সেই তুমি💐
পর্ব -১৫/১৬
Samira Afrin Samia
#Nipa
ইয়াশ ইশিতা কে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দেয়। ইশিতা কার থেকে নেমে গেট দিয়ে ঢুকতে নিলে ইয়াশ ইশিতা কে পেছন থেকে ডাক দিলে ইশিতা ইয়াশের দিকে ফিরে তাকায়
— ইশিতা এখানে যদি ইফান এসে কোনো ধরনের ঝামেলা করে তাহলে সাথে সাথে আমাকে জানাবে।
— হুম।
— তুমি একা বাসায় যেতে পারবে তো?
নাকি আমার আসতে হবে?
— আমি একাই যেতে পারবো।
— আচ্ছা তাহলে নিজের খেয়াল রেখো। বাই।
ইয়াশ অফিসের জন্য চলে গেল। ইশিতা ধীর পায়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকছে মনে অনেক ভয় কাজ করছে। না জানি এখন কে কোন কথা শুনিয়ে দেয়।
ইফান রাগে কটমট করতে করতে রিহা কে ফোন করলো।
কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিহা কল রিসিভ করলো।
— হ্যালো জান।
এতো দিন পর আমার কথা মনে হলো? তুমি আমার ফোন ধরো না কেন?
তোমাকে কতবার ফোন করেছি একবার দেখো তো।
ইফান বিরক্তি নিয়ে
— ওহ রিহা এখন ওসব কথা বাদ দিয়ে আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো। আর আমি যেমন বলছি তেমন টা ই করো।
— আচ্ছা বলো কি করতে হবে। তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
— তুমি রাফি কে নিয়ে এখুনি ভার্সিটিতে যাও। আর গিয়ে দেখো ইশিতা ভার্সিটিতে গেছে।
— ও ভার্সিটিতে গেছে? ওর কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই?
এতো কিছু হওয়ার পরও ও বাড়ি থেকে বের হয় কিভাবে?
— হুম। রিহা আরও অনেক কিছু হয়েছে। ওসবের তুমি কিছুই জানো না।
— কি হয়েছে?
ওই মেয়েটা কিছু করেছে নাকি?
— এখন ফোনে এতো কিছু বলা যাবে না। আমি ভার্সিটিতে এসে সব কিছু বলছি। ততক্ষণে আমি যা বলেছি তা করো।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো তুমি।
— হুম আমি ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
ইফান কল কেটে দিয়ে রুমে চলে যায়। রিহা রাফি কে ফোন করে জলদি করে ভার্সিটিতে যেতে বলে।
ইশিতা চারপাশে না তাকিয়ে কে কি বলছে তা কানে না নিয়ে ক্লাস রুমে এসে চুপচাপ একা বসে থাকে। ইভা ইশিতার কাছে এসে ইশিতার পাশে বসে
— ইশিতা কি শুনছি এসব?
সত্যি ই কি ইফানের ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে?
ইশিতা ইভার থেকে কখনও কিছু লুকায় না আজ ও কিছু লুকালো না।
— হুম।
— কিভাবে কি হলো?
উনি ই বা তোকে বিয়ে করলো কেন? আর তুই এ বিয়েতে রাজি হলি কেন?
ইশিতা চুপ করে আছে
— কি হলো বল।
— উনি আমার আর ইফানের ব্যাপারে সব কিছু জেনে ই আমাকে বিয়ে করেছে। আমি বিয়েতে রাজি না হয়ে কি করতাম তুই ই বল তো?
ইফান আমাকে মেনে নেয় নি। ওর বাচ্চার দায়িত্ব নিতে ও মানা করে দিছে। এই বাচ্চা টা কে দুনিয়াতে আনতে গেলে তো ওর বাবার পরিচয় লাগবে।
— তাই বলে যাকে ভালোবাসিস তার বড় ভাইকে বিয়ে করে নিলি?
— এছাড়া আর আমার কাছে কোনো অপশন ছিল না।
— এক ভাই মাঝ রাস্তায় এসে ছেড়ে চলে যাবে আর আরেক ভাই মাঝ রাস্তা থেকে হাত ধরবে। বাহ!
