“সাবিহার বিয়ে”
লেখক:- শ্রাবণী ঘোষ
– একসাথে ৩ পর্ব (১১+১২+১৩)
পর্ব -১১
–
মেহবুব ওর মা বাবার সাথে কোনমতে দায়সারা কথা বলতে ছিল,সাবিহা বুঝতে পেরে তাদের বলল-বাবা তোমরা এস, উনার রেস্ট দরকার।
তারপর তারা মেহবুবরের সাথে বিদায় নিয়ে কেবিন হতে বের হয়ে এল।ওর তাদের দিকে তাকানোর কোন সাহসই হচ্ছিল না উলটো বলল-মা তুমিও না কথা বলা শুরু করলে আর থামতেই চাও না, কি দরকার যেচে এত কথা বলার???
-আরে বাবা, যেচে কথা বলার কি হলো??
-আচ্ছা যাও এখন আমার কাজ আছে। একরকম জোড় করেই তাদের বিদায় করল। ওদিকে তারা যাবার পর পরই মেহবুবের মা বাবা আসল এখনতো আবার তাদের সাথেও যেতে হবে। অসহ্য বিরক্তি নিয়ে গেল তাদের মপহবুবের কাছে, ওর কাজ আছে বলে বের
হতে যাবে ওমনি ওর শাশুড়ি ওকে আকঁড়ে ধরল, ওকে যেতে দেবে
না তার পাশে বসে থাকতে হবে,সে যে নাস্তা নিয়ে আসছে তা তার হাতেই খেতে হবে। এতো মহা মুসিবত!! আবার এই মহিলাকে কিছু বলতেও পারে না, অল্প সময়ে খুবই ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে তার সাথে। অগত্যা বসতে হল,খেতে হল।
পুরোটা সময় মেহবুব অন্য দিকে ফিরে ছিল।ভাবটা এমন ছিল- দেখ বাসা থেকে বের করে দিছি ওদিকে এখন আবার আমার মায়ের হাতে খাচ্ছে। সাবিহা মনে মনে ভাবল-ব্যাটা ভাব ধরিস না নইলে আবার ঘুমের ঔষধ দিব।
ওর শাশুড়ি খাইয়েয়ি ছাড়ল না বলল তার সাথে বাসায় যেতে হবে এখন। সাথে সাথে মেহবুব ওর দিকে ফিরল।বাহ্ এতক্ষন তে আরেকদিকে ফিরে ছিলেন আসল কথায় আসতেই এখন ওর দিকে তাকাল ভাবল সাবিহা।
ও ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ওর দিকে তাকিয়ে-না মা আমার কাজ আছে। মা বাবা ফিরছে আজ ওদের সাথে দেখা করতে যাব আপুর বাসায়।
-ও হ্যা কাল তোমার বাবাকে ফোন দিয়েছিল। আচ্ছা তুমি এককাজ কর তাদের বাসায় নিয়ে আস।
-না মা এখন থাক,ঝামেলার দরকার নেই।বাসার সবাই এখন উনাকে নিয়ে টেনশনে আছে এখনি তাদের আনতে হবে না আমি বরং তাদের সাথে দেখা করে আসি। ওর শাশুড়ি ওর গাল আদর করে টিপে দিয়ে বলল-আচ্ছা মা যাও,, তুমি বিকেলের আগে এস।
-জি মা।
ভাল সমস্যা এরা দেখি ওকে ছাড়তেই চাইছে না। ওদিকে ছেলে তো কোলা ব্যাঙের মত মুখ করে আছে। ওর বোনের বাসায় যাবার পর তাদের সবার হাসি মুখ দেখে সব কস্ট ভুলে গেল।মা বাবার সাথে আড্ডা দিল, বোনের সাথে, তার বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি করল ভাবল আসলে ওর জীবনটা তো খারাপ না। কি নেই ওর??? নিজে এস্টাবলিস,একটা সাপোর্টিং ফ্যামিলি আছে, ওর ফ্যামিলির হাসিমুখ দেখলে ও রকম মেহবুবের মত সংসার ছাড়তেও রাজি, যার কাছে ওর কোন দাম নেই।
