স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৫৭+৫৮

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_57

” আপনি ভুল করেছেন মিস্টার রহমান। নিজের স্বার্থের জন্য অন্য কে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সুযোগ নিয়ে আপনি ঠিক করেন নি মিস্টার রহমান। বড্ড বেশি খেলে ফেলেছেন এবার তাঁর শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। ”

কাঁচের গ্লাসের ঝনঝন আওয়াজে দুটো লোক ছুটে আসলো। ফারহান সে দিকে তাকালো না। লোক দুটো কাঁপতে কাঁপতে বলল
_ স্যার আপনার হাত রক্তে মেখে গেছে।

_ লিভ মি এলোন।

লোক দুটো বিনা বাক্য প্রস্থান করলো। ফারহানের দু চোখে পানি চিক চিক করছে। নয় নয় টা মাস কেঁটে গেছে। নিজেকে লুকাতে কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে ওকে।
মানুষ থেকে অমানুষ এ পরিনত হতে হয়েছে। অসহায়ত্ব ফুঁটিয়ে তুলেছে প্রতি টা পদে।
চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলো ফারহান। কাঁপা হাতে ফারাবির জন্য মিথ্যা চিঠি লিখেছিলো । সবার গেট টুগেদার ছিলো সেদিন। এক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয় তাকে। শর্ত দেওয়া হয় নির্দেশনা মতো চিঠি লিখতে।
চিঠি তে লিখতে হয়েছিলো

” আমি তোকে ভালোবাসি না ফারাবি। শুধু মাত্র তোর শরীরের প্রতি মোহ ছিলো আমার। ছোট থেকেই তোর বাড়ন্ত বয়স কে আমি অনুভব করেছি। তখন থেকেই লোভ জাগে তোর প্রতি। আর তার জন্য এতো নাটক করতে হয়। আমি তো তোকে পেয়েই গেছি। এখন আর তোকে প্রয়োজন নেই। আমি চলে যাচ্ছি । মনে হলো সত্যি টা জানানো দরকার তাই বলে দিলাম। কি করবি না করবি তোর ইচ্ছা ”

দু চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরে পরলো। বুকের ভেতর যন্ত্রনা হচ্ছে খুব। এই তিতা কথা গুলো বাধ্য হয়ে লিখেছে সে। নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে তাঁর প্রেয়সীকে। আর তাই নিজেকে আড়াল করতে হয়েছে।
জীবনের কঠিন তম লড়াই এ আজ একা ওহ।
কাউকে পাশে রাখার সুযোগ হয় নি। মেয়েটার কথা ভাবতেই বুক চিড়ে হৃদপিন্ড বেরিয়ে আসতে চায়।

*

_ কেনো করলেন এমন ? আমি কি এটার ই যোগ্য ? কেন আমায় ভালোবাসলেন না ? আদৌ কি ভালোবেসেছেন কখনো ? সত্যি কি মোহ ছিলো সব ?

ফারহানের ছবিতে হাত বুলাতে বুলাতে নানান কথা বলছে ফারাবি। কষ্টের দুনিয়া টা লাঘব হচ্ছে না।
যত দিন যাচ্ছে যন্ত্রনা তো উল্লাসে বেড়ে যাচ্ছে। সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। ফারাবির ইচ্ছে হয় নি । পড়াশোনার প্রতি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা নেই। সব ভালোবাসা তো একজন ই শুষে নিয়েছে। তীরে এসে ডুবিয়ে দিয়েছে।
মাঝি ছাড়া কি নৌকা চলে ?
উহুহ চলে না। ঠিক তেমনি ফারাবির জীবন ও চলছে না।
ছেলেটার গাঁয়ের মিষ্টি গন্ধ এখনো শরীরে লেগে আছে। অথচ মানুষটাই নেই।

