স্বামী পর্ব ১১+১২

#স্বামী(সিজন-২)❤️
#পর্ব-১১
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
“– সেতুর ডান হাতটা ধরে বসে রয়েছে রিদয়।চোখে শুধু বিরহ.
সেতু একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে।সাথে আরো দুইজন তার সহ কর্মীরা থাকে। রুম পার্টনার হয়ে।

একটু আগেই এদের মধ্যেই একজন রিদয়কে ফোন দিয়ে জানায় সেতুর কথা।
সেতু বাথরুমে নিজেকে আটকে নিয়ে ধারালো কিছু দিয়ে তার বাম হাতটা কেটে নিয়েছে।
-অনেক ক্ষন সেতুর সারা না পেয়ে ফ্ল্যাটের দাড়োয়ানকে ডেকে দরজাটা ভাংঙতে হয়েছে।
বাথরুমে প্লাস্টিকের দরজা থাকায় হয়েছে নয়তো দরজা ভাংঙতে হাড্ডি মাংস এক করতে হত।

— বেশ খানিকটা রক্ত ঝরেছে।
ডাক্তার এনে এখানেই প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা দিয়ে সেলাইন লাগিয়ে ডাক্তার চলে গেছে।ভয়ের তেমন কিছুই হয়নি জেনে সস্থির শ্বাস সবার।
রিদয় এসে দেখে সেতুর হাতে সেলাইন লাগানো হচ্ছে।
বাইক কে সর্বোচ্চ স্পিডে চালিয়ে সেতুর কাছে এসেছে রিদয়।

” এত রাতে বাড়ির বাহিরে বের হবে ব্যাপারটা কাউকে বলে যাওয়া উচিত।চুপি চুপি শশুরের অগচোরে বাবাকে ডেকে সেতুর ব্যাপারটা জানিয়েছে রিদয়।
আরিফ রহমানও বেশ অবাক, পাগল নাকি মেয়েটা।
রিদয়কে বাধা তো দিলো না। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছে এত সহজে মেয়েটা রিদয়ের পিছু ছারবেনা।

— সেতুকে ঘুমানোর ইন্জেক্শন দেয়া হয়েছে।গভির ঘুমে সেতু আচ্ছন্ন। হাত টা ধরে এখন ও রিদয় বসে রয়েছে।আমার জন্যে আজ সেতুর এই অবস্থ্যা।
তখন আমার হাত উঠানো ঠিক হয়নি।সামান্য বিষয়টা নিয়া আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।
sry baby sry…. একবার তুমি সুস্থ হও সব ঠিক করে দেবো আমি।
রিদয় বেশ পস্তাচ্ছে।সেতুকে এমন করে সে হারাতে চায় না একদমই না।যা হবার হক সেতুকে মূত্যুর মুখে আর ঠেলা যাবে না।

সেতুর বাড়িতে ব্যাপারটা জানানো হল না।বেচারা রা এত দূর থেকে কিইবা করতে পারবে। অযথা চিন্তা করে নিজেরা ভুগবে।এখন যেহেতু তেমন সমস্যা নেই।সকালে সেতুই তাদের সাথে কথা বললে ভালো হবে।
“——

-রিদয় যেমন সারা রাত ঘুমাতে পারল না সেতুর চিন্তায় ঠিক তেমন বাড়িতেও দুটো মানুষ রিদয়ের চিন্তায় অস্থির।
ভাবছেন দুটো কে??
কে আবার রিদয়ের বিয়ে করা বৌ তিতিল।
তিতিল জানালাটা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে বারান্দায় রিদয়ের বাইকটা নেই। তখনই গেটের থেকে কাউকে বাইকে করে বেরিয়ে জেতে দেখলো।
আরেহ চুর নাকি বাইকটা নিয়ে পালাচ্ছে!!
না না চুর হলে শুধুই বাইক নিয়ে পালাতো নাকি।তাও আবার পুলিশের বাড়িতে। ভাবনা বাদ দিয়ে আগে দরজাটা খুলে দেখা যাক ব্যাপারটা কি।
” বারান্দায় আসতেই আরিফ রহমানের দিকে নজর পরল তিতিলের।
গালে হাত দিয়ে বারান্দায় বসে রয়েছে।এভাবে বিচলিত দেখতে পেয়ে তিতিল ছুটে এসেছে আরিফ রহমানের কাছে।

কি হয়েছে বাবা আপনি এভাবে এখানে বসে?আর কে গেলো বাইক নিয়ে।
আরিফ রহমান চুপ তিতিলের দিকে তাকালোও না অবদি।সে তার ধ্যানে মগ্ন।
কি হয়েছে বাবা???

