স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৫৫+৫৬

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_55

নিস্তব্ধ পরিবেশ। রিসোর্ট এর পেছনের চিকন রাস্তা টায় কোনো জনমানব নেই। কিছু ক্ষণ পর পর কয়েকটা নিশাচর পাখি ডেকে চলেছে। ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাব থাকলে ও ফারাবির ভয় করছে না। সে ফারহানের গায়ের সাথে লেপ্টে হেটে চলেছে। ফারহানের এক হাত পকেটে গোঁজা । আর অন্য হাত তাঁর প্রেয়সীর বাহু তে।
নীরবতাই যেন হাজারো রকমের প্রেম নিবেদন করছে। দুজনেই একটু পর পর হাঁসছে। চাঁদ টা কে মেঘ আড়াল করতে পারে নি। মেঘ কে ছাপিয়ে চাঁদ নিজ ছন্দে মোহ ছড়াচ্ছে।
_ ভালো লাগছে তাই না ?

_ হুমমম অনেক ভালো লাগছে। আচ্ছা বলুন তো
সময় টা থমকে যাচ্ছে না কেন ? সময় টা আপনি থমকে দিতে পারেন না ?

ফারহান বিগলিত হাসলো। ফারাবির হাত টা মুঠো বন্দী করে বুকে ছোঁয়ালো । ফারহানের কান্ডে ফারাবি অবাক চোখে তাকালো । চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করতে পারলো না। সে শুধু দেখেই যাচ্ছে।
_ অনুভব কর ।

_ কি ?

_ হার্টবিট ।

_ হার্টবিট?

_ হুহহ

ফারাবি চোখ বন্ধ করলো। হাত দিয়ে ফারহানের হার্টবিট গুলো অনুভবের চেষ্টা করলো। কিছু ক্ষণ এভাবেই কেঁটে গেল।ফারহান ফিস ফিস করে বলল
_ তোর জন্য সময় থমকে দিতে ও রাজি। শুধু তুই চাস যদি । আমি নিজেকে হারাতে ও রাজি।

_ কিভাবে ?

ফারাবি কথাটা অবাক হয়েই বললো। এভাবে সত্যি ই সময় থমকে দেওয়া যায় ? আদৌ এ ও কি সম্ভব ?

_সময় থমকে দিতে হলে আমার এই হার্টবিট গুলো থামিয়ে দিতে হবে। তোর জন্য আমি সেটা করতে ও রাজি।

ফারাবির বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হলো। দু চোখ যেন থেমে গেল। অস্ফুটন স্বরে উচ্চারন করলো
_ ফারহান ।

ফারহান অধর কোনে হাসলো। ফারাবি কে হেচকা টান মেরে কাছে টেনে নিলো। বুকের সাথে মিশিয়ে পেছন ঘুরিয়ে নিলো। ফারাবির অনুভব শক্তি বলছে ফারহানের স্পর্শ গাঢ় হচ্ছে।
_ তোকে ভালোবেসে এক জনম কেন যদি শত জনম বিসর্জন দিতে হয় তো তা ও আমি রাজি।
তবু ও তোকে আমার চাই। খুব করে চাই। চাঁদ যেমন সত্য , সূর্য যেমন উত্তপ্ত । পৃথিবী যেমন বাসযোগ্য ঠিক তেমনি তুই শুধুই আমার । এটাকে ও আমি চিরন্তন সত্য করে দিতে চাই।

_ আপনি কি সব বলছেন।

_ পাগল পাগল লাগছে নিজেকে । এতো ভালোবাসার পর ও বুকের ভেতর যন্ত্রনা হয়।

_ যন্ত্রনা ! যন্ত্রণা কেন হয় ? কিসের যন্ত্রনা হয় ? আমি তো আপনার কাছে ই আছি। তাহলে ?

