সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১৩+১৪

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ফোনের মধ্যে জেমির কান্ড দেখে হাসছে এশান।হ্যাঁ সেই এটা করেছে আর জেমির বাড়ির একটা কাজের লোক লুকিয়ে ভিডিও করে এশানকে পাঠিয়ে।অবশ্যই এর জন্য সে টাকাও নিয়েছে।তবে এতে এশানের এতো মাথাব্যথা নেই।সে তো জেমির কান্ড দেখেই খুশি।

” এবার বুঝতে পারলে তো মিস জেমি প্রিয় জিনিসটার কোন ক্ষতি হলে কেমন লাগে?তোমার নিশ্চয়ই এখন খুব রাগ হচ্ছে,ইচ্ছে করছে ওই ব্যক্তিটাকে মেরে ফেলতে যে তোমার গাড়ির এমন অবস্থা করেছে।তাহলে একবার ভেবে দেখো আমার কি পরিমাণ রাগ হয়েছিল যখন আমি জানতে পেরেছি তুমি আমার সুঁইকে আঘাত করেছো তাও জেনে শুনে।আমারো তোমাকে খুন করতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু আমি নিজেকে সংযত করেছে।”

এশান আবারো জেমির ভিডিওটা দেখতে থাকে।জেমিকে এতোটা ডেস্পারেট হতে দেখে এশান মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছে।

কলেজে এসে জেসি ধুপধাপ পা ফেলে কায়াসার ক্লাস রুমে আসে।কায়াসা তখন আরোহী আর ইতির সাথে কথা বলছিল।জেমি এসে কায়াসার হাত ধরে তাকে একটা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে আসে।হঠাৎ জেমির এরকম কাছে সবাই থতমত খেয়ে যায়।আরোহী আর ইতি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এদিকে,

খালি ক্লাস রুমটাতে নিয়ে এসে জেমি দরজা বন্ধ করে দেয়।তারপর কায়াসা যে হাতে কাল ব্যথা পেয়েছিল সেই হাতটা পেছনে মুচড়িয়ে ধরে।

” আপু কি করছেন?ছাড়ুন আমাকে।লাগছে আমার।”

” আজ তোকে আমি ছাড়বোনা।আমি জানি এই কাজটা তোরই।”

” কোন কাজের কথা বলছেন আপু?”

” আমার গাড়ির ওই রকম বাজে অবস্থা তুই করেছিস না?সত্যি করে বল।নয়তো আমি তোকে জানে মেরে দেবো।”

” আপু আপনি কি বলছেন আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা।”

জেমি এবার কায়াসার হাত ছেড়ে ওর গাল চেপে ধরে।

” আমি যখনই তোর সাথে কিছু করিই সেদিনই আমার সাথেও কোন না কোন দুর্ঘটনা হয়।প্রথম বার তো আমি ভেবেছিলাম এমনিতেই হচ্ছে কিন্তু এবারে ঘটনায় আমি সিউর যে যা হচ্ছে সব তোর কারণে হচ্ছে নয়তো তুই করাচ্ছিস এসব।”

কায়াসা অনেক কষ্ট করে জেমির হাত নিজের মুখে থেকে সরাই।

” কিসের কথা বলছেন আপু?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

” প্রথম যেদিন আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছিলাম সেইদিনই রাতে কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছিল।যার কারণে আমি খুব বাজেভাবে পা ব্যাথা পেয়েছিলাম।আমি প্রথমে তোকে সন্দেহ করলেও পরে ভাবলাম হয়তো এক্সিডেন্টলি হয়েছিল।কিন্তু কালই আমি তোকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারলাম আর আজই আমার গাড়িরটা বাজে অবস্থায় পাওয়ার গিয়েছে।”

” তার মানে কাল আপনিই আমাকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছিলেন?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

” হ্যাঁ মেরেছি তো?”ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে জেমি। ” শোন এবার সত্যি সত্যি বলে দে যে তুই আমার গাড়ির এই অবস্থা করেছিস।”

” আমি কিছু করিনি।আর আপনি বলার আগ পর্যন্ত আমি তো জানতামই না ওটা আপনি ছিলেন।আমি তো মনে করেছিলাম ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।”

