#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৬(মহাধামাকা পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
-“সব সত্য জানার জন্য আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে।”
নিহানের প্রস্তাবটা শুনে নিলা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“তাহলে তাই করবো।”
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
নিলার আগে একটি ভিডিও ম্যাসেজ আছে।যেখানে দেখা যায় নিহান ইরিনার মাথায় বন্দু*ক ধরে বলছে,
-“কেন ঠকালে তুমি আমায়? আমাকে ঠকানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।”
তারপর শুধু একটা গু*লির শব্দ শোনা যায়।ভিডিওটা দেখে নিলা কাঁদতে থাকে।তারমানে নিহান চৌধুরীই ইরিনার খু*নী।নিলা আর একমুহূর্ত দেরি না করে নিহানের কাছে চলে যায়।নিহানকে গিয়েই ঠাস করে একটা থা*প্পড় মা*রে।নিহান রেগে গিয়ে নিলাকেও একটা থা*প্পড় মারে।যার ফলে নিলার ফোনটা পানিতে পড়ে যায়।নিলা তখন নিহানের কলার ধরে বলে,
-“আপনি যে ইরিনাকে গু*লি করেছেন সেই প্রমাণ আমার কাছে ছিল।আমার ফোনে একটা ভিডিও ছিল।আপনি আমার ফোন ভেঙে কোন লাভ পাবেন না।আমি আবার নতুন প্রমাণ নিয়ে আসবো।”
তখনই নিহান নিলাকে বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়ে বসে।
বর্তমানে,
কাজী ডাকা হয়েছে।নিলা আর নিহান বসে আছে।নিলার মনে আজ অনেক প্রশ্ন ঘুরছে।সেইসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বিয়েটা করা জরুরি।নিলা যে ইরিনার বৃদ্ধা মাকে মৃত্যুর আগে কথা দিয়েছিল ইরিনাকে খুঁজে বের করবে আর যদি ইরিনার কোন ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে ইরিনার যে ক্ষতি করেছে তাকে শাস্তি দেবে।সেই কথা রাখার জন্য নিলা প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে দেবে।সেখানে এই বিয়ে তো কিছুই না।নিহান আকাশকে ফোন করে ডাকে বিয়ের সাক্ষী হওয়ার জন্য।আকাশ তো প্রথমে অনেক খুশি হয় নিহানের বিয়ের খবর শুনে।
কিন্তু যখন এসে দেখে পাত্রী আর কেউ নয় নিলা তখন তার সব খুশি মিলিয়ে যায়।আকাশের যেন সবটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না।আকাশ বাকরুদ্ধ হয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নীরবতা ভেঙে নিলাকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নাকি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছ?”
নিলা মুচকি হেসে বলে,
-“আমি নিজের ইচ্ছেতেই সব করছি।”
আকাশ আর কিছু বলে না।তার মনের না বলা অনুভূতিগুলো হয়তো আজীবন মনেই গোপনে আগলে রাখতে হবে।কিন্তু একটা কথা আকাশ কিছুতেই বুঝতে পারছে না।নিহান হঠাৎ করে নিলাকে বিয়ে করতে চাইছে কেন?
