“সেই তুমি💐 পর্ব -৪৫+৪৬+৪৭(শেষ)

সেই তুমি💐
পর্ব -৪৫+৪৬+৪৭(শেষ)
Samira Afrin Samia
#Nipa

ইশিতা ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলে বসে আছে। ইয়াশ ইশিতার পেছন দাঁড়িয়ে থেকে আয়নায় ইশিতা কে দেখছে। ইশিতা হলুদ শাড়ি পড়েছে। ইশিতা কে আজ ইয়াশ নিজের হাতে সাজিয়ে দিবে। শাড়ি টা ও ইয়াশ ই পড়িয়ে দিয়েছে।
অনেক কষ্ট করে দুই জন মিলে চেষ্টা করে প্রায় এক ঘন্টার মত লাগিয়ে শাড়ি পড়া শেষ করেছে।
হলুদ শাড়িতে আজ যেন ইশিতা কে আরো দ্বিগুণ বেশি সুন্দর লাগছে।
ইয়াশ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হলুদের সেট টা হাতে নিলো।
সম্পূর্ন আসল ফুলের সেট। ফুল গুলো এখনও তাজা অবস্থায় আছে। ইয়াশ সবার প্রথম কানের দোল হাতে নিলো। সাদা ছোট ছোট ফুলের মাঝে একটু বড় হলুদ রঙের একটা ফুল দিয়ে কানের দোল বানানো হয়েছে। ইয়াশ খুব যত্ন করে ইশিতার কানে দোল পড়িয়ে দেয়। ইশিতা চুল গুলো খোঁপা করা হয়েছে। সামনে দিয়ে মাঝামাঝি সিঁথি করে দুই সাইটে হালকা ফুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবার ইয়াশ টিকলি টা নিয়ে ইশিতার সিঁথির মাঝে পড়িয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খায়। এভাবে এক এক করে সব গুলো গহনা পড়িয়ে দিয়ে ইশিতা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ইশিতা চোখ বুঁজে আছে। ইয়াশ ইশিতা কে মন ভরে দেখে নিচ্ছে।
— ইশিতা?
ইশিতা চোখ বুঁজে থেকেই উত্তর দেয়
— হুম।
— চোখ খোলে আয়নায় নিজেকে একটু দেখো। আমি কেমন করে আমার মায়াবতী টা কে সাজিয়েছি।
ইশিতা কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর ইশিতা চোখ খোলে পিছন ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখে।
মুখে হালকা মেকআপ,চোখে গাঢ় করে কাজল, ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক,মাথায় টিকলি,কানে দোল,নাকে টানা নোলক কানের পিছনে গুঁজে দেওয়া। গলায় ফুলের ছোট বড় মিলিয়ে তিনটা মালা। দুই হাত ভর্তি হলুদ রঙের কাচের চুড়ির সাথে ফুলের মালা দিয়ে ব্যসলেট। দুই হাতের আঙুলে বড় বড় ফুল দিয়ে তিনটা আংটি পড়ানো। কোমরে ফুলের বিছা। খোঁপায় রজনীগন্ধা ফুলের মালা। সাথে হলুদ রঙের বড় একটু ফুল গুঁজে দেওয়া। সব মিলিয়ে ইশিতা নিজেই নিজেকে চিনে উঠতে পারছে না।
ইয়াশ ইশিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে
— সব কিছু পারফেক্ট ভাবে হয়েছে তো?
ইশিতা কিছু না বলে চুপ করে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াশ ইশিতার দিকে ভালো করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে টিপের পাতা হাতে নিয়ে হলুদ রঙের ছোট একটা টিপ নিয়ে ইশিতার কপালে পড়িয়ে দেয়।
— এই বার হয়েছে একদম পারফেক্ট। হলুদের জন্য আমার মায়াবতী একদম রেডি।
ইশিতা কে চুপ থাকতে দেখে ইয়াশ ইশিতা কে জিঙ্গেস করলো
— কি হয়েছে এমন চুপ করে আছো কেন?
সাজ ভালো লাগে নি?
ইশিতা কিছু না বলে ইয়াশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ইয়াশ ইশিতার মাথায় হাত রাখে।
— কি হয়েছে পাগলী টার?
— কিছু না।
— তাহলে?
ইশিতা ইয়াশ কে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো।
— তুমি রেডি হবে না?
— আমি তো রেডি ই আছি।
ইশিতা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলো। হলুদ পাঞ্জাবির সাথে সাদা প্যান্ট। বাঁ হাতে বড় একটা কালো ঘড়ি। চুল গুলো স্পাইক করা।
ইয়াশ কে ও ইশিতার থেকে কম লাগছে না।
— চলো নিচে যাই।
ইশিতা রুম থেকে বের হতে নিলে ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে নেয়।
— আবার কি হলো?
— একটা জিনিস এখনও বাকি আছে।
— আর কি বাকি আছে?
— দাঁড়াও।
ইয়াশ ইশিতার চোখের কোণা থেকে আঙুলে একটু কাজল নিয়ে ইয়িতার কানের পেছনে লাগিয়ে দেয়।
— এই বার হয়েছে। এখন আর আমার মায়াবতীর উপর আর কারোর নজর লাগবে না।
ইশিতা ইয়াশের পাগলামি দেখে হেসে উঠে।
— তুমি ও এসব কিছুতে বিশ্বাস করো?
— আগে করতাম না। কিন্তু এখন করি যদি সত্যি সত্যিই তোমার উপর কারো নজর লাগে তখন?
— হয়েছে চলো এবার।

