#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ৬(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা মনি
রিফাত অবাক হয়ে যায়। মেঘলাকে শক্ত করে ধরে বলে,
‘তাহলে কে তুমি?’
মেঘলা বলে,
‘আমি আপনার স্ত্রী রোদেলা।’
রিফাত মেঘলাকে ছেড়ে দেয়।
‘এটা কিরকম মজা ছিল রোদেলা। আমি একটুও খুশি হইনি। আমার সাথে আর এরকম মজা করবে না।’
‘দেখছিলাম আমার হাজবেন্ড কতটা চিনতে পারে আমায়। আমি সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আপনার ব্যবহারে।’
রিফাত বেশ স্বাভাবিকভাবে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গিয়ে বলে,
‘নিচে চলো। আমাদের এখন রওনা দিতে হবে নাহলে তোমাদের বাড়ি পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে।’
‘আপনি যান আমি একটু পরেই আসছি।’
রিফাত চলে যায়। রিফাত যাওয়ার পরই মেঘলা বিছানায় বসে পড়ে। তার পুরো শরীর কাপছে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল সে।
মেঘলা দ্রুত শ্বাস নেয়। আজ আর একটু হলেই রিফাতকে সব সত্য বলে দিচ্ছিল সে। শেষে ভয় পেয়ে গিয়ে পিছিয়ে আছে। মেঘলার এখনো মনে পড়ছে সেই মুহুর্তটা যখন রিফাত তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল।
রিফাতের চোখমুখ ভয়ংকর রকম লাল হয়ে গিয়েছিল। ফর্সা শরীর রেগে লাল হয়ে গিয়েছিল। নিজের শক্ত বাহুতে কত জোরে ধরে রেখেছিল মেঘলাকে। আরেকটু হলে হয়তো মেঘলার জানই বেরিয়ে আসত।
‘না আমাকে যে করেই হোক ওনাকে সব সত্য বলে দিতেই হবে। আজ বাড়ি গিয়ে আমি আব্বু আম্মুকে সব জানাবো। অনেক হয়েছে আর না। আমি আর পারব না এমন নাটক করতে। এর ফল যা হয় হোক। আজ নাহয় কাল আমাকে সব সত্যটা প্রকাশ করতেই হবে।’
১১.
মেঘলা ও রিফাত সেই কখন থেকে জ্যামে আটকে আছে। রিফাত বেশ রেগে গেছে সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
‘এইজন্যই ঢাকা শহরে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করে না। এত জ্যাম কার ভালো লাগে? আমি চিন্তা করছি আগামী বছরই তোমাকে নিয়ে বিদেশে চলে যাবো। তুমি যাবে তো বিদেশে?’
মেঘলা হ্যা না কিছুই বলে না। রিফাত আবার প্রশ্ন করে,
‘কি হলো রোদেলা বলো যাবে তো?’
‘আগে আগামী বছর আসুক তো।’
রিফাত ভ্রু কুচকে তাকায় মেঘলার দিকে।
‘এমনভাবে বলছ যেন আগামী বছর তুমি আর থাকবেই না।’
‘জ্যাম সেরে যাচ্ছে চলুন এখন।’
রিফাত আবার গাড়ি ড্রাইভিং করে। একটি মিষ্টির দোকানের সামনে এসে গাড়ি থামায়।
‘প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি মিষ্টি না নিলে তো হয়না। তুমি একটু বসে থাকো আমি আসছি।’
রিফাত গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসে। গাড়িতে উঠে গান চালু করে। প্রথমে ‘Let Me Down Slowly’ বাজছিল। রিফাতের এমনিতে গানটা অনেক প্রিয় কিন্তু এখন তার রোম্যান্টিক গান শুনতে ইচ্ছা করছিল। তাই সে রেডিওতে ‘Dil Ko Karar Aya’ গানটা চালিয়ে দেয়। আরচোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে গানটা উপভোগ করছিল রিফাত৷
✨
মেঘলার বাড়িতে পৌছে গাড়ি থামায় রিফাত। মেঘলা গাড়ি থেকে বাড়িটা দেখে। এটাই তোর তার চেনা যায়গা। অথচ আজ না চাইতেই কত অচেনা হয়ে গেছে। রিফাত মেঘলাকে বসে থাকতে দেখে বলে,
‘তুমি বসে আছ কেন? চলো ভেতরে যাই।’
মেঘলা গাড়ি থেকে নামে। বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পরেই মুনিয়া এসে দরজা খুলে দেয়। মেঘলা নিজের মায়ের দিকে তাকায়।
মুনিয়া খুশি হয়ে বলে,
‘এসো ভেতরে এসো তোমরা।’
রিফাত ও মেঘলা বাড়ির ভিতরে যায়। রিফাতকে বসতে বলে মেঘলা তার মায়ের কাছে। মুনিয়া রান্নাবান্নায় ব্যস্ত ছিল। মেঘলাকে দেখে বলে,
‘তুই এসেছিস ভালো। এই দেখ আমি শরবত করে রেখেছি। যা নিয়ে গিয়ে তোর স্বামীকে দে।’
‘আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে আম্মু।’
‘কি বলবি বল।’
‘আমি আর এরকম মিথ্যা অভিনয় করতে পারব না। আমি রিফাতকে সব সত্য বলে দিতে চাই।’
‘তোর মাথা ঠিক আছে তো মেঘলা? তুই জানিস না এর ফল কি হতে পারে। তুই ভুলে যাস না এই বিয়ের জন্য আমরা এখনো এই বাড়িতে আছি, তোর বাবার ব্যবসা ভালো চলছে। যদি তুই সব সত্য বলে দিস তাহলে ওরা তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আমাদের সবকিছু কেড়ে নেবে৷ তখন আমরা কোথায় যাব ভেবে দেখেছিস?’
