স্বামী পর্ব ৫

#স্বামী (সিজন-২)
#পর্ব-৫
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
★( বিনা অনুমতিতে কাটাকাটি + কপি করা সমপূর্ন নিষেদ-চাইলে শেয়ার করতে পারেন।)★

“–কাল বৈশাখি ঝড় কেমন হয়?
ঐ ঝড়ে মানুষের কতটা ক্ষতি করে?
ঠিক তেমন এক ঝড় তিতিলের বুকে বয়ে যাচ্ছে।
মুখ দেখে মনে হচ্ছে না মজা করছে। যদি আমায় ভালোই না বাসে তাহলে বিয়েটা কেন করল?

–” তিতিলের প্রশ্ন সূচক ভেজা চোখ রিদয় দেখেও না দেখার ভান করছে।এখন তিতিলের কাঁন্না থামাবে এমন কোন শব্দ ওর কাছে নেই।
“নিজেকে সামলে নিয়েছে তিতিল।সব রকম পরিস্থিতি সে সামলাতে পারে। কষ্ট পাওয়া এটা নতুন কি! আরো কষ্ট হক জীবনে তাও কোন বাধা নেই।বিধাতা কি লিখেছে এই কপালে তা না দেখা অবদি তো মরনও আসবে না।তাই চুপ চাপ সবটা মেনে চুপ থাকাই ভালো।

“- আমায় বিয়ে করলেন কেন, যদি বলতেন!!!
—রিদয় ভাবেনি তিতিল এত জলদি শক্ত করে নেবে নিজেকে।তবে মেয়েটা ধর্য শক্তি আছে বেশ।

” তিতিল আমায় ভুল বুঝোনা। আমায় কোন কিছুর জন্যে জোর করো না।যখন সব জানার সময় হবে তখন জানতে পারবে। সব জানবে সব তবে আজ নয়।প্রশ্নটা আরেক দিন করো।

শুধু এটুকু জানো আমার হাত পা বাধা। পারলে ক্ষমা করে দিও। আমি যারই প্রেমীক হই না কেন।মন থেকে চেষ্টায় থাকবো তোমার স্বামী হবার।
প্লিজ আমায় সময় দাও। সব ঠিক করে দেবো আমি।

“আর যাই করুন নিজেকে বাদ্ধ্য করবেন না আমার স্বামী হবার।চেষ্টায় কিছু হয় না তাও মনের বিরুদ্ধে।
ভালোবাসা না জোর করে না জেদ ধরে পাওয়া যায়।ওটা তো বাস এমনি এমনি হয়ে যায়।

” তিতিলের কথায় রিদয় মুগ্ধ। এভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নি।তবে সত্যিটা না জানলে আরো বেশি ক্ষতি হত।

তিতিল কোন কথা না বলে রুমটা ছেরে চলে গেছে।
রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
কোথায় গেলে তার মনে শান্তি আসবে।এই কষ্ট কি কোন দিন আমার পিছু ছারবেনা।
প্রথম স্বামী মারা গেলো।যেই আরেকজন কে আরকে ধরতে চাইলাম।ধরব তো দূর।ভাবনা শেষ হবার আগে সব শেষ করে দিলো।যখন অন্য মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে আমার মত বিধবা বিয়ে করল কেন? আর সেই কথা কেন আমায় বললো।না বললেই পারত।সারা জীবন তাকে পাবার আশা তো করতাম এখন তো সেই আশাটাও নেই।

একলা অন্ধকারে বাড়ির পিছন দিকটায় চলে এসেছে তিতিল।অন্ধাকারে তো তিতিল ভয় পায় তবে আজ ভয় নেই।কারন এত বড় কষ্ট মনে ভয় হবে কি করে।
—-একটা বড় গাছের শিকরে বসে পরেছে তিতিল।
ইচ্ছা করছে কেঁদে কেঁদে এই এই দুনিয়াটা ভাসিয়ে দিই।তবে মনের কষ্ট টা মনে চাপা রাখলেও চোখের বাঁধন যে আটকাতে পারছে না।

এদিকে রিদয় তিতিলকে না পেয়ে খুজা শুরু করেছে।তবে আইডিয়ার বাহিরে রিদয়ের। তিতিল কোথায় যাবে।
বাবার রুম বোনদের রুম চেক করে আবার রুমে আসতেই চোখ কপালে।তিতিল নিজে থেকেই ফিরে এসেছে।

