সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১১+১২

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বাসায় এসে রাগে গজগজ করতে থাকে কায়াসা।সে রাগ কমানোর জন্য পরপর ৩ গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে তবুও তার রাগ বিন্দুমাত্র কমেনা।কায়াসা এবার রাগে চিৎকার করে উঠে,যা প্রতিফলিত হয়ে কায়াসার কানেই আসে।

সোফায় বসে কায়াসা মাথায় দিয়ে চিন্তা করতে থাকে আসার আগে আদ্রিক তাকে কি বলেছি।
.
.
.
” আমি আসছি এখন।নিজের খেয়াল রাখবেন আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করেবেন।আমি আসার চেষ্টা করবো।” এটা বলে কায়াসা চলে যেতে নেয়।তবে আদ্রিক তাকে তাকিয়ে দেয়।

” আচ্ছা শোন।তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।”

” জ্বি বলুন।”

” তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?বা তোমাকে কেউ ভালোবাসে?”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসার কপাল আপনাআপনি কুচকে যায়।

” এসব কি বলছেন আপনি?” কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে কায়াসা।

” বলোনা।থাকলে সত্যিটা বলতে পারো,আমি কিছু মনে করবোনা।”

” না আমি কাউকে ভালোবাসিনা।”

” তাহলে হয়তো তোমাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবাসে।”

” (উনি এসব কি বলছেন?উনি কি কোনভাবে ওই পাগল খুনি সুতোর কথা বলছেন নাতো?—মনে মনে)এসব আপনি কি বলছেন বলুন তো?আর কেনই বা হঠাৎ এসব কথা বলছেন?”

” তোমাকে বললে হয়তো তুমি বিশ্বাস করবেনা কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটাই সত্যি।এরকমই কিছু হয়েছে।”

” কি হয়েছে?যার কারণে আপনি এরকম কথা বলছেন?”

” কাল এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমি রাস্তা পড়েছিলাম সেসময় আশেপাশে কেউ ছিলনা,তখন আমার একটুআকটু জ্ঞানও ছিল।আমার মনে হচ্ছে তখন কেউ আমার কানে কানে বলেছিল “আমার কায়াপাখি থেকে দূরে থাক।নয়তো এরফল এর থেকেও খারাপ কিছু হবে।আমি চাইলে এখনই তোকে মেরে ফেলতে পারি কিন্তু মারবোনা।কারণ তুই আমার কায়াপাখির সাহায্য করেছিলি তাকে ওই মাতাল ছেলেগুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে।কিন্তু এটাই শেষবার এরপর আর তুই বাঁচবিনা।”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।সে ভাবতেও পারছেনা তার আশেপাশে থাকার জন্য আদ্রিক এতোবড় একটা বিপদের মধ্যে পড়েছিল।

” এইযে কায়াসা?কায়াসা?মিস ইডিয়েট?”

” হ্যাঁহ্যাঁ?”

” কোথায় হারিয়ে গেলে?”

” না কিছুনা।আর এরকম কিছু নেই।এটা আপনার মনের ভুল ছিল,এরকম কিছুইনা।এখন এসব বাদ দিন আর নিজের খেয়াল রাখবেন।আসছি আমি।”

কায়াসা কিছুনা বলে চুপচাপ বেরিয়ে যায়।সে আদ্রিকের এরকম কিছু নেই বলে শান্তা দিলেও সে তো জানে আসল ঘটনা কি।
.
.
.

এসবই ভাবতে ভাবতে কায়াসার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

” হে আল্লাহ কেন তুমি আমাকে এতো বড় একটা বিপদে ফেললে?এই কোন দুনিয়ায় জ্বালা এসে জুটলো আমার কপালে?জানিনা কেন এই পাগলটা আমার পেছনে পড়েছে।প্রথমে ওই ৫ টা ছেলেকে খুন করেছে,তারপর ইফাদ ভাই আর এখন মিস্টার আদ্রিক।আমার জন্য ইফাদ ভাই আর মিস্টার আদ্রিক কত বড় বিপদের মুখ থেকে ফিরে এসেছে।যদি ওনাদের কিছু হতো তাহলে তো আমি কোনদিনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।হে আল্লাহ তুমি আমাকে এই পাগল খুনিটার হাত থেকে আমাকে বাঁচাও,প্লিজ।”

এদিকে কায়াসার সব কথা শুনছে এশান।সে কায়াসার কথা শুনে বাঁকা হাসে।তারপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টিভিতে যেখানে কায়াসাকে দেখা যাচ্ছে সেখানে হাত বোলায়।