নিলাকে প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই।কারণ আকাশ ভালো করেই জানে নিলা কিছু বলবে না।তাই সে নিহানকে গিয়ে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে।নিহানও বলে,
-“আমরা দুজন একে অপরকে পছন্দ করেই বিয়ে করছি।আর কিছুই না।ঐ তো কাজী সাহেব এসে গেছেন।আসুন ভেতরে আসুন।”
কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করেন।আকাশ হয় এই বিয়ের সাক্ষী।সাথে নিহানের আরো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ও কলিগরাও এসেছিল।নিলার দিকে তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে দু ফোটা চোখের জল ফেলে আকাশ।সে যে নিলাকে পছন্দ করতো।আর আজ কিনা তাকে নিলারই বিয়ের সাক্ষী হতে হচ্ছে।ভাগ্য সত্যিই বড় নিষ্ঠুর।
কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে নিহান স্বাভাবিক ভাবে কবুল বলে দেয়।কিন্তু নিলা বেশ থেমে থেকে অনেকক্ষণ চুপ থেকে তারপর কবুল বলে।
কাজী সাহেব বলেন,
-“বিয়ে পড়ানো শেষ।”
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মিষ্টি বিলানো শুরু করে।
_______________
রুশার চোখ খুলতেই সে নিজেকে একটি বদ্ধ ঘরে আবিষ্কার করে।রুশার মনে পড়ে হসপিটালের বাইরে আসতেই কেউ একজন তাকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে আসে।রুশা চোখ খুলে “help, help” বলে চিৎকার করতে থাকে।
মেঘা তখন তার সামনে এসে বলে,
-“এই মেয়ে এত চিল্লাচ্ছিস কেন? তখন তো আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলি।এখন তার শাস্তি ভোগ কর।”
রুশা মেঘার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে 😏 বলে,
-“তুমি কি আমাকে শাস্তি দেবে।আমি দেখো আগে তোমার সাথে কি করি।”
-“কি করবি তুই?”
রুশা বলে,
-“আমি আগে থেকেই জানতাম তুমি আমার ক্ষতি করতে পারো তাই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছিলাম এই ব্যাপারে।তারা এসে পড়লো বলে।”
পুলিশের কথা শুনে মেঘা ভয় পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়।কিছুক্ষণ পর পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে ওঠে।রুশা তো এতে অবাক হয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
-“আমি তো পুলিশকে জানাই নি।এমনি ওকে ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যা বললাম তাহলে পুলিশ এলো কোথা থেকে?”
এদিকে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনে মেঘার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।তখনই পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।সাথে সাথে রোহানও ভেতরে এসে বলে,
-“আমি আগেই এটা সন্দেহ করেছিলাম।মেঘা তুমি আর কোথাও পালাতে পারবে না।মিরাজ স্যার আমি আপনাকে বলেছিলাম না আপনার মেয়ে এসবের সাথে যুক্ত।এখন নিজেই তো প্রমাণ পেলেন।”
মিরাজ খান দৌড়ে এসে মেঘার গালে একটা থা*প্পড় মে*রে বলেন,
-“তোমাকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? তুমি কেন ডক্টর আহানের সাথে মিলে নকল ওষুধের ব্যবসা করেছ?”
মিরাজ খানের কথা শুনে রুশা অবাক হয়ে যায়।সে জিজ্ঞাসা করে,
-“মানে? এসব কি বলছেন আপনারা?”
রোহান বলতে শুরু করে,
-“পুলিশ ডক্টর আহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে তার এইসব অন্যায় কাজের ভাগিদার মেঘা।এই কারণেই হসপিটালের প্রেসের লোক এসেছিল।আমি আগে থেকেই ওর উপর পুলিশ দিয়ে নজর রাখছিলাম।ইন্সপেক্টর এরেস্ট হার।”
পুলিশ মেঘাকে এরেস্ট করে নিয়ে যায়।মেঘা যাওয়ার সময় রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমায় আমি ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু আজ সব ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হলো।এতদিন আমার ভালোবাসা দেখেছ এখন ঘৃণা দেখবে।”
মেঘাকে নিয়ে যাওয়ার পর রোহান এসে রুশাকে বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো?”
-“জি, আমি একদম ঠিক আছি।”
-“চলো আমার সাথে।”
রুশা একবাক্যে রোহানের সাথে চলে যায়।আজকাল তার প্রতি ভালো লাগাটাও অনেক বেড়ে গেছে
___________
সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসল নিহান।নিহানের মা আঁখি বেগম তো এই দৃশ্য দেখে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।তিনি অনেকদিন থেকে নিহানকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করলেও সে বিয়ে করেনি।আর আজ একটা মেয়েকে বিয়ে কিরে এনে ঘিরে তুলেছে।তিনি নিহানকে বলেন,
-“তোর বাবা এখন বাইরে আছেন।আমাকে অন্তত জানাতে পারতি।এভাবে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি।”
-“জানানোর সময় বা পরিস্থিতি কোনটাই ছিল না আম্মু।”
-“আচ্ছা বিয়েটা যখন হয়েছে তখন তোর বউকে নিয়ে আয়।এই মেয়ে এসো।তোমার নাম কি?”