আজ অনেকদিন পর অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিল,মায়ের হাতে খেল।ভাবছিল একবার সব কাহিনীগুলো বলি পরক্ষনে সে চিন্তা বাদ দিল। তাহলে এই আনন্দের সময়টা শেষ হয়ে যাবে।
ওদিকে ওর শাশুড়ি ফোনের পর ফোন দিয়েই যাচ্ছে শেষে ওর বোনের নাম্বারে ফোন দিয়ে বলল ওকে যেতে হসপিটালে। কি আর করা মেহবুবের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে গেল হসপিটালে। গিয়ে দেখে ওদের আত্নীয়রা,মেহবুব ের কলিগ আরও অফিসাররা একের পর এক আসছে দেখা করতে,মেহবুবের তো দেখা করা,অতিরিক্ত কথা বলা বারন করেছে সাবিহা অগত্যা ওকেই সবার ফেস করতে হল, সবার সাথে ভাল বিহেভিয়ার করল। রাতের দিকে মেহবুবের বোন,ভাবি আসল।ওকে আজকে দেখে খুব খুশি হল ওরা। ভাবি কানে কানে বলল-আমি জানতাম তুমি আসবে।
তারা যাওয়ার সময় মাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু সে সাবিহার আর মেহবুবের সাথে থাকবে, শত হোক মা ই তো।সে সাবিহাকে বলল-মেহবুবের পাশের বেডে থাকবে। কি আর করা।ও মেহবুবের সাথে কথা না বলার শর্তে রাজি হল।পাশের বেডে বসে ওর মায়ের কত কথা! সাবিহা সব মনোযোগ দিয়ে শুনছে।পাশাপাশি ও মেহবুবের দিকে আড় চোখে তাকাত।দেখত সে এক দৃস্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।তাও আবার কোন চ্যানেল?? – ডিসকভারি!
এই লোকটা যে কোন ধরনের মানুষ ও বুঝতেই পারতেছিল না।ভাবি তো একদিন বলছিল ওনার দেবর খুব ভাল ছেলে, এই তার নমুনা?? কাল যা ব্যবহার করল ওর সাথে, তার পর ও তাকে ভাল বলতে নারাজ। পরিস্তিতির চাপে এখন এখানে বসা।
মাঝে মেহবুব বাথরুমে গেল, পানি খেল সব কিছুতেই ওকে সাবিহা হেল্প করল শুধুমাএ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে। মহিলার সাথে ওর একটা আলাদা ভাল লাগার সম্পর্ক হয়ে গেছে। পানি খাবার সময় ওকে মেহবুব বাঁধা দিচ্ছিল, তখন ওর মা বলল-দেখো সাবিহা আমার ছেলে লজ্জা পাচ্ছে। আমি না থাকলে বউয়ের হাতে ঠিকই খেতি।কথাটা শুনে সাবিহার একটা দীর্ঘ নিঃশাসই পরল কেবল, মেহবুবের দিকে তাকিয়ে ওর মুখটা বোঝার চেস্টা করল।কিছুই বুঝল না। রাতে ও মেহবুবকে ঔষধ খাইয়ে চলে গেল ডা লাউঞ্জে রেস্ট নিবে। আজ ইচ্ছা ছিল নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমুবে তা আর হল না। কবে যে এই দোটানা দিন গুলো শেষ হবে জানে না একসময় সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
পর্ব -১২