ইয়াশ ইশিতা নিচে এসে দেখে ইফান আর রিহা আগে থেকেই স্টেজে বসে আছে। ইয়াশ আর ইশিতা কে দেখে কাজল নাজমা চৌধুরী কে বলে উঠলো
— কাকী ওই দেখো তোমার বড় ছেলে তার বউ কে নিয়ে নিচে আসছে তাহলে। আমরা তো ভেবেছিলাম আজ ওরা নিচে আসতে পারবে না। তাদের রুমে গিয়েই হলুদ দিয়ে আসতে হবে।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকালো। কাজল উঠে গিয়ে ইশিতা কে ধরে এনে স্টেজে বসিয়ে দিলো।
— এতক্ষণ ওয়েট করিয়েছো। কি করছিলে গো তোমরা উপরে?
ইফান ভাইয়া আর রিহা ভাবীর মত কি তোমরা ও রোমান্স করছিলে?
ইশিতা লজ্জা পেয়ে হেসে দিয়ে
— আমার ননদিনী টা তো দেখি সত্যি ই অনেক পাকনা হয়ে গেছে। আমি তো ভাবছিলাম ননদিনী এখনও ছোট।
দাঁড়াও দেখছি তোমার জন্য ও কাউকে খুঁজতে হবে।
— ভাবী!
— কি হয়েছে ঠিকই তো বললাম।
— হুম কচু ঠিক বলেছো।

রিহা-ইশিতা এর স্টেজে আর ইয়াশ-ইফান এর স্টেজে। স্টেজ দুটো সামনাসামনি।
ইশিতা কে যেমন সুন্দর লাগছে তেমনই রিহা কে ও অনেক সুন্দর লাগছে। রিহা কে ও ঠিক ইশিতার মত করেই সাজিয়েছে।
ইয়াশ ইফান দুজনেই হলুদ পাঞ্জাবি। দুই ভাই পাশাপাশি বসে আছে। ইফান ইয়াশের দিকে তাকিয়ে
— ভাই তোকে যা লাগছে না! বলার বাহিরে। অবশ্য ভাবী কে ও কম সুন্দর লাগছে না। বলতে গেলে তোর থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে ভাবী কে।
— তোকে কোন দিক দিয়ে কম লাগছে? তুই তো সব সময়ই হ্যান্ডসাম ছিলি। আজ একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে।
ইফান হেসে দিলো। দুই ভাই ই দু’জনের বউয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ ইশিতা চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। ঐ দিকে ইফান রিহা ও চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। রিহা আর ইশিতা এক সাথেই চোখ টিপে উঠলো তা দেখে ইয়াশ ইফান এক সাথে শব্দ করে হেঁসে দিলো।

নাজমা চৌধুরী পাশ থেকে দাঁড়িয়ে নিজের দুই ছেলে কে দেখছে। ইয়াশ ইফান কে এতটা খুশি দেখে নাজমা চৌধুরীর ও অনেক ভালো লাগছে। নাজমা চৌধুরী তো সব সময় এটাই চেয়েছিল। উনার দুই ছেলেই যেন সুখে শান্তিতে হাসি খুশি থাকে। ছেলেদের সুখ ছাড়া আর কিছুই চায়নি নাজমা চৌধুরী।
একটা মা তো এটাই চায় তার সন্তান যেন পৃথিবীর সব সুখ পায়। তারা যেন ভালো থাকে।

সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহার গায়ে হলুদ দেওয়া হবে। সবার প্রথম বাবা মা ই হলুদ লাগায়। ইশিতার বাবা মা নেই। মামা মামী ই এখন তার বাবা মা। মামা মামী ইশিতার কপালে হলুদ ছুয়িয়ে দিল। সামনের স্টেজে এসে ইয়াশের কপালে ও হলুদ লাগিয়ে দিলো। রিহার পরিবার থেকে কেউ আসেনি। রিহা কাঁদো কাঁদো হয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। সবার মাঝেও রিহার নিজেকে কেমন একা লাগছে। ইশিতার মামী রিহার দিকে লক্ষ্য করলো। রিহার মন খারাপ।
— আমরা কি শুধু এক মেয়েকেই হলুদ লাগাবো। ঐ দিকে যে আরেক মেয়ে ও বসে আছে তা কি দেখবে না। তাকে কি হলুদ লাগাবে না?
ইশিতার মামা সালেহা বেগমের কথা শুনে
— সত্যি ই তো। আমরা তো শুধু ইশিতা কে ই হলুদ লাগালাম। রিহা কে হলুদ লাগায় নি।
সালেহা চলো আমাদের আরেক মেয়ে কে ও হলুদ লাগিয়ে আসি।
ইশিতা জানতো তার মামা মামী কখন তাকে একা হলুদ লাগাবে না। রিহা এবার কেঁদেই উঠলো।
সালেহা বেগম রিহার কাছে গিয়ে
— পাগলী মেয়ে কাঁদে কেন?
আমরা কি তোর বাবা মা’র মত না। আমাদের কি তোর বাবা মা ভাবতে পারবি না?
রিহা সালেহা বেগম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।

একে একে ইয়াশ ইফান ইশিতা রিহা সবাইকে হলুদ লাগানো হলো। ইয়াশের কাজিন রা তো সবাইকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানিয়ে ফেলছে। হলুদের কারণে কাউকে দেখে ঠিকঠাক মত চেনা ই যাচ্ছে না।কাজল সবচেয়ে বেশি হলুদ মাখিয়েছে ইফান কে। ইফান ও কাজল কে পুরো বাড়ি দৌঁড় করিয়ে হলুদ মাখিয়ে দিয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করেছে।
হৈহোল্লরের মাঝ দিয়ে শেষ হলো হলুদ মাখানোর পর্ব।
সবাই ক্লান্ত হয়ে হলুদ লাগিয়ে ভূত সেজে যার যার মত করে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। সবার মাঝ থেকে কাজল উঠে গিয়ে ডান্স করার জন্য যে স্টেজ করা হয়েছে তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এক জন কে ইশারা করে মাইক আনতে বললে। সে মাইক নিয়ে কাজলের হাতে দেয়। কাজল হাতে মাইক নিয়ে ডান্স ফ্লোরে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে লাগলো।

চলবে…..

