#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মেঘলা ও রিফাতের বিয়ের আয়োজন চলছে। এবার সব নিয়ম মেনে অনুষ্ঠান করেই তাদের বিয়ে হবে। মেঘলার মা-বাবাও গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে। একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সবাই মিলে বেশ আনন্দ ফূর্তিতেই আসে। আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হতে চলেছে। মুন্নি রিফাতের গায়ে হলুদ মাখিয়ে বলে,
‘এভাবে তোমাকে অত্যাধিক সুন্দর লাগছে ভাইয়া। ভাবি তোমাকে দেখলে নতুন করে প্রেমে পড়বে।’
‘বেশি পেকে গেছিস তাইনা? পড়াশোনা নেই সারাদিন শুধু গান আর গান। এই ক’দিন একটু পড়াশোনাও তো করতে পারিস।’
মুন্নি পড়াশোনার কথা শুনেই মুখটা বিকৃত করে।
‘এসব পড়াশোনা আমায় দিয়ে হবে না। আমার জন্য কত সুন্দর একটা ক্যারিয়ার পড়ে আছে। পড়াশোনা করে আর কি হবে?’
‘পড়াশোনার মূল্য সবসময় বেশি। পড়াশোনা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। ব্যবহার, আচার, আচরণ। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে ভবিষ্যতে তোর যেসব কিছু জানতে হবে।’
রিফাতের পর মেঘলার গায়ে হলুদও সম্পন্ন হয়। রোদেলা মেঘলার গায়ে হলুদ লাগিয়ে বলতে থাকে,
‘আর মাত্র একটা দিন। কালকে তোর বিয়ে। প্রথম বিয়েটা তো ঠিকভাবে হয়নি। এবার পরিপূর্ণ ভাবে তুই রিফাতের স্ত্রী হবি। যেখানে কোন মিথ্যা থাকবে না।’
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মধ্যে মুন্নিকে গান বলতে বলে সবাই। মুন্নিও একটা গান শুরু করে দেয়,
❝তোমার হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না
এই বক্ষ মাঝে রাখব ছেড়ে দিব না
ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আরতো পাবো না
না না ছেড়ে দেব না❞
মুন্নির এমন গান শুনে রোদেলা বলে,
‘আচ্ছা হয়েছে। এখন একটা সুন্দর হিন্দি গান বলো।’
মুন্নি বলতে শুরু করে,
❝তেরি মেরি কাহানি
নেয়ি বান গেয়ি
তু মেরা হোগেয়া
মে তেরি হোগেয়ি
যাহা যায়ে তু সাংগ মুঝে লে যায়ে
লেজা লেজা রে❞
আরিয়ান দূর থেকে দাড়িয়ে গানটা শুনছিল। মুন্নির গান প্রতিদিনই সে শোনে কিন্তু আজ অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছিল। কালকে বিয়েতে আসতে পারবে না জন্য আজ গায়ে হলুদে আসলো আরিয়ান। এসে রিফাত ও মেঘলাকে অভিনন্দনও জানালো।
অবশেষে মুন্নির সাথে কথা বলে বিদায় নেয় আরিয়ান। মুন্নি আরিয়ানকে কিছুক্ষণ থাকতে বলে। তখন আরিয়ান বলে,
‘চলো একটু ঘুরে আসি।’
মুন্নি আরিয়ানকে ফেরাতে পারে না। একসাথে ঘুরতে যায় দুজনে।
৪৫.
রিফাতের ম্যাসেজ পড়ে চোখ ছোটছোট হয়ে গেল মেঘলার। রিফাত ম্যাসেজ করে দেখা করতে চাইছে। ম্যাসেজটা দেখামাত্রই মেঘলা বলে,
‘শখ কত। আমি যাবো না। দেখি কি করেন।’
রোদেলা মেঘলার পাশেই দাড়িয়ে ছিল। রিফাত দেখা করতে চাইছে কথাটা শোনামাত্রই তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। রোদেলা বলে,
‘মেঘ তুই রিফাতকে ম্যাসেজ করে বল পাশে যে সুইমিং পুল আছে সেখানে দেখা করবি।’
‘আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই রোদ।’
‘তোকে যেতে বলছি না পাগলি আগে আমার পুরো কথা শোন। রিফাত তোকে ভালোবাসে এই বিষয়ে তো কোন সন্দেহর অবকাশ নাই। আমি শুধু এখন এটা দেখতে চাচ্ছি রিফাত তোকে কতটা চেনে। আজ তুই না আমি তুই মানে মেঘলা সেজে যাব। দেখা যাক রিফাত আমায় চিনতে পারে কিনা।’
মেঘলা রাজি হয়না প্রথমে।
‘এসব ঠিক হবে না। তার থেকে ভালো হবে দেখা না করি।’
রোদেলাও কম জেদি নয়। সে একবার বলেছে যখন দেখা করবে তখন করবেই। রোদেলা বলে দেয়,
‘তুই যাই বল আমি তোর স্বামীর পরীক্ষা নিবোই। তোর নিজের স্বামীকে পরীক্ষা না করার থাকতে পারে কিন্তু আমি নিজের বোনের জামাইয়ের পরিক্ষা নিয়ে দেখব। আফটার অল আমার একমাত্র যমজ বোন বলে কথা।’
অবশেষে মেঘলা হার মেনে নেয়।
‘তোর যা ইচ্ছা হয় কর। আমি আর তোকে কিছু বলব না। তবে আমার বিশ্বাস রিফাত তোর এই পরিক্ষায় ফুল মার্কস নিয়ে পাশ করবে।’
‘দেখা যাক।’
রোদেলা একদম মেঘলার মতো সেজে নেয়। সেজে সুইমিংপুলের দিকে যেতে থাকে। রিফাত সুইমিংপুলেই ছিল। রোদেলা সরাসরি গিয়ে রিফাতকে বলে,
‘বলুন কেন দেখা করতে বলছেন।’
রিফাত রোদেলাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
‘আমি ডাকলাম আর তুমিও চলে এলে। বেশ বাধ্য হয়ে গেছ দেখছি। ‘
রোদেলা ভাবে,
‘যাক তাহলে আমায় চিনতে পারে নি। রোদেলা খুব বলেছিল না যে রিফাত বুঝতে পারবে। আমি তো জানতাম রিফাত কোনদিনও বুঝবে না।’
রিফাত হালকা হাসে।
‘আমি নিজের বউকে দেখা করতে বলেছিলাম শ্যালিকাকে নয়। তাহলে তুমি কেন দেখা করতে এসেছ রোদেলা?’