-“আমার নাম নিলা।”
-“বাহ বেশ সুন্দর নাম।তা তুমি কি করো?”
-“আমি বর্তমানে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছি।”
-“ও তোমার মা-বাবা কি এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানে?”
নিলা বলে,
-“আমার মা-বাবা কেউ নেই।বাবা অনেক আগেই মারা গেছে আর বাবা থেকেও নেই।আপন বলতে শুধু দাদী,আঙ্কেল আর একটা বোন আছে।”
-“তারা কিছু জানে না?”
-“না।”
-“তুমি কোন চিন্তা করোনা।নিহানের বাবাকে ফিরতে দাও তারপর আমরা সবাই মিলে ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দেব।”
নিলা একটা মিথ্যে হাসি দেয়।তার যে এসব ভালো লাগছিল না।নিহান নিলার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়।নিলা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বলে,
-“একদম আমায় স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।হাউ ডেয়ার ইউ?”
-“এখন আমি কিন্তু তোমার স্বামী।তাই আরো অনেক সাহস দেখাতি পারি।”
-“শুনুন বেশি বাজে কথা বলবেন না।আপনার সাথে বাজে কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই।সামনে আমার পরীক্ষা সেইজন্য পড়তে হবে।তাছাড়া অনেক রহস্যের সমাধানও করতে হবে।”
কথাটা বলে নিলা বাতরুমের দিকে যায় তখনই তার ফোনে কারো কল চলে আসে।নিলা ফোনটা নিয়ে দেখে রুদ্রর কল।কলটা রিসিভ করতেই রুদ্রর হাপানোর আওয়াজ শুনতে পায়।নিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছে আঙ্কেল তুমি এরকম হাপাচ্ছো কেন?”
-“নিলা কোথায় তুমি? তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিল।”
-“আমি একটু বাইরে আছি।কি বলবে বলো?”
-“মেঘলা মারা গেছে।”
(চলবে)#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
মেঘলার মৃত্যুর খবর পেয়ে নিলা স্তব্ধ হয়ে যায়।সেই ১২ বছর ধরে কত আশা নিয়ে আছে মেয়েটা যে একদিন নিজের মায়ের সাথে দেখা করবে।আর আজ তার সব ইচ্ছে মুহুর্তে ভেঙে গেল।নিলা কেঁদে কেঁদে রুদ্রকে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলছেন এসব আঙ্কেল? আম্মু কখন কিভাবে মারা গেল?”
-“তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসো। তারপর সব বলব।”
নিলা ফোন রেখেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নিহান আটকাতে গিয়েও আটকায় না।শুধু ভাবে কি এমন হলো যাতে নিলা এভাবে যাচ্ছে।নিহানও নিলার পেছনে যেতে লাগল।নিলা বাইরে এসে রাস্তায় পাগলের মতো ছুটতে থাকে।তখন নিহান এগিয়ে এসে বলে,
-“কি সমস্যা আপনার? মাঝরাস্তায় এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন?”
-“আপনি প্লিজ আমার পথ আটকাবেন না।আমায় যেতে হবে।””
-“কোথায় যাবেন বলুম।আমি আপনাকে পৌঁছে দেব।”
-“আমার বাড়িতে যাবো।আমার মা….”
নিলা কোন কথা না বলে কাঁদতে থাকে।নিহান নিলাকে বুকে জড়িয়ে শান্তনা দিতে থাকে।তারপর যত্ন করে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।
______________
-“এটা আমি কি শুনলাম আব্বু? মেঘাকে নাকি পুলিশ গ্রেফতার করেছে? তুমি কিছু করছো না কেন? এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কারণ কি?”