সেই তুমি💐
পর্ব -৪৬
Samira Afrin Samia
#Nipa

— শুনেন,শুনেন,শুনেন,,,,,
সবাই আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনারা সবাই জানেন আজ আমার দুই ভাই ইয়াশ-ইফানের হলুদ সন্ধ্যা।
সবাই অনেক আনন্দ করেছি। হলুদ মাখামাখি করেছি।
কিন্তু হলুদ সন্ধ্যা কি হলুদ মাখিয়ে ই শেষ হয়ে যাবে?
নিশ্চয় না?
এখন তো মাত্র হলুদ সন্ধ্যা শুরু হলো। আসল মজা তো এখনও বাকি আছে।
কাজলের কথা শুনে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। কাজল আবার বলতে শুরু করলো।
— শুধু হলুদ মাখিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে কি করে চলবে?
এখনও তো ডান্স করা বাকি আছে।
ডান্স ছাড়া কি হলুদ সন্ধ্যা সম্পূর্ণ হবে?
সবাই এক সাথে চিল্লিয়ে না বলে উঠলো।
— তাহলে চলো সবাই রেডি হয়ে যাও।
কাজলের চোখের ইশারায় ওর সব ফ্রেন্ড আর কাজিন রা স্টেজে উঠে আসলো।
— তাহলে সবার আগে আমরা ই শুরু করি কেমন?
সবাই চিল্লাচিল্লি হৈচৈ শুরু করে দিল।
হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেল। স্টেজে থাকা সবাই যার যার পজিশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
— “মিউজিক”
কাজলের বলার সাথে সাথে মিউজিক বাজতে শুরু করলো। আর লাইট ও চলে আসলো।
গানের তালে তালে সবাই খুব সুন্দর করে টাল নাচছে।
এভাবে এক এক করে প্রায় সবাই ডান্স পারফরমেন্স করলো।
একটু বয়স্ক মহিলা আর পুরুষ রা ও ডান্স পারফরমেন্স করেছে। তার পর আবার ইয়াশ – ইফান এক সাথে ডান্স করেছে। আর ইশিতা – রিহা ও এক সাথে ডান্স করেছে।
এবার ইয়াশ-ইশিতার এক সাথে ডান্স করার পালা। তার পর আবার ইফান-রিহা।
কাজল এক এক সবাই কে ধরে এক প্রকার জোর করে ডান্স করিয়েছে।
ছেলে মেয়েরা তাদের মত এনজয় করছে। এখানে নাজমা চৌধুরী আর থাকলো না। উপরে নিজের রুমে চলে গেল। কাজল ইয়াশ-ইশিতা কে টেনে নিয়ে গিয়ে ডান্স ফ্লোরে দাঁড় করালো।
মাইক হাতে নিয়ে।
— উহুম,,উহুম,,,
এ্যাটেনশন,,,! এ্যাটেনশন,,,! এ্যাটেনশন,,,,,,!
লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান এখন আপনাদের সবার সামনে ডান্স পারফরমেন্স নিয়ে আসছে আমাদের সবার প্রিয়, বিয়ের বর-কনে নাম্বার ওয়ান।
ইয়াশ ভাইয়া আর ইশিতা ভাবী।
সবাই হাত তালি দিতে শুরু করলো।
— থামেন,,থামেন,,থামেন,,,,
আগে তো ওদের ডান্স দেখে নিন তার পর নাহয় হাত তালি দিবেন।
সো আমাদের সামনে আসতে চলেছে জুরি নাম্বার ওয়ান ইয়াশ-ইশিতা।
মিউজিক,,,,,,,,,,
কাজল স্টেজ থেকে নেমে গেল। সাথে সাথে সব লাইট অফ হয়ে গেল। শুধু ইয়াশ আর ইশিতার উপর একটা লাইট ফোকাস করে জ্বলে উঠলো। গান চালু হয়ে গেল। ইশিতা লজ্জা পাচ্ছে। মুখ লাল করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর নিয়ে ফেলে। ইয়াশের ডান হাত ইশিতার কোমরের পেছনে নিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। ইশিতার বাঁ হাত ইয়াশের কাঁধের উপর আর ডান হাত ইয়াশের বাঁ হাতের মুঠোর মধ্যে।

🎼 Dekha hazaron dafa aapko,,, phir beqarari kaisi hai……..

Sambhale sambhalta nahi ye dil,,, kuch aap mein baat aisi hai…..

Lekar ijazat ab aap se,, saansein ye aati jaati hain….

Dhoondhe se milte nahi hain hum,,,bas aap hi aap baaki hain…..

Pal bhar na doori sahen aap se,,,,betaabiyan yeh kuch aur hain……

Hum door hoke bhi paas hain,,,Nazdeekiyan yeh kuch aur hain…..

Dekha hazaron dafa aapko,,,phir beqarari kaisi hai…….

