সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২৫
মোর্শেদা হাবিব!
****************
প্রায় টানা তিন ঘন্টা কেনাকাটার পর একসময় পৌষী জানালো তার পা খুব ব্যথা করছে,এটা শোনার পর রাণী ক্ষান্ত দিলেন।তিনি আজ নীরা আর পৌষীকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছেন।অসংখ্য জিনিস কেনার পরও তার মনে হচ্ছে কিছু বোধহয় বাকী রয়ে গেলো।
পৌষীর এতো হেঁটে অভ্যেস নেই।সে রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছে।তিন ঘন্টা কেনাকাটার পর যখন রানী ঘোষণা দিলেন, এখন তিনি নিজের জন্য কিছু শাড়ী কিনবেন তখন পৌষী কাতর স্বরে নিজের পায়ের অবস্থা জানাতে বাধ্য হলো!
রানী নীরার দিকে তাকিয়ে বললেন-
-“তুই এক কাজ কর্ পৌষীকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে আয়।ড্রাইভারকে বল ওকে নীড়ে পৌঁছে দিয়ে আবার এখানে চলে আসতে।আমি এদিকটায় যখন এসেছি তখন আমার যা কেনাকাটা আছে তা আজই সেরে নেবো!
পৌষী বলে উঠলো-
-“গাড়ী লাগবেনা মামী,আমি রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারবো।”
রানী কড়া চোখে তাকালেন-“আবার মামী।বলেছি না এখন থেকে আম্মু ডাকবি! আর কোনো কথা না,রিক্সায় রিস্ক বেশী।তুই গাড়ী নিয়ে যা।আমার আরো ঘন্টাখানেক লাগবে এখানে।”
পৌষী লাজুক মুখে বললো-
-“আচ্ছা…আম্মু!”
-“নীরু,তুই ওর সাথে যা!আমি সাদাকালো-তে আছি!” বলে রানী সাদাকালো’র শো রুমে ঢুকে পড়লেন।
নীরা আর পৌষী নিচে নামার জন্য এসকিলেটরে পা রাখলো।গ্রাউন্ড ফ্লোরে পা রাখামাত্রই নীরা পৌষীর হাত ধরে টানলো!
-“এক মিনিট ভাবী !এই ফ্লোরে স্কার্ফের দোকান আছে।আমি দুটো স্কার্ফ কিনবো।আমাকে স্কার্ফটা কিনে দিয়ে চলে যেও।প্লিজ ভাবী বেশীক্ষণ লাগবেনা।এই দশ মিনিট।”
অগত্যা পৌষীকে ঢুকতে হলো।
নীরা তার পোশাকের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে দুটো স্কার্ফ কিনে ফেললো।তারপর দুজনে গেটের বাইরে এলে নীরা ড্রাইভারকে ফোন দিলো।
মহিদুল পুরোনো ড্রাইভার।
গত বারো বছর ধরে আমজাদ চৌধুরীর বাড়ীতে গাড়ীচালকের চাকরী করছে সে।অল্প বয়সে চাকরী নিয়ে ঢুকেছিলো।সততা আর বিশ্বস্ততার কারনে আমজাদ চৌধুরী এর মধ্যে আরো দুজনকে ছাটাই করলেও মহিদুল টিকে গেছে।বেশীরভাগ সময়েই সে রানী’র সাথে বাইরে বেরোয়,আরেকটা ড্রাইভার আছে সে আমজাদ চৌধুরীর সাথে সারাক্ষণ থাকে।মহিদুলের ভদ্রতার কারনে মহিলাদের আনানেয়ার কাজটা আমজাদ চৌধুরী তাকে দিয়েই করাতে নিশ্চিন্ত বোধ করেন।
দীর্ঘদিন চাকরী করার সুবাদে রানীমহলের প্রায় সকল আত্মীয় অনাত্মীয়কে চেনা হয়ে গেছে তার।
রানী তার বৌমা পৌষী আর নীরাকে নিয়ে শপিং সেন্টারে ঢুকলে মহিদুল গেটের
বাইরেই ভাসমান দোকানদারদের সাথে আড্ডা দিতে থাকে।আর তখনই মারুফকে দেখতে পেয়ে সে নিজেই সালাম দিয়ে এগিয়ে যায়।
-“আস্সালামালাইকুম ভাইজান!”