নিজের ছেলে আকাশের মুখে কথাটা শুনে মিরাজ খান বলেন,
-“বর্তমানে এই ইস্যুটা নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে।এখন কিছু করতে গেলে আমাদের নামও চলে আসবে।তাই অপেক্ষা কর।এসব বিষয় ধামাচাপা পড়লে আমি মেঘাকে বের করে আনব।নকল ওষুধের ব্যবসা গেছে তো কি হয়েছে নারী পা*চার তো চলছেই।”
আকাশ কিছুটা রেগে গিয়ে বলে,
-“তুমি নিজের ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে এতো উদাসীন কেন? মেঘাকে বের করতে পারছ না।এদিকে আমি যে কত করে বললাম আমি নিলাকে চাই তুমি আমার ইচ্ছেটাও পূরণ করতে পারলে না।”
-“আহ আকাশ একটু অপেক্ষা করো।আমি তো তোমাদের বাবা।তোমাদের সব ইচ্ছে পূরণ হবে।শুধু আমায় কিছু সময় দাও।দেখো আমি পুরো খেলাটাই উলটে দেব।আমি কিন্তু গভীর জলের মাছ।নিলয়ের সাথে আমিও তো নারী পাচারে যুক্ত ছিলাম।কিন্তু নিলয় নিজেও আমার ব্যাপারে কিছু জানত না।আমি এতটাই সচেতন ছিলাম।আমি ঠিকই ডাক্তারির আড়ালে এসব কাজ চালিয়ে গেছি।আর নিলয়ের মৃত্যুর পর যখন দেখলাম এই নিয়ে তোলপাড় চলছে তখন থেকে এই ব্যবসা বন্ধ করে নকল ওষুধের ব্যবসা শুরু করলাম।এখানেও ভালোই লাভ পেলাম।তারপর আবার অনেক বছর পর শুরু করলাম নারী পাচার।সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়েছি।আমি চাইনা এখন আর কোনকিছু এলোমেলো হোক।তাই বলছি অপেক্ষা করো।আমাকে একটু সময় দাও।”
_________
নিলা নিহানের গাড়িতে করে চলে আসে নিজের বাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়িতে যায়।রুদ্র,রুশা আর লতিফা বেগম সোফায় বসে ছিলেন।নিলাকে আসতে দেখে লতিফা বেগম দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
-“তোর মা আমাদের সবাইকে ধোকা দিল রে সবাইকে।”
নিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“মানে? কি বলছ এসব? মা ধোকা দিল মানে?”
রুদ্র বলতে থাকে,
-“মেঘলা আজ থেকে ১২ বছর আগেই মারা গেছে।কিন্তু আমরা কষ্ট পাবো জন্য জেলারের কাছে অনুরোধ করে বলে সবকিছু গোপন রাখতে।যতদূর জেনেছি যে মেঘলাকে যে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাই মেঘলার মাথায় অনেক সমস্যা হয়েছিল।ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন যেকোন সময় মেঘলার মৃত্যু হতে পারে।মেঘলা নিজের ইচ্ছেতেই এসব গোপন রেখেছে।আমাদের কাউকে জানায় নি।জেলে যাওয়ার ৩ মাসের মাথায় তার মৃত্যু হয়।কিন্তু মেঘলার মৃত্যুটা সে সবার কাছে গোপন রেখেছিল বিশেষ করে মেঘলার কাছে কারণ সে চায়নি মেঘলা ভেঙ্গে পড়ুক।জেলারও তার কথা শুনে এতদিন সব গোপন রেখেছে কারণ মৃত্যুর আগে এটাই মেঘলার শেষ ইচ্ছে ছিল।গতকাল জেলারের হার্ড এট্যাক হয়।মৃত্যুর আগে তিনি এইসব কথা জানিয়েছেন।সাথে এই চিঠিটা দিয়ে বলেছেন মেঘলা এটা মৃত্যুর আগে লিখে গিয়েছিল নিলার জন্য।”
