স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ১

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#সূচনা_পর্ব
#part_1

ভোর পাঁচ টা কুম্ভকর্নের মতো ঘুমোচ্ছে বাড়ির একমাত্র শেহেজাদী।
কিন্তু শেহজাদীর সুন্দর ঘুমটা দীর্ঘ হতে দিলেন নাহহ মিসেস রহমান।
কয়েক বার ডাকার পর ও বাড়ীর শেহজাদী যখন উঠলো না মিসেস রহমান চুপচাপ জানালার পর্দা মেলে দিলেন।
সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পরতেই চোখ মুখ কুঁচকে নিলো ফারাবি।
মিসেস রহমান তীক্ষ্ম কন্ঠে ডাকলেন
_ এই ফারাবি আর কতো ঘুমাবি ?
কাল তো নয়টায় ঘুমিয়েছিলি এখন উঠ তাড়াতাড়ি।

ফারাবি পিট পিট করে তাকালো , ভোর বেলা তে মায়ের তীক্ষ্ম কন্ঠস্বর ওর কাছে বিরক্তিকর মাইক এর আওয়াজ মনে হচ্ছে।
যাহ প্রয়োজন ছাড়াই বহুদূর থেকে এসে কানের কাছে ঢং ঢং করে বেজে চলে।

মিসেস রহমান ফারাবির হাত ধরে বেড থেকে নামিয়ে দিলেন।
ফারাবি হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে বলল
_বাজে কয়টা ?
এই সাত সকালে কোন মহাযুদ্ধের জন্য ডাকলে আমায় ?

মিসেস রহমান বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন
_ কোনো খেয়াল আছে তোর ?
আজকাল কোন ধ্যানে থাকিস তুই ?

_ আম্মু কি হইছে ? সকাল সকাল কান টা খাচ্ছো কেন ?
সোজা সুজি বলো না হলে ঘুমাতে দাও।
ধ্যাত
এই বলেই ফারাবি সোফা তে পা তুলে বসে পড়লো।
কুশন নিয়ে বুকে জড়িয়ে আবার চোখ বুঝলো।
মিসেস রহমান বিছানা ঝাড়া শেষ করে ফারাবি কি আবার টেনে তুললেন।
ফারাবি আবেদনের সুরে বলল
_প্লিজ আম্মু। একটু ঘুমাবো , মাত্র সাড়ে পাঁচ টা বাজে।
_ কোনো বাজে কথা নাহ।
তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় , এখনি রিমি দের বাড়িতে যেতে হবে।
উফফ কতো কাজ আর ওনি এখন ঘুমাবে।

ফারাবি সামান্য চমকে গেল। এই অসময়ে রিমিদের বাড়ি তে গিয়ে কি হবে?
মুখ টা মলিন করে ফারাবি হাই তুলল।
ঘুমটা কাঁটে নি তার , সকাল সকাল উঠার একদম ই অভ্যাস নেই।

_ তাড়াতাড়ি আয় না মা। সবাই ফ্রেস হয়ে গেছে , তোর জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।

_ উফফ আম্মু তোমাদের জন্য আর পারি নাহ।
এই ভোর সকালে রিমি দের বাসা তে যাওয়ার কি প্রয়োজন ?
আর এমন ও নয় রিমি দের বাসা দশ মাইল দূরে।
রাস্তার এপার ওপার বাসা , এখন কোন প্রয়োজন যাবো আমরা ?

_ প্রয়োজন না থাকলে বলি নাকি।
কথা কম বল , বড্ড বেশি কথা বলিস।
তাড়াতাড়ি আয়

মিসেস রহমান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
ফারাবি থম মেরে রইলো তারপর হাতের কুশন টা ফেলে বেডে যেতে নিলো , মিসেস রহমান ফিরে এসে ধমক দিলেন।
ফারাবি মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ যাচ্ছি তোহহ

মিসেস রহমান দরজার কাছে ই দাড়িয়ে রইলেন।
ফারাবি একা একা ই বির বির করতে করতে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো।
মিসেস রহমান হালকা শ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
তার মেয়েটা কেন যে এইরকম কে জানে।

*

প্রায় আধ ঘন্টা রিমি দের বাসার ডয়িং রুমে বসে আছে ফারাবি।
সমস্ত কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
জীবন টা ত্যানা ত্যানা মনে হচ্ছে।
বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ফারাবি।
পুরো বাড়ি কে বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো হচ্ছে।
নানান রঙের ফুলের ছোঁয়ায় বাড়ি টা কে রাজপ্রাসাদ মনে হচ্ছে।
অবশ্য রাজপ্রাসাদ ই বটে , ডুপ্লেক্স বিশাল বড় বাড়ি, আধুনিকতার কোনো ছোঁয়াই বাদ নেই।