ফারহানের দীর্ঘশ্বাস নিস্তব্ধতার সুর তুলে যাচ্ছে। পাষান বুক টা ধক ধক করছে । ফারাবি কে উত্তর দিতে পারলো না । ফারাবির ছলছল নয়ন দেখে আলতো হাসলো। কানের কুর্নিশে ঠোঁট শুইয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।
সত্যি সময় টা থমকে যাক। হৃদস্পন্দন চলে যাক। তবু ও তাঁর প্রেয়সী তাঁর বুকেই থাক।

*

সকাল থেকেই নানান আয়োজন চলছে। পুরো রিসোর্ট জুড়ে চলছে সাধারন আয়োজন। পরিবারের সবাই কে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে ফারহান। নতুন বর বউ কেউ ই রেহাই পাচ্ছে না। সবাই কেই কাজ করতে হচ্ছে।
এই দিক থেকে ফাহিম কে অবশ্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। কারন সবার মতো ফাহিম আর রিমির সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। ফাহিম আর রিমি পাশা পাশি হেঁটে চলেছে । ফাহিমের বুকে প্রশান্তির ছায়া। হাজার হোক তার প্রেয়সী কে তো কাল বুকে আগলে রাখতে পেরেছিলো।
সারা রাত ফাহিম জেগে ছিলো। আর ফাহিমের বুকে মাথা রেখে শুইয়ে ছিলো রিমি।
ইচ্ছে টা অবশ্য ফাহিমের ই ছিলো। ফাহিম রিমি কে কথা দিয়েছে রিমির সাথে তার সম্পর্ক খুব ভালো বন্ধুর মতোই হবে।
রিমির মনে যদি কখনো ফাহিমের জন্য জায়গা হয় তাহলে ই নতুন সম্পর্কের সূচনা হবে। ফাহিম জানে না সে তাঁর কথা রাখতে পারবে কি না। তবে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
রিমি প্রতি উত্তরে শুধু হেসেছে। হাসি টা সাধারন হাসি ই ছিলো। কোনো কিছু প্রত্যাশা, তাচ্ছিল্য কিংবা কৃতঙ্গতা থেকে নয়।

ফাহিম বন্ধুত্বের সম্পর্কে সাথে একটা সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে। আর সেটা হলো রিমি কে বুকে নিয়ে ঘুমাবে। রিমি ইচ্ছা অনিচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে।
যেই ছেলেটার তাঁর জন্য এতো কিছু করছে তার জন্য এই টুকু তো করা যেতেই পারে ?

রিফাত আর মনিকার সম্পর্ক একটু ও ঠিক হয় নি। দুজনের প্রেমের শুরু যেমন ঝগড়া থেকে হয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই সম্পর্ক টা চলছে।
ফারহান এই বিষয়ে আর নাক গলায় নি। কারন এদের ভালোবাসা টা এমনি। দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা। রাগ ঝগড়ার সম্পর্ক। খানিক টা বাচ্চা বাচ্চা ভাব।

তবে সম্পর্কের এডাল্ট আর্কষন রাফাজ আর তনির মাঝে। দুজনের ভাব মূর্তি অতি সাধারন। না লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে আর না হৈ হৈ করছে।
দুজনের মাঝের বন্ডিং টা সেরা। একে অপরের যে কোনো সমস্যায় শান্ত ভাবে সমাধান করে যাচ্ছে।
যেন দুজন বহু দিনের সংসারী। এই সব কিছু দেখে চলেছেন রোমা চৌধুরী। ছেলে মেয়েদের সুখ দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
ফারাবির মায়ের স্পর্শ পেতেই এক গাল হাসলো। দুজনের চোখেই পানি চিক চিক করছে।
সুখ টা যেন হাতের কাছেই চলা ফেরা করছে।

” রিফাত ভাইয়া এটা কি করলে তুমি ? পুরো ভিজিয়ে দিলে আমায় ? মনিকা আপুর রাগ আমার উপর ঝারছো ? ”

রিফাত মুখ টা ছোট করে নিলো। পানি টা মনিকা কে মারতে চেয়েছিলো কিন্ত পানি গিয়ে পরলো রিমির গাঁয়ে।

ফারাবি বাগানের পাশেই ফুলের ঝুপড়ি সাজাচ্ছিলো। হাসতে হাসতে রিমির কাছে আসলো। রিফাত কে ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ বউ এর হাতে কাল বহুত প্যারা খাইছে রে। আর প্যারা দিছ না বেচারা রে। ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।

ফারাবির কথায় রিমি মুখ চেপে হাসলো। দুজনে প্রস্থান করতেই রিফাত ভ্রু কুঁচকালো । আসলেই তো এরা কি করে জানলো মনিকা যে কাল রাতে ও তাঁকে কিল ঘুষি মেরেছিলো।
ক্যামেরার কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের রুমের দিকে ছুট লাগালো।