” তোকে আমি এবার আর ছেড়ে দেবোনা।আমি তোর উপর কাড়া নজর রাখবো।যদি আমি জানতে পারি এসবের পেছনে তুই আছিস তাহলে সেইদিনই হবে তোর শেষ দিন।মনে রাখিস।” কথাগুলো বলে কায়াসাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় জেমি।কায়াসা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে প্রথম থেকে জেমির বলা কথাগুলো ভাবছে।

কিছুক্ষণ ভাবার পর কায়াসা কাছে সব হিসাব মিলে যায়।আর সবকিছু বুঝতে পেরেছে কায়াসার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।সে বুঝে গিয়েছে এই কাজ আর কারো না সুতো নামের ওই সাইকোটার।কায়াসার মাথা এখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে বুঝতে পারছেনা সে কি করবে।তার আশেপাশে দুটো পাগল,সাইকো প্রকৃতির মানুষ আছে।দুজনেই মানুষকে আঘাত করার আগে একবারে জন্যও ভাবেনা।কায়াসা চুপচাপ কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিতে থাকে।

অনেকক্ষণ মুখে পানি দিয়ে নিজেকে শান্ত করে ক্লাসে ফিরে আসে কায়াসা।ততক্ষণে ক্লাসে স্যার চলে এসেছে।পারমিশন নিয়ে কায়াসা ক্লাসে প্রবেশ করে।কায়াসা সিটে বসতেই ইতি আর আরোহী তাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।কায়াসা তাদের বলে পড়ে বলবে।

ক্লাস শেষ হলে ইতি আর আরোহী কায়াসা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে জেমি তাকে এভাবে নিয়ে গেলো কেন।কায়াসা প্রথমে ভেবেছিল তাদের দুজনকে সব বলে দেবে কিন্তু পড়ে চিন্তা করলো কাউকে বলার দরকার নেই।তাই কায়াসা তাদের এটা-ওটা বলে ম্যানেজ করে নেয়।

রেস্টুরেন্টে বসে আদ্রিকের অপেক্ষা করছে কায়াসা।আজ ছুটির দিন বিদায় কায়াসা সকালে টিউশনে গিয়েছিল।ফেরার সময় আদ্রিক তাকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে নাম বলেছে আর বলেছে সেখান অপেক্ষা করতে।কায়াসা অনেকবার কারণ জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু আদ্রিক বলে সে দেখা হলে বলবে।

সাইডের একটা টেবিলে বসেছে কায়াসা।এখানে পুরোটা কাঁচের দেয়াল।যার কারণে উপর থেকেই নিচের গাড়ি,মানুষ সব দেখা যাচ্ছে।আদ্রিক এখনো আসেনি।কায়াসা বসে বসে নিচে মানুষের আসা-যাওয়া দেখছে।হঠাৎ কায়াসার চোখ আটকে যায় একজন মানুষ উপর।কায়াসা ভালো করে দেখে না সে ঠিকই দেখেছে।ওটা আরোহী ছিল।কিন্তু কথা সেটা না কথা হচ্ছে আরোহী একটা ছেলের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছে।কায়াসা তাড়াতাড়ি বের হয়ে নিচে নেমে আসে কিন্তু নিচে এসে সে কাউকে দেখতে পাইনা।

” আমি কি তবে ভুল দেখলাম?” নিজে নিজে ভাবতে থাকে কায়াসা।ফোনের রিং টং শুনে কায়াসা নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।কায়াসা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রিক ফোন দিয়েছে।আদ্রিকের ফোন দেখে কায়াসা আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে চলে যায়।

