স্বামী পর্ব ১০

#স্বামী(সিজন-২)❤️
#পর্ব-১০
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
______________________________

“- সেতু যা নয় তাই বলে তিতিলের বাবাকে অপমান করছে।অপমান করার কারন টা হল জাতে তিতিলকে নিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় হয়।
তিতিল থাকলে সেতু বেশ দূশ্চিন্তায় থাকে,কেন একটা যুবতী মেয়েকে বাড়িতে রাখবে এটা সেতুর মাথা ব্যাথা।রিদয় তো শুনছেনা এবার মেয়েটার বাবাকে বলে দেখা যাক।

—কি বলছো মা আমার মেয়ে এখানে কাজ করবে কেন?
” থামুন তো। টাকার জন্যেই তো মেয়েকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
কত টাকা দিলে মেয়েকে নিয়ে বিদাই হবেন!!
–মা তুমি কিন্তু কিছু না জেনে বুঝে যা নয় তাই বকছো।
সেতু তো তিতিলের বাবার কোন কথাই শুনছে না। তবে তিতিলের বাবা নিজের কথাটা বলার চেষ্টা করেছে বার বার।
“তিতিল ইতি মধ্যে ছুটে এসেছে।
কি হয়েছে আপু,আমার বাবা কি কোন ভুল করেছে!!

-এই যে রূপবতী কন্যা এসেছে।বাবা কেন তুমি তো কম নও।এই যে আমার কার্ড,এই ঠিকানায় চলে এসো মন মত টাকা আর এর চাইতে ডবল বেতনের চাকরি পেয়ে যাবে।
যত সব ছোট লোকের কারবার এই বাড়িতে।
–তিতিলের হাতে কার্ড ধরিয়ে সেতু চলে এসেছে।তিতিল আর তার বাবা বোকার মতই দাড়িয়ে রয়েছে।
সেতু কি বললো সে নিয়ে চিন্তা কম,তবে বাবাকে কি বলবে সেই চিন্তায় তিতিল।
” তিতিল এই মেয়েটা কি বললো তুই শুনলি!!
দাড়া আমি জামাই বাবাকে বলছি,আমার মেয়েকে বাজে মেয়ে বললো কেমন করে?

— না না বাবা ওকে কিছু বলোনা, আসলে উনি হয়তো জানেনা আমি কে।তাই এসব বলেছে। আর বাহিরের কারো কথায় মন খারাপ করে লাভ কি বলো?
“তিতিলের বাবা কোন কথাই বললো না, তবে এর মানে এই নয় যে কিছু বুঝতে পারছে না। কিছু একটা তো আছে মেয়ে আরালে রাখার চেষ্টায় আছে।
ঐ মেয়েটা তো বাহিরের নয়, পরিবারের তেমন সদস্য না হলে এভাবে এত হক নিয়ে কথা বলে উঠতে পারত না।

–না আমায় জানতে হবে মেয়েটা কে।এবং আমার মেয়েটাকে এমন করে কথাই বা কেন বললো।রিদয় কে বলবে নাকি ওর বাবাকে তা বুঝে উঠতে পারছে না।
কার্ড তো আছে এই ঠিকানায় মেয়েটাকে পাওয়া গেলে আমার সব সমাধান হয়।
—তিতিল বুঝতে পারছে না ওর বাবা সবটা কিভাবে নিচ্ছে।যে ভাবেই নেক ঐ কথা আবার মনে করিয়ে লাভ নেই।
তিতিলের শাড়ির আঁচল টা ভিজে গেছে।বার বার বেয়ে পরা চোখের জল এই শাড়ির আঁচল টা দিয়েই মুছছে কিনা।
এমন করে আজ অবদি কেউ অপমান করেনি।
” তিতিল ব্যাপারটা রিদয় আর তার পরিবারের থেকে আরালে রাখতে চাইলেই কি রাখতে পারবে?পুলিশি নজর রিদয়ের। আর সেতুর ব্যাপারে সে সব জানে। সেতু তার শশুরের সাথে কি বিষয়ে কথা বলেছে এটা সোজা করে জিজ্ঞাসা করলেই সেতু সব সত্য বলবে।

