হারানোর বেদনা পর্ব -১৫

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৫
#লেখক_দিগন্ত
নিহান অনেকক্ষণ থেকে কফি শপে বসে আছে।বিরক্তিতে তার চোখ মুখ পানসে হয়ে গেছে।আজ ইরিনা তার সাথে এই কফিশপে দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু এখনো আসছেনা।নিহান বিরক্ত হয়ে হাতঘড়ির দিকে তাকায়।১০ টা বেজে গেছে।অথচ ইরিনা ৯ঃ৩০ টায় আসতে চেয়েছিল।

নিহানের খুব রাগ হয় ইরিনার উপর।এমনিতে তো এতদিন তাকে কষ্টে রেখেছিল।আর এখন!

এরমধ্যে নিহানকে চমকে দিয়ে নিলা এসে তার সামনে বসে।
নিহান অবাক হয়ে বলে,
-“তুমি?”

নিলা মুচকি হেসে বলে,
-“হ্যা আমি।তোমার সাথে সব দেনা পাওনার হিসাব মিটাতে এলাম।”

-“এখানে তো ইরিনার আসার কথা ছিল।ওর যায়গায় তুমি এসেছ কেন?”

-“আমি ইরিনার তরফ থেকে এসেছি।আমি ওর বান্ধবী।”

-“ইরিনার তরফ থেকে মানে? ইরিনা কোথায়?”

-“সেটা তো আপনি ভালো জানেন।ইরিনাকে কোথায় রেখেছেন বলুন? ৩ বছর থেকে ইরিনা নিখোঁজ।আপনার সাথে দেখা করবে বলে চলে গেল তারপর আর আসেনি।সব দোষ আপনার।আপনি কি করেছেন ইরিনার সাথে?”

-“আমি কিছু করিনি।তোমার বান্ধবীই আমাকে ধোকা দিয়েছে।আমি ওকে সত্যি ভালোবাসতাম।এখন তুমি বলো তুমি ইরিনার ব্যাপারে কি জানো?”

-“আমি কিছুই জানি না।আমি শুধু ইরিনার খোঁজ নিতে এসেছি।”

-“ইরিনার ব্যাপারে তুমি না জানলে আমিও জানি না।আর জানার ইচ্ছেও নেই।”

কথাটা বলে নিহান উঠে যেতে ধরে তখন নিলা নিহানের হাত টেনে ধরে বলে,
-“অনেক খোঁজার পর আপনার সন্ধান পেয়েছি।আপনাকে এত সহজে যেতে দেবনা।ইরিনার সাথে আপনি নিশ্চয়ই খারাপ কিছু করেছেন।আমায় সব সত্য বলুন।”

নিহান কোন কিছু না বলে চলে যায়।নিলার জেদ আরো বেড়ে যায়।সে বলে,
-“এভাবে আর বেশিদিন পালাতে পারবেন না।আমি সব সত্য বের করবো।”
__________
রুশা বই পড়ায় ব্যস্ত ছিল।হঠাৎ তার নিলার কথা খুব মনে পড়ে যায়।যতই ঝগড়া করুক একে অপরের সাথে কথা না বলে তারা বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।

এরমধ্যে নিলা বাড়িতে চলে আসে।এতক্ষণ নিলার কথা ভাবলেও নিলা সামনে আসতেই রুশা তাকে সম্পূর্ণ ইগনোর করতে শুরু করে।নিলাও আগবাড়িয়ে কথা বলে না।

।নিলা ফ্রেশ হয়ে চা করতে যায়।হঠাৎ রান্নাঘর থেকে নিলা চিৎকার শুনে রুশা দৌড়ে যায়।তারপর জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছে সাবধানে কাজ করতে পারিস না? এত বেখেয়ালি হলে চলে নাকি?”

