#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#সিজানঃ২
#পার্টঃ৫
,
,
,
,
আদ্রি দৃষ্টি যায় একজোড়া খুশি দম্পতির দিকে। কি সুন্দর মেয়েটা তার স্বামির হাতের ভাজে হাত দিয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।মুখে তার একরাশ সুখের ঝিলিক হয়তো অনেক সাধনার পরে মানুষ টাকে পেয়েছে তাই হয়তো মুখে তার এতো প্রশান্তু। এতো ভাবনার মাঝেই
হঠাৎ আদ্রি তার খুব নিকটে কারো উপস্থিতি টের পেতেই চমকে উঠলো। সাথে সাথে ঘাড় ঘুরাতে নিলেই বলিষ্ঠ এক হাত এসে ঠেকলো আদ্রির কাধে শক্ত হাতের বাধনে নড়তে অক্ষম হলো আদ্রি মাথা তার সামনের দিকেই রইলো। কানে এসে ঠেকলো পুরুষালী কন্ঠের ফিসফিস করে বলা উঠা আওয়াজ।
—মিস আদ্রি চোখ দুইটা বন্ধ করে হাত দুইটা দুই দিকে ছড়িয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করুন তো এই সৌন্দর্যে ভরপুর প্রকৃতির সৌন্দর্য।দেখবেন শান্ত নিস্তব্ধ এই প্রকৃত আপনার আচলে এনে দিবে একরাশ মুগ্ধতা শান্ত মস্তিষ্ক সুন্দর কিছু মহূর্ত
—ডাক্তার সাহেব এই প্রকৃতি যতটা সুন্দর দেখতে ঠিক তার থেকে দ্বিগুন বিনাশ কারী এই প্রকৃতির মধ্যে অদ্ভুদ শক্তি আছে মানুষ কে ধ্বংস নিশ্বেস করে দেওয়ার। এই প্রকৃতি যুতোটা শান্ত দেখতে হয় তার থেকে দ্বিগুন অশান্ত তার একেক টা উপকরন যা এনে দিতে পারে মানুষের জীবনে বিধ্বংস।
নির হাসলো মনে মনে আদ্রির এহেন কঠিন বাক্য শুনে কিন্তু মুখটা আগের ন্যায় গম্ভির আর শান্ত।
—প্রকৃতির সাথে শত্রুতা দেখছি ভিষন গভির
নির এর রসিকতা পূর্ন্য বাক্য শুনে হাসলো আদ্রি। সে হাসি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখলো একজন সে জানে এই হাসির মাঝে লুকিয়ে আশে এক রাশ বিষন্নতা না পাওয়া হাজারো গল্প। যে গল্পের বইয়ের একেক এক টা পাতা তাকে ভিষণ ভাবে পুরাছে।
—শত্রুতা নই ডক্টর সাহেব ধরে নেন এই ভয়ংকর বিধ্বংসী প্রাকৃতির সকল বিধ্বংস কেউ নিজের মাঝে কেউ স্থান দিয়েছে।যার উত্তাপ সূর্যের মতো পক্ষর যে তার নিকটে আসার চেষ্টা করবে তাকে জ্বলিয়ে পুরিয়ে ছাড়খার করে দিবে।
নির হাসলো আদ্রির আরেকটু নিকটে চলে গেলো তার বুক যেয়ে ঠেকলো আদ্রির পিঠে।সব কিছু বুঝেও চুপ করে রইলো আদ্রি। কে জেনো এই মহূর্তে এই লোকটার থেকে দূরত্ব যেতে ইচ্ছা করছেনা মানসপটে ভেসে উঠলো তের কিংবা চৌদ্দ বছরে এক ছেলে হাস্যজ্বল ছবি তার হাতে রয়েছে ছোট একটা মেয়ের হাত। যার চোখ দুইটা পানিতে টইটুম্বুর হয়ে আছে। যা দেখে মন খুলে হাসছে ছেলেটি। আপন মনেই হাসলো আদ্রি। তার হাসি দেখতে পেলোনা তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবোকটা
—এই সূর্যের উত্তাপ শিথল হয়ে যায় চাদের সামনে।চাদের বুকে আসতেই সে শান্ত।তখন তার তাপ পারেনা চাঁদ কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে। কিন্তু চাদের ক্ষমতা থাকে জ্বলতে সূর্যকে ঠান্ডা করে দিতে।সূর্যের দাপট সবার সামনে থাকলেও সে চাদের কাছে পরাজিত।
—ভুলে যেয়েন না চাঁদ কিন্তু সূর্যের আলোতেই আলোকিত। চাঁদ সূর্য বিহীন অসম্পূর্ণ তারা দুইজন দুইজনকে পরিপূর্ণ করে।
—এই জন্যই তো সবচেয়ে সুন্দর মহূর্তটা সন্ধ্যাতেই দেখতে পাওয়া যায় কারন তখন দুইজন এক সাথেই নিজের সৌন্দর্য বিলাই।
নির হাতের ইশারায় সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করে। আদ্রি তার হাতের ইশারায় সামনে তাকিয়ে দেখে সূর্য ডুবছে আর চাঁদ উঠছে আকাশের বুকে দুইজনার স্থান কি সুন্দর আর মোহনীয় লাগছে মহূর্তটাকে।
,
,
,
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে রেয়ান। চোখ মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। বাবা হারা আজ এতিম সে। চাইলেও পারবেনা বাবা নামক লোকটাকে এক নজর দেখতে। কতো কথা জমে ছিলো তার বুক পাঞ্জরে বাবাকে ঘিরে। কতো কিছু ছিলো তাকে বলার কতো অভিযোগ তুলে রেখেছিলো একদিন সময় হলে সবটা অভিযোগ তুলে ধরবে বাবার সামনে কিন্তু তা সম্ভব না। কারন বাবা নামক মানুষ টা এখন তার থেকে বহুদূরে।শেষ কবে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তার জানা নেই হয়তো ছোট বেলাই ছিলো তার বাবার শেষ আলিঙ্গন।
হাজারো ভাবনার মাঝেই কোমল দেহ এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রেয়ানের বলিষ্ঠ শক্ত পুরাষালী দেহ। রেয়ান জানে এই ছোয়ার্র অধিকারী কে। আজ ইচ্ছা করছেনা দূরে সরাতে এই মহূর্তে তার যে বড্ড প্রয়োজন কারো সান্নিধ্যে।
—মাইশা চলে যা এখান থেকে
—আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে সবার সামনে নিজেকে স্ট্রোং দেখালেও তুমি মনে মনে ভেংগে পড়েছো সেটা জানি আমি আজকে প্রিয়সীর হওয়ার আবদার নিয়ে না আজকে একজন বন্ধু হয়ে এসেছি তাকে কাধ দিতে এইটুকু সুযোগ কি দেওয়া যাবে না আমাকে।নাকি বন্ধুও রঙ দেখে বাছাই হয়
মাইশার কন্ঠে ছিলো স্পষ্ট অভিমান। রায়ান বুঝে মেয়েটার তার আচরণে অনেক কষ্ট পায়। কিন্তু সে চায়না তার এই অনিশ্চিত জীবনে কাউকে জড়াতে যেখানে নিশ্বাসের বিশ্বাস নেই বাড়ির চৌকাঠে মারানোর পরে এটার ঠিক থাকেনা যে আদৌ ফিরতে পারবে কি না সে জীবনে কি করে জড়ায় অন্য কাউকে।
রেয়ান উলটো দিকে ঘুরতে মাইশা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে থাকায় কিছুটা নিচু হয়ে ছিলো যার কারনে মাইশা রেয়ান এর গলা জড়ায় ধরে রেয়ান হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরে এক হাত দিয়ে মাইশার কোমড় জড়িয়ে ধরে।রেয়ান এর উতপ্ত নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে মাইশার ঘাড়ে। মাইশার আলিঙ্গন আরো গাঢ় হয়। রেয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে মাইশাকে নিজের সাথে আরেকটু গভির ভাবে আকড়ে ধরে
