সেই তো এলে তুমি পর্ব -১৬+১৭

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz
.
.
আলিয়া খাতুন হতাশ মনে নওয়াজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। পথিমধ্যে এক প্রতিবেশী মহিলার সাথে তার দেখা হয়। তিনি অনেকটা ব্যঙ্গ করে বললেন, কিরে আলিয়া? তায়শার কী খবর? আর কোনো পাত্র পাবে বলে মনেহয় ওর জন্যে?
.
আলিয়া ভ্রু কুচকে বলল-
কেনো? সে কী করেছে? সে তো আর পালায়নি?
-সে কিছু না করলেও বিয়ে তো ভেঙেছে৷ একবার যার বিয়ে ভেঙেছে তার কী ওত সহজে ভালো ঘরে বিয়ে হবে? কী করবে ওকে নিয়ে এখন?
-সেটা আমার মেয়ে আমি বুঝব।
-না মানে আমার হাতে একটা প্রস্তাব ছিল।
.
এইবার আলিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ছেলে কেমন?
-ছেলে ভালোই। শুধু মাথায় চুল কম।
-কী করে?
-ব্যবসা।
-কীসের?
-রিকশার। চার চারটে রিকশা আছে তার। মাঝেমধ্যে নিজেও চালায়। ভালো ইনকামের জন্য আরকি।
.
এইবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন আলিয়া খাতুন। তিনি বললেন, আমার মেয়ে কে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দেব?
-তুমি দেখি রেগে গেলে। যাহ বাবা! ভালো করতে নেই কারও জন্য।
-করার প্রয়োজন নেই। অন্তত আমার জন্য।
.
এই বলে আলিয়া নিজের বাড়ি ফিরে এলেন। তার স্বামী এক কাপ চাওয়াতে তিনি রেগেমেগে বললেন, এক কাপ চাও কী বানিয়ে খেতে পারো না?
-কখনো চা বানিয়ে খেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না।
-হুম তোমরা সব লাখ সাহেব। মেয়েরা কাজে হাতও দেয় না, বাপ আমার ভাই এর টাকায় বসে বসে খায়। একমাত্র কাজ সব আমাকেই সামলাতে হবে।
-তা ক’দিন ধরে সামলাচ্ছ তুমি? আমার যতদূর মনে পড়ে বুঝতে শেখার পর থেকেই এই বাড়ির কাজ সব বুশরা সামলায়।
-জীবনের প্রথম বুশরার সুনাম করলে তুমি।
-করতে হচ্ছে। আসলে আমরা সেই মানুষটারই কদর করি না, যে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি করে থাকে।
যাক গে, বাইরে থেকে খেয়ে নেব আমি।
.
এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। আলিয়া খাতুনের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। তিনি সোজা চলে এলেন তায়শার কাছে। তায়শা নিহিরের সাথে ফোনে কথা বলছিল। আলিয়া খাতুন চেঁচিয়ে বললেন, বিয়ে ভেঙে গেছে সেদিকে কোনো চিন্তা তোর আছে? যত চিন্তা সব আমাকেই করতে হয়। সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না আমি। তোকে বিয়ে না দিয়ে আমার শান্তি নাই। এখন যাকে পাব তার সাথেই তোর বিয়ে দিয়ে দেব। সেটা হোক রিকশাওয়ালা।
.
তায়শা তাড়াহুড়ো করে ফোনের লাইন কেটে দেয়।
রাগে গিজগিজ করতে করতে তায়শা বলল, হলো টা কী তোমার?
-কী হলো বুঝছিস না? যে যখন পারে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আজ একটা প্রস্তাব এসেছে। ছেলের না কি কয়েকটা রিকশা আছে। সে নিজেও চালায় মাঝেমধ্যে।
-ছি! এসব তুমি চুপচাপ শুনে গেলে?
