#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
.
.
টেবিলের উপরে কার্ডটি রেখে, মুদির দোকানে এলো ছোঁয়া ।
ময়দা নিয়ে বাসায় ফিরে এলো সে । সোজা রান্নাঘরে এসে রুটি বানানোর কাজ শুরু করলো ।
নয়নতারা এসে বললো-
কাকে দেখছি আমি! যে মেয়ে কিনা শীতকালে দশটার আগে ঘুম থেকেই উঠেনা, সে আজ রান্নাঘরে!
.
ছোঁয়া খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললো-
আমি সব কাজই পারি ।
-কিন্তু করিস না ।
.
নয়নতারাকে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়া বললো-
এখন থেকে করবো । তুমি কতো কিছু করো! পুরো ঘর সামলিয়ে স্কুলে যাও । আজ থেকে বাসার সব কাজ আমি করবো ।
-বাহবা! আমার ছোট বোনের কি হলো?
-বুদ্ধি হলো বুদ্ধি ।
.
বোনকে টানতে টানতে ছোঁয়া বললো-
যাও এবার ঘুমিয়ে পড়ো তুমি । আমার কাজ শেষ হলে ডাকবো ।
.
নয়নতারা হাসতে হাসতে বললো-
যাচ্ছি রে যাচ্ছি!
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উঠোনে হাঁটাহাঁটি করছে রাফসান ।
বেশ কিছুক্ষণ পায়চারী করে নিজের রুমে ফিরে এলো সে । ব্রাশে পেস্ট লাগাতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো । অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে বললো-
আসসালামু-আলাইকুম । কে বলছেন?
.
ছেলের কণ্ঠ শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো পরশ । সে ভেবেছিলো ছোঁয়া বা নয়নতারা ফোনটা রিসিভ করবে ।
তবুও সে সাহস করে বলেই ফেললো-
ছোঁয়া আছে?
.
খানিকটা অবাকই হলো রাফসান । তার নাম্বারে ফোন করে কেউ ছোঁয়ার খোঁজ করছে কেনো?
রাফসান বললো-
এটা আমার নাম্বার ।
-আপনি কে?
-আপনি কে সেটা বলুন ।
-আমি ছোঁয়ার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম ।
-তাইতো জিজ্ঞাসা করছি, কে আপনি?
.
আমতাআমতা করে পরশ বললো-
হাসপাতাল থেকে বলছি ।
-ছোঁয়া কি কিছু ফেলে এসেছে? বা রোগী সম্পর্কিত কিছু বলবেন? তবে আমাকে বললেই হবে ।
-আপনি উনাকে ফোনটা দিন । উনাকেই বলছি ।
.
এবার মেজাজটা বিগড়ে গেলো রাফসানের । কড়া গলায় সে বললো-
বুঝলাম! নিশ্চয় ছোঁয়াকে ভালো লেগেছে আপনার ।
.
রাফসানের কথা শুনে নিশ্চুপ পরশ । একটা ছেলে আসলেই অন্য একটা ছেলের উদ্দেশ্য খুব সহজে বুঝতে পারে ।
.
রাফসান গম্ভীর গলায় বললো-
কতো সাইজ করেছি এমন ছেলেকে! ছোঁয়ার ছায়ার সাথেও কথা বলতে পারবেন না । যত্তসব ।
.
ফোনটা কেটে দিলো রাফসান ।
পরশের নিজের উপর রাগ হতে লাগলো । এভাবে অপ্রস্তুত হয়ে কথা না বলে, বুদ্ধি নিয়ে বললে আজ হয়তো ছোঁয়ার খোঁজ পাওয়া যেতো । কিন্তু এই ছেলেটি কে? কি হয় ছোঁয়ার! এতোটা রেগে গেলো কেনো সে?
.
দাঁত ব্রাশ করতে করতে হেসে ফেললো রাফসান । মনেমনে বললো-
সুন্দরী মেয়ে দেখলে যেকোনো ছেলের মাথায় ঘোরে । অস্বাভাবিক কিছু না ।
.