“কি আর হবে তর কপাল পুরেছে। তর স্বামী চলে গেছে সেতুর কাছে।প্রেমীকা হয়ে দেখিয়ে দিলো ভালোবাসার মানুষ কি করে পেতে হয়।আর তুই বৌ হয়ে পারলিনা।
-তিতিলের মাথায় আসমান ভেঙে পরল মনে হয়।
বাবা কি সব বললো!!

” সেতুর ব্যাপারটা জানার পর তিতিল নিরাশ হয়ে বসেছে।
উদাসি হয়ে আরিফ রহমানকে জানালো ভালোই তো হয়েছে বাবা। উনি উনার ভালোবাসাটা তো পেলো। এমন হতে পারে তা তো জানতামই। উনি সুখি হলেই হয়।
“হ্যা সুখ বেশ সুখিই হবে।তবে তুই তর কি হবে??
-উপরের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে তিতিল উওর দিলো।ঐ যে উপরে যিনি বসে আছেন ঐ যে বিধাতা, উনিই পথ দেখাবেন। আর আমার ঠিকানা জানাবেন।কোথায় আমার শেষ টা।

-না তিতিলের এই আবেগি কথায় চিরা তো ভিজবে না। কি বা করবে আরিফ রহমান।
তিতিলের মন বুঝতে পারছে না তিনি।তিতিল কি সত্যি রিদয়কে চায়না!!যদি চায় তাহলে চেষ্টা না করে হাতিয়ার ছারল কেন? তাহলে কি তিতিল রিদয়কে এখনও ক্ষমা করেনি?

“-
—- সকাল হতেই সেতুর জ্ঞান ফিরে এসেছে।রিদয় কে পাশে পেয়ে ওর বুকে লুটিয়ে পরেছে।
রিদয় তুমি এসেছো।
” রিদয় সেতুকে শান্ত করিয়ে সামনা সামনি করিয়েছে।
কি পাগলামু করো সেতু তুমিনা আমায় কথা দিয়েছো এমন আর করবে না।
সরি রিদয় সরি।
দুজন দুজনকে বাহুডুরে আকরে ধরেছে।কিছু ক্ষনের জন্যে তো রিদয় ভুলেই গেছে সে বিবাহিত।সব ভুলে সেতুর সেবা জত্নে লেগে পরেছে।

-রিদয় তুমি আমায় এত ভালোবাসো!!
“তুমি বুঝোনা কতটা ভালোবাসি।
সেতু রিদয়ের বুকটায় মাথাটা রেখে রিদয় কে তার জালে আটকাতে চাইছে।
যদি তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো তাহলে চলো আজকেই আমরা বিয়ে করব।

” বিয়ের কথাটা শুনে রিদয় সেতুর থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিয়েছে।একটা মানুষ কয়টা বিয়ে করে।এটা কি করছিলাম আমি।সেতুর চিন্তায় সব ভুলে বসেছিলাম।

এসবের মাঝে হঠাৎ বিয়ে কোথা থেকে এলো সেতু।

-আমি কোন বাহানা বা অজুহাত চাইনা রিদয়।যদি আমায় ভালোবাসো আমায় হারাতে না চাও তাহলে আজকেই তোমার ঘরের ঘরিনি করে নাও।
” এ কোন দুবিধায় আটকেছে রিদয়।সেতুকে এখন সব বলে দেবার মত পরিস্থিতি নয়।
এক পাগলামু করেছে এখন বিয়ে নিয়ে।তিতিল ওর কি হবে? তিতিলকে দূঃখের সাগরে ভাসিয়ে আমি সেতুকে নিয়ে সুখের ঘর বাধতে পারব না, কিছুতেই না।