-তো কী করব? কিছু বলার মুখ তুই রেখেছিস? শেষমেশ ওমন কারও সাথেই বিয়েটা দিতে হবে মনে হচ্ছে।
-মোটেও না। আমি কোটিপতি বিয়ে করব।
-কোটিপোতি?
-হুম।
.
আলিয়া খাতুন এইবার হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতেই বললেন, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে?
-হু হচ্ছে। তবে এটা খুব জলদি সত্যি হতে চলেছে।
-আবার কী পাকাচ্ছিস তুই?
-সামনেই দেখতে পাবা।
.
.
তাহরিমার মা এর বলা কথাটি শুনতে পেয়েছে নিহির। তার মানে আসলেই বিয়ের জন্যে তাকে প্রেশার দেওয়া হচ্ছে। নিহির যে তাকে পছন্দ করে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জীবনসঙ্গিনী হিসেবে সে কেমন হবে? এত তাড়াতাড়ি নিজের জীবনের এতবড়ো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কী ঠিক হবে? এই ভেবে চিন্তায় পড়ে যায় নিহির।
এই সময়ে এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। কফির জন্য রান্নাঘরে আসে নিহির। কিন্তু সেখানে দেখলো, বুশরা রান্না করছে। নিহির বলল, মায়া কোথায়?
-সেনোয়ারা ম্যাডামের রুম গোছাতে গেছেন।
-আপনি এসব করছেন কেনো?
-কাটাকাটি সব মায়া খালাই করেছেন। জাস্ট চুলোতে বসিয়ে দিচ্ছি। এটা আর এমন কী? তাছাড়া আমার কাজ করতে ভালোই লাগে। অহেতুক বসে থেকেও কী করব?
-হুম।
-আপনার কিছু লাগবে?
-কফি।
-রুমে যান। বানিয়ে আনছি।
.
মায়া চলে আসে। নিহির কে দেখে বলল, স্যার এই ম্যাডাম কে ভালো করে বকে দেন তো।
-কেনো?
-তিনি আসার পর থেকে আমার কাজ তো কমে যাচ্ছে। সে নিজেই এটা সেটা সারাক্ষণ করতে থাকে। আমাকে যে বেতন দেবেন সেটা তো আর উসুল হলো না।
.
এই বলে তিনি হাসলেন। বুশরা বলল, কি যে বলো না খালা। এদিকে এসে রান্নাগুলো দেখো। আমি কফি বানাই।
.
নিহির রুমে চলে আসে। তাহরিমার কথা মনে পড়ে তার। নিহির তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, রান্না করতে পারে কি না। উত্তরে সে বলেছিল, রান্নাবান্না তার জন্যে নয়। সে কাজ করতেই পছন্দ করে না। নিজের কাজও না। অথচ নিহিরের ইচ্ছে, বিয়ের পরে বউ এর হাতের রান্না খাওয়ার। অন্য কারও রান্না সে খেতে পছন্দ করে না। সেনোয়ারা বেগম বাড়ির কোনো কাজ না করলেও সবসময় রান্নাটা নিজে করেন। এই কয়েকদিন তার শরীর আর মনমানসিকতা না কি ভালো নেই। তাই রান্না করছেন না। ভালোই হলো বুশরা তা সামলে নিচ্ছে।
বুশরা কফির মগ হাতে নিহিরের রুমে আসলো। তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আপনার কফি।
-ধন্যবাদ।
.
বুশরা চলে যেতে চায়। কিন্তু তাকে থামিয়ে নিহির জিজ্ঞাসা করলো, বাসার কথা মনে পড়ছে না?
-অনেক বেশি মনে পড়ছে। বোন গুলোর কথা খুব মনে পড়ে।
-এত কিছুর পরেও?
-তারা তো কিছু করেনি আমার সাথে।
-কিন্তু আপনার এই অবস্থার জন্য তায়শা দায়ী।
-ইচ্ছেকৃতভাবে নয়।
-বাসায় যোগাযোগ করবেন?
-ইচ্ছে নেই।
.