পরেরদিন সাবিহার ডিউটি শুরু হবার পর ও আর মেহবুবের আলাদা করে খোজঁ নিতে পারে নি,শুধু রেগুলার ফলোআপে দেখে এসেছে আর নতুন কিছু ঔষধ দিয়ে এসেছে, পুরনো কিছু ঔষধ পাল্টে। দুপুরবেলা ডিউটি শেষে যখন গেল, বাইরে থেকে শুনতে পেল হাসির শব্দ। ঢুকে দেখল মেহবুবের বন্ধুরা। ওকে দেখে তারা হৈ হৈ করে উঠল।ওকে দেখে মেহবুব আগের গম্ভীর মুড ধারন করল।ওর বন্ধুরা ওদের নিয়ে বিভিন্ন মজার মজার মন্তব্য করতে লাগল, সাবিহার ও দিকে কোন কান নেই, ও নার্সের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত। কারন ও বলেই দিছে বাইরের কারও সাথে যেন দেখা না করতে দেয়া হয় মেহবুবকে, ওর মাথার জখম সারতে টাইম লাগবে এখনি যদি বেশি কথা বলা শুরু করে তাহলে মেহবুবকে সাফার করতে হতে পারে। তাদের কাছ থেকে কাজ থাকার অযুহাতে বিদায় নিয়ে বাইরে নার্সকে বলল, -তোমাকে না নিষেধ করেছি ওনার সাথে কাউকে দেখা করতে দিবা না? -ডা. উনি নিজেই পারমিশন দিসে আমাকে। একথা শুনার পর সাবিহা আর কথা বাড়ায় নি, যেহেতু উনিই পারমিশন দিছেন তাহলে আর কি করা। ওর তো কোন অধিকারই নেই মেহবুবের উপর জোড় খাটানো আর একজন ডা. আর পেশেন্ট সম্পর্কের হিসেবে জোর খাটাবে তারও কোন ইচ্ছে নেই ওর। অন্য পেশেন্ট হলেও কথা ছিল। বিকেলের দিকে ওর মা বাবা আসল, তারা মেহবুব আর সাবিহার জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে আসছে। সাবিহা ভয়ে উপরওয়ালাকে ডাকতে থাকল, মেহবুব যেন কোন প্রকার বাজে বিহেব না করে তাদের সাথে। তাহলে মা বাবা যে মুষরে পরবেন তা ও সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু মেহবুব হাসিমুখ না করলেও একদম খারাপ ব্যবহার ও করে নি।তাদের আনা খাবার কিছু খেল। অবশ্য নিজে উঠে খেতে পারে নি, সাবিহাই খাইয়ে দিয়েছে। বাবার সামনে খুব লজ্জা পাচ্ছিল ওর।তারপর মুখও মুছে দিয়েছে। মনে মনে ভাবছে -হায় হায়, বেটাকে দেখি খাইয়েও দিচ্ছি। এটাকে তো বিষ খাওয়ানো উচিৎ।
ও একদিকে এইভেবে খুশি যে মেহবুব মাথার যন্ত্রনায় বেশি কথা বলতে পারছে না, নাহলে বকা বকি তো করতোই। মা ওর ফেভারিট খাবার কোনটা জিজ্ঞাস করল।তার নাকি কোন ফেভারিট খাবার নেই বলল।
সাবিহা মনে মনে হেসে বলল-আচ্ছা মেজর সাহেব, ফ্লেভার বলতে আপনার কিছু আছে??খুব ইচ্ছে করছিল ওর বলতে মা উনাকে এক বোতল মদ কিনে দাও, ওটা ওনার ফেভারেট। ওর হাসি হাসি মুখ দেখে মেহবুব এমন ভাবে তাকাল যেন ওকে আস্ত পিষে ফেলবে।
রাতে মা বাবা যাবার পর ও যখন মেহবুবের ফলোআপ নিচ্ছিল বলল-তুমি তখন হাসছিলে কেন? সাবিহা একটু অবাক হল কারন এই প্রথম মেহবুব ওর সাথে নরম গলায় কথা বলল,ইচ্ছে করছিল বলে আমি আপনার মতো কোলা ব্যাঙের মত মুখ করে থাকতে পারি না সব সময় কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-আপনি বলছিলেন না তখন যে আপনার কোন ফেভারিট খাবার নেই তাই হাসছিলাম। -এতে হাসার কি হলো?
-না এমনি।
-না এমনি না তুমি মনে মনেও কিছু চিন্তা করছিলা, তোমার মুখ দেখেই বুঝছি। কি চিন্তা করছিলা?