” এতো দেরি হলো কেন আসতে?” কায়াসা প্রশ্ন করে।

” আমি তোমার আগে এসেছি।আমার ফোন দেওয়ার পরই তুমি এসেছো।তাই তুমি দেরি করে এসেছো।” ভাব নিয়ে বলে আদ্রিক।আদ্রিকের ভাবের মধ্যে এক বাতলি কোঁকা কোলা ঢেলে দিয়ে কায়াসা বলে, “সরি মিস্টার আদ্রিক,ইউ আর রং।আপনাকে দুঃখের সাথে জানানো হচ্ছে যে আপনি আসার আরো ২১ মিনিট আগে এসেছি আমি।আমি আমার পরিচিত একজনকে দেখেছি বিদায় তার সাথে দেখা কারার জন্য নিচে গিয়েছিলাম।আর তখনই আপনি এলেন।”

” কি!” অবাক হয়ে বলে আদ্রিক।

” জ্বি হ্যাঁ।বিশ্বাস না হলে এখানের একজন স্টাফকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

” না থাক তার দরকার নেই।তুমি যে কনফিডেন্স নিয়ে বলছো আমার বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে।”

” আচ্ছা এবার বলুন কেন ডেকেছেন হঠাৎ?আর আপনার হাত কি ঠিক আছে এখন?”

” হ্যাঁ আমার হাত এখন পুরো ফিট এন্ড ফাইন।আর আমাকে এতোটা কেয়ার করার জন্য আজ আমার তরফ থেকে তোমার জন্য ট্রিট।তাই এখানে ডেকেছি।”

” এসব আপনি কি বলছেন?আমি কবে আপনার কেয়ার করলাম?আমি তো শুধু আপনাকে হসপিটাল থেকে বাসাই নিয়ে এসেছি আর একবার দেখার জন্য গিয়েছি।”

” সেটাও অনেক করেছো।তুমি যতটুকু করেছো সেটুকু পর্যন্ত অন্যকেউ করেনি।তাই আমি এর বিপরীতে তোমাকে ট্রিট দিচ্ছি।এবার তুমি বসো আমি খাবার অর্ডার করে আসছি।”

আদ্রিক খাবার অর্ডার করতে চলে যায়।কায়াসা বাইরে তাকিয়েই আবারো মানুষজন দেখতে থাকে।আদ্রিক কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে।তারপর তারা হালকা-পাতলা তাদের কাজ,পড়াশোনা এসব নিয়ে কথা বলতে থাকে।তাদের কথার মাঝেই খাবার চলে আসে।খাবার দেখে তো কায়াসার চোখ কপালে।কারণ তারা মাত্র ২ জন মানুষ আর খাবারগুলো ৪ জনের,যদি ছোট বাচ্চা থাকে তো অনায়াসে ৫ জন খেতে পারবে।

” এতো খাবার কেন অর্ডার করেছেন আপনি?এতো খাবার কে খাবে?”

” কে খাবে সেটা পড়ে দেখা যাবে।তুমি খাওয়া শুরু করো।”

কায়াসা অনেক হেজিটেশন নিয়ে খাওয়া শুরু করে।তাদের দুজনের খাওয়া শেষ হলে আরো অনেক খাবার বেঁচে যায়।

” মিস্টার আদ্রিক একটা কথা বলবো?”

” হ্যাঁ বলো।” টিস্যু দিয়ে হাত মুচতে মুচতে বলে আদ্রিক।

” এই খাবারগুলো কি প্যাক করা যাবে?” অনেকটা হেজিটেশন নিয়ে বলে কায়াসা।কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক এর বিপরীতে কোন প্রশ্ন করেনা।সে ওয়েটারকে বলে বাকি খাবারগুলো প্যাক করিয়ে নেয়।