.
বাসায় পরশকে ঢুকতে দেখে সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
কিরে? ভেবেছি আজও রাতেই ফিরবি ।
-হুম ।
-হুম মানে! এদিকে আয়, বস আমার পাশে ।
.
সোফায় সাফিনা আহম্মেদের পাশে পরশ বসতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-
আমার মনে হয়েছিলো তুই প্রেমে পড়েছিস ।
-ঠিকই মনে হয়েছে তোমার । তবে তার কথা ভুলে যেতে হবে ।
-কেনো?
-হারিয়ে ফেলেছি তাকে ।
-সবটা খুলে বলতো ।
-মনটা খারাপ হবে ।
-তবে থাক ।
.
শফিউল আহম্মেদ এসে বললেন-
বাংলাদেশে মেয়ের কি অভাব পড়েছে? একটা হাতছাড়া হয়েছে তো কি হয়েছে! আশেপাশে তাকিয়ে দেখ মাই বয় । কতো মেয়ে তোর মতো একটা ছেলের জন্য পাগল, যেমনটা আমার জন্য ছিলো ।
.
সাফিনা বেগমের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে থেমে গেলেন শফিউল আহম্মেদ ।
পরশ বললো-
আমি দেবদাস হয়ে যাইনি ৷ এতো ভাবতে হবেনা আমায় নিয়ে ।
.
পরশ কথাটি বলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো । মনটা বড্ড খারাপ হয়ে আছে তার ।
.
.
স্কুলের উদ্দেশ্যে তৈরী হতে হতে নয়নতারা বললো-
আজকের রুটি আর আলুর ভাজি আসলেই অনেক ভালো হয়েছে ছোঁয়া । রোজ তুই এভাবে নাস্তাটা বানালে আমি আরাম করে আরো কিছুক্ষণ ঘুমোতে পারবো ।
.
কথাটি বলে দুষ্টু একটা হাসি দিলো নয়নতারা ।
.
ছোঁয়া মুচকি হেসে বললো-
আজ কতো সুনাম করবে?
-মিথ্যে সুনাম করছিনা ।
-তা জানি । আর হ্যাঁ এখন থেকে নাস্তা, রান্না সব আমিই করবো । কলেজ খুললেও ।
-দেখা যাক । আমার হাতঘড়িটা কোথায় রাখলাম রে?
-এখুনি তো এনেছিলে বোধহয় ।
-কিন্তু হাতে পরিনি ।
.
খুঁজতে খুঁজতে টেবিলের উপরে ঘড়িটা পেলো নয়নতারা । পাশে একটা কার্ড পেলো । কার্ডটি পড়ে সে জিজ্ঞাসা করলো-
সাইকিয়াট্রিস্ট এর কার্ড তোর কাছে কেনো?
-উনার সাথে হাসপাতালে পরিচয় হয়েছিলো । তখন দিয়েছে ।
-তাহলে ইনিই বোধহয় তিনি ।
-কে?
-তোর খোঁজ করতে এসেছিলেন । বলেছিলেন, তোর সাথে পরিচিত হয়েছে ।
-তাই নাকি!
-হ্যাঁ । একটা ফোন করতে পারিস ।
-ফোন করার মতো তেমন কোনো কথা হয়নি ।
-খোঁজ তো নিলো ।
-তখন হাসপাতালে ছিলাম তাই হয়তো । বিশেষ কোনো প্রয়োজনে নয় ।
.
ড্রয়ার টেনে কার্ডটা রেখে নয়নতারা বললো-
তোর যা ইচ্ছে ।
.
.
ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে । ফুলের বাগানে ছুটে বেড়াচ্ছে ছোঁয়া । তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পরশ ।
ধীরেধীরে ছোঁয়া তার কাছে আসলো । অনেক কাছে! যতোটা কাছে আসলে তার নিঃশ্বাস অনুভব করা যাবে ।
ছোঁয়াকে এতো কাছে পেয়ে, পরম আবেশে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো পরশ ।
কিন্তু একি! মনেহচ্ছে ছোঁয়া কাছে নেই ।
চোখ খুলতেই পরশ দেখলো ছোঁয়া নেই । পরশ তাকে খুঁজতে লাগলো চারিদিকে । পাহাড়ের চূড়ায় চোখ পড়তেই ছোঁয়াকে দেখতে পেলো সে ।
ছোঁয়া হেসে বলছে-
আমি এখানে পরশ ।
.
পরশ চেঁচিয়ে বললো-
ওখানে কি করছো! পড়ে যাবেতো ।
.
উত্তর না দিয়ে শব্দ করে হেসেই চলেছে ছোঁয়া ।
পরশ দ্রুতবেগে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এলো । পরশ বললো-
আমার কাছে এসো ।
-না আসবোনা! তুমি এসো ।
.
পরশ তার কাছে ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো ।
এদিকে পা পিছলে ছোঁয়া পড়ে যেতে চায়লে, পরশ তার হাতটা ধরে ফেললো । কিন্তু কেবল হাতটির নাগাল পরশ পেয়েছে, ঝুলছে ছোঁয়ার শরীর!
পরশ শান্তস্বরে বললো-
ছোঁয়া তুমি ভয় পেওনা । আমি তোমার কিছু হতে দিবোনা!
.
ঘুমটা ভেঙে গেলো পরশের । এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে । পাশে থাকা ছোট টেবিলটার উপরে থেকে গ্লাসটা নিয়ে, ঢকঢক করে পানি খেলো সে ।
এটা কেমন স্বপ্ন দেখলো পরশ!
ছোঁয়াকে কি সে বাঁচাতে পেরেছে?
পরক্ষণেই নিজেকে নিজে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করলো পরশ । এটা শুধুমাত্র একটা স্বপ্ন । এই ভরদুপুরে দেখা স্বপ্ন কখনো সত্যি হতে পারেনা, কিছুতেই না ।
.
সাফিনা আহম্মেদ এসে বললেন-
ঘুম ভাঙলো? চল ছাদে হাঁটতে যাই ।
-ভরদুপুরে ছাদে কেনো?
-বিকেল হয়ে গেলো । তোর দুপুরের ঘুম নষ্ট করতে আসবো আমি!
.
পরশের কপালে ঘাম দেখে তিনি বললেন-
কিছু হয়েছে?
-আচ্ছা মা, প্রেমে পড়লে মানুষ রোমান্টিক স্বপ্ন দেখে । আমি কেনো এমন বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি?
-কি দেখেছিস?
-বাজে স্বপ্ন কাউকে বললে সত্যি হয়ে যায় শুনেছি ।
-এসব কবে থেকে বিশ্বাস করছিস তুই?
-প্রিয় মানুষের বেলায় সবই বিশ্বাস করতে চাই ।
-মেয়েটিকে দেখার বড় ইচ্ছে ।
-কোন মেয়ে?
-যার জন্য তোর এতো অস্থিরতা ।
-হু! আমি নিজেই তার দেখা পাচ্ছিনা ।
.
সাফিনা আহম্মেদ হেসে বললেন-
সে যদি তোর হয়, দুনিয়ার যেই প্রান্তেই থাকুক না কেনো! তোর কাছে নিজ থেকে এসে ধরা দিবে ।
-সত্যি মা?
-হুম সত্যি । আর যেদিন আসবে সেদিন এমন ভুল আর করবিনা, নিজের করে নিতে পারিস মতো ব্যবস্থা করে নিবি । সুযোগ বারবার আসেনা মানুষের জীবনে ।
-আরেকটাবার সেই সুযোগ আমি চাই মা! শুধু আরেকটাবার!
.
কথাটি বলে মায়ের কোলে মাথাটা রাখলো পরশ । আর আপনমনে বললো-
এই স্বপ্নের কি আদৌ কোনো মানে নেই?
.
চলবে
Please next article