কি হল রিদয়!! তুমিকি আমায় চাও না??
রিদয় শুধু বোকার মতন রিদয়ের পানে তাকিয়ে রয়েছে। সেতুর কথার উওর কি দিবে।

“পাগলামু করো না সেতু।আগে তুমি সুস্থ হও তখন তোমার মা বাবা আমার বাবা সহ সবার পরিবারের সহিত ধুমধাম করে তোমায় ঘরে তুলবো।

-চাইনা তোমার মিথ্যা আশা।বিয়েটা আমার আর তোমার রিদয়।পরিবার নিয়ে পরে না হয় ধুমধাম করলে,এখন জাস্ট কোর্টে গিয়ে রেজিস্ট্রি টা করে ফেলি। বা কাজীকে বাড়িতে আনি।
” সেতু বুঝতে পারছো না তুমি।
-সব বুঝি রিদয়, কথাটা বলতে না বলতেই সেতুর বালিশের তলা থেকে আরেকটা ব্লেড বের করে ওর কাটা হাতেই চালিয়ে দেবার ধমকি দিচ্ছে সেতু।
তুমি আমায় বিয়ে করবে কিনা।

-সেতুর হাতে আবার ব্লেড দেখে রিদয় উতলা হয়ে উঠেছে। বহু কায়দা করে ওর হাত থেকে ব্লেডটা নিয়ে নিয়েছে।
পাগল হয়ে গেলে নাকি।ছোট বাচ্চাদের মত জেদ ধরছো কেন সেতু তুমি তো এমন নও।

“ঠিক বলেছো আমি এমন নই।তবে তুমি কেমন ছিলে আর এখন কেমন রিদয়? নিজের কাছে প্রশ্ন করো তো।
আমি তো পাগল তাই পাগলের মতই তোমায় ভালোবেসে আসছি।
আর সেই ভালোবাসাকে পরিপূর্ননা দিতে চাইছিলাম।তবে তুমি তা চাও না।
বিছানা থেকে উঠে রিদয়ের থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেছে।

যাকে চাইলাম সে যখন আমায় চায় না তখন এই জীবন রেখে লাভ কি।
এখন না হয় বাঁচিয়ে নিলো।তবে তুমি কত ক্ষন থাকবে আমায় ছায়া হয়ে। দেখবে তুমি চলে যাবার পর ঠিক কিছু একটা করে বসবো আমি।
“সেতু এসো এখানে বসোতো শান্ত হও আগে।
সেতু বেশ চিৎকার করে যাচ্ছে তার শরিলের জন্য এমনটা মোটেও ঠিক নয়।

রিদয় যতটা সেতুর দিকে এগুচ্ছে সেতু ততো পিছপা হচ্ছে।
” আগে বলো রিদয় বিয়ে করবে কি না??
– আহ সেতু আমার কথাটা তো শুনো
“না শুনবো না।বলো হ্যা কি না,

” এমন করতে করতে সেতু বারান্দায় এসে হাজির।
রিদয় বেশ বুঝে গেছে।সেতু বারান্দা থেকে লাফ দেয়া প্ররোচনা করছে হয়তো।দৌড় দিয়ে সেতুর হাত টা ধরে ওকে রুমে টেনে এনেছে।
কেন এমন করছ সেতু তুমি হিনা এই রিদয় যে বাঁচবে না।

-তাহলে আমায় হারাতে না চাইলে চলো না রিদয় আজকেই আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হই।
” রিদয় হাফ ছেরে সেতুর এলোমেলো চুল গুলো হাতে আঙুলের সাহাজ্যে ঠিক করে তার পরাজয় শিকার করছে।
পরেরটা পরে সেতুর জীবন আমি এভাবে শেষ হতে দিতে পারিনা।
“সবই বুঝলাম কিন্তু সাক্ষী চাই ৩ জন আরো অনেক ফরমালিটি রয়েছে।
কথাটা বলতে না বলতেই সেতুর রুম পার্টনার রা এসে হাজির।
কোন চিন্তা করবেন না হবু দুলাভাই।সব রেডি তিন জন কেন তিন শত কেন৷ সাক্ষি তো তিন হাজারে লাইন লাগিয়ে দিবো।
শুধু আপনার অপেক্ষা।

সেতুর রুম পার্টনারের কথায় এতটা অবাক হয়নি যতটা ওদের সাথে থাকা লোকটাকে দেখে হয়েছে।

টুপি পরা লম্বা দাড়ি, পান্জাবি, তার তাম ঝাম দেখে বোকাও বলে দেবে উনি কাজী,রিদয় আর সেতুর বিয়ে পরাতে এসেছে।
এত জলদি এত কিছু??