মার্কেটের গেটের পাশেই ছোট্ট বক্স নিয়ে বসা পান সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেট কিনছিলো মারুফ।ঝোলানো দড়ির মাথায় জ্বলতে থাকা আগুন থেকে সিগারেট ধরিয়ে একরাশ ধোঁয়া বাতাসে ছাড়লো।ধোঁয়াগুলো মিলিয়ে যেতেই তার চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিদুলকে।মারুফ তাকে এক নজর দেখেই চিনতে পারলো।রাজের বাসায় আসাযাওয়ার সুবাদে মহিদুলকে তার ভালো করেই চেনা আছে।
মারুফ ঘুরে দাঁড়িয়ে সিগারেট আঙ্গুলের ভাঁজে নিয়ে মহিদুলের দিকে তাকিয়ে বললো-
-“কে…মহিদুল না?”
-“জ্বী….ছার!আমি মহিদুল।কেমুন আছেন ছার!অনেকদিন পর দেখলাম আপনেরে। বাসায় তো দেখিই না অখন!”
মহিদুলের কাঁধে চাপড় মেরে বললো মারুফ-
-“হ্যাঁ,ব্যস্ত থাকি।তা এখানে কি কাজে।কারে নিয়া আসছো?”
-“বড় আম্মা,ভাবী আর নীরা আফারে নিয়া আইছি!”
-“ওওও…..!”মারুফ স্বগোতক্তি করলো।
এ সময় মহিদুলের মোবাইল বেজে উঠলে সে মারুফের দিকে তাকিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে হাত দেখিয়ে মোবাইল রিসিভ করলো!
-“জ্বী,ছোট আফা।আমি আইতাছি!”বলে মারুফের দিকে তাকাতেই মারুফ হাত ইশারা করে মহিদুলকে যেতে বললে সে হাতের ইশারায় সালাম দেখিয়ে সরে গেলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মহিদুল চলে যাবার পর কৌতুহলী দৃষ্টিতে একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে থেকে ওকে ফলো করে এগিয়ে গেলো মারুফ।মনের গভীরে পৌষীকে একনজর দেখার দুরাশা পোষণ করে এগিয়ে গেলো সে।
মহিদুলকে অনুসরন করে দেখতে পেলো মার্কেটের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো মেয়েকে।
মারুফের শিকারী চোখ পৌষীকে চিনতে এতটুকু ভুল করলোনা কারন পৌষীর পরনে কালো বোরকা।সে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়ে দুটোর দিকে।তাদের একজন ভুতুড়ে বোরকা ওয়ালী যে যথাসম্ভব পৌষী নামের সেই মেয়েটি,তার সাথের অপরজন লাল স্কার্ফের সাথে অরেঞ্জ কালারের থ্রিপীস পরিহিতা আর এটিই সম্ভবত রাজের ছোট বোন নীরা।
ইরা আর মীরাকে দেখেছে মারুফ।নীরাকেই ভালো করে দেখা হয়নি।মেয়েটাকে দেখে আস্ত কমলালেবুই মনে হলো মারুফের।বোরকাওয়ালী পৌষীকে দেখা বাদ দিয়ে সে কমলা জামা পড়া মেয়েটাকে যেন গিলতে লাগলো।লাল স্কার্ফটার কারনে মেয়েটাকে আরো লোভনীয় লাগছে।রঙের বাহারের কারনে মেয়েটাকে বেশ গর্জিয়াস দেখাচ্ছে।
মারুফ মনে মনে ওর নাম দিলো কমলা সুন্দরী।
কমলা সুন্দরী একমনে মোবাইল কানে লাগিয়ে কাউকে কিছু বলছে।হাত কানে উঠে যাওয়ায় পাশ থেকে তার শরীরের লোভনীয় অংশগুলো ফিটিং জামার ভাঁজে আরো দৃশ্যমান হয়ে উঠলো।মারুফ মেয়েটার আপাদমস্তক তার লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে একদফা চেটে নিলো যেন !