— উনি সত্যি ই অনেক ভালো রে। উনি ইফানের থেকে একদম আলাদা। ইফান যতটা খারাপ ওর ভাই ততটাই ভালো।
— আচ্ছা তা তো বুঝলাম। কিন্তু তুই এখন এটা বল। তুই ইফান কে ভুলে ইফানের ভাই কে ভালোবাসতে পারবি?
— ইফান আমার সাথে যা করেছে এর পরে ওকে ভালোবাসা তো দূর আমি ওকে মনেও রাখতে চাই না।
আর আমি জানি না আমি কখনও উনাকে ভালোবাসতে পারবো কি না।
ভালোবাসার উপর থেকে আমার বিশ্বাস টাই চলে গেছে। এখন মনে হয় না আমি আবার কাউকে ভালোবাসতে পারবো, আবার কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো।
— তুই এভাবে এডজাস্ট করে কতদিন উনার সাথে থাকতে পারবি?
ভালোবাসা ছাড়া কি কোনো সম্পর্ক টিকে থাকে?
পিছন থেকে রিহা বলে উঠলো
— হ্যালো গাইস।
ইভা আস্তে করে ইশিতার কানে বললো
— শয়তান এসে গেছে।
ইভা, ইশিতা রিহার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায়। রিহা ভাব নিয়ে হেঁটে ইশিতার সামনে এসে দাঁড়ায়
— ইশিতার লেজ। ওহ স্যরি। তোমার নাম টা যেন কি?
হ্যা মনে পড়ছে। ইভা তাই না?
তো ইভা কি যেন বলছিলে তুমি।
ভালোবাসা ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে?
তোমার ফ্রেন্ড তো কাউকে ভালোবেসে তার সাথে সম্পর্কে জড়ায় না। তোমার ফ্রেন্ড টাকা দেখে সম্পর্কে জড়ায়।
— রিহা চুপ করো তো।এখানে তো তোমার কথা বলার কিছু নেই। তুমি কেন আমাদের মাঝে নাক গলাচ্ছো?
রিহা ইভার কথা শুনে রেগে গিয়ে
— জাস্ট সেটআপ। যত বড় মুখ নয় ততো বড় কথা।ছোট লোকের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার। আমি তোকে
রিহা হাত তুলে ইভা কে চড় মারতে গেলে। ইভা রিহার হাতে ধরে হাত মুচড়ে পিছনে নিয়ে ধরে।
— তুই কোথাকার জমিদারের মেয়ে যে আমাকে ছোট লোকের বাচ্চা বলছিস। কিছু বলি না বলে এই নয় যে কিছু বলতে পারি না। আমার সাথে মুখ সামলে কথা বলবি আমি ইশিতা না যে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিবো। নেক্সট টাইম থেকে আমার সাথে বুঝে শুনে কথা বলতে আসিস।
ইভা রিহা কে ছেড়ে দিলে রিহা হাত ডলতে ডলতে
— তোর সাহস বড্ড বেড়ে গেছে তাই না? তোকে আমি কি করবো তা তুই ভাবতেও পারছিস না।
ইশিতা ইভা কে ধমক দিয়ে
— ইভা কি হচ্ছে এসব?
চল এখান থেকে।
ইশিতা ইভার হাত ধরে টেনে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হতে নিলে একটুর জন্য ইফানের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল।
ইফান ইশিতার দিকে মাথা নামিয়ে চোখ থেকে কালো সানগ্লাস টা খুলে
— ইশিতা,,, উফফ স্যরি ভাবী নাকি?
ভাবী কোথায় যাচ্ছেন?
রিহার ইফানের কাছে এসে
— ইফান তুমি পাগল হয়ে গেলা নাকি?
ইশিতা কে ভাবী ডাকছো কেন?
— তোমাকে তো বলাই হয়নি রিহা। ইশিতা তো আমার ভাবী হয়। আরে গতকাল রাতেই তো ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে হয়।
— রিয়েলি ইফান?
— হুম।
ইশিতা এখন ইফানের সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না।
তাই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ইফান ইশিতার হাত ধরে নেয়। ইফান ইশিতা কে এক প্রকার হেঁচকা টান দিয়ে ক্লাসের মধ্যে নিয়ে দাঁড়ায়।
ইফান সবার উদেশ্য করে
— গাইস,,,গাইস,,গাইস এটেনশন প্লিজ। তোমাদের সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে। কথা না, তোমাদের সবাইকে একটা গুডনিউজ দেওয়ার আছে।
তোমরা সবাই তো ইশিতা কে চিনো তাই না?
