স্বামী পর্ব ৪

#স্বামী (সিজন-২)
#পর্ব–৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_________________________
“– শুনতে পাচ্ছেন! আমার কিছু জানার ছিলো।
—এত ডাকে কি ঘুমিয়ে থাকা যায়/ রিদয় উঠে বসেছে মেজাজ টা খিট খিট লাগছে। এটা কেমন বৌ শান্তিতে ঘুমোতে দেয় না।
” চোখ টা কচলিয়ে রিদয়ের ধমক স্বরে কথা।
আহ এত চেচামেচি কেন?আমি কি মরে যাচ্ছি যে আমায় আর পাবেনা। তাই এখন তোমার কথ বলার শখ উঠেছে।

—ও বাবা গো তিতিল এই বেটা তো এক নাম্বারে কর্কশ ভাষি। না না এখন এই পিস্তলের কথা তুললে যদি তোকেই আজ মেরে দেয়।
চুপ থাকাই ভালো, তিতিল রিদয়ের চোখ দেখেই চোদ্দগুষ্টির নাম স্বরন করে নিয়েছে.

“এখন কি আমার মুখ দেখতে দিন পার করবে?
–না না তা না।
” কি বলবে জলদি বলো সময় ২ মিনিট।
-সব তো বুঝলাম স্বামী স্ত্রীর কথায়ও সময় সেট করতে হয় তা জানা ছিলো না।.
কি হল বলো…এবার একটু উচ্চ স্বরের ধমকে তিতিল দুই কদম পিছিয়ে। তিতিল তো এসেছিলো শত রাগ নিয়ে।সব রাগ গিলে এবার অন্যের রাগ কে ভয় পাচ্ছে।আসলে সে চাইছেনা ভয় পেতে। তবে ভিতর থেকে ফিলটা আসছে তো তাই কিছু করার নাই।

“-আপনি তো সকাল সকাল বেরিয়ে যান।আজকে যাননি। আর অনেক বেলা হচ্ছে একটু পর দুপুরের খাবারের সময় হবে।আর আপনি নাস্তাটা করেন নি।
ঘুম থেকেও উঠছিলেন না তাই….
চোখ বন্ধ করে মুখস্ত্য বিদ্যা যেমন মানুষ অনবরত বলে, ঠিক তেমন তিতিল আজ রিদয়ের ভয়ে এক শ্বাসে সব টা বলে দম নিয়েছে।তবে এখনও চোখ বন্ধ।খুলার সাহস হচ্ছে না।কারন ওর মনে হচ্ছে এক জোরা চোখ তাকে গিলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

“-রিদয় এবার উঠে বসেছে।এই মেয়েটা ওর চাইতে ঘাড় ত্যারা! নাকি ভয় পেয়েছে।জেদ করে এভাবে কথা বললো!নাকি ধমকের কারনে….
প্রশ্ন সূচক চোখ তিতিলের দিকে ডানে বামে এক বার মাথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে। সোজা ওয়াসরুমে।
” ওয়াস রুমের দরজার শব্দে তিতিল নির ভয়ে চোখ খুলেছে।
— ওমা গো করে চিৎকার করে চার কদম পিছপা তিতিল।
“হবেই না কেন দরজার শব্দে ভেবেছিলো এই ডাকাত টা গেছে তবে এটা চাল ছিলো তিতিলের চোখ খুলানোর।এমনি শব্দটা করে।রিদয় তিতিলের বরারব দাড়িয়ে রয়েছে।

— এখন আর কি চুপ করে থাকা ছারা উপায় নেই.
” নাস্তা টা রুমে নিয়ে এসো।
কথাটা বলে রিদয় চলে গেছে। আসলে সে তো ভয় দেখাতে চায়নি।আর ভয়েরই বা কি আছে।
যাই হক এখন ওকে নরমাল করতে হবে।ভাবনা নিয়ে ফ্রেস হয়ে এসেছে রিদয়।
বেট পুরে খেয়ে নিলো তবে…. বৌ খেলো কিনা জানতে চায়নি।আসলে ভুলেই গেছে।
“কিছু বলবে বলছিলে। সত্যি কি খাবার জন্যে ডাকছিলে নাকি অন্য কথা আছে।
-মাথায় না জবাব দিয়ে প্লেট টা নিয়ে চলে গেছে তিতিল।না আর ঘরে যাবে না।এই বারান্দায় বেশ ভালো লাগছে।
রুমের সামনে বারান্দায় গ্রিল ধরে দাড়িয়ে তিতিল।
দিন টা বেশ অন্ধকার করেছে।বেশ জোরে বৃষ্টিও হবে মনে হয়।
বলতে না বলতেই বৃষ্টি শুরু।
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে তিতিলের প্রান জুরিয়ে আসছে।
চোখ বন্ধ করে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে তা অনুভব করছে