Sambhale sambhalta nahi ye dil,,,,kuch pyar mein baat aisi hai……….. Hmmm……..Hmmm…….phir beqarari kaisi hai…..Hmmm…..Hmmm…..kuch pyar mein baat aisi hai

ইশিতা ইয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জন দু’জনের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। ইয়াশ ইশিতার চোখে ডুবে গেছে।
চারিদিকে কি হচ্ছে তার কোন খেয়াল নেই দু’জনের। ওরা নিজেরা নিজেদের আলাদা জগৎ হারিয়ে গেছে।
এভাবে এক পর্যায়ে গান শেষ হয়ে গেলে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাত তালির সাথে সাথে শিটি বাজাতে লাগলো। গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে সব লাইট অন করা হয়েছে। চারিদিকে এতো মানুষ এতো হৈচৈ করছে তবুও ইয়াশ ইশিতা তাদের দিকে খেয়াল করছে না। তারা দু’জন আগের মতো করেই দাঁড়িয়ে আছে।
কাজল স্টেজে উঠে গিয়ে ইয়াশ ইশিতা কে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে
— এই যে মিস্টার এন্ড মিসেস।
গান কখন অফ হয়েছে কিন্তু এখনও আপনারা ডান্স করছেন।
কাজলের ধাক্কা দেওয়াতে ওদের দু’জনের খেয়াল হলো। সাথে সাথে ইয়াশ ইশিতা কে ছেড়ে দেয়৷ ইশিতা ইয়াশের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।
— না! তোমরা যদি আরো কিছুক্ষণ ডান্স করতে চাও। তাহলে আমরা কেউ ই আপত্তি করবো না। বরং আমরা তো এতক্ষণ তোমাদের ডান্স অনেক এনজয় করছিলাম।
ইশিতা কিছু না বলে মুখ লুকিয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল। কাজল ইয়াশের কাছে গিয়ে
— কি ভাইয়া। আরেক বার ভাবীর সাথে ডান্স করার সুযোগ করে দিব নাকি?
তুমি যদি বলো তাহলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি তোমাদের আবার এক সাথে ডান্স করার সুযোগ করে দিতে।
— সত্যি ই খুব পাকনা হয়ে গেছিস তুই। ইফান তোকে মেরে একটু ও অন্যায় করে না।
— ভাইয়া তুমি ও শেষে ইফান ভাইয়ার দলে চলে গেলে।
— হুম পাকনা বুড়ি। দাঁড়া চাচা কে বলে তোর ও একটা ব্যবস্থা করছি।
— ভাইয়া!!ভালো লাগে না।
— হুম হুম জানি তো।
— হুম জানো তো ভালো এবার যাও তোমার বউয়ের কাছে।

কাজল আবার মাইক হাতে নিয়ে
— এতক্ষণ তো সবাই জুরি নাম্বার ওয়ান কে ডান্স করতে দেখলাম। এবার দেখবো জুরি নাম্বার টু। আমাদের সবার ভালোবাসার ইফান ভাইয়া আর রিহা ভাবী।
সো সবাই হাত তালি দিয়ে ওদেরকে স্বাগতম জানাও।
ইফান ভাইয়া রিহা ভাবী তাড়াতাড়ি করে স্টেজে চলে এসো।
এই বলে কাজল নিচে নেমে গেল।

ঠিক আবার আগের মতই সব লাইট অফ হয়ে একটা ফোকাস লাইট ইফান আর রিহার উপর এসে পড়লো। ইফান রিহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। রিহা ইফানের হাত ধরলে ইফান রিহা কে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। রিহার পিঠের অংশ ইফানের বুকের সাথে মিশে আছে। আর ইফান ওর দুই হাত দিয়ে রিহার দুই হাত ধরে রেখেছে। গান বাজছে। সবাই অবাক হয়ে ইফান রিহা কে দেখে যাচ্ছে। ইফান আর রিহা গানের তালে নাচতে শুরু করলো।

Mainu ishq tera lae dooba
Haan ishq tera lae dooba…..

Aisa kyun hota hai
Tere jaane ke baad
Lagta hai haathon mein
Reh gaye tere haath
Tu shaamil hai mere
Hasne mein rone mein
Hai kya koyi kami
Mere pagal hone mein
Mainu ishq tera lae dooba
haan ishq tera lae dooba……

har dafa wahi
jaadoo hota hai tu jo mile
Hoo oh…….sab sawar jaata hai
Yaara andar mere
Ik lamhe mein kitni
Yaadein ban jaati hain
Main itna hasti hoon
Aankhein bhar aati hain……..💕

চলবে,,,
সেই তুমি💐
পর্ব -৪৭
Samira Afrin Samia
#Nipa

হঠাৎ করে গান শেষ হওয়ার আগেই নাচের মাঝ থেকে ইফান রিহা কে ছেড়ে স্টেজ থেকে নেমে চলে যায়। ইফান চলে গেলে রিহা একা স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকে। রিহার চোখ ঝলঝল করছে। হঠাৎ করে ইফানের রিহা কে এভাবে একা রেখে চলে যাওয়া রিহা মেনে নিতে পারেনি। ইফানের এমন কান্ড দেখে রিহার সাথে সাথে ইয়াশ ইশিতা কাজল বাকি সবাই অবাক হয়ে গেল। ডান্সের মাঝ থেকে ইফানের কি এমন হলো যার জন্য ইফান এমন কাজ টা করলো?
সবাই কে আরো অবাক করে দিয়ে ইফান সোজা মেইন ডোর দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল। রিহা এবার কেঁদেই দিল। রিহার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। ইফান তো স্বাভাবিক হয়ে গেছিল তারপরও কেন এমন করলো ইফান?
তাহলে কি ইফান রিহা কে এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। একটু আগে পরিবেশ টা যতটা আনন্দ ও হৈচৈ মাখা ছিল। এখন ঠিক তেমন টাই নীরব হয়ে গেছে। সবাই চুপ করে আছে। থমথমে নীরবতা কাজ করছে সবার মাঝে।
রিহা কে কাঁদতে দেখে কাজল আর ইশিতা রিহার কাছে স্টেজে চলে যায়। ইয়াশ ও ইফানের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
— ইফান কোথায় যাচ্ছিস তুই?
দাঁড়া বলছি।
ইফান ইয়াশের কথা কানে না নিয়ে একবার ও পেছনে না ফিরে কার নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। ইয়াশ তাড়াতাড়ি বের হয়েও ইফান কে আটকে পারলো না। ইয়াশ ইফানের কাছে আসার আগেই ইফান চলে গেছে।
রিহা এখনও কেঁদেই যাচ্ছে। ইশিতা রিহা কে বুঝাচ্ছে।
— প্লিজ রিহা কেঁদো না। ইফানের হয়ত হঠাৎ করে কোন কাজের কথা মনে পড়ে গেছে আর তাই তাড়াহুড়ো করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
— না ইশিতা আমি জানি ইফান কোন কাজে যায়নি। ইফান এখনও আমাকে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারেনি।
— তুমি এমন কেন ভাবছো?
এমনটা তো না ও হতে পারে।
— এমন টাই হয়েছে।

