হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব -১৯

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

রিফাত মুন্নির কথা অনুযায়ী ঐদিকে তাকাতেই মেঘলাকে দেখতে পেয়ে যায়। রিফাত মেঘলাকে এতদিন পর দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘মেঘলা তুমি এখানে।’

এতদিন পর চেনা পরিচিত কন্ঠটি শুনে পিছনে ফিরে তাকায় মেঘলা। পিছনে ফিরতেই নিজের চেনা মানুষটিকে দেখতে পায়। মেঘলার নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ আগেও অনেকবার রিফাতকে কল্পনা করেছে সে। ভালোবাসার মানুষ যতই কষ্ট দিক তাকে এয় সহজে ভোলা হয়তো যায়না। তবে মেঘলা তার মনকে শক্ত করে। নিজেকে কোনভাবে অসহায় দেখতে চায়না সে।

রিফাত মেঘলার কাছে আসে। মেঘলার হাত ধরে বলে,
‘জানো তোমায় কত খুজেছি আমি। আমার সাথে যোগাযোগ করো নি কেন? এত অভিমান আমার উপর। আমি জানি আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। কিন্তু ,,,’

মেঘলা রিফাতকে দেখে অপরিচিত হওয়ার ভান করে বলে,
‘কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না। আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না৷ চলে যান আমার সামনে থেকে।’

রিফাত খুব কষ্ট পায় মেঘলার কথায়।

‘আমি সত্যি নিজের কাজের জন্য অনেক অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। ফিরে এসো আমার কাছে।’

মেঘলা আখিকে বলে,
‘আখি চল এখান থেকে। জানি না কোথা থেকে চলে আসে অদ্ভুত মানুষ সব।’

মেঘলা চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে রিফাত মেঘলার হাত টেনে ধরে। মেঘলা সরাসরি রিফাতের হাত ঝ’টকা মে’রে সরিয়ে দেয়। রিফাত ভাবতেও পারেনি মেঘলা এরকম একটা কাজ করতে পারে কোনদিন। সে শুধু বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে ছিল মেঘলার দিকে।

আরিয়ান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিছু বুঝতে না পারায় আখিকে জিজ্ঞেসা করে। আখি সব ঘটনা আরিয়ানকে খুলে বলে।

আরিয়ান সব শুনে মেঘলার সামনে আসে। মেঘলার হাতটা শক্ত করে ধরে। রিফাতের সামনে দিয়েই নিয়ে আসে মেঘলাকে।

রিফাতের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল এই দৃশ্য দেখে। মুন্নি রিফাতের কাছে আসে। রিফাত মুন্নিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
‘ঐ ছেলেটা কে? এভাবে আমার স্ত্রীর হাত ধরার পারমিশন ওকে কে দিয়েছে?’

‘ভাইয়া কুল। মাথা ঠান্ডা করো। ঐ ছেলেটা হলো ভাবির বান্ধবীর ভাই। ওদের সাথেই ভাবি এখানে এসেছে।’

রিফাতের মনে এখনো তোলপাড় চলছে। নিজের প্রিয়তমাকে এভাবে অন্য একটি ছেলে হাত ধরে নিয়ে গেল সেই কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

৩৭.
মেঘলা কটেজে ফিরে এসেই রুমের দরজা বন্ধ করে কেদে চলেছে। রিফাতের সাথে আচমকা এই সাক্ষাৎ এর ফলেই মেঘলার এমনটা হচ্ছে। মেঘলা নিজের মনকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে যে রিফাতকে ভুলে যেতে হবে।

আখি আর আরিয়ান মেঘলার ব্যাপার নিয়েই কথা বলছে। আখি আরিয়ানকে বলছে,
‘আমার মনে হয় মেঘলা এখনো রিফাতকে ভালোবাসে। তাই এমন করছে।’

আরিয়ান বেশ রাগী গলায় বলে,
‘তোরা মেয়েরা এমন কেন রে? যারা তোদের কষ্ট দেয় তোরা তাদের জন্য নিজের মূল্যবান চোখের জল নষ্ট করিস। আমার একদম ভালো লাগে না এসব।’

মেঘলা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। মেঘলার দিকে তাকিয়ে আখি ও আরিয়ান উভয়েই চমকিত হয়। মেয়েটাকে দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে মেয়েটা কাদছিল।

মেঘলা বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
‘আমাদের কালকে ঝুলন্ত ব্রিজে ঘুরতে যেতে হবে। তোমরা সব প্রস্তুতি করে রাখো।’

মেঘলার কথায় আরিয়ান ও আখি দুজনেই স্বস্তি পায়। আখি মেঘলার পাশে আসে।
‘হ্যা আমরা যাবো তো। গিয়ে অনেক মজা করব। তবে যাই বলিস তোকে এভাবে শক্ত রূপে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। মেয়েদের এরকমই শক্ত থাকতে হয়।’

মেঘলা আখিকে বলে,
‘এখন আমি একটু একা আশপাশটা ঘুরে দেখতে চাই৷ তোরা এখানে থাক। প্লিজ কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করিস না।’

আরিয়ান কিছু বলতে চাইলে আখি তাকে ইশারা করে থামিয়ে দেয়।
‘আচ্ছা মেঘ তুই যা। নিজের মতো কিছুক্ষণ একলা সময় উপভোগ কর।’

মেঘলা বাইরের দিকে যায়। আরিয়ান আখিকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এভাবে ওকে বাইরে পাঠানো ঠিক হলো না কিন্তু। যদি কোন বিপদ হয়?’

