হবে কি আমার পর্ব -২৭

#হবে_কি_আমার(২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_27

সকালে মিষ্টি সূর্য রশ্মি জানালার নীল পর্দার ফাঁকফোকর ভেদ করে খাটে ঘুমিয়ে থাকা মানব মানবীর ওপর তীর্যকভাবে পড়ছে, তার কিরণ চোখে মুখে পড়তেই ঘুম ছুটে যায় মানবটির। সে কিয়ৎক্ষণ চোখ বুজিয়ে বক্ষবন্ধনী মানবীকে আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে, ক্ষনে হৃদয়ে ভালোলাগার স্রোত বয়ে যায়। আঁখি পল্লব খুলে সে মানবীটির মাথা অধর ছোঁয়ায়, তাকে আরও একবার জড়িয়ে ধরে ললাটে পরশ দিতে মানবী ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

__”অসভ্য লোক একটা। আমার ঘুমের সুযোগ নেওয়া হচ্ছে?”

মানবটি অর্থাৎ অরিন্দম খানিক চমকে গেল। অনু পিটপিট নেত্র মেললো, অরিন্দম নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
___”তুমি কখন উঠলে?”
অনু মুখশ্রীতে উচ্ছাস নিয়ে হেসে বলল,
___’অনেক আগে!’
অরিন্দম দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
__”তাহলে এমনভাবে শুয়ে ছিলে কেন?”
অনু তার থুতনি ধরে বলল,
__”এমনি,ভালো লাগছিল শুয়ে থাকতে। কিন্তু আগে তুমি বলো আমার ঘুমের সুযোগ নেওয়া হয় প্রতিদিন তাই-না?”

অরিন্দম হেসে বলল,
___”সে তো নেওয়া হয়! এত মিষ্টি বউ থাকলে মাথা ঠিক থাকে না কি। আচ্ছা সে সব ছাড়ো আগে বলো তুমি যে আমাকে আপনি থেকে তুমিতে এসেছ সেটা কি করে হলো? আমি এতদিনে তোমাকে দিয়ে তুমি তে কনভার্ট করাতে পারিনি। কিন্তু কাল রাতে বাঘিনী হয়ে তুমি বলে দিলে এত সহজে।”

অনু ইতস্তত হলো,সে কাল রাতে তুমি কি করে বলে ফেলছিল নিজেও আচার্য্য, কিন্তু সে এটা অনেক আগে থেকে বলতে চাইছিল কিন্তু পারেনি,অনু মিনমিনে গলায় বলল,
__’ চেষ্টা করছিলাম অনেক আগে থেকেই কাল রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। তুমি রাগ করছ?’

অরিন্দম অনুর বাম গালে হাত রেখে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
__’ রাগ কেন করবো পাগলি। খুশি হয়েছি বুঝেছ।

__”তুমি রাগ করলেও আমার কি? আমার ইচ্ছা, আমি আমার বরবাবুকে তুমি বলতেই পারি।আমার বর,আমার ইচ্ছা!”
অরিন্দম চোখ ছোট ছোট করে বলল,
__’তাহলে রাগ করেছি জিজ্ঞাসা করেছো কেন?’
অনু হিহি করে হেসে বলল,
___’আমার ইচ্ছে!”

অরিন্দম উঠে বসে বলল,
__ফ্রেশ হয়ে নাও! আজ এক জায়গায় নিয়ে যাব তোমাকে।
অনু উঠে বলল,”কোথায় নিয়ে যাবে?”

__’আমার এক ফ্রেন্ডে সৌরভ তার বোনের আজ বিয়ে! আমরা সেখানেই যাব। আমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসে একবার ওর সাথে দেখা করে আসি, তুমি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নিও, আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব!’
অনু চিল্লিয়ে বলল,
__’কক্ষনো না, একদম না, কিছুতেই না। তুমি একা যাবে না!’