রিহা নিজের রুমে চলে গেল। ইশিতা অনেক বুঝিয়ে ও রিহা কে শান্ত করতে পারেনি। গান বাজনা অফ হয়ে গেল। প্রায় সব গেস্ট রা চলে গেল। এখন শুধু ফ্যামিলির মানুষ গুলো বাসায় আছে।
ইশিতা কাজল অনেক বুঝিয়ে রিহা কে নিচে নিয়ে আসে মেহেদী পড়ানোর জন্য।
রিহা প্রথমে হাতে মেহেদী লাগাতে না চাইলে ও পরে ইশিতার জন্য লাগাতে হয়েছে।
ইশিতা রিহা কে বলে দিয়েছে রিহা যদি মেহেদী না লাগায় তাহলে ইশিতা ও লাগাবে না।

কাজল ইশিতা ও রিহার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়। ইশিতার হাতে ইয়াশের নাম আর রিহার হাতে ইফানের নাম লিখে দিয়েছে।
রাত বারোটার উপরে বাজে এখনও ইফান বাসায় আসেনি। ইয়াশ অনেক বার ইফান কে ফোনে ট্রায় করে পায়নি।

রাত ঠিক দুই টা বাজে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ইশিতা রিহা আর কাজল জেগে আছে। ইশিতা আর রিহার হাতের মেহেদী শুকিয়ে গেছে।
ইয়াশ ও অনেক আগে কার নিয়ে বের হয়েছে ইফান কে খুঁজার জন্য।

ইশিতা রিহা আর কাজল তিন জনের চোখে ই ঘুর ভর করে আসছে। বলতে গেলে তিন জন ই ঝিমাচ্ছে। কাজল হামি তুলতে তুলতে
— ভাবী আমি এখন ঘুমাতে যায়। একটু না ঘুমালে আমার আর কাল তোমাদের বিয়ে দেখা হবে না। এখন আমি ঘুমাতে না গেলে দেখা যাবে কাল তোমাদের বিয়ের রেখে আমি রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি।
— আচ্ছা যাও। অনেক ধকল গেছে আজ সারা দিন। এখন তোমার সত্যি ই ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
— যাই রিহা ভাবী। আর হ্যাঁ ইশিতা ভাবী তোমরা ও ঘুমোতে চলে যেও। আর রাত করো না। ইয়াশ ভাইয়া তো গেল ইফান ভাইয়া কে খুঁজে আনতে।
দেখো ওরা ঠিক চলে আসবে।
রিহা কাজলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।
— হুম। এখন তুমি যাও।

কাজল রুমে চলে যাওয়ার একটু পর ই ইয়াশ ইফান কে নিয়ে বাসায় ফিরে। ইয়াশ ভেতরে এসে কারো দিকে না তাকিয়ে
— ইফান রিহা কে নিয়ে রুমে যা। আর ইশিতা তুমি ও রুমে আসো।
ইয়াশ সিঁড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়। ইশিতা ও ইয়াশের পেছন পেছন রুমে চলে যায়। ইফান ও রিহা কে নিয়ে রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়ে রিহা ইফান কে কিছু জিঙ্গেস করেনি। ইফান কোথায় গেছিল। আর ওভাবে কেনই বা চলে গেছিল। রিহা শুয়ে পড়ে। এক সময় রিহা ঘুমিয়ে ও যায়। রিহা ঘুমিয়ে গেলে ও ইফান ঘুমাতে পারে না। ইফানের চোখে ঘুম আসে না।
ইফান রিহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। রিহার মুখের উপর আসা চুল গুলো সরিয়ে দেয় এক নজরে চেয়ে দেখতে থাকে রিহা কে।
— কি করবো আমি?
আমি অনেক চেষ্টা করছি নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে। এতো চেষ্টা করে তবুও কেন আমি সব কিছু ঠিক করতে পারছি না। কেন না চাইতে ও বার বার আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আমার চোখে ভেসে উঠে। আমি তো ওসব মনে রাখতে চাই না। তার পর ও কেন আমি ওসব কথা ভুলতে পারছি না। আমি তো রিহা কে হ্মমা করে দিয়েছি তাহলে কেন আমি রিহা কে ভালোবাসতে পারছি না।
ইফানের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ইফান লাইট অফ করে রিহার পাশে শুয়ে পড়ে। কাল নতুন করে রিহার সাথে সব কিছু শুরু করবে ইফান। তখন হয়ত সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।পরের দিন সকালে বিয়ের আয়োজন ধুমধাম করে চলছে। কাজল সবার আগে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ইশিতা আর রিহা কে ডেকে তুলে নিচে নিয়ে আসে।
নিচে সবাই সবার মত করে ছুটাছুটি করে কাজ করছে কারো এক মিনিট ও সময় নেই একটু দাঁড়াবার জন্য। সবাই প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত। অবশ্য ব্যস্ত হওয়ার ই কথা এক সাথে দুই টা বিয়ে হচ্ছে। আয়োজন দ্বিগুণ আর তাই সবার ব্যস্ততা ও দ্বিগুণ।