রিমি কে দেখা যাচ্ছে নাহহ মনে হচ্ছে অতি ব্যস্ত সে।
ফারাবির ইচ্ছে হচ্ছে সবাই কে ধুম ধাম মেরে দিতে।
সবাই এতো ব্যস্ত যে কাউ কে কোনো কিছু জিঙেস করার ও উপায় নেই।

বাড়ির মেইন ডোর দিয়ে রিফাত কে ঢুকতে দেখে চকচক করে উঠলো ফারাবির দু চোখ।
ফারাবি দৌড়ে গিয়ে রিফাতের পথ আটকালো।
রিফাত কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।
ফারাবি সড়ু চোখে তাকিয়ে আছে রিফাত এক পলক তাকিয়ে আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
মিনিট পাঁচেক পর ফোন রেখে রিফাত ভ্রু নাচালো।
ফারাবি ক্লান্ত নিশ্বাস ফেলে বলল
_ আজকে কিসের অনুষ্ঠান বলো তো ?
এই সাজ সকাল বেলা টেনে নিয়ে আসলো আমায় ?

রিফাত নিজের চুল গুলো এক হাতে ঠিক করতে করতে বলল
_ তুই কোন ধ্যানে থাকিস ?

ফারাবি মলিন স্বরে বলল
_ কেন ?

রিফাত ফারাবির মাথায় গাট্টা মেরে বলল
_ আজ কতো তারিখ ?

ফারাবি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_ 17 ই জুন।
তো কি হয়েছে?

_ আজ কে ফারহান আসবে ভুলে গেলি ?
তুই কবে থেকে যে ভুলো মনের হয়ে গেলি ?
এখন যাহহহ অনেক কাজ আছে।

রিফাত কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পা বাড়ালো, প্রচুর কাজ আছে তার মাথায়।

ফারাবি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো।
নাম টা ঠিক ঠাক মাথায় ঢুকলো নাহহ।
নাম টা শুনেছে বলে ও মনে হচ্ছে নাহহ।
কয়েক সেকেন্ড বাদে ফারাবির শরীর শিউরে উঠলো।
শরীরে প্রতি টা নিউরন জানান দিচ্ছে ফারহান আসছে।
চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো , ঠোঁট দুটো বিরতীহীন কাঁপতে লাগলো।
চোখে ভেসে উঠলো ভয়ঙ্কর অতীত।
যে অতীতের জন্য প্রায় এক বছর ফারাবি নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছিলো।
কারো সাথে স্বাভাবিক আচারন করতে পারে নি।
আবার কেন ফিরে আসছে তার অতীত ?
কি হতে চলেছে এবার ওর সাথে ?
ফারাবির পা দুটো কাঁপছে।
মাথা টা ও কেমন ঘুর ঘুর করছে।
ফারাবি ছুটে উপরে উঠে গেল।
এই ভয়ানক অতীত ঘনিয়ে আসছে তার জীবনে , এবার নিশ্চিত মৃত্যু , কোনো উপায় নেই বাঁচার ।

*

অন্ধকার রুমে Everlast pro 2 – station Gym
এর পাঞ্চিং ব্যাগে একের পর এক পাঞ্চ মেরে যাচ্ছে ফারহান।
এসি রুমের ভেতরে থেকে ও শরীর থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঘাম বের হচ্ছে।
মুখে নেই কোনো ক্লান্তি , ঠোঁটের কোনে লেগে আছে রহস্য মাখা হাসি।
যাহহ সব সময় ই তার মুখে বিদ্যমান থাকে।
একটু দূরেই একজন লোক দাড়িয়ে আছে ,হাতে পাঁচ রকমের ড্রিংক, মুগ্ধ নয়নে ফারহান কে দেখে যাচ্ছে ।
ঘড়ির কাঁটা টং টং করে বেজে উঠতেই ফারহান নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পাঞ্চিং ব্যাগ টাকে পাঞ্চ মারলো।
পাঞ্চিং ব্যাগ টা অনেক বেশি গতিতে দুলতে লাগলো।
ফারহান সামান্য শ্বাস ফেলে পেছন ঘুরলো।
পেছন ফিরে সামান্য ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকালো।
লোকটা সামান্য ভয় পেয়ে ড্রিংক গুলো টেবিলে রেখে চলে গেল।
ফারহান বাঁকা হেসে
ট্রাওয়াল নিয়ে ঘাম মুছে নিলো।
একটা গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে তরল পানীয় টা মুহুর্তে ই গিলে নিলো।

মিনিট কয়েকের মধ্যে আবার দুটো লোক এসে হাজির হলো।
ফারহান ছোট্ট করে বলল
_ come with me.