যে দুই দিন আগ পর্যন্ত আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল।
ইফানের কথা শুনে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে ইফান কি বলছে তা শুনতে মনোযোগ দিলো।
— তো গুড নিউজ টা হলো। ইশিতা আর আমার ভাইয়ের গতকাল রাতে বিয়ে হয়েছে। এখন ইশিতা আমার ভাই ইয়াশের ওয়াইফ মানে আমার ভাবী।
ইফানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। কয়েকজন শিটি বাজাতে শুরু করলো। ছেলেদের মধ্যে থেকে একজন দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
— কি ভাবী ছোট ভাইকে ভালো লাগে না বলে কি বড় ভাইকে ধরেছো?
নাকি বড় ভাইয়ের কাছে টাকা বেশি বলে?
সবাই আবারও জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
সবার এসব কথা শুনে ইশিতার দু’চোখ বেয়ে সমানে পানি পড়ছে। সবাই ইশিতা কে নিয়ে কত বাজে বাজে মন্তব্য করছে। কত খারাপ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে। ইফান সবার সামনে ইশিতা কে এভাবে অপমান না করলেও পারতো।
ইফান হাতে ইশারা দিয়ে সবাই কে থামতে বলে। আবার বলা শুরু করলো।
— ফ্রেন্ডস রা মজার ব্যাপার কি জানো?
ইশিতা প্রেগন্যান্ট আর ওর বাচ্চার বাবা নাকি আমি।
ইফান এমন পরিস্থিতি তৈরি করে তুলেছে। যাতে করে সবাই ইশিতা কে নানা ভাবে কথা শুনাতে পারে আর অপমান করতে পারে।
একজন বলে উঠলো
— বাচ্চার বাবা কে রেখে বাচ্চার চাচা কে বিয়ে করতে গেলে কেন? আমার ও তো কম টাকা নেই আমি বললে কি তুমি আমাকেও বিয়ে করবে?
ইশিতা শুধু সবার কথা শুনেই যাচ্ছে। কাউকে কিছু বলছে না। কত জন কে ও কিছু বলতে পারবে? এখানে সবাই ই তো তাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে ইশিতা একা কত জন কে চুপ করাতে পারবে? একা একা কতটাই বা প্রতিবাদ করবে ইশিতা?
ইফান ইশিতার দিকে আঙ্গুল তুলে
— এই মেয়েটা কে দেখে রাখো সবাই। আর হ্যা সবাই এর মত ক্যারেক্টারলেস মেয়ের থেকে কম করে হলেও দশ হাত দূরে থাকবে। এরা টাকার জন্য সব করতে পারে।
রিহা ইশিতার কাছে এসে ইশিতা চোখের পানি মুছে দিয়ে
— ন্যাকা কান্না তো ভালোই পারিস। এভাবে চোখের পানি ফেলে ই তো ছেলের মন জয় করিস। ছোট ভাইয়ের সাথে নষ্টামি করে বড় ভাইকে বিয়ে করলি লজ্জা করে না তোর?
তোর মত মেয়ের লজ্জা!
তোর মত মেয়ের তো মরে যাওয়া উচিত।
ইশিতা সবার এসব কথা সহ্য করতে না পেরে দৌঁড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে আসলো।বাড়ি এসে ইশিতা দৌঁড়ে সোজা রুমে চলে আসলো। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছে।
— আমার সাথে এসব কেন হচ্ছে? কি দোষ করেছি আমি?
আল্লাহ আমাকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো। আমি না পারছি শান্তিতে বাঁচতে না পারছি মরে যেতে।
আমি তো কখনও কারো হ্মতি করিনি তাহলে আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে?
এ কোন অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছি আমি?
আমি ইফান কে ভালোবেসেছি বিশ্বাস করেছি এটাই কি আমার ভুল?
