সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ২

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২

#Tahmina_Akther

-অভিক তুই এভাবে দৌড়িয়ে এসেছিস কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

বোতল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে আমার পাশে এসে বসলো।

-তুমি এত সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে এলে আমাদের কাউকে বলে এসেছো? আবার গাড়িটা সাথে নিয়ে আসো নি? বাবা তোমার রুমে যেয়ে দেখে তুমি নেই মা’কে জিজ্ঞেস করলে মা বলে সে জানে না। তুমি এত বছর পর দেশে এলে রাস্তাঘাট কিছু চিনো কি না? এই ভেবে আমার মাথা পুরো হ্যাং হয়ে যাচ্ছিলো।
এরপর কি হলো জানো জরি খালা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে সকলের জন্য আগে থেকে রান্না করা আছে। তখন বুঝতে পারলাম তুমি সবার জন্য রান্না করে রেখে হসপিটালে এসেছো খাবার নিয়ে চাচ্চু আর চাচীর জন্য। আর আমি বাড়িতে কি করব তাই জলদি চলে এলাম তোমাদের সঙ্গে নাশতা করবো বলে।

-তুই এত কথা কিভাবে বলিস অভিক! একটু শ্বাস পর্যন্ত নিলি না। আর তুই যে নাশতা খাবি বলছিস তোর জন্য কি আমি নাশতা এনেছি?

– এরকম কথা বলো না তো ফুল তোমার ভাগের থেকে নাহয় আমায় একটু খেতে দিও। তোমার হাতের রান্না কোনোভাবে মিস করা যাবে না।

অসহায় মুখ করে বলল অভিক।

-হিয়া ও খেতে চাইছে আর তুই কি না মানা করেছিস। বিদেশে থেকে ওই সাদা বিলাইদের মতো স্বার্থপর হয়ে গেছিস নাকি? অভিক যা আব্বু হাত ধুয়ে আয় আমি তোকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

কথাগুলো বলেই আম্মু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো। আর আমি অবলা হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। কি এমন বললাম আমার মা জননী এক নিমিষেই বদলে গেলো?

এরই মাঝে আব্বু ঘুম থেকে জেগে উঠলো।আম্মু আব্বুকে ফ্রেশ হতে সাহায্যে করলো। তারপর আমরা সবাই মিলে খেতে বসলাম। অভিক তো বলেই ফেললো,

– ফুল বিদেশে থেকেও ভাত খাওয়া ভুলতে পারলে না।

– আমরা হচ্ছি মাছে ভাতে বাঙালি। ভাত খাওয়া ভুলে গেলে চলবে হু। আর তুই আবারও ফুল বলছিস আমাকে?

ও আমার কোনো কথার জবাব না দিয়ে একমনে খেয়ে চলেছে।

খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই আব্বু আমাকে বলছে,

-হিয়া, আমেরিকা চলে যাবি আবার?

– না আব্বু আর যাবো না। তোমাদের সাথেই থাকবো আর এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাবো না।

-তাহলে তোর পড়াশুনার কি হবে?

-চাচ্চু, ফুল নাহয় আমাদের ভার্সিটিতে ভর্তি হবে ভালো হবে না ফুল? অনিক বললো।

-অভিক ভালোই বলেছে তুই ওদের ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যা।

-আচ্ছা, আমি ভেবে বলবো তোমাদের। অভিক চল তো আব্বুর ডক্টরের সঙ্গে কথ বলে আসি আব্বু কবে নাগাদ ডিসচার্জ পাবে?

বলেই বেরিয়ে এলাম অভিককে নিয়ে। ডক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম আব্বু আগামীকাল ডিসচার্জ পাবে। আম্মুকে এসে জানাতেই আম্মু খুশি হয়ে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করলেন।

আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলাম। ভালো লাগছিলো না মনটা হঠাৎ করে বিষন্ন হয়ে পড়েছে।
আমার পিছু পিছু অভিক বেরিয়ে এলো। রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছিলাম আমি আর অভিক।

অভিক বেশ কিছুক্ষণ ধরেই দেখছে হিয়ার মন খারাপ তাই ওর মন ভালো করার জন্য বললো,

-ফুল চলো না আমরা ফুচকা খেয়ে আসি তোমার পছন্দের জায়গা থেকে।

-না অভিক ভালো লাগে না এখন ফুচকা খেতে। পুরনো সব পছন্দ এখন অপছন্দের তালিকায়। তো এখন কোন ইয়ারে আছিস তুই?

-এই তো অনার্স প্রথম বর্ষে ইংরেজি বিভাগে। আচ্ছা, ফুল তুমি কি সত্যিই আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে?