লোক দুটো বিনাবাক্যে ফারহানের পিছু পিছু যেতে লাগলো।
ফারহান নিজের রুমে এসে বেডের উপর পা তুলে শিথিল ভঙ্গিতে বসে রইলো।
লোক দুটো চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান এক হাতে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল
_ ফ্লাইট রেডি ?

_ ইয়েস স্যার।

_ ওকে।
এবার যেতে পারো।

লোক দুটো চলে যেতে নিলেই ফারহান আবার ডাক দিলো।
লোক দুটো শুকনো ঢোক গিলে দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ বি ডি তে বিজনেস সেট করতে বলেছিলাম।
ডিলার দের সাথে কথা বলেছো ?

লোক দুটো ঘামতে শুরু করলো।
মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে নাহহ।
ফারহান বিরক্তি নিয়ে বলল
_ এভাবে চুপ করে আছো কেন ?

_ এক্সচেলি স্যার দুজন শেয়ার হোল্ডার দেশে নেই।
বিজনেস এর কারনে কানাডা গিয়েছেন।
আমরা তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারি নি।

এই টুকু বলেই লোক দুটো চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো।
কারন এখন তাদের আশ পাশ দিয়ে সাইক্লোন যাবে।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ড যাওয়ার পর ও যখন কোনো কিছুর আওয়াজ পেল না লোক দুটো চোখ খুলে নিলো।
ফারহান সবাই কে অবাক করে দিয়ে বুকে হাত গুঁজে তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে।

লোক দুটো একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ফারহানের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো।
ফারহান নিঃশব্দে হাসতে লাগলো।

লোক দুটো এক যোগে বলল
_ স্যার উই আর সরি।

ফারহান হু হু করে হেসে উঠলো।
লোক দুটো অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান দুজনের কাঁধে হাত রেখে বলল
_ ইটস ওকে।
আমাকে এতো ভয় পাও যা বলার বাইরে।
আমি অতো টা ও খারাপ মানুষ নই।
তবে একটা কথা বলতেই হয় তোমাদের দুজন কে ছাড়িয়ে ও আরেক জন আমাকে ভয় পায়।
তাকে টপকানোর সাধ্য তোমাদের নেই।

লোক দুটো প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান মৃদু হেসে বলল

_ ডোন্ট ওরি।
তোরা দুজন হলি আমার ভারসিটির জুনিয়র ছেলে পুলে। আর আমি জানি তোরা কতোটা গুনী।
সো এতো ভয় পেতে হবে নাহহ।

ছেলে দুটো উজ্বল হাসলো।
ফারহান পকেট থেকে দুটো কার্ড বের করে বলল
_ সব ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি।
আর একটা কথা রাফি তুই আজ ই কানাডায় চলে যাহ।
দুজন কে খুজে বের করে সমস্ত ডিল এ সাইন করিয়ে আনবি।
আর রায়হান তুই আমার সাথে বিডি তে যাবি।
কয়েক দিন সব কিছু তোকেই সামলাতে হবে।
আর প্লিজ ডোন্ট কল্ড মি স্যার।

রায়হান আর রাফি প্রশস্ত হাসলো।
দুজন ফারহান কে জমের মতো ভয় পায়।
অথচ ফারহান ওদের সাথে কতো সহজ ভাবে কথা বলে।

রাফি আর রায়হান কিছু ফাইল নিয়ে চলে গেল।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাওয়ার নিতে গেল।
সাওয়ার কমপ্লিট করে রেডি হয়ে নিলো।
হালকা পারফিউম মেখে বেড সাইট টেবিল থেকে ছবির ফ্রেম নিয়ে আলতো হাত বুলালো।
বাঁকা হেসে বলল
_ অনেক উড়েছিস।
পাখি কে আর উড়তে দেওয়া যাবে নাহহ।
এখন কলিজায় আটকে রাখার সময় হয়েছে।
যে ভুল তুই করতে চেয়েছিলি দ্বিতীয় বার তা আর করতে পারবি নাহহ।
জ্বালিয়ে দিবো , জ্বলন্ত দাবানলে জ্বলবি তুই।
যতোটা আমি পুরেছি তার থেকে দ্বিগুন পুরবি তুই।
আর সেই আগুনে হাত বাড়াবো আমি শুধু আমি।
সমস্ত কষ্ট দূর করে দিবো জান।
আসছি আমি , রেডি থাকিস।

এই টুকু বলেই ফারহান বাঁকা হাসলো।
এ হাসির মানে টা কতোটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here