খুব কায়দা করে সিগারেট টানার ভঙ্গিতে মেয়ে দুটোর কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো মারুফ।অকারনেই নিজের মোবাইলটা কানে ঠেকালো সে। শুনত পেলো কমলা সুন্দরী ভুতুড়ে বোরকাওয়ালীকে ডেকে বলছে।
-“এ্যাই ভাবী,চলো একটু এগোতে হবে।গাড়ীটা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।” বলে দুজনে হেঁটে মেইন রোডের উপর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো।
পৌষীকে গাড়ীতে তুলে দিয়ে নীরা পুনরায় মার্কেটে ঢোকার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই মারুফের চতুর মস্তিষ্কে চট করে একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।সে নীরার পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।
গায়ে সামান্য ধাক্কামতো লাগতেই নীরা পেছন ফিরে তাকালো।মারুফ হঠাৎ চমকানোর ভান করে বললো-
-“আরে….নীরা না?”
নীরা হকচকিয়ে গেলো!
-“জ্বী? আপনি?”
-“চিনতে পারছোনা?আমি সজীব!”
-“সজীব….? স্যরি…আমি ঠিক….!”
-“আরে আমি রাজের ফ্রেন্ড।বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বাইরে ছিলাম বলে তোমাদের ঐদিকে যাওয়া হয়নি!তাই চিনতে পারছোনা!”
-“ওহো…আপনি ভাইয়ার ফ্রেন্ড?”
-“হমম….তোমাকে শেষ দেখেছি যখন তুমি স্কুলে ছিলে!ইউ হ্যাভ আ লট অফ চেঞ্জেস।আমি তো চিনতেই পারিনি।তুমি তো অসম্ভব সুন্দর হয়ে গেছো।ও মাই গড…!”
নীরার চলার গতি কমে গেলো।মারুফ বুঝলো প্রশংসায় কাজ হচ্ছে।
নীরা মিষ্টি হেসে বললো-“একদিন বাসায় আসেন।ভাইয়াকে বলবো আপনার কথা।”
-“উঁহুঁ….এই কাজটা করতে যেওনা!”
-“কেন?”বোকা চোখে তাকালো নীরা!
-“ব্যপারটা আসলে ব্যক্তিগত।পরে কখনো সুযোগ পেলে বলবো।তা এখানে কি…একা?”
-“না,আম্মু আছে নাইনথ ফ্লোরে।”
-“ওহ্,তাহলে তো আর হলোনা!”
-“কি হলোনা?”
-“এই যেমন…তোমাকে আইসক্রিম অফার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আন্টি আবার চিন্তা করেন কিনা!”
নীরা হাসলো-“ওহ্…থ্যাংক্স।আরেকদিন!”
-“সত্যিই কি আরেকদিন তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াবার সুযোগ মিলবে?”
নীরা লাজুক হেসে বললো-“আপনি বোধহয় আমাকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন!”
-“উঁহুঁ…মোটেই না।বরং ইট উইল বি মাই প্লেজার! বলো কবে কখন তুমি দর্শন দিয়ে আমাকে ধন্য করবে!”
নীরা ডান হাত মুখের ওপর রেখে হাসি চাপলো।মারুফ হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মনে মনে অপেক্ষায় আছে কখন নীরা ওর টোপ গিলবে।
মারুফকে বেশী অপেক্ষা করতে হলোনা।নীরা মাথা নেড়ে বললো-
-“ভাইয়া শুনলে কি বলবে বলুন তো…?”
-“ভাইয়াকে বলছে কে…?”
এবার নীরার পালা।সমস্ত শরীর নিষিদ্ধ প্রেমের আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো।মারুফ মোবাইল বের করে বললো -“তোমার নাম্বারটা দাও,তাহলেই হবে!”
নীরা এক সেকেন্ড ভাবনার ভান করলো তারপর গড়গড় করে নিজের নাম্বারটা আউড়ে গেলো।
মারুফ ওর চোখে একরাশ স্বপ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বিদায় নিলো।বাকীটা সময় একরকম ঘোরের মধ্যে কাটলো নীরার।বারবার মনের মধ্যে সজীব নামক ছেলেটার স্তুতিবাক্যগুলো ওকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো।
সত্যি কি সে অবাক করা সুন্দরী?
ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো নীরা।
হাত বুলালো নিজের টিকালো নাক, ভরাট ঠোঁটের উপর।গলার উপর হাত বেয়ে নিচে নামতে গিয়ে হোঁচট খেলো।লজ্জায় অকারনেই রাঙা হয়ে উঠলো নীরা।সত্যিই কি সে কারো স্বপ্নের রাজকন্যা?