“-সেতু চোখ টিপ দিয়ে রিদয়কে আরো চমকে দিয়েছে।
আমি জানতাম রিদয় তুমি আমার আবদার ফিরাবেনা।তাই সব ব্যাবস্থা করে নিয়েছি ওদের দিয়ে।

এক ঝটকায় কিতে কি হয়ে যাচ্ছে রিদয়ের হজম হচ্ছে না।তিতিলের চিন্তায় সে মরিয়া।

” এবার রিদয়ের ঘাম বেয়ে ঝরছে নিচে।কি করবে এখন।
এর মধ্যে চিন্তা টা কাজী সাহেব আরো বারিয়ে দিলো।
সব রেডি বাস এখানে দুইজনে সই করে দিন।

রিদয়ের দিকে প্রথম সই করার জন্য কাগজ গুলো এগিয়ে দিয়েছে হতছারা কাজী।

রিদয় কলম ধরেও না ধরার মত একে একে সবার মুখ পানে তাকাচ্ছে।

সেতু রিদয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়েছে।সইটা করে দাও রিদয়।
কলম আর কাগজটার দূরত্বটা নেই কাগজে কলমটা ঠেকিয়ে দিয়েছে রিদয়। বিসমিল্লাহ বলে সাইন করার পালা।
#স্বামী(সিজন-২)❤️
#পর্ব ১২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_________________________

“- রিদয়ের হাত কাঁপছে, কাঁপনি আরো বারছে সেতুর রাগ মুখের দিকে তাকিয়ে।
কলমটা এখনও কাগজে ঠেকিয়ে রেখেছে সাইন করার নাম গন্ধ নেই।

– সাইন করেন বাবা,
এই নিয়ে তিন বার কাজী রিদয়কে সাইন করতে বলেছে।
কাজী বেশ অবাক।সব সময় দেখেছে মেয়েরা সময় নেয়।আর ছেলেদের বলার আগে কলম নিয়ে হাজির।
এখানে উল্টো হচ্ছে মেয়ে বিয়ের জন্য মরিয়া আর ছেলে লজ্জা পাচ্ছে নাকি /ভয়।নাকি অন্য কারন তা বুঝতে পারছে না। তবে সন্দেহ জনক তো কিছু আছে।

” রিদয় সই করো। তোমার একটা সইয়ে আজ আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উঠবো।
রিদয় শুধু মাথা নত করে ভাবছে।
কি চলছে তার মাথায়।সেতুর তর সইছে না, তাই কাজীর থেকে কাবিন নামাটা নিয়ে নিজেই আগে সই করে দিয়েছে।
দাও রিদয় এবার তুমি সইটা দাও।

— সেতু রিদয়ের হাত ধরে জোর খাটাচ্ছে রিদয় সইটা করে দাও।
সেতুর মনে চলছে বেশ খেলা। একবার সইটা করো চান্দু তার পর বুঝাবো সেতু কি জিনিস।
রিদয় কি ভাবছো সই করো।
” কথাটা সেতু শেষ করার আগেই কলম টা রিদয় ফেলে দিয়েছে।
নাহ!!