*

বাগানের পুরোটাই ল্যাম্প সেট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বহুল পরিচিত হ্যারিকেন এর সেপের ল্যাম্ব সেট। মাঝে মাদুর পাতা হয়েছে। তার ই এক পাশে চলছে রান্নার কাজ। বড় রা যেহেতু সাজানোর ক্ষেত্রে হাত লাগায় নি তাই তাঁদের কাজ হচ্ছে রান্না করা।

বাগানের এই দিক টা বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। গ্রামীন পরিবেশের সৌখিনতা আনার জন্য ছনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। আর কিছু দূর পর পর মোমবাতি লাগানো হয়েছে। খুব সুন্দর মোহনীয় এক পরিবেশ।

ফারহান একটা কাঁচের বোতল হাতে দাঁড়ালো । কাঁচের বোতল টাকে মাইক্রোফোন এর মতো ব্যবহার করতে লাগলো।
ফারহানের কান্ডে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

ফারহান গলা ঝেরে বলল

” এটেনশন এভরিওয়ান। এখানে অদূর পর্যন্ত যাদের দেখা যাচ্ছে তাঁরা সবাই কাপল । যদি ও দুজন গুরুজন কে এখানে স্থান দেওয়া হয়েছে। ”

এই টুকু বলেই ফারহান হাসলো। সবাই মুখ চেপে হাসছে। আরিফ মুখে কুলুপ দিয়ে আছে। এদের সাথে লাগলেই এরা ওকে পঁচাবে। কিন্তু মনি নিজেকে সামলাতে পারলো না।
গড় গড় করে বলল
_ মানছি আমরা সম্পর্কে বড় তবে এখানে এক নির্লজ্জ মানুষ ওহ আছে। সবার ছোট হয়ে ও যে সবার আগে বিয়ে করে নিয়েছে। তাকে তো বুড়ো পাবলিক বলা হবে।

মনির কথার সাথে সবাই সায় জানালো। এমনকি ফারাবি ও সায় জানালো। অগত্যা ফারহান স্যালুট এর মতো করে বলল
_ আমার বউ যেখানে রাজি যেখানে আমি ধরি কি করে বাজি ?
যাও যাও আমরা ছোট হয়ে ও বুড়ো বুড়ি ই ভালো।

ফাহিম ব্যগ্র কন্ঠে বলল
_ আম কনফিউজড। সব দিক দিয়েই আমি ছোট আমাকে কেন বাতিলের খাতায় ফেললে ।
সবাই কে চার শো চল্লিশ ধারায় মামলা দেওয়া হলো।

_ ঠিক ঠিক ।

ফারাবি সম্মতি জানিয়ে ই ফাহিমের সাথে হাই ফাইফ করলো। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে হো হো করে হেসে উঠলো।

একে একে গান বাজনা চলতে থাকলো। ফাহিম আর রিমি কে কাপল ডান্স এ জয়েন করতে বলা হলো। রিমির অস্বস্তি দেখে ফাহিম নাকোচ করে দিলো। কেউ জোড় করলো না। রিমি ফাহিমের দিকে কৃতঙ্গতার চোখে তাকালো।

ফারহানের হাতে হাত রেখে ফারাবি ডান্স করতে লাগলো। দুজনের চাহনি এতো টাই গভীর যে একে অপরের থেকে চোখ ই সড়ছে না।
চাঁদ টা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে তাই মেঘ কে আলিঙ্গন করে নিজে কে আড়াল করে নিলো । ঝুম বৃষ্টি তে ছেয়ে গেল দুজনের সর্বাঙ্গ । তবু ও দুজন দুজনার থেকে চোখ সড়ালো না।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_56

