#স্বামী(সিজন-২)
#পর্ব–৮
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
__________________________
“- সেতু নাম টা শুনে বুকের ভিতরে একটা পাথর চাপার আঘাত পেয়েছে। পাথর টা স্থির হয়ে বুকে গেথে বসেছে।
এই তাহলে উনার সেই ভালোবাসা সেতু, চুল গুলো সিল্কি খুব এবং ঘন।
মিষ্টি হাসি মুখে বেশ সুন্দরি এবং স্মার্ট……হবেই তো লেখা পড়া জানা চাকরি জীবি মেয়ে বলে কথা।আমার মত নাকি মেট্রিক টা দিতে পারিনি….
–
এই সেতু মেয়েটাকে দেখছে তিতিল, যার কারনে আমার মূল্য ০….তবে আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি এটা তো হবারই ছিলো।
উনিতো সেতুকে ভালোবাসে।আর সেখানে আমার কি করার।বৌ তো নামে হয়ে এসেছি।আর সেই নাম দিয়ে কি হবে।নামটা নাইবা রইলো, তবে উনার মুখে আজ একটা মিষ্টি হাসি দেখতে তো পেলাম।
কড়া রৌদে মাথা চর চর করছে।মাথায় ইচ্ছা মত পানি ঢালতে মন চাইছে। কেন জানি রিদয়ের সাথে এই মেয়েটাকে আমার সজৎ হচ্ছে না।মন কে শত বুঝিয়েও পারছিনা যে রিদয় নামক মানুষটা আমার নয়।
–আরেহ বাহ তুমি কি করে বুঝলে!!
সেতু রিদয়ের সাথে কথা বলতে বলতে চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে পাশের চেয়ার টা টেনে বসেছে।
” হাতটা বেশ পরিচিত।আর গায়ের গন্ধটাও, এই সুভাশ তো আমি লক্ষ মানুষরে ভিরে খুজে পেয়ে জাবো তোমায়।
রিদয় সেতুকে বহুদিন পর পাশে পেয়ে ভুলেই গেছে সে কোথায় বসে,সামনে কে আছে..আর সামনে থাকার মানুষটার সাথে তার কি সম্পর্ক..
সেতু নিজের প্রশংসা শুনে লুতু পুতু।তবে রিদয় এবার সোজা তাকিয়ে তিতিলের পানে।
-চোখের কোনায় কিসের জল যে জমা হচ্ছে জানেনা তিতিল।
শত চেষ্টায় তা বের হওয়া থেকে আটকাতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসাই উওম মনে করল…
রিদয় থমকে আছে।সেতুর সাথে তার আলাপ বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে সেতু এত দিন কি করেছে, দেশের বাড়িতে রিদয়কে ছেরে কাটিয়েছে সেই বর্ননা দিতে ব্যাস্ত।
তবে রিদয়ের কান অবদি পৌছেছে কিনা জানা নেই।
“কি হল এমন চুপ কেন? এত দিন পর এলাম তাও এমন মন মরা হয়ে কি ভাবছো?
— না ঐ কাজের টেনশন আরকি।
তা তুমি সোজা বাড়িতে!!!
” আরেহ হ্যা জনাব সেটাই তো বলছি দুদিন বাদ তো আসতেই হত তাই আজকেই চলে এলাম সবার সাথে পরিচয় হতে।
– মানে!?
“কি মানে মানে করছ রিদয়।তুমি এমন ভাব করছো জেনো কিছুই বুঝতে পারছো না।
আর কত এরিয়ে চলবে? বাড়িতে গিয়ে বাবাকে আমাদের ব্যাপারে সব বলেছি।পুলিশ জামাই হবে শুনে এক পায়ে খারা তিনি।
মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব রিদয়ের সেতুর কথা সব বুঝতে তো পারছে তবে কি উওর দিবে তা ভেবে পায় না।
” কি হল!
আমার বাবাকে তোমার বাবার সাথে কথা বলতে বলি!!
— না এখন না। এক রোয়া জবাব রিদয়ের।
চেয়ার থেকে ধুম করে উঠেই রিদয়ের এমন জবাব।তার জবাবে সেতু অবদি অবাক।
আগে তো সেতুকে ঘরে তুলতে পাগল ছিলো তবে বেশ কয়েক মাস, না মাস কেন প্রায় বছর হবে রিদয় কেমন জেনো হয়ে উঠেছে।
১ মাস পর ওর সাথে দেখা করছি সেই খুশির ঝলকটাও ওর চোখে নেই।
-এখন না মানে?
“আসলে এটা ঠিক টাইম নয়।
–আর কবে হবে তোমার ঠিক সময়! তুমি একাই পুলিশ নউ যে বিয়ে করছো। সব পুলিশই সুখে সংসার করছে।তাদের ঘর আর জব দুটো বেশ ভালোই সামলেছে তাহলে তুমি!!