-কি না রিদয় তুমি কলমটা ফেলে দিলে কেন?
সেতুর চোখে হেরে যাওয়ার ভয়।না হেরে যাওয়া চলবে না, তাও কালকের আসা একটা মেয়ের জন্যে।

-রিদয় তুমি আজ যদি আমায় বিয়ে না করো তাহলে ফল ভালো হবে না।
“চোখের কোনায় রিদয়ের জল জমা হচ্ছে। না সেতু বিয়েটা হলে ফল ভালো হবে না। এই বিয়েটা হলে সব শেষ হয়ে যাবে।
— রিদয় রিদয় পাগলামু করো না।
” রিদয় সেতুর কথায় তেমন লক্ষ করল না।
বাবার নাম্বারে বার বার ফোন আসছে একবার কথা বলা যাক। সেতুর চক্করে বাড়ির খেয়ালই নেই।

এক সেকেন্ড সেতু, বাবার ফোন।
বাবার নাম শুনে সেতু চুপ।কথাই তো বলবে বলুক।
“রিদয় কিছুটা অবাক বাবার মোবাইল দিয়ে আমার সাথে কে কথা বলছে।
এটা মেয়ের গলা,জুই ফুল?? না ওদের তো ফোন আছে। আর এটা ওদের গলা নয়, তাহলে???

তিতিল!!!!

” কিছুই মাথায় ঢুকছে না,বাবার ফোন দিয়ে তিতিল আমায় কল দিলো কিন্তু কেন??

কে তিতিল?

– বা বাবা বাবা,
“রিদয়ের বুঝার ক্ষমতা নেই তিতিল বাবা বাবা জপার কারন।
হ্যা বাবা কি হয়েছে বলবে??

-আপনার বাবা হার্ট এর্টার করেছে, সায়ন ভাই আর আমি বাবাকে হাসপাতালে এনেছি। সবাই এসেছে আপনি ও প্লিজ জলদি আসুন। বাবার অবস্থ্যা ভালো না।

” রিদয়ের শ্বাস এবার বন্ধ হবার পালা। মাকে হারিয়ে বাবার হাতটা ধরে জীবনে এগুচ্ছিলো। আর আজ বাবাকে হারানোর ভয়টা করছে।না না এভাবে আমাদের একলা করে বাবা জেতে পারেন না।

সেতুর কথা ওর এখানের সমস্ত কিছু এরিয়ে রিদয় হন হন করে ছুটছে।
-এভাবে রিদয়ের চলে যাবার যথেষ্ট কারন হয়তো আছে।
তবে রিদয়কে এভাবে হাত ছারা করা যাবে না বহু কষ্টে এতটুক এনেছে।কত নাটক করতে হয়েছে তা তো আমিই জানি।
-রিদয় কি হয়েছে কে ফোন করেছে?আর কোথায় ছুটছো তুমি??
” হন্ত দন্ত গলার জবাব রিদয়ের , তিতিল ফোন দিয়েছে, বাবা আমার বাবার অবস্থ্যা ভালো না।আমার এখনই হাসপাতালে জেতে হবে।

– তিতিল নামটা শুনে নিভা আগুনটা আবার জ্বলে উঠেছে সেতুর মনে, তবে সেতু বুঝতে পারছে রাগে নয় রিদয় কে নরম স্বরে গলাতে হবে।
হ্যা অবশ্যই হাসপাতাল জেতে হবে।আমিও জাবো। সাইনটা করতে কত ক্ষন সাইন করে চল জলদি যাওয়া যাক।বাবাকেও সুখবরটা দেয়া যাক।

” ছি ছি সেতু এত নিচু মন তোমার।আমার বাবা মূত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুমি নিজের বিয়ে নিয়ে আছো।
ছি ছি এত নিচু আর মতলবি মেয়ে আমার স্ত্রী আর আমার বাবার পুত্র বধূ হতে পারে না।
তোমায় কতটা ভালো জানতাম আর তুমি? মানুষের মরা বাঁচারও পরোয়া করো না শুধু নিজের চিন্তাই করলে ছি। ইচ্ছা করছে তোমায় গলা টিপে মেরে দেই।
যে আমার বাবার জন্যে এক সেকেন্ট ভাবেনা তার জন্য আমার মনে জায়গা নেই।
সেতুকে থামিয়ে দিয়েছে রিদয়ের অসম্ভব রাগ।কোন শব্দ আর সেতু করল না।
ওর এত তেজ! আমি ও দেখবো মি. রিদয় তুমি কত দূর জেতে পারো। এত গুলো মানুষের সামনে আমায় অপমান করলে। এবার তো আসল রুপ দেখাতেই হবে।

