#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা মনি
প্রেনা মেঘলাকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলে,
‘আমি জানি তুমি রোদেলা নও মেঘলা। রোদেলা আমায় বলেছিল বিয়ের দিন সে পালিয়ে গেছিল যার কারণে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি জানি তুমি এখন রোদেলা সেজে আছ। তুমি সবসময় আমার সাথেই থেকো। কারো সাথে কোন কথা বলার দরকার নেই। নাহলে কেউ সন্দেহ করতে পারে। আমি তোমাকে রোদেলার ব্যাপারে যতটুকু সম্ভব বুঝিয়ে দেব।’
মেঘলা প্রেনার কাছে জানতে চায়,
‘আচ্ছা তুমি তো রোদের বেস্ট ফ্রেন্ড। তুমি নিশ্চয়ই জানো ও এখন কোথায় আছে। আমাকে বলো না। আমার যে রোদের সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।’
‘তুমি শান্ত হও। আমি জানি রোদেলা কোথায় কিন্তু সেটা এখন তোমাকে বলতে পারব না। রোদেলা বলতে মানা করেছে। সঠিক সময় হলে ও নিজে থেকেই সামনে আসবে।’
মেঘলাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রেনা তাকে নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং ক্লাসে চলে যায়। মেঘলার যেহেতু ফ্যাশন ডিজাইনিং সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাই সে কিছু বুঝতে পারছিল না। কোনরকমে ক্লাসটা করে নেয়।
ক্লাস শেষে বাইরে আসার পর আবার তার সাথে সকালের সুইটি নামের মেয়েটার দেখা হয়। সুইটি রোদেলাকে নিয়ে অনেকটা উপহাস করে বলে,
‘আজ ক্লাসে তোর পারফরম্যান্স এতো লো হয়ে গেল কিভাবে? বিয়ের পর কি চোখে সর্ষে ফুল দেখছিস নাকি?’
সুইটির এই ঠেস মে’রে বলা কথাটা মেঘলার ভালো লাগে না। রোদেলা থাকলে নিশ্চয়ই এখনই প্রতিবাদ করত। কারণ সে চুপ থাকার মেয়ে নয়।তাই মেঘলার প্রতিবাদ করে বলে,
‘আমার ব্যাপারে তোকে ভাবতে হবে না। আমার পারফরম্যান্স আমি বুঝে নেব।’
সুইটি মুখ বা’কায়। বলে,
‘এসেই আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস। আমরা না ডিশিসন নিয়েছিলাম আর ঝগড়া করবো না।’
প্রেনা এসে বলে,
‘প্রথমে শুরু তো তুই করেছিস সুইটি। রোদ তুই আয় আমার সাথে। সুইটি কোনদিনও শোধরাবে না।’
মেঘলা প্রেনার সাথেই চলে যায়। সুইটি বিড়বিড় করে বলে,
‘এটা সত্যি রোদেলা তো? আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।’
১৫.
মেঘলা ফ্যাশন ডিজাইনিং ইনিস্টিউটের বাইরে রিফাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পরেই রিফাত এসে যায়।
‘আমার কি বেশি লেট হয়ে গেল?’
‘না। আমি এই একটু আগেই এসেছি।’
‘ও ক্লাস কেমন হলো?’
‘ভালো।’
‘ঠিক আছে। চলো এখন।’
মেঘলা রিফাতের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। কিছু একটা মনে করে মেঘলা বলে,
‘গাড়িটা একটা শপিং মলের সামনে থামাবেন। আমার একটা জরুরি কাজ আছে।’
রিফাত কিছু দূর গিয়ে একটা শপিং মলের সামনে গিয়ে দাড়ায়। মেঘলা শপিং মলে ঢুকে একটি জুতার দোকানে যায়।
পা থেকে হাই হিল খুলে দেখে পায়ে অনেক দাগ তৈরি হয়েছে। এই কারণেই বোধহয় পা ব্যাথা করছিল। এভাবে আর বসে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না।
মেঘলা একটা ভালো দেখে জুতা কিনে নেয়। সুইটিও সেই শপিং মলে এসেছিল। মেঘলাকে দেখে কাছে আসে। মেঘলাকে হাই হিল খুলে অন্য জুতা কিনতে দেখে বলে,
‘তুমি রোদেলা হতেই পারো না। বলো কে তুমি?’
মেঘলা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সুইটিকে সবকিছু বলা ঠিক হবে কিনা সেটাই ভাবছিল। মেয়েটাকে এমনিতে তার সুবিধার লাগছিল না। তাই বলে,
‘আমি রোদেলাই৷ পায়ে একটু সমস্যা হয়েছিল তাই অন্য জুতা নিচ্ছি। তুই এটাকে বড় করে দেখিস না।’
সুইটি বলে,
‘আচ্ছা তাহলে বল তো আমাদের প্রথম দেখা কিভাবে হয়েছিল?’