—— আমার মায়ের অনেক শখ ছিলো টিনের চাল হবে নিজের বাড়ির।
পিছন থেকে রিদয় হুট করে এসে কথাটা শুরু করলো।
চোখ মেলে তিতিল ওর দিকে না তাকালেও কথাটায় মন দিয়েছে।
–জানো তিতিল আমার বাবা যখন বাড়ি বানানোর চিন্তা করছিলো তখন মা ছাদ দিয়ে বাড়িটা বানাতে দেয়নি।মায়ের ঐ ছাদের ঘরে দম বন্ধ হবে।

বাবা মায়ের কথা অনুযায়িই এই ঘরটা বানিয়েছে। –আমার বয়স টা ঠিক মনে নেই।
জুই আর ফুল বেশ ছোট।তাদের কোলে নিয়ে মা এই ঘরে উঠেছিলো। জুইকে আমি কোলে রেখেছিলাম আর ফুলকে মা।বাবা তালা টা খুলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলো ঘরে ঢুকার।
” রিদয়ের চোখের পানি বৃষ্টির পানির চাইতেও বেশি ঝরছে।হয়তো তিতিল দেখতে পারছে না।তিতিল কেন কেউই দেখতে পাবেনা।কারন কাঁন্না টা তো অন্তরে।
“রিদয়ের দিকে প্রশ্ন সূচক ভাবে চেয়ে তিতিলের অজান্তে তিতিলের গলা থেকে আওয়াজ বেরিয়ে এলো।

-তার পর???
” গ্রিল টা ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে উওরটা দিলো রিদয়।
সেদিন মা বেশ করে প্রতিটা রুম সাজিয়ে নিয়েছে।উনার কথা মতই ঘরের সমস্ত্য কিছু সেট করা হয়েছিলো।
তবে আশ্চর্জ ঘটনা তো তখন হল যখন এই নতুন ঘরে প্রথম রাত মায়ের শেষ রাত হয়েছিলো।

“মানে?
…..মানে..মায়ের কি হয়েছিলো জানিনা।বাবা শুধু বলেছিলো রিদয় পানি নিয়ে আয় জলদি।বাস— মা আমার হাতে পানিটাও খেলো না।

“সত্যি বেশ কষ্ট দায়ক ঘটনা।মা ছারা কতটা কষ্ট হয় একটা সন্তানের, তা তিতিলকে বুঝাতে হবে না।
-তিতিলের চোখেও পানি চলে এসেছে।একজন নারী কতটা শখ আল্লাদ সপ্ন বুনে বাড়িকে ঘর বানায়। আর সেই ঘরে যদি তারই জায়গা না হয় তখন।
শেষ ঠিকানায় যেতে হয় জানি তাও এভাবে….তা হয়তো সবার ভাবনার উপরে।

—তিতিলের মুখে কথা নেই।সে চুপ করে আরো কিছু শুনার আশায় দাড়িয়ে।
আর রিদয়ও তাকে বলতে চায়।তিতিলের সাথে মন খুলে কথা বলতে চায়।

” জুই আর ফুল বেশ ছোট অবস্থ্যায় মা হারিয়েছে।বাবা আমাদের চিন্তা করে বিয়ে করেননি।
জেঠু আমাদের ফ্যামেলির অবস্থ্যা দেখে সইতে পারল না।তাই নিজের সাজানো বড় বাড়ি রেখে এখানেই আমাদের মত বাড়ি বানায়।জেঠিমা আমাদের সামলাতে শুরু করে।
আগে সব পৃথক থাকলেও মা মারা জাবার পর জেঠু আলাদা থাকতে চায়নি।জেঠিমা হয়তো চায়নি এখানে এসে আমাদের মাঝে থাকতে।তবে স্বামীর কথার অবাদ্ধ্য হয়নি।উনার সিদ্ধান্তকে মান্য দিয়ে এখানেই রয়েছে।
—-জেঠিমা হয়তো ভাবে আমাদের কারনে তার জীবন টা এমন হয়েছে।এখানে তিনি কখনোই থাকতে চায়নি।উনার সপ্ন অন্য রকম।আমার মায়ের মত নয়।

তিতিলকে সব টা বলে নিজের রুমে পা দিতে গিয়েও রিদয় দাড়িয়ে পরেছে।
—জুই ফুলকে কখনো কষ্ট দিও না।ওদের আগলে না নিলেও ফেলে দিও না।কোন অন্যায় করলে আমায় বলো তবুও তাদের কষ্ট দিও না।
তুমি হয়তো তাদের কষ্ট বুঝবে কারন টা তোমার আমার দুজনেরই জানা।

———
এতটা কথা বলার পর তিতিলের মনের কোন খানের ভয় টা নেই রিদয়কে নিয়ে।
এমন মনের মানুষ কখনো খারাপ কাজে জরিতো থাকতে পারে না।