হঠাৎ ভয়ঙ্কর গর্জনে পরিবেশ ভারী হয়ে গেল। কোথা থেকে এক ফালি মেঘ এসে আকাশের রঙ বদলে দিলো। বছরের শেষ বৃষ্টি বোধহয়। বৃষ্টির সাথে ভালোবাসা জড়িয়ে আছে।
ফারহানের সাথে কতো দিন বৃষ্টিতে ভিজেছে।
অথচ আজ একা।
তবে ফারাবির ইচ্ছে হলো না গাঁয়ে বৃষ্টি মাখতে।
হেলানো তলের মতো শার্ট টার দিকে ঝুঁকে চেয়ে রইলো।
বাইরের ঝুম ঝুম বৃষ্টি গানের সুর তুলেছে। ইচ্ছে হলো চিৎকার করে আর্তনাদ করার। কিন্তু মরে যাওয়া মনের ভেতর থেকে কোনো আর্তনাদ আসলো না।
এক ফালি হেসে ফারহানের শার্ট বুকে জড়িয়ে নিলো।
প্রেম মাখা অনুভূতি গুলো আওড়াতে লাগলো। দেখে বোঝার উপায় নেই মেয়েটার বুক ফেঁটে যাচ্ছে।
বজ্র পাতের শব্দে ফারাবি নড়ে চড়ে বসলো। খানিকটা ভয় কাজ করছে। চারিদিক কেমন অন্ধকার হয়ে গেছে। এ মেঘ কি থামার নয় ?
কি ইঙ্গিত এই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির? সুখ নাকি দুখ ?

*

” ডেড আমার সাথে এমন কেন হলো ? কেন ওহ আমাকে ভালোবাসে না ? কেন তুমি পারছো না কিছু করতে ? এতো ভালোবাসার পর ও আমার দিকে ফিরে তাকালো না ? আর কতো সহ্য করবো আমি ? দশ বছর, দশ দশ টা বছর আমি অপেক্ষা করেছি। আমি আর পারছি না ডেড। প্লিজ কিছু করো । ”

ঝাঁপসা চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন মিস্টার হামিদ রহমান। ওনার আরেক নাম ফরিদ চৌধুরী। কোনো এক বিশেষ কারনে নামের পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

_ অনু শান্ত হ মা। আমি প্রমিস করেছি তো ?

_ নো ডেড তুমি ব্যর্থ । দশ দশ টা বছর ধরে তুমি ব্যর্থ । পারো নি আমার ভালোবাসা কে এনে দিতে।
আট মাস হয়ে গেছে পারলে না খুঁজে দিতে ? কেন পারলে না তুমি ?
কোথায় গেল তোমার ক্ষমতা ? ঐ মেয়েটার বিরুদ্ধে এতো প্ল্যান , এতো প্রুফ কোথায় গেল ?

_ অনু

_ ডোন্ট কলড মি অনু। অনু মরে গেছে। ঐ মেয়েটার জন্য সব হয়েছে ওকে আমি মেরে ফেলবো। আমি আজ ই বিডি তে যাবো । এখনি যাবো। আমার ফারহান ওর কাছেই আছে।
ওহহ লুকিয়ে রেখেছে আমার ফারহান কে।

মেয়ের চেঁচামেচি তে ওনি অসহায় মুখ করে নিলেন। ফারহান বিডি তে নেই। আর না আছে ফারাবির কাছে।
এই সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন ওনি। কিন্তু মেয়েটাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছেন না।
একটা নামেই আটকে আছে। ফারহান ফারহান আর ফারহান।

হাতে থাকা ওয়াইন এর গ্লাস টা মিররে ছুড়তেই মিরর ভেঙে গেল। অনু চিৎকার করে বলল
_ লিভ মি এলোন। আমার ফারহান কে না এনে দিতে পারলে আমার সামনে আসবে না তুমি।

মিস্টার রহমান চলে গেলেন। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
ফারহান কে এখনো খুঁজে পেলেন না ওনি। অস্ট্রেলিয়া থেকে গেল কোথায় ? এতো সিকিউরিটির পর ও বাসা থেকে পালিয়ে গেল।
আট টা মাস চিড়ুনি তল্লাশি চালিয়ে ও লাভ হলো না।
ওনার দীর্ঘশ্বাসে পরিবেশ ভারী হয়ে গেল। ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে কল লাগালেন।

*

_ ইমিটিয়েট লি টাকা ট্রান্সফার করো। কোনো ভাবেই যেন অন্য কেউ না জানতে পারে। রিফাত কে ও বুঝতে দিলে হবে না। রায়হানের সাথে আমার কন্ট্রাক করিয়ে দাও।

