স্বামী পর্ব ১৯+২০

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৯

কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পরে আস্তে আস্তে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকল সোহান। ভীষণ খিদে পেয়েছে তার। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ডাইনিং রুমে ঢুকল। ফ্রিজ খুলে ভালো করে দেখল কোন খাবার আছে কিনা!
কোন খাবার না থাকায় সোজা কিচেনে ঢুকল। কিচেন থেকে বেরিয়ে জান্নাতের রুমে ঢুকে ডাকতে লাগল।
সোহানের ডাক কান পর্যন্ত আসছে তবুও কোন সাড়া না দিয়ে শুয়ে রইল জান্নাত। রুমে ঢুকে বলল,
– জান্নাত তোমাকে ডাকছি তুমি কী শুনতে পাচ্ছো না.? আমার খুব খিদে পেয়েছে কিছু বানিয়ে দাও জলদি। কোন সাড়া না পেয়ে মেজাজ গরম করে রাগে ফোঁসাতে লাগল সোহান।

তোমাকে যে রাগারাগি করি তাতে আমার দোষ হয়ে যাচ্ছে আর তুমি যে কথার কোন জবাব দিচ্ছ না তাতে কী আমার রাগ হচ্ছে না.? আমার শরীরে কী রক্ত মাংস নেই.? জান্নাত আবারও বলছি আমার খিদে পেয়েছে।
এবার মুখ খুলল জান্নাত। বিছানায় শোয়া থেকে উঠে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
– আপনার খিদে পেয়েছে তাতে আমি কী করব.? বাসায় কিছুই নেই। আপনি দোকানে গিয়ে নাস্তা করে নিন। তাছাড়া আমি এখন নাস্তা বানানোর মতো অবস্থায় নেই।

জান্নাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সোহান। মাথার ভেতরে হাজারও চিন্তা কাজ করছে। নিলয়ের সাথে এবার যেভাবেই হোক মিউচুয়ালে আসতে হবে। যত টাকা লাগে নিলয়কে দিয়ে মুখ আটানোর চেষ্টা করতে হবে। তারপর ভালো করে বুঝিয়ে যেভাবেই হোক ভিডিওটা ডিলিট করাতে হবে। সোজা আঙুলে কাজ না হলে আঙুল বাঁকা করতে হবে।

পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হবে সোহান। জান্নাত আসতে দেরি হবে তাই আজকে প্লিজ কোন বাহানা করবে না। অনেকদিন হলো তোমার সাথে কোন সম্পর্ক হয় না। আজকে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে। আমার আর এমন থাকতে ভালো লাগছে না।

আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। বাবাকে কল করে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েও পরক্ষণে মত পরিবর্তন করলাম। লাজলজ্জা বলতে কিছু নেই।
এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও এমন কথা কীভাবে বলতে পারল ভাবতেই মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।
সারদিন চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়।

সন্ধ্যা ৭ টা বাজার ১০ মিনিট আগে এরিনা হোটেলে ঢুকল সোহান। চারিদিকে একবার করে চোখ বুলায় সোহান। নিলয়ের দেখা না পেয়ে দরজার সামনে পায়চারি করছে সোহান।

বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সোহান। ৭.১৫ বাজে এখনো নিলয় আসছে না। মেজাজটা একটু গরম হয়ে গেল। তাহলে কী নিলয় হারামী আমার সাথে নাটক করছে। পকেটে থেকে মোবাইলটা বের করে নিলয়ের নাম্বারে কল দিল সোহান। প্রথমবার বাজার পরে নিলয় কলটা রিসিভ করে হাসতে লাগল। অনেকক্ষণ হাসি থামিয়ে বলল,
– এত ব্যস্ত হলে কী দিন চলে নাকি..? আজকে আমি আসতে পারব না জরুরি কাজ পরে গেছে কালকে একই টাইমে আসবি দেখা করব।
নিলয়ের কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আছে সোহান। কলটা কেটে মোবাইলটা পকেটে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে চলে আসল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল নিলয়ের একটা ব্যবস্থা করতে হবে বেশি বেরে গেছে। লোভ যখন একবার হয়েছে সামনে আরও বেরে যাবে। হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাবে ঢুকল সোহান। আজ অনেকদিন পরে এখানে আসতে পেরে মনের ভেতরে স্বস্তি ফিরে আসল। দ্রুততার সাথে ক্লাবে জয়েন করল। এখন লোকজন তেমন কেউ আসেনি ৯ টার পরে আসতে শুরু করবে। জান্নাতকে তো বলে এসেছিল ফিরতে রাত হবে তাই এখানে আসা। যদি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যায় তাহলে জান্নাত সন্দেহ করবে।
কিছুক্ষণ পরে সোহানের কাঁধে হাত রাখল মায়া।
– সোহান আজকে কী মনে করে আসলি পথ ভুলে নয় তো.!
-“……..”
– কী রে বোবা হয়ে গেলি নাকি.? এখনো আমার সাথে রেগে আছিস.? দেখ, মানুষের জীবনে অনেক ভুল হয় তাই আমিও না হয় একটা ছোট ভুল করেছি তাই বলে বন্ধু হিসাবেও কী কথা বলা যায় না.? সেদিন তোর নিজেরও কিছু দোষ ছিল যার কারণে এমনটা হয়েছে।
-“……….”
– তুই কী কথা বলবি না..? ঠিকাছে তুই থাক তোর রাগ নিয়া আমি যাচ্ছি।
– মায়া শোন।
– হ্যাঁ বল কী বলবি?
– বলব আমার কপাল। এতদিনে একটা খোঁজ পর্যন্ত নিস নাই আবার কথা বলিস।
– কী আর বলব.? নতুন বিয়ে করেছিস নাকি.? বউ নাকি খুব সুন্দর। তাকে পেয়ে তো সবাই ভুলেই গেছিস এখন।
– তোকে কে বলল.?
– যেই বলুক না কেন আগে বল কথাটা সত্যি কিনা!
– হ্যাঁ সত্যি।
– মিষ্টি কোথায়?
– এখান থেকে বের হয়ে তারপর খাইয়ে দিব।
– আমি মিষ্টি খাব না। আজকের বিলটা তুই দিয়ে দিস তাইলে হবে।
– হা হা হা করে হাসল সোহান।
– বাহ্ তোর মুখে হাসি দেখে ভালো লাগছে।

অনেকদিন পরে মায়ার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে রাত সাড়ে বারোটায় বাসায় ফিরল সোহান।

দরজায় কলিং চাপলে জান্নাত এসে দরজা খুলে দিলে চমকে উঠল জান্নাত। সোহান পুরো ঢুলছে। আধো আধো চোখে বলল,
– তুমি এভাবে পঁচা জামা কাপড় পরে আছো কেন..? তোমার কী জামা কাপড় নেই..?
– আপনি মদ গিলে এসেছেন? আমি কোথায় পঁচা জামা পড়লাম এটা তো নতুন!
– হ্যাঁ এসেছি তাতে কী হয়েছে..?
– কী হয়েছে মানে.? এত রাতে বাড়ির ছেলে এভাবে মদ গিলে আসে নাকি!
– অনেকদিন পরে খেয়েছি। আমি রুমে যাচ্ছি তুমি জলদি আসো।

সোহান চলে গেলে জান্নাত বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল।
একটুপরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার উপরে পা ঝুলিয়ে বসল সোহান। জান্নাত টের পেয়েও কিছু বলেনি।
– জান্নাত আই এ্যাম স্যরি। আসলে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেছিল তুমি আমার মোবাইল ধরার কারণে যাতে করে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা চাই।

জান্নাত এবার রাগান্বিত হয়ে বলল,
– আপনার ক্ষমা আপনার কাছেই রাখুন। কতবার ক্ষমা চাইবেন.? বারবার ভুল করবেন আর বারবার ক্ষমা করে দিব। এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাছাড়া আমার কথা না হয় বাদই দিলাম আপনার পুরো পরিবার এখন বাসায় নেই সেই সুযোগে আপনি মদ গিলে এসেছেন.? মা আপনাকে এত করে বলে গেল আমাকে একা রেখে কোথাও যেন না যান তবুও আপনি গিয়েছেন তাহলে এটা কী হলো.? আপনি মায়ের আদেশ অমান্য করেছেন। প্লিজ আমাকে ডাকবেন না আপনার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
জান্নাত একদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে। কোন কথাই আর বলছে না সোহানের সাথে। সোহান পাশে শুয়ে পরল। তারপর বারবার জান্নাতের দিকে তাকাচ্ছে। এক পর্যায়ে না পেরে বলে উঠল,
– এই জান্নাত, ঘুমিয়ে গেছো নাকি!
-“………”
– জান্নাত……এইদিকে তাকাও প্লিজ।