কায়াসার হাতে বাকি খাবারগুলোর প্যাকেট রয়েছে।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আদ্রিক তাকে বলে গাড়িতে উঠতে কিন্তু কায়াসা বলে তার নাকি কিছু কাজ আছে।তাই সে হেঁটেই যাবে।আদ্রিকেও আর কিছু না বলে তার গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আদ্রিক চলে যেতেই কায়াসা রাস্তা পার হয়ে অপরে যায়।যেখানে ২টো বাচ্চা আর একটা মহিলা বসে ছিল।কায়াসা গিয়ে খাবারগুলো তাদের দেয়।রেস্টুরেন্টে যখন কায়াসা বসেছিল তখনই সে তাদের দেখে।কায়াসা ভেবেছিল সে নিজে থেকে কিছু কিনে দেবে কিন্তু যখন দেখে তাদের অনেক খাবার বেঁচে গিয়ে তখন সে সেটাকে আর নষ্ট করেনা।এতে খাবারো নষ্ট হলোনা আর ওনারাও খাবার পেলো।এদিকে কিছুটা দূর থেকে কায়াসার কাজ দেখছে আদ্রিক।সে দেখতে চেয়েছিল কায়াসা আসলে কি করবে।কায়াসার কাজ দেখে আদ্রিক মুচকি হাসে।এদিকে শুধু আদ্রিকটা আরো কেউ একজন দূর থেকে কায়াসার দিকে নজর রেখে চলেছে।#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসে পৌঁছে কায়াসা।ফ্রেশ হয়ে এসে সে টিভি দেখতে বসে।এদিকে ফোনের স্ক্রিনে কায়াসাকে দেখছে এশান।

” সুঁই জান আমি তোমার সাহস দেখে মুগ্ধ।কত সহজে তুমি একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে লান্ঞ করলে।তোমার মনে বিন্দু পরিমাণ ভয় ছিল না যে এই ব্যপারে আমি জানতে পারলে কি হবে।তবে আমি তোমাকে এই বারের মতো ক্ষমা করে দিলাম কারণ আজ তুমি একটা ভালো কাজ করছো।খাবার অপচয় না করে একজন পথশিশু আর তার পরিবারের মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করেছো।তোমাকে তো ক্ষমা করে দিলাম তোমার ভালো কাজের জন্য কিন্তু তোমার সাথে যে ছিল তার তো কোন একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

এশান নিজের পকেট থেকে আরেকটা ফোন বের করে কিছু টাইপ করে।তারপর মোবাইলটা সাইডে রেখে দিয়ে আবারো কায়াসাকে দেখতে থাকে।

সন্ধ্যাবেলা,

হসপিটাল থেকে সবে মাত্র বাড়িতে ফিরে আদ্রিক।আদ্রিককে দেখে কুকি দৌড়ে আদ্রিকের কাছে চলে আসে।সে এতক্ষণ আদ্রিকের অপেক্ষায় সিঁড়ির মাঝে বসে ছিল।কুকিকে দেখে আদ্রিকের মন ভালো হয়ে যায়।সে কিছুক্ষন কুকির সাথে খেলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হওয়ার পর আদ্রিকের নিজেকে একটু হালকা লাগছে।আদ্রিকের নিজের ফোনটা বের করে ওয়াইফাই কানেক্ট করে।ওয়াইফাই কানেক্ট হওয়ার সাথে সাথে আদ্রিকের ফোনে একটার পর একটা নোটিফিকেশন আসতে থাকে।নোটিফিকেশনের চাপে তো আদ্রিকের ফোন কিছুক্ষণের জন্য হ্যাং হয়ে গিয়েছিল।যখন নোটিফিকেশনের টুংটাং আওয়াজ বন্ধ হয় তখন আদ্রিক নিজের প্রয়োজন কাজ করতে প্রস্তুতি নেই।কিন্তু মেসেজ বক্সের মধ্যে শতশত মেসেজের মধ্যে থাকা একটা মেসেজের দিয়ে আদ্রিকের চোখ আটকে যায়।আদ্রিক ভ্রু-কুচকে মেসেজটা ওপেন করে।মেসেজ পড়ার পর আদ্রিকের কপালে ভাজ পড়ে যায়।

বাড়ির কাজ শেষ করে সবে মাত্র পড়তে বসেছে কায়াসা।কিন্তু তার আর পড়া হলোনা।পড়ার ব্যঘাত ঘটাতে তার ফোন বেজে উঠলো।কায়াসা ফোনের স্ক্রিনে উঁকি মেরে দেখে আদ্রিক ফোন দিয়েছে।এই অসময়ে আদ্রিকের ফোন দেখে কায়াসার ভ্রু-কুচকে যায়।হাজারো ভাবনা চিন্তা নিয়ে কায়াসা ফোনটা রিসিভ করে।

” হ্যালো।”

” কায়াসা?”