তবে কি এমন কাজ তার যার কারনে ঐটা উনার সাথে।

“দুইদিন পার হয়েছে রিদয়কে তেমন ভয় পায়না ওর সাথে কথা না বললেও ওর সব কাজ তিতিল করে দেয়।
–রিদয় ওয়াস রুমে আজকে আমিই ওর কাপর টা বের করে দিই।
আলমারিটা প্রথম বারের মত তিতিল খুলেছে।তিতিল এখনও তার জামা কাপর লাগেজে রেখেছে।তাই আলমারি খুলার দরকারই পরেনি।
তবে আলমারি খুলে আরেকটা ধাক্কা খেলো।
ধুরমুর করে আবার আলমারিটা বন্ধ করে দিয়েছে।
মুখে এক অন্য রকম হাসি। বাবা এবার সত্যিকারের বাবা হবার দায়িত্ব্য পালন করেছে।

সন্ধা নামতেই অল্প হাত কাটা নিয়ে রিদয় বাড়িতে।
— ইয়াআল্লাহ আপনার হাতে কি হল??
“না তেমন কিছুনা।
আপনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের লোক?
” রিদয়ের ছোট্ট উওর “হুম.
কি করে হাতে ব্যাথা পেলেন!
-রিদয় লক্ষ করছে তিতিল রিদয়কে তেমন ভয় করছে না।না দূরে দূরে থাকছে। ভালো বেশ ভালো।

“-লেখা পড়া কত দূর করেছো??
রিদয় তিতিলের পড়াশুনা নিয়ে মাথা ঘাটছে কেন?
তিতিল মুখটা গুমরা করে উওর দিলো.ssc দেয়া হয়নি।
–সোফায় আয়েসে বসে হাতে সেভলন দিতে দিতে রিদয়ের কথা চালু।
হুম।
তা কেন দাওনি।লেখা পড়ায় মন নেই!
–মন তো ছিলো তবে টাকার অভাবে দিতে পারিনি।
” তোমার বাবা তোমার পরিক্ষার ফি জমা না দিয়ে মদ গিলেছে।
তাই তো!!
–তিতিল অবাক উনি জানল কি করে!
“তিতিল!
-জ্বী।
” এদিকে এসো।
তিতিলকে কাছে ডেকে পাশে বসিয়েছে রিদয়।
-নাও হাত টা বেধে দাও। হাতটা তিতিলের উপর রেখে তিতিলকে তার অতিত মনে করাচ্ছে।

তিতিল সুন্দর করে হাতটা ব্যান্ডেজ করছে।
” ভাবছো এত কিছু জানলাম কি করে?
রিদয়ের মুখের দিকে তাকাতেই রিদয়ের মায়া ভরা হাসি।খুচাখুচা দাড়ি গুলো মুছ টা বর হয়ে বেশ নিচে নেমেছে।মাথার চুল এলেমেলো।
“কোন এক কবি বলেছিলো এলেমেলো চুলে মেয়েদের বেশ মায়াবী লাগে।নাহ শুধু মেয়ে নয় বরং ছেলে দেরও মায়াবী লাগে।
কবি হলে আজ আমিও দুইলাইন লিখতাম।

“-ভাবনায় বেঘাত।
রিদয়ের বলা শুরু।
তিতিল আমি তোমার ব্যাপারে সব জানি।তুমি আমার ব্যাপারে সব না জানলেও ধিরে ধিরে জানবে।
তোমার আগে বিয়ে হয়েছিলো।স্বামী মারা গেছে। সব জানি.।
তিতিল তবে আমায় সময় দাও আমায় বুঝো ভালো করে। তার পর স্ত্রী হিসাবে আমার কাছে নিজেকে সর্পন করো।

তুমি এখনও অনেক কিছু জানোনা।

” এমন কিছু যদি হয় যে কথা জেনে আমার ঘর ভাঙে সেই কথা আমি শুনতেও চাইনা। আপনি তা না বললেও চলবে।

–না তিতিল তোমার জানা দরকার এটা তোমার অধিকার।
তুমি যা চাও সব পাবে।তবে চাওয়ার আগে আমার পজিসন টা দেখে নিউ।
সামান্য ইন্সপেক্টর আমি।কমিশনার তো নই।
তোমার ঐ আগের স্বামীর মত টাকার পাহার আমার নেই।আছে হালাল টাকায় লেগে থাকা ঘাম।

-আমি কি এমন কোন অন্যায় আবদার করেছি। বা করব ভাবেন।?? আমিতো অপয়া তাই বিয়ের রাতে…

“তিতিলের থেকে ছট করে হাতটা টেনে নিয়ে আসলো রিদয়।
না তিতিল আসলে আমি অন্যকিছু বলতে চাইছি।আর তা বলতে না পেরে অন্য কথায় তোমার মন ভুলাচ্ছি।তবে মন ভুলালে যে চলবে না। সত্যটা জানা দরকার।

—–তিতিল আমার একটা সত্য লোকানো হয়েছে।আমি তোমায় না বরং সেতু কে ভালোবাসি।

——চলবে——-💔
সকলের মতামত আশা করছি।❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here