হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব -২৪

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মেঘলা ও রিফাতের বিয়ের দিন আজ। বিয়ে উপলক্ষে অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছে। সবমিলিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে যেন মিলনমেলা বসেছে। সবকিছুর মাঝে মুন্নি কেমন গোমড়া মুখ করে বসে আছে। গতকাল আরিয়ানের সাথে দেখা করার পর থেকেই তার মন খারাপ।

মেঘলা একটি রুমে বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর তাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক আসবে। মুন্নি মন খারাপ করে মেঘলার পাশে এসে বসে। মেঘলা মুন্নির মন খারাপ দেখে প্রশ্ন করে,
‘এভাবে মন খারাপ করে আছ কেন তুমি?’

মুন্নি বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মেঘলা বুঝতে পারে মুন্নি কিছু বলতে চাইছে না। তাই আর এই ব্যাপারে কিছু বলে না। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর মুন্নি আচমকা বলে,
‘আচ্ছা ভাবি তোমার কোন ফ্রেন্ড যদি হঠাৎ করে তোমাকে প্রপোজ করে তাহলে তোমার অনুভূতি কেমন হবে?’

আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে কি উত্তর দিবে মেঘলা সেটা বুঝতে পারে না। কিছুটা ভেবে বলে,
‘আসলে সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। যদি এমন হয় যে আমিও সেই বন্ধুটাকে পছন্দ করি তাহলে হ্যা বলে দিব। আর যদি পছন্দ না করি তাহলে না বলে দিব। আর যদি কনফিউশান থেকে থাকে তাহলে ভাবব বিষয়টা নিয়ে।’

মুন্নি থমথমে গলায় ছোট্ট করে বলে,
‘ও।’

‘তোমার কোন বন্ধু কি তোমার প্রপোজ করেছে মুন্নি?’

‘হুম।’

‘আচ্ছা।’

‘আমি না বলে দিয়েছি। কিন্তু ওকে না বলার পর আমারও খারাপ লাগছে। কেন লাগছে সেটা জানি না। আমি তো আরমান খানকে পছন্দ করি।’

‘তোমাকে একটা কথা বলি মুন্নি পছন্দ করা আর ভালোবাসার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। আরমান খান হলো তোমার ক্রাশ মানে সেলিব্রিটি ক্রাশ। অনেকেরই এরকম থাকে। তবে আমরা শুধু নিজেদের সেলিব্রিটি ক্রাশকে নিয়ে স্বপ্নই দেখতে পারি। তার থেকে বেশি কিছু আর নয়। ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যেটা মন থেকে আসে। যেখানে দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। এখানে স্বপ্ন থাকে না থাকে বাস্তবতা। আমৃত্যু একে অপরের সাথে থাকার আকাঙখা।’

‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভাবি। তোমার থেকে আজ আমি অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারলাম। আমার মনে হয় আমি আমার সেই বন্ধুকে ভালোবেসে ফেলেছি। শুধুমাত্র আরমান খানের প্রতি ভালো লাগা থেকে তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছি। আমি আবার তার সাথে কথা বলব।’

‘তোমার সেই বন্ধুর নাম টা কি জানতে পারি?’

মুন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদেলা চলে আসে। রোদেলা আসার কারণ মুন্নিও আর কিছু বলে না।

৪৭.
মুবিন তার বন্ধুদের সাথে গল্পগুজবে ব্যস্ত ছিল। আচমকা কেউ এসে পিছন থেকে তার কাধে হাত রাখে। মুবিন পিছনে ফিরে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
‘রোদেলা তুমি। এসো আমার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয় নেও। হ্যালো এভরিওয়ান সি ইজ মাই ওয়ান এন অনলি ওয়াইফ রোদেলা ইসলাম৷ আর রোদেলা এরা সবাই আমার বন্ধু।’

মেঘলা অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছে। গতকাল রোদেলা যেভাবে রিফাতের পরিক্ষা নিয়েছিল আজ মেঘলা ঠিক সেভাবেই মুবিনের পরিক্ষা নিতে আসছিল। রোদেলাও বড় মুখ করে বলেছিল,
‘মুবিন আমার শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজেও বুঝে যায় আমার অস্তিত্ব। দেখবি তুই ওর সামনে গেলেই বুঝতে পারবে তুই রোদেলা না তুই মেঘ।’

মেঘলা দূরে দাড়িয়ে থাকা রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা দাত কটমট করতে করতে এদিকেই আসছিল। রোদেলা কাছে এসে মুবিনের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। মুবিন একবার রোদেলার দিকে আরেকবার মেঘলার দিকে তাকায়।

সে এখনো কনফিউশান নিয়ে আছে যে রোদেলা কে।
‘ তোমাদের মধ্যে আসল রোদেলা কে আমাকে বলবে?’