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে নিচে ফ্লোরে বসে গেল। ইশিতা চোখের পানির মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো প্রকাশ করছে। বিনা অপরাধে এতটা শাস্তি ইশিতার প্রাপ্য ছিল না।
প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা পর ইশিতা সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে। অনেকক্ষণ পানিতে ভেজার কারনে ও কান্না করায় মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে। চোখের সামনে সব অন্ধকার মনে হচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে ও কষ্ট হচ্ছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেড পর্যন্ত যাবে এই শক্তি টা ও পাচ্ছে না ইশিতা। সকাল থেকে কিছু খাওয়া ও হয়নি এই জন্য মাথা টা ও বার বার ঘুরে উঠছে। ইশিতা আর নিজের সাথে যুদ্ধ করে পেরে না উঠে মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেল।
ইয়াশের অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে ইয়াশ ইশিতা কে ভার্সিটি থেকে নিতে আসে। ভার্সিটিতে আসলে ইভার সাথে দেখা হলে ইভা ইয়াশ কে চিনতে পারলে আজ ভার্সিটিতে যা যা হয়েছে সব কিছু বলে দেয়। ইয়াশ সব কিছু শুনে মাথায় হাত দিয়ে থমকে গেল।
— শিট! এতো কিছু হয়ে গেল আর ইশিতা আমাকে কিছু জানালো না। আল্লাহ ই জানে এখন ইশিতা কোন অবস্থায় আছে। এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে ইশিতা যদি উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে বসে। ইশিতা ঠিক আছে তো?
ইয়াশ এক সেকেন্ড ও দেরি না করে কার নিয়ে বেড়িয়ে গেল। ইয়াশ পাগলের মত কার ড্রাইভ করছে। যত দ্রুত সম্ভব ইশিতার কাছে যেতে হবে।
আজ তো ইয়াশ ইফান কে মেরেই ফেলবে ইফানের এতো টা সাহস হলো কি করে একটা মেয়ের সাথে এতো বাজে ব্যবহার করার। ইয়াশ অনেক বার করে ইফান কে বলার পর ও ইফান ইশিতা কে অপমান করেছে। আজ ইফানের কপালে অনেক দুঃখ আছে। ইয়াশ আজ ইফান কে কি করবে তা ও নিজেও জানে না। ইফান সব সময় ইয়াশের ভালোবাসা দেখছে কখনও ওর রাগ দেখেনি।তবে আজ দেখতে পাবে। ইয়াশ কখনও অন্যায় সহ্য করে না আজও করবে না। ইফান কে উপযুক্ত শাস্তি দিবে।
ইয়াশ কোন ভাবে বাসায় এসে দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা। ইয়াশের ভয় হতে লাগলো ইশিতা দরজা লক করে রাখছে কেন?
চলবে….
সেই তুমি💐
পর্ব -১৬
Samira Afrin Samia
#Nipa
ইয়াশ দরজায় নক করছে আর ইশিতা কে ডেকে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ডাকার পর ও ইশিতার কোন সাড়া না পেয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো।
— ইশিতা দরজা খুলো। ইশিতা দরজা লক করে তুমি ভিতরে কি করছো?
ইয়াশ আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না। ইয়াশ দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলো। ইয়াশের রুম থেকে এমন বিকট শব্দ শুনে নাজমা চৌধুরী নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।
— কি হয়েছে ইয়াশ? কিসের শব্দ পাচ্ছি এসব? আর তুই দরজায় এমন ভাবে ধাক্কাছিস কেন?
— মা ইশিতা রুমে দরজা লক করে রেখেছে।
— দরজা লক করে রেখেছে বলে এমন ভাবে দরজা ধাক্কাতে হবে নাকি?
ও হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।
— না মা তুমি বুঝতে পারছো না। অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি কিন্তু ও কোনো সাড়া দিচ্ছে না। ঘুমালে তো এতো ডাকার পর উঠে যাওয়ার কথা। এভাবে কেউ ঘুমায় নাকি?
— অনেকক্ষণ ডাকার পরও যখন উঠছে না দরজা খুলে দিচ্ছে না তাহলে তো সত্যিই চিন্তার কথা।
ইয়াশ তার শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে গেলে ইয়াশ রুমের ভেতর ঢুকে দেখতে পেল ইশিতা নিচে পড়ে আছে। ইয়াশ দৌঁড়ে ইশিতার কাছে এসে নিচে বসে ইশিতা কে কোলে তুলে নিয়ে বেডে গিয়ে শুইয়ে দিল। এসব কি হচ্ছে নাজমা চৌধুরী কিছুই বুঝতে পারছেন না।
— ইয়াশ কি হয়েছে ইশিতার?