_ ওকে স্যার। আমি দেখছি কি করা যায়।

ফারহান ফোন টা রেখে দিলো। এখন তাঁর অনেক টাকার প্রয়োজন। কোম্পানির কাজ টা স্থগিত হয়ে আছে। রিফাত ঠিক ঠাক সামলাতে পারছে না।
এভাবে চললে লস হয়ে যাবে। প্রজেক্ট টা ও মাঝা মাঝি হয়ে আছে। সব দিক সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত ফারহান। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে টাকা ছাড়া কেউ এক পা ও নড়ে না।
আট টা মাস লুকিয়ে আছে বিষাক্ত হায়নার থেকে এখন তো কিছু করতেই হবে।
ফারাবির দেখা মিলে নি মাস খানেক হলো। মাস খানেক আগে ভিডিও তে দেখেছিলো মেয়ে টা কে।
কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি ওহ। একজনের সাহায্যে ফারাবির দেখা মিলেছিলো।
মেয়েটার চোখ মুখ দেখেই ফারহানের বুক ভারী হয়ে গেছে। কি হাল ই না হয়েছে মেয়েটার। সেই সময় টাতে ওর মাথা ঠিক ছিলো না।
তাই চরম ভুল করে ফেলেছে। মেয়েটাকে এভাবে একলা ছাড়া উচিত হয় নি।
অবশ্য ওর কাছে কোনো স্কোপ ও ছিলো না।
হাল চাল না বুঝে আগানো উচিত ও নয়। তবে মনে হচ্ছে এই সব কিছুর আগে মেয়েটার সাথে অন্যায় করে ফেলেছে । একটা টেক্সট দিতে পারলে ও মেয়েটা শান্তি পেত।
পরক্ষণেই নিজের ভাবনার যুক্তি পাল্টে ফেললো।
মাথার চুল খামচে ধরলো। ফারাবি কিছুতেই শান্ত হতে পারতো না। এই সব জানলে আর বেশি পাগল হয়ে যেত।
মেয়ে টা এখনো বিপদের মুখে আছে।

অসহায় মুখে বাইরের দিকে তাকালো। খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করতে হবে।
এভাবে লুকিয়ে আর কতো ? যত টুকু ইনফর্মেশন আছে তাঁতে কিছুই হবে না।
ফারহান ল্যাপটপ হাতে বসলো। মনিটরে অনুর হাস্য উজ্জল মুখ টা ভেসে উঠতেই গা গুলিয়ে আসলো।
মেয়েটা ওর জীবন কে এলোমেলো করে দিলো। সব শেষ করে দিলো।
ফ্লাসবেক

” বিশাল আয়োজন করে গেট টুগেদার করা হয়েছিলো। পার্টি শেষে ফারহানের কাছে একটা চিঠি আসে। সাথে একটা ভিডিও। ফারহানের মনে সন্দেহের বাস জেগে উঠে। দ্রুত ভিডিও টা চেইক করে। যা দেখে তাঁতে ওর মাথা ঠিক থাকে না। ছুঁড়ে ফেলে দেয় ভিডিও টা।
ভিডি ও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফারাবি ওহ তাঁর বান্ধবীরা একটা রেসট্রন এ যাচ্ছে। যেই রেসট্রনে ড্রাগ সেলিং করা হয়। কেউ কায়দা করে ফারাবির কাছে ড্রাগ ও রেখে দেয়। তবে ফারাবি তা বুঝতে পারে না। প্যাকেট টা নাড়াচাড়া করে ম্যানেজার এর কাছে জমা দেয়।
আর ম্যানেজার কে ফারাবি কিছু টাকা দেয়। মূলত টাকা টা ছিলো খাবারের বিল। পথ শিশু দের জন্য অনেক খাবার কিনেছিলো সেদিন ।
আর তাই টাকার পরিমান টা ছিলো বেশি। এই ভিডি ও টাকে এডিট করে নানান ছলছাতুড়ি করে ফারাবি কে ড্রাগ সেলার বানিয়ে দেয়।

