###__স্বামী__###
পর্ব-৩৬ & শেষ পর্ব
#Nirzana(Tanima_Anam)
-প্রায় এক মাস হতে চললো নীরা ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলে না।আসলে এতো বড় এক্সিডেন্ট ও মানতে পারে নি!!
কথাটা বলেই সায়ন মাথা নিচু করে নেয়।
সবাই উৎসুক জনতার মতো সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে নীরার মা তো নীরা ধরে কেঁদেই চলেছ তবে তাতে নীরার কোনো হেলদোল নেই।সে চির নিরব
অনু ঘটনার কিছু না বুঝে সায়নকে প্রশ্ন করে বসে
-কিসের এক্সিডেন্ট??আর এমন কোনো এক্সিডেন্টের কথা তো তোমরা বলো নি আমাদের!!
সায়ন একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে…
-আমাদের এখান থেকে যাওয়ার কারণ হয়তো তুৃমি জানো তবে সে সব অতীত ইতিহাস তুলে তোমাকে অপ্রস্তুত করতে চাই না!(কিছুক্ষন চুপ থেকে)
…..অনু অামি ঐখানে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম নীরার জন্য।সব তো ঠিকিই ছিলো বেশ চলছিলো আমাদের টোনাটুনির সংসার। একদিন হুট করেই নীরা আমাকে বললো আমাদের টোনাটুনির সংসারে নতুন কেউ আসছে।আমি বাবা হবো ব্যাস ভালো থাকার জন্য আর কি চাই।কিন্তু….
এইটুকু বলেই সায়ন থেমে গেলো।গাল বেয়ে দু ফোটা পানি মেঝেতে পরলো!!
গলা ধরে আসছে
-নীরাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না ও প্রেগনেন্ট না মানে তুমি যে বললে নীরা নাকি!!
-নীরার তখন চার মাস সব বেশ ভালোই চলছিলো।আমরা তোমাদের একবারে ফিরে এসে সারর্প্রাইজ দিবো বলে আর কিছু জানাই নি।কিন্তু…..(….)সেদিন আমি ছোট্ট একটা কার এক্সিডেন্ট করি।সেই খবর নীরা পেয়ে ছুটতে গিয়ে সিড়ি থেকে পড়ে যায় আর বেবিটা…নীরা এতো বড় ধাক্কা সহ্য করতে পারে নি।বড্ড বেশি এক্সপেকটেশন ছিলো বাচ্চাটা নিয়ে।তাই ও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পরে।
আর এরকম অবস্থায় কাউকে জানাতেও পারি নি!!ওখানে নীরাকে একা সামলাতেও পারছিলাম না।সত্যি বলতে নীরাকে এভাবে….
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….
-ব্যাস আর বলতে হবে না বুঝে গেছি…..
-আমায় ক্ষমা করে দাও অনু।
-তুমি আমার কাছে ক্ষমা কেন চাচ্ছো?
-ক্ষমা চাওয়ার কারন হয়তো আমাদের অতীত
আমি খুব খারাপ একজন মানুষ তাই হয়তো এমন শাস্থি পেতে হলো…!!ক্ষমা করে দাও
নিজের অজান্তেই অনুর গাল বেয়েও কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।একটা সন্তানই তো একজন মায়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ।সেই প্রিয় জিনিসটা পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না।
তা কেবল একজন মা ই অনুভব করতে পারে
নীরাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ শকে আছে বেচারি।
নির্ঝর সব যেনে সায়নের উপর বেশ চোটপাট করে তার কারন এতো বড় ঘটনা তাকে জানানো হয়নি কেন?
বোনের এতো বড় বিপদে ভাই হয়ে পাশে দাড়াতে পারলো না এর চেয়ে দুঃখের কি হাতে পারে…..
সায়ন বেশ গুছিয়ে ক্ষমা চেয়েছে তাদের কাছে।
তবে নীরার কোনো হেলদোল নেই এতো কিছুর মাঝেও সে শান্ত মুর্তির ন্যায় বসে আছে….
হটাৎই অনুর বিচ্ছুদের মধ্যে একজন ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দেয় আর একজনের কান্নার শব্দে আরেক জনের ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে সেও শুরু করে দেয়….
অনু বাচ্চাদের কান্নার শব্দ পেয়ে উঠতে নিলে নীরা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ছুট লাগায় ভাইয়ের ঘরে।যেন কোনো কিছু তাকে মোহিত করে নিজের দিকে টানছে
অনু নীরার পেছন পেছন ঘরে যায়। ঘরে গিয়ে দেখে নীরা দুটোর মধ্যে একজনকে কোলে তুলে নিয়েছে।
অনু গিয়ে আরেকজনকে কোলে নেয়।।।।
সেদিন আর বাচ্চাদের কাছ থেকে নীরাকে এক ফোটাও কেউ নড়াতে পারেনি।নীরা বাচ্চাদের ছেড়ে এক ধাপ ও কোথাও যাবে না।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নীরা যতো দিন সুস্থ না হয় ততো দিন নীরা কোথাও যাবে না।সায়নও এ বাড়িতেই থাকবে।
কারণ এদিকে যেমন সে বাচ্চাদের চোখের আড়াল করবে না তেমন স্বামীকেও কোথাও যেতে দেবে না।।
আস্তে আস্তে নীরা সুস্থ হয়।অবশ্য নীরার এই খারাপ সময়ের সমান ভাগ নিয়েছে সায়নও।
দেখতে দেখতে বছর গড়িয়ে যায়।ধীর পায়ে কেটে যায় চারটে বসন্ত।নীরার কোল ও শূন্য নেই তার কোলে সদ্য জন্মানো ছোট্ট ফুটফুটে একটি ছেলে যার বয়স দুই দিন মাত্র…..
এদিকে মৌনতা পূর্নতাও বেশ খুশি এতো চাওয়ার পর অবশেষে তাদের ফুপ্পিআম্মু একটা ভাই পুতুল দিলো!!
অবশ্য তারা দুজন দুইটা ভাই পুতুল চেয়েছিলো তবে ফুপ্পিআম্মু একটা দিয়েছে।এখন এই ভাই কে নিবে তা নিয়ে দুজনের মাঝে বেশ বিবাদ চলছে……..
ওদের ঝগড়া দেখে সায়ন ওদের কোলে তুলে নেয়…..
আজ সেও যে বেশ খুশি….
তবে এখনো নীরা প্রথম চুমুটা দেয় পূর্নতার কপালে তারপর মৌনতা তাপরের চুমু বরাদ্দ থাকে সারাবের জন্য। সারাব নীরার ছেলে….
সেদিন প্রথম কোলে নিয়েছিলো পূর্নতাকে।এই পূর্নতাই তো তাকে প্রথমবারের জন্য মা হওয়ার অনুভূতি উপহার দিয়েছিলো….
তাকে কি করে ভোলা যায়….
অনেক অন্ধকার কাটিয়ে আজ বেশ সুখেই আছে অনু-নির্ঝর আর সায়ন নীরা…..
অনেক পাওয়া না পাওয়ার মাঝে তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো স্বামী।যে তাদের বিপদের দিনে তাদের দু হাত দিয়ে আগলে রেখেছে……
এখন বেশ চলছ তাদের টোনাটুনির সংসার।
…….সমাপ্ত……………