#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -১৩
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
“- অনেক ক্ষন যাবদ দরজার বাহিরে কেউ কলিং বেলটা টিপেই যাচ্ছে।
কোন পাগল হয়তো।এভাবে কেউ কলিং বেল টিপে নাকি।মাথা ধরিয়ে দিয়েছে। মনে হয় জীবনে প্রথম দেখেছে।
অসজৎ কর লাগছে সেতুর,সে একা আজ ফ্ল্যাটে।তার সাথের সয়তান দুই জন গেছে রিদয়ের ইনফর্মেশন যোগার করতে।কারন রিদয়কে ফাঁসাতে এগুলো মহা মূল্যবান।আর যে কোন মূল্যেই রিদয়কে হাত ছারা করা চলবে না। ওর মত পুলিশ অফিসার পাশে থাকলে জীবনে আর কি চাই।
— ম্যাগাজিনের বইটা টেবিলে আছরে রেখে দরজা খুলার জন্যে চলছে।দেখি গিয়ে কোন মরা ঘাটের মাঝি এমন করছে।শান্তিতে থাকব বলে ৯ তলার উপরে ফ্ল্যাট নিলাম।তবে বলে না যদি থাকে নসিবে আপনি আপনি আসিবে।সেই কোন আপদ হয়তো এসেছে সাহাজ্য চাইতে বুধ হয়।
“-না সেতুর ধারনা ভুল। দরজার বাহিরে দাড়ানো মানুষটাকে সে চেনে।এর আগে একবার কথা হয়েছে। তিতিলের বাবা আমার এখান!!!
বাহ interesting….
আপনি!!
ভালোই হল এসেছেন, টাকার এমাউন্টটা বলুন চেক দিয়ে দিচ্ছি টাকাটা তুলে নিয়ে মেয়ে সহ শহর ছারুন।
— মা তোমার কাছে টাকা নিতে আসিনি,
” টাকা নিতে আসেন নি!! তাহলে কি চাইতে এসেছেন। চোখ গুলোয় রাগ ভরে তিতিলের বাবার সাথে কথা বলছে সেতু।
আচ্ছা বলুন তো আদৌকি আপনার মেয়েকে নিয়ে ঐ বাড়ি ছারার ইচ্ছা আপনার আছে??
“তিতিলের বাবা হাত জুর করে দাড়িয়েছে সেতুর সামনে।
মা তুমি আমার মেয়ের মতই, তাই তোমায় একটা সত্যি বলতে এসেছি।
— কি সত্যি বলতে এসেছে এই বুড়ো।কি জানে তিনি। না ফিরিয়ে দেয়া যাবেনা তাহলে বোকামি হবে, শুনা যাক কি বলে।হয়তো আমারও লাভ হতে পারে।
কি বলবেন! আসুন ভিতরে আসুন বসে কথা বলা যাক।
সেতু এত নম্রতার সাথে তিতিলের বাবাকে ভিতরে ডেকেছে যা নিজের বাবা হলেও করত না।
সার্থপরি মেয়ে নিজের ক্যারিয়ার গরতে সব করতে পারে।আগে যেমন রিদয়কে ব্যাবহার করেছে ওর সার্থ উদ্ধারে।ঠিক তেমন ভাবেই এখন তিতিলের বাবাকে ব্যাবহার করা যায় কিনা বাজিয়ে দেখা যাক।
— সোফার কানিতে কোন মত বসেছে তিতিলের বাবা।মনে আশা বেঁধেছে হয়তো সেতুকে সবটা বললে ওর মেয়ের জীবন সুখময় হবে।তবে সুখ কি কোন মানুষ দিতে পারে!!!
“-হ্যা বলুন কি বলতে চাইছেন।
—মা গো তুমি ঐ দিন আমার মেয়েটাকে কাজের মেয়ে বলেছো, আমায়ও যাতা বলেছো।তবে আমায় বলায় মোটেও কষ্ট পাইনি। কিন্তু আমার ঐ মেয়েটাকে যা বললে তা আমার গলায় কাঁটার মতই বিধে আছে।
“-বুঝলাম না।আপনার মেয়েকে এর চাইতে ভালো কিছু বলার ভাষা আমার না তখন ছিলো না এখন।
আর কি বলবেন সোজা করে বলুন।চাকরানিকে কি বলায় এত কষ্ট আপনার। আর হ্যা যা বলবেন সোজা সোজি,সময় নষ্ট আমার পছন্দ নয়।
— আসলে আমার মেয়ে ঐ বাড়ির কাজের মেয়ে নয়।
” এবার সেতু নড়ে চরে বসেছে।তিতিল কাজের মেয়ে নয়!তাহলে কি??