ফারহান চিঠি খুলে দেখে একটা ঠিকানা দেওয়া যেখানে ওকে একা যেতে বলা হয়েছে। আর না হলে ফারাবি কে পুলিশে দেওয়া হবে । মেয়েটাকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চায় নি ওহ।
আর তাই একাই চলে যায়। যা ছিলো চরম বোকামি ।
ঠিকানা অনুযায়ী ফারহান সেখানে যায়। তবে কাঙ্খিত ব্যাক্তির সাথে তাঁর দেখা হয় না। তবে একজন এসে কিছু অডিও দিয়ে যায়। অডিও তো বলা হয় ফারাবির থেকে তাঁকে দূরে সরে যেতে হবে।
ফারহানের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। সুযোগ পায় না কাউকে কিছু বলার। তাঁর আগেই চিঠি লিখে পাঠাতে হয় ফারাবির কাছে। আর ওকে নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়া।

বর্তমান

ফারহান আর ভাবতে পারছে না। ল্যাপটপ টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
অনু মেয়েটাকে এর আগে কখনো দেখে নি ওহ। কিন্তু মেয়েটার আচরন বলে দিয়েছে ফারহান কে অনেক দিন ধরে চিনে।
আর তাঁর ই সাথে ওকে পছন্দ করে। যার পাগলামির সায় দিয়েছে ওর বাবা। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর মেয়েটার জঘন্য তম আচারন গুলোর কথা ভাবতেই ফারহানের গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে দিলো।
কি বিদঘুটে কাজ গুলোই না করেছে মেয়েটা। ফারহানের ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটাকে খুন করার। কিন্তু কিছু করার সুযোগ ছিলো না।

ফ্ল্যাশব্যাক

ফারহান কে চোখ বেঁধে একটা ঘরের মধ্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বাইরে থেকে লক করে দেওয়া হয়। ফারহান বুঝতে পারে এখানে আর ও কারো উপস্থিতি রয়েছে। তখনি সচেতন হয়ে যায়। তবে কোনো মেয়ে হবে তা আশা করে নি ওহ।
চোখ টা যখন খুলে ফেলে তখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনু কে। এমন তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে ছিলো যে ফারহানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।
কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে মেয়েটা ,,,,
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_58

অনু হঠাৎ করেই ফারহানের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। আর এলোমেলো ভাবে ফারহানের গাঁয়ে চুমু খেতে থাকে। ফারহানের ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটাকে থাপ্পড় মেরে দিতে।
কিন্তু হাত ছিলো বাঁধা । ফারহান চিৎকার করে উঠে। অনু ছিটকে সরে যায়। ফারহান বার বার বলে বাঁধন খুলে দিতে। প্রথম দিকে অনু খুলতে চায় না।
কিন্তু পরে বাঁধন খুলে দেয়। ফারহান কিছু বলবে তাঁর আগেই আবার ঝাঁপিয়ে পরে। দু হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় অনু কে।
অনু আবার আসে। ফারহানের খুব রাগ উঠে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঁচু করতেই মিস্টার রহমানের কন্ঠ ভেসে আসে।
ফারহান পেছন ঘুরতেই লোকটা বলল
_ ওয়েলকাম মাই ডিয়ার সান। আমার মেয়ে কে ভালোবাসার জন্য তোমাকে এনেছি। মারার জন্য নয় , তাই সাবধান। একটা ফুলের টোকা ও যেন না পরে।
আমার প্রিনন্সেস এর গাঁয়ে আঘাত করার কথা ভুলেও স্মরণ করো না।

_ নো মোর ওয়ার্ড ডেড। ওহ আমাকে হাজার বার মারবে তুমি কিচ্ছু বলবে না।
যাও এখান থেকে । আমি শুধু ওর সাথে কথা বলতে চাই।

_ মামনি

_ নো মোর টক ডেড। প্লিজ লিভ দ্যা রুম।

মিস্টার রহমান চলে যায়। অনু ফারহানের দিকে এগিয়ে আসে।
ফারহানের বুকে মাথা রাখে। ফারহান ছিটকে দূরে সরে যায়।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। অনুর মুখে তখনো হাসি। ফারহান হাত উঠিয়ে ও নামিয়ে নেয়।
মেয়েটা পাগলামি শুরু করে দেয়। ফারহান চিৎকার করে উঠে। এই সামান্য মেয়ের শরীরে এতো শক্তি ফারহান ভাবতে ও পারে না।
হিমসিম খেতে থাকে । ফারহানের চিৎকারে মিস্টার রহমান চলে আসেন। অনু কে বুঝিয়ে নিয়ে যান। ফারহানের চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে ।
চিৎকার করে বলে
_ আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি ?