—-মুছে নে মুছে জত পারিস মুছেনে।সবে তো শুরু, সেতুর দুষকি ও তো তার ভালোবাসাই রক্ষা করছে। তবে তুই বৌ হয়ে পারছিসনা কেন???
আরিফ রহমানের কথাটা তিতিল এরিয়ে জেতে চাইলো।উনার থেকে তো এরিয়ে গেলো। সবার থেকে লোকিয়ে রাখলেও নিজের থেকে তো আরাল করা যায় না।
তিতিলের বাবার মন টিকছেনা এই বাড়িতে,বাড়িতে একটা মেয়ে এলো আর এসে বাড়ির বৌ কেই চাকরানী আর যা নয় তাই বলেছে।ব্যাপারটা তিতিল সহ সবাই দেখেও না দেখার ভান জমাচ্ছে কিন্তু কেন??

তিতিল মানা করলেই কি রিদয়ের সাথে কথা তো বলতেই হয়।
”—–

—বালিশে মাথা গুজতে না গুজতেই জুই ফুল এসে তিতিলকে জরিয়ে ধরে দুই পাশ দিয়ে জরিয়ে ধরেছে।
আজ ভাবিমার কাছে ঘুমাবে এই আবদারে।
দুজনের মাঝখানে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের ঘুম পারাতে ব্যাস্ত তিতিল।তবে মনে চলছে যুদ্ধ এক বিশাল যুদ্ধ।তবে সেতুর সাথে যুদ্ধ করে লাভ কি জিত তো সেতুই হবে, কারন উনিতো সেতুকে ভালোবাসে।
—-

—–চরম রাগ আরাল করে রিদয় বাড়িতে ঢুকেছে।ঢুকেই নিজের শোবার ঘরে বৌ নয় বৌ এর বাপকে দেখতে পেলো।
এখানে তিতিলের আসার কথা ছিলো।যাই হক ও তো আসবেনা ওর বাবা কেন এত রাত অবদি এই ঘরে।
তিতিলের বাবাকে দেখে হালকা হাসি সহ তার পাশে বসেছে।
দুই হাতের আঙুল গুলো একে অপরে জরিয়ে রেখে বসেছে তিতিলের বাবা।মুখ গম্ভির, দেখে বুঝা যায় সিরিয়াস কিছুই হবে হয়তো।
“কিছু বলবেন বাবা!!
–দির্ঘ শ্বাস নিয়ে তিতিলের বাবা রিদয়ের দিকে ঘুরে বসেছে।
রিদয়ের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রিদয় কে বিনিত স্বরে জানাচ্ছে বিকেলের ঘটনাটা।
ঘটনা শুনে রিদয়ের মুখে কোন শব্দ নেই।কারন এই নিয়ে আজ সেতুর সাথে বহু কিছু ঘটেছে।

-জানি বাবা ব্যাপারটা আমি দেখছি চিন্তা করবেন না,আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। তিতিলের জন্য ভাববেন না জত দিন আমি আছি ওকে আগলেই রাখবো।
কে কি বললো এতে মন খরাপ করবেন না।
” রিদয়ের হাতটা ছেরে তাচ্ছিল্য হাসি তিতিলের বাবার মুখে,
–ঘুমাতে বলছো বাবা।
কি করে ঘুমাই আসার পর থেকে দেখছি তোমার আর তিতিলের কান্ড,কেউ তো কারো দিকে ফিরেও দেখোনা।তার উপরে তুমি এর ঘরে আর তিতিল এক ঘরে।
এমন কেন রিদয়!আমার মেয়েকি কোন দুষ করেছে?