‘কিন্তু আম্মু আমি যে আর অভিনয় করতে পারছি না আমার দ্বারা আর হচ্ছে না।’
‘তুই আবেগ দিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে সবটা বিবেচনা কর৷ সবাই আমাদের দিকে আঙুল তুলতেই পারে। কিন্তু আমাদের যায়গায় একবার নিজেকে বসিয়ে দেখুক তো। এই বাড়ি ছাড়া আমাদের যাওয়ার কি আর কোন যায়গা আছে? এখন যদি সব হারিয়ে রাস্তায় গিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কি হবে? যদি এই মিথ্যাটা বলে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি তাহলে করবো না কেন। বড় বড় কথা সবাই বলতে পারে। নিজের সাথে হলো সবাই আমাদের মতোই কাজ করত সে মুখে যাই বলুক না কেন। তুই অভিনয় চালিয়ে যা। তোর আব্বুকে ব্যবসা দাড় করানোর সুযোগ দে। ব্যবসাটা আরেকটু দাড়িয়ে গেলে তখন আর আমাদের কাউকে ভয় পেতে হবে না। তখন সব সত্য বলে দিস।’
মেঘলা কোনকিছু না বলে চুপচাপ চলে আসে।
১২.
রিফাত রুমেই বসে ছিল চুপচাপ। মেঘলা এসেছে তাকে খেতে ডাকতে। রিফাত মেঘলা রুমে টাঙানো একটা ছবির দেখে ইশারা করে বলে,
‘এটাই কি তোমার যমজ বোন মেঘলা?’
মেঘলা সেদিকে তাকিয়েই দেখতে পায় তার একটা ছবি। লাল সালোয়ার, চোখে চশমা। মেঘলার আজ নিজের উপরই উপহাস হচ্ছে।
‘হ্যা এটা আমার যমজ বোন মেঘলা।’
রিফাত কৌতুহলবশত প্রশ্ন করে,
‘কোথায় ও? বিয়ের দিনও ওকে দেখলাম না। আর আজও নেই।’
‘ও আসলে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। তাই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসে। পড়াশোনায় খুব সিরিয়াস তো। আমার বিয়ের দিন এসেছিল তারপর আবার কোন জরুরি ক্লাস পড়ে যাওয়ায় আপনারা আসার আগেই ফিরে গেছে।’
‘আচ্ছা।’
‘আপনি এখন খেতে চলুন। সেই কোন সকালে খেয়েছেন। নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা পাইছে।’
‘আমার এত কেয়ার করিও না। আমার কেমন জানি লাগে।’
মেঘলা মৃদু হেসে চলে যায়।
রিফাত পিছন পিছন চলে যায়। আজ হরেক রকমের রান্না হয়েছে। পেপে দিয়ে পোলাও, চিংড়ির মালাইকারি, গরুর মাংসের ভুনা, মুরগির রোস্ট, সর্ষে ইলিশ, বেগুন ভাজা আরো অনেক কিছু।
রিফাত এক এক করে সবকিছু খেতে থাকে। মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন,
‘লজ্জা পেয়োনা। ভালো করে খাও।’
রিফাত খাওয়াদাওয়া শেষ করে শোফাউ বসে রেস্ট নিতে থাকে।
মুনিয়া ও মেঘলা বাড়ির বিভিন্ন কাজ করছিল। মঞ্জুরুল ইসলামও বাইরে গেছেন। এমন সময় বাড়ির টেলিফোন বেজে ওঠে।
আশেপাশে কাউকে না দেখে রিফাতই গিয়ে টেলিফোন তোলে।
‘হ্যালো আমি রোদেলা। আম্মু তুমি কি রিসিভ করেছ?’
রিফাত অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে মুনিয়া ও রোদেলা তো ওখানে। তাহলে এখানে কে ফোন করেছে।
‘কোন কথা বলছ না কেন?’
রিফাত বলে,
‘কে আপনি? নিজেকে রোদেলা বলে দাবি করছেন কেন? আমি রোদেলার স্বামী রিফাত। আমার স্ত্রী তো রান্নাঘরে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