নিজের চোখে নিজেকে অপরূপা ঠেকলো নীরার।
আঠার বছর বয়সটা আসলে বড় মারাত্মক।
চোখে মুখে রঙীন হাতছানি।উঠতি যৌবনের ভারে কিশোরীরা হয় দিশেহারা।
তারুন্যের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কৈশোরের আবেগ ভরপুর থাকে তনুমনে ।
যাবতীয় দুর্ঘটনার শুরুও এই সময় থেকেই হয়!
কারন এসময় বুদ্ধির চেয়ে আবেগের প্রভাব বেশী থাকে।
নীরারও পরের দুটো দিন একরকম অস্থিরতায় কাটলো ।তৃতীয় দিন রাতে ফোন এলো সেই কাঙ্খিত জনের যার ফোনের অপেক্ষায় নীরার গত দুটো দিন অশান্তিতে কেটেছে।সে নাম্বারটা দেখেই চিনতে পারলো,এটা সজীবের নম্বর।
আস্তে করে উঠে সকলের চোখের আড়ালে চলে গেলো নীরা।
শুরু হলো কূজন গুঞ্জন।
সজীব যখন জানালো ওদের দেখা হওয়াটা সজীবের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে,ব্যপারটা ছিলো লাভ এট ফার্ষ্ট সাইটের মতো….তখন নীরার মনের আনাচে কানাচে ভ্রমরের গুনগুনানী শুরু হয়ে গেলো।
কথা বলতে বলতে কখন রাত ভোর হতে চললো ওরা দুজনের কেউই টের পেলো না।সজীব ওরফে মারুফ ফোন রাখতে চাইলেও নীরা বিভিন্ন গল্পের ছলে ওকে আটকে রাখছিলো।ওর আঠার বছরের জীবনে সজীব এক অনন্য অনুভূতি দান করেছে যা সে আগে কখনোও ফিল করেনি।
অবশেষে ফোন রেখে নীরা যখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগলো তখন মারুফ একা একা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
রাজের পতন এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
মারুফ টোপ ফেলবে আর মেয়েরা তা গিলবে না,এটা তো অসম্ভব একটা ব্যপার।
সে ইচ্ছে করেই সজীবের নামটা ব্যবহার করেছে। আত্মগর্বে মারুফের বুকটা ফুলে উঠলো।
এর পরের প্রতিটা পদক্ষেপ ওকে হিসেব কষে ফেলতে হবে।
এরপর থেকে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হতে লাগলো ওদের। একসময় নীরা ভাবতে লাগলো রাজের সাথে সজীবের সমস্যার ধরনটা ওকে জানতে হবে।সজীব রাজকে কেন এড়িয়ে চলে।রাজ ভাইয়ার রাগটা একটু চড়া তবে সে পৌষী আসার আগের কথা।তখন রাজের রাগ আসলেই বেশী ছিলো।পৌষীর সাথে বিয়ে হবার পর থেকে রাজ আমূল বদলে গেছে।
তার বর্তমান ভাই আর আগের রাজের সাথে বিস্তর পার্থক্য।তাই নীরা আশা করে সজীবের সাথে রাজের সমস্যার সমাধান অসম্ভব কিছুনা।
নীরার খুব ইচ্ছে আছে,সজীবকে রাজ ভাইয়ার রিসেপশানে দাওয়াত দেয় কিন্তু তার আগে রাজ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে তবে সেটা কৌশলে।
★
চা খেতে খেতে রাজ কথাটা জানাতেই রানী রীতিমত চমকে উঠলেন।
-“কি বলছিস এসব?”
-“ঠিকই বলছি মা,ফিন নিজেই আমাকে সরাসরি প্রস্তাব করেছে।সম্ভবত আমাদের ইরারও মত আছে এতে।যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তবে আমি বলবো,এটা ইরার সৌভাগ্য।কারন ফিন ব্যাসিক্যালি ভালো ছেলে।ওকে আমি স্কুল লাইফ থেকে জানি।”
রানীর তার বড় মেয়েকে নিয়ে নিদারুন মনোকষ্টে ভুগছিলেন।এরি মধ্যে ইরার নিজের পছন্দের ভিত্তিতে এরকম একটা প্রস্তাব তিনি একেবারেই আশা করেন নি।হাসিমুখে বললেন-“ছেলেটাকে একদিন আসতে বল্ তো,দেখি! ওর সাথে কথা বলি!”