সোহানের কথায় জান্নাত তার দিকে ঘুরে তাকায়। শরীরের ব্যথা কিছটা কমলেও মনের ব্যথা এখনো ভরপুর।
– জি বলেন।
– জান্নাত এভাবে রাগ করছো কেন? আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আর ভুল করব না। একটা লাস্ট চান্স দাও। দেখি নিজেকে সংশোধন করতে পারি কিনা!
– স্যরি বলতে হবে না। আমি কে যে আমার কাছে স্যরি বলবেন। সেদিন তো খুব করে মেরেছেন আজ না হয় আরেকটু মারেন।
– এই কথাগুলো বলে লজ্জা দিও না।
– প্লিজ আমি ঘুমাব।
-আচ্ছা গুড নাইট।

রাত প্রায় দুটো জান্নাত আড়মোড়া দিয়ে অপর পাশ করে ফিরে দেখে সোহান তাকিয়ে আছে।
– আপনি এখন সজাগ.?
– তুমি আদর না করলে ঘুম যে আসবে না।
– বেশি ন্যাকামি হচ্ছে না.?
– কীসের ন্যাকামি জান্নাত.?
– এই যে বললেন আদর না করলে ঘুম আসবে না। এতদিন তো কখনও এমন কথা বলেননি আজ হঠাৎ করে বললেন কোন স্বার্থে.?

সোহান কথার মাঝে জান্নাতকে তার দিকে টেনে নিল। তারপর জান্নাতের চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে আলতো করে চুমু দেয়। জান্নাত সোহানের চুমুর স্পর্শে কেঁপে ওঠে। সোহান জান্নাতের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ঠোঁট দখল করে নিল। জান্নাত কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোহান জান্নাতের মাঝে ডুব দিল। কোন বাঁধা দেওয়ার সুযোগ পেল না জান্নাত।

রাত পৌনে চারটে বাজে। সোহান ক্লান্ত হয়ে হাত পা মেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পরল। জান্নাত নিজের কাপড় ঠিকঠাক করে সোহানের পাশে শুয়ে পরল। চোখ দিয়ে পানি পরছে। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরেছে যেখান থেকে বের হওয়ার মতো কোন সুযোগ নেই। হঠাৎ জান্নাতের খেয়াল আসল আজকে তো কোন প্রোটেকশন ইউজ করেনি তাহলে কী হবে এখন.? যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা হয়ে যাবে। যার সংসার করার ইচ্ছা নেই তার জন্মের সন্তানকে কীভাবে নিজের পেটে ধরবে। বাচ্চাকে নষ্ট করার মতো পাপ কাজ দুনিয়াতে একটাও নাই। সোহান তো ঘুমিয়ে পরেছে। রাতে কী করেছে হয়ত সকালে ভুলে যাবে।
কালকে সব কথাগুলো মনে করিয়ে দিতে হবে। না হলে বড় ধরণের সমস্যা হলে ঝামেলায় পরে যাবো।

সবকিছু ভাবতে ভাবতে জান্নাত ঘুমিয়ে পরল।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_২০

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে তাকিয়ে পাশে সোহানকে দেখতে না পেয়ে অবাক হলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে নয়টা বাজে। এতবেলা হয়ে যাওয়াতে শোয়া ছেড়ে ধড়মড় করে বিছানা দিয়ে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এসে রুমে দাঁড়ালাম। তারপর রুম থেকে বের হয়ে সোহানকে খুঁজতে লাগলাম গতকাল রাতের কথাটা বলার জন্য। সমস্ত ঘর খোঁজ করার পরেও সোহানকে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হলাম। মানুষটা এত সকালবেলা কোথায় গেছে? নিজের কাছে ফোন না থাকার কারণে জানতে পারলাম না তিনি কোথায় গেছে। দরজার কাছে গিয়ে দেখলাম বাহির থেকে লক করা। বুঝতে বাকি রইল না যে সোহানের কারসাজি এটা। অনেকটা অবাকও হলাম যে তিনি যাওয়ার একবার না বলে গেলেন কীভাবে?
নিজের রুমে এসে পায়চারি করছি কেন জানি ভালো লাগছে না।
এদিকে পেটে ক্ষুদাও লেগেছে কিন্তু রান্না করে খেতে ইচ্ছা করছে না।

একটুপরে দরজা লক খোলার শব্দে বুঝতে পারলাম সোহান এসেছে। অনেকক্ষণ পরে সোহান রুমে ঢুকল। গলাটা খকখক করে কাশি দিয়ে এদিকে এসে ট্রেটা বিছানার উপরে রাখল। জান্নাত হাত-মুখ ধুয়েছ?
-“……….”।
– কী হল আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিচ্ছ না কেন.?
– একটুপরে বললাম, কিছু বলবেন.?
– নাস্তা কিনে এনেছি খেয়ে নাও।
– খাব না।
– কেন খাবে না?
– এমনি।

