#স্ত্রী
পর্বঃ ৮
লেখিকা #তাওহীদা
রাতের খাওয়ার পাট চুকিয়ে জিনাত ঘরে এসে দেখলো রায়ান ঘুমাবার জন্য বিছানা গোছাচ্ছে।ও বিছানাটা ঝেড়ে ঝুড়ে বিছানার মাঝখানে মোটা একটা কোলবালিশ রেখে একপাশে শুয়ে পরলো।জিনাত এখন শোবে না,,,কয়েকদিন ক্লাসে যেতে পারেনি।বইপত্রগুলো একটু নাড়াচাড়া করা দরকার।
-শুনুন,,আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
জিনাতের কথা শুনে রায়ান উঠে বসে বললো,,হ্যাঁ বলো,কি বলবে।
-আপনার মা কাল থেকে আমাকে ভার্সিটিতে যেতে বলছে।তাই কাল থেকেই আমি ক্লাসে যাবো।এখন,, আপনার মা হয়তো আপনাকে বলতে পারেন,,আমাকে ভার্সিটিতে পৌছে দেবার জন্য।সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ভুলেও আমার সাথে আসবেন না।ভার্সিটির কেউ আপনাকে আমার সাথে দেখলে আমার প্রবলেম হবে।আপনি বলবেন,,আপনার জরুরী কাজ আছে,তাই আপনি আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন না।
রায়ান শান্ত গলায় বললো,,,আমি কোনোদিন আমার মায়ের কোনো কথায় অজুহাত দেখাইনি।মা কিছু বললে আমি কখনোই না করিনা,,মা সেটা জানে।তাই কাল মা বললেও আমি মানা করতে পারবো না।কিন্তু তুমি কোনো চিন্তা করো না,,ওয়াদা যেহেতু করেছি,,তা তো রাখতেই হবে।আমি তোমাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দেবো।তুমি সেখান থেকে রিকশায় চলে যেও।তাহলে তো তোমার কোনো সমস্যা থাকার কথা না।
-হুম ঠিক আছে,,,তবে মনে রাখবেন,,আপনার অধিকার এর গন্ডি খুব সীমিত। এই গন্ডির বাইরে বের হবার চেষ্টা করবেন না।
★★★
পরদিন থেকে জিনাত নিয়মিত ক্লাসে যাওয়া শুরু করলো।প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রায়ান জিনাতকে নামিয়ে দিয়ে যায়।আবার ক্লাস শেষে সেখান থেকেই ওকে বাসায় নিয়ে যায়।জিনাত ভার্সিটি শেষে বাসায় এসে পুরো সময়টাই রায়ানের মায়ের সাথে কাটায়।তারসাথে গল্প করে,,তার খাওয়া দাওয়া ওষুধপত্রের খুব খেয়াল রাখে জিনাত।কয়েকদিনের মাঝেই রায়ানের মায়ের সাথে জিনাতের একটা খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেলো। কিন্তু জিনাত একটা জিনিসই বুঝত না যে,,রায়ানের মা এতো ভালো মানুষ,, তবে সে কেনো তার ছেলের গুন্ডামীকে সাপোর্ট করে।কিন্তু কথাটা তাকে জিজ্ঞেস করতেও না। পাছে তার কষ্ট লাগে,,শত হলেও সে একজন কঠিন রোগের রোগী।
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
জিনাত অনেক ধরনের রান্না জানে।ওর মায়ের একবার পা ভেঙে পুরো তিনমাস বিছানায় থাকতে হয়েছিলো।তখন জিনাতেরই ঘরের রান্নাবান্না করতে হয়েছিলো।জিনাতের নানুও তখন ওদের বাসায়ই ছিলেন।উনি পুরানো আমলের মানুষ। অনেক ধরনের পুরানো রান্না জানতেন তিনি। জিনাত তাই তখন ওর নানুর কাছ থেকে রান্নাবান্নার পাঠ শিখে নিয়েছিলো।এখানে এসে দেখলো রায়ানের মা তার অসুখের জন্য প্রায় কিছুই খেতে পারে না।ইলিশ,,চিংড়ি,,মাংস এগুলো তো ডাক্তার নিষেধ ই করে দিয়েছে।হাতে গোনা কিছু মাছ,, সবজি আর ফল খেতে পারবে সে।কিন্তু একটানা ওই একঘেয়ে সবজি খেয়ে খাওয়ার উপর থেকে রুচি উঠে গিয়েছে তার।তাছাড়া শিমু অতটা সুন্দর করে রান্নাটাও পারে না।মাছ,মাংস টা মোটামুটি পারলেও,,ছোটো মাছ,সবজি,ডাল এগুলো ভালো হয় না ওর।