মেঘলা কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিল না। সে তো এই ব্যাপারে কিছু জানেই না৷ সুইটি বাকা হেসে বলে,
‘আর মিথ্যা বলে লাভ নেই মেঘলা। তুমি ধরা পড়ে গেছ।’
মেঘলার গলা ভয়ে শুকিয়ে যায়। বাইরে রিফাত দাড়িয়ে আছে। সুইটি যদি তাকে গিয়ে সবকিছু বলে দেয় তাহলে কি হবে সেটাই ভাবছিল। মেঘলার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে সুইটি বলে,
‘কোন ভয় নাই তোমার। আমি কাউকে কিছু বলব না। রোদেলা বা তোমার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নাই। আমি তো শুধু এটা বুঝতে পারছি না তুমি হঠাৎ করে রোদেলা হওয়ার নাটক কেন করছ।’
মেঘলা বাধ্য হয়ে সুইটিকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে সুইটি বলে,
‘হুম বুঝলাম। তবে যাই বলো কাউকে এভাবে ঠকানো ঠিক না। তোমার উচিৎ হবে এখনই সব সত্য প্রকাশ করে দেওয়া। মনে রেখো, সত্য কখনো চাপা থাকে না। মিথ্যা দিয়ে শুরু সম্পর্কও টিকবে না। কোনদিন সত্যটা সামনে এলে সবথেকে বেশি কষ্ট কিন্তু তোমাকেই পেতে হবে মেঘলা। এটা মনে রেখো। আমিও রোদেলার ফ্রেন্ড। তাই তোমরা যে জমজ সেটা আমিও জানি। তখন ক্লাসেই তোমাকে সন্দেহ হয়েছিল। যাইহোক এখন তুমি যাও। আর আমি যেটা বললাম সেটা মনে রেখো।’
১৬.
মেঘলা বাড়িতে ফিরেই শুয়ে পড়ে। আজ সারাদিন যা টেনশনে ছিল তাতে বিছানায় শোয়ার পরপরই ঘুমিয়ে যায়।
ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকেল হয়ে গেছে। তাই মেঘলা আর দেরি না করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে আসে। মুন্নি আচমকা মেঘলাকে এসে বলে,
‘ভাবি তুমি উঠে গেছ। আমি একবার গিয়েছিলাম তোমায় ডাকতে। দেখলাম তুমি ঘুমিয়ে আছ। তাই আর ডাকিনি। এখন চলো খেতে চলো।’
মেঘলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুন্নি তাকে টেনে নিয়ে চলে যায়। মেহের টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল। মুন্নি এসে মেঘলাকে তার পাশে বসিয়ে নিজের মাকে বলে,
‘আম্মু আমার সাথে ভাবিকেও খাবার দিয়ে দাও।’
‘ও যদি এখানে খায় তাহলে তো রোজিয়া আপা রাগ করবে। তার ছেলের বউকে আমার এখানে কি খেতে দেবে?’
মেঘলা বুঝতে পারে এক ছাদের তলায় থাকলেও এই পরিবারের সম্পর্কগুলো ঠিক নেই। সবাই যেন কাছে থেকেও একে অপরের থেকে আলাদা।
মুন্নি বলে,
‘বড় আম্মু রাগ করবে না। তুমি খেতে দাও তো তাড়াতাড়ি। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ভাবিও তো দুপুরে এসে ঘুমিয়ে গেছে খায়ও নি। আমাদের দুজনকেই তুমি খেতে দাও।’
মেহের আর কিছু না বলে খেতে দিয়ে দেয়। মুন্নির সাথে সাথে মেঘলাও খায়। খাওয়া শেষ করার পর মেঘলা নিজের রুমে যায়। রোজিয়া একটু পর এসেই মেঘলাকে বলে,
‘তুমি তো শুনলাম দুপুরে খাওনি। আমি আসলে কিছু কাজে বাড়িতে ছিলাম না। চলো খেয়ে নিবে।’
‘আমি একটু আগেই খেয়ে নিয়েছি।’
‘কিন্তু কাজের মেয়েটা যে বলল তুমি খাওনি।’
‘আমি মুন্নির সাথে খেয়ে নিয়েছি।’
মেঘলার কথাটা শুনে রোজিয়া রেগে যায়। বলে,
‘তুমি ওদের ওখানে খেয়েছ। এটা একদম ঠিক করোনি।’
বলেই চলে যান। মেঘলা বুঝতে পারে না এত রেগে যাওয়ার কারণ কি।
রাতে রিফাত বাড়ি ফেরার পর মেঘলাকে বলে,
‘তুমি নাকি আজ মুন্নিদের সাথে খেয়েছ। আজ প্রথমবারের মতো তোমায় কিছু বললাম না। কিন্তু আর কখনো যেন এমন ভুল না হয়।’
মেঘলা রিফাতের কথাটা শুনে খুব কষ্ট পায়। এই প্রথম রিফাত তার সাথে কড়া গলায় কথা বলল। মেঘলা বুঝতে পারছে না সামান্য এতটুকু কারণে কেন সবাই রাগ করছে। মেঘলা মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
✨
মেঘলা আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে রিফাতকে দেখতে পায়নি। হয়তো কোন জরুরি কাজে চলে গেছে। মেঘলা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। নিচে নেমে রোজিয়ার সাথে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। আজ রোজিয়াও মেঘলার সাথে সেভাবে কথা বলছে না। কালকের ঘটনায় হয়তো রাগ করে আছে।
মেঘলা একবার ভাবল ক্ষমা চেয়ে নেবে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। খাওয়া শেষে রোজিয়াই বলে,
‘কালকের ঘটনা নিয়ে আর মন খারাপ করে থেকো না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি শুধু চাই ভবিষ্যতে যেন আর এমন না হয়।’
মেঘলা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে। আচমকা বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। মেহের আর মুন্নি হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসে। রোজিয়া ও মেঘলা বোঝার চেষ্টা করে যে কি হয়েছে।
মেহের দরজাটা খুলে দেয়। মেঘলা এমন কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি। রোদেলা বউ সেজে এই বাড়িতে এসেছে। সাথে একটি ছেলেও দাড়িয়ে আছে। মেঘলা বলে ওঠে,
‘রোদ,,,’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