নিলা চিঠিটা হাতে নিয়ে হু হু করে কান্না করতে থাকে।এতদিনের সব আশা সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।নিজের মায়ের উপর খুব অভিমান নিয়ে নিলা বলে,
-“কেন আম্মু কেন? এমন কিভাবে করতে পারলে তুমি? আমাকে কষ্ট দিতে চাওনি তাইনা? কিন্তু আজ দেখো আমার কত কষ্ট।তোমাকে হারানোর বেদনা আমি সহ্য করতে পারবো না আম্মু পারব না।”
নিলা চিঠিটা খুলে পড়তে থাকে।চিঠিতে লেখা,
প্রিয় নিলা,
-“মায়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে বুঝি? কত আশায় ছিলি মাকে জীবিত দেখবি।আবার মায়ের কাছে ফিরে আসবি কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হলো।হয়তো এই চিঠিটা তুই আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর হাতে পাবি।তখন আমি বেঁচে থাকব না।তোকে কিছু কথা জানানোর জন্য এই চিঠিটা লিখলাম।আমার বাকি দায়িত্ব তোকে পূরণ কররে হবে।তুই তো জানিস তোর বাবা একটা নারী পা*চারের সাথে যুক্ত ছিল।কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এই কাজে তার আরো একজন সহযোগী ছিল যে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।সে হয়তো আবার নিলয়ের এইসব অন্যায় কাজ চালিয়ে যাবে।তোর কাছে আমার আদেশ এটাই যে তুই ওই শয়*তানটাকে ধর।যাতে আর কোন মেয়ের জীবন নষ্ট না হয়।ভালো থাকিস মা।আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে থাকবে।
ইতি,
তোর মা।”
চিঠিটা পড়ে নিলা একইসাথে অবাক এবং হতবাক হয়।কি পড়ল সে এসব? নিলা হঠাৎ মাথায় কারো কোমল স্পর্শ অনুভব করে পেছনে ফিরে তাকায়।নিহানের মা আঁখি বেগম এসেছেন সাথে নিহানও।
আঁখি বেগম বলেন,
-“তোমাকে বাড়ি থেকে ওভাবে দৌড়ে আসতে দেখেই আমার সন্দেহ হয়।তাই তোমাদের পিছু নিয়ে চলে আসি।এসে জানলাম তোমার মা মারা গেছে।তুমি চিন্তা করোনা নিলা।এক মা নেই তো কি হয়েছে।আজ থেকে আমি তোমার মা।”
নিলা আঁখি বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।আঁখি বেগম সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আপনারা হয়তো জানেন না আমার ছিল নিহানের সাথে নিলার বিয়ে হয়েছে।ওরা নিজের ইচ্ছাতেই বিয়টা। করেছে।”
রুদ্র বলে,
-“এসব আপনি কি বলছেন? নিলা তুই আমাদের না জানিয়ে বিয়ে কিরে নিলি।”
লতিফা বেগমও তার সাথে তাল মিলিয়ে বলেন,
-“হ্যাঁ তাইতো।নিলা তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নি।আমাদের অন্তত একবার জানাতে পারতি।এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি।”
আঁখি বেগম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,
-“যা হওয়ার হয়ে গেছে।আমিও এই বিষয়ে কিছু জানতাম না।বিয়েটা যখন হয়ে গেছে এখন কি আর করার।একদিন আমরা সবাই মিলে অনুষ্ঠান করে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেই।”
রুদ্র বলে,
-“কথাটা ভুল বলেননি।চাচী আপনি কি বলেন?”
