স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ৯

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz
.
.
পরশের মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে । মনেহচ্ছে মাথাটি এখুনি ফেটে যাবে ।
নিশির মতো এমন বেহায়া মেয়ে সে আগে দেখেনি । কাল সবটা বলার পরেও কিভাবে নিশি রাজি হলো? তার নিশির সাথে কথা বলার প্রয়োজন । নিশিকে সে জানিয়ে দেবে, তার মন শুধুই ছোঁয়াতে পড়ে আছে । মন সে কখনো পাবেনা, কোনোদিনও পাবেনা! এই মন, জীবন শুধুই ছোঁয়ার ।
-এসব কি বলছি আমি! তাহলে বাংলা সিনেমার কাহিনী গুলোও মিথ্যে নয়! প্রেমে পড়লে এমন ডায়ালগই মারে মানুষ!
.
.
এদিকে খুশিতে স্বামীকে মিষ্টিমুখ করালেন সাফিনা আহম্মেদ ।
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
আজ আমার ডায়াবেটিস এর খেয়াল নেই?
-ছেলের খুশির খবর শুনে মিষ্টিমুখ না করলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে ।
-আচ্ছা তাই!
.
পরশ তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই, তার মুখের ভেতরে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে সাফিনা আহম্মেদ বললে-
বিয়ের ডেটও তাড়াতাড়ি ঠিক করতে হবে ।
.
মুখের মিষ্টিটা যেনো কয়েক সেকেন্ডেই শেষ করে ফেললো পরশ । তাড়াহুড়ো করে বললো-
নিশির ফোন নাম্বার টা দাও মা ।
-কেনো?
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
আরে ওদের কিছু পারসোনাল আলাপ থাকতে পারেনা?
-তা পারে । কিন্তু নিশির নাম্বার আমার কাছে নেই ।
.
পরশ বললো-
খুঁজো তার মায়ের কাছে ।
.
পেছনে চোখ পড়তেই সাফিনা আহম্মেদ বলে উঠলেন-
আরে নিশি তুমি!
.
নিশিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলো সকলে । কালই প্রথম দেখা হলো, বিয়ের জন্য সম্মতি জানিয়েছে আজই, আর আজই পাত্রীর আগমন ঘটলো পাত্রের বাড়িতে!
শফিউল আহম্মেদ হেসে বলে উঠলেন-
আমার ছেলেকে বুঝি অনেক বেশিই পছন্দ হয়েছে তোমার? নাকি আমাদেরও? তাই একেবারে বাসায় চলে এলে ।
.
নিশি হেসে বললো-
আমার তো আপনাকে বেশি পছন্দ হয়েছে ।
-তাই নাকি!
-হ্যাঁ ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
দেখি বসোতো মা! মিষ্টিমুখ করো ।
-না আন্টি থাক এসব । আমি আসলে…
-কথা পরে। আগে বলো কি খাবে?
.
সাফিনা আহম্মেদকে সরানোর জন্য সে বললো-
আমি ঝাল খেতে পছন্দ করি ।
-তুমি বসো আমি এখুনি আসছি ।
.
শফিউল আহম্মেদকে তার স্ত্রী ইশারা করতেই, তিনিও উঠে চলে গেলেন ।
পরশের রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো নিশি ।
পরশের রাগে শরীরে কাপুনি দিচ্ছে । তাই নিশির এই মিষ্টি হাসিও যেনো তার কাছে কোনো পিশাচিনীর হাসির মতো লাগছে!
ইচ্ছে করছে মেয়েটিকে কয়েকটা বাজে কথা শুনিয়ে, অপমান করে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে। কিন্তু পরিবারের সামনে এসব সম্ভব না । তাছাড়া সে এটা করতে পারেনা । কোনো মেয়েকে অসম্মান করার শিক্ষা তার মা-বাবা তাকে দেয়নি । কিন্তু এমন ধোঁকাবাজ মেয়েকে কি করা উচিত?
.
-বসুন না!
.
পরশের বাড়িতে এসে পরশকেই খাতির করা হচ্ছে!
মেয়েটার সাথে কোনো কথায় বলতে চায়না সে, আপাতত এখানে!
