#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মুন্নি স্টেজ থেকে নামতেই নজর যায় মেঘলার উপর। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘ভাবি তুমি এখানে আছো।’
মেঘলার নজর যায় মুন্নির দিকে। মুন্নি তার দিকেই আসছিল। আখি, আরিয়ান হতবাক হয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। অনেকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
মুন্নি কাছে এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলাও মুন্নিকে আগলে নেয়।
‘কেমন আছ তুমি ভাবি? আজ কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। কই ছিলা এতদিন? জানো কত মিস করি আমি তোমাকে। তুমি আমাকে মিস করোনা?’
‘আমিও তোমাকে মিস করি মুন্নি। এখন একটু ঐদিকে চলো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।’
মুন্নিকে সাথে নিয়ে একটু বাইরের দিকে যায় মেঘলা। আরিয়ান ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিল না। তাই আখিকে প্রশ্ন করে,
‘তুই চিনিস এই মেয়েটাকে? মেঘলাকে এভাবে ভাবি বলছিল কেন?’
‘আমি চিনি না ওকে। তবে যেটুকু বুঝলাম মেয়েটা মেঘলার ননদ হতে পারে। মেঘলার থেকে ওর অতীতের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনেছিলাম। সে থেকে এটুকু ধারণা করতে পারি।’
‘কি জানিস তুই মেঘলার অতীতের ব্যাপারে সেটা আমাকেও বল।’
আখি আরিয়ানকে মেঘলার অতীতের ব্যাপারে সবকিছু বলে। সব শুনে হতবাক হয়ে যায় আরিয়ান। তার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না।
আখি আফসোসের সুরে বলে,
‘মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হয় আমার। অন্যের কথা ভাবতে গিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। প্রথমে নিজের মা-বাবার কথা শুনে নিজের নামপরিচয় সবকিছু হারিয়ে ফেলল,,,আর তারপর,,নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকেও কষ্ট পেয়ে গেল। আমার যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি ওর সব কষ্ট দূর করে দিতাম। কিন্তু সেটা আর পারলাম কই।’
আরিয়ান আখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সবকিছু ঠিক করে দেব।’
শেষের কথাটুকু বলে অদ্ভুতভাবে হাসে আরিয়ান। মনে মনে বলে,
‘মেঘলার অতীত ভুলিয়ে দিয়ে আমিই হয়ে উঠব ওর বর্তমান।’
৩৩.
মেঘলা মুন্নিকে নিয়ে একটু দূরে যায়। মুন্নি কৌতুহলী হয়ে বলতে থাকে,
‘এখন আমাকে তুমি নিজের ব্যাপারে বলো। এতদিন দূরে ছিলা কেন? আমাদের কথা একটুও মনে পড়েনা? তুমি জানো রিফাত ভাইয়া,,,’
মুন্নির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘলা ধমকের সুরে বলে,
‘স্টপ। ঐ লোকটার নামও আমি শুনতে চাইনা। আমি জিবনে মুভ অন করে গেছি। নিজের বর্তমান নিয়ে যথেষ্ট ভালো আছি। অতীতের কালো ছায়া আর ফেরত চাইনা। তুমি প্লিজ এই প্রসঙ্গ টেনে এনো না।’
‘এমন করে কেন বলছ? রিফাত ভাইয়া সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসে, অনেক মিস করে তোমাকে।’
মেঘলার রিফাতের কথা শুনতেই বিরক্ত লাগছিল। তাই সে বলে,
‘তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট করতে চাই আমার সামনে ঐ নামটা আর নেবে না। আর ঐ লোকটাকেও বলবা না যে আমি এখানে আছি।’
‘কিন্তু,,,’
‘কোন কিন্তু না। তুমি যদি আমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবেসে থাকো, যদি আমাকে সামান্য সম্মান করে থাকো তাহলে আমার কথাটা রেখো। আমি এখন আসছি। বেস্ট অফ লাক। আই উইশ যে তুমি এই প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করবে।’
মেঘলা নিজের মতো চলে যায়। মুন্নি কিছু একটা ভেবে রিফাতকে ফোন করে। রিফাত কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রথমে ফোনটা রিসিভ করতে পারে না। দ্বিতীয় বার ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভ করে।
‘কি হয়েছে মুন্নি এই সময় কল কেন করেছিস? আমি এখন ব্যস্ত আছি।’
‘রাখো তোমার ব্যস্ততা। আমি তোমার একমাত্র বোন আছি এখানে চট্টগ্রামে অডিশন দিতে আর তুমি,,, কত করে বললাম আসতে। তুমি এলেও না।’
‘আমি তো এখন অফিসের কাজে ব্যস্ত।’
‘কাজের খেতায় আগুন। তুমি সব কাজ রেখে চট্টগ্রামে চলে এসো। ইটস মাই অর্ডার। অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে এখানে শুধুমাত্র তোমার জন্য।’
‘কি সারপ্রাইজ?’