মানে””””?
— রিদয় আমার মেয়ের জামাই, তিতিল ঐ বাড়ির বৌ, কাজের মেয়ে নয়।
“সেতুর মাথায় আসমান ভাঙে পরেছে।কিহহ,রিদয় কি করে বিয়ে করতে পারে! না না অসম্ভম রিদয় নারী লোভি নয়।তাহলে??
কি সব বাজে বকছেন, রিদয় আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে?
পাগলের মত নাটক তৈরি করছেন না তো??
— না গো মা না, মিথ্যা হলে আমার মেয়ের মরা মুখ জেনো আল্লাহ আমায় দেখায় ।
আমি সত্যি বলছি তিতিলের স্বামীই রিদয়।বিশ্বাস না হয় রিদয়কে জিজ্ঞাসা করে দেখো।
” নাহ লোকটা মিথ্যা বলছে বলে মনে হয় না।তবে সেতুর মাথা স্থির রাখতে পারছে না।
রিদয় এত বড় ধোকা আমায় দিতে পারে না কিছুতেই না।
-“- তার পরেও নিজেকে শক্ত করে আবার তিতিলের বাবার সাথে কথা বলছে।
তা এসব আমায় জানানোর কারন???
– দেখো মা আমার মা মরা মেয়ে তিতিল সারা জীবনে একটু সুখ আমি দিতে পারিনি, বিয়ে দিয়েছিলাম টাকার লোভে। তবে ঐ স্বামীও বিয়ের রাতেই মারা গেছে।
তখন মেয়ের কষ্ট বুঝিনি না বুঝতে চেয়েছি
তবে রিদয় বাবাজী ফোরেস্তার হয়ে আমার মেয়ের জীবনে এসেছে।তাদের ঘর যাতে না ভাঙে আমি সেই অনুরুধ নিয়েই এসেছি।
“মানে কি।তিতিল বিবাহিত।আগে একটা বিয়ে হয়েছে। বিয়ের রাতে স্বামীও মারা গেছে।
আর সেই মেয়েকে রিদয় ঘরে তুলেছে। কাড়ায় কড়া মিলাতে হবে। এত ক্ষন কথা যাই হচ্ছিলো মানুবিক দিক দিয়ে।তবে এখন তিতিলের বাবার সাথে সেতু নয় বরং একজন রিপোর্টার কথা বলবে।সকল সত্য উদঘাটন করে জমা করতেই হবে।এখন রিদয়কে ফাঁসাতে আমার এমন কিছুই দরকার ছিলো। আর আমার ভাগ্য পায়ে হেটে আমার দরজায় এসেছে। আর আমার আন্দাজ যদি সত্যি হয়।তিতিলই হবে আমার মেন হাতিয়ার।হাতিয়ার টা এমন ভাবে নাচাবো যা হাতিয়ারই খুজ পাবেনা।
আমার কাছে কি চান??
– আমি তোমার আর রিদয়ের সম্পর্কে সব জানি,রিদয় আর তিতিল যাতে সুখে ঘর করতে পারে তাই তুমি রিদয় বাবাকে ছেরে দাও মা।তোমার আঁচল থেকে ওকে মুক্তি দাও।
” একদম ভালো করোনি রিদয়।একদম না।ফল তো তুমি একা নও এবার ঐ মেয়েটাও ভোগ করবে।আর সবকিছুর জন্যে দায়ি তুমি নিজেই।
–আপনি আমার বাবার বয়সি বললেন তো,তাই বাবার আদেশ মনে করে বোনের জীবনটা থেকে না হয় সরে এলাম।
আপনি চিন্তা করবেন না। রিদয় আজ থেকে মুক্ত।
আমি আগে জানলে,আগেই ওদের জীবন থেকে সরে আসতাম।
— তিতিলের বাবা কত খুশি বলার বাহিরে।
ভেবেছিলো অনেক আকুতি মিনতি করতে হবে।নাহ তেমন কিছুই করতে হয়নি।শিক্ষিতা মেয়ে একটু বলাতেই সব বুঝে গেছে।
দোয়া করি মা তুমি রিদয়ের চাইতে অনেক অনেক ভালো স্বামী পাও। শুধু আমার দোয়া কেন আমার মেয়েও তোমার চির কৃতজ্ঞ রবে।
“সব শেষ চাল চুলো হিন সংসার পাততে চাইছিলো সেতু।না বিয়ে ক্যান্সেল নয়, তবে রিদয় আর ঐ মেয়েটাকে এত সহজে ছারা জাবে না। ঐ মেয়েটার জন্যে রিদয়কে হারাতে হবে।ওর জন্যে রিদয়কে কষ্ট দিতে হবে।
— কত রকমের দোয়া তিতিলের বাবা সেতুকে দিলো।চোখের পানি মুছে এবার বিদায় রজনির পালা।
” শুনুন….