সেনোয়ারা বেগম নিহিরের রুমে আসছিলেন। কিন্তু বুশরা কে দেখে তিনি চলে যান। নিহির যে এই মেয়েটাকে ইচ্ছে করেই এখানে এনেছে এতে তার কোনো সন্দেহ নেই। দু’দিন যেতেই সেনোয়ারা কে বলবে, তাকে বিয়ে করতে চায় সে। করলে করুক! তার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু নিখিলের জন্য তিনি ভালো বংশের মেয়েই আনবেন।
.
.
নিহির নিশ্চয় কথাগুলো শুনেছে। ইশ! কি যে মনে করবে সে! তবে এক প্রকারে ভালোই হলো। মা যে তাকে বিয়ে নিয়ে বিরক্ত করছে এটা বলা যাবে নিহির কে। তায়শা মনে মনে কথাগুলো আওড়ে ফোন দেয় নিহির কে। বুশরা পাশে থাকায় নিহির ফোন রিসিভ করে না। মেয়েটা সারাদিন বাসায় একা থাকে। মায়া ছাড়া কেউ কথা বলে না। একটু তাকেও সময় দেওয়া যাক। এই ভেবে ফোন সাইলেন্ট করে দেয় নিহির। এদিকে তায়শা চিন্তিত হয়ে পড়ে। মা এর ভাষা কী পছন্দ হলো না নিহিরের? কিন্তু ফোনের রিংটোন এর শব্দে ঘোর কাটে তার। স্ক্রিনে না তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো?
-হ্যালো?
.
ওপরপাশ থেকে ‘হ্যালো’ শব্দটি শুনে তায়শার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সেই পরিচিত কণ্ঠ এটি। আশিকের কণ্ঠ! তায়শা আমতাআমতা করে বলল, তুমি?
-হুম। ফোন দেব দেব করে দিয়ে উঠতে পারছিলাম না।
-কেনো ফোন দিয়েছ?
-সরি বলার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। সেদিন তোমাকে বিয়ের আসরে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি আমার।
-সব ভুলের ক্ষমা হয়না।
-আমি শুধু ক্ষমা নয়, তোমাকে আমার জীবনে ফিরে পেতে চাই। আরেকটা সুযোগ দিতে চাই।
-আমি কী চেয়েছি সুযোগ?
-জীবন কে দিতে চাই সুযোগ।
-সেটা আর সম্ভব নয়।
-নতুন কাউকে পেলে?
-ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয়না। তুমিও পাবে।
-আমি তোমাকেই চাই।
-কিন্তু আমি চাইনা।
-আচ্ছা তুমি একটু ভেবে দেখো?
-ভাবাভাবির কিছু নেই।
-যে অসম্মান তোমার হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্মান দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে চাই আমি।
-আমি যেতে চাই না।
-আচ্ছা ফাইন! তুমি ভাবো। কয়েকটা দিন ভাবো। আমি তোমাকে আবার ফোন দেব।
.
তায়শা কে বিদায় জানিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেয় আশিক। তায়শা পড়ে যায় মহা ভাবনায়। নিহির তার জীবনে না আসলে নিঃসন্দেহে আশিকের কাছে ফিরে যেত সে। কিন্তু এখন কাকে বেছে নেবে সে? নিহির না কি আশিক!
.#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz

-তুমি বলতে চাও তায়শা কে নিয়ে তোমার কোনো অভিযোগ নেই?
.
নিহিরের প্রশ্ন শুনে বুশরা হেসে বলল, অভিযোগ তো আমি আপনার নামেও দিতে পারি। তায়শা কী করেছে? তুলে এনেছেন আপনি আমায়।
.
এইবার নিশ্চুপ হয়ে যায় নিহির। বুশরা বলল, অভিযোগ কারও প্রতি নেই আমার। হয়তো এসবই আমার ভাগ্যে লেখা ছিল।
.