লতিফা বেগম চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
-“নিলা যদি বিয়েটা করতে চায়।আমি তাহলে আপত্তি করবোনা।”
রুশা এবার নিলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“তাহলে শেষপর্যন্ত নিহান চৌধুরীর বউই হলেন।আগে তো কত বলতি যে লোকটাকে তোর পছন্দ নয়।তলে তলে টেম্পু চলে আর আমরা বললেই হরতাল।”
________
আকাশ হাতে নিলার একটা ছবি দেখে বলে,
-“নিহান চৌধুরী তুমি নিলাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছ।এবার দেখো আমি তোমার সাথে কি করি।”
(চলবে)#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৮
#লেখক_দিগন্ত
নিহান আর নিলাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন আঁখি বেগম।নিলা এখনো মেঘলার মৃত্যুর শোক কা*টিয়ে উঠতে পারেনি।তারমধ্যে নতুন সমস্যা হিসেবে বাসা বেধেছে অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি যিনি নারী পা*চারের সাথে জড়িত।তাছাড়া ইরিনার ব্যাপারটা তো রয়েছেই।
নিলা এসব কথাই ভাবছিল তখন নিলয় তাকে বলে,
-“এই মেয়ে এভাবে কি ভাবছ?”
নিলা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আপনার কি? আপনি নিজের কাজ করুন।”
নিহান এক পা, এক পা করে নিলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে আর নিলা পিছিয়ে যেতে থাকে৷নিলা নিহানকে সাবধান করে বলে,
-“খবর*দার আর এক পা এগোলে কিন্তু ভালো হবে না।”
-“কি করবে? আমি তোমার স্বামী।তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।”
-“এই বিয়েটা করার পেছনে আমার একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল।নাহলে আপনার মতো মানুষকে কোনদিনও বিয়ে করতাম না।”
নিহান বাকা হেসে বলে,
-“আমি ছাড়া কেউই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতো না।”
নিলা মুখ বাকিয়ে চলে যায়।নিহান নিলার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
___________
আকাশ বসে বসে ভাবছে নিহান কত বোকা! ইরিনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভেবে আকাশ গগণবিহারী হাসিতে মেতে ওঠে।ইরিনা নিহানের সাথে সম্পর্কে থাকায় অবস্থায় আকাশ ইরিনার উপর কু*নজর দেয়।একদিন রাতে সুযোগ বুঝে সে ইরিনাকে পাচার করার চেষ্টা করে।ইরিনা প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড় দেয়।আকাশ সুযোগ বুঝে ইরিনার সাথে কয়েকটা ছেলের ইডিট করা ছবি নিহানকে পাঠিয়ে দেয়।নিহান আকাশকে খুবই বিশ্বাস করত।তার উপর এইসব ছবি দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে যায়।
তাই ইরিনা যখন নিহানের কাছে যায় তখন নিহান ইরিনার দিকে ব*ন্দুক তাক করতে বলে,
-“তুমি কেন আমার সাথে প্রতারণা করলে?”