মেঘলা মৃদু হাসে।
‘আমিই তোমার শ্যালিকা এবং ভাবি মেঘলা আর ও হলো রোদ।’

মুবিন অসহায়ভাবে রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা খুব রেগে ছিল।
‘এই নাকি তুমি আমায় ভালোবাসো। কাল যখন আমি রিফাতের সামনে মেঘ সেজে গিয়েছিলাম তখন ও বুঝতে পেরেছিল যে আমি মেঘ নই রোদেলা। আর তুমি,,,যাও আমাকে যখন চিনতেই পারো না আমার সাথে আর ঘর করতে হবে না। আমি চললাম।’

রোদেলা দ্রুতপায়ে হেটে চলে যায়। মুবিন রোদেলাকে অনেকবার ডাকলেও সে ফিরে তাকায় না। মুবিন অসহায়ভাবে মেঘলার দিকে তাকায়।
‘কি করলেন আপনি ভাবি। এখন আমি ওকে কিভাবে মানাবো।’

‘চিন্তা করিও না। আমি রোদকে চিনি৷ ও বেশিক্ষণ রাগ করে থাকবে না। রাগ কমে গেলেই চলে আসবে।’

আচমকা রিফাত সেখানে চলে আসে। মেঘলাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। মেঘলার গলায় একটা ডায়মন্ডের নেকলেস পড়িয়ে দেয় রিফাত।
‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নেকলেসটা পড়ে। জানো তোমার সব শাড়ি গহনা আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি। দেখিও অনেক সুন্দর লাগবে তোমাকে।’

মেঘলা লজ্জা পেয়ে যায় রিফাতের কথায়। রিফাত মেঘলার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে,
‘এত লজ্জা পেতে হবে না। আজ কবুল বলে বিয়ে করে নিয়ে তোমার সব লজ্জা দূর করে দিব। আমাদের বাসরও তো এখনও বাকি আছে।’

মেঘলা এবার খুব বেশি লজ্জা পেয়ে যায়। দৌড়ে চলে যায়। রিফাত মেঘলাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে হাসতে থাকে।

৪৮.
মেঘলা ও রিফাতের বিয়ের জন্য আখিও চলে এলো। মেঘলা অভিমানী সুরে বলে,
‘এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো। যা তোর সাথে আমার কোন কথা নাই। তুই আমার বান্ধবী হলে এত দেরি করে আসতি না। আমি সুস্থ হওয়ার পরেও একবার দেখা করতে এলি না।’

আখি বুঝতে পারে মেঘলার খুব অভিমান হয়েছে তার উপর। মেঘলাকে মানানোর জন্য আখি অনেক প্রচেষ্টা করে।
‘তুই বিশ্বাস কর মেঘলা আমি আসতে চাইছিলাম। আসলে পড়াশোনার চাপ এত বেশি যে আসতেই পারি নি। তুই তো জানিস না। আজকাল মেডিকেল কলেজে খুব ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস চলছে।’

মেঘলা আফসোস করে,
‘ঈশ! আমার ক্লাসগুলো মিস হয়ে যাচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব ফিরে গিয়ে ঠিকমতো ক্লাস করতে হবে। নাহলে আমার আর ডাক্তার হওয়া হবে না।’

মেঘলার কিছু বান্ধবী ও রোদেলা সবাই আসে। মেঘলাকে বিয়ের জন্য বিয়ের আসরে নিয়ে যেতে এসেছে। রোদেলাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। লাল বেনাসরিতে তাকে একদম রাঙা বউ লাগছিল। রোদেলা মুগ্ধ হয়ে বলে,
‘আমার মেঘকে আজ যা সুন্দর লাগছে। যে দেখবে সেই মুগ্ধ হয়ে যাবে৷ তোর জামাই আজ তোকে দেখেই জ্ঞান হারাবে দেখে নিস।’

‘কি যে বলিস না তুই।’

মেঘলার মা-বাবাও এসেছে। মুনিয়া মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘আমার মেয়েটাকে সত্যি খুব সুন্দর লাগছে। আগেরবার আমার জন্য তোকে লোক ঠকিয়ে বিয়ে করতে হয়েছিল। এবার যা সব নিয়ম মেনে ঠিকঠাক ভাবে বিয়ে কর।’

মেঘলা তার মা-বাবার থেকে নিজের ভবিষ্যৎ জিবনের জন্য দোয়া চায়। সবকিছু শেষে রোদেলাসহ মেঘলার সব বান্ধবীরা মেঘলাকে নিয়ে যায় বিয়ের আসরে।

মেঘলা ও রিফাতকে সামনাসামনি বসানো হয়েছে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। রিফাতের যেন আর অপেক্ষা করতেই ইচ্ছা করছিল না। সে তো পারলে এখনই কবুল বলে মেঘলাকে বিয়ে করে নেয়। কত অপেক্ষায় ছিল রিফাত আজকের দিনটার জন্য। মেঘলার অবস্থাও এক। তারও খুব ছটফটানি চলছিল মনের মধ্যে।

অবশেষে সেই শুভ মুহুর্ত চলে আসে। কাজি মেঘলাকে কবুল বলতে বলে। মেঘলা কবুল বলতে যাবে তখনই রিফাতের বাবা আমিনুল হক আচমকা বলে ওঠেন,
‘দাড়াও। এই বিয়ে হবে না।’

সবাই চকিত হয়ে আমিনুল হকের দিকে তাকায়। রোজিয়া যদিওবা এই বিয়েতে মন থেকে রাজি ছিলনা। কারণ মেঘলার আগে তাদেরকে ঠকিয়েছিল। কিন্তু নিজের ছেলের খুশির জন্য বিয়েটা মেনে নিয়েছিল। এখন হঠাৎ করে তার স্বামী যখন বিয়েতে বাধা দিল তখন রোজিয়া আর চুপ থাকেন না।
‘তুমি বিয়ের মতো একটা শুভ কাজে বাধা দিচ্ছ কেন? কি চাও কি বলো তো তুমি।’

আমিনুল হক কাউকে একটা আসতে বলেন। আমিনুল হকের ডাকে ফাবিহা সবার সামনে এসে বলে,
‘এই বিয়ে হতে পারে না। আমি রিফাতের সন্তানের মা হতে চলেছি।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here