#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_43
হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী এক ছেলে। মুখে চিন্তার ছাঁপ। পোষাক আশাকে বড় লোকের ছেলেই মনে হচ্ছে।
তবে বড় লোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান নয় যে তা চোখ মুখ ই বলে দিচ্ছে।
ডক্টর কে কেবিন থেকে বের হতে দেখেই ছুটে গেল ছেলেটা।
ডক্টর মাস্ক খুলে নিয়ে প্রশস্ত হাসলেন।
_ আঙ্কেল হাউ ইস সি ?
_ ডোন্ট বি পেনিক । সি ইজ ফাইন নাও। অতিরিক্ত ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে ই জ্ঞান ফিরে আসবে ।
_ থ্যাংকস আ লট। আঙ্কেল ক্যান আই সি হার ?
_ সিউর।
_ থ্যাংকস।
বলেই ছেলেটা কেবিনে ঢুকে পরলো। নিস্তেজ হয়ে শুইয়ে আছে রিমি। মুখ টা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। যেন কতো দিন ধরে কিছু খায় না। আচ্ছা মেয়েটার কি ক্ষিদে পেয়েছে ?
ফাহিম কিছু একটা ভেবে রেসট্রন থেকে একটা স্যুপ অর্ডার করে দিলো।
রিমির দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো। ভাগ্যিস ওহ ছিলো না হলে যে কি হতো মেয়েটার। ভাবতেই ফাহিমের শরীরে কাঁটা দিচ্ছে।
” নিজ হাতে ড্রাইভ করে একটা আর্জেন্ট মিটিং এ যাচ্ছিলো ফাহিম। সময় কম থাকাতে শর্ট কার্ট নিয়েছিলো। না হলে মেইন রোড দিয়ে ই যেত। গাড়ির হেডলাইটের আলো তে চোখে পরে রিমির ব্যাগ টা। খানিকটা সন্দেহ হওয়াতে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পাশে ওড়না পরে থাকতে দেখে ফাহিমের বিচক্ষণ মস্তিষ্কে কিছু আচ করতে পারে।
আশে পাশে খসখস আওয়াজ হচ্ছিলো। ফাহিম গাড়ি থেকে হকি স্টিক নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করে। দুটো জানোয়ার কে শার্ট খুলতে দেখেই ফাহিম বুঝে যায় কি হতে চলেছে।
ফাহিম দেখতে পায় রিমি নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। ফাহিম বুঝতে পারে হয়তো মেয়ে টাকে অজ্ঞান করা হয়েছে। হকি স্টিক দিয়ে দুটো কে মারতে থাকে। নেশা অবস্থা তে থাকায় প্রতিঘাত করতে পারে না। লোক দুটো মাটি তে লুটিয়ে পরতেই ফাহিম রিমি কে কোলে তুলে নেয়। আর তারপর সোজা হসপিটালে নিয়ে আসে।”
দশ মিনিটের মাথায় চোখ পিট পিট করে তাকায় রিমি। কোনো মতে উঠে সামনে তাকাতেই শিউরে উঠে। খানিক টা তুতলিয়েই বলে
_ কে কে আপনি ?
_ রিলাক্স। ভয় পাবেন না আমি কোনো বাজে লোক নই।
রিমি নাক কুঁচকে তাকায়। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা হসপিটাল। মাথা টা কেমন করছে , রিমি মাথা চেপে ধরে। ফাহিম রিমির বাহু তে হাত রেখে বলল
_ রিলাক্স। কাম ডাউন , মাথায় প্রেসার নিবেন না।
রিমি ঝটকা মেরে ফাহিমের হাত সরিয়ে নেয়। ফাহিম প্রথমে বুঝতে না পারলে পরে বূঝতে পেরে বলে
_ সরি।
রিমি কোনো প্রতিউত্তর দেয় না। ফাহিম হতাশ চোখে তাকায়। মেয়েটার চোখে মুখে এখনো ভয়ের ছাপ । ফাহিম একটা নার্স কে ডেকে রিমির চুল বেঁধে দিতে বলে। তারপর রিমি কে ফ্রেস করিয়ে দেয়। রিমি বেডে বসে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। ফাহিম কিছু প্রশ্ন করবে না কি তা নিয়ে দ্বিধায় পরে যায়।
কিছু ক্ষন পর রিমিই বলল
_ আমি এখানে ?