আর সেদিন নিহান তো গু*লি করেছিল কিন্তু ইরিনাকে নয় আকাশের দিকে।ইরিনা নিহানকে সব কথা বলতে চেয়েছিল।কিন্তু নিহান ইরিনার কোন কথা না শুনে চলে যায়।
নিহান যাওয়ার পর নিহান ইরিনার কাছে আসে।তারপর ইরিনাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ইরিনাকে মে*রে তার লা*শ টুকরো টুকরো করে নদীয়ে ভা*সিয়ে দেয়।
এসব কথা ভেবে আকাশ বলে,
-“নিহান কত বোকা তুই।ইরিনাকে যেমন তোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি এবার নিলাকেও ঠিক সেভাবেই কেড়ে নেব।তুই কিচ্ছু করতে পারবি না।”
___________
নিহানের বাবা ফিরে আসেন।তিনি এসে সব কথা শুনে যতদ্রুত সম্ভব নিহান আর নিলার বিয়েটা দিতে চান।
অন্যদিকে নিলা ছিল অন্য চিন্তায় নিহানকে কিভাবে শাস্তি দেবে, কিভাবে নিহান যে ইরিনার খু*ন করেছে এটা প্রমাণ করবে সেটাই ভেবে চলেছে সে।
হঠাৎ আকাশ নিলাকে কল করে।ফোন রিসিভ করতেই আকাশ বলে,
-“নিহানের ব্যাপারে তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে দেখা করো।”
আকাশের কথা শুনে নিলা তড়িঘড়ি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।আকাশ নিলাকে আটকিয়ে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছ এখন? এত রাতে একা তোমার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।আমাকে বলো আমি তোমায় পৌঁছে দিচ্ছি।”
নিলা সাফ জানিয়ে দেয় সে একা যেতে পারবে।তখন নিহান বাধ্য হয়ে নিলাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে চলে যায়।
এদিকে রুশা,রুদ্র আর লতিফা বেগম নিহানের বাবার আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতে আসে।তখন রোহানও বাড়িতে চলে আসে।রোহানকে এই বাড়িতে দেখে রুশা তো খুবই অবাক হয়।রোহানও ঠিক ততোটাই অবাক হয়।
রুদ্র আর নিহানের বাবা বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল তখন রুশা রোহানের পিছু পিছু তার রুমের দিকে যায়।
রোহান রুশাকে বলে,
-“আম্মুর কাছে শুনলাম আমার ভাইয়া নাকি কাউকে কিছু না বলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে এনেছে।সেই মেয়েটা যে তোমার বোন সেটা ভাবতে পারিনি।”
রুশাও বাকা হেসে বলে,
-“আমিও বুঝতে পারিনি আপনি নিহান চৌধুরীর ভাই।”
-“তুমি যখন প্রথমবার আমার বাড়িতে এসেছ তখন চলো তোমাকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই।একসময় তো তোমাকেও এই বাড়িতে থাকতে হবে।”
-“কি বললেন আপনি? আমি কোন দুঃখে এই বাড়িতে থাকব।”
-“সেটা না বোঝার মতো বোকা তো তুমি নও।”
রোহানের কথাটা শুনে রুশা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।রুশা বুঝতে পারে রোহান একপ্রকার তাকে প্রপোজই করল।রুশাও তো রোহানকে ভালোবাসত।তাই এই প্রপোজটা তার নিজেরও অনেক ভালো লাগে।
তবে রুশা ভাব দেখিয়ে বলে,
-“আমার বয়েই গেছে আপনার বউ হবার।”
রোহান প্রতিত্তোরে বলে,
-“আমি কখন বললাম তোমাকে আমার বউ বানাবো? তুমি একটু বেশি ভাবছ না? আমি ডক্টর রোহান চৌধুরী।আমার বউ হবে আমার লেভেলের।”
-“আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি আপনার লেভেলের নই? আমিও কিন্তু একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।কিছুদিন পর আপনার থেকেও বড় ডাক্তার হয়ে দেখিয়ে দেব।”
-“তার মানে তুমি আমার বউ হতে চাও?”
-“আপনি না একটা যাচ্ছেতাই লোক।”
কথাটা বলে রুশা মুখ বাকিয়ে চলে যায়।
__________
নিলা অনেক কষ্টে জানালা বেয়ে নিচে নামে।এখন তার উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক আকাশের সাথে দেখা করা।নিলা একটা সিএনজিতে উঠে পড়ে এবং আকাশের বাড়ির ঠিকানা বলে।
নিলা আকাশের বাড়িতে পৌঁছে যায়।হাফাতে হাফাতে আকাশের কলিং বেল চাপ দেয়।আকাশ এসে দরজা খুলে দেয়।নিলাকে ভেতরে আসতে বলে।তারপর নিলার হাতে এক গ্লাস পানি দেয়।
নিলা পানি খেয়ে নিয়ে আকাশকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আমায় কেন ডেকেছিলেন আকাশ ভাইয়া?”