-কিছু না।
-কিছু তো একটা অবশ্যই এবং তা আমার ব্যাপারে।এবার বল।
-আরে কিছুই না, আপনার এখন এত কথা বলা উচিৎ না, ঔষধ খেয়ে ঘুমান। -আমি যদি এখন সুস্থ থাকতাম তাহলে তোমার পেট থেকে সব কথা বের করতাম।
-কিভাবে?
-সেটা তখন দেখতা।ভুলে যেও না আমার প্রফেশন কি?
-আমি কিছুই ভুলি নি আর আপনার ব্যাপারে কোনোদিন ভুলবোও না বিশেষ করে আপনার রূঢ় ব্যবহার।
-তুমি যেটার প্রাপ্য সে ব্যবহারই করেছি তোমার সাথে।
-কি?
-হ্যা।
এবার আর সাবিহা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না
-আমি কি করেছিলাম আপনার সাথে? -তুমি এখন যাও।
এই বলে মেহবুব অন্যদিকে ফিরে রইল, সাবিহার প্রচণ্ড অপমান বোধ হচ্ছিল ও আর কিছু না বলে কেবিন হতে বেরিয়ে এল। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে যে মেহবুবকে আর ওকে কথা শুনাতে দিবে না,ওর কথায় আর কাঁদবে না আজ আবার নতুন করে অপমানিত হবার পর কাঁদতে লাগল। কি লাভ হলো এই লোকের জন্য এত কিছু করে!!! নিজের অন্য পেশেন্টকে অবহেলা করে, কম সময় দিয়ে বার বার মেহবুবের কাছে গেছে। আর তার ফল এই??
পরেরদিন সকালে ও যখন ডিউটি শেষ করে ওর বোনের বাসায় যাবে তখনি ওর শাশুড়ির ফোন?
-হ্যালো মা, আমি হসপিটালে এসেছি।তুই কোথায়?
-মা,আমার এখন ডিউটি শেষ। আমি আপুর বাসায় যাচ্ছি।
-আচ্ছা, একটু পরে যা। মেহবুব তোকে ডাকছে।
ভাবল বলে দেয় যে কেন অপমান করার আর কিছু বাকি আছে??কিন্তু মহিলা কস্ট পাবে দেখে আর বলে নি। আসছি বলে ফোন রেখে দিল।
কেবিনে ঢুকে দেখে মেহবুব বিছানায় একা বসা। ওর মা নেই। তাকে না দেখে ও ফেরার জন্য পা বারাল ওমনি মেহবুব পিছন থেকে বলে উঠল
-তোমাকে আমি ডেকেছি মা বলে নি?না কানে শোন নি?
সাবিহার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হল। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
-বলেছে।
-তাহলে যাচ্ছ কেন?
-বলুন কি কথা?
-বলব, তার আগে বল আমার কথার আগে পিছে কোন কথা বলবা না,আমি ওসব পছন্দ করি না।
-আচ্ছা বলব না, বলুন।
-কাল রাতে বাজে বিহেভিয়ারের জন্য সরি।ওভাবে তোমার সাথে কথা বলা উচিৎ হয় নি।
সাবিহা তো পুরো অবাক। ব্যাটা বলে কি?? কিছু বলতে যাবে ওমনি মেহবুব বলল- কোন কথা না, যাও এখন।
ও আর কিছু না বলে ওর বোনের বাসায় চলে এল,সারাটা পথ ভাবল কি এমন হলো যে মেহবুব মিয়ার কথার ধরন এক রাতের মধ্যে চেঞ্জড!! ও মনে মনে আরও একটা সিদ্ধান্ত নিল আর তা হলো হসপিটালের আশেপাশেই একটা বাসা নিবে। এভাবে আর কতদিন চলবে!!?ওর ফ্যামিলিকে ডির্ভোসের আগ পর্যন্ত বলবে যে শাশুড় বাড়ি থেকে ও হসপিটালে আসতে কষ্ট হয়। সেটা ভেবেই ওর বান্ধবী মুমুকে নিয়ে বিকালে বাসা খুঁজতে বেরল। দুই রুমের সুন্দর একটা বাসাও পেল। ওকে এভাবে মুভ অন করতে দেখে মুমুও খুব খুশি। ঠিক করল পরের দিন যাবে ফার্নিচার কিনতে।