“-তিতিল শুনো।।
– খাবার দিচ্ছি খেতে আসুন।এমন করে বললো জেনো কিছুই হয়নি।আর রিদয় তিতিলের মনিব।চাকরানির মত ভাব নিয়ে তাকে খেতে ডাকছে।

—খাওয়া তো দুজনের একজনের পেটেও যায়নি।

রিদয় রুমে এসে চুপ চাপ এক কোনা ধরে শুয়ে পরল।
“-তিতিল তার হাতের কাজ গুলো সেরে রুমে এসেছে।
রিদয় তিতিলের জন্য যথেষ্ট জায়গা রেখেছে বিছানায়।
তবে তিতিল বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা পেতেছে।আলমারি থেকে একটা চাদর বিছিয়ে নিয়েছে মোঝেতে।

—এভাবে নিচে ঘুমাবে কি করে।তুমি চাইলে জুই ফুলের রুমে আজকে থাকতে পারো।
” কাল না হয় আমি আরেকটা বেড নিয়ে আসবো।

–( তিতিলের থমকে থাকা চোখের পানিটা আবার বেরিয়ে এলো।এর চেয়ে তো উনি ঘর থেকেই বের করে দিতো।রুম তো আরো খালিই পরে রয়েছে।
একটিবার উপরে এসে ঘুমাতেও তো বলতে পারত।)

“ধন্যবাদ আপনাকে।কারো রুম বা এই রুমে আরেকটা বেডের দরকার নেই।এতে পরিবারের বাকি সদস্যরা ব্যাপারটা ঠিক ভাবে নিবে না। বাবা হয়তো কষ্ট পাবে।আর জুই ফুল আমাদের থেকে কি শিক্ষা নেবে?
এমন না হয় ওরা বিয়ে নামটা শুনলেই ঘিন্নায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
বিয়ে মানে পবিত্র বন্ধন আর সেই পবিত্র বন্ধন কে পবিত্রই থাকতে দিন।

“-বেশ অভিমান তিতিলের স্বরে।

(আসলে আমিতো ভেবেছিলাম তিতিল আমার পাশে ঘুমাবে না।হয়তো রাগ হয়েছে অনেক।আর তাই তো আরেকটা বিছানার ব্যাবস্থা করতে চেয়েছি)

নিশ্চুপ তাদের মুখ।তবে অন্তরে শত কথা চলছে।
এই রাতের আধারে বাহিরের পরিবেশ টা দেখতে ইচ্ছা করছে।ওরা কেন নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।তাদেরও কি কষ্ট অনেক???
রিদয় সেতু আর তিতিলের মধ্যে নিজেকে গুলিয়ে ফেলেছে কি করবে সে নিজেই জানেনা।

——
“-
–আজ কাল তিতিল সোফায় গুটি মেরে শুয়ে থাকেনা।কার কোলে চরে আর বিছানায় যাবে?
সে যে অন্যের কোলে মাথা রাখতে ভালোবাসে।
-রিদয় রাত করে ঘরে ফিরলেও খাবার টা ঠিকই পায়।সব গুছগাছ করে তিতিল ফ্লোরে ঘুমিয়ে রয়েছে।
তিতিলকে দেখে একটা দির্ঘ শ্বাস নিয়ে রিদয় নিজের কাজে ব্যাস্ত।

—★

” আমার থেকে চোখের নোনা জল কেন লোকাস!!
, আমি জানিরে মা আজ কাল তদের ঘরে কি চলছে।
—বাবা!
“বাবা ডাকিস আর বাবাকেই ধোকা দিতে চাইছিস!!
তিতিল তার মাথাটা নিচু করে নিয়েছে।সত্যি উনার থেকে কি বা লোকানোর আছে।

” চিন্তা করিস না মা।
সময়ের সাথে সাথে সব ঘা শুকিয়ে যাবে।
—ঘা হয়তো শুকিয়ে যায় বাবা, তবে সেই ঘায়ের চিন্হটা রয়ে যায়।
“আরিফ রহমান মুচকি হাসি হেসে তিতিলের মাথায় হাত রেখে উওর দিলো…
আর সেই চিন্হ রয়ে যায় বলেই তো ক্ষত পূরনের খুশিটা আসে। কষ্ট না থাকলে আনন্দের মজা কই???