‘তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া৷ খারাপ কিছুই হবে না।’

মেঘলা বাইরে এসে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। আচমকা রিফাত তার সামনে চলে আসে। মেঘলা রিফাতকে দেখে চোখমুখে কাঠিন্য ভাব করে নেয়। রিফাত মেঘলার সামনে এসে দাড়ায়।
‘আমার সাথে কথা বলবে না মেঘলা?’

‘অচেনা মানুষের সাথে আমি কথা বলিনা।’

‘আমি কি তোমার অচেনা?’

মেঘলা রিফাতের কোন কথার জবাব না দিয়ে নিজের মতো হেটে যেতে থাকে। রিফাত তার হাত আটকে ধরে। মেঘলা রিফাতের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরা অসভ্যতামি জানেন না আপনি? হাত ছাড়ুন বলছি আমার।’

রিফাত কোন কথা শোনে না। মেঘলার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে। মেঘলা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে রিফাতকে ধা’ক্কা দেয়। রিফাত একটু দূরে গিয়ে ছি’টকে পড়ে। কিছুটা আ’ঘাত লাগে তার তবে তার মনের আঘাতের কাছে এটা কিছুই না।

৩৮.
রিফাত বুঝতে পারছে সে মেঘলাকে যেমন কষ্ট দিয়েছে সেই কষ্টই এখন সুদসমেত ফেরত পাচ্ছে। রিফাত মেঘলার দিকে তাকায়। কিরকম অনুভূতিহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে সে। রিফাত মেঘলার কাছে আসে। মেঘলাকে ভালোভাবে বোঝানোর জন্য বলে,
‘তুমি আমাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো না?’

মেঘলা কঠিনভাবে জবাব দেয়,
‘আমি জিবনে অনেক এগিয়ে এসেছি। অতিতকে পেছনে ফেলে আমি এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই। পিছনে ফিরে তাকানোর ইচ্ছা নাই।’

এমন সময় আরিয়ানও সেখানে চলে আসে। রিফাতকে দেখে বেশ রাগ হয় তার। আরিয়ান মেঘলার কাছে আসে। মেঘলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘চলো আমার সাথে।’

রিফাত মেঘলাকে প্রশ্ন করে,
‘এই ছেলেটা কে মেঘলা?’

আরিয়ান জবাব দেয়,
‘আমি মেঘলার বাগদত্তা। খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়ে হতে চলেছে।’

রিফাত আরিয়ানের কলার চেপে বলে,
‘একদম চুপ। মেঘলা আমার স্ত্রী। আমার সামনে ওকে বিয়ের কথা বলার সাহস কোথায় পেলে তুমি?’

‘আমি একদম ঠিক বলছি। মেঘলার সাথে আমার কয়েক মাস আগেই দেখা হয়েছে। ওর সব অতীত জেনেই আমি ওকে মেনে নিয়েছি। সামনেই আমাদের বিয়ে।’

রিফাত অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকায়। মেঘলার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না।

‘মেঘলা তুমি বলো এই ছেলেটা যা বলছে সব মিথ্যা। আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে আছ তাই এমন করছ। কিন্তু আমি জানি তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে কখনো নিজের জিবনে যায়গা দিবেনা।’

মেঘলা দৃঢ় চিত্তে বলে,
‘উনি যা বলেছেন তা শতভাগ সত্য। আমি অতিত ভুলে ওনাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। আরিয়ান চলুন এখান থেকে।’

মেঘলা আরিয়ানের হাত ধরে রিফাতের সামনে থেকে চলে যায়। রিফাতের কষ্টগুলো সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর নিজেকে সামলাতে পারে না সে। চিৎকার করে ওঠে রিফাত।

মেঘলা কিছুদূর গিয়েই আরিয়ানের হাত ছেড়ে দেয়।
‘আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসার জন্য। আপনি না এলে হয়তো রিফাত আমাকে আসতেই দিত না।’

‘ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি আমার মিথ্যাতে তুমি তাল মেলালে কেন?’

আরিয়ানের মনে নানান অনূভুতি সারা দিচ্ছে। তার মনে হতে থাকে মেঘলাও হয়তোবা তাকে পছন্দ করে। সেই কারণেই এভাবে বলেছে।

মেঘলা আরিয়ানের সব স্বপ্নে পানি ঢেলে বলে,
‘কারণ এমনটা না করলে রিফাত হয়তো সবসময় আমার পিছনে পড়ে থাকতো।’

আরিয়ান ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিল সে। মেঘলা ভাবে,
‘রিফাতকে এটাও দেখাতে চেয়েছিলাম ও যেমন ফাবিহাকে নিয়ে সুখে আছে আমিও তেমন অন্য কাউকে নিয়ে সুখে আছি।’


রিফাত নিজের ভগ্ন হৃদয় নিয়ে হোটেলে নিজের বুক করা রুমে আসে। মেঘলার বলা কথাগুলো তাকে কষ্ট দিচ্ছে। মেঘলার পাশে আরিয়ানকে কিছুতেই মানতে পারছে না সে। রিফাত অনেক ভেঙে পড়েছে। রিফাত মেঘলাকে এত সহজে অন্য কারো হতে দেবে না। রিফাত নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে,
‘যেকোন মূল্যে আমি মেঘলাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবোই। মেঘলা শুধু আর শুধু আমার। কেউ মেঘলাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here