স্ত্রী পর্ব -০৯

#স্ত্রী
পর্বঃ ৯
লেখিকাঃ #তাওহীদা
রায়ান গাড়ি থেকে নেমে জিনাতের কাছে গেলো।জিনাতের হাত ধরে বললো,,,
-গাড়িতে ওঠো।
-দেখুন,,আপনি আপনার অধিকারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন,,হাত ছাড়ুন আমার।(ঝাজালো গলায় বললো জিনাত)
– চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে ওঠো।তোমার কাছ থেকে আর কোনো জ্ঞান মূলক কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই।তুমি একা বাসায় ফিরলে মা আমাকে নানান প্রশ্ন করবে।আর আমি একটা বিব্রতকর অবস্থায় পরবো।কারন আমি মাকে মিথ্যা বলতে পারি না।
-আপনি না পারলে,,আমি পারবো।আমি কিছু একটা বলে ওনাকে ঠিক বুঝিয়ে নেবো।তবুও আপনার মতো একজনএর সাথে আমার যাওয়া আসা করা আমার পক্ষে আর
সম্ভব না। প্লিজ,,এখন আমার পথ ছাড়ুন।বাসায় যেতে দেরী হলে আপনার মাই চিন্তায় অস্থির হয়ে পরবে।
রায়ানের আর কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না।একজনের থেকে আর কতো তাচ্ছিল্য সহ্য করা যায়! তাই ও চুপচাপ গাড়িতে উঠে ওখান থেকে চলে গেলো। আর জিনাত বাসার দিকে গেলো।
★★★
রাত দুই টা,,,,,
ঘড়ির কাঁটার দিকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বার বার তাকাচ্ছে জিনাত।এখন পর্যন্ত রায়ান বাড়ি ফেরে নি।১ টা পর্যন্ত রায়ানের জন্য ওয়েট করে,,শেষে বিরক্ত হয়ে খেয়েই নিয়েছে জিনাত।তারপর খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে রুমে এসে বই খুলে বসেছে ও।কিন্তু পড়ায় মন বসাতে পারছে না।মনে মনে বলছে,,,,এমন কান্ডজ্ঞান হীন মানুষ হয়!!রাত ২ টা বাজে,এখনো ঘরে ফেরার নাম নেই,,নিশ্চয়ই কোথাও মদ গিলে মাতাল হয়ে পড়ে আছে।তাই ঘরে ফেরার কথা মনেই নেই।আমার হয়েছে যত জ্বালা,,নয়তো কিনা একটা গুন্ডা মাস্তানের জন্য আমার রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়!
উহ!না। আর পারছি না।ঘুমে চোখ বুজে আসছে।কি যে করি,,আমি ঘুমিয়ে গেলে তো কলিং বেল বাজালেও টের পাবো না।
শিমুও তো নিশ্চয়ই এখন ঘুমিয়ে গিয়েছে।কি যে করি!
এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো। রাগে গজগজ করতে করতে দরজা খুলে দিলো জিনাত,,কিন্তু রায়ানকে দেখেই আঁতকে সে।রায়ানের আকাশী রঙের শার্ট টা পুরো রক্তে লাল হয়ে আছে।রায়ান জিনাতকে কিছু না বলে ওর রুমের দিকে এগুলো।
জিনাত দরজা বন্ধ করে দ্রুত পায়ে রুমে আসলো। এসে দেখে,, রায়ান ওর শার্ট খুলছে।শার্ট খুলতেই জিনাত দেখলো রায়ানের গায়ে কোনো চোট লাগেনি।তারমানে নিশ্চয়ই কাউকে মেরে ধরে এসেছে।
-দিনের মধ্যে কয়বার আপনার মানুষকে ধরে পেটানো লাগে বলুন তো।সকালে একটা ছেলেকে ওভাবে মারলেন,,এখন আবার কাকে মেরে রক্তাক্ত করে এলেন হ্যা?
-দেখো জিনাত আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।এই মুহূর্তে তোমার এই অযথা বকবক শোনার ধৈর্য আমার নেই।যদি পারো টেবিলে খাবার দাও।আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি।
-হ্যা হ্যা!আমি তো আপনার চাকরানী! রাত দূপুরে যখন তখন গুন্ডামী করে এসে ফরমায়েশ দেবেন,,আর আমি তা মুখ বুজে পালন করবো!
রায়ান চোখমুখ শক্ত করে জিনাতের সামনে এসে সজোরে হাত দুটো জোর করে বললো,,,,
-মাফ করুন আমায়!!অনেক বড়ো অন্যায় হয়ে গিয়েছে আমার নিজের স্ত্রী কে খাবার দিতে বলে।ও,ও আপনাকে তো আবার স্ত্রী ভাবা যাবেনা।আমার অধিকারের গন্ডি সীমিত কিনা! তাহলে শুনে রাখো আমার অধিকারের গন্ডি যদি সীমিত হয়,,তবে তোমার অধিকারও সীমিত। তাহলে তুমি আমাকে এতো কথা শোনাও কোন অধিকারে।আমি কাকে মারলাম, কাটলাম তাতে তোমার কি।কয়েকটা মাসের জন্য আমার মায়ের সামনে অভিনয় নয় করার জন্য রয়েছো,, সেটাই করো।শুধু শুধু আমার মতো গুন্ডামাস্তানের কাজে নাক গলাতে এসো না।
-এভাবে চিৎকার করে কি নিজের পাপ ঢাকতে পারবেন? মানুষকে এভাবে কষ্ট দিয়ে নিজের ভালো করতে পারবেন ভেবেছেন?
-পাপ!! জঘন্য পাপগুলো শেষ করার চেষ্টা যদি পাপ হয়,,তবে হ্যা আমি পাপী।এবার খুশি তুমি।আর মানুষের কষ্টের কথা বলছো,,কতটুকু দেখেছো তুমি তাদের কষ্ট।যে এতোবড়ো বড়ো কথা বলছো!
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*

