হবে কি আমার পর্ব -৩৩ ও শেষ পর্ব

#হবে_কি_আমার (২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব__33(অন্তিম পর্ব)

নিকষ কালো আঁধারির ছেয়ে আছে প্রকৃতির কোল জুড়ে, অন্ধকার রাত্রিতে বিশাল আকাশে একফালি চাঁদের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, তার থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে জ্বলজ্বলে একটিমাত্র তারা। নিচে ভূমিষ্ট গাছগাছালির ডালে পাতায় সাদা বরফের স্তুপ দেখা যাচ্ছে, চারিদিকে শুধু সাদা বরফের অবস্থান বর্তমান,আর হবে নাই বা কেন বরফের একটি সুবিশাল জায়গায় তো মানব মানবী দৃষ্টি আকর্ষণ করছে,তারা তো এই সুন্দর মোহনীয় পরিবেশ উপভোগ করতে এসেছে সুদূর কলকাতা থেকে কাশ্মীরের ‘গুলমারকে’।

হ্যাঁ অরিন্দম অনুকে কাশ্মীরে নিয়ে এসেছে অনুর মন মতো জায়গায়,সে হানিমুন হানিমুন করে তাকে পাগল করছিল, অরিন্দম অফিসে ছুটি নিয়ে হানিমুনে এই সুন্দর মনমুগ্ধকর বরফে ঢাকা শহরে এসেছে। আর এসে থেকে অনুর খুশির সীমা নেই,সে লম্বা ঝিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্ক ঘুরে এখন বরফে ঢাকা গুলমার’কে এসেছে। ওরা দুজন এসেছে আজ দুদিন হলো। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এখন তারা বরফ বিলাস করছে।

অনু বরফ নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত কখনো বরফ হাতের মুঠোয় নিয়ে অরিন্দমের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে, তো কখনো সে নিজের মধ্যে ফেলে হু হু করে কাঁপছে,পরনে তার সুন্দর কালো রঙের অরিন্দমের দেওয়া শাড়ী! যেটা অনু তনুশ্রীর বিয়ের সময় কিনতে চেয়েছিল কিন্তু অলকা দেবী রাগারাগি করেছিলেন,আজ অরিন্দম সেটা অনুকে দিতে অনু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ! অরিন্দম তা দেখে নিজের প্রিয়তমার দুগালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলেছিল, ‘তুমি কিছু চাইবে আর সেটা পাবে না। এমন কখনো হবে না টিয়াপাখি, যতক্ষণ আমি আছি দেরিতে হলেও তোমার সাধ অপূর্ণ থাকবে না।’ অনুর খুশিতে চোখ চিকচিক করে ওঠে, অরিন্দম তাকে বক্ষবন্ধনী করে রয় কিয়ৎক্ষণ। সে শাড়ীর ওপর দিয়ে কালো রঙের সোয়েটার পরেছে, মাথায় উলের টুপি, তার খুশি সীমাছাড়া, বাঁধ ভাঙা। বরফ ছুঁড়ছে আর খিলখিল করে হেসে মাতাচ্ছে চারিপাশ, রাত প্রায় একটা বাজে তাদের থেকে দুরে একজোড়া দম্পতি তাদের একান্ত কাজে ব্যস্ত,অনু সেদিক পানে চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল, অরিন্দম ততক্ষণে তার থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার পানে চেয়ে। অনু তা দেখে দুপুরে দেওয়া অরিন্দমের কিছু ভালোবাসার স্পর্শে মনে করে ক্ষীণ লাজুক হাসলো, অরিন্দম তাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকল। অনু বরফে বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যেতে লাগল তবুও যেনো পথ শেষ হয় না, একে তো শাড়ি পরেছে তার ওপর ঠান্ডায় হাত পা এবার জমে আসছে, অরিন্দম তা দেখে এগিয়ে এসে তার হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসলো বরফ বিহীন জায়গায়। কিছু পথ অতিক্রম করে অনু অবাক হলো আশপাশ দেখে,রিসোর্ট এইখান থেকে তাদের বরাদ্দ করা রুম সোজাসুজি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সে কাল রাতে ও এদিকে আসেনি আর আজ সারাটা দিন ও না। আর এইদিকে নো এন্ট্রি ছিল, কিন্তু এখন এই জায়গাটা কত সুন্দর মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করা হয়েছে,মাথার ওপর ঝাড়বাতি টা কি সুন্দর লালচে আভা ছড়াচ্ছে, অনু চারিপাশে চোখ বুলিয়ে সামনে অরিন্দম কে দেখে আর ও অবাক হলো, অরিন্দম তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। অনু বিষ্ময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল। সে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে বোঝার আগেই অরিন্দম তার বাম হাত ধরে, হাতের উল্টো পিঠে অধর ছোঁয়াল,অনু পিটপিট করে তাকালো, অরিন্দম হালকা হেসে বলল,

“বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না? আমার কাছ থেকে এমন কিছু হয়তো তুমি এক্সপেক্ট করোনি। আমি নিজেও ভাবিনি কখনও আমি এমন ফিল্মি স্টাইলে বসবো কিন্তু দেখ, আমাকে। আমি সেই যে তোমাকে বারংবার ফিরিয়ে দিতো তোমাকে অকারনেই কাঁদাতো কিন্তু দেখ এখন, সেই আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত আমার চলে না,সেই আমি এখন তোমাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা না ও করতে পারি না, সেই আমি শুধু তোমার অস্তিত্বে নিজের অস্তিত্ব পাই, সেই আমি যে তোমাকে ঘিরে বাঁচতে চায়, তোমাতেই মরতে চায়,দেখ তুমি কতটা আমাকে বদলে দিয়েছ, আমার সবটাই তোমাতে মিশিয়ে নিয়েছ,এত ও কেউ কি করে মায়াবী হতে পারে, বলো-তো বউ?

অনু খুশিতে কেঁদে দিল,এত খুশি কেন হচ্ছে তার,এত সুখী কেন নিজেকে মনে হচ্ছে তার,এত সুখীও কেউ হয় বুঝি।

অরিন্দম তার অনামিকা আঙ্গুলে হার্ট সেফের ভিতরে “A” লেখা রিং গলিয়ে দিয়ে বলল,
__’কতটা ভালবাসি জানি না! শুধু বলবো ভালোবাসি তোমাকে টিয়াপাখি!

অনু হাসতে হাসতে কেঁদে দিল অরিন্দম তাকে ‘ভালোবাসি’এই শব্দ টা এতদিন বলেনি! সে বারবার বলত যেনো একবার তাকে সুন্দর করে প্রোপোজ করতে, অরিন্দম বারংবার নাকচ করে বলত, ভালোবাস’লে তা মুখে প্রকাশ করতেই হয় নাকি? আমার না বলা কথা তুমি বোঝো না। অনু বলত শুধু ভালোবাসা প্রকাশ করলেই হয় না মুখে ও তা মাঝেমাঝে ব্যাক্ত করতে হয় বরবাবু। অরিন্দম হেসে বলতো, আমার অব্যাক্ত কিছু কথা তুমি তবুও বুঝে নাও বউ। অনু সে কথার ওপর আর কিছু বলতে পারতো না, সত্যিই তো সে মুখে না বললেও ও জানত যে, অরিন্দমের জীবনে কতটা জুড়ে আছে সে।

অরিন্দম উঠে দাঁড়ালো। অনু দুহাতে তার গলা জড়িয়ে কেঁদে উঠলো, অরিন্দম হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
__’এই তোমার কাঁদার জন্যই কি এত কিছু প্লান করলাম, আমার সব প্লান ফ্লপ।’

অনু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_’ কিচ্ছু ফ্লপ হয়নি বরবাবু,সব সুপার ডুপার হিট!’

অরিন্দম হাসলো। অনু গলা ছেড়ে তার মুখমন্ডলে সর্বত্র অধর ছুঁয়ে বলল,”আই লাভ ইউ মোর”

অরিন্দম বিস্তর হেসে তাকে দুহাতে শক্ত করে বক্ষবন্ধনী করলো।

____

রুমে এসে আরেক দফা বিমূর্ত হলো অনু, রুমের কোনায় কোনায় মোমবাতি আর গোলাপের পাপড়ি দ্বারা সজ্জিত সমস্ত কিছু, সে কিয়ৎক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইল। অরিন্দম অনুকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

” কি, কেমন লাগছে বললে না যে?”

অনু উচ্ছাসিত হেসে বলল,
” দারুন,দারুন,দারুন, এত কিছু কখন করলে?”

“তুমি যখন রেস্টুরেন্ট বসে ওই ছোট ছোট বেবিদের সাথে খেতে আর গল্প করতে ব্যস্ত ছিলে!”