-না না বাবা তেমন কিছুনা আসলে বহু রাত অবদি আমি লাইট অন রাখিতো তাই মাঝে মধ্যে তিতিল জুই ফুলকে নিয়ে ঘুমায়।
“বুড়ো হয়েছি এই বুড়োকে দুনিয়া দেখিও না বাবা। যে মেয়েটা বিকেলে এসেছে জানিনা সে কে।তবে তোমাদের মাঝে যাই চলুক সব মিটিয়ে নাও। মাঝে অন্য কেউ এলে ঘর ঘর থাকেনা বাবা।
কথাটা বলে তিতিলের পিতা চলে গেছেন। রিদয় ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সেতুর ৫০+ কল।
এত ফোন!!!

——-যাবার পথেই রিদয় সেতুর কাছে জানতে চেয়েছে যে ঐখানে কি কথা হচ্ছিলো।
সেতু বাইকটা থামাতে বললে রিদয়ও বাইক থামিয়ে রাস্তার কিনারায় গাছের ছাউনিটার পাশে দাড়ায়।
” সেতু অন্য দিকে ফিরে রাগে গিজ গিজ করছে।
–কি হল বলো উনার সাথে আর তিতিলের সাথে তোমার কিসের কথা হয়েছে!!!
“সেই কথা হয়েছে যা তোমায় বলতে বলেছিলাম বলোনি। একটা যুবতি মেয়েকে বাড়িতে রাখার মানেকি রিদয়!!
—বাজে বকোনা সেতু।
” কি বাজে বকছি রিদয়।আগে আমায় বিয়ে করবে বলে পিছু পিছু ঘুর ঘুর করতে।আর আজ আমি তোমার পিছু পরে আছি। বিয়ে তো দূর বিয়ের কথা শুনলেই এরিয়ে চলো।কেন রিদয় কেন??

“-সেতু এক কথায় না আটকিয়ে বলবে ওদের কি বলেছো তা বলবে।
★ সবটা শুনে রিদয়ের মাথায় আগুন জ্বলছে।কি সব বলে এসেছে সেতু!!তিতিল আর ওর বাবা কতটাই না কষ্ট জানি পেয়েছে।রাগ সামলাতে না পেরে রিদয় রাস্তার মধ্যে সেতুর গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিয়েছে।
একজন পুলিশ হয়ে রাস্তায় এমনটা করা ঠিক হয়নি।কারন কেউ এই থাপ্পরের ছবি বা ভিডিও ধারন করলে তীলকে তাল বানিয়ে ছরিয়ে দিতো চারিদিক।তার পরেও কোন দিক চিন্তা ছারাই এমন করেছে রিদয়।

আমায় মেরেছো রাগ করিনি রিদয় তবে যার কারনে মেরেছো তার জন্যে এত দরদ কিসের তোমার?
ওহহ বুঝেছি কয়েকদিনে ঐ মেয়েটা নিজের রুপে ভালোই ফাঁসিয়েছে তোমায়।
এই কথাটায় রিদয়ের নিভে আসা রাগটা আবার জ্বলে উঠেছে।ছি ছি সেতু কি জঘন্ন্য মন মানুষিকতা তোমার,একটা নিরপরাধ অসহায় মেয়েকে যা নয় তাই বললে, তার বাবাকে পর্যন্ত ছারলেনা।এখন আমার উপরে কালি মাখছো??
আমি এই সেতুকে চিনিনা মুটেই না।
“আমার সত্য বলা দেখে আমার উপর মুগ্ধ হয়েছো আর আজ সেই সত্যিটা শুনেই আমায় ঘৃন্না করতে শুরু করলে!!!
— ঠিক তাই সেতু ঠিক তাই। তবে তোমার জানা মতে যেটা সত্যি সেটা এমন নাও হতে পারে। তোমার চোখে যা ঠিক তা অন্যের চোখেও ঠিক হবে ভাবো কি করে?