আজ সকালে যে ছেলেটাকে মেরেছি,,জানো,ও কি করেছে? বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে।বাড়ির দাড়োয়ানের মেয়েকে জোর করে রেপ করেছে।তারপর ওই দাড়োয়ান ছেলেটার বাবার কাছে বিচার চাইতে গেলে বাবা ছেলে মিলে তাকে শাসিয়ে দেয় যে,,লোক জানাজানি হলে বা পুলিশের কাছে বললে তাদেরকে জানে শেষ করে দেবে।লোকটা ভয়ে আর পুলিশের কাছে যায় নি।মেয়েটার ভাই এসে আমার কাছে কাদতে কাদতে বললো সব।সেটা শুনেই আমি ভার্সিটি তে গিয়েছিলাম ওকে ধরতে।ছেলেটাকে ধরে তো আমি পুলিশের কাছে দিয়ে এসেছি।কিন্তু ওর বাবা রেগেমেগে মেয়েটার ভাইকে গাড়ি চাপা দিয়ে দেয়।আমরা খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি,,,,বেচারা ছেলেটা রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়।আমরা তখন ধরাধরি করে ওকে হাস্পাতালে নিয়ে যাই।আল্লাহ সহায় ছিলেন,তাই ও এই যাত্রায় বেচে যায়।কিন্তু ওর প্রচুর রক্তের দরকার হয়।আমার আর মনিরের রক্ত ম্যাচ করে ছেলেটার সাথে।তাই রক্ত দিয়ে,হাস্পাতালের অন্যান্য ফরমালেটিস শেষ করে আসতে আস্তে এতো রাত হয়ে গিয়েছে।
জিনাতের মুখ দিয়ে যেনো আর কোনো কথা সরছে না।এখন যে সরি বলবে তাতেও লজ্জা লাগছে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে কোনোমতে বললো,,
-আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।আপনি হাতমুখ ধুয়ে আসুন।
এই বলে জিনাত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

পরদিন জিনাতের ভার্সিটি বন্ধ।জিনাত সকাল সকাল রান্নাঘরে এসে ঢুকলো।এই কয়দিনেই রান্নাঘর টা যেন ওর আপন হয়ে গিয়েছে। রান্নাঘরে এসে দেখে শিমু রান্নাঘর ঘর ঝারপোছ করছে।জিনাত শিমুকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চুলায় চায়ের পানি বসালো।
শিমু একটা হাসি দিয়ে বললো,,,আপনে খুব ভালা ভাবি,,ভাইয়ার মতো একজন ভালা মানুষের লইজ্ঞা আপনের মতো একজনই দরকার ছিলো।
জিনাত একগাল হেসে বললো,,তোমার ভাইয়া খুব ভালো মানুষ বুঝি!
–কি কন ভাবি,,,ভাইয়ার মতোন ভালা মানুষ আপনে আর দুইডা খুইজ্জা পাইবেন না।কত মানুষের উপকার করে সে জানেন।মানুষের বিপদে আপদে ঝাপাইয়া পরে সবসময়। এই যে আমারেই দেখেন না,,,আমি যহন সেভেনে পরি,তহন আমার মায় মইরা যায়।মার মরনের ১ মাসের মাথায় বাপে আবার বিয়া করে।সৎ মার সংসারে কতো কষ্ট করছি।খাইয়া না খাইয়া কাম কাইজ করছি।তাও দুইবছর পর এক বুড়া ব্যাডার লগে আমার বিয়া করছিলো।হের লাইজ্ঞা বাড়ি থেইকা পালাইয়া গ্রাম ছাইড়া বরিশাল শহরে আইসা পরি।শহরে আইসা কি করমু,,কই যামু কিচ্ছু বুঝতেছিলাম না।তাই একটা মাঠের কোনায় বইসা কানতেছিলাম।তহন,,ভাইয়া আমারে দেইখা,, আমার সব কথা শুইনা,,আমারে বুইন ডাকে।আমারে বুইন ডাইকা এই বাসায় নিয়া আসে।তখন থেইকা আমি এই বাসায়ই আছি।বিশ্বাস করেন ভাবি,,আমি এই বাসায় কাম করলেও ভাইয়া একদিনের জন্যও আমার লগে কাজের মাইয়ার মতোন ব্যাবহার করে নাই।আম্মাও আমারে খুব ভালাপায়।আমি এই জায়গায় থাইকা যেই শান্তি পাইছি,,নিজের বাপের ঘরে এইয়ার ১০ ভাগের ১ ভাগও পাই নাই।।
শিমুর কথা শুনে জিনাত,, গতকাল স্নেহার বলা কথাগুলো আর রায়ানের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো,,,মনে মনে ভাবলো, তবে কি লোকটাকে চিনতে আমি ভুল করেছি।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here