——–
পাশাপাশি হেটে চলেছে দুইজন মানব মানবী।দুইজনার মাঝে বিস্তর তফাৎ। নিস্তব্ধ পরিবেশ টাকে আর এক দাফ নির্জন করে তুলেছে দুইজনার মাঝে বিরাজিত মৌনতা
—আপনি কি শুধুই সাইকোলজিস্ট
আদ্রি এই প্রশ্নে খানিকটা ভরকে গেলেও চেহারা স্বাভাবিক ই রাখলোনা। আদ্রি একমনে তাকিয়ে ছিলো লোকটার প্রানে সে জানতে চাইছিলো তার এহেন প্রশ্নে সামনের মানুষ টার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে কিন্তু সামনের মানুষ টার স্বাভাবিক আচরণে ক্ষুব্ধ হলো অত্যান্ত মায়ার অধিকারীনি।
—নাহ।আমার খুব কাছের কারো ইচ্ছা ছিলো আমার শরীরে সাদা এপ্রোন দেখবে।শুধু তার ইচ্ছা পূরণ করতে আর আমার মতো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ কে নতুন করে বাচাতেই এই পেশা বলতে পারেন শখের বসে
—তাহলে আসল পেশা কি
—মানুষ খুন করা। সে রক্ত দেখে মন কে তৃপ্তি দেওয়া
আদ্রি হাসলো মনে মনে। উপরে ভয়ার্ত একটা লুক ক্রিয়েট করে নির এর সামনে নিজেকে দারুন অভিনেত্রী হিসেবে প্রেজেন্ট করলো কিন্তু সে অভিনয় চট করে ধরে ফেরলো ধ্রুত নির। ঈগলের চোখের ন্যায় বাজচোখের আড়ালে আদৌ কিছু যায়
—অভিনয় আপনার সাথে যায়না চেষ্টাও করবেন না। আর এটাও জানি কালকে আপনি আমার অফিসে গেছিলেন আর সেখানেই আমার ব্যানার দেখে আজকের এই প্রশ্ন
এবার সত্যিই চমকালো আদ্রি সে যে গেছিলো সেটা এই লোক জানলো কি করে এটাই মাথায় ঢুকছেনা তার কারন সে নির এর ব্যানার দেখেই সেখান থেকে প্রস্থান করেছিলো নিজের সিভি জমা দিয়ে।
—আমার আশেপাশে কি ঘটে কার দ্বারা ঘটে কেন ঘটে সব কিছুই আমার জানা থাকে।আমার আশেপাশে আমার জায়গায় তারাই আসতে পারে যাদের আমি।অনুমতি দেই। ঠিক ১৫ বছর বয়স থেকে এই খেলা খেলি আমি। যে বয়সে মানুষ কে মাটির ন্যায় বলা হয় যে এই বয়সে তাকে যে আকার দেওয়া হবে সে আকার ই গ্রহন করবে আমার সাথেও ঠিক সেটাই হয়েছে। কিন্তু বলতে হবে তোমার পারফরম্যান্স অনেক ভালো কিন্তু এতোগুলো কোম্পানি থেকে বের করে দেওয়ার রিজান কোনটা।
—আমার জন্মদাতার স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ। তার পায়ের নিচে ফেলে রাখার ছোট প্রচেষ্টা যাতে আমি সর্বদা তার পায়ের নিচে কিন্তু সে জানেনা তার এইসব কর্মের ফল হিসেবে তিনি কি তৈরি করেছেন নিজ হাতে
নির চুপ করে শুনলো হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে এই কথা গুলোর মানে। হয়তো কিছুটা বুঝতেও পেরেছে আর বাকীটা থেকে গেছে কুয়াশার আড়ালে যা ভেদ করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হবে,,,,,,,,
চলবে!