সোহান এবার বিছানার উপরে বসে মাথাটা ধরে বলল,
– আমার উপরে রাগ করেছ.? আসলে আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাই না তবুও কেন জানি হয়ে যায়। আমি রাগকে কন্টোল করতে পারি না। কেন জানি বর্তমানে নিজেকে পাগল মনে হয়। হুটহাট রাগ করা, তবে সবচেয়ে বড় বিষয়টা হল ইদানিং গায়ে হাত তোলা। জান্নাত বিশ্বাস কর আমি চাই না তোমাকে মারতে কিন্তু কেন জানি হয়ে যায়। তুমি আর কখনও আমার মুখে মুখে কথা বলবে না।
হঠাৎ সোহান বলল,
– জান্নাত কালকে রাতে মনে হয় প্রোটেকশন নাওনি। প্লিজ এমনটা করও না। আমি এত তাড়াতাড়ি বেবি নিতে চাই না। জবটা ছেড়ে নতুন জব নিয়ে তার পাঁচ বছর পরে বেবি নেওয়ার চিন্তাভাবনা করব। তাছাড়া তোমার পড়াশুনা চলাকালে নিলে অনেক ক্ষতি হবে পড়াশুনার। আমি কী বলছি তুমি বুঝতে পারছ? এমনিতেই অনেক ঝামেলার ভেতরে আছি তাই এটা নিয়ে কোন ঝামেলা করতে চাই না।
– ঝামেলা মানে? কীসের ঝামেলা?
– উফফ জান্নাত, তুমি শুধু মুখ চালাও। জানো বন্ধুকের গুলির চেয়ে কথার আঘাত ছুঁরির চেয়েও ধারলো।
তোমাকে বুঝিয়ে বলার পরেও তুমি শুধু প্রশ্ন কর যার কারণে প্রচুর রাগ ওঠে।
– আপনি বেবি নেওয়াটাকে ঝামেলা বলছেন কেন? বিয়ে করে রাতের পর রাত আমার সাথে শুতে পারবেন আর বেবি হলে সেটাকে মানবেন না। এটা কী ধরণের কথাবার্তা। শোনেন একটু আগে আপনি যে বললেন আমি মুখ চালাই বলে আপনার রাগ ওঠে। রাগ কী শুধু আপনার একার! আমার কী রাগ নেই? আপনি যে কথাটা বললেন এটা একজন স্বামীর কথা নয়। আসলে আপনি বিয়ে করেছেন শুধু ভোগ করার জন্য বেবি হলে ঝামেলা গ্রহণ করার জন্য নয়।
– তুমি এসব আমাকে বলে কোন লাভ হবে না। আমি কারও কথামতো চলি না নিজের যা বুদ্ধি আছে সে মতো চলি।
– হ্যাঁ সেটা তো ঠিকি। আপনি রাতভর আমাকে নিয়ে ফুর্তি করতে পারবেন, প্রয়োজন হলে বন্ধুর বিছানায় পাঠাতে পারবেন আর বাচ্চা কনসেপ্ট হলে সেটাকে মেনে নিতে পারবেন না। একটা বাচ্চা হলে তো আপনার মানসম্মান ডুবে যাবে। সবাই বলবে ওই তো অমুকের বাপ যায়। তাইলে তো মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করতে পারবেন না। আমি জানতাম আপনি লুচ্চা কিন্তু আপনি যে জাত লুচ্চা সেটা জানতাম না। মেয়েদের শরীর ছাড়া কিছু বুঝেন না। তারচেয়ে একটা কাজ করেন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন তাইলে আপনার এধরণের কোন চিন্তা করা লাগবে না। নিশ্চিন্তে সব করতে পারবেন। প্রতিদিন পতিতালয়ে যাবেন আর নতুন নতুন মেয়েদের শরীর উপভোগ করবেন।
– তুমি কী চাচ্ছো আমি তোমার সাথে না শুই, ঠিকাছে শুলাম না। শোয়ার জন্য অনেক মেয়ে আছে। টাকা দিলে মেয়েদের অভাব আছে নাকি! মা আসুক তারপর তোমার একটা ব্যবস্থা করব।

– আপনি এসব কথা বলতে পারলেন?