ফারহানের ছবির দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে ফারাবি। বুকের ভেতর টা দহনে পুরে ঝলছে গেছে। এতো এতো কষ্ট কি করে সইবে ওহ ?
ওর কাছে ফারহান নেই আজ নয় মাস হতে চললো। জীবনের বিষাক্ততা ছেয়ে গেছে সর্বাঙ্গে। আচ্ছা এমন না হলে ও তো পারতো ?
ফারহান কেন তাঁর কাছে নেই ? এই এতো এতো ভালোবাসার পর কেন ছেড়ে চলে গেলো ? এই গুলো কি অভিনয় হতে পারে ?
বড্ড আপসোস হচ্ছে নিজের প্রতি। ফারহান যদি না তাঁর থেকে প্রতিশ্রুতি নিতো তাহলে কবেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতো। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়ে আজ দগ্ধে মরছে ওহ।

_ ফারাবি ।

রিমির ডাকে ঘুরে তাকালো মেয়েটা। চোখের অবস্থা নাজেহাল। অনড়গল কাঁদতে থাকলে যা হয় আর কি। চোখ দুটো কোটরে গেধে গেছে। শরীর শুকিয়ে কাঠ। চুলে ঝটলা পাকিয়েছে বেশ অনেক দিন। ঝটলা ছাড়ানোর ইচ্ছে হয় নি কখনো। চুলে শ্যাম্পু করা হয় নি বহু দিন হতে চললো। মুখের যত্ন নেওয়া হয় না মাসেক নয়। ফারাবি হাসার চেষ্টা করলো। তবে হাসি লুকিয়ে অসহায়ত্ব টাই ফুটে উঠলো। দীর্ঘশ্বাসে ছেয়ে গেল পুরো রুম। উঁচু পেট টায় হাত রেখে রিমি ধীর পায়ে এগিয়ে এলো।
_ একি হাল হয়েছে তোর ? একবার নিজের অবস্থা দেখেছিস ?

ফারাবি উত্তল দিলো না।

_ কিছু তো বল ?

_ তোর ভাই আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ? নয় নয় টা মাস কোনো খোঁজ নেই। আদৌ কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটা ও জানি না আমি।

_ ফারাবি

রিমির চিৎকারে ফারাবির কোনো হের ফের হলো না। তাচ্ছিল্যর স্বরে বলল
_ কেন সে আমাকে ফেলে চলে গেল ?

_ ভাইয়ার খোঁজ আমরা নিশ্চয়ই পাবো। তুই দেখিছ ভাইয়া কে খুব তাড়াতাড়ি আমরা ফিরে পাবো।

_ যে হারিয়ে যায় তাকে ফিরে পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজ থেকে হারায় তাঁকে কি খুঁজে পাওয়া যায় ?

রিফাতের কন্ঠে পেছন ফিরে তাকালো রিমি। ফারাবির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। রিফাত মায়া ভরা নয়নে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।

_ রিফাত ভাইয়া তুমি ভুল বুঝসো আমার ভাইয়া নিজ থেকে লুকায় নি। এর মাঝে নিশ্চয়ই কিছু আছে।

রিফাত কোনো জবাব দিলো না। ফারাবির পাশে এসে নিঃশব্দে বসলো। বোনের হাত টা মুঠো বন্দি করে বলল
_ বাসায় চল ফুপি এসেছে । পিচ্ছি দুটো বার বার তোকে দেখতে চাইছে ।

_ ওদের এখানে নিয়ে আসো।

_ না তুই বাসায় চল।

_ আমি যাবো না।

_ ফারাবি

রিফাতের ধমক গাঁয়ে মাখলো না। বেডে উল্টো করে রাখা ফ্রেম টা হাতে নিলো । আলতো হাতে ছুঁইয়ে দিলো ফারহানের হাস্য উজ্জল ছবি। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি। রিফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল । চোখ দুটো ছলছল করছে। আর কত আর কত কষ্ট পাবে মেয়েটা ?
বুক চিরে আর্তনাদ আসছে। হৃদয় হাহা কার বেদনা গুলো বলতে চাইছে কেন ফারহান কেন এমন টা করলি তুই।
কেন আমার বোন কে ছেড়ে চলে গেলি।

*

_ ফাহিম একটু শুনবে ?

_ আরে তুমি কেন নিচে এসেছো । এই অবস্থায় কেউ এতো দূর আসে ?

_ ফাহিম প্লিজ। আমি ঘরে বসে থাকতে থাকতে পঙ্গু হয়ে যাবো। তুমি এমন কেন করছো বলো তো ?