_ আমার মেয়ে। শুধু মাত্র আমার অনুর জন্য তোমাকে নিয়ে এসেছি আমি।
ওহ তোমাকে ভালোবাসে।

_ আপনি কি জানেন না আমি যে ম্যারিড ?

_ তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এসব করেছি ?
তোমাকে আমার প্রয়োজন। তোমার কাছে চব্বিশ ঘন্টা সময় আছে ভেবে নাও তুমি কি করবে ।
আমার মেয়েকে আগলে রাখবে নাকি নিজের স্ত্রী কে ফাঁসির দড়ি তে

ফারহান চিৎকার করে উঠে। ফারাবির নামে একটা বাজে কথা শুনতে চায় না ওহহ।
লোকটা বাঁকা হেসে চলে যায়। ফারহান বুঝতে পারে এই ষড়যন্ত্র টা বেশ গভীর । তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে।
অনু কে দেখেই ফারহান বেশ অবাক হয়েছে। এই মেয়ের জন্যই আজ এতো ঝামেলা ।
ফারহান যথাসম্ভব নিজেকে ঠান্ডা রাখে।
মিস্টার রহমান কে বলে অনুর সাথেই থাকবে ওহ।
তবে ফারাবির কোনো রকম ক্ষতি যেন না হয়।
মিস্টার রহমান রাজি হয়ে যান। আর ফারহান নাটক শুরু করে। দীর্ঘ এক মাস অনুর পাগলামি সহ্য করে।
তবে যথাসম্ভব ওর থেকে দূরে থাকে। অনু কে ভুল বুঝিয়ে ওরা শপিং মলে যায়।
আর ঐ খান থেকেই ফারহান পালিয়ে যায়।
অনেক কষ্টে এখানের বিখ্যাত এক বিজন্যাস মেন এর সাথে দেখা করে।
লোকটা সম্পর্কে ফারহান অনেক কিছু জানে। হেল্প ফুল একজন ব্যক্তি। খ্রিস্টান ধর্মের হলে ও ফারহানের প্রতি সদয় হন ওনি।
সেই থেকে ফারহান ওনার কাছে আছে। ওনি ফারহান কে সর্বোচ্চ সাহায্য করে যাচ্ছেন।

*

বর্তমান

ফারাবি ঘুমিয়ে আছে। রুমের কলিং বেল বাজতেই ফারাবি পিট পিট করে তাকায়।
শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানি গালে লেপ্টে আছে। মুখ টা কেমন টান টান লাগছে । তবু ও সে দিকে পাত্তা দিলো না। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। প্রান হীন অস্তিত্ব নিয়ে দরজা খুলতেই অবাক হলো। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষন এভাবেই কেঁটে গেল। হঠাৎ করে ফারাবি আপু বলে আর্তনাদ করে উঠে।
মেয়েটি দু হাতে ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফারাবির কান্নার বেগ যেন থামছেই না।
নাক টেনে উচ্চারণ করলো।
_ আপু ওনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। আমাকে ভালোবাসেন না ওনি। দেখো আমি এখনো ওনাকেই ভালোবাসি খুব ভালোবাসি ।
কিন্তু ওনি আমাকে ভালোবাসলেন না। কেন ভালোবাসলেন না আমায় ?