এই বলে বুশরা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়। নিহির কল ব্যাক করে তাহরিমা কে। সে নিহিরের ফোন রিসিভ করেই বলল, কিছু মনে করবেন না। মা ভীষণ রকমের রেগে আছে আমার উপরে। উনি চায় আমি বিয়েটা করে নিই।
-ও আচ্ছা।
.
তায়শা ভেবেছে নিহির আরও কিছু বলবে। কিন্তু এমন ঠান্ডা স্বরের উত্তর শুনে হতাশ হলো সে। তায়শা বলল, আমার এক্স ফোন দিয়েছিল আমায়। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। হয়তো বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তখন বিয়েটা হয়েই যাবে। কারণ মা সমাজের মানুষের কথা শুনে শুনে বিরক্ত।
.
এইবার একটু ভয় পায় নিহির। সে বিচলিত হয়ে বলল, আপনি কি চান?
-আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাই না। যে একবার আমায় কষ্ট দিয়েছে আবার দেবে না গ্যারান্টি কি! কিন্তু মনেহয় না মা এর জন্য পারব। সে প্রস্তাব নিয়ে এলেই মা সম্মানের জন্য হলেও রাজি হয়ে যাবে।
.
নিহির একটু ভেবে বলল, আচ্ছা আমার একটু কাজ আছে। পরে কথা বলব।
.
এই বলে সে ফোনের লাইন কেটে দেয়। তায়শা অবাক হয় নিহিরের এমন ব্যবহারে। সে ভেবেছিল নিহির তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেবে। কিন্তু এখন এমন কিছুই তো হলো না! নিহিরের মনে চলছে টা কী?
.
নিহির তাহরিমা কে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু কিছু একটা তাকে ভীষণ ভাবে আঁটকে রাখছে। তাহরিমা তার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে ঠিক হবে কি না এই বিষয়ে সে সন্দিহান। তাহরিমা কে নিয়ে এমন দোটানায় পড়ার কারণটা কী?
.
.
নওয়াজের খালা নাসিমা মহাখুশি তাকে মেয়ের জামাই বানাতে পারবেন বলে। তিনি বিয়েতে মোটেও দেরী করতে চান না জানিয়ে দেন। এদিকে নাসরিন আক্তারেরও তাড়াহুড়ো রয়েছে। কখন আবার নওয়াজের মাথায় বুশরার ভুত চেপে বসে বলা যায় না। তাই তিনিও দেরী করতে চান না। এই বিষয়ে দুই বোন ফোন আলাপ করতে থাকেন বেশকিছুক্ষণ ধরে। এত তাড়াতাড়ি বিয়ের এত আয়োজন সম্ভব নয়। নওয়াজ নাসরিনের একমাত্র ছেলে আর তানিশা নাসিমার একমাত্র মেয়ে। তাই দু’জনেরই সন্তানের বিয়ে নিয়ে অনেক আশা ভরসা। তারা ঠিক করলো কাবিন টা সেরে ফেলবেন। পরে সময় নিয়ে অনুষ্টানের আয়োজন করা যাবে চিন্তামুক্ত হয়ে। নওয়াজ কে তা জানানো হয়। সে কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। তার মা আবার জিজ্ঞাসা করাতে বলল, তোমাদের যা খুশি করো৷ তোমার উপরে সব ছেড়ে দিয়েছি মা।
.
তিনিও খুশি হয়ে যান আবার বোন কে ফোন করতে। কাবিনের তারিখ ঠিক করতে হবে।
.
.
পরেরদিন বুশরা কে নিয়ে শপিংমল এ আসলো নিহির। নিহিরের মা এর জন্য ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নিয়েছে বুশরা৷ সবশেষে নিহির তাকে কিছু নিতে বলে। কিন্তু বুশরা চায় না। খুব বেশি জোরাজোরি করলে বুশরা বলল, কিছু গল্পের বই নিয়ে দেবেন? আসলে এখনো তো স্যালারি পাইনি। নাহলে আমিই নিতাম। আপনি চাইলে স্যালারি থেকে কেটে রাখতে পারেন।
.