তিতিলের বাবার যাওয়া টা এবার আটকে দিয়েছে সেতু।মনে কষ্ট নয় বরং জেদ ভর্তি সেতুর।এখন ওর মাথা নষ্ট রক্ত কান্না করাতে হবে আর তার জন্যে বহু কিছু চাই।
কত মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সেতু তিতিলের বাবার হাতে হাতটা রেখেছে।
সত্যি তিতিলের সাথে বড় অবিচার করেছে বিধাতা।
তবে যদি কিছু মনে না করেন,তাহলে তিতিলের আগের স্বামীর নামটা বলবেন???
— হ্যা মা কেন নয়।ওর স্বামীর নাম আদনান ছিলো।
“আরেহহহ বাহ মেঘ না চাইতেই জল।এই আদনান নামটার সাথে সে পরিচিত। রিদয় ঐ আদনানকেই অন্ধকারে খুন করেছিলো নাতো, আর দুষ ঢাকতে ঐ আদনানের ঘারে বহু কিছু চাপা দিয়েছে।এবার খেলা জমে দই হয়ে উঠলো বলে।
” আরেকটা কথা, ওর স্বামী কি করে মারা গেছে একটু বলবেন?
সেতু আসলে সিউর হতে চাইছে আদনান টা ঐ আদনান কিনা।
— পুলিশের গুলাগুলিতে মারা পরেছিলো মা…
বাস আর কিছু জানার নেই।
তিতিলের বিয়ে ঐ আদনানের সাথে হয়েছিলো যে বাসর ঘরে বৌ রেখে তার জন্যে ফুল আনতে গিয়েছিলো।
রিদয় তাকে মেরে যখন জেনেছে তিতিল তার স্বামী হারা হয়েছে।তখন দয়া জেগেছিলো আর তার পর…
বাস সব পানির মত পরিস্কার।
রিদয় আর তিতিল তৈরি হয়ে নে নিজের সর্বনাশ দেখতে।সেতুর চোখে মায়া তো দেখেছিস এবার নির্দয়তা দেখ।
———
“- খাবার হাতে তিতিল রিদয়ের পাশে বসেছে।আরিফ রহমান রিদয়ের অগচোরে খেয়ে আনন্দে ঘুমাচ্ছে।
রোকেয়া বেগম জুই ফুল সবাই চলে গেছে।এত লোকের দরকার নেই। আর সুস্থ মানুষের পাশে তো একদমই নয়।
শুধু শুধু মানুষের মেলা লাগিয়ে লাভ কি।
“তিতিলের বাবার চিন্তা মাথায় নেই।কারন তার বাবা নাকি বাড়িতেই গেছে।হয়তো বাবার শরিলটা ভালোনা।জুই ফোন দিয়েছে রিদয়ের কাছে।
তিতিলের চিন্তা মনি মুখ দেখে রিদয় তার কারন জানতে চেয়েছিলো।
বাস এখন খুজ পাওয়া গেছে এতেই অনেক।
–নিন খেয়ে নিন!
” খাবারের প্যাকেটটা রিদয়ের দিকে বারিয়ে ধরেছে তিতিল। সকাল থেকে উনি কিছুই মুখে তুলেন নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পরবে।
– খিদে নেই তিতিল, তুমি খেয়ে নাও কিছুতো মনে হয় সারা দিন খাওনি।
“আমি খাইনি জানলেন কি করে?? প্রশ্নটা অবান্তর হলে তিতিল জিজ্ঞাসা করেছে।কারন রিদয়কে তার বাবার চিন্তা থেকে একটু মুক্ত করতে চায়।
-হালকা হাসি ফ্যাকসা মুখে রিদয়কে বড়ই বেমানান লাগছে
তবে হাসতে মন চাইলো তার।
” জতিস বিদ্যা জানিতো তাই।
— তিতিল এত কিছু ভাবলোনা প্যাকেটটা খুলে খাবারটা হাতে ধরে রিদয়ের মুখের সামনে ধরেছে,খেয়ে নিন।
প্রথম তার স্ত্রী তাকে নিজ হাতে খেতে বলছে,ব্যাপারটা কেমন??