অরিন্দম বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সে এমন কি বলল যে অনু এত চিল্লিয়ে উঠলো। অনু খাট থেকে নিচে নেমে দাড়ালো, তার পা ব্যথা অনেকটাই কমেছে সে ভীত গলায় বলল,
__”তুমি আজ ও এমন মিথ্যা বলে যাচ্ছ আর আসবে না। আমি তোমাকে যেতে দেব না। বন্ধু পেলে তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি জানি।”

অরিন্দম স্মিত হেসে বলল,
__”তোমাকে কাল রাতে বললাম না, যে কি কারণে সারাদিন বাড়ি আসিনি। কিন্তু আজ এমন কিছুই হবে না। আমি তোমাকে একটু পরে নিয়ে যাবো। তাছাড়া কাকিয়া ও যাবে ওখানে।”

অনু’র চোখ ছলছল করে ওঠে,সে এখানে কাউকে চেনে না আর অরিন্দম তাকে বারবার একা ফেলে চলে যাচ্ছে। সে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
__’তুমি আমার থেকে দূরে কেন থাকতে চাইছ এখানে এসে? আমার ভয় করছে তো? দেখবে আমি যখন তোমার সাথে এমন করবো তখন কেমন খারাপ লাগে, কত কষ্ট হয়। আমি ও যখন তোমাকে ভুলে যাব তখন বুঝবে আমার কষ্ট।”

অরিন্দম চমকে উঠল। অনু তাকে ভুলে যাবে শুনেই হাত পা শিথিল হয়ে এল, বক্ষপিঞ্জরে কেমন ব্যাথা শুরু হলো। সে দৌড়ে এসে অনুকে শক্ত বন্ধনীতে আবদ্ধ করে নিল। অনু হতভম্ব হলো অরিন্দমের কাজে, সে কি বলেছে বোঝার চেষ্টা করল। অরিন্দম তাকে জড়িয়ে ধরে ভীত গলায় বলল,
___”তুমি আমাকে ভুলতে পারো না! কিছুতেই না!”

অনু হেসে দিল,সে অরিন্দমের পিঠে হাত রেখে বলল,
__’ তুমি কাছে থাকলে, আমাকে পর করে না দিলে, আমায় ভালোবাসলে, কখনো ভুলবো না বরবাবু। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।’

_____

সন্ধ্যা নেমেছে ক্ষনিক আগে অনু রেডি হচ্ছে বিয়ে বাড়ীতে যাবে বলে। অরিন্দম ও রেডি হচ্ছে, কাকিয়া আগেই চলে গিয়েছেন,অরিন্দম জানে অনুর লেট হবে তাই সে কাকিয়া কে পাঠিয়ে দিয়েছে, অবশ্য সে ও একটু আগেই সৌরভ দের বাড়ি থেকে ফিরেছে অনু তাকে নিজে থেকে যেতে বলেছিল। অরিন্দম অবাক হয়েছিল পরে বুঝল অনুকে চন্দ্রানী দেবী ওখানে হলুদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চান। তাই অনু তাকে একা যেতে দিয়েছিল, মেয়েটার পাগলামি দেখে অরিন্দমের কখনো বিরক্তি লাগে না বা রাগ হয় না। শুধু ভয় হয় তাকে নিয়ে। তার জন্য পাগল মেয়েটাকে হারানোর ভয়।

অনু লাল রঙের শাড়ী পরে সুন্দর করে খোঁপা করেছে,সে চেষ্টা করে ও খোঁপায় ফুল লাগতে পারছে না তাই সে হাল ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল, অরিন্দম ঘড়ি পরছে তা দেখে অনু ঘারত্যাড়া মনোভাব নিয়ে বলল,
__”আমি কি পুরোনো বউ হয়ে গিয়েছি? কেউ কি দেখতে পাচ্ছে না আমি ফুলটা দিতে পারছিনা। বেশ তো একজন বিয়ের আগে বলেছিল সে যত্ন করে আমার চুলে বেলি ফুলের মালা দিয়ে দেবে। কোথায় গেলে তার প্রমিস?”

অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে অনুর কথা শ্রবন করে তাকালো। সে তো অনুকে হেল্প করতে চেয়েছিল কিন্তু তখন তো তাকে বলল তার হেল্প লাগবে না। তাহলে এখন এমন করে তাকে ইন্সাল্ট করছে কেন? এ মেয়ে কে নিয়ে সে পারবে না। মাঝেমাঝে ভাবে নারী চরিত্র বোঝা বড় জটিল,সে যখন ভাবে বুঝতে পেরেছে তখনই সে ভুল হয়। জটিল মহা জটিল। অরিন্দম অনু পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনুর হাত থেকে ফুল টা নিয়ে খোঁপায় লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
__”তোমাকে বোঝা জটিল। তবুও বলছি কিছু কাজ আমার জন্য রেখে দিও। আমি প্রমিস কখনো ব্রেক করিনা। আমি ঘড়ি পড়েই আসছিলাম, তোমার কাছে বউ!”

অনু মুচকি হাসে বলে,, “জটিল না একটু বোঝার চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবে।” অরিন্দম আর কথা বাড়ালো না। অনুর খোঁপায় ফুল দিয়ে অনুকে নিজের দিকে করলো। অনু ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,
___”আমার চোখে কাজল দেওয়া হয়নি,ছাড়ো!”

অরিন্দম এক পা গিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে কাজল নিয়ে অনু নিকট দাঁড়াল। অনুর তা দেখে খুশিতে চোখমুখ চিকচিক করে উঠে, সে উচ্ছাস নিয়ে বলল,
___”বরবাবু তুমি আমাকে সাজিয়ে দেবে?”

অরিন্দম হেসে বলল,
__’এখন থেকে তোমাকে সাজানোর দায়িত্ব আমার!’

অরিন্দম অনুর বড়বড় চোখে সুন্দর করে কাজল দিয়ে দিল অতঃপর সে টিপের পাতা থেকে ছোট্ট লাল টিপ কপালে দিয়ে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে দেখল প্রতিদিনের থেকে তার বউকে একটু বেশি সুন্দরী লাগছে। লাল শাড়ী, সিঁথিতে সিঁদুর,কপালে লাল টিপ আর এত সাজে অপরূপা দেখাচ্ছে তাকে। অরিন্দম আঙ্গুলে কাজল নিয়ে অনুর কানের পাশে দিয়ে বলল,

__”তোমাকে নিয়ে যেতে ভয় করছে! যা ভয়ঙ্কর সুন্দরী লাগছে তোমায়, লোকের খারাপ নজর না লেগে যায়!”
কথাটা শুনে অনু খিলখিল করে হেসে বললো,
__”বরবাবু তুমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করো না-কি?”
অরিন্দম অনুর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
___’করি না! কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে এসব কথা মেনে চলতে রাজি!’

অনু অরিন্দমের জাম রঙের পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
___”তোমাকে ও হ্যান্ডসাম লাগছে! তোমার ও কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে, না হয় শাকচুন্নিদের তোমার উপর নজর পড়ে যাবে!” দাড়াও… কথাটা বলে অনু অরিন্দমের সামনের যেটুকু অংশ বোতাম খোলা দেখা যাচ্ছে সেখানে একটা চুমু দিয়ে একটা কামড় বসিয়ে সরে এলো। অরিন্দম হঠাৎ এমন লাভ বাইটে হতভম্ব হয়ে রইল। মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো সে। অনু তা দেখে হেসে বলল,

___”তোমার দিকে যে মেয়ে নজর দেবে, সে নিশ্চয়ই তোমাকে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখবে। তখন এই লাভ বাইট দেখে সে আর আসবেনা বুঝেছ? সোনা!”

অরিন্দম হা হয়ে রইল অনুর কথায়। মেয়েটার মাথায় এত বুদ্ধি, সে একে রাখবে কোথায়?

#চলবে

কেমন হয়েছে জানাবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here