চুপচাপ বসে পড়লো পরশ ।
নিশি দেখতে পেলো, পরশের দৃষ্টি নিচের দিকে । তাকে দেখতে বেশ গম্ভীর লাগছে ।
নিশি মৃদু হেসে বললো-
আমার দিকে তাকান । ওভাবে গোমড়া মুখে নিচের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই । আমি আপনাকে বিয়ে করছিনা ।
.
নিশির দিকে তাকিয়ে পরশ বললো-
মানে?
-আসলে কাল বাসায় গিয়ে যখন জানালাম আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি, আমার কথা কেউ পাত্তাই দিলোনা । মা-বাবা এক প্রকার জোরজবরদস্তি করা শুরু করেছিলো রাজি হবার জন্য । কেননা আপনি কোনোদিক থেকে খারাপ নন । ভালো পরিবারের ছেলে, সুদর্শন এবং সাইকিয়াট্রিস্ট । আমি তবুও বলেছি, ভালো লাগেনি আমার । তারা আর কিছু বলেনি আমাকে । কিন্তু আজ আপনার মায়ের ফোন পেয়ে যখন জানতে পারলো, আপনি এই বিয়েতে রাজি তখনি তারা আমায় কিছু জিজ্ঞাসা না করে জানিয়েছে এসব । তারা দ্রুত এনগেজমেন্ট এর তারিখও ঠিক করতে চলেছিলো । মা-বাবাকে কিছু বলে বোঝানো যাবেনা আমি জানি । আপনার বাসার ঠিকানা আগে শুনেছিলাম, এই ঠিকানা আমার চিনতে অসুবিধে হবেনা জানতাম । তাই দেরী হবার আগে সোজা চলে এসেছি এখানে । নাহলে আপনি আমায় ভুল বুঝতেন ।
.
নিশির সব কথা শুনে নিজের উপর রাগ হতে থাকলো পরশের । নিশি সম্পর্কে কতো খারাপ কথায় না সে ভেবেছে!
.
নিশি শান্ত স্বরে বললো-
এখন কি করবো?
-দেখুন বিয়েটা করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় ।
-আমার মা-বাবার কাছে আমি ছোট হতে পারিনা । তারা আমার রিলেশন আছে মনে করছে অলরেডি!
-সুন্দরীদের বফ থাকেনা! এটা তাদের মা বাবাও বিশ্বাস করতে চায়না ।
-মনেহচ্ছে পাম্প দিচ্ছেন?
.
ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে পরশ বললো-
প্লিজ হেল্প মি!
.
এরইমাঝে নুডুলস নিয়ে হাজির হলেন সাফিনা আহম্মেদ ।
তিনি বললেন-
নাও মা খাও ।
.
আচমকা নিশি শব্দ করে কেঁদে উঠলো । তার কান্নার শব্দ পেয়ে ভেতর থেকে শফিউল আহম্মেদও চলে এলেন ।
পরশের দিকে তারা তাকাতেই সে বললো-
আমি কিছু করিনি!
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
কি হয়েছে তোমার? আমাদের বলো?
.
নিশি উড়না দিয়ে মুখটা ডেকে ভাঙা গলায় বললো-
আন্টি আমি এই বিয়েটা করতে পারবোনা ।
-করতে পারবেনা মানে?
-মানে আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি । তাকেই বিয়ে করতে চাই । কিন্তু আমার বাসায় পরশকে বিয়ে করার জন্য জোর করছে ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
স্বাভাবিক । আমার ছেলেই এমন । পুরো আমার মতো!
-সেই রানবীর কাপুরের মতোও হোক না কেনো৷ আমি আমার প্রেমিককে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
পরশ ভীষণ ভালো ছেলে মা । নিশ্চয় তোমার প্রেমিক ভালোনা । তাই তোমার মা-বাবা তাকে মেনে নিচ্ছেনা । তুমি ওকে ভুলে গিয়ে আমার ছেলেকে বিয়ে করো ।
.
এবার ভ্যাঁ-ভ্যাঁ শব্দে কেঁদে উঠলো নিশি ।
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
করতে হবেনা! দুষ্টুমি করেছে । তুমি তোমার প্রেমিক নিয়েই থাকো । তোমার বাবার সাথে কথা বলবো আমি ।
-প্লিজ তাদের বলবেন না আমি এখানে এসেছি ৷ আমাকে মেরে, কেটে, কুচিকুচি করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে জানতে পারলে!