” হ্যাঁ মিস্টার আদ্রিক বলুন।”

” ব্যস্ত আছো?”

” না।বলুন আপনি কেন ফোন দিয়েছেন?”

” আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?”

” আরে কত বার বলবো আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।”

” আচ্ছা মানলাম তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।কিন্তু তোমার জানা মতে এমন কেউ কি আছে যে তোমাকে ভালোবাসে।”

” না সেরকম কেউ নেই।আপনি আবারো এসব প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছেন বলুন তো?”

” আচ্ছা দাঁড়াও আমি তোমাকে মেসেজ একটা স্ক্রিনশট পাঠাচ্ছি,ওটা দেখো।তারপর না হয় বাকি কথা বলবো।”

কায়াসা মেসেজ চেক করে আদ্রিকের পাঠানো স্ক্রিনশটটা দেখতে থাকে।স্ক্রিনশটে একটা মেসেজ দেখা যাচ্ছে।

” প্রথমবারে কথা কি ভুলে গিয়েছিস?সেইদিন তোকে মারিনি,ভেবেছিলাম তুই শুধরে যাবি।কিন্তু না,তুই তো শোধরানোর পাত্র নস।তোকে আমি সেইদিই বলেছিল আমার কায়ুপাখি থেকে দূরে থাকবি কিন্তু তুই আজ কি করলি?ওর সাথে বলে একসাথে লান্ঞ করলি।হা….শোন আমি তোকে এবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি কারণ তুই আমার কায়ুপাখিকে অনেকবার সাহায্য করেছিস আর ও তোকে অনেকটা ভরসা করে।কিন্তু মনে রাখিস নিজের লিমিট যদি বেশি ক্রস করিস তো তোমাকে মারতে আমি দু-বার ভাববোনা।” এটাই লেখা ছিল ওই মেসেজটাই।মেসেজ পড়ে কায়াসার হাত-পা হঠাৎ হয়ে যায়।হঠাৎ করেই কায়াসার হালকা হালকা ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো।

” কায়াসা?কায়াসা?”

ফোনের অপরপাশ থেকে আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা আস্তে আস্তে ফোনটা কানের কাছে নেয়।

” বলুন।”

” দেখেসো?আমি তোমাকে সেইদিনও বলেছিলাম,অজ্ঞান হওয়ার আগে আমাকে কেউ থ্রেট দিয়েছেল।কিন্তু তুমি বলেছিলে এসব আমার মনে ভুল।কিন্তু এটাও কি আমার মনে ভুল?এবার তুমি বলো এটা কে?তুমি কি কোন বিপদে আছো?কায়াসা কোন সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতে পারো।আমি আমার সব দিয়ে তোমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”

আদ্রিক এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু কায়াসার সেদিকে মন নেই।সে একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

” কায়াসা তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছে?কায়াসা?”

” আমি আপনার সাথে পরে কথা বলবো।” আদ্রিককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কায়াসা ফোনটা কেটে দেয়।সে এখনো একদৃষ্টিতে বইয়ের তাকিয়ে আছে।

আজ সবার আগে ক্লাসে এসেছে কায়াসা।ইতি বা আরোহী কেউই এখনো আসেনি।কায়াসা নিজের মতো বই পড়ছে সময় কাটানোর জন্য।কিছুটা সময় পর আরোহী চলে আসে।

” ওহো আমাদের বিদ্যাসাগরের নাতি।”

” ও তুই এসে পড়েছিস,বস।” কায়াসা সরে আরোহীকে বসার জায়গা করে দেয়।আরোহী বসে পড়ে কিন্তু কায়াসার মনোযোগ এখনো তার বইয়ের দিকে।আরোহী বিরক্ত নিয়ে কায়াসার বইটা বন্ধ করে দেয়।

” এতো পড়তে হবেনা,বাসায় পড়িস।এখন আমার সাথে কথা বল।”

কায়াসা আরোহী থেকে বইটা নিয়ে ব্যাগের মধ্যে রাখে।তারপর শান্তদৃষ্টিতে আরোহীর দিকে তাকাই।

” কি হলো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”

” তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।সত্যি সত্যি উওর দিবি তো?”