ফাহিম উত্তর দিলো না। রিমির হাত টা ধরে সোফায় বসালো । ছয় দিন ধরে রিমি কে নিয়ে রিমিদের বাসায় থাকছে। যদি ও ফাহিমের ইচ্ছে ছিলো না।
পা টা ধরতে যেতেই রিমি বাঁধা দিলো ।

_ উফ রিমি প্লিজ। দেখো আমি তোমার জন্য কিছু করছি না। আমার বেবি তোমার পেটের মধ্যে না থাকলে একদম ই যত্ন করতাম না তোমার । কিন্তু হায় আমার রাজ কুমারী টা তোমার পেটের মধ্যে ই লুকিয়ে আছে।

রিমি নিশব্দে হাসলো। ছেলেটা পুরো পাগল। এই নয় মাসে কি না করেছে।এতো এতো কেয়ার রিমি ভাবতেই পারছে না আর। বুকের ভেতর ঠান্ডা শিরশির বাতাস অনুভব হলো। ভাগ্যিস মানুষটা তাঁর জীবনে এসেছিলো।

_ এতো ভালোবাসো কেন ফাহিম ?

_ ভালোবাসার কোনো কারন হয় না রিমি।

_ আমি তো তোমাকে পুরোপুরি ভালোবাসা দিতে পারি নি ।

ফাহিম হাসলো। রিমির ফুলে যাওয়া পায়ে চুমু খেয়ে পাশে এসে বসলো। খানিকটা ঝুঁকে রিমির পেটের কাছে কান রেখে বলল
_ বেবি শুনতে পাচ্ছো তুমি ? তোমার মাম্মা নাকি আমাকে পুরোপুরি ভালোবাসতে পারে নি। আচ্ছা বলো এই কথার কোনো মানে হয় ?

_ আমি সিরিয়াস ফাহিম।

_ আমি ও সিরিয়াস । তুমি আমার ভালোবাসা । তোমার থেকে আমার একটু খানি ভালোবাসাই যথেষ্ট । এই যে তুমি আমাকে আমার বেবি কে গিফ্ট করছো এটা কম কিসের ?
আমি জানি তুমি তোমার অতীত কে এখনো কেয়ার করো।
বিশ্বাস করো আমি তাঁতে একটু ও ব্যথিত নই।

হুমরি খেয়ে ফাহিমের বুকে এসে পরলো রিমি। ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো ।কান্না জড়িত কন্ঠে বলল
_ এতো ভালোবেসো না প্লিজ। আমার খুব ভয় হয়। অতি ভালোবাসা কেন হারিয়ে যায় বলো তো ? আমি ফারাবির মতো শক্ত নই। আমি তোমাকে হারালে এক মুহূর্ত বাঁচতে পারবো না ফাহিম ।
ভাইয়া কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেল ?

রিমির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফাহিম বলল
_ মন খারাপ করো না রিমি। আমি জানি না ফারহান ভাইয়া কেন চলে গেল এভাবে। এতো ভালোবাসার পর কেন ঐ চিঠি টাই জীবন কে শেষ করে দিলো।
এই ভালোবাসা গুলো সব মিথ্যে , আমি তা মানতে পারছি না রিমি।

রিমি উত্তর দিতে পারলো না। কিচেন থেকে রোমা চৌধুরীর কন্ঠ ভেসে আসলো। রিমি চোখ মুছে নিয়ে বলল
_ স্যুপ টা একটু এনে দাও না প্লিজ। ফারাবি সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে তুলে নি।

ফাহিম সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। ফারহানের বিষয় টা সবার মন কে বিষিয়ে দিয়েছে। এ বাজে অনুভূতি তে ও একটা সুখের খবর রিমির বেবি। সবাই যখন ভেঙে চুরে একাকার তখনি রিমির কনসিভ করার রিপোর্ট আসে।
সেই থেকে ফারহানের ব্যথা ভুলে সবাই নতুন অতিথির দিকে ঝুকেছে।
তবে কেউ ই ফারহানের কথা পুরোপুরি ভুলতে পারে নি। আর ফারাবি তো ফারহান কে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না।