রুশা পরম মমতার সাথে নিলার হাত মুছে দিতে থাকে।নিলার খুব ভালো লাগে রুশার এই ব্যবহার।নিলা রুশাকে ব্যঙ্গ করে বলে,
-“তুই আমার খেয়াল না রাখলে আমি তো বেখেয়ালি হবোই।”

রুশাও ঠাট্টা করে বলে,
-“কেন আকাশ ভাইয়া আছে না? উনি তো আছেন তোর খেয়াল রাখার জন্য।”

-“তুই কি বলছিস? উনি আমার ভাই।ওনাকে আমি ভাই ভাবি।”

-“তাহলেই ভালো।আমি তোর সাথে নিহান চৌধুরীর জুটি ভেবে রেখেছি।”

-“ঐ খা*টাশ লোকটার সাথে আমাকে কিভাবে জড়ালি তুই? তুই তো অনেক বজ্জাত।”

-“”

-“ঠিক আছে আর মন খারাপ করতে হবে না।আমি আর কিছু বলবো না।তুই শুধু ঐ নিহান চৌধুরীর কথা ভুলে যা।”

-“আমি কাল কি করেছি জানিস?”

-“কি করেছিস?”

রুশা নিলাকে গতকালের সব ঘটনা বলে।সব শুনে নিলা দুঃশ্চিন্তা প্রকাশ করে বলে,
-“তুই এত দুঃসাহস দেখাতে গেলি কেন? যদি তোর কিছু হয়ে যেতো।”

-“তুই প্লিজ ডক্টর রোহানের মতো কথা বলিস না।”

-“রোহান কে?”

রুশা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে,
-“তুই সর আমি চা করছি।তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।”

নিলা বোকার মতো মাথা চুলকাতে চুলকাতে সরে যায়।
______________
নিহান অনেকক্ষণ থেকে বসে বসে শুধু নিলার কথাই ভাবছে।এত সাহস কিভাবে পেলো মেয়েটা তার সাথে অসভ্যতা করার? নিহান রাগে কলমদানি খা*মচে ধরল।তখনই আকাশ এসে বলল,
-“কলমদানির উপর কিসের রাগ ঝাড়ছেন অফিসার?”

নিহান আকাশকে দেখে খুশি হয়।তাকে বসতে বলে।আকাশ বসে বলে,
-“আমি আজ এখানে তোর সাথে ব্যক্তিগত কথা বলতে আসিনি।একটা কেসের ব্যাপারে জানতে এসেছি?”

-“কিসের কেস?”

-“নারী পাচারের।”

আকাশের কথাটা শুনে নিহান ঢোক গিলে।তারপর একগ্লাস পানি খেয়ে বলে,
-“এই ব্যাপারে কি জানতে চাস?”

-“একজন নিরীহ মানুষকে এই কেসে অন্যতম অপরাধী বানানো হয়েছে।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও সে বারবার নিজের দোষ অস্বীকার করেছে।আর তুই ভেবে দেখ লোকটা যদি অপরাধী হতো তাহলে ওনার জেলে থাকা অবস্থায় এই কাজ কিভাবে চলছে? ওনার স্ত্রী আমার পায়ে ধরে অনুরোধ করেছে ওনাকে বাঁচানোর জন্য।তাই আমি ওনার হয়ে কেস লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

-“ভালো কথা।তা আমার কাছে কেন এসেছিস?”

-“আমি শুনেছি তুই এই কেসের তদন্ত করেছিস।তাই তোর কাছ থেকে তথ্য চাই।তোর কি লোকটাকে সন্দেহ হয়?”

-“সন্দেহ হয় বলেই গ্রেফতার করেছি।আর তাছাড়া লোকটার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণও আছে।”

-“আমি যদি প্রমাণ কররে পারি উনি নিরপরাধ?”