” ওহ্! ”

অনু ভিতরে গিয়ে সোফায় সোয়েটারটা খুলে ছুঁড়ে সোজা জানালার পাশে চলে গেল,এখান থেকে বাহিরে বরফ দেখা যায়, তুষারপাতের ফলে বরফ উড়ে আসছে সেদিকে,মেয়েটা বরফ পাগল হয়ে পরেছে, অরিন্দম তা দেখে হাসলো। অনু হাত বাড়িয়ে ডান হাতে বরফের শীতল স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। দিনদুনিয়া সে আবার ভুলেছে। অরিন্দম তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে সে যেন বরফের থেকে অরিন্দমের স্পর্শে কেঁপে উঠলো। ডান হাত বাহির থেকে সরিয়ে অরিন্দমের হাতের বাঁধনে রাখল। ক্ষনে হৃদয়ে ভালোলাগা প্রশান্তি বয়ে যায়। অরিন্দম আরও নিবিড় ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে অধর ছোঁয়াল। অনু সে ছোঁয়ায় ঘাড় কাত করে অরিন্দমের দিকে চেয়ে বুকের ধুকপুকানি আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। অরিন্দম তার কানে কানে বলল,
” খুব শীত করছে। তাই না?”

অনু বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ল। অরিন্দম তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আচকায় কোলে তুলে নিল। অনু পিলে চমকে উঠে অরিন্দমের গলা জড়িয়ে ধরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল, কিন্তু বেশিক্ষণ সে দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখতে পারল না। অরিন্দম দৃষ্টি আজ অন্য রকম যা সে হয়তো বুঝতে পারছে। তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

” বরবাবু..”

তার কথা সম্পূর্ণ করার আগেই অরিন্দম মোহিত কন্ঠে বলল,

” ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়াতে চাই তোমার সর্বাঙ্গে, আমি কি সে অনুমতি পাব বউ? বলো তুমি আজ “হবে কি আমার” ?

অরিন্দমের কন্ঠে স্বরে সে নিস্তেজ হয়ে এলো,কি বলবে সে, তার সবটাই অস্তিত্ব জুড়ে তো এই মানুষটার বসবাস,আর আজ আর একধাপ সে এগিয়ে চলবে, স্বামীর স্ত্রী সম্পর্কে আরও একটা পুর্নতা পাবে।

অরিন্দম অনুর দিকে চেয়ে রইল,অনু একপলক তার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলার, কিয়ৎক্ষণ নেত্রে নেত্রে একান্ত ব্যক্তিগত কথোপকথন হলো, হয়তো অরিন্দমের যা বোঝার সে বুঝে গেল, প্রাপ্তির একচিলতে হাসি দিয়ে সে ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল,অনু লজ্জায় কুঁকড়ে অরিন্দমের বক্ষে মিশে রইল। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, ভালোবাসায় ভরে গেল এক মধুচন্দ্রিমা রাত্রি।
_____

সময়টা সাঁঝের বেলা,হালকা আলোআঁধারি ছড়িয়েছে ধরনীতে, অরিন্দম অফিস থেকে ফিরে ওয়াশরুমে ঢুকেছে এক ঘন্টার ও বেশি। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে,অফিস থেকে ফিরে শাওয়ার নিয়ে তার পর বার হবে, সে দেড়ঘণ্টা পর ছাই রাঙা ট্রাউজার আর ব্লাক টি-শার্ট পরে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে এলো,কেউ নেই রুমে সে ছাড়া, ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ও ফিরে এলো। চুল ঠিক করতে ভালো লাগছে না তার। ঘাটের দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস ফেললো অরিন্দম। অতঃপর এগিয়ে গিয়ে চাদর টেনে টানটান করে দিয়ে পুতুল গুলো একপাশে গুছিয়ে রেখে ব্যালকনিতে গেল,টী-টেবিল থেকে কফির মগটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে ব্যালকনির ফ্লোরে তাকিয়েই আরও একবার হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নিচে বসে পড়ল, গড়াগড়ি খাওয়া আচারের বোয়াম হাতে তুলে যথা স্থানে রেখে,এটো বাটি হাতে তুলতেই বাহির থেকে কান্নার শব্দে চমকে উঠে সে। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তার চার বছরের ছোট মেয়ে ‘অহি’ কাঁদতে কাঁদতে ওপরে আসছে আর পাপা পাপা করছে! অরিন্দম দৌড়ে গিয়ে অহি কে কোলে তুলে ব্যস্ত স্বরে বলল,

“কি হয়েছে মা, কাঁদছ কেন?”

অহি কাঁদতে কাঁদতে ঠোঁট উল্টে বলল,

“আমার ন নৌকা জলে ডুবে গেছে সবত!”

অরিন্দম তার চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,

“আমি আবার নৌকা করে দেবো, কাঁদে না!’

“আমার ওগুলোই তাই!”