নিহির হেসে বলল, আমি আপনাকে গিফট করতে চাইছি আর আপনি আছেন স্যালারি নিয়ে!
-আমি এখন জব করছি। টাকা তো পাবই। অহেতুক গিফট কেনো নেব?
.
নিহির বলল, আচ্ছা গিফট নিতে হবে না। সামনে নিখিলের জন্মদিন। ধুমধাম করে ওর জন্মদিনের আয়োজন হয়। ভালো একটা ড্রেস নিন। গাউন নিন। তারপর বই দেখছি।
-জন্মদিন উনার, আমি ড্রেস নিয়ে কী করব? তাও গাউন! আগে যা নিয়ে দিয়েছেন তা থেকে পরব। আমাকে কে চেনে!
.
নিহির একটু গম্ভীরমুখে বলল, মায়ারাও আমাদের প্রোগ্রাম এ ভালো পোশাক পরিধান করে। কর্মচারীদের সবাইকেই আমরা গিফট দিয়ে থাকি। আপনি এখানে আছেন হিসেবে আপনাকেই চয়েজ করতে বললাম। নিজের জন্য দেখুন সাথে মায়াদের জন্যও দেখুন। ওদের জন্য শাড়ি দেখবেন। একই রকম।
-আমার জন্যেও?
-নাহ। আপনার আর ওদের কাজ নিশ্চয় একই নয়।
.
এইবার বুশরা নিজের জন্য পোশাক দেখতে শুরু করলো। তবে সে আগে মায়াদের জন্যে নিয়ে নেয়। এরপর নিজের জন্য খুব বাছতে থাকে। আসলে সে যেটাতেই হাত দিচ্ছে, তাতে যে দাম লেখা আছে তার কাছে বেশিই মনে হচ্ছে। এসব বড় শপিংমল থেকে তো ফুফুর বাড়িতে থাকতে কখনো শপিং করেনি। তাই সে কেমন জামা নেবে বুঝতেই পারছে না। অনেক খুঁজে বুশরা মোটামুটি দামের নিজের জন্য একটা সালোয়ার কামিজ পছন্দ করেছে। নিহিরের কাছে যা নামমাত্র মূল্য। নিহির তাকে সেই জামাটিই নিয়ে দেয়। এরপর বলল, এইবার একটা গাউন পছন্দ করে দিন আমাকে। আসলে একজন কে উপহার দেব। দামী এবং সুন্দর হতে হবে।
-দাম দিয়ে কী উপহার দেখা হয়?
.
তার কথাটি শুনে তাহরিমার কথা মনে পড়ে নিহিরের। তাহরিমা সেদিন নিজের বান্ধবীর জন্মদিনের জন্য একটা ব্রান্ডের ঘড়ি নিয়েছিল। নিতে নিতে নিহির কে বলেছিল, ওর জন্য আমি এত দামী গিফট নিচ্ছি। আর ও আমায় লোকাল দোকানের একটা টপস গিফট করেছিল। ওর সাত কপাল এমন গিফট ওকে দিচ্ছি আমি।
.
এছাড়াও তাহরিমা কে নিহির শুধু একবার বলেছিল, যা খুশি নিতে৷ সে খুশি হয়েই অনেক কিছু নিয়েছিল। কিন্তু সেদিন এসব নিয়ে ভাবেনি নিহির। তবে আজ কেনো ভাবছে!
.
বুশরার ডাকে ঘোর কাটে নিহিরের। বুশরা বলল, চয়েজ করে দিচ্ছি।
.
বুশরা আকাশি রঙের একটি গাউন পছন্দ করে। নিহির তা কিনে নেয়। এরপর দু’জনে রেস্টুরেন্টে খেতে বসে৷ বুশরা যদিও চায়নি। কিন্তু নিহিরের খিদে পেয়েছে শুনে সেও বসলো। বুশরা কে কী খাবে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, অনেকদিন ফুচকা খাইনি।
ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।
-এত খাবার থাকতে ফুচকা?