‘সেটা এলেই দেখতে পারবা। এখন আমি রাখছি। ও হ্যা একটা সুখবর দেওয়ার ছিল আমি না এখানে মূল প্রতিযোগিতায় চান্স পেয়ে গেছি। এখন আর একটা ধাপ পের হলেই রিয়েলিটি শো এর মঞ্চে যেতে পারবো। আমাকে টিভিতে দেখাবে। উফ ভাবতে পারছ।’
রিফাত মুন্নিকে অভিনন্দন জানিয়ে কল কে’টে দেয়। এখন মুন্নি, মেহেরের সাথে আর খারাপ ব্যবহার করে না রিফাত। সে বুঝতে পেরেছে তাদের আসলে কোন দোষ নেই, সব দোষ তার বাবার। রিফাত তার মাকেও বলে দিয়েছে সবকিছু ঠিক করতে। কিন্তু রোজিয়া কোন কথা শুনতেই রাজি হয়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য বের হয় রিফাত। না জানি সেখানে কোন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে রিফাতের জন্য।
৩৪.
আখি মেঘলাকে অনেকক্ষণ ধরে রাজি করানোর চেষ্টা করছে রাঙ্গামাটি ঘুরতে যাওয়ার জন্য কিন্তু মেঘলা কোনভাবে রাজিই হচ্ছে না। মেঘলার একটাই কথা এই সময় পড়া ছেড়ে ঘুরতে যেতে পারবে না। আখিও নাছোড়বান্দা। সে যখন একবার বলেছে ঘুরতে নিয়ে যাবে তখন যাবেই।
কোন উপায় না পেয়ে মেঘলাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করে দেয়।
‘তুই যদি না যাস তাহলে আমি তোর সাথে কথা বলব না। এখন ভেবে দেখ কি করবি।’
‘কথা যদি না বলিস না বলবি। তবুও এরকম অন্যায় আবদার করবি না। আমার এভাবে ঘুরে বেড়ানোর সময় নেই। তোর যেতে ইচ্ছে করলে তুই যা রাঙামাটি।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।’
বলেই বেড়িয়ে যেতে যাচ্ছিল তখনই মেঘলা তার হাত ধরে ফেলে।
‘তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন আখি? ওকে ফাইন আমি যাবো রাঙামাটি। এবার খুশি হয়ে যা। তবে একটা কথা ওখানে গিয়ে বেশিদিন কিন্তু থাকতে পারব না। দুই একদিন থেকে চলে আসব।’
‘মাত্র দুইদিন থাকব ওখানে। তুই একদম চিন্তা করিস না। এখন যা গোছগাছ শুরু কর।’
মেঘলা চলে যায়। মেঘলা চলে যেতেই আখি আরিয়ানকে ফোন লাগায়। আরিয়ান ফোন রিসিভ করতেই আখি উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘আমাকে ট্রিট দে ভাইয়া। তোর জন্য অনেক সুন্দর খুশির খবর এনেছি।’
‘বেশি নাটক না করে বল কি বলবি।’
‘বলছি। মেঘলা রাঙামাটি যেতে রাজি হয়েছে। সো এখন আমরা কাল রাঙামাটি যাচ্ছি। ট্যুরটা খুব মজার হবে। তুই শুধু ভেবে দেখ মেঘলাকে কিভাবে ইমপ্রেস করবি। যদি তোর মোটা মাথায় কোন বুদ্ধি না আসে আমার থেকে হেল্প নিতে পারিস।’
‘এত উপকার করা লাগবে না তোর। আমি কি করব সেটা আমি ভেবে নেবো। ফোন রাখ এখন।’
✨
রিফাত চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখে। মুন্নিকে ফোন করে। মুন্নি ফোন রিসিভ করে রিফাতের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
‘আমি তোমার সামনেই আছি। কল দিতে হবে না।’
‘তোর কথামতো চট্টগ্রামে এলাম। এখন কি সারপ্রাইজ দিবি বল।’
‘সবুর করো ভাইয়া। সবুরের ফল মিষ্টি হয়।’
‘টক মিষ্টি ঝাল বাদ দিয়ে কি বলবি সেটা বল।’
‘সারপ্রাইজ এত সহজে পাবা না। সারপ্রাইজ পাওয়ার জন্য আমার সাথে কাল রাঙামাটি যেতে হবে।’
‘তুই কি শুরু করেছিস বল তো? একবার চট্টগ্রাম একবার রাঙামাটি। আমাকে কি এভাবে গোটা বাংলাদেশ ঘুরাবি?’
‘প্রয়োজন হলে তাই করব। কাল রাঙামাটি চলো। তাহলেই সব বুঝবে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
>>আমি অসুস্থ। অনেক কষ্টে গল্প লিখছি নিয়মিত। কেউ ছোট বলে লজ্জা দেবেন না।