কথাটা শেষ করার আগেই আরিফ রহমান হাজির।
তাদের ড্রইং রুমে ডেকেছে সবাই।
—- আরিফ আর তার ভাবি পাশাপাশি বসেছে।তাদের ইচ্ছা আজ সেতুকে সব জানাতে হবে।
তবে রিদয় হয়তো চাইছে না এমন কিছু কেউ করুক।
কারন সেতু খুব সেন্সিটিভ মেয়ে। এর আগেও একবার রিদয়ের সাথে অভিমান করে হাতের রগ কেটে নিয়েছিলো।আর এবার রিদয় বিয়ে করেছে শুনে না আবার তেমন কিছু.. রিদয় সেই ভয়ে চুপসে আছে।একজন কে বাছতে পারছে না কি করবে?? না তিতিলকে একা এই সমাজে ছারতে চায়।না সেতুকে হারাতে।
– আরিফ রহমান আর রোকেয়া বেগম দুইজনেই চোখের ইশারায় কথা বলছে, কে সেতুকে সবটা জানাবে।
” আরিফ রহমান সেতুর সাথে এর আগেও একবার দেখা করছে তবে সেটা রাস্তার ধারে।এভাবে সে বাড়িতে চলে আসবে তা ভাবা যায় না।
“-আরিফ রহমান এবার তিতিলকে ডাক দিলেন।
তিতিল..
ডাক পেয়ে তিতিল ছুটে এসেছে।চোখ দুটো ফুলা ফুলা আর লাল। একটা বাচ্চাও আন্দাজ করতে পারবে কেন তিতিলের চোখ এমন।
– যা তো মা মেহমানের জন্যে কিছু নাস্তা নিয়ে আয়।
” সেতু প্রথম খেয়াল দিলোনা তিতিলের দিকে তবে এবার দিলো।
–ও কে আঙ্কেল??
আরিফ রহমান এই আশাতেই ছিলো সেতু জিজ্ঞাসা করবে আর সে তিতিলের পরিচয়টা দিবে।
আরিফ রহমান মুখ খুলার আগে তিতিলের পরিচয় সে নিজেই দিলো..
কাজের মেয়ে….
তিতিলের কথায় সবাই অবাক এটা কি বললো তিতিল।বাড়ির বৌ হয়ে কাজের মেয়ের পরিচয় দিলো। রিদয়ও অবাক তিতিল এমনটা করল…
“- সবাই চুপ তিতিল নাস্তা আনতে চলে গেছে। আরিফ রহমান তো সেতুকে কষ্ট দিতে চাইছেনা। তবে সত্য তো জানা উচিত।আর সেতুর রিদয় কে ভুলে সামনে আগিয়ে জাওয়াই সবার জন্য উওম।
আর তিতিল সত্যিটা না বলে এমনটা করে ভালো করেনি একদম না।কতদিন সব লোকানো যাবে কেন আধারে রাখতে হবে!!!
“–সেতুর সামনে চা টা রাখতেই সেতু তিতিলকে মনজোগ সহ দেখছে।দেখে কোনখান দিয়ে মনে হচ্ছেনা তিতিল কাজের মেয়ে।
গলায় সোনার ছোট হার.কানে বালি হাতে সোনার চুরি,সেতু বোকা মেয়ে না সোনা চিনতে ভুল করবে না।
পরনে উন্নতমানের জামদানী শাড়ি, চুল গুলো খুপা করে মাথায় কাপর দিয়েছে।
চোখে কাজলটায় বেশ বৌ বৌ লাগছে।আজ কাল কাজের মেয়েরা কি বেশ টাকা কামানো শুরু করেছে.নয়তো এত দামী জিনিস. পত্র পায় কোথায়।..
গায়ের রং তো মাসআল্লাহ।
আর রিদয় বা ওর পরিবার এমন একটা যুবতি মেয়েকে বাড়িতে রেখেছে কোন আক্কেলে!
দু দুটো বিয়ের বয়সি ছেলে বাড়িতে রয়েছে। ওহ কি যে করে..
-” তিতিলের দেয়া চায়ে চুমুক দিয়ে আরিফ রহমানের পানে তাকিয়ে সেতু..
কারন আরিফ রহমানের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না উনি খুশি।প্রথম দিন দেখে তো বড্ড খুশি হয়েছিলো তাহলে আজ এমন করছে কেন?
নাকি না বলে তাদের বাড়িতে এলাম বলে.
—-আঙ্কেল সব ঠিক আছে তো??
” হ্যা হ্যা সব ঠিক মা।
-সেতু এবার চা খাওয়া রেখে আরিফ রহমানের সাথে কথা বলতে চাইছে। মেয়ে বড্ড ফ্রেন্ডলি চলাচল কারির মধ্যে একজন..