নাজমা চৌধুরী হাতে কিছু কাগজ নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। হঠাৎ ইশিতা কে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে
— তোরা এখানে কি করছিস। একটু পর তোদের সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসে যাবে।
— মা তুমি এতো ছুটাছুটি করছো কেন?
জানোই তো তোমরা শরীর ভালো না।
— আরে ছেলের বিয়েতে মা ছুটাছুটি করবে না তো কে করবে?
— আচ্ছা তোমার আর কি কি কাজ বাকি আছে আমাকে বলো আমি করে দেই।
— শুনো পাগলী মেয়ের কথা। বিয়ের দিন ও নাকি তাকে দিয়ে কাজ করাবো।
রিহা পাশ থেকে বলে উঠলো
— ইশিতা তো ঠিকই বলেছে মা। তোমার এতো কাজ একা করতে হবে না। তুমি আমাদেরকে বলো আমরা ই সব কিছু করতে পারবো।
নাজমা চৌধুরী হেসে দিয়ে
— তুই তো দেখছি ইশিতার থেকেও বেশি পাগল।
তোদের কোন কাজ করতে হবে না। তোরা উপরে চলে যা
এই কাজল তুই ওদের দুই জন কে রুমে নিয়ে যা তো।
— আচ্ছা চাচি।
— পার্লারের লোক আসলে আমি ওদের রুমে পাঠিয়ে দিব।

দুপুরের দিকে ইশিতা গোসল সেরে রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে। হঠাৎ কোথায় থেকে ইয়াশ এসে পেছন থেকে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে। ইশিতা প্রথমে ইয়াশ কে দেখতে পায়নি। তাই একটু ভয় পেয়ে গেছিল। ইশিতা চিৎকার দিতে নিলে ইয়াশ ইশিতার মুখ চেপে ধরে
— আরে ভয় পাচ্ছ কেন?
আমি ই আসছি অন্য কেউ আসেনি।
ইশিতা ইয়াশের কন্ঠ শুনে একটু স্বাভাবিক হলো কিন্তু এখনও ইশিতার বুধ ধরফড় করছে।
— তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিছিলে।
— এতো ভয় পাও কেন?
ভয় পাওয়ার কি আছে হুম?
ইয়াশ আয়নায় তাকিয়ে ইশিতা কে দেখে নিলো। ইশিতার ভেজা চুল থেকে এখনও টুপটুপ করে বিন্দু বিন্দু পানি ফোটা মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
ইয়াশ পেছন থেকে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে আছে। ইশিতা আয়নায় দেখা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে।
ইয়াশ ইশিতার হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে বেডের উপর রেখে দিলো। ইশিতা কিছু বলার আগে ইয়াশ ইশিতার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে নিয়ে ইশিতার পিঠে মুখ গুঁজে নেয়।
হঠাৎ পিঠের মধ্যে ইয়াশের গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া অনুভব করে ইশিতার হার্ট বিট বেড়ে যায়। ইশিতা ইয়াশের হাত আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ইয়াশ ইশিতার পিঠে আলতো করে চুমু খেলে ইশিতা পেছন ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়াশ কে।রিহা গোসল শেষ করে রুমে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে পেছনে ফিরতে নিলে ইফানের সাথে ধাক্কা লেগে একটুর জন্য পড়ে যেতে নিলে ইফান রিহা কে ধরে নেয়।
ইফান নিচু হয়ে রিহার দিকে ঝুকে আছে। রিহা পড়ে যাওয়া অবস্থায় শক্ত করে এক হাতে ইফানের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে আরেক হাতে ইফানের হাত ধরে রেখেছে। ইফান বেশ কিছুক্ষণ রিহার দিকে তাকিয়ে থেকে রিহা কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে শার্ট ঠিক করতে লাগলো। রিহা ইফানের দিকে না তাকিয়ে
— থেংক্স।
ইফান প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে রিহার দিকে তাকায়।
— আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য থেংক্স।
ইফান এবার ক্লান্ত দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইফান বুঝতে পারছে কাল হঠাৎ করে ডান্সের মাঝ থেকে ওভাবে রিহা কে ছেড়ে চলে যাওয়ায় রিহা রাগ করেছে। সত্যি ই ইফানের ওমন করা ঠিক হয়নি। সবাই কি ভেবেছে। আর রিহা ই বা ওই ঘটনার পর সবাই কে কি বুঝিয়েছে?
রিহা একটা হালকা হলুদ রঙের সুতি শাড়ি পড়েছে। আঁচলের দিকে হালকা একটু সবুজ ডোরা কাটা। ভেজা চুলে মেকআপ ছাড়া খুব সিম্পল ভাবে রিহা কে বেশ ভালো লাগছে। ইফান কতক্ষণ এভাবে এক দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে ছিল তা ইফানের ও খেয়াল নেই। রিহা ইফানের সামনে থেকে চলে গেলে ইফানের হুশ হয়। রিহা এখনও ইফানের উপর অভিমান করে আছে এটা ইফান খুব ভাল করে বুঝতে পারছে। ইফান ও আর রুমে না থেকে বেরিয়ে গেল। তবে এবার বেড়োনোর আগে রিহা কে বলে বের হলো।
— রিহা আমি একটু বের হচ্ছি ঘন্টা খানেকের মধ্যে ই চলে আসবো।
ইফানের এই কথা শুনে রিহা অবাক হয়ে ইফানের দিকে তাকালো। মনে মনে একটু খুশিও হলো রিহা।পার্লার থেকে কয়েক জন মহিলা আসলো। দুপুর থেকে ইশিতা আর রিহা কে সাজাতে বসে গেল। ইশিতার রুমে ইশিতা কে সাজাচ্ছে আর রিহার রুমে রিহা কে সাজাচ্ছে। কাজল এক বার এই রুম আরেক বার ওই রুমে ছুটাছুটি করছে। বার বার গিয়ে দেখে আসছে কাকে কিভাবে সাজাচ্ছে। নিচে সব গেস্ট রা অনেক আগেই এসে গেছে। যেহেতু এক বাড়ি থেকেই বর কনের বিয়ে হচ্ছে তাই আর বর কখন আসবে, বরযাত্রী দেরকে কে দেখাশোনা করবে, ওদের কাছে কে যাবে তা নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই। কাজী সাহেব আসলে বর কনে কে এক সাথে নিচে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইশিতা আর রিহার শাড়ি একই রকম। দু’জনের জন্য ই লাল বেনারসি আনা হয়েছে। সব গহনাপত্র ও একই রকম। পার্লারের মহিলাদের কে বলা হয়েছে দুই জনকে যেন একই ভাবে সাজানো হয়।
ইয়াশ ইফান দু’জনের জন্য ই গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানির সাথে সাদা পাজামা।

