হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব -১০

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা মনি

রিফাত কিছু একটা ভেবে বলে,
‘আজ আমার সাথে ঘুরতে যাবে রোদেলা? তোমাকে নিয়ে অনেক দিন থেকে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।’

‘কোথায় যাব?’

‘চলো তোমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাই।’

মেঘলার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। রিফাত এইরকম সময় এভাবে ঘুরতে যেতে বলার কারণ তার বোধগম্য হচ্ছিল না। মেঘলাকে চুপ থাকতে দেখে রিফাত এসে তার সামনে চুটকি বাজায়।

‘কি হলো? কি এত ভাবছ? চলো আমরা যাই।’

‘এই সময়ে,,,’

‘আজ আমি ফ্রি আছি। তাই ভাবলাম বাড়িতে বসে না থেকে একটু ঘুরতে যাই। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল নিজের বউকে নিয়ে ঘুরতে যাব, রাতে মোমবাতির আলোয় ডিনার করবো।’

‘আচ্ছা চলুন।’

রিফাত মৃদু হেসে বলে,
‘এভাবে কি করে যাই? এটা নাও এখানে তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা শাড়ি আছে। শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে তৈরি হয়ে নাও। তারপর আমরা একসাথে যাব।’

রিফাত মেঘলাকে তৈরি হতে বলে রুম থেকে চলে যায়। মেঘলা রিফাতের কথামতো শাড়িটা পড়ে নেয়। মেরুন কালারের খুব সুন্দর একটা শাড়ির সাথে প্রথমে চড়া মেকআপ করে নেয় মেঘলা। পরে কিছু একটা মনে করে নিজের সব মেকআপ তুলে নেয়। মেঘলা সংকল্প করে নেয়,
‘আজ আমি রিফাতকে সব সত্য বলে দিবো। পরিণতি যাই হোক তাতে কিছু যায় আসে না। আমি আর এই মিথ্যা অভিনয় করব না। জানি সব সত্য সামনে এলে আমাকে অনেক খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তবুও আমি আজ সব সত্য বলবোই।’

১৯.
রিফাতের সাথে গাড়িতে বসে অজানা গন্তব্যে ছুটে চলেছে মেঘলা। রিফাত আচমকা একটি গান চালু করে দেয়। গাড়ির রেডিওতে ‘Kya Khub Rab Ne Kiya’ গানটা বাজতে থাকে। মেঘলা চোখ বন্ধ করে গানটার মাঝেই হারিয়ে যায়। রিফাত একমনে ড্রাইভ করছিল। মাঝে মাঝে মেঘলার দিকে তাকাচ্ছিল। মেঘলা চোখ বন্ধ করে গানটা শুনছিল আর রিফাতের সাথে কা’টানো সব সুন্দর মুহুর্ত ভাবছিল।

প্রথম দিন থেকে রিফাতের করা কেয়ার, সুন্দর ব্যবহার সব অজান্তেই মেঘলার মন জয় করে নিয়েছে। মেঘলা এখন ভালোবেসে ফেলেছে রিফাতকে। রিফাতই যে তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। আজীবন বইয়ের মধ্যে ডুবে ছিল মেঘলা। পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনদিকে কোন খেয়াল ছিল না।তাই কখনো কারো প্রেমে পড়ে নি। এখন রিফাতের প্রেমে পড়ে বুঝতে পারছে, এই অনুভূতিটা কত সুন্দর।

মেঘলা এবার চোখ খুলে রিফাতের দিকে তাকায়। রিফাতও মেঘলার দিকে তাকিয়ে ছিল। একে অপরের সাথে চোখাচোখি হতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে যায় দুজনের মধ্যে। এই অনুভূতির নামই বোধহয় ভালোবাসা।

মেঘলা মনে মনে বলে,
‘আপনার সাথে আমি অনেক ছলনা করেছি, অনেক মিথ্যা বলেছি। হয়তো আপনি এর জন্য আমায় ক্ষমা করবেন না। তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবোনা। আপনার পাশে থেকে আপনার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করব। আমি জানি আমার ভালোবাসা যদি সত্য হয় তাহলে আমিই জয়ি হবো।’

রিফাত গাড়িটা একটি সুন্দর পার্কের সামনে এসে দাড় করায়। মেঘলার হাত ধরে তাকে নামায়। পার্কের মধ্যে একে অপরের হাত ধরে হাটতে থাকে তারা। মেঘলার কাছে এ যেন পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সময়। তার ইচ্ছা করছিল এখানেই সময়কে থামিয়ে দিতে। এভাবেই রিফাতের হাত ধরে থাকতে।

রিফাতের অনুভূতিও ছিল অনেকটা একই রকম। মেঘলার প্রতি মুগ্ধতার তার কোন কমতি ছিল না।

আচমকা মেঘলা রিফাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিফাত কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘলা কাজটা করে ফেলে। রিফাত মুচকি হাসে। মেঘলা রিফাতকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
‘সরি,,আসলে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে,,, ‘

মেঘলার কথাটা শেষ হওয়ার আগে রিফাত আবার তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। রিফাত মেঘলাকে বলে,
‘আমি চাই তুমি সবসময় এভাবে আমার সাথে থাকো। কখনো আমাকে ছেড়ে যেওনা। তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে পারব না রোদেলা। আমার হৃদয়জুড়ে যে তুমি রয়েছো। তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।’

মেঘলা রিফাতকে বলে,
‘যদি আপনি কখনো জানতে পারেন আমি আপনার থেকে অনেক বড় কোন সত্য লুকিয়েছি, তাহলে কি আমাকে ভুল বুঝবেন?’