জিনাত তাই রায়ানের মা যেই সবজি আর মাছ গুলো খেতে পারবে সেই সবজি আর মাছ গুলোই অন্যভাবে মজা করে রান্না করে খাওয়াতে লাগলো তাকে।রায়ানের মা খুব তৃপ্তি পেলো জিনাতের রান্নাকরা খাবার খেয়ে।সে খুব খুব খুশি এখন জিনাতের উপর। জিনাতের মতো সাংসারিক একটা মেয়ে আল্লাহ তার সংসারে এনে দিয়েছেন,,এজন্য সে সবসময় শুকরিয়া আদায় করে।এখন তার মনে তার ছেলেকে নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।তার বিশ্বাস জিনাত খুব যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে তার ছেলের সংসার।রায়ান প্রতিদিন বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই মায়ের কাছে যায়,,মায়ের কোলে মাথা রেখে মায়ের সাথে গল্প করে।রায়ানের মা জিনাতের খুব প্রশংসা করে রায়ানের কাছে।জিনাত কিভাবে তার সেবাযত্ন করে সব বলে আর দোয়া করে ওদের দুজনের জন্য। সব শুনে জিনাতের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা জেগে ওঠে রায়ানের মাঝে।এক অন্যরকম ভালোলাগা মন ছুয়ে যায় তার।কিন্তু,, ওর অধিকারের গন্ডির কথা মনে হলেই বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।
★★★
জিনাত ক্লাস শেষে,, বাসায় যাবার জন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হলো।সাথে ওর বান্ধবী স্নেহাও আছে।ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হতেই জিনাতের চোখ কপালে উঠলো।
ওদের ডিপার্টমেন্টেরই ফোর্থ ইয়ারের একটা ছেলেকে বেধড়ক মারছে রায়ান।
জিনাত এই দেখে অবাক হয়ে গেলো।ভাবলো,,কোনো মানুষ, মানুষকে এভাবে মারতে পারে!পারবে নাই বা কেন,, ও তো একটা গুন্ডা! একটা ক্রিমিনালের কি আর মনে কোনো দয়ামায়া থাকে!আশেপাশে সবাই তাকিয়ে দেখছে,,কেউ কোনো প্রতিবাদও করছে না।সবাই মজা নিচ্ছে।
জিনাত দ্রুত পায়ে হেটে গেলো রায়ানের কাছে। গিয়ে রায়ান আর মার খেতে থাকা ছেলেটার মাঝে দাড়ালো,,
-দাড়ান,,,থামুন আপনি! কি পেয়েছেন টা কি?সব জায়গা কি নিজের গুন্ডামী করার জন্য কিনে নিয়েছেন নাকি? এটা একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পবিত্র জায়গা এটা।এখানেও কি আপনার এই মারামারি, কাটাকাটি না করলেই নয়।(আগুন ঝড়া চোখে বললো জিনাত)
আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে গেলো জিনাতকে দেখে।সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
-এই যে আপনারা!!একটা গুন্ডা একটা নিরীহ ছেলেকে এভাবে মারছে,,,,আর আপনারা তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছেন।একবার বাধাও দিতে পারলেন না কেউ।লজ্জা করে না আপনাদের!!