অবশ্য ও বাড়ির কাউকে জানানের প্রয়োজন মনে করল না শুধূ মাএ ওর শাশুড়িকে জানাল ওর বাসা নেবার কথা। শুনে মহিলা খুব কাঁদল। বার বার বলতে ছিল – মেহবুবের ঘরই তোমার ঘর। তুমি ছাড়া আমার ছেলেকে কেউ দেখে
শুনে রাখতে পারবে না। ও আর প্রতি উত্তরে কিছু বলে নি,ফোনটা কেটে দিয়েছিল, পরে ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবতেছিল ও ও কি মেহবুবের মত কঠিন মনের হলো? পরে ভাবল না তো ঠিকই আছে, জীবন আজকে যেখানে
এনে ওকে ফেলেছে মনকে কঠিন না করে উপায় কি। আজ ও মেহবুবের ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে নরম হবে কাল ও ই উলটো ওকে রাস্তায় বের করে দিবে সেদিন যেমনটা করেছিল। তখন ওর কি হবে?তাছাড়া ও মেডিকেল প্রফেশন নিয়ে
—
“সাবিহার বিয়ে”
পর্ব -১৩
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল, সাবিহা নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে, এখন আর আগের মত নিজের জীবন নিয়ে এতটাও ভাবে না।হসপিটালের ডিউটি তারপর ক্লাস এর সাথে আবার নিজের পড়াশুনা।ছুটির দিনে বোনের বাসায় ঘুরে আসা,তাদের সাথে সময় কাটানো,মেহবুবের কথা উঠলে বলত সে ব্যস্ত তাই আসে নি।অল্প অল্প করে তাদের কিছু সমস্যার আভাসও দিয়েছে যাতে পরবর্তীতে ওদের ডির্ভোসটা একটু সহজ ভাবে নিতে পারে। হ্যা ও বাড়ির সাথে কথা হয় ওর শাশুড়ি, জা মাঝে মাঝে ননদের সাথে কিন্তু মেহবুবের সাথে না। মেহবুবের নাম্বার ছিল ওর কাছে কিন্তু সেদিনের খারাপ আচারনের পর নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করে মেহবুবকে কোন দিন ফোন দিবে না, তার দরকারও নাই ওর খোঁজ নেবার।মাঝে যেটুকু ভাল সম্পর্ক হয়েছিল তা ও শুধু একটা ডা আর পেশেন্ট সম্পর্ক হিসেবে নিয়েছিল আর কিছু না।
ওদিকে মেহবুব বাসায় ফিরে, অফিসে জয়েন করে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছিল। একদিনে অনেক কাজ জমে গেছে।সাবিহার কথা মনে উঠত, বেশি মনে করাত মা আর ভাবি। উঠতে বসতে সবসময়, যতটুকু সময় বাসায় থাকত।একদিন রাতে মায়ের রুমে গিয়ে দেখে ওর মা,বোন আর ভাবি ওদের বিয়ের অ্যালবাম দেখছে, ওকেও দেখতে বলল।- তোমরা দেখ বলে চলে এল।