” সুঁই তুমি যত ইচ্ছা আপসোস করো,যতো ইচ্ছা আল্লাহর কাছে চাও যেন আমি তোমার জীবন থেকে সরে যায়।কিন্তু আপসোস তা হওয়ার নয়।আমাকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।তুমি তো আমারই হবে।তুমি তো এই সুতোর আসক্তি।মানুষ মাদকে আসক্ত হয় কিন্তু আমি তেমাতে আসক্ত।তুমি নামক মানবিতে আসক্ত হয়েছি আমি।যা এখন চেষ্টা করলেও ছাড়া সম্ভব নয়।”

ক্যান্টিনে বসে আসে আরোহী আর কায়াসা।ইতি ক্যান্টিনে গিয়েছে খাবার আনতে।কিন্তু খাবার নিয়ে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগার ফলে ইতির হাতে থাকা কিছুটা খাবার নিচে পড়ে যায়।ইতি রেগে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকাই।

” এইযে চোখে দেখতে পারেন না?”

” হাউ ডেয়ার ইউ।তোমার সাহস তো কম না তুমি এভাবে গলা উঁচু করে আমার সাথে কথা বলছো।” রেগে বলে জেমি।

” দোষ করেছেন আর কিছু বলতে পারবোনা এটা কি করে হয়?আপনার দোষ আপনি না দেখে হাঁটছিলেন।”

” জাস্ট সেট আপ।তুমি জানো আমি চাইলে এখুনি তোমাকে এই কলেজ থেকে বের করে দিতে পারি?তারপর তোমার সাদা এপ্রোন পড়ার শখটাও মিটে যাবে।”

” ও আই সি।এখানে আমি নিজের যোগ্যতাই এসেছি কারো মতো পাওয়ার ইউজ করে আসিনি যে আমার ভয় লাগছে আপনার কথা শুনে।শুনুন আমি না আপনার এই লেইম কথায় মোটেও ভয় পাইনি।যা ইচ্ছে করে নিন।আমিও দেখি আপনি করতে পারেন।”

” আমার সাথে লেগে কিন্তু তুমি ভালো করছোনা।এরফল কিন্তু খুবই বাজে হবে।”

এতোক্ষণ সবাই বসে বসে জেসি আর ইতির ঝগড়া দেখছে।কেউ তাদের থামানোর জন্য এগিয়ে আসছেনা।কায়াসা যখন দেখলো পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে সে আর চুপ করে বসে থাকতে পারলোনা।

” ইতু প্লিজ চল এখান থেকে।দেখ সবাই দেখছে।”

” দেখুক।আমি কি কোন ভুল করেছি নাকি?” চেঁচিয়ে বলে ইতি।

” ও তাহলে এটা তোমার বান্ধবী।এক বান্ধবী যেমন তার আরেক বান্ধবীও ঠিক তেমন।হা…. অবশ্য হওয়ারই কথা।যে যেমন তার সাথে তো তেমন মানুষই থাকবে।”

কায়াসাকে অপমান করতে দেখে ইতি আরো রেগে যায়।সে রেগে কি বলতে যাবে কিন্তু কায়াসা তাকে বাঁধা দেয়।ততক্ষণে জেমির বান্ধবীরাও সেখানে চলে এসেছে।

” কিরে জেমি কি হয়েছে?”

” কি আর হবে।গায়ে পড়ে এসেছে ঝগড়া করতে।” মুখ বাঁকা করে বলে জেমি।

” এইযে আপু আমি গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসিনি বরং আপনি এসেছেন।নিজের দোষটা দেখতে শিখুন আগে তারপর নাহয় অন্যকে দোষ দেবেন।”

” ইউ…….”

” জেমি চুপ কর।আর সিংগ্রেট করিসনা।আপু তুমিও শান্ত হও।দেখো যা হয়েছে তা একটা এক্সিডেন্ট।তোমরা সরি বলে মিটিয়ে নাও।”

” ইতু সরি বলে দেয়,না হলে কথা আরো বাড়বে।” ইতির কানে ফিসফিস করে বলে কায়াসা।

” হ্যাঁ ইতি বলে দে।আমরা তো কলেজে এসেছি এখনো ১ মাসও হয়নি,এখন এসব ঝামেলা থেকে দূরে থাকাই ভালো।” আরোহী বলে।

” তোরা…..”