” আরে হ্যাঁ জিজ্ঞেস করবি কর।”

” তুই কাল দুপুরে কোথাই ছিলি?”

কায়াসার প্রশ্ন শুনে আরোহীর মুখটা শুঁকিয়ে যায়,যা কায়াসা খেয়াল করে।

” কি হলো বল কাল দুপুরবেলা তুই কোথাই ছিলি?”

” কোথায় আবার থাকবো?আমি তো বাসায় ছিলাম।”

” সত্যি তো?”

” হ্যাঁরে বাবা সত্যি।”

” ও তাহলে হয়তো আমিই ভুল দেখেছিলাম।”

” কি দেখেছিলি তুই?”

” আমার কেন জানিনা মনে হয়েছিল,আমি তোকে কাল একটা ছেলের সাথে দেখেছিলাম।”

কথাটা বলার পর আরোহীর চোখে-মুখে একটা চাপা ভয় খেয়াল করে কায়াসা।

” আরে না কি বলছিস তুই?আমি তো কাল বাড়িতেই ছিলাম।তুই হয়তো অন্য কাউকে দেখেছিস।”

” হুম আমিও সেটাই ভাবছি।” কায়াসা মুখে এটা বললেও তার মনের মধ্যে এখনো আরোহীকে নিয়ে সন্দেহ রয়েই গিয়েছে।

কলেজের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসে কায়াসার জন্য অপেক্ষা করছে আদ্রিক।তবে তার বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি,তার আগেই কায়াসা চলে এসেছে।

” বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাইনি তো আপনাকে?”

” না,আমিও কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।” একদম শান্ত গলায় বলে আদ্রিক।

” আজ আবার কেন ডেকেছেন?”

” কালকের কথা মনে আছে?”

” কোন কথা?”

” কালকে যে মেসেজের কথা বলেছিলাম?”

মেসেজের কথা শুনে কায়াসার মুখ শুকিয়ে যায়।

” হুম,মনে আছে।”

” আমি সেই ব্যপারে তোমার সাথে কথা বলার জন্য তোমাকে এখানে আসতে বলেছি।এই নাও মেসেজটা তুমি আবারো দেখো।” আদ্রিক নিজের ফোনটা কায়াসার দিকে এগিয়ে দেয়।ইচ্ছে না থাকার স্বত্তেও কায়াসা আবারো মেসেজটা পড়ে।মেসেজ পড়ে কায়াসা ফোনটা আদ্রিকের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

” আপনি তো এই নম্বরে ফোন করে তার সাথে কথা বলে দেখতে পারতেন,তাইনা?”

” তুমি বলার আগেই আমি কাজটা করেছি।কিন্তু নম্বরটা বন্ধ এবং কি নম্বরটার লোকেশন পর্যন্ত ট্রেস করা যাচ্ছে না।এগুলো একটাও সুবিধাজনক না।তাই আমি তোমাকে এখানে ডেকেছি।আমি সিউর তুমি এই বিষয়ে কিছু হলেও জানো।এবার আমাকে বলো এসব কি হচ্ছে?”

কায়াসা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।

” কি হলো কিছু তো বলো?”

” কি বলবো আমি?কিছু জানলে তবেই না বলবো।আমি এই বিষয়ে কিছু জানি।প্লিজ আমাকে আর এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।” কিছুটা চিৎকার করে বলে কায়াসা।সে এই সুতো নামক মানুষ কাজে প্রচুর বিরক্ত।

” ওকে ওকে কুল ডাউন,কুল ডাউন।আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেবোনা।এই নাও পানিট খাও।”

কায়াসা পানি খেয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে থাকে।

” চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”

কায়াসাও আর কোন কথা না বাড়িয়ে আদ্রিকের পেছন পেছন তার গাড়িতে উঠে বসে।এদিকে দূর থেকে কেউ তাদের দুজনের উপর যে নজর রেখে চলেছিল তা তারা দুজনের কেউ জানেনা।সে আদ্রিক আর কায়াসার কিছু ছবিও তোলে।

চলবে…..

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here