সোহান কোন উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি তো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি একজন স্বামী চেয়েছিলাম কিন্তু এমন স্বামী নয়। সোহান শুধুমাত্র আমার শরীরের টানে আমার কাছে আসে? কী বলে গেল এইসব, বাচ্চাটা নাকি ওর একটা ঝামেলা, টাকা দিলে অনেক মেয়ে পাওয়া যায়। এসব বলে কী বুঝাতে চাচ্ছে তার কাছে আমার কোন মূল্য নেই? সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কষ্টে বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে। চিৎকার করে কাঁদলে বোঁধহয় কষ্টটা কম হত।
ঘরের ভেতরে কেন জানি অস্থিরতা কাজ করছে। ভালো লাগছে না কিছু। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। সমস্ত শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। এসির ঠাণ্ডা বাতাস সহ্য হয় না বলে সিলিং ফ্যান চালিয়ে বসে আছি। মিডেলক্লাস পরিবারের তো তাই এসির ঠাণ্ডা বাতাস শরীরে মানায় না।
মা-বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কীভাবে? সাথীও নেই যে ওকে বলব। চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এই বাড়ি থেকে বের হতে পারলে বোঁধহয় স্বস্তি ফিরে আসতো। এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাব।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এলো। সোহানের কোন পাত্তা নেই। আমাকে আটকে রেখে অফিসে চলে গেছে একবারের জন্য বলেও যায়নি। খুব রাগ উঠছে নিজের উপরে কেন মেয়ে হয়ে জন্মালাম। ছোটবেলায় যখন এক্সিডেন্ট করেছিলাম তখন মরে গেলে এসব সহ্য করা লাগত না। যখন সেই এক্সিডেন্টের কথা ভাবী তখনি বুকটা ধুক করে ওঠে। হায়াৎ ছিল বলে বেঁচে ফিরেছি নতুবা মটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারণে ডাক্তার বলেছিল নাকি কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। অপারেশনের পরে জ্ঞান না ফিরলে তাদের পক্ষে কিছু করার নেই। আমার অপারেশনে বাবার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে ঢাকায় রেফার করলে সরকারি হাসপাতালে এমন ক্রিটিক্যাল প্রেশেন্ট ভর্তি করবে না বলে জানায়। অবশেষে বাবার পরিচিত একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে এডমিট করে অপারেশন করে। সুস্থ হওয়ার পরে বুঝতে পারলাম জীবনে মা-বাবা ছাড়া কেউ আপন নাই। কথায় তো আছে এক বোঝে মায়, আরেক বোঝে গায়। মা যদি সন্তানের কষ্ট না বুঝত তাইলে সন্তানের অস্থিত্ব থাকত না। কথাগুলো মনে করতে করতে দীর্ঘশ্বাস নিলাম। বর্তমানে জীবনটা একটা নরকে পরিণত হয়েছে। চাইলেও এই নরক থেকে বের হতে পারব না। কিন্তু এখান থেকে যেভাবেই হোক বের হতে হবে না হলে আমি বাঁচব না। কিন্তু কীভবে বের হব কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। সোহান তো বলে গেল মা আসলে আমার একটা ব্যবস্থা করবে কিন্তু কী সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে।

দুপুরে কোনভাবে রান্না করে নাকে মুখে খেয়ে শুয়ে পরলাম। চোখ বন্ধ করলে চোখের সামনে সব কিছু ভেসে উঠে। তবুও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্ঠা করলাম।

রাতে সোহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে ঢুকল। আমি জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
সোহানের উপস্থিতি টের পেয়ে মুখটা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। দেখলাম তার মুখটা অন্ধকার হয়ে আছে। শার্টটা ভিজে পানিতে চুপচুপ করছে। খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য মুখ খুলতে গিয়ে আবারও বন্ধ করলাম। অনেকক্ষণ বসে আছে চেয়ারের উপরে। এবার আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।
– আপনার কী শরীর খারাপ.? এভাবে ঘামচ্ছেন কেন?
-“…………..”
– কী হল কথা বলেন?
– জান্নাত তোমার সমস্যা কী? আমার সামনে থেকে যাও না হলে মেজাজ গরম হলে সমস্যা হয়ে যাবে।
মুখটা ভেংচি কেটে চলে গেলাম ড্রইং রুমে। সোফার উপরে বসে টিভি দেখছি। অনেকক্ষণ টিভি দেখতে দেখতে কখন যেনো সোফার উপরে ঘুমিয়ে পরলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন নিজেকে বিছানার উপরে আবিষ্কার করলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত চারটে বাজে। তখন মনে পরল আমি তো সোফার উপরে ছিলাম তাইলে রুমে আসলাম কীভাবে? পরে বুঝতে পারলাম সোহান হয়তোবা নিয়ে এসেছেন। এমন ঘুম ঘুমালাম যে টেরই পেলাম না কখন আমাকে নিয়ে এলো।

চলবে…….
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here