_ আমি ই নিয়ে এসেছি। আপনি সেন্সলেস হয়ে ছিলেন।
রিমির সব মনে পরে যায়। আঁতকে উঠে ওহ , চোখ মুখ গলাতে হাত বুলাতে থাকে। রিমির এমন অবস্থা দেখে ভরকে যায় ফাহিম। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। ফাহিম কাছে আসতেই রিমি দূরে সরে যায়। ডুকরে কেঁদে উঠে। ফাহিম ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কাঁদছেন কেন ?
রিমি হিচকি তুলতে তুলতে নিজেকে আড়াল করতে থাকে। ফাহিম আচ করতে পারে রিমি কি ভাবছে।
ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমির পাশে এসে বসে। রিমি হাঁটু তে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। ফাহিম ধীর কন্ঠে বলল
_ শান্ত হোন। আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছু ই হয় নি। আপনি পুরোপুরি সেইফ আছেন।
রিমি অবিশ্বাসের চোখে তাকায়। ফাহিম মৃদু হাসি ফুটিয়ে রিমি কে সব বলে। রিমির দু চোখ ছলছল করে উঠে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। রিমির অস্বস্তি বুঝতে পেরে ফাহিম ক্ষীন হাসে। স্যুপ এর বাটি এগিয়ে দেয় রিমির দিকে। রিমি নাকোচ করলে ফাহিম রাগি দৃষ্টি তে তাকায়। রিমি আর কিছু বলে না। লক্ষী মেয়ের মতো স্যুপ খেতে থাকে। ফাহিমের ফোন বেজে উঠে। ফাহিম সোফা তে বসে ফোন রিসিপ করে
_ হোয়াট হ্যাপেন মাই বয় ?
_ নাথিং সিরিয়াস আব্বু। বাট আম সরি আমি মিটিং টা এটেন্ট করতে পারি নি।
_ ইটস ওকে। বাট তোমার ডাক্তার আঙ্কেল কি বললো তুমি নাকি
_ আমি বাসায় ফিরে সব বলছি আব্বু। আপাতত মেয়েটাকে বাসায় পৌছে দিতে হবে। এখন রাখি কেমন ?
_ ওকে ওকে রিলাক্স। তোমার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানিয়ে ও।
_ ওকে।
ফাহিম ফোন টা রেখে রিমির কাছে যায়। রিমি অর্ধেক টা খেয়ে আর খেতে পারছে না। ফাহিম আশস্ত করে বলল
_ আর খেতে হবে না।
রিমি মাথা ঝাঁকায়। রিমি এখনো খানিক টা উইক। রিমি নিচু শব্দে জিঙেস করলো।
_ বাজে কয়টা ?
_ 9’00।
_ হোয়াট। আমার ব্যাগ ?
_ সমস্যা নেই আমার কারে আছে।
রিমি মাথা ঝাঁকায়। গাড়ি তে উঠে ফোন বের করে দেখে দশ টা মিস কল। আবার কল বেজে উঠে।
রিমি দ্রুত রিসিপ করে
_ কি রে ফোন ধরিস না কেন ? আধ ঘন্টা ধরে ফোন করে যাচ্ছি ?
_ সরি আম্মু । মাত্র ই দেখলাম আমি , আসলে নোট লিখছিলাম তাই ফোন সাইলেন করা ছিলো।
_ আচ্ছা গাড়ি ও তো নিয়ে যাস নি। গাড়ি পাঠাই ?