ও এভাবে নিচে পড়ে ছিল কেন?
— জানি না মা। তুই রুমে যাও। তুমি টেনশন নিলে এখন আবার তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
— আমি ইশিতার কাছে থাকি ওই ডক্টর কে ফোন কর।
— বলছি তো মা তুমি রুমে যাও।
ইয়াশের কথায় নাজমা চৌধুরী রুমে চলে গেল।
ইয়াশ বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ইশিতার মুখে কয়েক ফোঁটা পানি ছিটিয়ে দেয়। তার পরও ইশিতার জ্ঞান ফিরছে না। ইয়াশ ইশিতার কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো ইশিতার জ্বর উঠেছে। জ্বর তো সাধারন মাপের জ্বর না ভীষণ তীব্র মাত্রায় জ্বর উঠেছে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কপালে হাত রাখা যাচ্ছে না। ইশিতা হঠাৎ করে এমন জ্বর বাধালো কি করে তা ই ভাবছে ইয়াশ। ইয়াশ কিছু বুঝতে না পেরে ওদের ফ্যামিলি ডক্টর কে ফোন করে বাসায় আসতে বললো।
ইশিতা বেঘোর হয়ে পড়ে আছে। ইশিতা কে দেখে ইয়াশের বড্ড মায়া হচ্ছে। ইশিতার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখ ফোলা গাল লাল হয়ে আছে।
ইফান ইশিতার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। এতদিন যা করেছে তার জন্য ইফান কে হ্মমা করে দিলেও আজ যা করেছে তার জন্য মোটেও হ্মমা করবে না। ইফানের আজকে অপরাধের জন্য ইয়াশ ওকে উপযুক্ত শাস্তি দিবে। নিজের ভাই বলে ওকে একটু ও ছাড় দিবে না।
ডক্টর এসে ইশিতা কে চেকআপ করছে। ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে ইশিতার পাশে বসে আছে।
ডক্টর ইয়াশের দিকে তাকিয়ে
— ইয়াশ ও কি প্রেগন্যান্ট?
ইয়াশ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো
— এ সময়ে ওর এতো চাপ নেওয়া ঠিক না। এখন টেনশন নিলে ও আর ওর বাচ্চা দু’জনের জন্য ই হ্মতি হতে পারে। একেতো ও প্রেগন্যান্ট তার উপর ও মনে হয় খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করে না। এখন এমন হেঁয়ালী করলে বাচ্চা টার খুব বড় হ্মতি হয়ে যাবে।তুমি ওর হাজবেন্ড ওর খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব। ওর শরীর ভীষণ দূর্বল।
— আমার ভুল হয়ে গেছে ডক্টর এখন থেকে আমি নিজে ওর খাওয়ার প্রতি নজর রাখবো।
— হুম ওয়াইফের একটু খেয়াল রাখতে পারো না কেমন হাজবেন্ড তুমি?
যা হয়েছে তা তো হয়েছে ই। এখন থেকে তোমার ওয়াইফ আর তোমার বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমার। ওদের এখন খুব যত্নের প্রয়োজন।
— আচ্ছা ডক্টর আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো। আমি ওকে এক মিনিটের জন্য ও চোখের আড়াল হতে দিবো না।
— তাহলে আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে যাই। তুমি ওগুলো আনিয়ে নিও।
— হুম।
ডক্টর প্রেস্কিপশন লিখে দিয়ে গেল।
— আজ তাহলে আমি উঠি। তুমি ওর খেয়াল রেখো। আর হ্যা টেনশন নিও না কিছু দিন রেস্ট নিলে ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। কিছু দিন ভালো ভাবে দেখাশুনো করলেই ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
— থেংক্স ডক্টর।
— আরে থেংক্স বলতে হবে না এটা তো আমার কাজ ই।
— আসুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ইয়াশ ডক্টর কে বাহির পর্যন্ত ছেড়ে আসলো। ইয়াশ রুমে এসে ইশিতার পাশে বসে ইশিতার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে
— ইফান যা করেছে তার জন্য ওকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। ওর পাপের কোনো হ্মমা নেই। ইফান আজ ওর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আমি ওকে জ্যন্ত পুঁতে ফেলবো।একবার শুধু ওকে হাতের কাছে পাই।
ইফান কে তো আমি পরে দেখে নিবো তার আগে তোমাকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। তোমার সাথে যা হয়েছে তা মেনে নিতে তোমার কষ্ট হবে কিন্তু তোমাকে সব কিছু ভুলে তোমার জন্য, তোমার বাচ্চার জন্য নতুন করে বাঁচতে শিখতে হবে। আমার জন্য তোমাকে আবার হাসতে শিখতে হবে। আমি তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। তোমার কষ্টের দিন শেষ। আমি পৃথিবীর সব সুখ গুলো তোমার হাতের মুঠোয় এনে দিব। কোনো কষ্ট এখন আর তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ইয়াশ ইশিতার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর ইশিতার জ্ঞান ফিরলো।ইশিতা একটু একটু করে মিটমিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করছে।
এখনও মাথা তেমন ব্যথা করছে। চোখ মেলে তাকাতে ও কষ্ট হচ্ছে। কথা বলার শক্তি টুকু ও যেন পাচ্ছে না।
ইয়াশ ইশিতা কে চোখ মেলতে দেখে ব্যস্ত হয়ে উঠলো
— ইশিতা তুমি ঠিক আছো তো?