অরিন্দম তাকে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো,মেয়েটা দেখতে যেমন মায়ের মতো হয়েছে, স্বভাব ও মায়ের মতো, শুধু অরিন্দমের মতো তার মেয়ের ঠোঁট লাল হয়েছে,আর কিছুই না! সে ও মায়ের মতো জেদি। অহি কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“মাম্মা আমাকে নৌকা দেয়নি, আমার ওইটাই তাই, পাপা তুমি এতে দাত!”

অরিন্দম বাড়ির বাহিরে বের হয়ে দেখল অনু সুইমিং পুল এর কাছে বসে আছে। অহি আঙুল দেখিয়ে বললো, “দেখো পাপা, মাম্মা নৌকো ভাসাচ্ছে আমাকে দেতনি!”

অরিন্দম ঠোঁট উল্টে মেয়ের দিকে তাকালো, সারাদিন মা আর মেয়ে বদমাইশি করবে আর সে অফিস থেকে ফিরলে দুজন একসাথে নালিশ করবে, বেচারা কার পক্ষে কথা বলবে ভেবে পায় না। মেয়ের সাইড হলে মা কেঁদে ভাসায়, অগত্যা অরিন্দম অনু পক্ষে হয়ে অহি কে সামান্য বকা দিয়ে কোলে নিয়ে ছাঁদে চলে যায়,ছোট মেয়ে বকা খেয়ে ও পাপার গলা জড়িয়ে ঠোঁট উল্টে থাকে।

অতঃপর কিয়ৎক্ষণ পার হয়ে গেলে মা আর মেয়ে একেঅপর কে আদর করে ভরিয়ে দেয় যখন অরিন্দম তখন অনাথ হয়ে তাদের খুনশুটি দেখে, তাকে দুজন পাত্তা ও দেয় না তাকে।
আবার কখনো কখনো তিনজন মিলে বাড়ি মাতিয়ে রাখে, তাদের বিয়ে, তিনদিন আগে ছ’বছর পূর্ন হলো। তিনদিন আগে ছোটখাটো পার্টি হয়েছিল বাড়িতেই, তনুশ্রী মৃন্ময় আর তাদের পাঁচ বছরে ছেলে ‘ তনয়’ এসেছিল, সাথে অনুরাগ তিশা তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে তিন বছরের বেশি হলো, অনুরাগ এখন নিজেদের ব্যবসার হাল ধরেছে।
___
অহি কান্না থামিয়ে অরিন্দমের কোল থেকে নামতে লাগলো, অরিন্দম তা দেখে অহি কে নামিয়ে দিতে সে অনু দিকে দৌড় দেয়, অরিন্দম ও যায় সেদিকে,অহি গিয়ে অনু পাশে রাখা কাগজের নৌকা হাতে তুলে নিতেই অনু খপ করে অহির হাত ধরে বলল,

“তুই আবার আমার কাছ থেকে নিচ্ছি কেন?”

অহি আবার ঠোঁট উল্টে কেঁদে অরিন্দমের দিকে তাকায়, অরিন্দম পুলের সাইডে অনু পাশে বসে বলল,

“বউ বকছো কেন আমার মা-টাকে? একটা নিচ্ছে তো কি হয়েছে, তোমারই তো মেয়ে!”

অনু চোখ রাঙিয়ে বলল,

“আমার মেয়ে তাতে কি? ওকে আমি পাঁচটা নৌকা করে দিয়েছি, আমি তিনটে নিয়েছি,ও সব গুলোই ডুবিয়ে দিলো, আমার একটাও কথা শুনলো না।”

অহি ততক্ষণে অনু অবশিষ্ট শেষ নৌকা আবার পুলের জলে ভাসিয়ে দিয়েছে,অনু তা দেখে চোখ লাল করে মেয়ের দিকে তাকালো, অরিন্দম পুলে ভাসা তিনটি নৌকার দিকে তাকালো,অহি হেসে বলল,
‘ইয়ে কি মতা আমার নৌতা ভাততে!’

অহি’র তোতলানো কথা শুনে অনু হেসে দিল। অনু দুহাত বাড়াতে অহি তাকে এসে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে আবার দৌড়ে খেলতে গেল। অনু হেসে অরিন্দমের দিকে তাকালো, অরিন্দম তখন ওর পানে চেয়ে ছিল,অনু ডান হাত বাড়িয়ে অরিন্দমের অগোছালো চুল আরও উলোটপালট করে দিয়ে বলল,
“ইস্ তোমার বয়স বাড়ছে না কমছে? তা ধরা দায়। দিন দিন আরও হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছ, আমার ভাল্লাগে না তোমাকে একা ছাড়তে!”