_________

— ছুটে এসেছে তিতিল যে হাসপাতালের কথা বলেছে সেখানে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আইসিউতে সিফ্ট করতে হয়েছে।কেউ ভেতরে জেতে পারবে না।
ডাক্তারের কড়া আদেশ।

“-রিদয় এসে দেখে তিতিল /শশুর /বোন /জেঠু/ জেঠিমা সবাই উপস্থিত আর ছেলে হয়ে সেই সবার শেষে।কি মহাভারত কাজে ব্যাস্ত ছিলো ছেলে।

জুই ফুল ভাইকে দেখে ওর কাধে মাথা রাখার একটা ঠাই পেয়েছে।
ভাইয়া কোথায় ছিলে তুমি, বাবা তোমায় কত ডেকেছিলো জানো।

” চুপ কর তরা কিছু হবে না আমার বাবার। দেখবি এখনই ঠিক হয়ে যাবে।
দুই বোনকে শান্ত করে তিতিলের পাশে বসেছে রিদয়।তিতিলও কেঁদে একাকার, রিদয় ভালো করেই জানে তিতিল তার বাবাকে শ্রদ্ধা নয় বরং অনেক ভালোবাসে নিজের বাবার মতই দেখে।আর সেই আজ হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে ছুটে এসেছে,যা ছেলে হয়ে আমি পারিনি। তিতিলের বাবাও একটা কোনায় বসে রয়েছে চুপ চাপ কিতে কি হল। ভালো মানুষটা!!!

-কি হয়েছিলো তিতিল!!
“তিতিল ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁন্নায় কাতর। আহ তিতিল কেঁদো না বাবার কিচ্ছু হবে না বলো না কি হয়েছিলো।
রিদয় জানতে চাইছে ওর বাবার কি হয়েছে,কেমন করে এতটা সিরিয়াস কিছু ঘটে গেলো।

-আপনি চলে আসার পর থেকে বাবা বারান্দায় বসে ছিলো। কোন কথাই বলছিলো না।
শুধু চোখের পানিতে পান্জাবিটা ভেজাচ্ছিলো।
বহু বার বলেও বাবার কাঁন্না থামাতে পারিনি।
ফজরের নামাজ শেষে আবার বারান্দা বসে যান তিনি।

তবে তখন উনার শরিল টা তেমন ভালো ঠেকছিলো না । আমার কাছে এক গ্লাস পানি চাইলো আমি দৌড়ে পানি আনতে গেলাম,আর এসেই দেখি বাবা মাটিতে পরে রয়েছে। বুকে হাত দিয়ে কেমন করছিলো। শুধু রিদয় রিদয় বলে ডাকছিলো আপনায়।

“-কথাটা শেষ করেই তিতিল রিদয়ের কাঁধে মাথা রেখে কাঁন্নায় ভেঙে পরেছে।
রিদয় তিতিলের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইছে ওকে।হুসস চুপ কাঁন্না নয় বাবার কিছুই হবে না।
সবাইকে তো চুপ করাচ্ছে তবে তার বাবার এই অবস্থ্যা দেখে ওর ভিতরটায় কি হচ্ছে তা কি কেউ দেখেছে।
তার বাবা ওকে এত ডেকেও কাছে পেলো না। কেমন সন্তান হলাম বাবার এত কিছু হয়ে গেলো আর আমি!!!
আজ বাবার কিছু হলে নিজেকেই শেষ করে দেবো।কি লাভ এই জীবন রেখে। কারো কোন দরকারে যখন পাশেই থাকতে পারিনা।

তিতিল রিদয়ের কাধেই মাথাটা দিয়ে বসে রয়েছে। ডাক্তার এখনও আসছে না জানতে পারছিনা বাবার অবস্থ্যা।
বিনা অনুমতিতে ভিতরেও তো ঢুকা যাবে না।

সায়ন এসে রিদয়ের পাশে দাড়িয়ে শক্ত করে তার আরেকটা কাঁধে হাত রেখেছে।
চিন্তা করো না কাকুর কিছুই হবে না।

ভাবি তো বেশ ভয় পেয়েই গিয়েছিলো। উনার চিৎকারে সবাই ছুটে এসেছি আমরা। আমাদের ডেকেই যাচ্ছিলো ভাবি।
এসে দেখি কাকু…….