কি হয়েছিল তোমার মেঝেতে পড়ে ছিলে কেন?
ইশিতা খুব কষ্ট করে চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলে ইয়াশ হাত ধরে ইশিতা কে উঠে বসিয়ে দেয়। ইয়াশ একটা বালিশ নিয়ে ইশিতার পিঠের নিচে রেখে হেলান দিয়ে ইশিতা কে বসিয়ে দেয়।
ইশিতা কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারছে না। ইফান ইশিতার হাত ওর হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে
— হ্যা বলো। কি বলতে চাচ্ছো বলো।
ইশিতা অস্পষ্ট ভাবে বললো
— পা,,পানি।
— পানি খাবে?
ইশিতা একবার মাথা উপর নিচু করে হ্যা বুঝালো।
ইয়াশ পাশের টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ইশিতার মুখের সামনে ধরলে। ইশিতা এক ডুক পানি খেয়ে। আর খাবে না তা মাথা নাড়িয়ে না করে দিলো।
— তুমি একটু বসো আমি আসছি।
ইয়াশ রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ইশিতার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো।
ইয়াশ নিজের হাতে ইশিতা কে খাইয়ে দিতে চাইলে ইশিতা খাবে না বলে না করে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।ইয়াশ রাগী কন্ঠে
— খাবে না বললেই হলো?
না খেয়ে খেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছো একবার চেয়ে দেখো। আজ ও মাথা ঘুরে নিচে পড়ে ছিলে। আমি না আসলে কেমন হতো?
নিজেকে নিয়ে না ভাবো।নিজের বাচ্চা টা কে নিয়ে তো একটু ভাববে। ওর কিছু হয়ে গেলে তখন কি করবে তুমি?
ইয়াশ জোরে জোরে কথা গুলো বলায় ইশিতা কেঁদে উঠলো।
— আমার কোনো কথা শুনবে না। আবার কিছু বলা ও যাবে না। কিছু বললেই কাঁদতে লাগবে।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে কি যেন বলতে চাইছিল
— চুপ একদম কোনো কথা বলবে না। আর কান্না থামাও। আমি খাবার দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নেও।
ইশিতা কেঁদেই যাচ্ছে।
— বলছি না কান্না থামাতে। এখনও কেঁদে যাচ্ছে। এখন কান্না না থামালে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
ইয়াশের কথা শুনে ইশিতা কান্না থামালে ও এখনও একটু একটু হেঁচকি উঠছে।
ইফান মনের আনন্দে রিহা আর রাফি কে নিয়ে কারে করে পুরো শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাফি কার ড্রাইভ করছে রিহা আর ইফান পেছনের সিটে বসে বেয়ার খাচ্ছে। আর ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে বসে বসেই হাত পা নাড়াচ্ছে। ইফান রাফি কে উদেশ্য করে
— কি রে তুই দেবদাস এর রুল প্লে করছিস নাকি?
মুখ টা কে বাংলার পাঁচের মত বানিয়ে রাখছিস কেন?