” প্লিজ ইতু বলে দেয়।” কায়াসা বলে।

” আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আমার ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।”

” এইতো ভালো মেয়ের মতো কথা।জেমি এবার তুই বল।”

” আমি?সরি?তাও এবার এই মেয়েকে?নো ওয়ে।” কথাটা বলে জেমি চলে যায়।জেমির ফ্রেন্ড’সরা তো অবাক।তারা জেমির এরকম ব্যবহারে অনেকটা লজ্জা পাই।তারা জেমির হয়ে ইতি সরি বলে চলে যায়।

” দেখেছিস বেয়াদব মেয়ে কি ঢং।ওকে তো আমার সরি বলাই উচিত ছিল না।” রেগে বলে ইতি।

” হুম তা যা বলেছিস।সরি বলছে কি হতো?দাঁত কি সব খুলে পড়ে যেতো?” আরোহী বলে।

” সরি বলেছিস তো কি হয়েছে?অন্তত তোকে কেউ খোঁটা তো দিতে পারবেনা।আচ্ছা বাদ দে যা হয়েছে তা হয়েছে।এই ঝগড়ার জন্য সব খাবার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।যা তোরা দিয়ে টেবিলে বস।আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

” না তুই যা আমি নিজে আসছি।” আরোহী বলে।

” না আমি যাচ্ছি।তুই ইতিকে শান্ত করতে পারিস কিনা দেখ।”

আরোহী আর ইতি টেবিলে গিয়ে বসে আর কায়াসা ক্যান্টিনে চলে যায়।

এদিকে,

কাল রুমে বসে আছে জেমি।তার হাতে কম্পাস আর সে সেটাকে নিজের হাতে চেপে ধরে।যার কারণে তার হাত থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্তও পড়ছে কিন্তু সে দিয়ে তার খেয়াল নেই।

” আমার সাথে লেগে তুমি মোটেও ভালো করোনি মিস কায়াসা।তুমি জানোনা আমি নিজেকে নিয়ে কতটা ডেস্পারেট।আমার উপর কেউ কথা বলুক এটা আমি মোটেও সহ্য করতে পারিনা।প্রথমবারের শাস্তিটা খুব কম হয়ে গিয়েছে এবার তার থেকেও বেশি শাস্তি তোমাকে আমি দেবো।বি রেডি মিস কায়াসা।” নিজে নিজে বলে জেমি।তারপর সে তার রক্ত পড়া হাতটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কলেজ শেষ হওয়ার পর রাস্তা পর হয়ে অপর পাশে রিকশার কাছে যাচ্ছিল কায়াসা।কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা গাড়ি খুব জোরে কায়াসার একদম কাছ থেকে চলে যায় আর এতে কায়াসা নিচে পড়ে যায়।নিচে পড়াতে কায়াসার চোখ মুখ কুচকে যায়।তার হাতে খুব জ্বালা করছে।কায়াসা বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে চোখ খোলে।বাম হাতে কনুইয়ের কাছে অনেকটা জায়গা ছিঁড়ে গিয়ে আর তা থেকে অনেকটা রক্তও পড়ছে।কায়াসা চোখ মুখ কিচে উঠিয়ে দাঁড়ায় আর সাবধানে রাস্তা পার হয়ে রিকশায় উঠে বসে।

এদিকে,সেই গাড়িটা কিছুদূর এসেছেই থেকে যায়।গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে জেমি।সে ইচ্ছে করেই এরকমটা করেছে।

” আর তো তোমার লাক ভালো ছিল বলে বেঁচে গেলে মিস কায়াসা।তবে পরের বার আমার সাথে লাগতে আসলেনা আর বেঁচে ফিরতে পারবেনা।”

জেমি একবার বাইরে তাকিয়ে কায়াসাকে দেখে তারপর গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়।

বাড়ি এসে যথারীতি ব্যাগটা সোফায় রেখে রান্নাঘরে চলে যায়।কায়াসার বাম হাতের কনুয়ের কাছে পুরোটা ব্যান্ডেজ করা।কায়াসা আসার সময় এক ফার্মেসিতে থেকে ব্যান্ডেজ করে এসেছে।

এদিকে,কায়াসাকে বাড়ি ফিরতে দেখে এশান খুশি হয়ে যায় কিন্তু কায়াসার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়।সে হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।

” সুঁই কি হয়েছে তোমার হাতে?সুঁই কিভাবে তোমার লেগেছে?”