–যেটা জানেন না,,সেটা নিয়ে প্লিজ কথা বলবেন না।নিজের গন্ডির মধ্যেই থাকুন।(শক্ত গলায় বললো রায়ান)
-আমি কি জানি না জানি সেটা বড় কথা না,,,আপনার মতো একটা ক্রিমিনাল একটা নিরীহ ছেলেকে মারছে সেটাই বড়ো কথা।
রায়ান কিছু বলতে যাবে,,তার আগেই স্নেহা এসে জিনাতকে টানাটানি শুরু করলো।
-কি করছিস কি,,,কাকে কি বলছিস তুই,,আয় এদিকে আয়।(স্নেহা)
-ছাড় তো স্নেহা,,,কেউ কিছু না বলতে বলতে লাই পেয়ে গিয়েছে এরা(জিনাত)
-চুপ,, আর একটাও কথা না,,আয় বলছি!
এই বলে স্নেহা জিনাতকে টানতে টানতে একপাশে সরিয়ে নিলো।
রায়ান আর কোনো কথা না বলে ছেলেটার কলার ধরে ওকে জিপে উঠিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
-দেখলি নিয়ে গেলো ছেলেটাকে,,এখন ওর সাথে কি করবে কে জানে!তুই আমাকে এভাবে টানতে টানতে আনলি কেনো বলতো?(জিনাত)
-তো তুই কি করতি,,মারামারি করতি তার সাথে?তুই একটা মেয়ে হয়ে এতো সাহস পাস কোথায় বলতো।আর তাছাড়া রায়ান ভাই মোটেও কোনো ক্রিমিনাল না,,অথচ তুই তাকে সবার সামনে বার বার ক্রিমিনাল বলছিলি।
-একটা ছেলেকে ওভাবে মারতে দেখেও তুই বলবি,,ওই লোকটা কোনো ক্রিমিনাল না?
-না, রায়ান ভাই ক্রিমিনাল না।দেখ তুই তো অল্পকিছুদিন হলো এই ভার্সিটিতে এসেছিস,তাই রায়ান ভাইকে চিনিস না।আমি এই খানে স্থানীয়। তাই আমি তাকে খুব ভালো করেই চিনি।তার জন্যই এই এলাকার চোর ছ্যাচড়,,মদ -গাজাখোরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।কয়েকবছর আগেও এই ভার্সিটি এলাকা নির্জনতার জন্য চুরি,মাদক ব্যাবসা, ইফটেজিং এর আখড়া হয়ে উঠেছিলো।এমন অবস্থায় রায়ান ভাই আর তার ছেলেপেলেরা মিলে ওদের কে মেরেধরে এসব অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।এই যে আজ রায়ান ভাই ছেলেটাকে মারছিলো,,নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে তার পেছনে।
-আমি ভাবতে পারছি না,,তুই কিনা একটা গুন্ডার হয়ে কথা বলছিস।ও একটা গুন্ডা হয়ে কয়েকটা গুন্ডা মাস্তান পিটিয়ে তোর কাছে এত্তো ভালো হয়ে গেলো!
-আরে সে কি শুধু আমার কাছেই ভালো নাকি? সে কত মানুষের উপকার করে জানিস,,,সে তো,,
-থাক হয়েছে,,ওর হয়ে তোকে আর সাফাই গাইতে হবে না।আমি চললাম,,,
-আরে,,,শোন জিনাত,শোন না,,,
জিনাত আর শুনলো না,,গটগট করে হেটে ভার্সিটির বাইরে চলে এসে রিকশায় উঠলো সে।কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলো রায়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রায়ান ইশারায় রিকশাওয়ালাকে থামতে বললো।কিন্তু জিনাত বললো চালিয়ে যেতে।তাই রিকশাওয়ালা থামলো না।রায়ান তাই জীপ চালিয়ে রিকশার সামনে এসে থামলো।
(চলবে)