ভালোই তবে এখন তা নিয়ে ভাবার সময় নয়।
রিদয় লক্ষী ছেলের মত তিতিলের হাত থেকে খাবার টা মুখে পুরে নিয়েছে।
আচ্ছা তিতিল বাবার এমন অবস্থা, তুমি আমায় এত পরে ফোন দিলে কেন???
“তিতিল ভ্যাবাচেকা খেলো এই রে।
– কি হল বলো।
” তিতিল মাথাটা নত করে রিদয়কে জানালো বাবার ফোনে রিদয় নামক কোন নাম্বার সেট করা নেই।বহু চেষ্টা চালিয়েছে নাম্বারটা জোগারে।
তার পর চিকু নাম্বারে কল দিলো সায়ন ভাই, বলেছে রিদয়ের ডাক নাম চিকু.. আর এই নামেই তার নাম্বারটা সেট করা ছিলো।
— হা হা করে অল্প শব্দ করা হাসি রিদয় হেসে দিলো।বহু দিন পর মায়ের ডাকা নামটা মনে করিয়ে দিলে তিতিল।মা আমায় চিকু ডাকতো, সেই ছোট্ট কালে।
আমার নাম্বার তোমার কাছে নেই।এক কাজ করো তোমার ফোন নাম্বারা টা দাও মিসড কল দিই…. কথা বলছে আর তিতিলের হাতের লোকমা মুখে নিতে নিতে পকেট থেকে ফোনটা বার করেছে।
“কই বলো…..
— তিতিল এদিক সেদিক তাকিয়ে মায়া ভরা চোখে রিদয়ের পানে তাকিয়েছে।
আসলে আমার তো ফোনই নেই,তো নাম্বার দিবো কোথা থেকে!!!
” আশ্চর্জ ফোন নেই ওর। আর আমি জানিই না। না জানি ওর আর কত কিছুই আমার অজানা, স্বামী হয়ে আজকে জানলাম স্ত্রী ফোন চালায় না।লজ্জার কথা।কেমন স্বামী আমি।
মুখে থাকা খাবার টা না চিবিয়ে গালে ভরে বাচ্চাদের মত বসে আছে।কিছু ভাবছে হয় তো।
– জলদি মুখেরটা শেষ করে হা করুন…….
তিতিলের শাসনি গলায় রিদয় আবার হা করে লোকমাটা নিয়েছে।কেন জানি আজ মনের অজান্তেই তিতিলের হাতে খেতে বড্ড ভালোই লাগছে।
তবে এই ভালো লাগাটা যে সবার তা কিন্তু নয়।
সেতু এসেছে হাসপাতালে।নাটকের প্রথম পার্ট হয়ে।
তবে এসে তেলে বেগুনে জ্বালানোর মত সিন সামনে দেখছে।
ওহহ তাহলে এত দূর বাহ খাইয়ে দেয়া হচ্ছে!!!!!!
সেতু নিজের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে এই মূহুর্ত্য টা ক্যামেরা বন্দি করল।
খেয়ে নাও রিদয় খেয়ে নাও।
এর পরের বার তোমায় তিতিল খাবার নয় বরং বিষ ঢালবে মুখে,
তখন এই ছবিটা আমায় বেশ আনন্দ দেবে। ভালোবাসা রক্ষা করতে গিয়ে ভালোবাসাই মারবে কিনা….. সেতুর ভালোবাসার মূল্য দাও নি, এবার তোমার মূল্য কোথায় থাকে দেখবো।
শুধু ঠিক সময়ের অপেক্ষা রিদয় & তিতিল।
একটু সময় দাও… তোমাদের প্রেম কাহিনি শুরু হবার আগেই The End….. .