_ না নাহহ গাড়ি পাঠাতে হবে না । আমি আসছি , আমার ফ্রেন্ড এর রিলেটিভ ঐ রাস্তা দিয়ে যাবে তাই বলেছে আমাকে ড্রপ করে দিবে।
_ আচ্ছা ঠিক আছে।
রিমি ফোন রেখে ফোঁস করে দম ফেললো। ফাহিম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রিমি সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। ফাহিম সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল
_ আপনি আপনার ফ্রেন্ড এর বাসায় ছিলেন?
রিমি মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। ফাহিমের কেন জানি বিশ্বাস হলো না। তবু ও কোনো প্রশ্ন করলো না। গাড়ি ঘুরিয়ে রিমির বাসার লোকেশন জেনে নিলো।
*
বাগানে বসে আছে ফারাবি। ফারহানের করুনা তে আজ ওকে বন্দী শিবিরে বাস করতে হচ্ছে না।
সকাল সকাল ই ওনি চলে গেছেন অফিসে। অবশ্য বলেছে দুপুরে কোথাও একটা নিয়ে যাবে। এখন বাজে সাড়ে এগারোটা। নিশ্চয়ই এক দেড় ঘন্টার মধ্যে ফারহান এসে পরবে।
ফারাবি এই কয়েক দিন ইউটিউব দেখে রোজ পায়েস বানানোর চেষ্টা করেছে। আজ আবার চেষ্টা করবে। ফারাবি ফুরফুরে মেজাজে কিচেনে চলে আসলো। অবশ্য ফারহানের এক অভ্যাস ভালো কিচেনে সমস্ত জিনিস ই রাখা থাকে। এই যে হরেক রকমের বাদাম ও আছে। কয়েকটা পেস্তা বাদাম নিয়ে মুখে পুরে দিলো।
আহহ কি স্বাদ। ফারাবি অতি যন্তে নাইফ দিয়ে পাতলা পাতলা করে বাদামের স্লাইস করলো।
তারপর সেগুলো কুঁচি করে কেঁটে নিলো। পায়েস হয়ে এলে এগুলো ছড়িয়ে দিবে।
তাহলে পায়েস মুখে দিলে অদ্ভুত এক টেস্ট আসে।
ফারাবি বেশ কাঠ খড় পুরিয়ে পায়েস রেডি করলো। পায়েস গার্নিস করবে তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারাবি দ্রুত বাদাম গুলো ছড়িয়ে দিয়ে পায়েস টা ফ্রিজে রেখে দিলো।
ফারহান ঠান্ডা পায়েস খেতে পছন্দ করে। দরজা খুলে দিতেই ফারহান গটগট করে ঘরে ঢুকে পরলো।
ফারাবি বোকার মতো তাকিয়ে থেকে ঠাস করে দরজা অফ করে দিলো। ফারহান শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। ফারাবি ভ্রু কুঁচকে রইলো। এসি তো অন ই আছে। নাকি এই মানুষটার শরীরেই বেশি গরম। আজব
ফারাবি কিচেনে চলে গেল। ফ্রিজের পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলো।
ফারহান ঢকঢক করে গিলে নিলো। ফারাবি এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
_ ফারাবি ।
_ হুহহ
_ মাথা টা একটু টিপে দে না বউ।
_ পারবো না।
_ লক্ষী বউ , মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে খুব ?
_ সত্যি?
_ হুমম
ফারাবি দ্রুত রুমে চলে গেল। ফারহান থমথমে মুখ করে রইলো। বেপার টা কি হলো ?
মেয়েটা কি বুঝতে পেরে গেল যে ওহ মিথ্যে বলছে ?
মিনিটের মধ্যে ফারাবি চলে আসলো। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফারাবি মলম টা নিয়ে ফারহানের মাথায় লাগিয়ে দিতে লাগলো।
_ কি বলি বলুন তো। আপনি কেন এমন করেন কে জানে। হঠাৎ মাথায় কেন যন্ত্রণা হচ্ছে ? নিশ্চয়ই মাথায় প্রেসার ক্রিয়েট করেছেন ?
উফফফ দেখি তো আরাম লাগছে এখন ?