কনে সাজানোর পর্ব শেষ হলে কাজল ইশিতা আর রিহা কে নিচে নিয়ে যায়। ইশিতা আর রিহা কে পাশাপাশি দেখে সবাই ওদের দু’জনের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। দু’জন কে ই খুব সুন্দর লাগছে। লাল শাড়ি, ভারী গহনা ও মেকআপ এর মাঝে দু’জন কে ই দুই টা লাল পরীর মত লাগছে। যেমন সুন্দর লাগছে ইশিতা-রিহা কে ঠিক তেমনই ইয়াশ-ইফান কেও কোন রাজকুমারের থেকে কম লাগছে না। দুই ভাই এক সাথে পাশাপাশি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে।
নাজমা চৌধুরী ওদের সবাইকে দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না।

সবশেষে কাজী সাহেব ওদের চার জনের বিয়ে পড়ায়। আজ ওরা চার জন ই আবার নতুন করে জীবন শুরু করছে। আজ ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহা দ্বিতীয় বার বিয়ের পবিত্র বাঁধনে বাঁধা পড়লো। যার যার ভালোবাসার মানুষ টা কে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পেল।খুব সুন্দর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো রিহা-ইফান ইশিতা-ইয়াশের বিয়েটা!
সবাই খুব আনন্দ করেছে। আজ ইশিতা রিহার বান্ধবীরাও এসেছে। রিহার খুব কাছের দু-একজন আত্নীয় ও এসেছে।
খুব জলদিই সম্পন্ন হয়ে গেছে বিয়েটা।

রাতে কাজল ইশিতা আর রিহা কে তাদের নিজেদের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময়
— আমি এখন কি করবো?
কাজলের এই কথা শুনে ইশিতা রিহা দুজন একসাথে বলে উঠে
— তুমি এখন কি করবে মানে?
— মানে টা হলো দুই ভাবী থেকে কোন ভাবী কে আগে তার রুমে নিয়ে যাবো?
আর দুই ভাইয়া থেকে কোন ভাইয়া কে রুমে যাওয়ার সময় টাকার জন্য আটকাবো?
আমি একা তো আর একই সময়ে দুই জায়গায় থাকতে পারবো না।
রিহা ইশিতা কাজলের কথা শুনে না হেঁসে পারলো না।
— ভাবী তোমরা হাসছো?
— তোমার এমন কান্ড কেউই না হেঁসে থাকতে পারবে না।
— তোমরা সবাই এক রকম। কেউ ভালো না।

পাশাপাশি ঘরে বসে আছে রিহা-ইশিতা। ইফান ঘরে ডুকতেই রিহা উঠে দাঁড়ায়।সালাম করে ইফানের পা ছুঁয়ে!
পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা বক্স বের করে রিহার হাতে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় ইফান।রিহা ইফানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বক্সটা খুলে দেখলো একটা ডাইমন্ড রিং। কখন কিনেছে কে জানে ভেবেই মুচকি হাসলো রিহা!
তারপর বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে ব্যালকনিতে চলে গেলো রিহা। বেতের চেয়ারে বসে গা এলিয়ে এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ইফান। রিহা গিয়ে পাশে বসে ইফানের বুকে মাথা রাখে। ইফান শক্ত করে রিহার হাত ধরে নিয়ে আকাশের পূর্ণ চাঁদ টার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ইফানের দৃষ্টি অনুসরণ করে রিহা ও চাঁদের দিকে তাকায়।
বেশ অনেকক্ষণ দু’জনই চুপচাপ বসে চাঁদ দেখতে থাকে। চারদিকে একটা স্তব্ধতা নেমে আসে। এই স্তব্ধতার মাঝে দু’জন দু’জনার নিশ্বাসের শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