রোদেলা পুরো হা হয়ে যায়। রিফাত যে এভাবে তাকে চিনতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি। আমতাআমতা করে বলে,
‘আসলে,,,না মানে,,,,আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?’
রিফাত মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
‘চোখ দেখে।’
‘চোখ? কিন্তু আমিও তো মেঘের মতোই চশমা,,,’
‘চশমাটা বড় কথা নয়। আমি মেঘলার চোখ ভালোভাবে দেখেছি। ওর চোখে গভীর একটা মায়া আছে। যেই মায়াটা তোমার চোখে দেখতে পাইনি। তখনই বুঝতে পেরেছি তুমি মেঘলা নও রোদেলা।’
‘ইন্টালিজেন্ট। আ’ম ইনপ্রেস। ভালো থাকেন আর আমার বোনকেও ভালো রাখিয়েন। আমি যাই মেঘকে পাঠিয়ে দেই আপনার কাছে।’
‘তার আর দরকার নাই আমি এসে গেছি।’
মেঘলা মৃদু হাসে। এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে সবকিছু দেখছিল সে। মেঘলা চলে আসতেই রোদেলা বলে,
‘তোর জামাই পাশ করেছে পরীক্ষায়। তোর ধারণাই ঠিক রে বোন। তুই তোর জামাইয়ের সাথে কথা বল। আমি যাই দেখি আমার জামাই কই।’
৪৬.
মেঘলা রিফাতের সামনে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। রিফাত মেঘলাকে চুপ থাকতে দেখে নিজেও কিছু বলছে না। দুজনেই যেন চুপ থাকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অবশেষে নিরবতা ভেঙে রিফাতই বলে,
‘তুমি কিছু বলবা না।’
‘আমি কি বলব। আপনিই তো আমাকে ডেকে আনলেন এখানে। আমার তো কিছু বলার নাই।’
‘ও। আমি তোমাকে কি যেন বলতে চাইছিলাম কিন্তু এখন না মনে পড়ছে না।’
‘মনে না পড়ে না পড়ুক। আমি আপনার মনে পড়ার অপেক্ষায় এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারব না। আমি গেলাম। বাই।’
রিফাত আচমকা মেঘলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মেঘলা আচমকা এই ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে যায়।
‘এইজন্যই ডেকেছিলাম তোমাকে।’
‘কি করছেন টা কি। ছাড়ুন আমায়। কেউ এসে পড়বে।’
‘আসলে আসুক। আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি। কারো কিছু বলার থাকলে আমি বুঝে নিব।’
‘আমি হাতজোড় করছি প্লিজ ছাড়ুন আমায়। কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় ম’রেই যাব।’
‘আমাকে একা রেখে তোমাকে ম’রতেও দিব না।’
মেঘলা হঠাৎ করে নির্বাক হয়ে যায়। তার চোখ বেয়ে নোনাজল পড়তে থাকে। রিফাত মেঘলার চোখে জল দেখে বলে,
‘তুমি কাদছ কেন?’
মেঘলা রিফাতের দিকে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকায়।
‘আমি ছাড়া কিন্তু অন্য কাউকে আপনার পাশে দেখতে চাই না। ঐ ফাবিহা না কি যেন মেয়েটা আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিল তাকে আমার একদম সহ্য হয়না। আপনার পাশে কাউকে আমি মেনে নিবো না বলে দিলাম।’
‘আমিও নিজের পাশে কাউকে তুমি আনব না। আরিয়ানকে তোমার পাশে দেখে আমার কত রা’গ হয়েছিল সেটা বলে বুঝাতে পারব না তোমাকে৷ সেইসময় তোমার কষ্টটা আমি অনুভব করতে পারছি।’
মেঘলা মুচকি হাসে। রিফাতকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে নেয়।
‘আপনার হিংসুক চেহারা দেখে আমার খুবই মজা হচ্ছিল। আমার ইচ্ছা করছে আবার আরিয়ানকে ডেকে আনি। আবার আপনাকে জেলাস করি।’
‘তাহলে আমিও ফাবিহাকে ডেকে আনব।’
‘এমনটা হলো আমি আপনাকে খে’য়ে ফেলব।’
‘রা’ক্ষসী একটা।’
‘কি আমি রাক্ষসী। দেখাচ্ছি মজা।’
বলেই মেঘলা রিফাতের পিছু নেয়। রিফাতও দৌড় দেয় নিজের প্রাণ বাচাতে।
এভাবেই তাদের খুনশুটিময় ভালোবাসা চলতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