—নাহ আর শুনতে চায় না রিদয়। আহ চুপ কর তো।
তার বাবাই তার সব, বাবা তুমি ঠিক হয়ে যাও বাবা।তোমায় হারাতে চাইনা। মনে মনে বাবার জন্যে হাজার বার দোয়া প্রার্থনা করছে রিদয়।

-ডাক্তার বেরিয়ে এসেছে।মুখে হাসি নেই, বাবা ঠিক তো??
পেসেন্টের ছেলে বা মেয়ে কে আছেন এখানে??

ডাক্তার কথাটা বলা মাত্রই রিদয় ছুটে ডাক্তারের পাশে দাড়িয়েছে।চোখের পানিটা দুহাতে মুছে তার বাবার কথা জানতে চাইছে।
বাবা কেমন আছে??
-সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার জানালো এই যাত্রায় বাঁচলে পরে আর পারা যাবেনা।
অতিরিক্ত চিন্তায় এমন হয়েছে।আমার সাথে চলুন সব বলছি।
রিদয় ডাক্তারের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
সবার মুখে হাসি বাবা ঠিক আছে এতেই অনেক।

রিদয়ের মুখে কি সুন্দর হাসি।আহা – তার বাবা সুস্থ আছে। এত ক্ষন তার যে কেমন লাগছিলো সে নিজেই জানে।

— এখন বেশ ভালোই আরিফ রহমান। রিদয় এখনো ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
আইসিউ থেকে আরিফ রহমানকে বের করে নরমাল ওয়ার্ডে সিফ্ট করেছে।
আরিফ রহমানের পুরো পরিবার এবার শো শো করে এসে আরিফ রহমানকে ঘিরে দারিয়েছে।
তিতিল কাঁন্নায় এতটা কাতর যে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না।
বা বাবা আপনার কেমন লাগছে এখন!!
–তিতিলকে কাছে ডেকে আরিফ রহমান জানায় সে ভালো তিতিল জেনো না কাঁদে।

” সায়ন আর তিতিল রিদয়ের কাছে চলে গেছে।গিয়ে দেখা যাক ডাক্তার কি বলছে।

—-তিতিল আর সায়ন বাহিরে জেতেই আরিফ রহমান এক চমক দিলো।

“কি দিলাম ভাই দেখলে।
-বেড থেকে উঠে দাঁত কিল কিলিয়ে হেসে উঠে বসে তার ভাই ভাবির সাথে কথা বলছে আরিফ রহমান।

— (বুঝতে পারছেন না?
বুঝিয়ে বলি, আরিফ রহমান সব নাটক করছিলো,রিদয়কে সেই সেতুর থেকে ফিরিয়ে ঘর মুখি করতে।)

” চুপ কর হতছারা একবার তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলি পরে তর চোখ টিপ দেখে বুঝে গেছি। কারন কিছু একটা আছে।
— ভাইয়া রিদয়কে যে ফেরাতেই হত।এত সহজে সেতু ওর পিছু ছারবে না। আর না তিতিল রিদয়কে ফেরাবে।
” যাই বলো আরিফ তিতিলের অবস্থ্যা দেখেছো কেঁদে কেঁদে কি হাল করেছে নিজের।
জুই ফুলকে সব বলেছি তিতিলকেও সব বলা দরকার ছিলো।

রোকেয়া বেগমের কথা শুনে আরিফ আর শরিফ চোখ গরম করে নিয়েছে।তিতিলকে সব বলবে? এর চাইতে ভালো রিদয়কেই সব বলে দিই।
“না রোকেয়া তিতিলকে এই প্লেনে রাখা যাবেনা।
হয়তো সে রিদয়কে জানিয়েই দিবে।যে আপনাকে বাড়িতে আনার প্লেন সবার।