নয় মাস আগে ফারহান একটা চিঠি রেখে গিয়েছিলো। যেটা সবাই কে একদম নুইয়ে দিয়েছিলো। কেউ বিশ্বাস করতে পারে নি। ফারাবি তো মাটি তে বসে হাউ মাউ করে কেঁদে ছিলো। আর তারপর থেকেই নিজেকে ফারহানের ঘরে রেখেছে বন্দির মতো। নয় নয় টি মাস চার দেয়ালের মাঝেই তাঁর বসবাস। এই নয় মাসে কখনো রুম থেকে বের হয় নি।
ফারহানের শার্ট , জিনিস পত্র সারাক্ষণ জড়িয়ে থাকে। আর রাত বাড়লে বেলকনিতে ছুটে চলে।
ওর বিশ্বাস ফারহান আসবে। আগের মতো পাঁচিল টপকে ব্যলকনি দিয়েই আসবে।
কিন্তু আসে নি । তবু ও ফারাবি হাল ছাড়ে নি ।

ভর সন্ধ্যা, এখনো ফারাবি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয় চাঁদ টাকে আজকাল দেখা হয় না।
দেখা হয় না চাঁদের আলো তে প্রিয় মানুষ টার সাথে সময় কাটানোর সেই দৃশ্য গুলো।
শুধু অন্ধকারে চেয়ে থাকে একজনের আশায়।

উড়নায় টান অনুভব করায় পেছন ফিরে তাকালো ফারাবি। ছোট ফুপির ছেলে টিনটিন কে দেখে একটু হাসলো । ছেলেটার বয়স বছর ছয়েক। তবে ফারাবি বলতেই অজ্ঞান। বড্ড সুন্দর পিচ্ছি টা। সুইট , কিউট সব রকম কমেন্টের জন্য একদম উপযুক্ত।

_ আপি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?

_ সোনা তুমি কখন এলে ?

_ এখনি।

_ আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য লজেন্স নিয়ে আসি।

টিনটিন মাথা ঝাঁকালো। ফারাবি নিশব্দে এসে কাবাড থেকে চকলেট বক্স টা খুললো । সর্বশেষ একটি মাত্র চকলেট ই বেঁচে আছে। ফারহানের দেওয়া লাস্ট গিফ্ট চকলেট এটা।
সেই সব স্মৃতি ভেবে ফারাবি আনমনেই হাসলো। মানুষ কাউকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ও চকলেট গিফ্ট করে তা জানা ছিলো না ওর।
বক্স টা রেখে চকলেট নিয়ে টিনটিন কে দিলো। টিনটিন ভারী খুশি। চকলেট মুখে দিতে গিয়ে ও দিলো না।
ফারাবি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকালো। টিনটিন চকলেট টা সমান ভাগে ভাগ করে ফারাবির দিকে এগিয়ে দিলো।
ফারাবির দু চোখ ভরে উঠলো। ফারহান ও এমন টাই করতো।
টিনটিন কে বুকে জড়িয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। ছোট্ট ছেলেটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
ফারাবির কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।
মাথায় হঠাৎ কারো স্পষ্ট পেয়ে ফারাবি পেছন ঘুরে তাকালো।
চোখ মুছে বলল
_ আম্মু তুমি এখানে ?

_ আর কতো কাঁদবি মা ? আমার কুলঙ্গার ছেলেটা তোকে এতো কষ্ট রেখে হারিয়ে গেল। জানি না কোন পাপ করেছিলাম। না হলে এমন কলঙ্ক

_ আম্মু ।

ছলছল নয়নের পানি টুকু আঁচল দিয়ে মুছলেন ওনি। ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_ এবার তো ওকে ভুলে যাহ ?

_ সম্ভব না আম্মু। আমি ওনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারবো না।

_ আর কতো দিন থাকবি এভাবে ?

ফারাবি ডুকরে কেঁদে উঠলো। রোমা চৌধুরীর পা জড়িয়ে বলল
_ আমাকে তাড়িয়ে দিও না আম্মু।
আমি শুধু ওনার ঘরটাতেই থাকতে চাই। না হলে আমি যে মরে যাবো। আমাকে তাড়িয়ে দিও না আম্মু।

আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদলেন ওনি। কি বলে সান্ত্বনা দিবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। ছেলেটা এমন কেন করলো ? নয় নয় টা মাস ধরে কোনো খোঁজ নেই। চিঠির কথা গুলো ও অস্পষ্ট।

**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here