অনু ফারাবির চোখ মুছিয়ে দেয়। বোনের মায়া ভরা মুখে চুমু দেয়। চোখ দুটো ভিজে গেছে। ফারাবি আবার আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে। অনু তার স্নেহের হাতে ফারাবির পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।
_ আপু এসে গেছি তো ? দেখবি তোর সব কষ্ট দূর করে দিবো। একটু ও কষ্ট লাগবে না তোর।

_ আমি ওনাকে চাই আপূ। ওনি ই আমার কষ্টের এক মাত্র ঔষধ।

অনু ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফারাবির বাহু ঝাঁকিয়ে বলে
_ আপু হই তোর । একটু হলে ও তো দায়িত্ব আছে তাই না ?
তোর কষ্ট আমি কি করে দেখি বল তো ? আমি তোকে সব কষ্ট থেকে মুক্তি দিবো।

জল ভরা নয়নে ফারাবি উচ্চারন করে আপু। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নেয় অনু।
হাত বুলিয়ে বলে
_ দেখ একদম কষ্ট হবে না তোর। তোর সব কষ্ট দূর করে দিবো আমি। আর আমরা সবাই খুব ভালো থাকবো।
এটাই তো চাস তুই ?

ফারাবি কাঁদতে থাকে। অনু ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। জিন্স এর পকেট থেকে ধারালো নাইফ বের করে।
চোখ বন্ধ করে ফারাবির পিঠে ঢুকিয়ে দেয়। ফারাবির চোখ লাল হয়ে উঠে। পিঠ থেকে লাল তরল গড়াতে থাকে।
চোখ দিয়ে অজ্রস নোনা জল নেমে যায় ।
অনুর দিকে ছলছল নয়নে তাকায় ফারাবি । অনুর চোখে জল মুখে হাসি। কম্বিনেশন অনুভূতি তে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।
কষ্টের সাথে প্রাপ্তির মিল রেখা ও রয়েছে।
হাত থেকে নাইফ টা পরে যায়। মুহুর্তেই ফারাবি চোখ বন্ধ করে নেয়।

_ ফারাবিইইইইইই

ফারহান আর্তনাদ করে উঠলো । শরীর ঘামে চুপচুপ করছে। সময় রাত তিনটে বেজে আটত্রিশ মিনিট। বুক এখনো কাঁপছে । তীব্র গতিতে উঠা নামা করছে হৃদস্পন্দন । ফারহান নিজের চুল খামচে ধরলো।
স্বপ্ন ছিলো এটা। তবু ও নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। ফারাবির জন্য মন টা উতলা হয়ে উঠেছে।
ধীর পায়ে ব্যলকনিতে চলে আসলো। অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরের বিশাল এক ভবনে সে থাকে।
চারিদিকে শুধুই ঝকঝকে আলোর বাহার। ফারহানের মন শান্তি পেল না। অনু কে নিয়ে ভীষন ভয় হচ্ছে।
মেয়েটা ফারাবির কোনো ক্ষতি করে দিবে না তো ?
নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যে ছোট বোন কে এতো বড় ষড়যন্ত্রে ফাসাতে পারে সে খুন যে করবে না তাঁর ই বা কি গ্যারান্টি ?
খুন কথা টা মনে হতেই ফারহানের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।
না এ কি ভাবছে ওহ ? ফারাবির কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
কিছুতেই মেয়েটার ক্ষতি হতে দিবে না। ফারহান আর এক মুহুর্ত ও সেখানে দাঁড়ালো না। দ্রুত মিস্টার স্টিফেন এর রুমে চলে গেল।
ফারাবির বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমানের পৃষ্ঠে প্রমান দাঁড় করাতে হবে।
তাঁর পর অনু আর মিস্টার রহমান এর বিষয় টা দেখে নিবে।
এদের যোগসূত্র ফারহানের কাছে অস্পষ্ট। যে করেই হোক সব কিছু ওকে জানতেই হবে।

*

রিমির ডেলিভারি হয়ে গেছে। ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছে রিমি।বাড়ির সবাই বেশ খুশি।
সব থেকে খুশি ফাহিম। লাজ লজ্জা ভুলে সে কেঁদেই দিলো। রিমি ছলছল নয়নে তাকালো। ছেলেটা এমন কেন ? এই যে হুটহাট যা তা করে বসে।
এতো ভালোবাসার দরকার কি ? রিমির ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। ছেলেটার প্রাপ্য ভালোবাসা আদৌ কি কখনো দিতে পাবরে ওহ ?