আমরা কত ইনজয় করছি। তুই তো কিছুই করছিস না।
রাফি ড্রাইভ করতে করতে
— তোরা আজ ইশিতার সাথে যা করলি তা মোটেও ঠিক করিস নি। বিশেষ করে ইফান তুই।
তুই তো ওকে ভালোবাসতিস তাই না?
— ভালোবাসা মাই ফুট। তুই এখন ওর কথা বলবি না তো। আমি ওই মেয়েটার কথা মনে করে আমার মোড অফ করতে চাই না। আজ আমি অনেক খুশি। আজকে ওকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পেরেছি।
— কাজ টা কিন্তু মোটেও ঠিক হলো না। আজ এভাবে ইশিতা কে অপমান না করলেও পারতি।
রিহা পিছন থেকে রাফির মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে
— ওই মেয়েটার জন্য তোর এতো মায়া হচ্ছে কেন?
— মায়া এজন্যই হচ্ছে কারণ আমি তো আসল সত্য টা জানি।
ইফান রাফি কে কার থামাতে বলে। রাফি ইফানের কথা মত রোডের এক পাশে কার থামালে ইফান কার থেকে নেমে যায়। ইফানের সাথে সাথে রিহা ও কার থেকে নেয়ে দাঁড়ায়।
— কি বললি তুই? আসল সত্য মানে? আসল সত্য বলতে কি জানিস তুই?
রিহা ভয় পেয়ে গেল। এখন রাফি যদি সব কিছু বলে দেয় তাহলে ইফান রিহা কে জানে মেরে ফেলবে ইফানের যা রাগ। রিহা ব্যস্ত হয়ে
— কি সত্য জানিস তুই রাফি?
আজেবাজে কথা বলছিস কেন?
ইশিতা যেমন ওর সাথে তেমন টা ই হয়েছে।
— শালা ইশিতা তোর বোন হয় নাকি?
— বোন না হলেও আমি আমার চোখের সামনে কোনো মেয়ের অপমান হতে দেখতে পারবো না।
তুই ওকে ভালোবাসিস আর না বাসিস। কিন্তু একটা মেয়ে হিসেবে তো ওকে মিনিমাম সন্মান টুকু করতে পারিস।
তুই তো পুরো সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিস। কাউকে এতোটা ও নিচু করতে যাস না যার কারনে তুই নিজেই সবার চোখে এমনকি নিজের চোখেও ছোট হয়ে যাস।
— ওরে বাবা! তোর তো দেখছি বন্ধুর থেকে একটা বাইরের মেয়ে বেশি আপন হয়ে গেল। ইশিতার জন্য দরদ উতলে পড়ছে দেখি। এখন কি ওই মেয়েটার জন্য বন্ধদের কে ছেড়ে চলে যাবি?
— বন্ধুদের ছেড়ে যাবার কথা উঠছে না তো।
আমি শুধু তোকে এটা বুঝাতে চাইছি, এমন কিছু করিস না যার জন্য তুই কোনো দিন ইশিতার কাছে হ্মমা চাওয়ার সাহস টুকু ও না পাস।
— রাফি তুই ইফান কে এসব বলছিস কেন? ইফান তো ভুল কিছু করেনি। ওই মেয়েটা এসবের ই যোগ্য।
— রিহা ভুলে যাস না তুই নিজেও একটা মেয়ে। নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে জেনেশুনে এমন কাজ করতে তোর বিবেকে একটু ও বাঁধলো না।
— ওই তুই ঠিক আছিস তো? তুই কি আজ নেশা করছিস?