এশান পাগলের মতো করতে থাকে।একসময় সে নিজেকে শান্ত করে কাউকে ফোন দেয়।

” আমি তোমাকে টেন মিনিটি’স টাইম দিচ্ছি।আমাকে পুরো ডিটেইলস এ বলবে কায়াসার সাথে লাস্ট ২ ঘন্টায় কি কি হয়েছে।”

এশান ফোনটা রেখে আবারো টিভির স্ক্রিনের কায়াসাকে দেখতে থাকে।

কায়াসা আজ খিচুড়ি রান্না করেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে কায়াসা একটা বাটিতে খিচুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

এখন প্রায় দুপুর ২ টা বাজে।কায়াসা দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিকের বাড়ির সামনে।বেল দিলে কিছুক্ষণ পর সুমি নামের মেইডটা এসে দরজা খুলে দেয়।

” আরে ম্যাডাম আপনি?”

” আপনার স্যার বাড়িতে আছেন?”

” হ্যাঁ স্যার তো বাড়িতেই আছেন।আসুন না আপনি।”

কায়াসা ভিতরে ঢুকে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” আসলে আমি ওনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এসেছে।এসময় এসব খাবার খাওয়া ভালো।”

” কিন্তু ম্যাডাম স্যার তো এসব খারাপ খায় না।”

” আপনি খাবারটা রেডি করুন আমি ওনাকে নিয়ে আসছি।”

” আসতে পারি?” দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

আদ্রিক তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল।কায়াসাকে দেখে সে ল্যাপটপটা সাইডে রেখে দেয়।

” আরে মিস ইডিয়েট,এতোদিন পর তাহলে আমার কথা মনে পড়লো।”

” কেমন আছেন আপনি?”

” এইতো আছি বেশ।আরে কি হয়েছে তোমার হাতে?”

” আরে তেমন কিছুনা।কলেজ থেকে আসার সময় ওই একটু ব্যথা পেয়েছি।আপনার হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছেন কেন?”

” হাত এখন অনেকটাই ঠিক আছে।এতো বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে কি হবে।এই ছোটটাই ঠিক আছে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে চলুন আমি আপনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এনেছি।”

” খিচুরি!কিন্তু….. ”

” এই শুনুন বেশি বিদেশিগীরি করবেন না।আপনি বাংলাদেশ থাকেন।সো এসব খেতেই হবে।এবার চুপচাপ চলুন তো।”

” আচ্ছা বাবা ঠিক ঠিক আছে।চলো।”

কায়াসা আর আদ্রিক নিচে নেমে আসে।সুমি আগে থেকেই খাবার বেড়ে রেখেছিল।আদ্রিক এসেই খেতে বসে পড়ে।

” আরে বাবা খাবারটাতো খুব ভালো হয়েছে।তোমার রান্নার হাত তো দেখছি খুব ভালো।”

” সত্যি ভালো হয়েছে?”

” হুম সত্যি বলছি।”

” ধন্যবাদ।আচ্ছা আপনি খান আমি আজ আসি।”

” আরে বসো।তুমিও খেয়ে যাও।”

” না আমি বাড়ি গিয়ে খাবো।”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসছি।”

” না না তার দরকার নেই।আপনি খেয়ে নিন।আমি একাই চলে যেতে পারবো।”

” সাবধানে যেও কিন্তু।”

কায়াসা চলে যায় আর আদ্রিক খাওয়াতে মন দেয়।

পরেরদিন সকালে,

নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে জেমি।এদিকে জোরে জোরে দরজায় নক করছে কেউ।নক করার শব্দে জেমির ঘুম ভেঙে যায়।সে বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে—-

” এই কোন ইডিয়টেরে?আমি এইসময় ঘুমাই কেউ কি জানেনা?”

” ম্যাডাম তাড়াতাড়ি বাইরে আসুন।”

” ইডিয়টে পিপল।আজ তো একে আমি কাজ থেকে বের করেই ছাড়বো।”

জেমি রেগে গিয়ে দরজা খুলে।

” কি হয়েছে কি?সকাল সকাল এভাবে চেচামেচি করছো কেন?জানোনা এই সময় আমি ঘুমাই।” রেগে চিৎকার করে বলে জেমি।জেমির চিৎকার শুনে নিচে পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।নিচে বাড়ির বাকি কাজের লোকগুলো ভয়ে কাঁপছে।

” কি হলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন?কি জন্য দরজা নক করেছো?শোন আমি যদি লেইম কোন রিজেন শুনি তো আজই তোমার এই বাড়িতে শেষ দিন।” এবারো চিৎকার করে বলে জেমি।

” ম্যাডাম আপনার গাড়ি….”