-“করলে করবি।আমার কাজ আমি করেছি এবার তুই তোর কাজ কর।সিআইডির কাজ অপরাধীকে ধরা।আইনের কাজ আইন করুক।তুই তো উকিল।তুই নিজের কাজ কর।”

-“আচ্ছা আমি তাই করবো।শুধু তোর কাছে কিছু সাহায্য চাই।”

-“যা জানতে চাস বল।”

আকাশ নিহানকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে।অনেক তথ্য নেয় তারপর যায়।
_________
ডক্টর রোহান নিজের চেম্বারে বসেছিল।হঠাৎ ডক্টর মেঘা তার সামনে আসে।মেঘা এসে রোহানের কাছাকাছি বসে তারপর জিজ্ঞাসা করে,
-“আমাকে আজ কেমন লাগছে রো..হা…ন”(ন্যাকি সুরে)

রোহান মেঘার দিকে না তাকিয়েই বলে,
-“ভালোই।”

মেঘা মুখ বাকিয়ে বলে,
-“তোমাকে দেখানোর জন্য আমি এত সুন্দর করে সাজলাম আর তুমি আমার দিকে ভালো ভাবে তাকাচ্ছই না।”

রোহান বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
-“আমার কিছু কাজ আছে।কিছুক্ষণ পর একটা অপারেশন আছে।তুমি প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করোনা।তাছাড়া তোমার কি কোন কাজ নেই?”

-“আমার তো একটাই কাজ।তোমার পেছনে পড়ে থাকা।”

রোহানের বিরক্তি আরো বেড়ে যায়।কিন্তু সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়।মেঘা এই হাসপাতালের পরিচালকের মেয়ে।মেঘার দাদাই এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা।তাই মেঘাকে কেউই বেশি ঘাটাতে চায়না।

এরমধ্যে রুশা রোহানকে তার ঘড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার চেম্বারের দিকেই আসছিল।কাল ভুল করে রোহানের ঘড়ি পড়ে গিয়েছিল।রুশা সেটা কুড়িয়ে পায়।

রুশা চেম্বারে ঢোকার আগে নক করে,
-“আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”

রোহান বলে,
-“এসো।”

রুশা এসে রোহানের ঘড়িটি দিয়ে বলে,
-“এটা আপনার ঘড়ি।কাল পড়ে গিয়েছিল আমি তুলে নিয়ে রেখেছিলাম।এই নিন।”

ঘড়িটা ফেরত দিয়ে রুশা চলে যাবে তখন মেঘা বলে,
-“এইরকম মেয়েদের আমি ভালো করে চিনি।খালি ছেলেদের গায়ে পড়ার নিত্যনতুন ফন্দি করে।”

রুশা একথা শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা।মেঘার মুখের উপরেই বলে দেয়,
-“আপনার মতো পুরুষকে আকৃষ্ট করার মতো মেয়ে আমি নই।নিজের ড্রেসআপ দেখেছেন? আর আমাকে বলছেন।”

মেঘা রুশার গালে থা*প্পড় মে*রে বলে,
-“তোর এত বড় সাহস আমার মুখের উপর কথা বলছিস।তোকে আজই মেডিকেল কলেজ থেকে বের করে দেবো।জাস্ট ওয়েট।”

রুশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যায়।রুশার এই প্রতিবাদ রোহানের খুব ভালো লাগে।মেঘা রোহানকে বলে,
-“দেখলে মেয়েটা আমায় কি বলল?”

রোহান মুখ ফসকে বলে দেয়,
-“ঠিকই তো বলেছে।”

মেঘার গা জ্ব*লে যায়।সে বলতে থাকে,
-“আমি ড্যাডিকে সব বলব।তারপর বুঝবে।”

এরমধ্যে একজন ডাক্তার ভেতরে এসে বলে,
-“ডক্টর রোহান।মিরাজ খান(মেঘার বাবা) আপনায় ডাকছে।বাইরে প্রেসের লোক এসেছে।ডক্টর আহানের ব্যাপারে সব জানাজানি হয়ে গেছে।”

রোহান বলে,
-“চলো যাচ্ছি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here