খানিকক্ষণ পর সব স্তব্ধতা ভেঙে রিহা আগে বলে উঠে
— ইফান?
— হুম।
— চাঁদ টা কি সুন্দর লাগছে তাই না?
— হুম।
— অনেক আলো দিচ্ছে তাই না?
— হুম।
— শুধু কি হুম হুম ই করবে?
— না।
— তাহলে কিছু বলো।
ইফান রিহার দিকে তাকিয়ে রিহার দুই হাত নিজের মুঠোয় বন্দী করে
— রিহা সবসময় থাকবে তো আমার পাশে??
আমি চাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে।
আর পাঁচটা সুখী মানুষের মত সুখী হতে..তুমি সাহায্য করবে তো আমায়??
— আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবো তোমার পাশে। শুধু মৃত্যু ছাড়া এই পৃথিবীর কেউ আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। আমি চেষ্টা করবো আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে। আমি তোমাকে ভালোবেসে তোমার পাশে থেকে তোমার সাথে বাঁচতে চাই। তুমি দিবে তো আমাকে এই সুযোগ টা?
কথা গুলো বলার সময় রিহার চোখের কোণা বেয়ে পানি পড়ছিল। চাঁদের আলোয় ইফান স্পষ্ট দেখতে পারছে রিহা যে কান্না করছে। ইফান রিহার চোখের পানি মুছে দিয়ে রিহা কে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে নিয়ে যায়।ইশিতা এই এতো ভারী শাড়ি আর ভারী ভারী গহনা গুলো পড়ে থাকতে আর পারছে না। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। মুখে এতো মেকআপ লাগানো হয়েছে ইশিতা নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো। ইয়াশ রুমে এসেছে। ইয়াশ আসছে বুঝতে পেরে ইশিতা কাচুমাচু করে বসে রইল।
ইয়াশ রুমে আসে দেখে এই গরমের মাঝে ইশিতা এখনও ওই ভারী ভারী গহনা আর শাড়ি পড়ে বসে আছে।
— এখনও এভাবে বসে আছো কেন?
ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসো।
ইশিতা কিছু না বলে বেড থেকে উঠে এসে ইয়াশ কে সালাম করতে নিলে ইয়াশ ইশিতা কে আটকে দেয়।
— পায়ে ধরে সালাম করতে হবে না। স্ত্রীর জায়গা স্বামীর পায়ে নয়। আমি তোমাকে আমার বুকে জায়গা দিতে চাই।
দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমে এসে পড়ছে। ইয়াশ ইশিতার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে
— ছাঁদে যাবে?
আজ দুজন এক সাথে ছাঁদে পাশাপাশি বসে চাঁদ দেখবো।
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে হুম বললো।
ইয়াশ সাথে সাথে ইশিতা কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদের দিকে যেতে লাগলো।
— আজ মাটির একটা চাঁদ কে আমার পাশে নিয়ে আকাশের আরেকটা চাঁদ দেখবো।
এই বলে ইয়াশ ইশিতার নাকের সাথে ওর নাক ঘসে দিলো। ইশিতা লজ্জা পেয়ে ইয়াশের শার্টের কলারে আরো শক্ত করে ধরলো।

আজ আকাশের ওই পূর্ণ চাঁদ টার মত পূর্নতা পাক ইয়াশ-ইশিতা ও ইফান-রিহার ভালোবাসা। নিজেদের জীবন সঙ্গীর সাথে ভালো থাকুক ওরা চার জন ই। সুখে থাকুক ভালোবাসার মানুষ টা।ছয় বছর পর,,,,,,,

— দাদুভাই তোমার ছোট বাবা ফোন দিয়েছে। তোমার সাথে কথা বলবে তাড়াতাড়ি এসো।
নাজমা চৌধুরী নিচে হলরুমে বসে ছিল। নাজমা চৌধুরীর এই কথা শুনে চার বছরের একটা ছোট চঞ্চল মেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে।
— আস্তে আসো দাদুভাই পড়ে যাবে তো।
— দাদী তুমি ছোট বাবা কে বলো আমি আসছি। অনেক কথা আছে ছোট বাবার সাথে।
ইরা নাজমা চৌধুরীর কাছে এসে হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কথা বলতে লাগলো
— ছোট বাবা তুমি কবে আসবে? তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করি। তুমি ছোট আম্মু কে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল। তোমাদের ছাড়া আমার একটু ও ভালো লাগে না। তোমরা দু’জনই খুব পঁচা আমাকে রেখে কতদিন একা আছো।
ফোনের ওপাশ থেকে
— ওরে আমার আম্মু রে। আমি ও তো তোমাকে অনেক মিস করি। তুমি একদম মন খারাপ করো না। আমি আর তোমার ছোট আম্মু কালকেই বাসায় চলে আসবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কিন্তু আমার জন্য চকলেট আনতে ভুলবে না।
এই নেও দাদীর সাথে কথা বলো আমি বাবা কাছে গেলাম। ইফান কে আর উল্টে কিছু বলতে না দিয়ে ইরা ফোন নাজমা চৌধুরীর কাছে দিয়ে চলে গেল।

ইরা ইয়াশ আর ইশিতার মেয়ে। এই তো আর দুই দিন পর ইরা পাঁচ বছরে পা দিতে যাবে।
ইরা ইয়াশ আর ইশিতার চোখের মণি। ইরা কে না দেখে কেউ এক মিনিট ও থাকতে পারে না।
ইফান রিহা কে নিয়ে দেশের বাইরে ডক্টর দেখাতে গেছে। রিহা এখনও মা হতে পারেনি। অনেক ডক্টর দেখানো হয়েছে তবুও কোন লাভ হয়নি।
সবাই রিহা কে কোন শাস্তি না দিয়ে হ্মমা করে দিলেও আল্লাহ ঠিকই রিহা কে তার পাপের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে। আর তাই হয়ত রিহা এখনও সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি।

ইফান রিহার নিজের বাচ্চা নেই এনিয়ে তাদের বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই। ইফান রিহা দুজনেই ইরা কে নিজের সন্তান মনে করে। নিজের সন্তানের মত করেই ইরা কে ভালোবাসে। ইরা ও সব সময় এই কথা বলে তার দুই টা আব্বু আম্মু। বলতে গেলে ইফান রিহা ইরা কে ইয়াশ ইশিতার থেকেও বেশি ভালোবাসে। ছোট থেকে ইরা বেশির ভাগ সময় রিহার কাছেই থেকে। রিহার বাচ্চা নেই বলে ইশিতা ও তেমন আপত্তি করেনি ইরা কে রিহার কাছে রাখতে।
ছোট ইরা কে নিয়ে বেশ সুখেই দিন পাড় করছে ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহা। চৌধুরী পরিবারে এখন দুঃখ কষ্টের কোন জায়গা নেই। ভালোবাসা দিয়ে সবাই সব কষ্ট গুলোকে চৌধুরী পরিবার থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ইরা নাজমা চৌধুরীর হাসি খুশি ভরা ছোট পরিবার টা একদম পরিপূর্ণ করে দিয়েছে।

সমাপ্ত 💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here