে শুভ্রতার দিকে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে শুভ্রতার। ক্যামেলিয়াকে নিতে হাত বাড়াতেই নজর যায় শুভ্রতার লাল হয়ে ফুলে যাওয়া হাতের দিকে। মূহুর্তেই তীব্রের সারা দেহে আগুন বয়ে যায়। কপালের রগ ফুলে উঠে। চোখমুখ বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে,
“কি হয়েছে শুভ্রতা? কান্না কেনো করেছো? আর হাত এত লাল হয়ে আছে কেনো?
কোনো উত্তর না দিয়েই শুভ্রতা চুপ করে থাকে। তীব্র ক্ষানিক’বাদে আবারও জিজ্ঞেস করে হাত লাল হওয়ার কারন। শুভ্রতা নরম কন্ঠের এরূপ কথা শুনে চোখের পানি ছেড়ে কেঁদে দেয়। শুভ্রতার কান্না দেখে তীব্র ব্যস্ত হয়ে পরে। হাত পা তার অনবরত কাঁপছে। মাঝামাঝি দূরত্ব রেখে কাঁপা হাত শুভ্রতার মাথায় রেখে কোমল কন্ঠে বলে,
“ডোন্ট ক্রাই হোয়াইট ফ্লাওয়ার! কি হয়েছে আমাকে বলো”।
শুভ্রতা কান্নারত কন্ঠেই বলে,
“মোস্তফা স্যার মেরেছে “।
“কেনো মেরেছে?”
“ক্লাসে পড়া বুঝেনি বলে”।
মাথা থেকে হাত নামিয়ে তীব্র বলে,
“তুমি বলেছিলে পড়া বুঝোনি?”
“আমি তো সবসময়ই বলি উনার পড়া আমি একদম বুঝি না। আম্মারেও বলছি আম্মা বলে আমি পড়ায় মন দিই না। কিন্তু উনার পড়া তো বুঝিই না”
অভিমান মাখা সুরে কাদতে কাদতেই কথাটি বলে শুভ্রতা। তীব্র ক্যামেলিয়াকে নিয়ে পেছনের দিকে ফিরে দাড়ায় তারপর বলে,
“বাড়ি যাও।”
–
রহমান মিয়া বাড়ি ফিরে বারান্দায় বসে মেয়েকে ডাক দেন। শুভ্রতা আসতেই তার পাশে বসান। সামনেই শুহানা আর জাহানারা বেগম ছিলেন। রহমান মিয়া তার মেয়ের দু’হাত শুহানার সামনে তুলে বলেন,
“মোস্তাফা আমার মাইয়ারে ক্যামনে মারছে দেহো। সবসময় হুনি মাইয়া কয় ওই স্যারের পড়া বুঝে না। তুমি প্রাইভেটে দিয়া রাখছো ওই কসাই এর কাছে।”
শুহানা বেগম মেয়ের হাত ধরে দেখেন হাত এখনো ফুলে আছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“স্কুল থেকে আসার পর আমারেও তো কইলিনা একবারও”।
“তোমারে কি কইয়া লাভ আছে। ওই মোস্তফার কাছে আর পড়ামু না। চেয়ারম্যানের পোলাডা লায়লারে পরায় আমাগো শুভ্রতা আর শুভও পড়বো”।
শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে পূনরায় বলে,
“চেয়ারম্যানের পোলার কাছে পড়বা আম্মা?”
শুভ্রতা অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে তো বাবাকে বলেনি স্কুলের কথা তাহলে তার বাবা জানলো কিভাবে? মেয়ের নিশ্চুপ থাকাকেই সম্মতি হিসেবে বুঝে নেন রহমান মিয়া।
–
তীব্র বাড়ি ফিরে রাতে না খেয়েই শুয়ে পরে। মন তার ভীষন খারাপ। মধ্যরাতে ঘুম না আসায় ছাদে চলে যায়। তীব্রের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নেই। জ্বলজ্বলে তারার আকাশের নিচে এক সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তমার কথা ভাবছে। মন খারাপ করে রেলিয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে তীব্র। মূলত তীব্র লায়লার ভাইকে দিয়েই শুভ্রতার বাবাকে স্কুলের কথা বলায়। আর তাকে দিয়েই তীব্রের কাছে পড়ানোর কথা বলে তীব্র।
–
৮.
স্কুল ছুটির পর লাইব্রেরিতেই শুভ্রতা,শুভ আর লায়লা তীব্রের কাছে পড়তে বসে। এ’কদিনে শুভ্রতারও ইংরেজিতে দুর্বলতা বেশ ক্ষানিক কেটে গিয়েছে,সাথে জড়তাও। আগে তীব্রের দিকে না তাকিয়ে খুব অল্প বাক্য প্রদান করলেও এখন কথা বলার পরিমাণ সামান্য বেড়েছে শুভ্রতার তবে তার সবই পড়ার ব্যাপারে। তীব্র খুব আনন্দ নিয়ে ওদের পড়ায়। লায়লা শুভ তীব্রকে ভাই বলে সম্মেধন করায় শুভ্রতাও তীব্রকে ভাই বলেই ডাকে। যতক্ষণ শুভ্রতা সামনে থাকে ততক্ষণ যেনো খুশির জোয়ারে ভেসে বেড়ায় তীব্র। শুভ’র সাথেও ভাব জমেছে। স্কুলের বাইরেও প্রতিদিন বিকেলে মাঠে ক্রিকেট খেলে শুভ তীব্রদের সাথে। তবে স্কুল শুরুর আগে প্রতিদিনই তীব্র ক্যামেলিয়াকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্রতার জন্য। একদিন শুভ্রতা ক্যামেলিয়াকে আদর করতে করতে বলে,
“আমাকে একটা ক্যামেলিয়া ফুলের চারা এনে দিবেন?”
তীব্র শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি দিয়ে সম্মতি জানায়। তীব্র পুরো গ্রাম খুঁজে বেড়ায় ক্যামেলিয়া নামক ফুলের চারা। গ্রামে না পেয়ে সেদিনই ঢাকা ফিরে অনেক খুঁজে সেই ফুলচারা নিয়ে গ্রামে ফিরে তীব্র। তীব্র নিজের ওপর অনেক অবাক হয়। সবকিছুতে ধৈর্য নিয়ে থাকা ছেলেটা একটা মেয়ের আবদার পূরণে কত অধৈর্য হয়ে পরেছিলো । ভালোবাসা! এই ভালোবাসাই একজন মানুষকে উম্মাদ করে দেয় কাউকে করে ফেলে নিঃস্ব।
–
তিথি রহমান ছেলের সবকিছু লক্ষ করছেন। ভিতর থেকে এক অজানা ভয় গ্রাস করে রেখেছে তাকে। তালহা রহমান কি মানবেন ছেলের এই সম্পর্ক। রাজনীতিতে জড়িয়ে থাকা এই মানুষটা যে দুবছর আগেই বাড়ির পুত্রবধূ নির্ধারণ করে রেখেছেন ছেলের অজান্তে। তবে উনি এতটুকু বুঝেছেন মেয়েটিকে না পেলে পুরো দুনিয়া উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ফেলবে তার ছেলে।
চলবে…
[মতামত জানাবেন সবাই। শব্দে অথবা বাক্য চয়নে ভুল হলে তা অবশ্যই বলবেন। হ্যাপি রিডিং ]