অরিন্দম শব্দ করে হেসে বলল,

“যতই হ্যান্ডসাম হয়ে যাই না কেন বউ। এই পাগল হ্যান্ডসাম পুরুষ শুধু তোমারি!”

“আলবাদ আমারি থাকবে,অন্য দিকে তাকিয়ে দেখুক না! গর্দান উড়িয়ে দেবো!”

অরিন্দম ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“তাই না কি?”

অনু তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“হ্যাঁ। অবশ্যই!”

অরিন্দম অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে পিছনে তাকিয়ে দেখল, অহি অন্য দিকে ঘুরে খেলছে, অরিন্দম তা দেখে অনু দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“বউ রোমান্টিক ওয়েদার, একটা কিসি দাও না!”

অনু হেসে বলল
‘ওকে। ক্লোস ইউর আইস!’

অরিন্দম খুশিতে আত্মহারা হলো,অনু এখন করে খুব কিপটে হয়ে গিয়েছে রোমান্স এর কথা ভুলেও মুখে আনে না, আগের মতো। অরিন্দম হেসে চোখ বন্ধ করতেই অনু শয়তানি হাসি দিয়ে অরিন্দমের নাকে জোরে কামড় দিয়ে ভো দৌড় দিল। অরিন্দম ব্যাথায় আর্তনাদ করে তাকিয়ে দেখল অনু বাগানের দিকে দৌড় দিয়েছে আর হেসে চলেছে, অরিন্দম নাক ধরে উঠে দাঁড়িয়ে অনু পিছনে দৌড়ে গিয়ে তাকে পিছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে গোল গোল ঘুরতে লাগলো। অনু উচ্ছাসিত হাসি দিয়ে লাফালাফি করতে লাগলো, অরিন্দম ও হেসে দিল। অহি তাদের হাসির শব্দে পিছন তাকিয়ে অনুকে অরিন্দম নিয়ে ঘুরপাক খেতে দেখে দু’হাতে তালি দিয়ে খিলখিল করে হেসে বলল,

“ইয়েএ কি মতা আলুরদম লুচি কে কোলে নিয়েতে।”

অনু অরিন্দম তা শুনে হেসে দিল,অনু একবার অহির সামনে অরিন্দমের ওপর রেগে গিয়ে তাকে আলুরদম বলে ডেকেছিল, অরিন্দম তখন মজার ছলে অনুকে বলেছিল, ‘আমি আলুরদম তুমি লুচি।’ অহি সেটাকেই মনে রেখেছে।

অরিন্দম অনুকে নামিয়ে দিতে অনু দৌড়ে গিয়ে অহি কে কোলে তুলে নেয়,অহি তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,”আই লাভত ইউ মাম্মা।” অনু হেসে তার দুগালে চুমু দিয়ে বলল,”আই লাভ ইউ টু মাই বেবি।” অরিন্দম এগিয়ে গিয়ে অহিকে নিজের কোলে নিয়ে অনু কে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,’আই লাভ ইউ বর্থ।” অহি হেসে অরিন্দমের গালে চুমু দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো,অনু তার বক্ষে মিশে যেতেই,দুই মা মেয়ে মিলে একসাথে বলল,

“ভালোবাসি আলুরদম!”

অরিন্দম প্রাপ্তির হাসি দিয়ে তাদের নিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতে যেতে বলল,”ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে জলে স্থলে বাজাই বাঁশি। ”

অহি অনু দুজনেই অরিন্দম কে সুরসুরি দিতে দিতে শব্দ করে হাসতে লাগলো। সাথে অরিন্দম ও হেসে উঠলো। তিনজনেই প্রান খুলে হেসে মাতাতে লাগলো সর্বত্র। পিছনে পুলের জলে ভাসমান নৌকা হাওয়ার তালে দুলতে লাগলো, মুক্ত বাতাস বয়ে গেলো খুশি হয়ে। তাদের খুশি এ জন্মে শেষ হওয়ার না। তাদের হাসির শব্দে মুখরিত হলো সাঁঝের বেলার এই সুন্দর প্রকৃতি! বাতাসেও যেন ছড়ালো সুখের গন্ধ। ভালোবাসায় ভরে গেলো তাদের ছোট সুখী পরিবার।
তাদের খুশি এ জন্মে শেষ হওয়ার নয়। ভালো থাকুক তারা একে অপরকে ঘিরে ভালোবাসায় ভরে উঠুক অনুরিন্দমের সাথে অহি’র সুন্দর জীবন। তাদের জন্য রইল অফুরন্ত ভালবাসা।

___ সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here