অতিতের ভুলটা সুধরাতে সাহাজ্য করে। পূরনো ঘা”

হয়তো তর বেলাও তাই। তিতিল আর কোন কথাই বললো না।কি বলার আছে।

কাঁদিস না। তর শাশুরি থাকলে হয়তো তোকে সব বুঝাতো।
তবে আমি যত দূর জানি।একজন স্ত্রী পারেনা দুনিয়াতে এমন কোন কাজ নেই।সে স্বামীকে সর্গ বাস আর নরক বাস দুই করাতে পারে।এখন তুই বুঝ তর স্বামীকে কোন রাস্তায় জেতে দিবি।

———-
শশুরের বলা কথাটা মিথ্যা নয়। স্বামীকে আয়ত্বে আনা তা শুধু স্ত্রীরাই পারে।অন্য কেও নয়।

তবে জোর করে যাই হক ভালোবাসা হয় না।তবে কোনটা ঠিক বা বেঠিক তা রিদয়কে বুঝাতে তো বাধা নেই।


-বহু রাত পার পর রিদয় এসেছে।থানায় আজ বড্ড কাজ ছিলো। কিছু ডাকাতের কেস আছে তারা নাকে দম করে রেখেছে।
ডাকাতি তো করেই তার পর একজন মানুষকেও জীবিত রাখেনা।মূত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে।

“-ঘুমাও নি??
—___জবাব শূন্য।
ফ্রেস হয়ে এসে ভাতের ভিতরে মাএ হাতটা রেখেছে।
ঐ যে বলেনা হাতে এলো তবু মুখে এলো না।
ঠিক তেমনই হল। তিতিল আজ প্রথম সেতুর ব্যাপারে জানতে চাইছে।আর সে ইচ্ছা করে জানতে যখন চাইলো বলতে সমস্যা নেই।

–আপনি যাকে ভালোবাসেন সে কি জানে আপনি বিবাহিত?
” না।
-সেতু এখন কোথায়??

“একটা একটা করে না বলে সোজা করে বললেই পারো আমার আর সেতুর সম্পর্কে
জানতে চাও।
–বলতে চাইছেন যখন তাহলে বলুন।

” দেখো তিতিল তুমি যা জানতে চাও সবই বলব বলতে বাধা নেই।তবে তোমার কষ্ট হবে না তো?
“-না হবে না। স্বামী নিজের হবে না তা যখন হজম করে বসে আছি এ আর কি…অপয়া তো আমি সেই ছোট বেলা থেকেই।
আপনি বলুন।
–তিতিলের শক্ত গলার স্বর।বেশ কঠিন মেয়ে বটে।
” রিদয় আর কোন প্রশ্ন না করে তিতিলকে বলতে শুরু করেছে।

সেতুকে আমি ভালোবাসি তিন বছর আগে আমাদের পরিচয়। সে সাংবাদিক, তাই আমাদের দেখা হওয়া স্বাভাবিক।এখান থেকেই দুজন দুজনকে পছন্দ করে ফেলি।

“- ও জানেনা আমি বিয়ে করেছি।আর আমি চাইনা জানুক।ওকে হারাতে চাইনা।তাও আমার ভুলের জন্যে।
“ও জানলে নিজেকে শেষ করে দিবে।
–একটা কথা বুঝলাম না। আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন তাহলে সেতুকে বিয়ে না করে আমায় বিয়ে করলেন কেন??
আর এখনও বিয়ে করা বৌ এর সামনে দিব্বি প্রেমিকার বিবরন দিলেন।তার মানে প্রেম অনেক গভির।

–রিদয় চুপ।

“কি হল বলুন না।আমি আপনাদের দুজনের মাঝখানে এলাম কি করে!!

— রিদয় ঘেমে একাকার।
প্রশ্নটা তাকে বেশ বিচলিত করছে।আর এটা তিতিল বুঝতে পারছে।
কিন্তু কেন??

” কি হল বলুন না। কেন আমায় এই সাগরে ভাসালেন।

বিয়ের দিন বিয়ে পরানোর পর এমনি এমনি একা বেরিয়ে যাইনি তিতিল।

পাপ করেছি আমি.আর
—পাপের প্রাশ্চিত্ব্য করতে।।
তোমায় বিয়ে করেছি।
নাকি কোন ভালোবাসায়।

“(চলবে)❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here