” সেতু রাস্তায় তেমন তামাশা চায়না না রিদয় চায়।তাই ব্যাপারটা মিটিয়ে নেয়াই ভালো।
রিদয় দেখো আমরা কত খুশে ছিলাম,আর একটা রাস্তা ভিখারি মেয়ের জন্য আমরা কেন ঝগরা করছি??
আমরা তো একে অপরের কথা দিয়েছিলাম কোন ঝগরা হবে না আমাদের মাঝে।
-রিদয় নিজের গরম মাথাটা ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।
তবে বার বার রাগিয়ে দিতে সেতুর একটা কথাই যথেষ্ট।

“দেখো রিদয় মানলাম মেয়েটা অসহায় আর খুবই ভালো।তার পরেও মেয়েটার দিক দিয়ে চিন্তা করো।কারো বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসাবে থাকলে ভালো জাগয়ায় বিয়ে হবে না।আর মানুষ তো তোমাদের দুই ভাই আর মেয়েটার নামে নানান গুজব ছরাবে। তখন মেয়েটার বিয়ে হবে?
, আমার কথা রাগে নয়, একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবো। মেয়েটাকে আমি একটা ভালো চাকরির ব্যাবস্থা করে দিবো।তাতে বেতন ও সন্মান দুটোই পাবে।এবং ভালো জায়গায় বিয়েও হবে।

“- না জাবেনা তিতিল কোথাও না। ওর কোন চাকরির প্রয়োজন নেই।ও আমার কাছেই থাকবে।
রাগে গিজ গিজ করতে করতে রিদয় মাঝ পথে সেতুকে রেখেই বাইক নিয়ে চলে এসেছে।

এখানে আরেকটু দাড়ালে সেতুর গাল লাল বানিয়ে দিবে রিদয়।আর সে সেতুকে আঘাত করতে চায়নি।তবে ওর বাজে বাজে কথায় যে কারো মন খারাপ হবে। শুধু মন খারাপ না মাথা ১৮০° গরম হবে।

—সেতু ব্যাপারটা মুটেও ভালো ভাবে নিলো না।কেন রিদয়ের ঐ মেয়েটার উপর এত টান! কেনই বা ওর জন্য আমার গায়ে হাত তুললো।এ মেয়েকে এবার দেখাতে হবে।অন্যের ভালোবাসায় হাত দিলে কি হয়।

মি.রিদয় তুমি ভালো করে সেতুকে চিনলেই না।রাস্তায় দাড়িয়ে তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছো।তাও তোমার বাড়িতে রাখা ঐ রুপসির জন্যে।ভালো করোনি একদম ভালো করোনি।

——–

“-রিদয় সেতুর এত গুলো ফোন পেয়েও তুলার নাম নেই,তুলবে না কোন মতেই না।ভালোবাসে বলে কি যা নয় তাই বলবে।
তিতিল আমার বিয়ে করা বৌ, ওকে বাজে কথা বলবে।
মেরে দেবো এক দম মেরে দেবো।

—-

” মাঝ রাতে তিতিলের ঘরটার গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ, বাহ তবে জানালা খুলা। সেখান দিয়েই উকি দিয়ে তিতিলকে দেখলো।
জুই ফুলের মাঝখানে গাগাদি হয়ে শুয়ে আছে।একজনের উপরে আরেকজনের পা তুলে দিয়েছে।বেশ হাস্যকর। ছোট্ট বিছানায় তিনজন কি করে শুয়ে আছে।
জেনো লঙক্কর খানা।
-কেন তোমার মত মেয়ের জীবনটা নষ্ট হল তিতিল।কেনইবা স্বামী থাকা সত্বেও তুমি কাজের মেয়ের পরিচয়ে বাড়িতে রইলে।কি অধম আমি।বাবা ঠিকই বলেছে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায়না।
আর এবার সময় হয়েছে একটা নৌকা বাছাই করার।
ভেবেই মুখে হাসি টেনে চলে এসেছে রিদয়। কাল বাবার সেই প্রশ্নের উওর টা সে দিবে।

“-রিদয়ের রুমে ঢুকতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।
হাতে নিতেই নজরে পরল অনেক গুলো কল।তাও অচেনা নম্বরে,
কোন দরকারি ভেবে ব্যাক করতেই রিদয়ের হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো..

—সেতু!!

[চলবে]♦

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here