ফারাবি দের বাসার সকলে আজ ফারহান দের বাসায় এসেছে। পারিবারিক ভাবেই ধুম ধাম করে অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফারাবির কানে সে শব্দ এখনো পৌছায় নি। মেয়েটা ফারহানের ছবি জড়িয়ে বসে আছে।
এতো আনন্দ , উল্লাস হলে ও ফারাবির সে দিকে ধ্যান নেই।
ফারহানের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের স্মৃতি গুলো ভাবছে। হুটহাট কোলে তুলে নেওয়া। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা। এমনকি জোড় করে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করানো।
সব কেমন রঙিন তাই না ? আজ আছে কাল নেই। মানুষ বড্ড অভাগা প্রানী।

দরজায় নক পরতেই ফারাবি উঠে দাঁড়ালো। চোখের পানি মুছে নিয়ে ডোর খুলে দিলো।
বাবা কে দেখে হালকা হাসার চেষ্টা করলো। ফারাবির বাবা ছলছল নয়নে মেয়ের দিকে তাকালেন।
মেয়ে কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলেন না।
ফরহাদ চৌধুরী পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফারাবির দিকে এগিয়ে আসলেন। স্নেহের হাত টা মাথায় রেখে বললেন
_ আজ অনেক সুখের সংবাদ রে মা। তুই যদি আজ ও মন মরা হয়ে থাকিস তাহলে কি করে হয় বলতো ?

_ কিসের সংবাদ বাবা ? নিচ থেকে সোর গোল শোনা যাচ্ছে ।

_ রিমির ছেলে হয়েছে।

ফারাবির অধর কোনে হাসি ফুটে উঠলো। প্লাস্টিকের হাসি নয়। মন থেকে প্রান খোলা হাসি।
ফারাবির বাবা অবাক চোখে তাকালেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
_ ফারাবি নিচে যাবি মা ?

_ কেন যাবো না আব্বু ? অবশ্যই যাবো। আসো তোমরা ।

ফারাবি হন হনিয়ে বের হতে নিলো। সবাই অবাক চোখে তাকালো। দরজায় গিয়ে ফারাবি থেমে গেল।
এক মুহর্তের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিলো পেছনে ফেলে আসা কালো অতীত।
রুমের চৌকাঠ পেরোলো না আর। পিছিয়ে ব্যলকনিতে চলে আসলো। ফরহাদ চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কুলঙ্গার ছেলেটা সব শেষ করে দিলো। ফুলের মতো মেয়ে টাকে এমন ভাবে নিঃশ্বেষ করে দিলো যে দশ টা মাস ধরে মেয়েটা এক ঘরে বন্দি ।

ঘন্টা খানেক পর ফারাবি শাওয়ার থেকে বের হলো। চিৎকার করে কেঁদেছে আজ। বুকের ভেতর যন্ত্রনা হচ্ছে খুব। কেন এমন টা হলো ?
রিমি কে বেডে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো। রিমি ছলছলে নয়নে তাকিয়ে বলল
_ আমার ছেলেকে দেখতে যাবি না তুই ? আমার বিয়ের দিন কি বলেছিলি মনে আছে তোর ?

ফারাবি উত্তর দিলো না। চোখের সামনে ভেসে আসলো রিমির বিয়ের ঘটনা। প্রচন্ড হেসেছিলো সেদিন। রিমির হাত দুটো ধরে আমুদে স্বরে বলেছিলো তোর বেবি হলে নামটা কিন্তু আমি ই রাখবো।
সেটা শুনে ফারহান ঈশারা করে তাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছিলো।
কি দারুন ই না ছিলো মুহুর্ত গুলো।

_ যাবি না ছোট ছোট হাত পা গুলো দেখতে ?

_ রিমি

_ আমার ভাই না হয় বেইমানি করেছে। তুই ওহ কি

_ রিমি । তোর ভাইয়ের নামে আর একটা বাজে কথা শুনতে চাই না আমি।

ফারাবির হাত দুটো জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো রিমি। মেয়েটার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না আর। তাঁর ভাই সত্যি ই এমন টা করতে পারলো ?
এতো ভালোবাসা দেখিয়ে চলে গেল।

_ তুইইই যাহহ আমমমি আসছি।

কথাটা কাঁপা স্বরেই বললো ফারাবি। রিমির চোখে মুখে আনন্দ এসে ভর করেছে। ফারাবি দু চোখ মুছে নিয়ে আশস্ত করতেই রিমি চলে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here