-“তা বলতে পারো।তবে ইরার ইদ্দতকালীন তিনমাসের আগে বিয়ের কোনো প্রসঙ্গ তুলতে যেওনা।আর তো মাত্র একটা মাস বাকী।”
রানী দীর্ঘশ্বাস ফেলে আল্লাহর শোকর করলেন।বললেন-“পৌষীটা আসলেই বরকতময় মেয়ে।ইরা মীরা দুটো মেয়েরই সুসংবাদ পেলেন।মীরা জানিয়েছে,সে নেহালকে নিয়ে ভালো আছে।এদিকে ইরার জন্য এমন ভালো প্রস্তাব।রানীর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
ছেলেকে জানালেন তার ওয়ালিমার পর পরই ইরার ব্যাপারে ফিনের সাথে কথা বলবেন তিনি।
রাজ অনুমান করছিলো,ওর ওয়ালিমা হয়তো খুব বেশী দেরী করবে না আম্মু।কিন্তু সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি সে ভাবতেও পারেনি।রাজ নিজেও অবাক হয়েছে।ওর মা দাওয়াতের কার্ড বিলি করাও শুরু করে দিয়েছে।এই ছিলো তাহলে সারপ্রাইজ।কিন্তু ওকে না জানিয়েও উপায় নেই।তাই রানীকে বাধ্য হয়ে জানাতেই হলো।কারন রাজ তার কোন কোন বন্ধুকে দাওয়াত দেবে সেটা না জানালে দাওয়াত দেবে কিভাবে!
বিকেলে রাজ নিজের ঘরেই শুয়েছিলো।এমন সময় নীরা প্রবেশ করার অনুমতি চাইলো!
-“ভাইয়া,আসবো?
-“হ্যাঁ,আয়।”
-“তুমি কি ব্যস্ত?”
-“নাহ্…বল কি বলবি!”
-“আচ্ছা,তোমার কোন্ বন্ধু যেন দেশের বাইরে থাকে!যার সাথে তোমার সমস্যা হয়েছিলো?”
-“দেশের বাইরে তো কয়েকজনই থাকে।হিমেল, সজীব,প্রান্ত…!”
-“হ্যাঁ…হ্যাঁ….ঐ সজীব।উনার সাথে তোমার কোনো সমস্যা চলছে?”
-“সজীবের সাথে….? কেন বলতো? তুই সজীবকে চিনিস?”
-“না না,এমনিতে একদিন একজন ঐ নামে ল্যান্ড ফোনে ফোন করে তোমার কথা জানতে চেয়েছিলো,তোমাকে ডেকে দিতে চাইলাম উনি বারন করলেন।বললো তুমি হয়তো ব্যপারটা পছন্দ করবে না!”
নীরা কৌশলে কথাটা অন্যভাবে ঘুরিয়ে রাজের কাছে উপস্থাপন করলো!তাতে অন্তত সজীবের প্রতি রাজের মনোভাবটা জানা যাবে।
নীরা আগ্রহ নিয়ে রাজের দিকে তাকালো।রাজ একটু ভেবে বললো-“ওহ্,সজীব বলেছে একথা।ও দেশে আসলো কবে! সেটাই তো জানিনা।আসলে এটা বেশ কিছুদিন আগের কথা।ওর সাথে সামান্য একটা ব্যপারে সিনক্রিয়েট হয়ে গিয়েছিলো।ঐ ব্যপারটার পর থেকে সজীব আর আমি দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলি।”
-“ও তাই বলো!সেদিন ওনাকে বাসায় আসতে বললাম।উনি এড়িয়ে গেলেন।আবার যদি ফোন করে তবে কি তাকে আসতে বলবো?”
-“হ্যাঁ,বলিস।বলবি আমি ডেকেছি।আর আমি বাসায় থাকলে আমাকে ডেকে দিস।ও খুব ভদ্র ছেলে তবে একটু মুডী ধরনের।”
নীরা সবজান্তার মতো মাথা ঝাঁকালো।যাক্,সজীবকে এ বাড়ীতে আনার একটা ব্যবস্থা করা গেছে।ভাইয়ার বিয়েতে ওকে আনতে হবে।আর সেদিন নীরা মনের মতো করে সাজবে!
……
চলবে…..