আকাশ বলে,
-“তুমি এখন নিহানের ওয়াইফ।তবে তোমার সবথেকে বড় পরিচয় তুমি একজন আইনের স্টুডেন্ট।তাই আশা করব তুমি আইনের সাথে ধোকাবাজি করবে না।আমার কাছে নিহানের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে৷আমি জানতে পেরেছি তোমার বান্ধবী ইরিনার হ*ত্যার পেছনেও নিহানের হাত রয়েছে।এই ভিডিওটা দেখ।”
নিলা ভিডিওটা দেখে বলে,
-“এই ভিডিওটা আমি আগেও দেখেছিলাম আবার দেখলাম।এবার আমি এই ভিডিওটা পুলিশকে দেব।যাতে অপরাধী শাস্তি পায়।”
-“আমার কাছে আরো প্রমাণ আছে।এই নাও এটা সেই বন্দু*ক যা দিয়ে নিহান ইরিনাকে খু*ন করেছে।অনেক কষ্টে আমি এটা পেয়েছি।”
নিলা সব প্রমাণ পেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে জমা দেয়। সব প্রমাণ দেখে পুলিশ চলে আসে নিহানকে গ্রেফতার করতে।
নিহান তখন ডাইনিং টেবিলে সবার সাথে ডিনার করতে বসেছিল।নিলাকে ডেকে আনতে যাবে তখনই পুলিশ এসে বলে,
-“মিস ইরিনাকে হ*ত্যার দায়ে আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে মিস্টার নিহান চৌধুরী।”
নিহান অবাক হয়ে যায়।সে বলে,
-“আমি এসব কিছুই করিনি।”
তখন নিলা এসে নিহানকে বলে,
-“আর কত মিথ্যা নাটক করবেন আপনি? এবার তো সত্যটা স্বীকার করুন।”
নিহান অসহায় ভাবে নিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি সত্যিই ইরিনার মৃ*ত্যুর সাথে জড়িত নই।”
পুলিশ এসে নিহানকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।নিহান নিলার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“আজ তুমি আমায় বিশ্বাস করলে না তাইতো? একদিন তুমি নিজের সব ভুল বুঝতে পারবে।আমাকে হারানোর বেদনা উপলব্ধি করবে।কিন্তু দেখবে সেদিন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না তোমার।”
নিলা নিহানের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে শান্ত থাকে। তারপর বলে,
-“তোমার মতো অপ*রাধীর কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।”
পুলিশ নিহানকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর আঁখি বেগম কাঁদতে শুরু করেন। তিনি এগিয়ে এসে নিলার হাত ধরে বলেন,
-“আমার ছেলেকে আমি চিনি ও এমন কোন কিছু করতে পারে না।তুমি ওকে বিশ্বাস করো না? ও তো তোমার স্বামী।”
-“আমি স্বেচ্ছায় ওনাকে বিয়ে করিনি। ওনার সব অপরাধ প্রমাণ করার জন্য ওনাকে বিয়ে করেছি।আপনি ওনার মা তাই আপনার কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক।আমিও আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি।কিন্তু যে অপরাধী তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।”
রোহান নিলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“তুমি ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ কিভাবে পেলে?”
-“আকাশ ভাইয়া আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এই বিষয়ে।”
-“আকাশ মানে ভাইয়ার বন্ধু আকাশ?”
-“হুম”
রোহান আর কোন কথা না বলে ছুটে চলে যায় আকাশের বাড়ির দিকে।
__________
আকাশ ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল,
-“আজকে কিন্তু সবগুলো মেয়েকে পা*চার করতে হবে।কোন ভুল যেন না হয়।”
তখনই রোহান সেখানে চলে আসে এবং বলে,
-“আকাশ! তারমানে তুমিই এইসব নারী পা*চারের সাথে যুক্ত।আর তুমি কিনা আমার ভাইয়াকে ফাসাতে চাইছ! আমি সব জেনে গেছি এবার দেখ আমি সব সত্য সামনে আনব।”
(চলবে)