#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -১৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
___________________________
“– আরিফ রহমানকে বাসায় আনা হয়েছে আজ সকালেই।আহা কি জত্ন বাবার। রিদয় তো বাবাকে চোখে হারাচ্ছে।আরিফ রহমান বুঝতে পারছে রিদয় কতটা তাকে ভালোবাসে। ছেলেকে এভাবে কষ্ট দেয়া হয়তো ঠিক হল না,তবে সারা জীবন যাতে সুখ হয় তার জন্য একটু আকটু কষ্ট তো করতেই হবে।
— সেতু হাসপাতালে আর দেখা করল না কারো সাথে।তার শরিলে তো আগুন লেগেছে।এই ঝলসানো শরিলে ঠান্ডা মাথায় কথা বলা সম্ভব না।তাই চুপ চাপ হার মেনে চলে আসাই ভালো। বড় কিছু জেতার জন্য ছোট ছোট হার মানার দরকার আছে।
ফ্ল্যাটে এসে সেতু তার রুমের সমস্ত্য কিছু ভেঙে চুরে তছ নছ করে দিয়েছে। পাগলের মত ফ্লোরে বসে চিৎকার করছে।ভালো করোনি রিদয় একদম না। আমায় ধোকা দিয়েছো তুমি,বিয়ে করে সংসারি হতে চাইছো, দিবো না একটুও দিবো না সুখে থাকতে।আমার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে বৌ কে বুকে নিয়ে ঘুমাতে দেব না, কখনোই না।তুমি আমার জেদ রিদয় জেদ আর আমি আমার জেদ পূরন করেই ছারব।
চিৎকার করে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছে সেতু।
“- রিদয় একবারও সেতুর কথা ভাবলো না। তার বাবাকে দেখতে এলো না বা ওর শরিল কেমন কোনটাই না।এমন সার্থপরী মেয়ের সাথে আমার কথা নেই।
রিদয় কথা বলুক বা যোগাজোগ রাখুক বা না, তবে বলে না অগ্নিশিখা জ্বেলে তো আর আরামে ঘুমানো যায় না। সেতু তো সেই অগ্নিশিখা তৈরি হয়ে রয়েছে। যা সব পুরিয়ে ছাই করতে পারে।
———–
“- মনে হয় না তোমায় ঐ ঘরে থাকা দরকার তুমি চাইলে এই ঘরেই ঘুমাতে পারো।
– আচমকা পিছন থেকে কারো আওয়াজে তিতিলের হাত থেকে পানির গ্লাস টা পরে গেছে।
অনেক ধকল গেছে।পেটে একটা দানাও পরেনি,তাই খিদেটা মেটাতে পানিতে চুমুক দিয়েছে সবে।
” ভয় পেলে!!
– না না।
কি বলেছি শুনেছো তিতিল।
” তিতিল পানির গ্লাসটা তুলে ফ্লোর পরিষ্কার করতে করতে জবাব দিলো, ঐ ঘরে আমার কোন সমস্যাই হয় না তাই আপনায় চিন্তা করতে হবে না।আপনি আরামে আপনার ঘরে ঘুমাতে পারেন। আমি ঘুমালে তো আপনি খাটে শোতে চান না।
রিদয় তিতিলের সাথে কথা বলতে গেলেও কথা বলতে চায়না তিতিল। তা তো বুঝে রিদয় তবে কথা না বললে কেমন করে হবে সংসার।
সব ভুলে নতুন করে শুরু করার চেষ্টায় আছি,আর তিতিল আগের সব মনে গেথে বসেছে।
কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে এমন উওর দিবে তার পর আর কথাই থাকে না।
নিরাশা জনক মুখ নিয়ে রিদয় তার রুমে চলে গেছে।
“আরিফ রহমান আরালে দাড়িয়ে সব দেখেছে। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।ছেলেটা যাই হক দুই কদম এগোচ্ছে তুইও এক কদম বারা তা না উল্টো পিছপা হয়ে রিদয়ের জন্যে আরো মুসকিল করছে। কখন না আবার মন পাল্টে নেয় রিদয়।প্রেমের সুতোয় বাধা পরলে আর রিদয় হাত ছারা হবে না।
আমিতো শশুর হই সব তো আর ছেলের বৌ কে বলতে পাড়িনা।তিতিল তো বোকা না।ও আমার কথার মানে কি আদৌ বুঝবে??