ফারহান মাথা ঝাঁকালো। ফারাবি যত্ন নিয়ে ফারহানের মাথায় মালিশ করতে লাগলো। ফারহানের বেশ খারাপ লাগলো। মেয়েটা সত্যি ভেবে কতোটা টেনশন করছে ?
_ ফারাবি।
_ হুমম
_ একটা কথা বলবো ?
_ কি হয়েছে এভাবে কি খারাপ লাগছে ? আচ্ছা আপনি তাহলে কোলে মাথা রাখনু আমি মাথা টিপে দিচ্ছি।
ফারহান তাজ্জব বনে গেল । চিন্তাতে ফারাবির কপালে ভাঁজ পরে গেছে। ফারহান মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ আমার মাথা ব্যথা করছে না। আমি মিথ্যে বলেছি।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ফারহান মুখ টা পেঁচার মতো করতে লাগলো। ফারাবি ফোঁস করে দম ফেলে উঠে গেল। ফারহান খানিকটা অবাক ই হলো। এটা জানার পর ও ফারাবি স্বাভাবিক আচারন করছে ? নিশ্চয়ই রাগ করেছে। ফারাবির হাত টেনে ধরে বসিয়ে দিলো। ফারাবি ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ কি হয়েছে ?
_ রাগ করেছিস আমার সাথে ?
_ উহহুহ।
_ তহালে উঠে চলে যাচ্ছিস কেন ?
_ এমনি মাথা ব্যথা না থাকলে বসে থেকে কি করবো ?
_ বউ।
ফারাবি চমকালো। ফারহানের আদুরে গলায় বউ ডাক টা একদম বুকে এসে লাগে। ফারহান আলতো করে ফারাবির গালে চুমু দিয়ে দিলো। ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান মৃদু হেসে কানে হাত দিয়ে বলল
_ সরি।
ফারাবি খিল খিল করে হেসে উঠলো। ফারহান ঝটকা মেরে ফারাবি কে কাছে টেনে নিলো। ফারাবি মুচকি হেসে ফারহানের গালে চুমু দিয়ে দিলো। ফারহান বড় বড় চোখ করে তাকালো।লজ্জাতে মাথা নিচু করে নিলো ফারাবি। ফারহান মৃদু হেসে সাওয়ার নিতে চলে গেল।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_44
গাঢ় নীল রঙের গ্রাউন পরে আছে ফারাবি। সাথে মেচিং হিজাব। ফারাবি সাধারনত হিজাব পরে না। তবে ফারহান গ্রাউনের সাথে হিজাব এনেছে । ফারহানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারাবি। ফারহান হাতঘড়ি পরতে পরতে প্রশ্ন ছুঁড়লো
_ কি হয়েছে ? এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন ?
_ একটা কথা বলুন তো ? আমরা এতো সাজ গোঁজ করে কোথায় যাচ্ছি ?
_ প্রেম করতে।
_ কিইই।
_ কেন কোনো অসুবিধা আছে ?
_ না তা নেই তবে
_ তবে কি ?
_ নাহহ কিছু না চলুন।
ফারহান আর ফারাবি বের হয়ে গেল। ফারহান আলতো হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
_ কি হলো ?
_ কিছু না।
_ আজব। ছাড়ুন তো, হুটহাট গাঁয়ে পরা একদম ভালো লাগে না।
_ ভালো লাগে না ?
_ নাহহ।
ফারহান চোখ মুখ শক্ত করে হাঁটা লাগালো। ফারাবি দাঁতে দাঁত চেপে পিছু নিলো । আজব লোক , এই ভালো এই খারাপ। মন খারাপের ঢং ধরে আছে। গাড়ি চলছে , জানালার ভেতর দিয়ে সা সা করে বাতাস বইছে। ফারাবি লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিলো। বাহহ বেশ ভালোই লাগছে। ফারহানের হাত স্টিয়ারিং এ আর দৃষ্টি সামনের দিকে। ফারাবির কেমন যেন লাগছে। সাধারনত ফারহান ফারাবির সাথে লেগে থাকে। এখন একবার ও তাকাচ্ছে না। লোকটা কি সত্যি ই রাগ করলো ? ফারাবির কিঞ্চিত খারাপ লাগলো। আসলেই আজকাল একটু বেশিই মুড সুইং হচ্ছে। কোথায় যেন পড়েছিলো প্রেগনেন্ট অবস্থাতে মুড হুইং বেড়ে যায়। ফারহানের হাতে গুঁতো দিচ্ছে ফারাবি। ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি ?