নেশা না করলে তো এসব বলার কথা না। শালা খুব জ্ঞান দিচ্ছিস তো। তোর ভালো না লাগলে তুই আমাদের থেকে চলে যা তো।
রাফি রাগ করে চলে গেল। যাওয়ায় আগে আবারো ইফান কে কিছু কথা বলে গেল।
— ইফাব সত্যিই তুই একদিন খুব পস্তাবি।সেদিন তোর সাথে তোর পাশে কাউকেই পাবি না। সব থেকে ও তুই একা হয়ে যাবি। পৃথিবীর সবথেকে একা। তুই তোর চারপাশের যাদেরকে তোর আপন ভাবছিস। মোটেও ওরা তোর আপন না। ভুলের হ্মমা হয়। কিন্তু তা একবার। বার বার ভুল করলে তার হ্মমা হয় না। আমি তোর ভালো চাই তাই তোকে একথা গুলো বললাম।
— হুম যা ভাই। আমাকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। আমার ভালো আমি নিজেই বুঝতে পারি।
রাফি চলে গেলে রিহা হাফ ছেড়ে বাচলো।রিহা মনে মনে বলতে লাগলো
— খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম। এই রাফি টার হঠাৎ করে কি হয়েছে। একটুর জন্য ইফান কে সব কিছু বলে দিতে যাচ্ছিল। ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে। অনেক কষ্টে ইফান কে আমার করেছি। এখন যতদিন না আমাদের বিয়ে হয় ততদিন ইফান কে কিছু জানতে দেওয়া যাবে না।
— রিহা রাফির কি হয়েছে বলো তো?
ইফানের কথা রিহা বাস্তবে ফিরলো।
— জানি না ওর কি হয়েছে। আচ্ছা যাই হোক ওর কথা বাদ দাও তো। আমরা দুজন আজ সেলিব্রেট করবো। তুমি এতদিনে ওই ইশিতা কে উচিত শিক্ষা দিয়েছো।ইয়াশ ইশিতা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। এখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ইশিতা এখনো ঘুম থেকে উঠছে না। ইয়াশ ও ইশিতা কে ডেকে তুলে নি। ইয়াশ অনেকক্ষণ ইশিতার পাশে বসে থেকে একটু আগে রুম থেকে বের হয়ে নিচে এসেছে। ইয়াশ ইফানের অপেক্ষা করছে। কখন ইফান বাসায় আসবে। অনেক হিসাব বাকি আছে ইফানের সাথে।
সন্ধ্যার পরেও ইফান না আসলে ইয়াশ নিচে থেকে অনেকক্ষণ ইফানের জন্য অপেক্ষা করে রুমে চলে যায়।
ইয়াশ রুমে এসে দেখে ইশিতা আগের মতই ঘুমাচ্ছে। ইয়াশ কিছুক্ষণ ইশিতার দিকে তাকিয়ে থেকে ইশিতা কে দেখে। ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতে বসে যায়। প্রায় ঘন্টা খানিক পর ইশিতার ঘুম ভাঙ্গে। ইশিতা বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল। এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকায় মাথা ভারী ভারী লাগছিল। যেই ইশিতা বেড থেকে উঠে দু’পা হেঁটে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল তখনই ওর মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিচ্ছিল। ইয়াশ পেছন থেকে এসে ইশিতা কে ধরে ফেললে ইশিতা পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে গেল। ইয়াশ ইশিতা দু’জনেই চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। ইয়াশের দু’হাত হাত ইশিতার কোমরের পিছনে, ইয়াশ উপুড় হয়ে ইশিতার দিকে একটু ঝুঁকে আছে। আর ইশিতা অর্ধেক পড়ে যাওয়া অবস্থায় ওর দু’হাতে ইয়াশের শার্টে খামচে ধরে আছে।
দুজন কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর ইয়াশ নিজে থেকে ইশিতা কে ছেড়ে একটু ঠিক হয়ে দাঁড়াল। ইশিতা ও উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো।
— একটু দেখে চলবে তো এখুনি তো পড়ে যেতে নিচ্ছিলে।
— আসলে হঠাৎ করে মাথা টা ঘুরে গেছে।
— মাথা তো ঘুরবে ই। শরীর দূর্বল। খাওয়া দাওয়া করো না তার উপর আবার সারাক্ষণ টেনশন নেও। এতো কিছুর পর মাথা তো ঘুরার ই কথা তাই না?
যাও এখন ফ্রেশ হয়ে এসে হালকা কিছু খেয়ে নেও। ডক্টর মেডিসিন দিয়ে গেছে তা খেতে হবে।
— ডক্টর?
— হুম তুমি তো সেন্স লেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে ছিলে। তখন আমি কিছু বুঝতে না পেরে বাসায় ডক্টর ডেকেছি।
— ওহ।
ইশিতা চোখে মুখে পানি দিতে ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দেওয়ার সময় ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া আজকের কথা মনে পড়ে গেল। ওসব ঘটনা মনে করে ইশিতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
চলবে…..