–তবে যাই বলিস জুই ফুল ভালো অভিনয় জানে।
” আরেহ দেখতে হবে তো মেয়েটা কার।আরিফ রহমানের কথায় সবার হাসি পেয়ে গেলো সত্যি তুই যা করলি।তর মেয়েরা তো তার চাইতে উপরে।রিদয়ের কাঁধে পরে কিনা কাঁন্না।

“- রোকেয়া বেগম দরজায় নজর দারি করছে আর কথা বলছে, ওরা না আবার এসে সব শুনে নেয়—
তবে তোমরা দুই ভাই যাই বলো ডাক্তার টা বেশ হেল্প করেছে।আইসিউতে কাউকে ঢুকতেই দেয়নি।তা নাহলে রিদয় সেখানে গেলে সব বুঝে জেতো।

— শরিফ রহমান এবার ভাব দেখানো গলায় জানালো বন্ধু বলে কথা, আমার বেশ ভালো বন্ধু ডাক্তার মিজান।

তা হে রে তরা এত ক্ষন ভিতরে কি করছিলি??

“- আরিফ রহমান আবার নিজের বেডে অসুস্থতার ভান ধরে শুয়ে তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছে।
কি করব বুর হচ্ছিলাম মিজান আর আমি মোবাইলে লুডু খেলে টাইম পাস করেছি আরকি।

না আর কথা বলা যাবে না। সায়ন তিতিল আর রিদয় আসছে।এরা জানলে মহা বিপদ।
সায়ন তার পেটে কথা রাখতে পারে না।জদি তিতিল বা রিদয়কে বলে দেয়।
তিতিলের বাবা সব জেনে গেলো শুরু থেকে সব মিলাতে শুরু করল।
কিছু একটা ভেবে কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে কোথায় জেনো চলে গেলো।

—বাবা!
বাবা ডেকে রিদয় আরিফের হাতটা ধরে বসেছে।বাবা আমায় একলা করে যাবার প্লেন বুঝি করছ।
ডাক্তার বললো তুমি নাকি বেশ চিন্তা করো যার ফলে এমনটা হয়েছে।আর পরে তো এর চাইতে ভয়াবহ কিছু হবে।
কাঁতর হয়ে বাবার পাশে রিদয় কথা বলছে।সবার মায়া তো হচ্ছে ছেলেটার মুখ দেখে, তবে একটু কষ্ট তো দিতেই হবে।

” ন্যাকা কাঁন্না করিস না তো।তর জন্যেই তর বাবার এই হাল।একদিকে বৌ অন্য দিকে সেতু তর বিবাহিত জীবনের চিন্তায় আজ তর বাবা মরতে বসেছে।
যদি পারিস এবার তর বাবাকে মুক্তি দে এই চিন্তা থেকে।

—আরেহ সবাই আছে তবে বাবা কোথায়? এত ক্ষনে তিতিল তার বাবার খুজ করছে।কোথায় গেলো বাবা???

_____
____★★
“—
হাতের ব্যান্ডেজ টা খুলে সেতু ঝুলন্ত চেয়ারে ঝুলছে।

-কিরে ব্যান্ডেজ খুললি কেন??
ডাক্তার কে কত গুলো টাকা দিয়ে এই মিথ্যা মিথ্যা ব্যান্ডেজ লাগিয়েছি জানিস!!
ব্লাড ব্যাংক থেকে কত টাকার রক্ত এনেছি জানিস!!
এখন যদি রিদয় এসে পরে????

——সেতু বাকা হয়ে তার রুম পার্টনারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।চিন্তা করিস না রিদয় এখন আসবে না।
তবে ওকে আসার জন্য বাদ্ধ্য তো করবই।
একটা নির্দুষকে মেরেছে সে।সব তথ্য আমি যোগার করেছি।ভালোবেসে না আনতে পারলে ওকে ব্ল্যাক মেইল করে আনব।
ধরা তো ওকে দিতেই হবে।আদনান কেসটা আবার ঘাটা দেয়ার সময় হয়েছে।
, এই নিয়ে দুই দুইবার আত্বহত্যার নাটক করেছে সেতু।ব্লাড ব্যাংকে রক্তের অভাব নাকি?

এত কিছুর পরেও রিদয়কে না পেলে সে সব শেষ করে দেবে”।

” চলবে”
[চলবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here