– ভর্তি তো হতেই হবে পড়াশোনা করতে হবে না। জীবনে বড় কিছু হতে চাইলে পড়াশোনার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী।
আগামীকাল তো আব্বু হসপিটাল থেকে বাড়িতে আসবে তাহলে তুই না হয় আমায় পরশুদিন তোদের ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যাবি।

-ডান আগামী পরশু তোমায় নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যেয়ে ভর্তি করিয়ে আসবো।

এরই মাঝে রাস্তার ওপাশে একটি আইসক্রিমের শপ দেখতে পেলাম। আমি অভিককে বললাম, আইসক্রিম নিয়ে আসতে। ও আমাকে রেখে চলে গেলো রাস্তার ওপাড়ে।

আমি দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছি। একপাশে চা’র দোকান কেউ কেউ চা খাচ্ছে, আবার কেউ সিগারেট। কিছু পথশিশু আছে যারা কারো কাছ থেকে টাকা চাইছে আবার কেউ ফুল বা পত্রিকা বিক্রি করছে।

এরই মাঝে মোবাইলে ভাইব্রেট করলো। পার্স থেকে মোবাইল বের করে চেক করতেই দেখতে পেলাম আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। মেসেজ সিন করতেই আমার চক্ষু চরাকগাছ।কারনে মেসেজে লেখা,

-সাদা থ্রীপিছে কিন্তু তোমায় মন্দ লাগে না হিয়াপাখি। কিন্তু, কেন যেন এই রঙটা তোমার শরীরে তোমার জীবনে লেপ্টে আছে বলে আমার ভীষণ অপছন্দের রঙ হয়ে গেছে। আর চুলটা সুন্দর ভাবে বেঁধে মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দাও তো। আশপাশে অনেক মাছিরা ভনভন করছে।

মেসেজ পড়া শেষ হতে আমি আশপাশে তাকালাম কারণ যে মেসেজটি করছে সে নিশ্চয়ই আমার আশেপাশেই আছে। কিন্তু দেখলাম কিছু ছেলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আশপাশে মাছিরা ভনভন করছে মানে ছেলেরা তাকিয়ে আছে।
আমি হালকা হেসে ফেললো, বলে কি মাছিরা ভনভন করছে!

চুলে হাত দিতেই দেখতে পেলাম চুল খুলে আছে তাই চুল সুন্দর ভাবে খোপা করে ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিলাম।
ভাবছি কে এই মেসেজটি দিলো আর আমার এই নতুন নাম্বার পেলো কি ভাবে?

অভিক আসতেই ওকে মেসেজটি দেখালাম, ও হেসে বললো,

-যে মেসেজেটি করেছে সে কিন্তু মন্দ বলে নি? তবে কে করেছে সেটা ভাববার বিষয়? আর ফুল তুমি আর এভাবে বোরকা ছাড়া বের হবা না। দেখলে তো মাছিরা কিভাবে ভনভন করছে বলেই
হাসতে লাগলো অভিক সাথে আমিও হেসে ফেললাম।

দুপুরে বাড়িতে এসে আর খাবার খাই নি। রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।

কে যেন দরজায় করাঘাত করছে তাই ঘুম ভেঙে গেলো? উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই ভিতরে প্রবেশ করলো অভিকের ছোট বোন অরিন। সে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বেশ সময় পার হবার পর বললাম,

– কি হয়েছে আমার অরিন সোনার? মন খারাপ।

– না হিয়াপি তুমি এতদিন ছিলে না তাই মন খারাপ ছিলো। কিন্তু, এখন তো আমাদের সাথে সবসময়ই থাকবে তাই আমি অনেক খুশি। আর গতকাল তোমায় একটুও জরিয়ে ধরতে পারি নি। তাই আজ একটু জরিয়ে ধরলাম।

-আমিও অনেক খুশি। চল ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি।

-হ্যা চলো।

ছাঁদে এসে দেখতে পেলাম আমার পছন্দের ফুলের গাছ লাগানো। আমি হেটে গাছগুলো দেখছিলাম।
আমার চুলে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাধা পেলাম। একটু পর আমাকে ঘুরিয়ে সামনে নিয়ে এলো দেখি অভিক দাঁড়িয়ে আছে। ওর মোবাইল আমার সামনে তুলে ধরলো,ওর মোবাইলের সেলফি ক্যামেরাতে আমাকে দেখা যাচ্ছে আমার চুলের খোপায় একটি লাল গোলাপ গুজানো।

আমি অভিকের দিকে তাকালাম ও বললো,

-আমার ফুলের চুলের খোপায় শুধু এই লাল গোলাপটি মানায় অন্যফুল নয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here