“আসলে আমি এভাবে চলে আসায় মনে হয় আপনারা খুশি নন।
৷ না না সেতু কি বলছো বাবা খুশি বড্ড খুশি আসলে অফিসের একটু ঝামেলা বলে মুড অফ।
আরিফ রহমানকে কেউ তার কথা বলতেই দিচ্ছে না। না তিতিল।না রিদয়।জামাই বৌ মিলে কি চাইছে কে জানে।
আরিফ আর শব্দ করল না।
মিনিট দুইয়ের মধ্যেই সেতুর মোবাইলে ফোন আসে।তার জন্যে সে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।খুব ইমার্জেন্সি হয় তো। তবে আসবে আবার আড্ডা দিতে।
রিপোর্টার মানুষ কতকি করতে হয়।
———
তুই কি চাইছিস বল তো তিতিল।
–বাবা উনার.
” চুপ কর রিদয়ের কথা বাদ দে। সে তো এখানে নেই।আমার কথার উওর দে, ঐ বাহিরের মেয়েটার কাছে নিজের পরিচয় কেন দিলিনা। তুই কাজের বলে বলে আমাদের সকলকে ছোট করলি??
-বাবা ভুল করে থাকলে আমায় মাফ করবেন। যাকে বাহিরের মেয়ে বলছেন।হয়তো সে এই বাড়িতে থাকেনা।তবে কারো অন্তরে ঠাই করেছে।আর আমি!আমিতো বাবা বাড়িতে থেকেও নেই।
” কত দিন লোকাবি? লোকাবি বা কেন।
— আমি যার স্ত্রী সে তো আমায় মানেনা বাবা।তাহলে বাড়ির বৌ পরিচয় দিয়ে উনার স্ত্রী হবার পরিচয় দিয়ে কি হবে?
“আরিফ তিতিলের সাথে কথায় পারবে না।এর হাল বের করতে হবে।এভাবে কাউকে আধারে রাখা যায় না। তিতিলকে তার সন্মান ফিরিয়ে দিয়ে রিদয়ের বৌ হয়ে উঠাতেই হবে।
আর সেতুর পা ধরে হলেও মাফ চাইব। জেনো আমাদের মাফ করে।সে বুদ্ধিমান মেয়ে কারো ঘর হয়তো ভাংঙতে চাইবে না।
______
“—— সেতুর সামনে তোমার পরিচয় দিলেনা যে?
” রিদয় তিতিলের রুমের সামনে দাড়িয়ে তিতিলকে কথাটা জিজ্ঞাসা করলেও উওর পেলো না।
তিতিল!!
শুনতে পারছো??
-দরজা খুলা আর এত কাছে থেকে শুনবে না এমন তো নয়।
রিদয় কিছু ক্ষন দাড়িয়ে থেকে নিরাস হয়ে নিজের রুমে এসেছে।কি করবে সে জানেনা।নিজেকে শেষ করে দিলেই ভালে হয় হয়তো।মরে গেলেই সব মুক্তি.
—-
রাত্রি বেলায় রিদয়ের ঘরে তার বাবার আগমন।
দেখা যাক ছেলের মনে কি চলছে।একটাবার তো তার মন বুঝতে চেষ্টা করি।
“রিদয়।
রিদয়!!ঘুমিয়ে গেছিস?
ঘুমায়নি ধ্যানে মগ্ন তো তাই দুই ডাক হয়তো লেগেছে।এত দূষচিন্তা রেখে কোন মানুষ ঘুমাতে পারে।
–না বাবা এসো.
রিদয়ের মুখো মুখি হয়ে আরিফ রহমান বসেছে।
কথা বলতে হলে তো ওর পাশে বসাই ভালো হয়তো ওর বুকের ভিতরের আওয়াজটা শুনতে পাবো।
–কিছু বলবে??
” হ্যা রিদয়। তুই কি চাস আমায় বল তো।
-মানে!
“আমি এমন কিছু প্রশ্ন করিনি রিদয় যা তুই বুঝতে পারছিস না।
রিদয় চুপ।
“- ফ্যানের আওয়াজের চাইতে তার বুকের ধক ধকানির শব্দ। ওর বাবা না শুনতে পেলেও রিদয় জানে।
শব্দটা জেনো বেরেই চলছে।
” সেতুকে সব কবে বলছিস।
— বাবা সব বলে আমি সেতুকে হারাতে চাইনা।
“বাহ ভালো তাহলে তিতিল!!
আমি জানিনা বাবা।
—এটা কোন সমস্যার হাল নয় রিদয়…
“” এত কিছু জানিনা বাবা। শুধু জানি সব জানতে পারলে সেতু বাঁচবে না।আর আমার জন্যে আর কেউ মারা গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো বাবা। সেতুর তো কোন দুষ নেই তাহলে ওকে শাস্তি দেব কেন।
আরিফ রহমান এবার রাগে রিদয়কে জিজ্ঞাসা করল… মানলাম সেতুর দুষ নেই।তবে তিতিল ওর দুষ টা কি তা তো বলে দে।
চলবে…