-এতোটা জঘন্য?
-হ্যাঁ! প্লিজ পায়ে পড়ি আপনাদের, বলবেন না বাসায় কিছু ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আচ্ছা তুমি কান্না থামাও । আমার কথাটা শোনো?
-ওয়েট, চোখের পানি মুছে নিই ।
.
উড়না দিয়ে চোখ মুছে নিলো নিশি । পরশ বোঝার চেষ্টা করলো, সে কি আসলেই কাঁদছে?
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
এখন আমাদের করণীয় কি?
-আপনারা কোনো একটা বাহানা দিয়ে এসব আটকান । আমি ওকে না পেলে বিষ খাবো ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
এসব শুনে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছি আর তোমার মা বাবা হচ্ছেনা?
-না আঙ্কেল! তারা যে বড্ড পাষাণ ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
মা বাবার নামে এসব বলেনা । তারা তোমার ভালোর জন্যই এসব করেছে । আমি নাহয় নিষেধ করবো, এর পরে কি অন্য কোনো প্রস্তাব তোমার জন্য আসবেনা?
-সবার কাছেই এভাবে যেতে থাকবো, যতক্ষণ না ওর সাথে আমাকে বিয়েটা দেয় ।
.
শফিউল আহম্মেদ এক গাল হেসে বললেন-
ভালোবাসা জিন্দাবাদ!
.
কটমট করে তার দিকে সাফিনা আহম্মেদ তাকাতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলেন তিনি ।
সাফিনা আহম্মেদ শান্ত স্বরে বললেন-
ঠিক আছে আমি বলবো, তোমাকে আমার স্বামীর পছন্দ হয়নি । তার বোনের মেয়েকেই পছন্দ তার । হবু শ্বশুড়ের পছন্দ না হলে বিয়ের পরে অনেক ঝামেলা হতে পারে ।
-মন্দ না আইডিয়া ।
.
পরশের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
যা পরশ । ওকে বাড়ি পৌঁছে দে ।
.
তাদের থামিয়ে শফিউল আহম্মেদ বললেন-
সত্যি কিন্তু এটায়, তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিলো। সুখে থেকো!
.
কোনো কথা না বলে মুখের কোণায় হাসি ফুটিয়ে বেরিয়ে গেলো নিশি ।
বাড়ির বাইরে আসতেই পরশ বললো-
দুঃখিত এবং ধন্যবাদ ।
-ধন্যবাদের কারণ বুঝেছি । দুঃখিত কেনো?
-ভুল বুঝেছিলাম আপনাকে ।
-ব্যাপার না ।
-আপনি কি সত্যি কেঁদেছেন?
-আপনার না পাওয়ার শোকে? মোটেও না ।
-তা নয় । তবে এসব অভিনয় ছিলো বোঝায় যাচ্ছিলোনা ।
-অভিনয় বলেই তো মুখের উপরে উড়না দিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ শব্দ করতে হয়েছে । চোখ দিয়ে পানি না পড়লে কান্না হবে কি করে?
-চোখ-মুখ ডেকে শব্দ করলেও কান্না হয়, আপনার থেকে শিখে নিলাম ।
-এসব ছাড়ুন । আপনার আর ছোঁয়ার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না ।
-অবশ্যই । আপনারও আপনার প্রেমিকের সাথে বিয়ে হলে…
-ওই হ্যালো? আমার প্রেমিক নেই ।
.
মুচকি হেসে পরশ বললো-
চলুন বাড়িতে পৌঁছে দিই আপনাকে ।
.
.
চুলোয় মাত্রই রান্না বসিয়েছে ছোঁয়া । হঠাৎ শুনতে পেলো তার মায়ের গলার আওয়াজ । কারো সাথে কথা বলছেন তিনি ।
এই সময়ে কে এলো দেখার জন্য ড্রয়িংরুমে এলো সে ।
নয়নতারা সোফার উপরে গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে ।
আর মা জিজ্ঞাসা করেই চলেছে-
কিছু কি হয়েছে? বলনা মা? এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
.
হতাশকণ্ঠে নয়নতারা বললো-
একটা খারাপ খবর আছে মা ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here