রুমে এসে দেখে ওর বোন ওর আর সাবিহার বিয়ের একটা ছবি অ্যালবামে বাঁধিয়ে বেডসাইড টেবিলে রেখে গেছে। ওর মেজাজ খুব খারাপ হলো, জানে এটা কার বুদ্ধিতে রাখছে ওর মায়ের। আজকে তো ওকে কানমলা দিবেই ভাবতে ভাবতে ছবিটা হাতে নিল। বাহ্ সাবিহা ম্যাডামকে দেখি বিয়ের সাঝে বেশ ম্যাচিওর লাগছে এমনিতে দেখি সে ছোট্ট খুকি,তিতুনের ছোট্ট খালা। ফটোটা রেখে এফবিতে লগ ইন করল, অনেকদিন পর ঢুকল। বিয়ের পর আর ঢোকাই হয় নি, একের পর এক সমস্যা থাকায়। ঢুকে দেখে প্রচুর এস এম এস। কেউ বিয়ের জন্য উইশ করেছে কেউবা ওর সুস্থতা জানিয়ে উইশ করেছে।সব দেখে ভাবল সাবিহাকে সার্চ দিবে। প্রথমে পেতে একটু বেগ পেল কারন ও পরিচিত কারও লিস্টে না থাকায় পরে ঠিকই পেল। ওর পুরো আইডি খুটিয়ে দেখলো, সাবিহার ছবি, ওর স্টাটাস সব।
হসপিটাল হতে ফেরার পর মন কেমন জানো ওর অস্থির থাকে, প্রথম দিকে পাত্তা দিত না ভাবত অনেকদিন বাসায় না থাকার কারন কিন্তু না ওর মন থাকত রাতের সেই সময়গুলোতে যখন ও আর সাবিহা হসপিটালের কড়িডোরে হাঁটত আর গল্প করত।মাঝে মাঝে একা একা ঘুরার ভান করে দেখত সাবিহা কি রকম পেশেন্ট দেখছে।এই মেয়েটা এমনিতে খুব অস্থির হলেও তখন কিভাবে যেন সিরিয়াস হয়ে যেত, যখন বুঝত মেহবুব ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন ওর দিকে ফিরে হেসে দিত।
এরই মাঝে একদিন অফিসের কাজে যাওয়ার পথে সাবিহার হসপিটালের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন না জানি কি মনে করে ড্রাইভারকে বলল -গাড়ি থামাও। একটু কাজ আছে, আমি আসছি।
বলে ভিতরে গেল, জানে যে আজ সপ্তাহের শুরুতে ওর ডে ডিউটি নেই কিন্তু কি মনে করে গেল।জিজ্ঞাস করে জানল সত্যি ডিউটি নেই। এরই মাঝে সাবিহার এক কলিগের সাথে দেখা, -আরে ভাইয়া আপনি?? রুটিন চেকআপে আসছেন?
-নারে ভাই। সাবিহাকে খুজছিলাম কিন্তু পাচ্ছি না।
-ফোন দিন।
এই তো সমস্যায় পরল ওর কাছে তো সাবিহার নাম্বার নেই পরে বলল-ওর ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
-আচ্ছা ভাইয়া দেখি ক্লাসে আছে কি না। এই ভেবে ওরা কলেজে যায় খোঁজ নিয়ে জানে যে সাবিহা ক্লাসে। ওর কলিগ ওকে বসতে বলল।কি জানো মনে করে মেহবুব বলল -আচ্ছা রানা তুমি আমাকে একটু সাবিহার ক্লাসে নিয়ে চল তো, আমি ঢুকব না শুধু বাইরে থেকে দেখব যে ম্যাম কেমন ক্লাস নে। সাবিহার কলিগ তো হেসে অস্থির!! -ওয়াও ভাইয়া আপনি তো খুবই রোমান্টিক। প্রথম
ে তো বউয়ের পেশেন্ট হলেন এখন আবার ক্লাস নেয়া দেখবেন!!? আচ্ছা চলেন।
তখন রানা মেহবুবকে সাবিহার ক্লাসের সামনে নিয়ে যায়। ওরা জানালা দিয়ে দেখছিল সাবিহাকে।চোখে চশমা,পরনে এপ্রোন।মেহবুব ভাবল এই মেয়েটাকে তো একেক জায়গায় একেক রকম লাগে। এরইমধ্যে সাবিহার ক্লাসও শেষ। আগে ওর স্টুডেন্টসরা বের হলো পরে সাবিহা।
ওকে দেখেই সাবিহা ভুত দেখার মত চমকিয়ে বলল-আপনি!!!?
মেহবুব প্রতিউওরে কি বলবে কিছুই ভেবে পেল না।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে ছিল আসলে কেন ও এখানে আসছে?? এমনটাতো হবার কথা ছিল না।