” কি হয়েছে গাড়ির?এই তুমি কি গাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে কাঁচ ভেঙে ফেলোনি তো?বা গাড়িতে স্ক্রেস আসেনি তো?সত্যি করে বলো কি হয়েছে গাড়ির?ওটা আমার ফ্রেবারিট গাড়ি ছিল।যদি আমার গাড়ির কিছু হয়তো আমি তোমার অাস্ত রাখবোনা।”

” ম্যাডাম আমি কিছু করিনি।আপনি প্লিজ একবার নিচে এসে গাড়িটা একবার দেখুন।”

” কিছু না করলে ভয় পাচ্ছো কেন?”

” ম্যাডাম আপনি নিজেই দেখুন।”

জেমি বিরক্ত নিয়ে ধপধপ করে নিচে নেমে আসে।তারপর গাড়িরটার কাছে যায়।গাড়ির অবস্থা দেখে জেমি রাগে চিৎকার করে উঠে।

” আমার গাড়ির এই অবস্থা কে করেছে?”

চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে জেমি।সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” কি হলো সবার মুখে কি তালা ঝুলছে নাকি?কেউ কিছু বলছে না কেন?আমার গাড়ির মধ্যে এই লাল লাল রঙের জিনিসগুলো কোথা থেকে এলো?”

এবারো কেউ কিছু বলেনা কারণ তারা কি বলবে।যেখানে তারা নিজেরাই কিছু জানেনা।আসলে জেমির গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লাল রঙের কিছু একটা শুকিয়ে লেগে গিয়েছে।জেমি এবার পেছনে দরজা খুলে।দরজা খোলার সাথে সাথে ২ টো ইঁদুর গাড়ি থেকে লাফ মেরে বেরিয়ে আসে।ইঁদুর দেখে জেমি ছিটকে দূরে সরে যায়।

” ইউ…..ছি…..আমার গাড়ির ভিতরে ইঁদুর কোথা থেকে এলো?” এবার আরো জোরে চিৎকার করে কথা বলে জেমি।

এদিকে জেমির বাবা-মা এতোক্ষণ নিজের রুমে থাকলেও এবার তারা বাইরে বেরিয়ে আসেন।

” সকাল সকাল এসব তুমি কি শুরু করেছো জেমি?” গম্ভীরভাবে বলে জেমির বাবা।

জেমির ওনার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে দ্বিতীয়ভাবে চিৎকার করে বলে, ” ডেড তুমি দেখতে পাচ্ছোনা আমার ফেভারিট গাড়ির কি অবস্থা হয়েছে?এটা দেখার পর আমি চিৎকার না করে কি চুপচাপ বসে থাকবো?”

জেমির বাবা-মায়ের জেমির কথা শোনার পর গাড়ির দিকে তাকাই।গাড়ির এই নির্মম পরিস্থিতি দেখি তারাও ঘাবড়ে যায়।তারা দুজন চোখের ইশারায় কিছু কথা বলে।

” কিভাবে হলো এসব জেমি?” জেমির বাবা বলে।

” সেটা জানলে কি আমি চিৎকার চেচামেচি করতাম?”

” কিন্তু গাড়িটাতো তোমার।আর কাল রাতে পার্টি থেকে বাড়ি তুমি এই গাড়িটা করেই ফিরেছিলেন।তাহলে গাড়ির দ্বায়িত্বটাও তোমার।”

” ও মম প্লিজ এসব বাজে কথা বন্ধ করো।আমি কি সারা রাত এখানে বসে গাড়ি পাহারা দেবো?”

” চুপ করো তোমরা।এইযে বল তোদের মধ্যে কে করেছিস এই কাজটা?”

” আমরা কেউ করেনি এরকমটা।” সবাই একসাথে বলে।

” ঠিক আছে তোরা সবাই নিজের নিজের কাজে যা।আমি দেখছি কে করেছে এমনটা।আর যদি আমি কোনভাবে জানতে পারি এসবের মধ্যে তোদের মাঝে কেউ জরিত আছে তাহলে তার অবস্থা ভালো হবেনা।”

সবাই মাথা নাড়িয়ে নিজের কাজে চলে যায়।জেমিও রেগে বাড়ির ভিতরে চলে আসে।সবাই চলে গেলো জেমির বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলে।

চলবে…..
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here