_ আমি প্রেগনেন্ট।
_ হোয়াটটটট।
ধুম করে গাড়ি টা ব্রেগ কষায় ফারাবি মাথায় সামান্য ব্যথা পেল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_ আজব। নিজের অনাগত সন্তানের মায়ের প্রতি কেয়ার ই নেই দেখছি ?
_ তুই কি বললি এটা ? প্রেগনেন্ট হাউ ?
_ মানে । সবাই যেভাবে হয় আমি ও সেভাবেই হয়েছি।
ফারাবির মাথায় কিছু একটা খেলে গেল। চোখ দুটো রাগি লুক করে ফারহানের ব্লেজারের কলার চেপে ধরলো। ফারহান যেন ভরকে গেল।
ফারাবি দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ ঐঐ আপনার কি সন্দেহ আছে ? আপনি আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করছেন?
_ হোয়াট । আমি সেটা বলেছি তোকে ?
_ বলেন নি তো কি হয়েছে। আপনার চোখ মুখ তো সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।
_ ডাফার। তুই সিউর তুই যে প্রেগনেন্ট ?
_ কেন ?
_ আমরা বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি বারো দিন হলো। বারো দিনে কেউ প্রেগনেন্ট হয় ?
_ তা ও কথা। কিন্তু
_ কিন্তু কিহহ ? আচ্ছা বল তো কখন চেক করেছিস?
_ এই তো পাঁচ মিনিট আগে।
_ হোয়াট ? তোর মাথা ঠিক আছে ?
ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে নিলো। ফারহান ধীর হাতে ফারাবির হাত দুটো মুঠোয় এনে চুমু খেয়ে বলল
_ মজা করছিস আমার সাথে ?
_ উহুহহ ।
_ তাহলে প্রেগনেন্সি কিট পেলি কোথায় ? আমি তো এনে দেই নি।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে নিলো। ফারহান বিধ্বস্ত মুখ করে তাকিয়ে আছে। ফারাবি গালে হাত দিয়ে বলল
_ আমি তো প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে চেইক করি নি।
_ তাহলে ?
_ আমার প্রচন্ড মুড সুইং হচ্ছিলো। আর প্রেগনেন্ট হলে ও মানুষের মুড সুইং হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাহলে আমি কি প্রেগনেন্ট নই ?
ফারাবির কথা শুনে ফারহান থম মেরে রইলো। ফারাবি হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো ফারহান। ফারহানের অহেতুক হাসার কারন ফারাবির বোধগম্য হলো না। ছেলেটা কি বাবা হওয়ার শোকে পাগল হয়ে গেছে ? হায় হায় তাহলে তো ভবিষ্যত অন্ধকার । এর সন্তান রে ফারাবি খাওয়াবে কি ? ওহহ তো কিছু ই পারে না। ফারাবি ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। সর্বনাশ হয়ে গেল।
*
দুপুরে ঘুম ভেঙেছে রিমির। কাল রাতে ফাহিম ওকে বাসায় পৌছে দিয়েছে। রিমি শুকনো মুখেই ফাহিম কে বিদায় জানিয়েছে। বাসা তে আসতে বললে যদি সন্ধ্যার বিষয় টা জানা জানি হয়ে যায়। অবশ্য ফাহিম কোনো কিছু ই মনে করে নি। বরং মিষ্টি হেসে রিমি কে নিজের খেয়াল রাখতে বলেছে। রিমি কাল রাত দুইটা অব্দি ফাহাদ কে কল করে গেছে। কিন্তু ফাহাদের ফোন সুইচ অফ। রাগে দুঃখে ফোন টাকে ভেঙে ফেলেছে।সারা রাত কেঁদে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। দ্রুত সাওয়া নিয়ে আসলো রিমি। ওর এক্সট্রা ফোন ছিলো। সিঙ্গাপুর থেকে ফারহান নিয়ে এসেছিলো। ফোনে সিম কার্ড দিয়ে ফোন ওপেন করলো। তারপর ফাহাদ কে কল করলো। রিং হয়ে ফোন কেঁটে গেল। রিমি আবার ফোন লাগালো। এবার ফোন রিসিপ হলো।
_ হ্যালো ফাহাদ তুমি কাল আসলে না কেন ? আমি কতোক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম জানো ?