“-
_____ বাহ দুই দিনেই তো বেশ চাঙা হয়ে গেছিস দেখছি।
হবে না কেন ভাইয়া তিতিলের মত মেয়ে থাকলে আমার শরিল অসুস্থ হতেই দেবে না।
দুই ভাইয়ের কথোপকথন টা শুধু রিদয়কে শুনানোর জন্যে।এটাই বুঝাতে চাইছে – সেতু তো একবারও ওর বাবাকে দেখতেও এলো না।আর তিতিলের প্রশংসা করে তাকে তিতিলের দিকে বারাতে আগ্রহ জাগাচ্ছে।
“-আরিফ অগচোরে এবার তার ভাবির সাথে কথা বললো।ভাবি এই মেয়েটার মাথায় তুমি কোন কিছু ঢুকাতে পারো না।স্বামীকে কি করে আটকাতে হয় তা শিখিয়ে দাও না।
রোকেয়া বেগমও চিন্তায়।এই মেয়ে বোকা নাকি আধা পাগল।ইশারায় কত বুঝাই বুঝেই না।
এবার তো সরাসরিই কথা বলবো। প্রথম তো তিতিলকে রিদয়ের ঘরে থাকতে পাঠাতে হবে।
—–
“-তিতিলের মন এমনিতেই খারাপ সারা দিন। তবে আজ তো বেশিই খারাপ ওর বাবা যে চলে গেছে।
একা মানুষ সবাই বেশ জোর দিয়েছিলো এখানে থাকতে।তবে উনি থাকতে নারাজ।
মেয়ের বাড়িতে এত থাকতে নেই।তাই চলে গেছে।
তিতিলের চোখের পানি অঝরে ঝরেই চলছে। থামার নাম গন্ধই নেই।
আরিফ রহমান তিতিলকে নানান কথায় ভুলিয়ে শান্তনা দিতে চাইছে।তবে তিতিল তো বাচ্চা মেয়ে নয়।
এক বাবা গেছেতো কি আমিতো আছি।আমায় বাবা বলে মনে হয় না!!
“- আপনায় বাবা বলে ভাবি তাইতো ঐ বাবাকে ছেরে আপনার কাছে পরে রয়েছি বাবা।
– পরে থাকবি কেন রে মা,মাথায় থাকবি সবার।
—
সবাইকে খাবার দিয়ে তিতিল নিশ্চুপ ভাবে কাজ করছে। কি আছেই জীবনে যার কারনে হাসবো সুখে থাকবো।
” খাবারের সময়ই রিদয় হাজির।
সোজা তিতিলের কাছে দাড়িয়ে ওর সাথেই কথা বলছে।
—তুমি চাইলে কয়েকটা দিন তোমার বাবার কাছে থাকতে পারো।
“তিতিল না বরং সবাই মন খারাপ করে নিয়েছে।তিতিল চলে যাবে?যদি আর না ফেরে? আর রিদয়ই বা কোন আক্কেলে বৌ কে বাপের বাড়িতে পাঠাচ্ছে?
” আমি তর বাপ রিদয়, আর জীবিত আছি।কে কখন কোথায় যাবে বা আসবে তার ফয়সালা আমিই করব।তর মাথা ঘামাতে হবে না।তুই গিয়ে বরং চুর ডাকাত ধর।
—-রিদয়কে তো কেউ পুরো কথাটা বলতেই দিলো না।তিতিল একা জাবে কেন? দুই দিনের ছুটি পেয়েছে বহু কষ্টে জোগার করেছিলো, ভেবেছিলো ওকে নিয়ে একটু ঘুরে বেরাবে তা না…সব কিছুতেই ছাই পরে গেলো।
এমন বৌ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
“- বাড়িতে একটা কোনায় পরে রই তাও উনার সজৎ হয় না।উনি আমায় বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে মুক্ত হতে চাইছে না তো??
—
“তিতিল কে আজ কাল যখনই দেখছে তখনই সায়নের সাথে।কখনো লুডু কখনো দাবা কখনো আড্ডা।এত কিসের আলাপ ধুর।
রিদয় জিনিসটা ভালোভাবে নিলো না, কোথায় স্বামীর খুজ রাখবে তা নয়। দেবরকে নিয়ে পরে রয়।আমি যে একটা মানুষ চোখে ভাসে না ওর।
—-
“-কোন নক ছারাই তিতিলের রুমে ঢুকেছে রিদয়।লুডু খেলা রেখে সায়ন ছু হয়ে গেলো, ভাইয়ের মেজাজ দেখে নিজের মন খারাপ করার ইচ্ছা নেই।
“-কিছু বলবেন?