রিফাত মৃদু হেসে বলে,
‘একেবারেই না। কারণ আমি জানি। তুমি এমনি এমনি আমার থেকে কিছু লুকাবা না। নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছ তাই লুকাইছ। তুমি শুধু সত্যটা আমাকে বলে সামান্য একটা সরি বলে দিবে দেখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’

এই কথাটা শুনে মেঘলার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। সে মনে মনে বলে,
‘আজই আমি আপনাকে সব সত্য বলে দিব। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের সময় আজ আমি আপনাকে বলে দিবো আমাদের জীবনের সবথেকে বড় সত্য।’

২০.
রিফাত ও মেঘলা একটি পাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আজ এখানেই তারা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে। মেঘলা নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছে। আজ রিফাতকে সব সত্য বলে দিবে।

রিফাত মেঘলার দিকেই তাকিয়ে ছিল। একজন ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায়। মেঘলাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে রিফাত তার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে,
‘বসে না থেকে খাবার খেয়ে নাও।’

মেঘলা খাবার খেতে যাচ্ছিল তখন রিফাত আবার তাকে আটকায়। নিজের হাতে মেঘলাকে খাইয়ে দেয় রিফাত। মেঘলার চোখে জল চলে আসে। রিফাত বলে,
‘কাদছ কেন তুমি?’

মেঘলা নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
‘আমি কখনো ভাবতে পারিনি কেউ আমাকে এত ভালোবাসবে। আমার মতো মেয়েকে যে কেউ,,,’

‘তোমার মতো মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা যায়না রোদেলা।’

মেঘলার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় রিফাতের কথা শুনে। রিফাত তাকে রোদেলা মনে করে ভালোবাসছে এটা সে মেনে নিতে পারছে না। মেঘলা চায় রিফাত তাকে মেঘলা হিসেবেই ভালো বাসুক।

রিফাত মেঘলার দুঃখটা খেয়াল করে। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়।

একটি মেয়ে রিফাতের কাছে এসে বলে,
‘রিফাত তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও রিফাত। আজ কতদিন পর তোমায় দেখলাম। কেমন আছ তুমি?’

রিফাত মেয়েটার দিকে বিরক্তির সাথে তাকায়। মেঘলাও বুঝতে পারছিল না মেয়েটা কে। রিফাত মেয়েটার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি কোন সাহসে এখানে এসেছ ফাবিহা? আমি তোমাকে বলেছিলাম না তোমার এই মুখ আর আমাকে দেখাবা না। তাহলে কেন এসেছ এখানে? ‘

‘আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছিলাম। তোমায় ঠকিয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমি এখন ভীষণ অনুতপ্ত।’

রিফাত মেঘলার দিকে ইশারা করে বলে,
‘আমি তোমাকে ভুলে গেছি ফাবিহা। এই দেখো ও আমার স্ত্রী রোদেলা। তোমার মতো ঠকবাজকে নিজের মনে রাখব কিভাবে ভেবেছিলে? এখন আমি শুধু রোদেলাকেই ভালোবাসি। ও তোমার মতো ঠকবাজ নয়। আমাকে অনেক ভালোবাসে।’

ফাবিহা মেঘলার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে চলে যায়। মেঘলার মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। স্বামীর প্রাক্তনের সাথে দেখা হওয়ার থেকেও তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছিল রিফাতের বলা কথাগুলো। রিফাত তো বলল তার জিবনে ঠকবাজের কোন যায়গা নেই। এই ফাবিহা মেয়েটা তাকে ঠকিয়েছিল জন্য বোধহয় তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। তাহলে মেঘলার ব্যাপারে সবকিছু জানার পর কি তাকেও ঠকবাজ ভেবে দূরে ঠেলে দেবে?

মেঘলাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে রিফাত বলে,
‘ও আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ফাবিহা। তুমি মন খারাপ করিও না রোদেলা। ওর সাথে চার বছর আগেই সবকিছু শেষ করে দিয়েছি। আমাকে ঠকিয়ে একটা ছেলের সাথে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা করার নাম করে। ওর সাথে আমার এখন আর কিছু নেই।’

মেঘলা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আছে। সে ভাবে,
‘না আমি রিফাতকে কিছু বলব না। ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে যে আমি বাচতে পারবো না।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here