তুমি জানো কাল কতো বড় সর্বনাশ হতে চলেছিল। ভাগ্যিস একজন এসে বাঁচিয়ে নিলো আমায়।
না হলে আমি আর ভাবতে পারছি না।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলল রিমি। ফাহাদ শান্ত স্বরেই বলল
_ আমি হসপিটালে আছি।
_ হোয়াট । তুমি ঠিক আছো তো ? তোমার কি হয়েছে ? কোন হসপিটালে আছো বলো আমি এখনি আসছি।
_ রিলাক্স আমার কিছু হয় নি। আমাদের দুজন স্টাফ এক্সিডেন করেছে। আম স্যরি আমি আসতে পারি নি।
এখন রাখছি কেমন ?
_ আচ্ছা।
বলেই রিমি ফোন টা কেটে দিলো। খুব রাগ হচ্ছে ওর। মানছে যে ওহ টেনশনে আছে। তাই বলে রিমির খোঁজ টা ও নিলো না। রিমি যে বললো সর্বনাশ হয়ে যেত। একবার জিঙেস ওহ করলো না। ফোন টা আবার ছুঁড়ে মারলো। তবে এবার ফোনটার কিছুই হলো না। রিমি গটগট করে ছাঁদে উঠে গেল। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর।
*
একটা পার্টি সেন্টাররের কাছে এসে গাড়ি থামালো ফারহান। ফারাবি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। পার্টি সেন্টারে মানুষ কি প্রেম করতে আসে ?
উহুহহ মানুষ তো প্রেম করার জন্য নদীর ধারে যায়। কিংবা কোনো পার্কে যায়। অর্থাৎ তারা আলাদা সময় কাঁটায় । তাহলে ওনি কেন এখানে নিয়ে আসলেন ? ফারাবির ছোট্ট মস্তিষ্কে সেই কথাটা মেনে নিতে পারছে না।
ফারাবি কে নিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে ফারহান। একজন চেকার এসে ওদের দুজন কে যন্ত্র দিয়ে চেইক করে নিলো। বিশাল বড় পার্টি সেন্টার তাই হয়তো এই নিয়ম। ফারাবি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারহান পেছন ঘুরে ভ্রু নাচালো।
_ আপনি তো বলেছিলেন প্রেম করার জন্য যাচ্ছেন । এটা কোথায় ?
_ ঐ টা তো মজা করে বলেছিলাম। আমরা একটা পার্টি তে এসেছি। রিকোয়েস্ট ছিলো আমি যেন আমার ওয়াইফ কে ও নিয়ে আসি। আসলে আমাদের বিয়ের বিষয় টা অনেকেই জেনে গেছে। তাই আর বারন করতে পারি নি।
ফারাবি কাঁচুমাচু করতে লাগলো। এখানে তো তাহলে সব ই অপরিচিত মানুষ। এখন কি হবে ?
সবার মাঝে অস্বস্তি তে ফারাবি তো শেষ ই হয়ে যাবে। ফারহান আশস্ত করে বলল
_ আমি আছি তো ? এতো টেনশন করছিস কেন ?