— জেচে যখন এসেছি তখন হয়তো কিছু বলবো।
কথাটা তিতিলকে একটু শক্ত স্বরেই শুনিয়েছে রিদয়। সবার সাথে এত হাসি খুশি শুধু আমি সামনে এলেই এই রকম মুখ হয় ওর!!
”
– পকেট থেকে একটা টার্চ স্কিন ফোন বার করল। তিতিলের দিকে ফোনটা বারিয়ে দিয়ে বললো এই নাও.. তোমার ফোন,
“কিন্তু আমার তো ফোন চাই না।
– আমি তো তোমায় জিজ্ঞাসা করিনি লাগবে কিনা
আমি এনেছি আমার দরকার আছে তাই।
সবার নাম্বার ফোনে রয়েছে।আর আমার ও, প্রয়োজন পরলে ফোন দিতে পারো।
তিতিল ফোনটা হাতে পেয়ে এপিঠ ও পিঠ দেখে নিলো। বাহ সুন্দর নতুন ফোন আমার জন্যে উনি আনল!!!সত্যি এটা আমার জন্যে???
– মসকরা সহিত রিদয় জবাব দিলো না না তোমার হতে যাবে কেন? এটা আমার থানার একটা লেডি কন্সন্ট্রেবলের জন্যে।তোমায় তো এটা দেখাতে এনেছি।
হা হা করে দুজনেই হেসে দিয়েছে তাও মনের অজান্তে।
কি হাসাতে পারে উনি।
“-দ্বিতিয় গিফ্ট বাহ এটা বেশ ঐ প্রথমটার চাইতে। ভেবেই মুখে চিতল হাসি।
জীবনের ফাস্ট মোবাইল।বাবার বাটন ফোনটা কত চালিয়েছি টার্চ এই প্রথম এটার অনেক কিছুই অজানা।।
—-আর হ্যা এটা শুধু দরকারের জন্য দেয়া, কোন ধরনের সোশাল মিডিয়ায় ঢুকার জন্যে নয়। আর যাকে তাকে ফোন নাম্বার দেবার প্রয়োজন নেই।
বাবা জুই ফুল আর আমার কাছেই জেনো থাকে।
এ কেমন কথা!! হাতে নাটাই দিয়ে যদি বলে ডানে নাচা বামে নাচা,তাহলে নাটাই হাতে রেখে লাভ কি।ফোন দিলো আর সাথে এক হাড়ি শর্ত সহ।এর চেয়ে ভালো নাই দিতো। এখন কি রং নাম্বারেও কল আসলে উনার রাগ দেখতে হবে।
” এবার একটা শপিং ব্যাগ তিতিলের বিছানায় রেখে রিদয় জেতে জেতে বলছে আমি চলে যাবার পর প্যাকেট টা দেখেনিও।
আমি তো জানিনা কবে. তাই অনেক গুলো প্যাকেট আনলাম বছর তো হয়েই যাবে।
-পাগলের মত বর বর করতে করতে চার লাফে তিতিলের চোখের সামনে থেকে চলে গেছে।
তিতিল কপাল ভাজ করে এখনও রিদয়ের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
মানুষটা সত্যি ভালো।এই ভালো মানুষ টা কে বিধাতা কেন এত বড় শাস্তি দিলো।ভালেবাসা থেকে বন্চিত করল!!
-ভাবনা ছেরে ফোনটা রেখে প্যাকেটা খুলেছে তিতিল। চোখ গুলো লজ্জায় বুজে নিয়েছে।
ছি!! আবার উনি এগুলো এনেছে????
আসলে উনি স্বামী হবার দায়িত্ব্য পালন করার চেষ্টা করছে।বিয়ের প্রথম গিফ্ট ছিলো এটা। দ্বিতিয় ফোন।আবার এই গুলো।উনার লজ্জা কম তা জানা গেলো।
এসব ছারা আর কিছুই মাথায় থাকেনা।
“- তিতিলের মন আজ বেশ ভালো লাগছে।রিদয়কি আমায় মেনে নেবে? নাকি ছেরে চলে যাবে। যদি যাবার হয় তাহলে কেন মায়ায় বাধছে আমায়।
তখন তো মায়ার বাধন কাটাতে আমার সারা জীবন পার হয়ে যাবে।
-রাতে ফোন টিপছে আর মিট মিট হাসি হাসছে।
কারো কাছে নাম্বার দেয়া যাবে না। অনলাইন হওয়া চলবে না।কত কিছু।এত ভাবে কেন আমায় নিয়ে?