-দেখেন ফুচকা খাওয়ালে খাওয়ান নাহয় বাসায় গিয়ে ভাত খেয়ে নেব।
.
নিহির হেসে তার জন্য ঝাল ফুচকা অর্ডার করলো। খুব তৃপ্তি নিয়ে বুশরা ফুচকা খেল। মনেহচ্ছে অনেক দিন ধরেই তার খেতে ইচ্ছে করছিল। নিমিষেই সে শেষ করে ফেললো। নিহির বলল, আরেক প্লেট দিতে বলি?
-বলবেন?
.
নিহির আবার অর্ডার দেয়। বুশরা একটু ফুচকা মুখে দিয়েই চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। মুখে মৃদু হাসি লেগে আছে। নিহির না চাইতেও আঁড়চোখে তার ফুচকা খাওয়া দেখছে। ভালোই লাগছে।
খাওয়া শেষে বিল পরিশোধ করার সময় ফুচকার দাম দেখে বুশরার হাত কপালে। সে বলল, হায় হায়! আমাদের বাড়ির পাশে এক প্লেট ফুচকা ত্রিশ টাকা। তাও পুরা আটটা ফুচকা দেয়। এইখানে একটা কম সাতটা ফুচকা দিয়ে প্লেট এত দাম নিয়েছে?
-এটা তো আর আপনাদের বাড়ির পাশের মামার দোকান নয়। তাই আরকি।
-এমনটা জানলে দুই প্লেট কী এক প্লেটও আমি খেতাম না।
.
নিহির হেসে বলল, কী যে বলেন না। চলেন উঠা যাক।
.
বুশরার মুখে অন্ধকার নেমে এসেছে। নিহিরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। ফুচকার দাম বেশি হয়েছে বলে মনে করে কারও মনও খারাপ হতে পারে?
.
.
তারা নিচে নেমে আসে। বুশরা কে দাঁড়াতে বলে নিহির পার্কিং থেকে গাড়ি আনতে যায়। এদিকে নওয়াজ এদিকে যাচ্ছে তার একজন পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে। সে রিকশায় আছে। হঠাৎ দূর থেকে শপিংমল এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বুশরার দিকে চোখ যায় তার। নওয়াজ চোখ কচলে নেয়। সে ভুল দেখছে না তো!
আরেকটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই সে বুঝতে পারলো এটা বুশরাই! সে রিকশাওয়ালা কে বলল, তাড়াতাড়ি শপিংমল এর সামনে যান।
.
রিকশাওয়ালা আসলো।
কিন্তু ততক্ষণে নিহিরের গাড়ি চলে আসে। নওয়াজ যদি চলে আসে। কিন্তু সে বুশরা কে ডাকেনি। বুশরার হাত ভর্তি শপিংব্যাগ। সে হেসে গাড়িতে উঠে বসে। নওয়াজ কে সে দেখেনি।
রিকশাওয়ালা বলল, ভাই নামবেন না?
.
নওয়াজ হতাশ কণ্ঠে বলল, নাহ। যেখানে আগে যেতে বলেছিলাম সেখানে নিয়ে যাও।
.
রিকশা আবারো চলতে শুরু করলো। নওয়াজ ভাবছে, সবাই যা বলেছিল সবই সত্যি। হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ, দামি গাড়িতে ঘুরাঘুরি। ভালোই তো আছে বুশরা!
.
.
নওয়াজ বন্ধুর সাথে দেখা করে এসে তার মা কে বলল, তারিখ ঠিক করেছ তোমরা?
-তোর খালা বলছে পরশুদিন কাবিন সেরে নিতে। তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা? তাই বললাম পরের সপ্তাহে না হয়…
.
মা কে কথা শেষ করতে না দিয়েই নওয়াজ বলল, পরশু হলে পরশু। কাল হলেও আমার সমস্যা নেই। বলো তাদের আয়োজন করতে।
.
চলবে
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here