এই যে হাত ধরেছি , এক পলকের জন্য ও আড়াল হতে দিবো না।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এখানে বড় বড় বিজনেস ম্যান রা থাকবেন। তারা ফারহানের সাথে কথা বলার সময় নিশ্চয়ই ফারাবি আঠার মতো লেগে থাকবে না ?
ফারাবি মৃদু হাসার চেষ্টা করে যেতে লাগলো। ভেতরে যেতেই ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস দেওয়া হলো। ফারহান ওয়েটারের কাছে প্রশ্ন করলো হালাল নাকি ? ওয়েটার কাঁচুমাচু করতে করতে সফট ড্রিঙ্কস এনে দিলো।
ফারাবির বেশ অস্বস্তি হতে লাগলো। কারন এখানে বেশির ভাগ ই পুরুষ মানুষ। কয়েক জন কাপল রয়েছে, তবে তারা অনেক বেশি স্মার্ট। ফারহান ফারাবির অস্বস্তি বুঝতে পারলো। দীর্ঘশ্বাস টেনে ফারাবি কে কাছে টেনে নিলো।
আসলে এখানে সব অতি স্মার্ট মেয়েদের আনা গোনা। যারা ওয়েস্টার্ন ড্রেসে ঘোরাঘুরি করে। ফারহানের সাথে সবাই কথা বলতে আসছে। ফারহান সবার সাথে ফারাবির পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
সবাই ফারহানের চয়েজের প্রশংসা করতে লাগলো। ফারহান মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানালো। ফারাবি বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে একটা মেয়ে ওয়াইন খাচ্ছে আর ওদের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। ফারাবি নিজেকে ঠিক ঠাক করে নিলো। মেয়েটার দৃষ্টি ফারহানের থেকে নড়ছেই না । ফারাবির ভীষন রাগ হলো। মেয়েটা ওয়াইনের গ্লাস রেখে দিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসলো। ফারহান তখন একজনের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। মেয়েটা ফারাবির কাছে এসে ফারাবি কে মাথা থেকে পা অব্দি অবলেকন করলো। ফারাবির বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো। মেয়েটা লম্বা করে হাসলো । ফারাবি অপ্রশস্ত হাসতে লাগলো।
ফারহান ফারাবির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। মেয়েটা কেমন হাঁসফাঁস করছে।
_ হেই ফারহান। তোমাকে তো আজকাল দেখাই যাচ্ছে না।
ফারহান ক্ষীন হেসে বলল
_ সুনায়না।
তারপর হেন্ডসেক করে নিলো।
_ বউ কে নিয়ে আছি যে দেখবে কি করে ?
সুনায়না মৃদু হাসলো। ফারহান সুনায়নার সাথে ফারাবির পরিচয় করিয়ে দিলো। সুনায়না হলো ফারহানের বিজনেস ইনভেস্টর্স এর মেয়ে। তবে দু বছর যাবত সুনায়না বিজনেস জয়েন করেছে । বয়সে ফারহানের সমবয়সীই।
সুনায়না ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
_ বিয়ে করলে জানালে ও না ? তবে এ তো দেখছি একদম ই পিচ্ছি মেয়ে পোষায় তো ?
সুনায়নার মুখে এমন বাজে কথা শুনে ফারাবির গা গুলিয়ে আসলো। এ কি ধরেনের কথা বার্তা । ফারহান এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরে বলল
_ এই পিচ্ছির ভালোবাসার গভীরতা এতো বেশি যে কোনো মেয়ে যদি নেকড অবস্থা তে ও দাঁড়িয়ে থাকে তা ও আমার দৃষ্টি তার দিকে যাবে না।
কথা টা শুনে সুনায়নার মুখ টা ছোট হয়ে গেল। ফারাবি হাঁসফাঁস করতে লাগলো। অস্বস্তি হচ্ছে খুব । তবে ফারহানের কথা বার্তা তে নয় সুনায়নার জন্য।
সুনায়না আর কিছু বলার সাহস পেল না। সামান্য হেসে স্থান ত্যাগ করলো।
ফারাবি প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির কপালে চুমু এঁকে দিলো।