তবে সায়ন কে শত বারন করা শর্তেও সে Facebook / whatsapp./imo..tik tok .সাইড গুলো open করেছে।
তিতিলের অগচোরেই রিদয়কে সহ সবাইকে ফ্রেন্ড রিকুও পাঠিয়ে দিয়েছে।
জুই/ফুল/ আরিফ রহমান সহ সবাই তিতিলকে দেখে অবাক।
“-এখন তিতিল ভাবনায় মরে এখনও বাড়ি আসেনি যদি এসে ফোনটা নিয়ে দেখে ফেলে এসব আছে ফোনে!!
আর না না ফোন চাইবে না।আর জানবেই কি করে।আমিতো উনাকে ফ্রেন্ড রিকু পাঠাবোই না , তাহলে ঝামেলাই হবে না।
তবে এদিকে যে এই অকর্মের ঢেকি সব করে দিয়েছে তা তো তিতিল জানেই না।
তবে এখনও চোখে পরেনি হয়তো। কারন থানায় তো আর চেয়ারে পা ঝুলানো কাজ করে না রিদয়। ফোন ঘাটার সময় হলে তো।
——- সারা রাত তো ফেসবুকিং করেছে তিতিল নতুন নতুন ফ্রেন্ড। সায়নের সাথে চ্যাটিং বাহ বেশ ভালোই লাগছে।মন ভালো করার ঔষধ মনে হয়।
পুরো দুনিয়া ঘরে বসে হাতের মুঠোয় মনে হচ্ছে।বেশ কয়েকটা জিনিস তিতিল বুঝতে না পারায় সায়নকে মেসেজ দিয়ে মাথা খেয়ে নিচ্ছে আর বেশ মজাও হচ্ছে।সায়ন বেচারা ভাবছে কোন খুশির ঠেলায় ভাবিকে এসবে জরালাম এখন আমায় জ্বালিয়ে মারবে।হায় রে কপাল।
-__________
“- আমার জন্যে এত কিছু করল বেচার জন্যে কিছু করা চাই।কালকেই উনার রুমটার ডেকোরেশনটা চেন্জ করে চমকে দেবো। তিতিলের ভাবনা শেষ কোথায় কি রাখবে।
” রুজ কার মতই রিদয় তার কাজে, আর তিতিল নিজের কাজ সেরে ফোন হাতে বসে পরেছে।
-”
— (রিদয় একটি বার আসবে আমার কাছে।এই শেষ বার আর ডাকবো না প্রমিস। তোমায় বড় দেখতে ইচ্ছা করছে,এভাবে আমায় ছেরে চলে গেলে,আর একটা খুজ নিলেনা, তোমার সেতু আছে কিনা)
“এমন আকুল করা ভয়েস মেসেজ পরে রিদয়ের রাগ মাটি।
তবে আর সম্ভব নয় সেতুকে সব বলতেই হবে।
তাই স্থির হয়েছে রিদয়। হ্যা আজ গিয়ে সেতুকে সব জানিয়েই দিবো।
সেতু নিজের কাজ করে বসে রয়েছে।জানি রিদয় তুমি আসবে এসো আজ এলে আর ফিরতে পারবে না এই সেতুর জাল ছিরে।
“-বাড়িতে বলে দিয়েছে ফিরতে রাত হবে।তাই কেউ জেনো চিন্তা না করে।
কারন সেতুর কাছে গিয়ে সব বলার পর ওকে সামাল দিতে গিয়ে যদি দেরি হয়!!!
আর তার বাবাকে কিছু বলতে বারন করেছে রিদয়।শুধু তিতিলকে ফোন দিয়ে বলেছে কাজে আটকা পরেছে।
“–
যা বলেছিলাম ঠিক ঠাক এনেছিস তো???
সেতুর রুম পার্টনার ব্যাগ থেকে কিছু বের করে সেতুর হাতে দিয়ে দিলো।
আনব না মানে??
এই দেখ একবার তুই যা বলেছিস ঠিক তাই এনেছি।
—এসো রিদয় এসো মুর দোয়ারে.
……..সেতুর বাকা হাসি সাথে তার সাথিদের সয়তানি হাসি। তারা কি প্লেন করেছে কে জানে।ঐ দিকে তিতিল তার স্বামীকে এক চমক দেবে বলে বসে রয়েছে।
” (চলবে)❤️
()চলবে()